রিভিউ: ‘জিজেকের জোকস’: এবং জাবর কাটা মানুষ
ভাবতেছিলাম শুরু করমু কইত্থিকা।
এমন একখান জিনিস হাতে পাইলাম যার পুরাটাই শুরু পুরাটাই শ্যাষ। বুঝেন নাই? রসবোধ মূলত এই জিনিসই। কসম কইরা কইতেছি আমি জিজেকের নাম এই প্রথম শুনলাম, দ্যাকলাম, পড়লাম, আর কী কী করলাম তা জানতে চাইলে ভ্যাট লাগব। [pullquote][AWD_comments][/pullquote]
কে এম রাকিব সাব্রে ধন্যবাদ জানাই, তিনি আমগো লগে জিজেকের এই জোক্সগুলার পরিচয় ঘটাইন্যার ভিত্রে দিয়া এক অসাইধ্য সাধন করছেন।
যদিও বাঙালির ভিত্রে রসের কমতি নাই। বারোমাস ধইরা তারা নানাবিধ রসের ভিত্রে দিয়া যাওয়া আসা কইরা থাকে। হাস্যরস তার ভিত্রে অন্যতম।
প্রত্যেক ‘ভাষা’গোষ্ঠীরই আছে তাদের নিজস্ব এবং আলাদা আলাদা রস-মস্তিষ্ক। সেই মস্তিষ্কেরও আছে আলাদা আলাদা ইতিহাস। তবে এগো ভিত্রেও একটা আদি-মধ্য-অন্তওয়ালা মিল আছে কিন্তু! সেইটা কী তা জানবার চাইলেও পাঠক্রে ভ্যাট দিতে হইব।
জিজেক্রে যেহেতু আমি আগে পড়ি নাই সেহেতু তাঁর উপ্রে বিশদ তত্ত্বীয় প্যাঁচাল পাড়ার ক্ষমতা আমার নাই।
তয়, বইটার ভাষা অপ্রমিত হওনে প্রকৃত জিজেক-রস আস্বাদন করতে পারা গেছে মনে হয়।
বইটা যথেষ্ট স্লিম, কিন্তু ভিত্রে যে মস্তিষ্কের ধোলাই পড়াই, তার তুলনা করার জন্য আমার জ্ঞান ভাণ্ডারে ম্যালা ম্যালা বরাত নাই। পাঠক মাফ করবেন। মাফ না করলে ভ্যাট মাস্ট।
‘মুর্গিটা কি জানে?’ থিকা ‘ চাইপা যান’ পর্যন্ত মোট ৩৭ টা জোক্স আছে বইটার এই স্লিম বডিতে।
জোক্স সবসময় মজার হয়, তার চাইতে বড় কথা জোক্স থিকা জ্ঞান লাভের চাইতে একটু ভিন্ন চিন্তা করার সূত্র পাওন যায়।
পয়লাই কইয়া রাখি জোক্সের ভাষা হিসাবে অপ্রমিতরে নির্বাচন করন একবারে ঠিক হইছে। এই আছিলা ভাষাই জোক্স বয়ানের মাধ্যম হওন উচিৎ।
গভীর ক্ষত মানেই রসের আধার: তা সে করুণ রসই কন আর হাস্যরসই কন।
ফলে যে কোন ক্ষত ছাড়া রস সৃষ্টি প্রায় অসম্ভব। হইবার পারে কোন একটা আধিপত্যবাদী ‘ভাষা’র উপ্রে বিরক্ত হইয়া কিঞ্চিৎ রসিকতার ভিত্রে দিয়া মগজে চিন্তার খোরাকি পাওন যায় একই লগে প্রশান্তির খোরাকও। তাতে কইরা আপনের কষ্টের ‘চিত্তজগত’রে আপনের ‘মস্তিষ্কালোক’ বেশ জোরসে কর্ষণ কইরা যাইতে পারে!
তার ফলে কি হইবার পারে তা আমরা ইতিহাস বাবাজির চেহারামোবারক দেখলে জানবার পারি।
আমরা ‘ জিজেকের জোকস’ নামক স্লিম(চটি না কওনের একশোডা যুক্তি আছে) বইটায় দেখতে পাইলাম আগল পাগল, বেকুব বলদ, ন্যাংটো স্ত্রীলোক, পোপ, খোদা, রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, জাতি, মুরগি, ঘোড়া, কুকুর, শিশু, পুলিশ, হাসপাতাল, ডাক্তার,বন্ধু,কুমির,অর্থ, পুঁজিবাদ,সমাজতন্ত্র, কোন কিছুই বাদ পড়ে নাই অত্যন্ত সূক্ষ্ম রস-বুদ্ধির বিষয় হওন থিকা।
এইবার আসি অশ্লীলতা প্রসঙ্গে।
যদি কেউ ভাইবা থাকেন যে এই গ্রন্থের অধিকাংশ জোক্স অশ্লীল, চটির চাইতে কোন অংশে কম না তাইলে তার ভাবনার উপ্রে ট্যাক্স বসামু। ক্যান বসামু যদি কেউ টের না পায়া থাকে তাইলে, তার জোক্স পড়নের চাইতে আত্মহত্যা করন উচিৎ হইব।
‘মুর্গিটা কি জানে?’ জোকটাতে যেই লোকটার নিজেরে দানার ভিত্রের শাঁস মনে হইতেছিল সে যে শ্যাষ পর্যন্ত তাই হয়া রইল _এই অদ্ভুত চক্রবর্তী জীবনরে অনেক স্বল্প কথায় বুঝায়া সাইরা দিছেন জিজেক।
‘লাল কালি’তে নির্মম নিয়তি উইঠা আইছে অসামাইন্য স্যাটায়ারের কালিতে।
‘কথা ঘুরাইয়ো না’ কথাডা খুব প্রচলিত। কথায় পাইরা না উঠনে অন্য খাতে কথারে প্রবেশ করাইন্যা মাইনষের আজন্ম খাইস্লাত। এই খাইস্লাত্রে এতো প্রাসঙ্গিক কইরা উপস্থাপন মনে অয় অতীতে আর কেউ করবার পারে নাই।
‘আই অ্যাম নাথিং’ প্রায় সব অর্থেই সুপার। এইখানে তিন কিসিমের ‘নাথিংনেসের’ কথা আসছে। তিন কিসিমের হইলেও একেকটা একেকটা থিকা সরেস। একজন র্যাবাইয়ের ‘নাথিং’ হওন, একজন ব্যবসায়ীর ‘ নাথিং’ হওনের ভিত্রে আছে বিনয়। শ্যাষম্যাশ একজন সাধারণ বেচারাগোছের ইহুদির ‘নাথিং’ হওনের ভিত্রে আছে উচ্চমার্গীয় বিনোদন। কেননা ইহুদিটা আসলেই নাথিং। এই যে এক কিসিমের লগে আরেক কিসিমের গিট্টু লাগাইন্যার প্রকৌশল, এর তুলনা হয় না।
‘জখম’টা ঠিক হইয়া উঠে নাই। কেননা, শ্যাষের দুই লাইন্রে জবরদস্তি কইরা ঢুকানো হইছে বইলা মনে হইছে।
‘ঢুকাবো নাকি বাইর করব?’
সম্পর্কে কইলে তো অনেক কতা কওন যায়। অনভিজ্ঞতাজনিত অসঙ্গতি মাত্রই হাস্যরসের অপার উৎস। বেকুব লোকটার প্রশ্নটা ব্যাকরণগত দিক দিয়া ঠিকাছে।কিন্তু এই প্রশ্নের যেহেতু কোন ব্যবহারিক মূল্য নাই সেহেতু এইটা হইয়া উঠছে একখান উচ্চাঙ্গের কৌতুক।
‘পুলিশ’ এ পুলিশের আদি চরিত্র তুইলা ধইরা স্যাটায়ার করা হইছে।
‘তিন দোস্ত’ একেবারে আটপৌরে জোক। অবচেতনের লগে চেতনের গিট্টু বাধাইন্যা জোক। প্রায় একই রকমের ‘ ফাতিমারে চোদা’জোকটা।
‘এ্যাবস্ট্রাক্ট ইউনিভার্সালিটি’ র ঘোড়ার লগে এ দেশীয় ‘গরু রচনা’র জোকের মিলাছে।
‘মাক্স, এঙ্গেলস ও লেনিন’ জোকটা রেসিস্ট জোক হইছে। নারীবাদীরা চ্যাতলেও কিচ্ছু করার নাই। কারণ, ‘ভাষা’র ভিত্রে বিষয়ডা এমনেই জারি আছে সেই জন্মলগ্ন থিকা।
‘কুমির’ আর ‘বিশ্বাস’ মূলত নির্জ্ঞাননির্ভর জোক। এইটাও অতি আদি থিকা ‘ভাষা’র ভিত্রে রইয়া আছে।
‘টাকা’ র ভিত্রে দিয়া জিজেক সমাজতন্ত্ররে পুঁজিবাদ দিয়া রেইপ করাইলেন। এইটার জন্য একটা দুর্দান্ত জোকের জন্ম হইছে।
‘প্রশ্ন’ জোকটা অত্যন্ত স্মার্ট একটা জোক। অপরিচিতের লগে কেমনে আলাপ জুড়তে হয় এইটা জানা গেল। একই লগে বুদ্ধির খেলা দ্যাখলাম আবার কতা কওনের নতুন একটা তরিকাও জানা গেল। এহন থিকা এই তরিকায় কতা কওন লাগব।
ইচ্ছা আছিল সব কয়টা জোক নিয়া প্যাঁচাল পাড়ার। কিন্তু আমার ধৈর্য কম। অতো টাইম নিয়া স্থৈর্যের পরিচয় আমি দিবার পারুম না।
এক কথায় সাইরা দিবার চাই।
অত্যন্ত বোরিং চক্রবর্তী জীবনে ‘জিজেকের জোক’ একখান চিকন চিন্তার সূত্র ধরায়া দিয়া যাওনের ক্ষমতা রাখে। বইটার ভিত্রে মনে হয় জিজেক চুয়িংগাম চিবাইতে চিবাইতে কইতাছেন, ‘ খাড়ান ভাই খালি গরুর মতো জাবর কাইটেন না, এট্টু ভাবনা চিন্তা কইরা দেখেন জীবন কয়দিনের?’
আর রাকিব সাব্রে কমু প্রকৃত জিজেকের স্বাদ পাইলাম তাঁর অনুবাদে।
সেঁজুতি জাহান
Latest posts by সেঁজুতি জাহান (see all)
- রিভিউ: ‘জিজেকের জোকস’: এবং জাবর কাটা মানুষ - ডিসেম্বর 6, 2018