Main menu

নাদিয়া জান্নাতের কবিতা

নাদিয়া জান্নাতের ১১টা কবিতা এইখানে আছে। উনার বা যে কারোরই কবিতা লেখার ভিতরে কয়েকটা ধরণ বা টোন থাকে আসলে। তো, এর মধ্যে একটা টোন’রে আমরা বাছাই করছি, এইখানে হাইলাইট করতে চাইতেছি। 

তো, এই উছিলায় কবিতার কোন জিনিসগুলারে আমরা আমলে নিতে চাইতেছি, সেইটা একটু বলা যাইতে পারে। পয়লা জিনিস হইলো, ভাষার রিজিডনেস আমাদের বাছাইয়ের প্রায়রিটি’র ভিতরে নাই; এমন না যে, খুব ‘আলগা’ একটা ভাব থাকতে হবে; বরং জড়তা দিয়া কিছু বলতে পারা’টা তো টাফ, বেশিরভাগ সময়ই কথা-বলা যায় না, তো অই ‘অই না-বলতে-পারা’রে কম গ্লোরিফাই করতে চাই আমরা। এইটা একটা জিনিস।

সেকেন্ড জিনিস হইলো, এর এগেনেস্টে কবিতা’রে ‘আঞ্চলিক’ বা ‘গ্রাম্য’ কইরা তুলতে হবে – এইটাও কোন ওয়ে-আউট হইতে পারে না। এর মাঝখানে বা এর বাইরে যেই চেষ্টাগুলা আছে কবিতাতে; সেই জায়গাগুলাতে আমরা নজর দিতে চাই। আপনাদেরকেও রিকোয়েস্ট করতে চাই যে, আপনার টেস্টের লগে মিলে বইলাই কোনকিছু কবিতা বইলা ধইরা নিয়েন না, টেস্টের জায়গাগুলারে বরং এক্সপান্ড করতে পারেন! এই কবিতাগুলার ভিতরে অইরকমের কোন জায়গারে এক্সপ্লোর করার একটা ব্যাপার মনেহয় আছে।

হাউএভার, এইসব কথা বাদ দিয়াও কবিতা পড়া যায় 🙂 পড়েন!

ই. হা.     
………………………….


অভাব

অভাবের গল্পে
উঠানের টগর গাছে ফুলের বদলে
শাদা শাদা ভাত ফুটে থাকে।

 

ঈদ

(১)
শুনেছি রমনা স্টেশনে শৈশবের ঈদ কেনাবেচা হয়।

(২)
ঈদ কিনতে গিয়ে আব্বা কবরে লুকায় গেলেন।
ঈদের সকালে আব্বারে খুঁজতে কই যাবো আমি? বাজারে?

 

ক্ষুধা

(১)
‘শামুক হৃদয় কামুক’
পেটে ক্ষুধা নিয়ে বকুল ফুল কল্পনা করা যায় না।
তবুও করতেছি।

(২)
শিস বাজাইতে বাজাইতে আপনি যাইতেছেন। আপনার হাতের মধ্যে সিঙ্গারা। আমি সিঙ্গারা খাইতে ভালোবাসি, কিন্তু কাইড়া নিয়ে খাওয়ারে অপছন্দ করি। আপনার সিঙ্গারা না নিয়ে যদি আপনারে কাইড়া নেই তাহলে আপনার বৌ কি মাইন্ড করবেন?

করলে করুক। আই ডোন্ট কেয়ার।

 

পোয়েট; দ্যা ব্লাডি মাদারচোদ

কবি’ শব্দের ভেতর তুমুল ছ্যাঁচড়ামি আছে। এইটা সো কল্ড ঘ্যানঘেনে বিষয় না, এইটা এমন যে— কাউকে দেখা মাত্রই মাদারচোদ শব্দ জিভের ডগায় এসে তালু স্পর্শ করার মতো।

 

ওভাররেটেড

আমারে তোমার দরকার নাই; তুমি বললা। তুমি বললা—
টাকা উড়াইড়া উইড খাবা, টাকা নাচাইয়া ঘরে আনবা পরিচর্যাময় বিবিধ গোপন

টাকা আর মানুশের নিঃসঙ্গকাল
ইমাজিন করলাম; দেখলাম—
টাকা ছিটায়া কিনে আনছো পাঙ্গাস:
কোটাবাছার মানুশ পাইছো মধ্যরাতে।

রান্না ভাতে
গরম ধোঁয়া;
কানের পাশে
ফিসফিসানি,
সঙ্গ সহ
পানের বাটা
সব তুমি পাইতেছ বুঝি!

পাওয়া পাওয়ির সময়টাতে হৃদয়টাকে কই রাখতেছ?

 

ম্যাচিউরিটি

তোমার আমার যোগাযোগ থাকবে না।
সম্পর্কের বেদীতে আমরা দোলনচাঁপা পুষবো।

বন্ধুদের গ্রুপ ফটোতে ‘তুমি আমাকে’ অথবা
‘আমি তোমাকে’ জুম করে দেখবো।

 

কনজুগাল লাইফ ইন মেট্রো

সূরা ইয়াসিন পড়ার আগে ভাত বসাইছিলাম হাড়িতে।
এখন লাউশাক দিয়ে পুঁটি রান্ধবো। বাড়া ভাতে ছাই দিয়া :
গলায় মধ্যে রেডিও ঝুলায় কৈ বসে আছো—অসময়ে?
আরামবাগের রাস্তায় তুমি কি হাঁটতেছ তারে নিয়া; যার
সাথে তুমি মাগুর মাছের ঝোল দিয়া শাদা শাদা ভাত খাইছিলা?

এদিকে তুমুল বৃষ্টি। সিগন্যাল ড্রপ করায় তোমারে খুঁজে পাচ্ছিনা।
দোলনচাঁপার অনেক দাম। বিবাহ বার্ষিকীতে ফুলের দোকানে যাইয়ো না।
গলায় রেডিও আর হাতে কাতলা ঝুলায়া বাড়ি ফিরা আসো।

 

বাড়ি

গলায় কাঠের মালা পরার চল চলতেছে নাকি? লাস্টবার তোমার গলায় কাঠের মালা দেখছিলাম

মালার মধ্যে নয়া গড়া কবুতরের বাসা, দীঘিতে মাছ—পানিতে হাঁস, উঠানের হাতল ছাড়া কাঠের চেয়ারে খেলা খেলতেছিলো মোরগ মুরগী, তাদের গায়ে বনেদি রোদ। পাশে পুকুর পাড়ে পুঁইমাচা। টবে গাঁদাফুল, ধনেপাতা।

লক্ষ্মী মতন গাছ থেকে কে য্যানো সদ্য নামাইছে তিনটা কাঁঠাল, উঠানে তার আঠা ছ্যাঁদড়ায়ে আছে
ঝুলে থাকা বাড়িটা কার? আমি একবার যাইতে চাই। তোমার অফিসে টংটং গাড়ি দেখছিলাম। গাড়িতে বসলে বাড়িটাতে যাইতে পারবো কি?

 

বেদনা দীর্ঘজীবী হইতেছে যেহেতু….

আধমরা শালিকরে বুকে পুষে বড় আরাম পাইতেছি।
ঝিলিক দিয়া রোদ আসতেছে।
সেই রোদে শালিকের জন্যে ধান ছিটাইতেছি

শালিকটা নাচতে নাচতে বুকের ভেতর আসতেছে,
কিন্তু কোন ধান খাইতেছে না।
আমি অবশ্য জোরাজুরি করতেছি-
সে শুনতেছে না। সে কেবল নাচতেছে আর নাচতেছে—

আমার হঠাৎ করেই মনে হইলো এটা তো অঘ্রাণ মাস।
ধানকাটা হয়ে গেছে।
এখানে সেখানে মাঠে- ঘাটে ধান শুকানোর বেলা এখন।
আধমরা শালিকটার আর ধানের অভাব নাই।

তবুও, ধানের লোভে পাখিটা যে আসতেছে, বুকের ভেতর
এইটা ভেবে প্রচুর আনন্দ পাইতেছি আমি

 

নভেম্বরের সান শাইনের দিকে তাকাইলাম,
সে বললো—কুসুম, আস্তে ফোটো

কি তুমুলে কুয়াশা কাটতেছে, রোদ আসতেছে
পুনঃপুনঃ বাতাস নষ্ট করতেছে রোদ

ডাইন বায়ের  আম গাছ, সারি সারি কাঁঠাল পাতা
আর গেন্দা ফুলদের কোন কাম কাজ নাই
উল্টো মুখে অদল বদল করতেছে হিম

চেয়ার পেতে বাড়ির উঠানে আমি
আমার পায়ের পাতায় সুইট ফায়ারে
আসা যাওয়া করতেছে হাওয়া
এই হাওয়াটাকে অসহ্য লাগতেছে

 

ফুলস্টপের পরে

রইদের আলোয় তুমি চকচক করবা।
আমি তোমারে দেখতে পাবো না।

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

নাদিয়া জান্নাত

কবি। রংপুরে থাকেন।
Avatar photo

Latest posts by নাদিয়া জান্নাত (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →