Main menu

আল শাহারিয়ার জিদনী’র কবিতা

প্রেফারেন্স ।। যেসব বৃষ্টি মেঘ হয়ে পরে বৃষ্টি হয়েছিল ফের ।। পানি ।।  পতনবোধ ।।  সার্কাস ।।  ইভ, তোমার কাছে যাই! ।।  নরক ।।

…………………………….

 

প্রেফারেন্স

আমরা দু’জন দুইটা ভিন্ন অসুখ নিয়া বাঁইচা আছি
আমাদের তাই বিছানা আর ঘুম দরকার আলাদা,
আমাদের দরকার আলাদা চামচ-গ্লাস-গামছা।

আলাদা আলাদা জীবাণু নিয়ে বাঁইচা আছি আমরা
বাঁইচা আছি পৃথক গানের স্বাদ আর পোষা প্রাণীর প্রেফারেন্স নিয়া
আমাদের আরও আলাদা করে দেয় নিজস্ব মৃত্যুর চাহিদা।

দুইটা ভিন্ন অসুখে আমরা ভিন্ন ভিন্ন বিছানায় শুইয়া আছি
আমি ভাবতেছি আগুন তুমি ভাবতেছো
ব্যাপারটা আরো সহজ করার কথা!
তুমি চাইতেছো আমরা যেন সমুদ্রে গিয়ে মরি!
তবে এতো ভিন্নতার মাঝেও আমাদের যে মিল হইছে একটুখানি –
তা হইলো আমরা একটু ভিন্নভাবে মরতে চাই।
এতো মেইনস্ট্রিম মৃত্যু আমাদের ভালো লাগেনা।

 

যেসব বৃষ্টি মেঘ হয়ে পরে বৃষ্টি হয়েছিল ফের

তবে এইটুকু জানি বিজলীতে,
আম্মার মুখের জর্দা
ঘ্রাণের আয়াতুল কুরসিতে,
তখনও বৃষ্টি পেলে,
উড়ে যাওয়া আমপাতা,
মুকুল আর বুলবুলির ঘ্রাণ,
চমক লাগানো ঝিরিঝিরি এস্রাজ,
কেমন এনে দিতো বিরহিত সুর
আমাদের রোমান বারান্দায়।

আরো কালো – হলে হোক ঝড়!
কড়াইয়ের কোন ডাল,
ফাঁকি দিয়ে ফেরেস্তার চোখ,
ইচ্ছে করলে বেকায়দায়
ফেলুক ট্রাফিক, সন্ধ্যার!
জানি ডুবে গেছে সূর্য
শেয়ালপাদ্রীরা সব- ঘরে ফিরে যাক।
ডুবতে থাকা স্থলজ আস্ফালন এই!
তুমি শোনাও পুরাতন দিনের মতো আম্মা
তোমার জর্দা ঘ্রাণের আয়াতুল কুরসিটা
বৃষ্টিটা থেমে যাবার আগেই!

 

পানি

এইভাবে কি উইড়া যাওয়া যায় পাখি?
তোমার পানির মতো মনরে আগে মেঘ বানাও

বুকভর্তি পানি নিয়া কেউ কি উড়ে?
দেখছো কখনো তুমি?

আর প্রেম যখন আসবে সবকিছু ভাঙতে
কই তুমি যাবা আর উইড়া তখন?
খালি উড়বা আর ডানা ছিড়ে বের হইবে রক্ত

এজন্যই কি কিছু মানুষ পাখি হইতে চায়;
আর কেউ কেউ হইতে চায় গাছ?

যেনো উড়তে থাকা পাখিরা একটু
গিয়া বসবে ডালে
মুইছা নিবে ক্ষত, রক্তের দাগ
তারপর উড়বে আবার

আর পেছনে একটা কড়ই গাছ
স্রেফ দাড়ায়ে থাকবে
এক হাজার বছর।।

 

পতনবোধ

ভালোবাসা ছাইড়া কোথাও যাওয়ার নাই
কোন ঘর নাই, করিডোর নাই, বারান্দা নাই লুকাবার।
ভালোবাসা ছাইড়া আইসা ঠিক ভালোবাসতেই হয়।
এক দৌড়ে পালায়ে আইসা অনেকদূর,
তাকায়ে দেখি নিজেরে ধরতে গিয়া দৌড়ায়ে অনেকক্ষণ,
দাড়াইছি নিজের সামনেই!

এরপর শিষ দিয়া উঠি
ভাবি মেয়েদের বিড়ালআত্মা
হয়তো আমি বুঝে উঠিনা কোন কারণে!
কিন্তু যেমন অনেক
অচেনা ফুল ফল পাতা শেকড়ের নাম
যদিও অচেনা থাইকা যায় আমার কাছে
তবু তাদের ঘ্রাণ তো আমি ঠিকই পাই।
চোখ বন্ধ করলে
পাশাপাশি দাড়ায়ে আছে এমন সাতটি গাছ
তাঁদের গোপন ভাষায় কথা বলে ওঠে আমার সাথে;
আমি স্পষ্ট সেইসব শুনতে পাই।

সব চইলা যাওয়া একই রকম,
সবাই একইরকম ভাবে চইলা যায়
মরতে থাকা রোগীরে যেমন
টাইনা নিয়া যায়
এম্বুলেন্স বা আজরাইল,
ট্রাকে ট্রাকে যেমন চইলা যায়
কুরবানির গরু গাছের গুড়ি,
ভালোবাসাও চইলা যায়!
ভালোবাসা চইলা যায় কচ্ছপের মতন
ধীরে
আর যাওয়ার সময় বুকের ভেতর দাগ
রাইখা যায় নখের।

ভালোবাসা চইলা যায় শীতঋতুর
একটা বিকালের মতো
আমিও একটু কুয়াশা কুয়াশায়
পেছন পেছন যাই ভালোবাসার
যেহেতু আর কোন যায়গা নাই যাওয়ার;
ঘর নাই, করিডোর নাই, বারান্দা নাই লুকাবার।
ভালোবাসা ছাইড়া আইসা
যেহেতু ভালোবাসতেই হয় আবার!

 

সার্কাস

এটা হতে পারে শহরের শেষ প্রান্তে
রঙিন আলোয় এলায়া থাকা কোন সার্কাসে
হলুদ সামিয়ানার ভেতর খেলছে বাঘ
তার পাশে কিছুদূরে একটু একলায়
একজন তার নিঃসঙ্গতায় ডাকলো আমায়
তার হাতে তাস, সেও খেলে বোঝা যায়
তার চোখ নীল
সেখানে মরফিন এর মতো ঘুম
তার কন্ঠ যেনো এই গ্রীষ্মের নয়
আমি তাকে ভালোবাসলাম
যদিও জানতাম এর পরিনাম, তবুও মানলাম।

সে বললো তার সাথে আমারে খেলতে কিছুক্ষণ
নেহাত ছেলেভোলানো হিপনোটিজম
সে রাখলেন আমার চোখেচোখ,আর বলে চললেন;
সে বললেন আমার কানের ভেতর পোকা
আমিও টের পেলাম
সে বললেন আমার গায়ের ভেতর গাছ
আমিও তা বুঝলাম এবং দেখলাম গুল্মলতা আর ঘাস
জড়িয়ে ধরছে আমারে যেনো আমিও গুল্ম আর ঘাস।
যেনো আমিও তাদের মতোই উদ্ভিদ হয়ে জন্মালাম
ফুল হয়ে ফুটলাম
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম এতো
সুন্দর আকাশ দেখিনি কোনদিন
এতো বড় বড় তারারা কোথায় ছিলো আমার জন্মের আগে?

নীরবতা ভেঙে ম্যাজিশিয়ান
যেনো অবাক হয়ে বললেন আপনি কি একজন পেইন্টিং?
আমি বললাম না কিছুই , শুধুই শুনলাম।
গুল্মলতা আর ঘাসেদের কিছুই বলার থাকেনা বুঝলাম!

 

ইভ, তোমার কাছে যাই!

তোমার কাছে যাইতেছি মানে ইভ-
ধরো যাইতেছি বরফকল,
যাইতেছি আইসক্রিম ফ্যাক্টরি,
যাইতেছি ছাদের ঠিক কিনারায়,
যেখানের কথা ভাবলে পায়ের তলায়,
মনে হয় ভয়
অথবা শীত জমা হয়।

তোমার কাছে যাইতেছি মানে ইভ-
ধরো যাইতেছি সূর্যমুখীরা
যেইদিকে তাকায় ম্লান!
বৃদ্ধ হাতিরা যেইদিকে চইলা যায়
শুকতে শুকতে মাটির ঘ্রাণ!

তোমার কাছে যাইতেছি মানে
যাইতেছি কাঁটাবন, ডাকতেছে বিরক্ত শেফার্ড!
যাইতেছি গাছেদের আত্মা যেইখানে জমা হয়!
তোমার কাছে যাইতেছি মানে হিরোশিমা
তোমার কাছে যাইতেছি মানে ধৃষ্টতা
তোমার কাছে যাইতেছি মানে
ধরো ঢুকতেছি উদ্যানে, অনেক রাত্রে,
পোড়া একটা হলুদ ফুলের গন্ধে, যখন বজ্রপাত!

তোমার কাছে যাইতেছি মানে ইভ –
আমার ক্লান্ত লাগে খুব
মনে মনে ভাবি – এই বুঝি পাই
যাইতে যাইতে কাছে
ঠিক পাইতে পাইতে হারাই।

নরক

তোমার কাছে যাওয়ার রাস্তাটুকু
কিছুতেই শেষ হয়না। কাঁটাগাছগুলা –
পথে পথে বিছায়ে রাখে অসুখ!
তোমার কাছে যাওয়া কতটা দরকার –
আমি জানি!
দুইদিনের শিশুর যেমন দরকার মাই!
সাধু-সন্ন্যাসীর যেমন দরকার মোক্ষ!
শাম্যাপোকার যেমন দরকার আগুন!

তোমার ভেতর ঠাণ্ডা একটা নদী থিতু হয়ে আছে,
কাঁচা বরফের মতো ঠান্ডা এর গায়ের রঙ।
আমি সারাক্ষন গায়ে মেখে আগুন-
সেখানে ডুবতে থাকার কথা ভাবি।
ভাবি, সেখানের জলজ সংসার নিয়ে।
এরপর, অপরাধ আর বোধে
কল্পিত কোন পাপ কল্পিত কোন পূন্যে
রুপকথার মতো সাদা কোন ঘোর বিভোরে
ফের ডুবতে থাকার কথাই ভাবি!

ভাবি , আর নিজেকে বলি, নরক!
ভাবি , আর শরীরে ডাকি, মড়ক!

The following two tabs change content below.
Avatar photo

আল শাহারিয়ার জিদনী

হেয়ালি করে কাটায়ে দিচ্ছি জীবনটা । স্মৃতিহীন বলা চলে। অনন্ত কিছু বিদ্যুৎমূহুর্ত আছে তবে লাভ-লোকসানের কোন বালাই নাই। এই চরাচরে হৃদয়ের খুব কাছে যেই আসে ধরায়ে দেয় শূন্যতা। আমারও তাই দেওয়ার কিছু নাই শূন্যতা ছাড়া। আর নিজেরে যখনই চিনতে চাই পেঁয়াজের হৃদয়ের মত অবিকল ভিন্ন কাউরে চিনে ফেলি।
Avatar photo

Latest posts by আল শাহারিয়ার জিদনী (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →