Main menu

নাইন।। এরিক জারোসিনস্কি।। (লাস্ট পার্ট)

অনুবাদকের কথা

জার্মানি আর জার্মান ভাষা নিয়ে লেখা এফোরিজম বা জারোসিনস্কির নিজের মতে কৌতুকগুলা মূলত তার জীবনের খুব খারাপ একটা সময়ের বাই- প্রডাক্ট। কে এম রাকিব প্রথম আমাকে বইটা পড়তে দেন। প্রচলিত বা ভূতপূর্ব বা অভূতপূর্ব পরিবার সমাজ রাষ্ট্র বিশ্ব ব্যবস্থার উপর আমার অরুচির  তৎকালীন বা চিরন্তন যে  সুরতহাল সেটাই হয়তো তাকে এই কাজের কাজী করেছিলো। ট্যুইটার এ বিভিন্ন সময়ে দর্শন, শিল্প সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে করা জারোসিনস্কির ট্যুইট যে এমন সাড়া ফেলে দিবে তা তার নিজেরও ধারণা ছিল না।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

নাইন কোয়ার্টার্লি শিরোনামে করা এই উইটি পানি ট্যুইটগুলা ইতিমধ্যেই বিশ্বের ১২৫টি দেশের প্রায় ১ লাখ মানুষের কাছে রিচ করতে পারছে। হালের বিখ্যাত দার্শনিক স্লাভয় জিজেক নাইন সম্বন্ধে বলছেন যে, “ট্যুইটার আমি পছন্দ করি না। আমি মনে করি যে এটা নিষিদ্ধ করা উচিত। কিন্তু জারোসিনস্কির নাইন হচ্ছে অন্য জিনিস, মূলত এই একটা জিনিসই ট্যুইটাররে জাস্টিফাই করে! তারে মনে হয় সাইকো সিনেমার র‍্যাডিক্যাল নরম্যান বেটস এর মতো শুধু ছুরির বদলে ট্যুইট দিয়া দ্রুত কাটাকুটি চালায়া যাইতেছেন!”

নিউ ইয়র্কে থাকেন এরিক জারোসিনস্কি, নিজেরে পরিচয় দেন ব্যর্থ দার্শনিক হিসাবে। আধুনিক জার্মান সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রিটিক্যাল থিওরির প্রফেসরের দায়িত্ব ছেড়ে তিনি এখন এফোরিস্ট হয়ে উঠতে চাইতেছেন।

নাইনঃ আ মেনিফেস্টো মূলত ট্যুইটারে নাইন কোয়ার্টার্লি শিরোনামে পোস্টানো ওই জিনিসগুলারই একটা ভার্সন। মলাটের চশমাওলা মুখটা যার তিনি হইতেছেন থিওডর এডর্নো যারে নিয়া আমেরিকার নামীদামি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে  একটা চাকরি জোটাতে থিসিস পেপার খাড়া করতে চাইছিলেন জারোসিনস্কি। আর সেই একঘেঁয়ে যান্ত্রিক কাজকাম থিকা দুই দণ্ডের এসকেপ ছিলো সেই ট্যুইটগুলা।

দ্য নিউ ইয়র্কার, দ্য প্যারিস রিভিউ, ফ্র‍্যাংফুর্টার, ড্যের স্পিগেল, দ্য বিলিভার, দ্য ক্রনিকল অফ হায়ার এডুকেশন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, স্লেট ইত্যাদি হেভিওয়েট গণমাধ্যমে ছাপা হওয়া ও বিখ্যাত জারোসিনস্কির এই অসামান্য আকর্ষণীয় আর আগ্রহোদ্দীপক কাজগুলি বাংলা করতে গিয়া জার্মান কিছু শব্দ ছাড়া তেমন বিপাকে পড়তে হয় নাই আমার।

আর এর টেস্ট নিতে গিয়া আপনাদের ঠিক একই অভিজ্ঞতা হবে বলেই আমার ধারণা। হাজার হোক, শীতকাল, খেজুরের রসে নিপাহ ভাইরাসের সম্ভাবনা তাই তা পান করা থেকে বিরত থাইকা আসেন নাইন পান করি। কোন এক সকালে গ্রেগর সামসার আচমকা কীটে রূপান্তর হওয়া সত্ত্বেও প্রথমেই কাজে না যাইতে পারার আশংকা বা দুঃশ্চিন্তাকে যিনি বলছেন ডার্ক কৌতুক সেই ব্যক্তির নিজের কৌতুক আমাদের সবার একবার হলেও চেখে দেখা উচিত বলেই মনে করি আমি।

তানভীর হোসেন

……………………………………………………..

।। ।।

……………………………………………………..

গ্লোসারি

এডর্নোঃ YOLO’ র জার্মান ফর্ম। i

এস্থেটিকসঃ আর্টলেসদের আর্ট।

এনালাইটিক ফিলসফিঃ যখন গণিতবিদরা ফিলসফিতে হাত দেন।

দুঃশ্চিন্তাঃ অজানা কিছুর প্রতি ভীতি। বিষণ্ণতাঃ চেনাজানা কিছুর ভীতি।

এফোরিজমসঃ ১. নতুন বোতলে পুরনো জাহাজ, ২. ব্যস্তদের জন্য দর্শন। কম রসবোধ সম্পন্নদের ব্যক্তিদের দ্বারা লিখিত।

আর্টঃ কোলরিজের চিত্রিত সাগরের উপর এনসিয়েন্ট মেরিনারের চিত্রিত জাহাজটার নীরবতা।

আর্টের ইতিহাসঃ আর্ট ব্যতিরেকে আর্টের ইতিহাস। ইতিহাস ব্যতিরেকে ইতিহাস।

এথিজমঃ প্রার্থনাহীন ধর্ম।

বেঞ্জামিন, ওয়াল্টারঃ ইতিহাস দ্বারা সংক্ষেপিত দর্শনের আহাজারি।

বইঃ সেই সময়কার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন যখন শব্দের জন্য কাগজ অপচয় করা হইতো।

বোর্হেসঃ আর্হেন্তিনার সর্বশ্রেষ্ঠ জার্মান লেখক।

ব্রাঞ্চঃ ছুটির দিনে যার উপর সবাই আস্থাশীল।

ক্যাপিটালিস্টঃ রাষ্ট্রের জলদস্যু আক্রান্ত জাহাজ।

কম্যুনিজমঃ রাষ্ট্রের রাষ্ট্র আক্রান্ত জাহাজ।

পরিবর্তনঃ যা আপনি চান। যখন, যেখানে এবং যেভাবে আপনি এইটা চান না।

নিবিড় পঠনঃ পাঠের পদ্ধতি যা কোনদিনই এমন একটা বই লেখার জন্য লেখা হয়নি যা কোনদিনই পাঠ করা হবে না।

কফিঃ এনলাইটমেন্টের ডাইইউরেটিক (মূত্রবর্ধক)।

কোল্ড ওয়ারঃ লড়ার জন্য একটা ব্যয়বহুল যুদ্ধ কিন্তু রোমান সংখ্যার জন্য খুবই সস্তা।

কমোডিটি ফেটিসিজমঃ কারও শ্রমকে ভুলে এমন কিছু ভেবে বসা যা তুমি কিনতে চাও।

কনজাম্পসন ক্যাপিটালিজমের পছন্দের একমাত্র ওষুধ।

কন্টিনেন্টাল ফিলসফি  বিষণ্ণ থাকলে ইয়োরোপ যা করে।

ক্রেইগসলিস্টঃ সামাজিক চুক্তির সাথে নৈমিত্তিক দেখা সাক্ষাৎ।

কালচার না হওয়া সেক্সের কারণে না খাওয়া সিগারেট।

সিনিসিজমঃ একদিন আপনি আরও ভাল করে জানবেন এই আশা।

ডেড সারটেইনটি ( অবশ্যম্ভাবিতা)ঃ প্রশ্ন ছাড়া সক্রেটিস।

ডিকন্সট্রাকশনঃ অনুবীক্ষণ পড়া। হাতুড়ি দিয়ে চিন্তা করা আর ইরজার দিয়ে লেখা।

ডিগ্রিঃ কারও তাপমাত্রা বা টিউশন নেয়ার জন্য চিকিৎসকদের দ্বারা উদ্ভাবিত।

ডায়ালেকটিকসঃ ক্লাউস ক্লিনস্কির ধারা বিনরণীতে ওয়ার্নার হারজগের ডকুমেন্টারি।

ডিপ্লোম্যাসিঃ তরবারিকে লাঙলের ফালে, লাঙলকে ট্রাক্টরে এবং ট্রাক্টরকে ট্যাংকে রূপান্তরের কলা।

ডিসক্রিশন (বিবেক)ঃ মুর্দাফরাশ যে কখনই মরতে কয় না।

এলিজিঃ মাইনর কি তে বাজানো প্যাথোস।

ইমোটিকনঃ প্রতীক দ্বারা এমন একটা আবেগ প্রকাশ করা যা মুখাবয়ব দ্বারা প্রকাশ করলে আমাদের আর পোষায় না।

ইংরেজিঃ যে ভাষা সবাই বলে কিন্তু কেউ বানান করতে পারে না।

এথিকসঃ কারের ধাক্কায় নিহত কৌতুহল।

ইয়োরোপঃ যে মহাদেশ বামদিকে বাঁধা কিন্তু ডানদিকে সরে সরে যাইতেছে।

পররাষ্ট্রনীতিঃ অযৌক্তিক ঘরোয়া নীতির যৌক্তিক প্রসার।

ব্যর্থ বুদ্ধিজীবীঃ যিনি অন্যের ব্যর্থতাকে বুদ্ধিবৃত্তিক রূপ দিতে ব্যর্থ হন। কখনও কখনও অসাধারণভাবে।

ফ্রাংকফুর্ট স্কুলঃ যে প্রতিষ্ঠান আমাদের ফ্রয়েডকে মার্কসের মতো, মার্কসকে হেগেলের মতো আর এডর্নোকে এডোর্নোর মতো করে পড়তে শিখাইছে।

ফ্রেঞ্চঃ যে ভাষা প্রেমের জন্য উদ্ভাবিত হইছিল কিন্তু পনির, বিপ্লব আর দর্শন বানাতে ব্যবহৃত হইছে।

ফ্রেঞ্চ থিওরিঃ যে আমেরিকানরা এখনও ধূমপান করে।

ফ্রয়েডিয় ত্রুটিঃ অজ্ঞান কারও কথা বইলা ওঠে।

মৌলবাদঃ ভুলবোঝা হইছে এমন কিছুর আক্ষরিক ভুল পাঠ।

জিনিয়াসঃ যখন দুঃখবোধ কথা বলে নিঃসঙ্গতার সাথে। আর হাসে।

জার্মান ভাষাঃ যে ভাষা দর্শন লেখার জন্য উদ্ভাবিত হয়েছিল কিন্তু অটোমোবাইল বানাতে ইউজ হইছে।

জার্মান বিয়ারঃ খুব সতর্কতার সাথে বিশুদ্ধতা সহযোগে চোলাইকৃত আর মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে ধীরে ধীরে ঢালা।

জার্মান সাহিত্যঃ যে সাহিত্যে মেইন চরিত্ররা মারা যায়।

ঈশ্বরঃ ১. একজন দেবতা যিনি দেখতে মার্কসের মতো। নিৎসে যাকে মৃত ঘোষণা করছিলেন আর ফ্রয়েড যারে ঈর্ষা করতেন। ২. আমাদের বিছানাগুলার উপর ঘাপটি মাইরা থাকা দৈত্য।

GOP: একটা আমেরিকান রাজনৈতিক দল যারা ঈশ্বরের অধিনস্ত একটা জাতি সংক্রান্ত মূলনীতির অনুগত। আরেকটা ঈশ্বরের উপরের।

গ্র‍্যাজুয়েট স্কুলঃ পরস্পর সম্পর্কিত ক্ষেত্র সমূহ যা বিচ্ছিন্ন হওয়ার এডভানসড ডিগ্রির সন্ধান করে।

গ্রামারঃ IKEA ii গ্রুপের আসবাবপত্রের এসেম্বল করার নির্দেশনাবলী যা ভিন্ন ভিন্ন দেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু শুধু জার্মান ভাষাতেই হয়ে থাকে।

সুখঃ সুস্থতার অনুভূতি যার কদর কেবল হারানোর পর বোঝা যায়।

হেগেলঃ একজন দার্শনিক যাকে না পড়লেই সবচে ভাল বোঝা যায়।

হার্মানুটিকসঃ টেক্সট মেসেজ পাঠ সংক্রান্ত বিজ্ঞান। ক্রিটিকাল হার্মানুটিকসঃ টেক্সট মেসেজ ডিলিট করা সংক্রান্ত বিজ্ঞান।

হিপস্টারঃ তরুনদের উপর স্বকীয়তার অপচয়।

ইতিহাসঃ পরাজিতদের জন্য বিজয়ীদের উপহার।

আশাঃ কুয়াশার তৈরি আলোকরশ্মি।

মানবতাঃ সুস্থ মস্তিষ্ক প্রসূত ধারণা যে আমরা ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই।

আইডিওলজিঃ সেই ভুল ধারণা যা বলে আপনার বিশ্বাসগুলা না বিশ্বাস না ভুল।

অস্থিতিশীলতাঃ পুঁজি তার নিজের ছায়ারেই যখন ভয় পায়।

ইনস্টাগ্রামঃ একটা মার্কেটপ্লেস যেখানে আপনার বেড়ালের ছবিগুলার লেনদেন হয় অনুচ্চারিত উপহাসমূলক অজস্র শব্দের বিনিময়ে।

দ্যা ইন্টারনেটঃ কেবলস, তার আর টিউবের একটা নেটওয়ার্ক যা আমাদের সংযুক্ত করে কেবল, তার আর টিউবের সাথে।

জয়েসঃ হুইস্কির ঝর্ণা যা সচেতনতার জন্য স্বচ্ছতা বেচে দিছে।

ন্যায়ঃ গাজরের ছদ্মবেশধারী একটা ডাণ্ডা।

কাফকাঃ গ্রেফতার হওয়া একটা আইন।

জীবনঃ মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।

লিংকডইনঃ দূর দুরান্তে থাকা ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একটা ছিমছাম নেটওয়ার্ক যা আপনারে চাকরি সন্ধানের মজায় শামিল হতে দেখতে চায়।

লবিংঃ সচ্ছলতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্রভাব ক্রয় করা।

লজিকঃ নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন যার ক. সত্য, অথবা খ. মিথ্যা।

লটারিঃ ডিল্যুশন থেকে গ্র‍্যান্ড্যুর পর্যন্ত একটা রাউন্ড ট্রিপ টিকিট।

ভালবাসাঃ ১. মিলের সাথে ঘৃণার একটা অস্থায়ী সমঝোতা, ২. একটা সেকেন্ড যার মূল্য ঘন্টা হিসাবে নির্ধারিত হয়, ৩. আপনি ছাড়াও যে অন্তত আরও একজন মানুষ খারাপ বিচারবুদ্ধির অধিকারী এইটা জানতে পারার প্রশান্তি।

বিয়া দুইটা প্রাণের মিলন। যারা ধর্মঘটে আছে।

মার্কসিজমঃ দাড়িওয়ালাদের মাথা মুণ্ডন বিষয়ক তত্ত্ব।

মেলানকোলিঃ যখন হতাশার আঘাত থেকে দুঃখবোধের খচখচানির জন্ম দেয়।

মেটাফরঃ নিছক একটা শব্দ। নিছক আরেকটা শব্দের বদলে। উপমাঃ মেটাফরের কাজিন কিন্তু স্পষ্টতা তার চেয়ে একটু কম।

মিড লাইফ ক্রাইসিসঃ আপনি আসলে এতোদিন যাবত কেবল মরছেন আচমকা এই বোধের উদয়।

মোরালিটিঃ সবচাইতে বেশি অভিশপ্তদের প্রতি অভিশপ্তদের অভিশাপ।

সকালঃ একবার ভাঙলে যা আর সারানো যায় না।

নবোকভঃ প্রজাপতি সংগ্রাহক যিনি সেইগুলারে অনুচ্ছেদের আদলে ছাড়েন।

জাতীয়তাবাদঃ একটা সঠিক জাতির বেঠিক ধারণা।

সমঝোতাঃ একটা বাক্যাংশের রদবদলকে হৃদয় বদলের সুরে রূপ দেওয়ার শিল্প।

নিটশেঃ একজন কবি যার একটা দর্শন আছে। মেথড ছাড়া একটা সিস্টেম। একটা মানুষ ছাড়া গোঁফ।

নিহিলিজমঃ একটা আদর্শবাদী ধারণা যার মতে কিছুতেই আর জগতের পরিবর্তন সম্ভব না।

নাথিংঃ সবকিছু যা এতোদিন আপনার কম আরাধ্য ছিল।

এনএসএঃ একটা আমেরিকান এজেন্সি যা জগতকে প্রাইভেসির হাত থেকে রক্ষা করতে নিবেদিতপ্রাণ। iii

অনলাইন ডেটিংঃ আপনার নিজের মতো মানুষ যারা আপনার মতো মানুষদের অপছন্দ করে তাদের খুঁজে পাওয়ার শেষ ভরসা।

দেশপ্রেমঃ কখনও দেশ না ছাড়া লোকদের দেশের প্রতি প্রেম।

শান্তিঃ সবাই যেইটার লাইগা লড়াই করছে।

পারফর্মিং আর্টসঃ ছয়জন যমজের সেলফি তোলার প্রচেষ্টা।

দর্শনঃ জ্ঞানের জন্য ভালবাসা যা আত্মবিমোহিতদের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে।

কবিঃ যিনি একটা চিন্তাকে পূর্ণতা দেবার জন্য লাইনের পর লাইন ভাঙ্গেন।

কবিতাঃ একা একা মইরা যাওয়ার যে নিষিদ্ধ ইচ্ছা ভাষায় তার প্রগাঢ় প্রকাশ।

রাজনীতিঃ ইতালিতে সংঘটিত গ্রিক ট্র‍্যাজেডি।

রাজনৈতিক অলঙ্কার শাস্ত্রঃ স্মোক যা নিজেকে আয়নায় দেখতে পায় না।

উত্তরাধুনিকতাঃ কখনো দেখা না হওয়া সেই বিলাইটা যার সম্পর্কে ইন্টারনেট থিকা এখন পর্যন্ত কিছু জানতে পারেন নাই।

প্র‍্যাক্সিসঃ প্র‍্যাকটিসে উপেক্ষার নিমিত্তে থিওরিতে ব্যবহৃত শব্দ।

লাভঃ গরিবের সেই পালানো কুকুরটি যে ধনীর কাছে ফিরে আসে।

উন্নতিঃ একটি ড্রোন যেইটা উড়তে ভয় পায়।

গদ্যঃ কবিতা বিবর্জিত কবিতা। ( পদ্যঃ বিরামচিহ্নহীন গদ্য)।

সাইকোএনালাইসিসঃ আপনার মা’র সোফায় বসে বাবা’র সিগারেট খাওয়া।

পানঃ (Pun) বিবেচনার বড় একটা ভুল বোঝাতে কোন একটা শব্দের কিঞ্চিত পরিবর্তন করা।

ঠাট্টাঃ ট্যুইড পরা অবস্থায় বলা কোন কৌতুক।

ধর্মঃ আপনার নিজের বিশ্বাসগুলা যে ভুল এই রকমের কিছু বিশ্বাস।

অলংকার শাস্ত্রঃ এমনভাবে বলার কায়দা যা মানুষেরা তেমনভাবে শুনতে চায় না যেমনভাবে তারা বলার ইচ্ছা পোষণ করে থাকে।

রোমান্সঃ ছোট ছোট মৃত্যু নিয়া লম্বা সময় বাঁইচা থাকার ফরাসি কায়দা।

রোমান্টিক কমেডিঃ বক্স অফিসের প্রেমে পড়া দুঃখের সিনেমা।

বিজ্ঞানঃ মেথডের শিল্প।

সেলফিঃ এমন কারও পোর্ট্রেট যারে আমরা চিনতাম। এমন কারও তোলা যারে আমরা সম্মান করতাম।

চিহ্নতত্ত্ব/ সংকেততত্ত্বঃ অর্থ যে ভুল বুঝতে উদ্ভাবিত হইছিল এ বিষয়ে যে পড়াশোনা।

স্মার্টফোনঃ যে ডিভাইসটা কাজে অনেক দেরি করা আর দ্রুত মইরা যাওয়ার জন্য ডিজাইন করা হইছে।

সোশ্যাল মিডিয়াঃ ১. নেতৃত্ব বিমুখদের অনুসরণ করার আর যাদের সম্পর্কে আপনি জানতে চান না তাদের সাথে বন্ধুত্ব পাতানোর প্রযুক্তি। ২. প্রাচীরে ঘেরা একটা আইডিয়ার গোষ্ঠী।

সমাজঃ একটা ভুলে ভরা সিস্টেম।

স্প্যানিশঃ সারভান্তেস যে ভাষায় কথা বলতেন আর বোর্হেস যে ভাষায় লিখতেন।

রবিবারঃ যে দিনটাতে আত্মাদের ঘুম পাড়ায়া রাইখা পবিত্রতা বজায় রাখা হয়।

ট্যাটুঃ কারও প্রগতিশীল ব্যক্তিস্বাতন্ত্র‍্যের স্থায়ী ও প্রেডিক্টেবল স্টেটমেন্ট।

টেকনোলজিঃ সবচাইতে সমতল স্ক্রিনে গভীরতম নরক।

ধর্মতত্ত্বঃ অজানাকে জানার বিষয়ে অপাঠ্য সব লেখাজোখায় নিবেদিত যে ফিল্ড।

তত্ত্ব/ থিওরিঃ দর্শন ও তুলনামূলক সাহিত্যের একটি শাখা যা এই দুটি বিষয়কেই অগ্রাহ্য করে।

সময়ঃ অপচয়কৃত জায়গা।

আজঃ একটা বর্তমান যা কেউই চায় না কিন্তু আর কোনদিনই ফিরতে পারে না।

আগামীকালঃ সব সময়ই আমরা যা দেখতে চাই। যতোক্ষণ না পর্যন্ত দেখি।

ট্রান্সলেশনঃ বনে গাছ হারিয়ে ফেলার আর্ট।

ট্রান্সপারেন্সিঃ মোটা দাগে লুকিয়ে থাকা কোন কিছুর সুস্পষ্ট প্রদর্শনী।

সত্যঃ ১. যা কেউ চায় না কিন্তু সবার মধ্যেই আছে। ২. মাতাল রাশান নাবিকের কন্ঠে একটা জার্মান প্রেমের গান।

ট্যুইটঃ কোন টেক্সট লিখতে ব্যবহৃত একই সঙ্গে একটি বিশেষ্য ও ক্রিয়াপদ যা আবার একই সাথে খুব দীর্ঘ ও খুব সংক্ষিপ্ত।

ট্যুইটারঃ এটেনশান স্প্যাম।

ওয়ান্ডারলাস্টঃ ট্র‍্যাফিকে আটকা পড়ার আচমকা ইচ্ছা।

উইকএন্ডঃ সপ্তাহের সেই দুটি দিন যখন আপনার এলিয়েনেশন একান্তই আপনার।

জিজেকঃ ১. স্টালিনিস্টের বেশে যেতে থাকা একজন স্লোভেনিয়ান, ২. লাঁকা, যার আয়না নাই।

 

 

পরের কথা
এই ছোট্ট বইটা বরং দুর্দান্ত এক ব্যর্থতার ফসল। যখন আইভি লিগভুক্ত রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাকরি জোটানোর জন্য একটা প্রমাণ সাইজের একাডেমিক বই লিখতে গিয়া হিমশিম খাইতেছিলাম ঠিক তখনই আমি আবিষ্কার করি ট্যুইটার। মোটা দাগে এইটার মাধ্যমে শুধু আমার এই প্রজেক্টটারই না সাথে সাথে একাডেমিক ক্যারিয়ারেরও পরিসমাপ্তি ঘটে। পাশাপাশি এইখান থেকেই অদ্ভুত এক পেশায় আমার জড়ায়া পড়া যার নামটাও আমার দেওয়া – ইন্টারনেট অ্যাফোরিস্ট। যদিও পেশাটার আসল কাজকাম যে কী তা ঠিক করতে আমারে এখনো ধকল পোহাইতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্লগ জগতের একেবারেই বাইরের একজন হওয়ার সুবাদে ট্যুইটার যখন প্রথম আসে তখন এইটা নিয়া আমার কোন মাথাব্যথাই ছিল না। কিন্তু যখন এইটার ১৪০ ক্যারেক্টার লিমিট, অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশ এনোনিমিটি নিয়া থাকার সুবিধা আর একেবারেই বিচ্ছিন্ন একাডেমিক জীবন থিকা পালায়া বাঁচার একটা রাস্তা হিসাবে মন্দ না এই দিকগুলা আবিষ্কার করলাম তখন এইটা খুব লিবারেটিং মনে হইলো। আর তখনই আমি নাইন কোয়ার্টার্লিঃ আ কম্পেন্ডিয়াম অফ ইউটোপিয়ান নেগেশান নামে একটা কল্পিত জার্নাল বানাই আর সেইটার মাধ্যমে থিওডর ডব্লিউ. এডর্নো নামের একজন দার্শনিকের আদলে একটা অনলাইন পারসোনা গইড়া তুলতে শুরু করি। এডর্নো সেই দার্শনিকদের একজন যারে নিয়া বই লিখতে আমার খুব ঝামেলা হইতেছিল। ভালো কি মন্দ জানি না তবে ঠিক ওই সময় থিকাই চাকরি যোগাড়ের অমূল্য সময়ের তোয়াক্কা না কইরা দর্শন, আর্ট, ভাষা আর সাহিত্য নিয়া কৌতুক, অ্যাফোরিজম ইত্যাদি লিইখা দিন কাটাইতে শুরু করি। চাকরির ব্যাপারটা বাদ দিলে গত কয়েক বছরে এইসব কাজ থিকা যা উইঠা আসছে, সেইটা হইলো একটা পারসোনা যা মিস্যানথ্রপিক (অসামাজিক) হইলেও রোমান্টিক, অথোরিটারিয়ান হলেও অ্যাবসার্ড, মূল্যবোধের অধিকারী হয়াও চরমভাবে নিহিলিস্টিক। এক কথায় বলতে গেলে আমি এমন একটা কন্ঠস্বর খুঁজে পাইছি যা আমার যন্ত্রণাক্লিষ্ট কোয়ালিফায়ার ও দুঃশ্চিন্তা উদ্রেককারী একাডেমিক কাজগুলোর পিছনে লুকায়া থাকা কন্ঠস্বরটার চাইতেও অনেক বেশি মাত্রায় মৌলিক। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল এই স্বরটা অন্যরাও সাগ্রহে নিছে আর ক্রমশঃ প্রকৃত রেজোন্যান্সের পাশাপাশি সারা পৃথিবীতে ছড়ায়া থাকা অনেক বৈচিত্র‍্যময় একটা দর্শকশ্রেণী খুঁজে পাইতেছে। এখনও পর্যন্ত আমার অর্জন নিতান্তই নগণ্য যদিও তা আমার পরিত্যক্ত সেই বই প্রজেক্টের চাইতেও অনেক বেশি কিছুঃ কেউ জার্মান শিখছে, কেউ কাফকা পড়ছে, অথবা কেউ হয়তো সাহিত্য পড়ছে কিন্তু তাদের তো আমার এই অর্জনটার মতো কিছু নাই। অনলাইন ও ইয়োরোপীয় নিউজপেপারগুলাতে লেখার মাধ্যমে আমি এক রকম বিকল্প পারস্পেকটিভ তুলে ধরতে পারছি যা মোটাদাগে একটা আত্মসমালোচনা মূলক আমেরিকান পারস্পেকটিভ। আর এইটা ভাইবা ভালো লাগে যে, সাংস্কৃতিক পেসিমিজম ও ডেসপেয়ার নিয়া বানানো ডিপ্রেসিং কৌতুক কারও কারও দিনকালরে মাঝেমধ্যে হইলেও সুন্দর কইরা তুলছে। বললে অত্যুক্তি হয় না যে, অনলাইন বা অফলাইনের হাজার হাজার মানুষের আন্তরিকতার কারণেই এই যাত্রা সম্ভবপর হইছে আর সেই কারণে তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আপাত দৃষ্টিতে কাজটা যদিও অনেক চাঁছাছোলা টাইপের তবুও আমি মনে করি যে বদান্যতার কিছু জায়গাও এইখানে আছে। কাফকার কোটেশনে তারে বলতে দেখা গেছে যে, আশা জিনিসটা সব সময়ই
আছে, আমাদের ছাড়া। @

 

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

তানভীর হোসেন

জন্মঃ ২৫ জুলাই বগুড়া মিশন হাসপাতালে। জন্মের ২৫ বছর পর জানতে পারেন তার জন্ম সিজারিয়ান সেকশনে না বরং নরমাল ডেলিভারিতে হয়েছিল। পেশায় চিকিৎসক। দুই বাংলার বিভিন্ন মাধ্যমে (অনলাইন, অফলাইন- প্রিন্টেড) লেখালেখি করছেন। মূলত কবিতা লেখেন। প্রথম কবিতার বই "রাতের অপেরা"(জেব্রাক্রসিং প্রকাশনা) প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের বইমেলায়। বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে বেশ কিছু অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবে বই হিসাবে অনুবাদের কাজ "নাইন" প্রথম। বইটা ২০১৯ এর বইমেলায় বিদ্যানন্দ প্রকাশনা থেকে আসবে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →