Main menu

রওশন আরা মুক্তা’র কবিতা

………………..

ঘটমান । অবশেষে । পরীক্ষা । পীরিত । সাধ ।  পুরাতন জেলখানা রোড । প্রেমপত্র । 

………………..


ঘটমান

সকাল হইতেছে; আস্তে আস্তে সূর্যের আলো আইসা
ঢুইকা পড়লো আমারও সন্ধ্যালাগা ঘরে
অভ্যাস থেকে বাইর হইতে গিয়া তুমি
চেষ্টা করতে থাকলা মনে না করতে আমারে।
পানি খাবা বইলা জগ উল্টায়া ফেললা
গা যেন না ভিজে তাই, আকাশ কাইটা দরজা বানাই
ঐপাশে গিয়া শিউর করি ডোরটা লক হইল কি না
শিউর করতে চাই, যেন জানালাগুলার দাগ মুইছা দিতে পারি
ইরেজার দিয়া; তবে মুছতে পারতেছি না চোখের পানির রেখা
একটু পরেই তুমি বাইরে যাবা,
পার্কে বইসা অন্যের খাওয়া চকলেট খাবা।
একটু পরেই ঘুমাব আমি পানির নিচে পাতালে
ভাসতেছি আমি, মহানন্দে কাটতেছি সাঁতার তোমার গতকালে

 

অবশেষে

মালনী রোডে মিস্তরি খুঁজতে গেছিলাম
দেশে কেন এখন মিস্তরির এত সংকট!
একজনরেও পাইলাম না, তাই
আমি নিজেই হাতুড়ি লোহা নিয়া কাঠগুলাকে পিটাইতে লাগলাম
হাতুড়ির শব্দে শব্দে দোলাইতে লাগলাম মাথা
নাকমুখ লাল হয়ে গেল, ঘামায়া গেলাম প্রচুর
লোহার সাথে লোহার ঘষায় ছিটকে উঠলো স্ফুলিঙ্গ
আর কাঠে আগুন লাইগা যাবে কিনা ভাবতে ভাবতে,
ভাবতে ভাবতেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমি বড় হইয়া একদিন কাঠমিস্তরিই হবো
ও আমি কাঠ পেটাবো
শক্ত শক্ত হাতে
শক্ত শক্ত ভাবে
কাঠগুলাকে জোড়া লাগায়া দেবো

 

পরীক্ষা

আপনার আপনার আত্মার ভিতরে
লিখে দিয়া মস্ত মস্ত চিঠি
আমরা সই করলাম তার নিচে নিচে
তোমারেও দিতে হবে হে এই বিচ্ছেদী পরীক্ষা
মন চাইলে আমিও নিজেরে নিয়া খাড়া করাইতে পারি ফসলের মাঠে
হাত দুইটা উঠায়া কাকতাড়ুয়ার সারেন্ডার ভঙ্গি করে দাঁড়াইতে পারি
তবুও আমায় ভয় পাইতে থাকবে অবলা কিছু পাখি, কাক টাক চিল
আত্মার ভিতরে আমি আবার তালাক দিব আপনাকে
একবার দুইবার বারবার
তালাক দিতে থাকব
আপনার চোখের ভিতরের শূন্যতা
ভেদ করে আমি দেখব
আপনার মগজের ভিতরের সংখ্যার ভিতরে দেখব
আপনার হৃদয়ের রক্তে হাত লাল করে দিয়ে দেখব
আপনার বুক থেকে পেট, ছুরি চাকু দিয়া কেটে
সব বের করে নিয়ে জলে ধুয়ে আবার সেলাই করব
আবার আমি আপনাকে তালাক দিয়া ফেলব

 

পীরিত

এক ছুপা নারীবাদী কন্যা জিজ্ঞাসিল,
চুমু খাবা আমারে?
আমি বলিলাম,
তুমি রান্নাবাড়া কইরা খাওয়াইবা আমারে?
খাওয়া-খাদ্য ইজ দ্যা ভাইটাল থিং
তুমি সকাল-বিকাল নিমপাতা ভাইজা
পিছে পিছে ঘুইরা খাওয়াও তা আমারে
আমিও তোমার প্রস্তাব দেখব বিবেচনা করে
এ কথা শুনে সে-মেয়ে লজ্জা পেয়ে যায়
এখন এসে সে আমার সনে প্রেম করতে চায়।

 

সাধ

ভাত খাইতেই লাগে আমার
সবচে বেশি ভালো
সাদা সাদা এ ভাতের থালায়
ধবধবে একি আলো
ভাতের জন্যেই আছি যে জীবন্ত
এ জীবন আমার ভাতের তরে
খাই আমি ভাত দানা দানা ভাত
ভর্তা তরকারি সহকারে
সকাল কিবা দিনদুপুরে
কিংবা শীতের রাতে
মাড়খসা সদ্য বাড়া ভাত
ভেস্তসুখ উঠে আসে পাতে
সুখ সুখ সুখ এই গরীবের
শুধুই ভাতের পাতিলে
বানতুফানে খড়াতেও যেন
ভাত থাকে এই কপালে
কত কী সুন্দর দৃশ্য আছে
ফুলে ফুলে ওড়া মৌমাছি
ছোট্ট শিশুরা ভাত মেখে খায়
ঝাপসা চোখ মেলে তাই দেখছি
যে যত পারে যা খুশি খাক
আমি খাব ভাত বসে খেতের কিনারে
মায়ার এ গরম ভাতে বলক আসে আদরে

 

পুরাতন জেলখানা রোড

আমি জানিও না সে কই থাকে, তার বিমান মাটিতে নামছে নাকি,
নাকি সে আকাশেই আছে — উড়ন্ত; একঘেয়ে শব্দে মাথা ধরছে নাকি,
নাকি গতকাল আসছিলো সে এই দেশে
যেখানে দুইটা সমান সমান পাখি খাদ্য নিয়া ঝগড়া করে।
হইতে পারে তুমি আসছো অথবা আসো নাই
তবুও আমি মধ্যরাতে রাস্তায় তাকায়া ছিলাম,
ঘরফেরা মানুষজন বিভিন্ন বাহনে ফিরতেছিলো।
ঐতো তোমাকে দেখলাম! বাসার সামনে
রিকশা থেকে নামলা, কাঁধে ব্যাগ ঠিকঠাক,
ঝনঝন শব্দে পয়সাও পড়লো, স্পষ্ট দেখলাম স্পষ্ট শুনলাম!
এমন রাইতে ক্যামনে তুমি একটা কম্পার্টমেন্টে বন্দী থাকতে পারো?

 

প্রেমপত্র

মিথ্যামিথ্যি গজবের আগুন
লাগতেছে মন্দিরে-বাড়িঘরে
এদিকে আমার সাথে
মৌমিতা রায়ের দুরত্ব
যোজন যোজন বাড়ে
কত কত পথ কত কত মত
দিল্লিতে ধোঁয়াসা, ঢাকা অন্ধকারে
আদিকাল থেকে প্রেমের অভাবেই
মানুষ মানুষ মারে
রক্তের হলি মানুষের অন্তর থেকে
রাষ্ট্রের শিকড়ে শিকড়ে

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রওশন আরা মুক্তা

কবি, গল্পকার ও এডিটর। ছাপা হওয়া বই: অপ্রাপ্তবয়স্কা (কবিতা, ২০১৩), এলদোরাদো (কবিতা, ২০১৬), কেন দোলনচাঁপা (কবিতা, ২০১৮)। টরে টরে টক্কা (গল্প, ২০১৮), ঘুঘু (গল্প, ২০১৯)।
Avatar photo

Latest posts by রওশন আরা মুক্তা (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →