Main menu

হেলমেট দিয়ে ছোটলোক খেদান

আপনাদের প্রোবলেম নিয়া ভাবি আমি। আজ যেমন ভাবছি সাইক্লিং নিয়া। ভালো জিনিস তো, করছেন নাকি সাইক্লিং? [pullquote][AWD_comments][/pullquote]

বুঝতে পারি, মাঝে মাঝে করছেন; সব সময় না। সাইক্লিং উৎসব করছেন, কয়েকজন বন্ধু নিয়ে হাতির ঝিলে বা মানিক মিয়া এভিনিউতে সাইকেল চালাচ্ছেন রাতে বা ছুটির দিনের সকালে, পরে বিজয় স্মরণী যাইয়া হয়তো ছবি তুললেন একটা, ফেসবুকে দিলেন…

এমন তো করাই যাচ্ছে রেগুলার, তবে অকেশনালি; কিন্তু প্রতিদিন অফিসে কি যাচ্ছেন, পাশে হটপট ঝুলানো? বা কাওরানবাজার যাচ্ছেন নাকি সকালে? ভার্সিটিতে? সাইকেলে সিদ্ধেশ্বরী থেকে আত্মীয় বাড়ি কি যাচ্ছেন মোহাম্মদপুর? চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বিয়ার দাওয়াতে যাইয়া সাইকেল পার্ক করছেন কি হাসতে হাসতে, শুভেচ্ছা জানাইতে জানাইতে? একেবারেই না।

না, ঢাকার ডেইলি লাইফের চলাফেরায় সাইকেল ইউজ করছেন না একেবারে, বুঝতে পারি। কেন করছেন না বা করতে পারছেন না—সেইটারেই আপনার প্রোবলেম বলছিলাম। ভেবে দেখলাম কিছু ইস্যু আছে এ ব্যাপারে, কিন্তু সমাধান নাই আপনার কাছে। ফলে, আপনাকে হেল্প করি একটু, হ্যাঁ?

প্রথম ইস্যু হলো—লোকে বুঝে ফেলছে আপনার সাইক্লিং রহস্য। ডেইলি লাইফে সাইকেল ইউজ করে টাকা বাঁচাচ্ছেন আপনি, আর লোকে ঠিক সেইটাই ভাবছে; কিছুতেই লুকানো যাচ্ছে না টাকা বাঁচাবার ব্যাপারটা। ওদিকে আপনি যাদের ছোটলোক ভাবেন তাঁরাও তো ঠিক ওই কারণেই সাইকেল চালায়; হায় হায়! ছোটলোকগুলি থেকে তাহলে নিজেকে আলাদা বলে দাবি করবেন কি করে?

রক মনু, প্রিচিং

রক মনু, প্রিচিং ।। ছবি: অভীক আদনান সিদ্দিকী

আপনি হয়তো সাইকেলের বিভিন্ন উপকারের কথা বলছেন; ডায়াবেটিস থেকে হার্ট, ভুরি—কত কি! এগুলি সত্য; কিন্তু নিন্দুকরা কেবল টাকা বাঁচানোটাই দেখতে পায়!

তো, আপনার পয়লা কাজ হইলো ডিফরেন্স ক্রিয়েট করা; কার থেকে? আপনার ভাবনার ছোটলোকদের থেকে। দামি সাইকেল অবশ্যই ভালো ডিফরেন্স; তা তো আপনার আছেই। কিন্তু দূর থেকে দাম খোব একটা বোঝার উপায় নাই। ফলে আরো কয়েকটা দিকে খেয়াল করেন।

সাইকেলের পিছে ক্যারিয়ার রাখবেন না কোন; ক্যারিয়ার ছোটলোকের সাইকেলের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য; ওরা ক্যারিয়ারে আরেকজন লয়, বা সেক্স করতে চাওয়া ছাগল নিয়া পাঁঠাঅলা বাড়িতেও যায়, বা পিছে স্বামীরে উঠাইয়া শরীরে স্বামীর হাত উপভোগ করে; এইগুলা নির্ঘাৎ ছোটলোকি! ফলে, ক্যারিয়ার রাখবেন না সাইকেলের পিছে।

কিন্তু ক্যারিয়ারও দূর থেকে অত বোঝা যায় না; কিন্তু আপনাকে তো দূরের মানুষের ভাবনা পাত্তা দিতেই হবে। ফলে, আপনি একটা হেলমেট কেনেন। আসলে অলরেডি একটা হেলমেট আছে আপনার। কিন্তু, আপনি ভাবতেন—এ তো আইন মানা মাত্র! নাহ্, আপনার ভাবনার তলটা আমি বলছি।

দেখবেন, হেলমেট পইরা আপনি এখন ফুটপাতে সাইকেল চালাইতেছেন; কী, আইন গেলো কই? ওইটা আসলে আইন মানার ব্যাপার না; কোন ছোটলোক সাইকেল চালোয়াড়ের মাথায় হেলমেট পাইবেন না আপনি। আপনি বরং সেফটির যুক্তিটা দিতে পারেন। কিন্তু খেয়াল করেন, ঘোড়া অথবা ষাঁড়ের মতো চেহারার ইয়ামাহা ফেজার বা বাজাজ পালসার চালাবার সময় হেলমেট পরতে ইচ্ছা করে না আপনার। ফলে, সেফটির যুক্তি মানা গেলো না। তাইলে, ছোটলোক থেকে ডিফরেন্স ক্রিয়েট করাটাই হেলমেটের আসল কাজ। এইটা দূর থেকেও বেশ দেখা যায়! আর এতে করে বাসের হেলপারের শ্রদ্ধা পাইবেন ভালো; পুলিশের তুই-তোকারি থেকেও বাঁচবেন।

তবে, রাইতে একটু সমস্যা! আন্ধারে হেলমেট দেখা যায় না! এজন্য সাইকেলের পিছে একটা লাল বা হলুদ আলোর ব্যবস্থা রাখবেন। রাইতে সেইটা জ্বলবে আর পিছের বিভিন্ন ড্রাইভার বুঝে ফেলবে সাইনেই আছে এক মিডল-ক্লাস সাইক্লিস্ট! কারণ, ছোটলোকরা সাইকেলের পিছে লাইট লাগায় না। কিন্তু, দিন তো বদলাইছে; ছোটলোকরা মোবাইল ফোন ইউজ করা শুরু করার পরে তো অনেক দুঃখ পাইছিলেন আপনি; আর এখন হয়তো দেখবেন বহু ছোটলোক সাইকেলের পিছেও লাইট লাগাইয়া বেয়াদপ হইয়া উঠছে।

এই সমস্যার একটা সমাধান আছে! ভালো হয় আপনার পিঠে একটা ব্যাগ রাখতে পারলে; সেই ব্যাগের গায়ে একটা ক্রস থাকবে, সেই ক্রস জুড়ে থাকবে ছোট ছোট লাল লাইট; জ্বলবে আর নিভবে, বিলবোর্ডে যেমনটা দেখা যায়।

রাইতে পিছনে একটা বাতির ব্যবস্থা করা খুবই ইম্পর্ট্যান্ট। হরলিক্স বা বুস্ট বা কিটক্যাট বা ডল বা বিভিন্ন খেলনা বা রং-পেন্সিল বা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বেতন নিয়া ভাবেন একবার। আপনার পিছে মা-বাপের ইনভেস্টমেন্টের পরিমাণ আইডিয়া করার চেষ্টা করেন একটা। নিজের দাম সম্পর্কে ভালো একটা ধারনা পাইবেন। এতো দামি একটা আপনাকে হারাবার ঘটনা সহ্য করতে পারবে না আপনার মা-বাপ!

ছোটলোকরা তো এইসবের মধ্যে নাই; ফলে ওদের দাম বেশ কম হবে। ওদের উপর ইনভেস্টমেন্ট নাই প্রায়; বরং ৫/৭ বছর থেকেই হয়তো নিজেই কামাই কইরা খায়। মন ভালো থাকলে কলাটা বা মূলাটা মা-বাপরে দিলেও দিতে পারে! অন্তত আপনার ভাবনাটা তো তেমনই; ছোটলোকদের প্রেম-ভালোবাসার অতো টাইম নাই, টাকাও নাই। ভাইবা দ্যাখেন, ৬ বছরের এক ছোটলোকের বাচ্চা দেড় বছরের আরেকটা বাচ্চারে কোলে নিয়া সাগর কলা খাওয়াইতে দেখলেই আপনার ছবি তুলতে ইচ্ছা করে; অতি আশ্চর্য এক অসাধারণ মমতা দেইখা ভ্যাবাচ্যাগা খাইয়া যান আপনি। তাইতো, আরেকজনরে খাওয়ানো যে ছোটলোকরা কোত্থেকে শেখে!

মোটের উপর আপনার অনেক দাম, নো রিস্ক প্লিজ! এইসব বুদ্ধি নেন, টাকা বাঁচান কিন্তু আপনারে ছোটলোক ভাবতে দিয়েন না। ওহ্, একটা জিনিস মনে ছিলো না; সাইকেলে বেল রাখবেন না, হর্ন লাগান, সাইকেল চালান।

৩১ মার্চ ২০১৪

Series Navigationআপনার চাইতে আর্ট বেশি বোঝে ওরা >>
The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →