Main menu

চলচ্চিত্রে ‘অশ্লীলতা’ প্রসঙ্গ এবং শ্যামলালের গল্প

 মতিকন্ঠ থিকা মতিকণ্ঠের ল্যাঙ্গুয়েজটারে বাদ দেন, তারপরে বাংলা-একাডেমি’র প্রেস্ক্রাইভড বাংলায় পড়েন। দেখবেন আপনি আর পছন্দ করতে পারবেন না। কারণ এর যে মেইন পারপাস – হিউমিলেশন, সেইটা যতোটা না ঘটনার, তারচে বেশি ভাষা থিকাই আসতেছে। একই জিনিস আপনি লোকেট করতে পারেন পিপঁড়াবিদ্যার-তেও, ভাষারে বাদ দেন ফারুকী’র; তারপরে দেখেন, ওইটা যে আর্ট প্রডিউস করে সেইটা একটা ক্লাস সুপিয়রিটিরই ঘটনা! এইদিক দিয়া, পিঁপড়াবিদ্যা মেঘমল্লার-এরই ভায়রা ভাই।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

তারপরও মেঘমল্লার পিঁপড়াবিদ্যা’র রিপ্রেজেন্টেশনের লেসন’রে নিতে রাজি না। কারণ মেঘমল্লার  বাংলা সিনেমার এস্টাবলিশ আর্টের যে ধারণা তার পিওরেস্ট ফর্মরেই প্রজেক্ট করে; যেইখানে গাছ-পালা-নদ-নদী-বর্ষাকাল-পুরানাদালান এইরকম রাবীন্দ্রিক ইমেজ দিয়াই শ্রেণীসংগ্রামরে বুঝাইয়া ফেলা যায় (আখতারুজ্জামান ইলিয়াসও পারছিলেন মনেহয়)।  যেই কারণে মাথাটারে টেবিলে ফালাইয়া ঢুসা দিলেই মারাত্মক টর্চার বইলা মনে হইতে পারে আর তখন যেই রক্ত বাইর হয় ঠোঁট দিয়া সেইটা দেইখা সাত বছরের একটা মেয়ে বাচ্চাও কনফিউজড হইতে পারে, লিপস্টিক না ত ওইটা! ই সফিসটিকেটেড আর্ট-ই হইলো বাংলা-সিনেমার অশ্লীলতা বিরোধী আন্দোলনের প্রেজেন্ট আউটকাম।

বাংলা-সিনেমায় অশ্লীলতা আসছিলো ’৯০ দশকের শেষদিকে। তখন আর্ট-ফিল্মওলাদের কাছে এফডিসি মানেই হইলো অশ্লীল, খালি এই কারণে না যে ওরা মাইয়াদের শরীর’রে দেখায়, বরং আর্ট কি জিনিস সেইটা এফডিসি-ওলারা জানে না। আর্ট হইলো এমন একটা  জিনিস, যার কোন সেক্স নাই। থাকলেও আপেলে আছে (পেয়ারাতে নাই), কাদায় ছটফট করা কইমাছে আছে বা গাছের পাতায় বাতাসের শিরশিরানিতেও থাকতে পারে; কিন্তু আমাদের শরীরে, কাভি নেহি!

মাইয়াদের শরীররে পণ্য বানায় যেই রিপ্রেজেন্টেশন সেইটা আর্ট হইতে পারে না না; মাইয়াদের আসলে শরীর নাই, ছে খালি মন! বাংলা-গল্পে জগদীশগুপ্তরে ডিলিট কইরা যেই মন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় খুঁজতেছিলেন কুসুমের শরীরে, সেইটাতে উনারা রিচ করতে পারছেন আসলে। কারণ নানান ধরণের এক্সচেইঞ্জ ত আছেই, আর্টের ডিফরেন্ট মিডিয়াগুলাতে।

মানস চৌধুরী ২০০১-এ মাইয়াদের এই শরীর’রে মাফ কইরা দেয়ার দাবি জানাইছিলেন অশ্লীলতা প্রমোটকারী এবং অশ্লীলতা-বিরোধীদের কাছে; রেইপ হওয়া মেয়ের শরীর’রে ডাক্তাররা যাতে আর রেইপ না করেন। এখন শরীরটা ত আছে, বাদ দেয়া যাইতেছে না; তারে নিয়া আপনি কি করবেন!

 

– ই.হা.।

_________________________________________________________

 

শ্যামলাল

শ্যামলালকে নিয়ে সুকুমার রায়ের গল্পটা বড়ই চমকপ্রদ। তেমন কিছু নয়। স্কুলে নতুন ছাত্র শ্যামলাল আসবার পরই ঘোষণা দিল যে তার ‘পোয়েট্রি’ লিখবার অভ্যেস আছে। বলাই বাহুল্য যে, তার এই সাহিত্য প্রতিভার আত্মোপলব্ধি তাকে তার সহপাঠীদের থেকে বেশ দূরের এবং একটা উঁচু জায়গা পাইয়ে দিল। সেটা আরও বেড়ে গেল যখন পণ্ডিত মশাই জানান দিলেন তাঁর ছোটবেলায় একবার এক ছাত্র কবিতা লিখে স্কুল ইন্সপেক্টরকে এমন মুগ্ধ করে দিয়েছিল যে স্কুলের জন্য সেবার অর্থ বরাদ্দ বেশি হয়ে গেছিল। ‘পোয়েট্রি’র এহেন কার্যকরিতা জানবার পরও – যা হয় আর কি – শ্যামলালের সহপাঠীকুল খুব একটা যে বিনয়াবনত হয়েছিল তা বলা যাবে না। হ্যাঁ, বিস্ময় ছিল। তবে ঢের ঢের হিংসাও ছিল। ফলে যে দুর্ঘটনাটি ঘটল তা হচ্ছে স্কুলে শ্যামলালের সহপাঠীসমেত গোপনে কবিতা চর্চাকারীদের সংখ্যা কিছু বেশিই হয়ে দাঁড়াল। এই নিভৃত কবিদের লক্ষ্যও স্কুল ইন্সপেক্টর। ফলে হল ঘরে অভিবাদন জানাতে অপেক্ষমান শিক্ষার্থীরা যেই না স্কুল ইন্সপেক্টরকে দেখতে পেল, অমনি আড়চোখে শ্যামলালকে দেখে নিল পকেট থেকে সে ‘পোয়েট্রি’ বের করে কিনা। আর যেই না শ্যামলাল পকেটে হাত দিয়েছে, অমনি যে যার পকেটে রাখা স্বরচিত কবিতাখানি পড়ে শোনাতে শুরু করল। একসাথে এত বড় কবিকুলের কাব্যপাঠ পরিদর্শক সাহেবের হজম হয়নি, তিনি মুর্চ্ছা গেলেন। মহামান্য অতিথির এই পরিণতিতে হেডমাস্টার মশাই বেশ ক্ষেপে গেলেন। তিনি হুংকার ছেড়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘কে গোলমাল করেছে?’ অমনি সবাই একসাথে বলে বসল ‘শ্যামলাল মাস্টার মশাই।’ সুকুমারের এর পরের মন্তব্যটিও শোনার মত। ‘শ্যামলাল একাই যে এত বড় গোলমাল করতে পারে হেডমাস্টার মশাইয়ের কিছুতেই তা বিশ্বাস হ’ল না’ বা এই গোছের একটা কিছু।

pipra-bidya-poster

পটভূমি

এই গল্পটা মনে পড়ে গেল একেবারে সাম্প্রতিক কালে ঢাকার চলচ্চিত্র কর্মীদের দুর্দান্ত শ্যামলাল আবিষ্কারের প্রেক্ষিতে। কিছুদিন আগে তাঁরা ঢাকার চলচ্চিত্রে ‘অশ্লীলতা’র রহস্য ভেদ করেছেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন ‘অশ্লীলতা’র জন্য ভারত থেকে কাজ করতে আসা একজন অভিনেত্রীই দায়ী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি তাঁকে বাংলাদেশে আসবার অনুমতি না দিতেন তাহলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হ’ত না। এর পাশাপাশি স্বদেশী কয়েকজনকেও এই দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। খেয়াল না করলে ঝামেলা বেধে যেতে পারে যে তাঁরাও সকলেই নারী, মানে অভিনেত্রী। চলচ্চিত্র কর্মীদের এই আবিষ্কার কিন্তু একটা ঘোষিত ব্যাপার – লুকোছাপা নয় মোটেই। খোদ এফডিসিতেই সামিয়ানা টাঙিয়ে সভা হয়েছে, আঙুল তুলে এইসব ভয়ানক দাগী আসামীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই হৈ চৈ খানা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য স্মারকবিশেষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যাঁরা খোঁজ খবর কম রাখি তারা ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারিনি ওখানে আর কোন দলাদলির ব্যাপার আছে কিনা। বরং বাংলাদেশের চিন্তাবিদ্দের মধ্যে সমাজ নিয়ে দুর্ভাবনার জন্য খ্যাতিমান যাঁরা, তাঁরা ‘এ্যাদ্দিনে একটা কিছু হচ্ছে’ ধরনের পুলকাশ্রয়ী হয়ে পড়েছেন। সম্ভবত নিজেদের সংস্কৃতি-সাধনার হাতেনাতে ফল হিসেবে চিত্রিত করতেও শুরু করেছেন এই তৎপরতাসমূহকে। যাই হোক, কেবল বড় পর্দার মুরুব্বী নয় ছোটপর্দা এবং ছোটছবির মানুষজনও এই কৃতিত্বে সামিল। বরং সেটা আরও গুরুত্বের দাবিদার। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। চলচ্চিত্র কর্মীদের প্রায় সকল মুরুব্বীরা একত্রে বসে এই দুর্দান্ত আবিষ্কারটি যে করলেন তার একটা পরিপ্রেক্ষিত বা ইতিহাস আছে। আলোচনার সুবিধার্থে একে আমরা দুটো পর্বে ভাগ করে নামকরণ করতে পারি। এক, বুদ্ধিবৃত্তিক বা বুদ্ধি-শুদ্ধি পর্ব; দুই, আলকাতরা পর্ব।

 

বুদ্ধিবৃত্তিক বা বুদ্ধি-শুদ্ধি পর্ব

এখানে ঢাকার চলচ্চিত্র কর্মীদের তৎপরতা নিয়ে সাধারণ একটা আলোচনা তুলতে চাইছি। তবে আলোচ্য চলচ্চিত্র কর্মীরা এফডিসি’র নন। বরং এফডিসি’র সাথে পষ্টাপষ্টি দূরত্ব ঘোষণা করেছেন তাঁরা।খেয়াল করলে বোঝা যায় এঁদের আত্ম-পরিচয় নির্মাণে এফডিসি-বিরুদ্ধ সমালোচনার সুস্পষ্ট ভূমিকা রয়েছে। অর্থাৎ এফডিসির চলচ্চিত্র ধারাকে সমালোচনা করার মধ্য দিয়েই আপাত বিভিন্ন ও বহুমুখী এই সংগঠনগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য শিথিল এক মোর্চা গড়ে উঠেছে। তাঁদের নিজেদের ঘোষণা অনুযায়ী একে ‘বাণিজ্যিক ছবি’ বিরোধী ধারা বলা চলে। সুবিধার্থে আমি তাঁদেরকে চলচ্চিত্র সংসদ কর্মী বলছি – যদিও এঁদের মধ্যে এফডিসি’র বাইরের নানাবিধ চলচ্চিত্র নির্মাতা রয়েছেন। তবে এফডিসি প্রসঙ্গে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাঁরা কী কী বলেন এবং কী কী বলেন না তার একটা স্পষ্ট প্রবণতা আছে। সেটা এই আলোচনাতে প্রাসঙ্গিক। একটা উদাহরণ হিসেবে পয়লাতেই উল্লেখ করা যায়: এফডিসি’র মধ্যে শ্রমঘনিষ্ঠ পেশার মানুষজনের তেমন কোন সংগঠন নেই এবং তাঁরা গড়পরতায় নিপীড়িত জীবন যাপন করেন- এই বক্তব্য সংসদ কর্মীরা পেশ করেছেন বলে আমার স্মরণ হয় না।

এফডিসি-বিরুদ্ধ এই ধারার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্রপ্রেমী পাঠচক্র, ছোট ও ‘অ-বাণিজ্যিক’ ছবির নির্মাতা এবং প্রদর্শনীর আয়োজক, হালে তথ্যচিত্র নির্মাতা ও টেলিভিশন চিত্র (প্যাকেজ নাটক) নির্মাণ-প্রতিষ্ঠান। ইদানিং টেলিভিশনে প্রদর্শিত দৈর্ঘ্য-বেড় কিছু নাটককে টেলিফিল্ম বলা হচ্ছে। আপাতত এই পদবিভ্রাটটি নিয়ে আলোচনা অপ্রয়োজনীয়। যাই হোক, গত দু’ তিন বছর ধরে এই ধারার মানুষজন ঢাকাই চলচ্চিত্রে ‘অশ্লীলতা’ প্রসঙ্গে আলাপ গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন। প্রাথমিকভাবে সে আলোচনাগুলো নিজেদের মধ্যে ছিল। পরবর্তী কালে সভা-সমিতি, আলোচনা অনুষ্ঠান করে এ ব্যাপারে পরস্পরকে সজাগ করবার চেষ্টা তাঁরা করেছেন। এফডিসি’র চলচ্চিত্র নির্মাতাদের তাঁরা এ সকল আলোচনার শরীক করবার চেষ্টা করেছেন এমন নজির খুব ছিল না -তার মানে যাই হোক না কেন। স্পষ্ট থাকা দরকার, এফডিসিকে সমালোচনা করবার তাগিদ তাঁদের দিক থেকে নতুন নয় -তা আগেই উল্লেখ করেছি। কিন্তু এই সময়কালে এফডিসিকে মূল্যায়ন করবার ক্ষেত্রে ‘অশ্লীলতা’ কেন্দ্রীয় এবং সর্বাত্মক ধারণা হিসেবে কাজ করেছে।সেটা গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বতন্ত্র মনোযোগ পাবার দাবিদার।

প্রশ্ন হচ্ছে: এই সময়কালটার গুরুত্ব কী? নিশ্চয়ই একটা কেবল নয়, কিন্তু আমি সম্মুখে রাখতে চাইছি দুটো মাত্র বিষয়কে। এক, তথ্যচিত্রের ভোক্তা-পৃষ্ঠপোষক সৃষ্টি। দুই, টেলিভিশন সম্প্রচারকেন্দ্রের উল্লম্ফন। তথ্যচিত্র কিংবা প্রামাণ্যচিত্রের তেমন কোন কদর কিছুকাল আগেও ছিল না। এমনকি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিভিশন সম্প্রচারকেন্দ্র বেড়ে যাবার পরও বাংলা ভাষার কেন্দ্রগুলো মুখ্যত তথ্যচিত্রের পৃষ্ঠপোষক হয়নি। এই ধারার চলচ্চিত্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক দাঁড়িয়েছে উন্নয়ন সংস্থাসমূহ, এমনকি প্রধান ভোক্তাও তারাই -স্থানীয় কিংবা বহুজাতিক উন্নয়নসংস্থা, দাতাসংস্থা সমেত। তথ্যচিত্রের বিষয় ও প্রসঙ্গ নির্ধারণে উন্নয়নের প্রবল আলোচনা নির্ধারকের ভূমিকা রেখেছে। এভাবে, ব্যয় নির্বাহে অসম্ভবপ্রায় একটা ক্ষেত্রের চলচ্চিত্র-নির্মাতারা পেয়ে গেছেন দারুণ সুযোগ। এমনকি গড়ে ওঠা সুযোগে অনেক নির্মাতা তথ্যচিত্র বানাবার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলেও ঠাহর হয়। এই বিষয়টা সময়কালটাকে বুঝতে সাহায্য করে বলেই আমার যুক্তি। এবং বিনীতভাবে প্রাসঙ্গিক একটা প্রস্তাবনা রাখতে চাই: অধিকাংশ তথ্যচিত্রের মুখ্য, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ, ভূমিকা দাঁড়িয়েছে উন্নয়ন-ধারণার বিজ্ঞাপনচিত্র হিসেবে। এ ব্যাপারে বিশদ আলোচনার সুযোগ আছে, কিন্তু সেটা মূল প্রসঙ্গকে আড়াল করতে পারে এমত আশঙ্কা। টেলিভিশন সম্প্রচারকেন্দ্রের উল্লম্ফন বলতে সাধারণভাবে আমি স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে অনেকগুলো চ্যানেলের জন্ম হওয়া বোঝাচ্ছি। কিন্তু কেবল প্রযুক্তির ব্যাপার নয়। চ্যানেলের মালিকানা সংক্রান্ত আইন-কানুন বদলেছে -সেটা বিবেচনায় রাখা দরকার। আর চ্যানেলগুলো অধিকাংশই দিবারাত্র চালু থাকে। প্রচুর নির্মিত অনুষ্ঠান এদের দরকার পড়ে। সেই প্রয়োজন আপাত নির্মাতাদের জন্য সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে -ছবি বানাবার আগ্রহ ও উদ্যমের জন্য পায়ের নিচে মাটি পেয়েছেন তাঁরা। এই প্রক্রিয়ার অনিবার্য ফলাফল হচ্ছে এন্তার ‘প্যাকেজ নাটক’। এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক অবশ্যই দেশীয় ও বহুজাতিক পণ্য-উৎপাদকেরা -প্রত্যক্ষভাবে নয়, বিজ্ঞাপনে খরচ করা টাকার মধ্য দিয়ে। দুয়েকটা ব্যতিক্রম দুই ধরনের পৃষ্ঠপোষককে একীভূত করেছে। সেখানে দেখা যায়, স্বাস্থ্য পরিষেবা বিলিকারী উন্নয়নসংস্থাগুলো স্বাস্থ্য-ধারণা গড়ে দেবার লক্ষ্যে খ্যাতিমান প্যাকেজ নির্মাতাদের দিয়ে ‘নাটক’ বানিয়ে নিচ্ছেন।

ছবি বানানোতে এফডিসি বহির্ভূত লগ্নীকারীরা তাহলে উন্নয়নসংস্থা ও পণ্যনির্মাতা কোম্পানি। আর এদের উদ্দীষ্ট নির্মাতারা হচ্ছেন এফডিসি বহির্ভূত নির্মাতা ওরফে বিরুদ্ধ-ধারার ওরফে চলচ্চিত্র সংসদ কর্মী। কিন্তু নির্মিত চলচ্চিত্রের উদ্দীষ্ট দর্শক কারা সে প্রশ্ন আরও জটিল। তবে সে ব্যাপারে সাদামাটা একটা অনুমান থাকলে ‘অশ্লীলতা’ প্রসঙ্গ উত্থাপনের প্রেষণা বোঝা সহজ হয়। টেলিভিশনের দর্শক বহুবিধ হলেও সকল শ্রেণী ও গোষ্ঠীর পক্ষে আদর্শমান খাড়া করবার চল নেই। তাছাড়া টেলিভিশনের দর্শকদের বড় একটা অংশ কেবল দুয়েকটা চ্যানেলের দর্শক। আর তথ্যচিত্রের তেমন দর্শকের প্রয়োজনই নেই। এর দর্শক হচ্ছে খোদ দাতাসংস্থা, উন্নয়নসংস্থা, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও কর্মীবৃন্দ। এদের মধ্যে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক সমেত শিক্ষিত একটা গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত।

বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সময়কালটার গুরুত্ব অপরিসীম। ‘অশ্লীলতা’ বিষয়ে সংসদ কর্মীদের আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে প্রচারণার কাজও শুরু হ’ল। ‘সচেতন’ করে তুলবার প্রয়াসে লেখালেখি, প্রচারপত্র বিলি শুরু হ’ল। এতে কিছু একটা হয়েছে তা বোঝা যায় এফডিসির দুয়েকজন নির্মাতার নড়াচড়া দেখে। তাঁরা নিজেদের ছবির বিজ্ঞাপনপত্র বা পোস্টারে ‘ছবি না দেয়া’ শুরু করলেন। এই পোস্টারগুলো দেখতে অনেকটা সংসদকর্মীদের বানানো পোস্টারের মতই ছিল। কিন্তু ছায়াছবির বিজ্ঞাপন ছবিহীন!অনেকে নিশ্চয়ই স্তম্ভিত হয়েছিলেন। কিন্তু এই শুদ্ধি অভিযানের কোনও এক মহত্ত্ব তাঁরা উপলব্ধি করে মেনে নিয়েছেন। তাছাড়া ‘অশ্লীলতা’র চিন্তুক অংশ ঢাকাই ছায়াছবির ইন্ডাস্ট্রি দিয়ে চিন্তিত নন। সম্ভবত, ‘অশ্লীলতা’ ধারণার বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মীগণ তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। যাক্, শেষমেশ এফডিসি’র লোকজন ‘সচেতন’ হতে শুরু করেছেন!

মেঘমল্লার_(২০১৪)

আলকাতরা পর্ব

এই পর্বটি ছোট কিন্তু ভারী গুরুত্বপূর্ণ। ‘অশ্লীলতা’ রোধে এফডিসি’র নির্মাতা ভেবে-চিন্তে কেন পোস্টারে ছবি না দেয়ার মত মহৎ সিদ্ধান্তটিই নিতে পারলেন? কারণ, তাঁদের ভাবনায়, চলতি ঢাকাই ছবির পোস্টারে নারীর ছবি থাকে এবং সেগুলো ‘অশ্লীল’। শ্যামলাল আবিষ্কারের জন্য জাল গুটিয়ে ফেলা হ’ল প্রায়। এই সময়কালে ঢাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে সংস্কৃতির বিশ্লেষণে ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ একটি পদক্ষেপ গৃহীত হয়। মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে পরিচালিত একটি রাজনৈতিক দল -স্বল্প সমর্থনের কিন্তু সংস্কৃতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ -মূল সমস্যা পোস্টারে প্রদর্শিত নারীর ছবি ঢেকে দেবার উদ্যোগ নেন, অশ্লীলতার প্রতিবাদে। কথিত যে, এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় বহু পুরাতন বিশ্বস্ত দ্রব্য আলকাতরা। পুরুষ-চক্ষু মনোরঞ্জনে ছবি নির্মাতারা যে সকল নারীকে, নায়িকা সমেত, পোস্টারে পরিবেশন করেন -সে সকল নারী ঢাকা পড়ে যেতে থাকেন আলকাতরার প্রলেপে, মুক্তিদায়ী রাজনৈতিক কর্মী-বোদ্ধাদের হাতে। এভাবে ‘অশ্লীলতা’ ওরফে চলচ্চিত্রের অভিনেত্রীদের বিরুদ্ধে আলকাতরা-যুদ্ধ চলতে থাকে। পোস্টারে মেশিনগান হাতে দাঁড়িয়ে থাকা, দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে থাকা বীর নায়কের সঙ্গে বিপ্লবী রাজনৈতিক কর্মীর চোখাচোখি হয়।

উদ্যোক্তাদের ভাষ্যে এই প্রতিবাদ প্রতীকী। অবশ্যই প্রতীকী। আমাদের কারো কারো স্মরণ হয় জালিম এরশাদের সময়কালে একটা উদ্যোগের কথা। বাংলা একাডেমির মেলায় এবং অপরাপর জায়গায় ‘অশ্লীলতা’ দূর করতে আলকাতরা হাতে নারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে লেঠেল কিছু পুরুষ। প্রতীকী মিলটা কোথায় পাওয়া গেল? এভাবে, বাংলাদেশের বিপ্লবী রাজনৈতিক কর্মীদের একাংশ ইন্ডাস্ট্রিকে আড়াল করতে ভূমিকা রাখলেন। নারীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেয়ে অনায়াস ও ঝুঁকিহীন।

 

অদৃশ্য ইন্ডাস্ট্রি এবং নারীকে টার্গেটকরণ

আলোচ্য পুরো তৎপরতায় আড়াল হয়েছে চলচ্চিত্র শিল্প। এর মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্করাজি, দর্শকদের জন্য দৃশ্যমান সামগ্রী উৎপাদন প্রক্রিয়া অবিশ্লেষিত থেকেছে, ধারাবাহিকভাবে। দৃশ্যমান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অর্থ বা মানে দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া চলছে -সন্ত্রাসের অর্থ, বীরত্বের অর্থ, যৌনতার অর্থ, সতীত্বের অর্থ, স্বামী-সন্তানের অর্থ, পরিবারের অর্থ, বিদ্রোহের অর্থ, ন্যায়-অন্যায়ের অর্থ। ভদ্রলোকেরা কিংবা বিপ্লবীরা সেই ছায়াছবিকে পছন্দ করেন নাকি অপছন্দ করেন -তার থেকে ঢের ঢের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এটা। পোস্টারে প্রদর্শিত নারী কি এই অর্থ নির্মাণ প্রক্রিয়া থেকে বিযুক্ত? নাকি তিনি এই নির্মাণ প্রক্রিয়ার কারক?

ইন্ডাস্ট্রিকে অদৃশ্য করে ফেলা এবং নারীকে টার্গেট করা -এই দুয়ের রাজনীতি সম্পর্কিত। সংস্কৃতি প্রসঙ্গে উপলব্ধিকে স্পষ্ট করবার জন্য, আমার যুক্তি, একে শনাক্ত করা দরকার। কয়েকটা সাধারণ পর্যবেক্ষণ এখানে হাজির করতে চাই। প্রথমত, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরপরই বাইরে থেকে পর্নোগ্রাফি আমদানি করার ব্যবস্থা হয়েছে। আগে যাই হোক, সদ্য স্বাধীন দেশে একে রোধ করা সম্ভব ছিল, রোধ করতে ইচ্ছুক বহু কর্মী ছিলেন। কিন্তু রোধ হয়নি। পর্নোগ্রাফি যে নারীর অস্তিত্বের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ আঘাত সেই জ্ঞান বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের নিশ্চিত করেই ছিল। কিন্তু আমদানিকারকদের কখনোই বড় মাপের মোকাবিলায় পড়তে হয়নি। কেন হয়নি? এর উত্তর সোজা, আমদানিকারকদের অনেকেই একাধারে পর্নোছবির পরিবেশক ও প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মী। জহির রায়হান যে কারণেই নিখোঁজ হোন না কেন, তাঁর অপসারণ পর্নোব্যবসাকে সহজ করে দিয়েছে। তিনি একে মোকাবিলা করতে চেয়েছিলেন এবং শুরু করেছিলেন।

দ্বিতীয়ত, চলচ্চিত্র শিল্পে বিপুল সংখ্যক যে শ্রমিক কাজ করেন তাঁদের জীবন-যাপন, সংগঠন-সংগ্রাম নিয়ে কখনো ভাবানোর মত বক্তব্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক মহল থেকে হয়েছে বলে স্মরণ হয় না। এখানে এটা অবশ্যই খেয়াল রাখবার মত যে, এই শ্রমিকদের লিঙ্গীয় পরিচয় কাজের ধরনে স্পষ্ট ভেদরেখা তৈরি করেছে। চলচ্চিত্র-শিল্পপতিরা নারী শ্রমিকদের ভূমিকা নির্ধারণ করেছেন যৌনবস্তু হিসেবে। চলতি ভাষায় এক্সট্রা বলতে যা বোঝানো হয়ে থাকে তাঁদের পর্দা-উপস্থিতি বিশ্লেষণ করলেই এ ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়। কিন্তু বিষয়টা কেবল এখানে সীমাবদ্ধ নয়। এক্সট্রাদের জীবনে আরও নানাবিধ নিপীড়ন অবিচ্ছেদ্য হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: নগণ্য মজুরী, মজুরীর অনিয়ম, নির্দিষ্ট পেশা-চুক্তির অভাব, ধারাবাহিক অমর্যাদা থেকে শুরু করে যৌন হয়রানি পর্যন্ত। পুরুষ শ্রমিকদের বেলায় যৌন হয়রানি ছাড়া অপরাপর নিপীড়ন বলবৎ আছে। নিপীড়িত দশার মধ্যে তুলনা করা অর্থহীন। কিন্তু চলচ্চিত্র-শ্রমিকদের মধ্যকার নারীরা পুরুষদের তুলনায় নাজুক জীবন যাপন করছেন সেই বাস্তবতাটা উপলব্ধি করা আবশ্যিক। পুরুষদের পর্দা-উপস্থিতির আকর পরিচয় হচ্ছে শক্তিমান, ক্ষেত্রবিশেষে বুদ্ধিমান। নারীর যৌনবস্তু হওয়া এবং পুরুষের শক্তিমান হওয়া, সরলীকরণের আশঙ্কা সত্ত্বেও বলতে চাই, দৃশ্যপ্রক্রিয়া হিসেবে আধিপত্যশীল -হলিউড থেকে মুম্বাই, টালিগঞ্জ থেকে ঢাকাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি অব্দি। কিন্তু, বিপ্লবী সংস্কৃতি কর্মীরা শনাক্ত করেছেন ‘অশ্লীলতা’।

তৃতীয়ত, শ্রমিকদের বাইরে খোদ নায়ক-নায়িকা চরিত্রগুলোও গড়পরতায় ‘যৌনবস্তু-শক্তিমান’ জোড়া ধারণাতে বন্দি। আর স্বামী-সন্তান-সতীত্ব নারীর চূড়ান্ত আশ্রয়। বুর্জোয়া পরিবার কাঠামো এবং মূল্যবোধ নিয়ে এঙ্গেলস-এর মর্মভেদী সমালোচনার সোয়া ’শ বছর পরেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের এই উৎপাদন প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়নি।

চতুর্থত, দর্শক শিকার করা হচ্ছে কিভাবে তারও কোনো বিশ্লেষণী হদিস মেলে না। দফায় দফায় দাম বেড়ে সিনেমা হলের টিকেটের দাম এখন যথাসম্ভব চড়া। একটা পর্যবেক্ষণ চলচ্চিত্রের ‘অশ্লীলতা’ চিন্তাগ্রস্ত সংস্কৃতি কর্মীরা হাজির করেন। তা হচ্ছে: ‘অশিক্ষিত’ ‘অসচেতন’ মানুষেরাই চলচ্চিত্রের প্রধান ভোক্তা। তার মানে গরিবেরা? তাহলে গরিব দর্শকদের বড় অংশই পুরুষ এবং তাঁদের স্ব-শ্রেণীর নারী (এক্সট্রা, বর্তমান আলোচনায় তাঁরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ) সমেত নারীকে যৌনবস্তু বানিয়ে ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশী পর্নো হাজির করছে সিনেমা হলে। আর নারী দর্শকদের জন্য, সংখ্যায় তাঁরা যাই হোন না কেন, হাজির করছে স্বামী-সন্তান-সতীত্বের মাজেজা। পর্নো আর সতীত্বের মাঝে দর্শকের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির বাঘবন্দি খেলা। ঢাকার চলচ্চিত্র সংসদ কর্মী এবং বিপ্লবী সংস্কৃতি কর্মীর তৎপরতায় ইন্ডাস্ট্রিটা হাওয়া হ’ল কেন?

???????????????????????????????

সুস্থ সংস্কৃতি-অপসংস্কৃতির টানাপড়েন

‘অশ্লীলতা’ নিয়ে বর্তমান আলাপ-আলোচনা, হৈ চৈ, তৎপরতার পেছনে সুস্থ সংস্কৃতি বনাম অপ-সংস্কৃতির দ্বিবিভাজন কাজ করছে। এই ভেদবিচার বাংলাদেশের শিক্ষিত শহুরে সেক্যুলার মধ্যবিত্তের চিন্তায় একেবারে কেন্দ্রীয়। একটু স্মৃতি হাতড়ালে মনে করা যায়, ‘মৌলবাদ’কে ভালমত আবিষ্কার করার আগে এই ভেদবিচারই ওই শ্রেণীর সংস্কৃতি-ভাবনার আকর বৈশিষ্ট্য ছিল। বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীদের ক্ষেত্রে সেটা আরও গুরুত্বের দাবি রাখে।কিন্তু সাহিত্য-সংস্কৃতির আলোচনায় ঐ বিশেষ ‘অপসংস্কৃতি’ সঠিকভাবে কী অর্থ বহন করে সেটা নির্ণয় তাঁদের জন্য বরাবরই কঠিন এবং অন্যদের জন্য ধোঁয়াশা থেকে গেছে। বুর্জোয়া সংস্কৃতিকে বিশ্লেষণের দায় তাঁরা বোধ করেননি -এটা আমার বক্তব্য নয়। আমার বক্তব্য হচ্ছে: এই দায় থেকে ‘অপসংস্কৃতি’কে কেন্দ্রীয় ধারণা হিসেবে দাঁড় করিয়ে তাঁরা সংস্কৃতির আলোচনাকে অসম্ভব করে তুলেছেন এবং প্রবল শ্রেণীর জাতীয়তাবাদী অবস্থানের সঙ্গে নিজেদের মানানসই করে তুলেছেন। স্মরণ করতে পারি, ৮০’র দশকে নগরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা পশ্চিমা ধাঁচের ব্যান্ড-গানগুলো এই শ্রেণীর মুখ্য লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল, কিন্তু রেকর্ড কোম্পানি কর্তৃক আত্মসাৎকৃত এবং গীতিরীতিবিবর্জিত দরিদ্র মানুষের গানগুলো তাঁদের পছন্দ হয়েছিল। এটা নিছক একটা উদাহরণ মাত্র। আমার বক্তব্য হচ্ছে, হালে ‘অশ্লীলতা’র প্রসঙ্গালাপ অস্পষ্ট হতে থাকা অপসংস্কৃতিকে সংজ্ঞায়নে দারুণ সাহায্য করেছে। চিন্তুক বর্গ অপসংস্কৃতিকে মূর্ত করবার সুযোগ পেয়েছেন এবং স্ব-শ্রেণীর সদর্থ পুনরারোপ করবার ক্ষেত্র লাভ করেছেন।

এখানে স্ব-শ্রেণীর সদর্থ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ শব্দমালা বলে আমার যুক্তি। কারণ এটিই, আমার মতে, ডান-বাম নির্বিশেষে অঘোষিত এক মৈত্রী এনে দিয়েছে। ওখানেই এই তৎপরতাগুলোর শক্তিমত্তা। এরই জোরে, সম্ভবত, এফডিসি’র নির্মাতাদের একাংশ প্রতিপক্ষ নির্মাতাদের ঘায়েল করবার জন্য সামিয়ানা টাঙিয়েছেন, এবং অভিনেত্রীদের শ্যামলাল সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু সেটা বর্তমানে আলোচ্য নয়। এখানে আলোচ্য সবল শ্রেণী, মানে শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। সবল শ্রেণীর পক্ষে অন্য শ্রেণীকে ঘায়েল করবার, পর্যুদস্ত করবার, দাবিয়ে রাখবার একটা দুর্দান্ত পরিক্ষেত্র হচ্ছে নৈতিকতার ক্ষেত্র। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এখন ৫০ চ্যানেলের ভোক্তা। সেখানেও পর্নোগ্রাফি, নারীকে যৌনবস্তু বানাবার প্রক্রিয়া। আর মধ্যবিত্ত পারিবারিক মূল্যবোধ সেখানে নিরন্তর পুনরুৎপাদিত হয়ে চলেছে। দৃশ্যমান সামগ্রীর সামনে এখন নিরাপদ মধ্যবিত্ত সত্তা। ফলে অন্য শ্রেণীর ভিজুয়াল দুনিয়া শাসন করার জন্য মোক্ষম সময় এটা, এবং তা নৈতিকতার জোরে। এখানে উল্লেখ করা দরকার, বাম চিন্তুকেরা, বাংলাদেশে, কখনোই বুর্জোয়া পরিবার ও যৌনতার পরিসীমাকে চ্যালেঞ্জ করেন নাই।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের সাফাই গাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি কেবল ‘অশ্লীলতা’ চিন্তুকদের চলচ্চিত্র শিল্পকে আড়াল করবার প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছি। চলচ্চিত্রের নারীদের একবার যৌনকরণ করেন ছবি-নির্মাতারা, দ্বিতীয় বার করছেন সংস্কৃতি-কর্মীরা।তাঁদের বিশ্লেষণ-সামর্থ্যরে দায়ভার আলকাতরার তোপের মুখে থাকা নারীদের নিতে হবে কেন?

 

[এই লেখাটি দাঁড় করাতে গিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প এবং এর শ্রমিক নিয়ে নিভৃত ভাবুক এবং নারীর সামাজিক অস্তিত্ব প্রসঙ্গে চিন্তুকদের কারো কারো কাছে আমি ঋণী। – লেখক]

 

২৫ নভেম্বর ২০০১

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo
গল্প-লিখিয়ে, বিশ্লেষক, অভিনেতা, নৃবিজ্ঞানী। মানস চৌধুরী (১৯৬৯-) গল্প লিখতে শুরু করেন কেবল এই ভাবনা থেকে যে প্রবন্ধের থেকে গল্প প্রকাশনা সহজ হবে। তবে তার কপাল বিশেষ ভিন্ন হয় না এমনকি এই নতুন ধারাতেও।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →