Main menu

লাবিব ওয়াহিদের কবিতা

।। স্কেচ ।। তোমার লগে যতক্ষণ ।। এইরকম বিকালবেলা ।। যদি কথাগুলা ।। কনস্ট্রাকশান ।। লাগে যে একটা মাছ হইয়া গেসি ।। গ্রিনরোড ।। বিষ ।। দেখো ।।

………………………

স্কেচ


…এই রোদ
তোমার জন্য নিয়ে আসুক কিছু
নতুন কাজকর্মের অন্তস্থ আগুন
লাঞ্চের জন্য রেখে যাচ্ছি কিছু
পেঁয়াজ বাটা আর শুকনা বেগুন
খেয়ে নিয়ো ঠিক ঘাম মুছার পরে
ঘাম মুছার গামছা থাকে আয়নার
ঠিক পিছনের ঘরে
তুমি ঘুমের দিকেই হাত বাড়াইলা
ঘুমের ভিতরে


তুমি আর সে কাছাকাছি ভাষাতে
কথা কইতে থাকো, আর কাছাকাছি
আসতে থাকে তোমাদের ভাবনাগুলি
তুমি আর সে তখন আরো বেশি
কাছাকাছি ভাষাতে কথা বলো, আর
আরো কাছাকাছি আসতে থাকে
তোমাদের ভাবনাগুলি, তারপর
তুমি তার ছবি বসানো টিশার্ট বানাও
সে তোমার ছবি বসানো মগে কফি
খায়, আর বিড়ালটাকে সে ডেকে
দেখায় তার নতুন কফি খাওয়ার মগ
কিন্তু বিড়ালটা মরে যাবার পরে
মগটা কোথাও হারিয়ে ফেলে সে

 

তোমার লগে যতক্ষণ

তোমার লগে যতক্ষণ
কথা কইতে থাকি,

…কিছু কাঁচ
আমার ফুসফুসের বেলুনগুলা কাটে
ধবধবে সাদা একটা
ঠাণ্ডা এম্বুলেন্স
দ্রুতগতিতে
আমারে নিয়া যাইতে থাকে
দুনিয়ার সব ঘরবাড়ির থেকে দূরে

তোমার লগে যতক্ষণ
কথা-না-কওয়ার ভিতর থাকি,

একটা তলা-না-থাকা গর্তের ভিতর
খালি পড়তেই থাকি, যেখানে
এম্পটিনেস এতই যে
এমনকি

আমি নিজেও সেখানে নাই

 

এইরকম বিকালবেলা

রোদটা নিজেই একটা বিমান হয়ে
ঢেকে দিচ্ছে চিলের ডানা

তোমার কলসী থেকে উড়াল দিচ্ছে মায়াগুলা

হারমোনিকার ফুটা থেকে বেরোচ্ছে
শীতার্ত পাতা

আলকাতরার বৃষ্টি হচ্ছে সারা সন্ধ্যার উপর

রিকশাআলার চোখের উপর কাত হয়ে আছে
নীলখেতগামী লোকাল বাস

 

যদি কথাগুলা

যদি কথাগুলা
স্কুলের শনিবারের ঘণ্টার মতো
ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়তো
কাগজের উপর

যদি কোনো একটা কথাও
আমরা বলতে পারতাম কেউ কাউকে

যদি আমাদের বেগুনি রঙের আত্মা
ছিটকে পালিয়ে না যেতো ভয় পেয়ে

আর স্মৃতি খুড়লে কেবল
একটা কাকের ফেটে পড়া ডাকের মতো
মন খারাপ হয়ে না যেতো

একবার হেঁটে দেখা যেতো যদি
যেকোনো একটা যদি’র পথ ধরে,
তাহলে কীইবা হতে পারতো?

হওয়ার জন্য তো
এসবের বাইরে আর কিছু নাই

 

কনস্ট্রাকশান

ট্রাক থেকে নামানো হইতেসে বালুগুলা

কনস্ট্রাকশান ওয়ার্কের কারণে সবদিকে
টিকটাক ঢিকঢাক শব্দরা ছুটে বেড়াচ্ছে
আনন্দিত শিশুদের মতো

দুই গলি পরে
বেহুদাই একটা ইট
কোনো এক ছাদ থেকে –

কোনো এক লোকের মাথায় পড়তেসে

রোদ চিরকালই বিস্মৃতিকে স্মৃতির মতো করে
আর স্মৃতিকে করে বিস্মৃতির মতো
এবং নিয়ে যায় না কোথাও –

শুধু নিজের ঘামের কাছে ছাড়া

গুল্ম জাতীয় গাছগুলা
মাথা দুলায়ে দুলায়ে মুখস্ত করতেসে
মাইক থেকে উড়ে আসা কথাগুলা

আর নৌকাটা কইতেসে,
যখন নদী ছিল এখানে
তখন আমিও ছিলাম

 

লাগে যে একটা মাছ হইয়া গেসি

লাগে যে একটা লিফটের ভিতর
আটকা পড়সি
সবচেয়ে অপছন্দের লোকটাই
গায়ের লগে ঘেঁইষে
নিঃশ্বাস ছাড়তেসে কানের উপর

লাগে যে একটা মাছ হইয়া গেসি
আর পানিগুলা শুকাইয়া গেসে সব
তাই শুকনার মধ্যে তড়পাইতেসি
আর ভাবতেসি
আসলেই কি
পানি বলতে কিসু আছিলো কিনা

হয়তো মিথ্যা
এইসব মেমোরি লইয়াই তড়পাইয়া মরতেসি
এই কিছুক্ষণের লাইফটায়

 

গ্রিনরোড

তুমি তো ঐরকম করে
তাকাইতেসো না আর

তাও ঐরকম হয়ে
আশেপাশে ঘুরঘুর করতেসি

এসব দেখে তুমি জানতে চাইতেসো
বোকার মত এইসব আমি
কী কইরা বেড়াই

হাঁটতে হাঁটতে
আমি উদাস হয়ে যাইতেসি
মনে হইলো চোখের পাশ দিয়ে
একটা ভাপা পিঠা
একটা বিড়াল হয়ে উঠে চলে যাইতেসে

মনে হইতেসে কোথাও ঝগড়া লাগসে
কোথাও থেকে ধোঁয়া উঠতেসে মনে হয়
ট্রেনের নিচে পড়ে ফালাফালা হইসে
বাজার থেকে কিনা নতুন শসা

কোথাও মোমবাতির আলোতে
পড়তে বসতেছে আম্মার ছেলেমেয়েরা
কোথাও দুপুর নিজেই
তেঁতুলটা লবণে চুবায়ে নিয়ে মুখে দিচ্ছে

কোথাও বিস্তারিতভাবে
বর্ষিত হইতেসে মেঘেরা

ধানকাটার পর কোথাও
তুষার পরতে শুরু করে

হলুদ বাল্বের দিকে তাকাইলেই
কেন জানি মনে হইতেসে
টমাস আলভা এডিসন একটা বেয়াদব

তুমি পিছন থেকে ডাক দিয়া বলতেসো
এইযে আবার উদাস হয়ে গেলি

মনে পড়তেসে
স্কুলের বন্ধুরা মিলে
পার্কে যাইতেসি
ওখানে
জুতার উপর জুতা রেখে
সব জুতা জ্বালায়া দেয়া হবে

একটা ময়ুরের মত ফুল হয়ে যাইতেসি
যেখান থেকে নামবে ঘন মধু

 

বিষ

ল্যাম্পপোস্টের বিষধর
এই সাদা আলোর নিচে –

যতবার আমি দৃশ্যমান হচ্ছি
তুমি অন্ধ হয়ে যাচ্ছো ততবার

নিজেরে দেখে আমার
নিজেরই জাগতেছে ডার্ক হিউমার

 

দেখো

দেখো
কান্নাগুলাও কান্নার মাঝপথেই
ফুরায়া যায়

হাসিগুলাও লয় পায়
হাসির মাঝপথেই

শুধু থাকে
সবার সামনে সবার
ল্যাটকা খিচুড়ির মত মুখগুলা

দেখো তুলতুলও
বলতে না পেরে কথাগুলা
মন খারাপ করে চলে যায়

দেখো পাতাগুলাও
স্লো মোশানে পড়ে যায়
ওরিয়েন্টাল সিনেমায়

The following two tabs change content below.
Avatar photo

লাবিব ওয়াহিদ

কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →