Main menu

‘KHOJ : THE SEARCH’ এবং ‘পাউরুটি’

যে কোনো কিছুর টাইটেল, আপনে যখন দেখবেন দুইটা ভাষায় লেখা হইতেছে- স্বাভাবিক মার্কেটিং পলিসি হিশাবে ধইরা নেওয়া যায় যে পয়লাটা লেখা হইবে লোকাল মাদার লেঙ্গুইজে; যেহেতু এইটা বেচার মতোই একটা মাল আর এইটা টার্গেট করতেছে মোস্ট পিপলের চাহিদারেখারে। সুতরাং, দোসরা যে লেঙ্গুইজ সেইটা হইতে পারে সবচে’ বড় ক্যাপিটালিস্ট কিংবা বাজারি ভাষাটা। [pullquote][AWD_comments][/pullquote]

অনন্ত জলিল প্রোডিউসার হিশাবে যখন (তিনি এই সিনামার নায়কও আছিলেন বটে) ২০১০ সনে KHOJ : THE SEARCH নামে একখান সিনামা চলতি বাজারে আনলেন, আমরা ঠাওর করতে পারতেছিলাম না যে এই নামের পদ কীরূপে তৈয়ার হইল। এইটুকু বুঝতে তকলিফ হয় নাই যে উনি যেহেতু এই সিনামাটা সিঙ্গাপুর-কাতার-ইংল্যান্ড-ইতালিতে প্রকাশ ও প্রচার করবেন ব্যবসার ধান্দায়, মার্কেটিং পলিসি হিশাবে ইংরাজি নাম রাখা হইছে বাঙলা টাইটেলের তর্জমায়। এইটা তো স্বাভাবিকই। কিন্তু, এইরকম আওয়াজ কানে আইতে থাকলো এবং আমরা দেখতে পাইলাম যে অনন্ত জলিল প্রচারের লাইগ্যা যেহানেই যান সিনামার নাম কন : খোঁজ দ্য সার্চ। শুদ্ধ অনন্ত জলিল নহে; বেবাক কো-অ্যাক্টর আর টেকনিক্যাল টিমের সবাই মিলাই এইরকম কইতেছিলেন। মানে পুরাটা একটা নাম হইয়া খাঁড়াইয়া গেলো। আলাদা কইরা যেইটা বাংলার ব্যাকআপ হিশাবে তর্জমা করা আছিল, সেইটা জোড়া দিয়া বাঙলা আর ইংরাজি মিলা একটা নাম হইয়া গেলো! মুশকিলটা হইল এইখানে যে, ‘খোঁজ’র ইংরাজি হিশাবে ‘দ্য সার্চ’ রে আনা হইছিল টাইটেলে। যেহেতু দুইটা একই মিনিং দিতেছে অথবা বহন করতেছে একই অর্থ সেহেতু দুইটারে যোগ কইরা ক্যামনে ‘একটা টাইটেল’ হয় আর সেইটারে একলগে কইরা সিনামার প্রচার হয় এইরকম একটা ছবক [ব্যাঙের মাথার ইমো হবে] আমরা পাইলাম অনন্ত জলিল ও তার টিমমেটগো কাছ থেইকা। পরে দ্যাখা গেলো বিষয়টা পপ কালচারে পরিণত হইছে। আপনে গুগলে সার্চ মাইরা দেখতে পারেন। ‘খোঁজ’ লেখার লগে লগে হাইফেনসহ ‘দ্য সার্চ’ আইসা হাজির হয়। পপ কালচারের এলিমেন্ট হিশাবে এইটার পজিশন এখনো কই আছে সেইটা বুঝানির জন্য এই নমুনাটা দিলাম।

এইবার আপনের যদি অবসর হয় তাইলে হয়ত তালাশ করতে পারেন : সব বুঝছি। কিন্তু পাউরুটির আলাপ তো কোথায় পাইলাম না! এই নসিহতে পাউরুটির জরুরত কি? জরুরত এইরকম যে, অই ‘পাউরুটি’ ‘খোঁজ-দ্য সার্চ’ পদের মতোই জিনিস। J

‘দ্য সার্চ’ যেমন ইংরাজি আছিল এইরকম ‘পাউ’ হইল পর্তুগীজ শব্দ। কিন্তু এই ‘পাউ’ শব্দটা আমাগো কালচারে আইলো ক্যামনে! আমরা বিবিধ আন্দাজে ঢিল মাইরা দেখতে পারি। এমনটা হইতে পারে যে পার্সিয়ানরা এই শব্দটা পয়লা গুজরাটে লইয়া আইছিলেন। আমি ঈসায়ী নবম শতকের কথা বলতেছি। আপনে কইতে পারেন, পর্তুগীজ শব্দ পার্সিয়ানরা আনব কইত্থেকে? দেখেন, এমন হইতে পারে কিন্তু! গ্রীকরা ফার্স অঞ্চলের লোকগোরে পার্সিস কইয়া বোলাইতো আর সেটা দেইখা পুরা এয়ুরোপ তাগোরে ডাকা শুরু করল পার্সিয়া কইয়া। পরে তারা নিজেরাই নিজেগোরে পার্সিয়ান হিশাবে পরিচয় করাইতে লাগল। এইরকম ভাবে পর্তুগীজরাই এই শব্দ ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টে লইয়া আসছে এইরকম নিশ্চিত ভাবনার কোনো কারণ নাই। যে কোনো নিশ্চিত ভাবনার তালাশ করলে দ্যাখা যায় যে আপনি পরে তার তল খুঁইজা নাও পাইতে পারেন। পরে হিস্ট্রি আপনার লগে পল্টি মারতে পারে। এইরকম চিন্তা করার আরো কিছু কারণ আছে মেবি।

পার্সিয়ানরা গুজরাটে পয়লা যখন আইলো তখন থেকেই তারা গুজরাটের কালচার এবং অইখানের মানুষগো লগে মিশা যাইতে শুরু করল। এই যে মিশা গেলো কইতেছি- এইটার একটা কাহাওয়াত আছে। পার্সিয়ানরা আসছিল গুজরাটের সঞ্জান এলাকায়। আসার পরপরই সঞ্জানের রাজা তাগোর কাছে চুপচুপ দুধে ভরা একটা বাটি পাঠাইলেন। তিনি বুঝাইতে চাইলেন, উনার রাজ্যতে থাকার মতো আর জায়গা নাই। পার্সিরা করল কি অই দুধে চিনি মিশাইয়া রাজারে দেখাইলেন যে দুধ বাটি থেকে উপচাইয়া পইড়া যাইতেছে না উল্টা মিশা যাইতেছে একদম। মানে, তারা গুজরাটের আমজনতার লগে মিশা থাকতে পারব। এতে কোনো সমস্যা হইব না (অবশ্য কয়েক যুগ আগে থেকেই মুম্বাইতে পার্সিয়ানরা নিজেগোরে আলাদা আইডেন্টিটি দেওনের ট্রাই করতেছে আর সেই মোতাবেক বাকি সবাইরে ‘ঘটি’ কইয়া বোলাইতেছে। ঘটি, যার মানে হইল সৈকতের আবর্জনা। মুম্বাইওয়ালারাও তাগোরে ছাইড়া কথা কয় নাই। যেহেতু পার্সিয়ানরা দ্রুত কথা কয়, এইজন্য তারা তাগো নাম দিল ‘কাগহা খাউস’)।

তারা যে গুজরাটের কালচারের লগে মিশা গেছিল এইটার একটা নমুনা পাইতে পারেন মহারাষ্ট্রের একটা কমন খাবারের নামের থেইকা। সেইটা হইল পাও ভাজি। সেই পর্তুগীজ ‘পাউ’ থেকেই পার্সিয়ানরা এই ‘পাও’ যুক্ত করছে ভাজির লগে। এমনটাই আমার ধারণা। আর গুজরাটের নিরামিষভোজী লোকাল কালচারের কারণেই পাও ভাজির ভাজিটা নিরামিষ হিশাবেই তৈয়ার হইতে লাগল। পরে গুজরাটের এই জলখাবার ছড়াইয়া পড়ল পুরা মহারাষ্ট্রে। যেমনটা মহারাষ্ট্রে গুজরাটি ভাষা মারাঠিরে ডমিন্যান্ট কইরা থাকে তেমন কইরা কালচারালি এইসব গুজরাটি কেতা ছড়াইয়া পড়ল পুরা মহারাষ্ট্রে। তাইলে, এই পর্তুগীজ ‘পাউ’ এর অর্থটা কি?

যেমনটা আপনাদের আগেই কইছিলাম, দ্য সার্চের মতোই পাউ এর অবস্থা। পর্তুগীজ পাউ(pão) এর বাঙলা হইল রুটি। ইংরাজি করলে হয় ব্রেড। তাইলে পাউরুটি মানে কি খাঁড়াইলো? রুটিরুটি! মানে দুইটা শব্দ একই মানে বহন করতেছে। খোঁজ-দ্য সার্চের মতোই ‘পাউ’ আর ‘রুটি’ একলগে জোড়া লাইগা একটাই পপুলার মিনিং তৈয়ার হইল এই দ্যাশে।

দ্যাখা যাইতেছে অনন্ত জলিল গংয়ের বহুল প্রচারের আগ্ থেকেই বাঙলা ভাষায় একই রকম অর্থ নিয়া, দুইটা শব্দ একটা শরীরেই যায়গা লইয়া, একটা মানে হিশাবেই চলতেছে। ঘাঁইটা দেখলে না জানি বাঙলা ভাষার শিনা-হাড্ডি-কলিজা হইতে আরো কত এইর’ম শব্দ বাইর হইয়া আসবে কে জানে! ও আল্লা মাবুদ…

The following two tabs change content below.
Avatar photo

মেহেরাব ইফতি

সিনিক; পোয়েট; এসেয়িস্ট; ক্রিটিক; ট্রান্সলেটর; ইন্টারভিউয়ার; প্রুফরিডার; লিটারারি-এজেন্ট। জন্ম, ১৯৯৭ সনে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →