Main menu

কাফকা’র গল্প

[সবগুলা গল্পই নেয়া হইছে কাফকার “Betrachtung” বইটা থেইকা। Betrachtung মানে Contemplation / Meditation / ধ্যান। গল্পগুলা Willa and Edwin Muir এর ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হইসে।]

 

আচানক হাঁটতে বাইর হওয়া

যখন এইটা ক্লিয়ারকাট বুঝা যাইতেছে যে আজকের সন্ধ্যাটা আপনে ঘরের মধ্যেই কাটাইবেন, যখন ঘরের ড্রেস আপনে অলরেডি গায়ে দিয়া দিছেন, আর প্যাটে কিছু খাওয়াদাওয়া যাওয়ার পরে টেবিলে বাতি জ্বালাইয়া ঐ কাজটা বা খেলাটা নিয়া বসছেন – ঘুমাইবার আগে যেইটা নিয়া ইউজুয়ালি বসেন, বাইরের ওয়েদারও খুবেকটা সুবিধার না হওয়াতে ঘরে থাকাটাই নেচারাল, এবং আপনে টেবিলে বসার পরে অলরেডি এতক্ষণ হইয়া গেছে যে এখন আপনের ঘর থেইকা বাইর হওয়াটা ঘরের সবার কাছে একটা তাইজ্জব ব্যাপারই মনে হবে, তার উপর সিঁড়ির লাইটগুলাও বন্ধ করা হই গেছে, সামনের গেটও তালামারা, এবং এই সব সত্ত্বেও আচানক যদি চাগাড় দিয়া উইঠা পড়েন, কাপড় বদলাইয়া রাস্তায় নামার জন্য নিজেরে রেডি করেন, বাসার লোকেদের জানান যে আপনের এখন বাইর হইতে হবে মাস্ট, কাঁটাকাঁটা কথায় সংক্ষেপে “যাইতেছি” ধরনের কথাটথা বইলা দ্রুত বাইর হইয়া পড়েন, পিছনে দরজাটারে এত জোরে ধরাম কইরা লাগাইয়া আইসা পড়েন যা – আপনে যতটা বিরক্তি পিছনে থুইয়া যাইতেছেন তার লগে সমানুপাতিক, তারপরে যখন নিজেরে রাস্তায় আবিষ্কার করেন এবং আপনের হাত – ঠ্যাং গুলা এই আচানক মুক্তির আনন্দে হালকা হইয়া আসে আর দোলনার মতো দুলাদুলি করে, এইরকম একটা ডিসাইসিভ একশান নিতে পাইরা আপনে ফিল করতে পারেন – আপনের ভিতরে জমা আছে ডিসাইসিভ একশান নিতে পারার সমস্ত ক্ষমতা, যখন নরমাল সময়ের চাইতে অনেকবেশি জোরালো বিশ্বাসে আপনে জানেন যে দ্রুততম কোনো বদল ঘটাইয়া ফেলা আর সেইটার সাথে খাপ খাইয়া নেয়ার শক্তিসামর্থ্য আপনের আছে যতটা দরকার তারচেয়েও বেশি পরিমাণে, যখন এইরকম চমৎকার একটা মানসিক দশা নিয়া আপনে ছুটে যাইতেছেন লম্বা রাস্তাটা ধরে – তখন, অন্তত একটা সন্ধ্যার জন্য আপনে কমপ্লিটলি মুক্ত হইতে পারলেন ফ্যামিলির প্যারাগুলা থেকে – ঐগুলা এখন ফেইড হইতে হইতে চলে যাইতেছে আনরিয়েল এর ভিতর, আর আপনে নিজে লাভ করতেছেন নিজের আসল শেইপ আর সাইজ, এখন আপনে একটা পরিষ্কার কৃষ্ণ রঙের ছায়ামূর্তি, নিজের থাইয়ের উপর একটা থাপ্পড় মাইরা যে আবার নতুন উদ্যমে সামনে আগাই যাইতেছে।

এবং, আরো দারুণ ব্যাপার হবে যদি এই রাতে কোনো বন্ধুরে খুঁইজা বাইর করেন, আর তার দিনকাল কেমন যাইতেছে সেইসবের খোঁজখবর নেন।

 

শপথনামা

বিশ্রি এই কুয়ার ভিত্রে থেইকা নিজের মনটারে টাইনা বাইর কইরা আনাটা, এমনকি খালি ইচ্ছার শক্তির দ্বারাই যদি তা করা লাগে, তাও অত কঠিন কিছু না। এইযে আমি নিজেরে এক ঝটকায় টাইনা তুললাম চেয়ারটা থেইকা, দ্রুত বেগে টেবিলটারে চক্কর দিলাম, মাথাটারে আর ঘাড়টারে এক্সেসাইজ করাইলাম, চোখগুলারে জ্বলজ্বলে কইরা রাখলাম, আর চোখের লগের মাসলগুলারে টানটান করলাম। নিজের সব ফিলিংসরে চুপ করাইয়া আমি ‘ক’ রে ওয়েলকাম করলাম, নিজের রুমে ‘খ’ রে সইজ্জ করতে স্টার্ট করলাম, ‘গ’ এর যাবতীয় কথাবার্তারে – যত যন্ত্রণা আর পেরেশানিই লাগুক না কেন – লম্বা ঢোক দিয়া গিলতে লাগলাম।

কিন্তু এইসব ঠিকঠাক মতন করতে পারার পরেও, সিঙেল একটা ভুল – কোনো না কোনো ভুল আমার হবেই – জাস্ট সিঙেল কোনো একটা ভুলের কারণে – পুরা প্রোসেসটাই, তা সহজ কোনো প্রোসেস হোক বা প্যারার, পুরা প্রোসেসটাই ঐ ভুলের কারণে বাঁশ খাইয়া যাবে। এবং তখন আমি পুনরায় নিজেরে ফেরত নিয়া আসবো নিজের পার্সোনাল গণ্ডির ভিতরে।

এই কারণেই, আমার মনে হয়, সবচাইতে কাজের কাজ হইলো – কোনোকিছুরেই পার্সোনালি না নেয়া, নিজেরে একটা জড়বস্তু বানাইয়া তুলা, এবং যদি এমন ফিল হয় যে নিজের উপ্রে থেইকা কন্ট্রোল হারাইতেছি তাইলে তখনই শক্ত হই যাওয়া – যাতে কোনো উসকানিতেই, আর একটাও আজাইরা কদম না ফালাই। মানুষরে দেখা দরকার একটা জন্তুর চোখ দিয়া। এবং এইসব কোনোকিছু নিয়াই কোনো রিগ্রেট ফিল করা উচিত না। এক কথায় যদি বলি, যা করা দরকার তা হইলো, এই ভূতের-মতো-লাইফ এর যাবতীয় এলিমেন্ট নিজের হাতের মুঠায় স্কুইজ করে শেষ করে দিয়ে তারপর, শান্তির-মতো-কবর এর শ্যাষ শান্তিটারে বাড়াইয়া তুলা, আর এর বাইরের আর কিছুর লগেই – কোনো লেনাদেনায় না থাকা।

এইরকম অবস্থায় যাইতে পারার পর আপনে যেই কাজগুলা করতে পারেন, তার মধ্যে একটা হইলো – কাইন্যা আঙুল দিয়া নিজের ভুরু ডলতে থাকা।

পাহাড়ে টুরে যাওয়া

“জানি না”, সাইলেন্টলি কানতে কানতে আমি কইতাছি, “জানি না। কেউ যদি না আসে তো না আসুক। কাউরে আমি ক্ষতি করি নাই, কেউ আমার ক্ষতি করে নাই, মাগার আমার হেল্পও কেউ করবে না। আমি দেখি আমার লাইফটারে ঘিরা আছে একবস্তা ‘কেউ না’। তবে এইখানে দুঃখটাই একমাত্র সইত্য না। কাউর হেল্প পাই না এইটা ঠিক, তবে এইটারে বাদ দিলে – এই ‘কেউ না’টারে আমার তো ভালাই লাগে। আমার দারুণ লাগবে একটা টুরে যাইতে – এই একদল ‘কেউ না’-রে সাথে লইয়া। পাহাড়েই যামু আমরা, আর কই? চিন্তা করেন, এই ‘কেউ না’রা একটা আরেকটার লগে ঘ্যাঁষাঘেঁষি করতে করতে পাহাড়ে যাইতেছে, সবাই হাত ধরাধরি কইরা রাখসে, পা গুলা কত কাছে কাছে, কত কত পা! অবশ্যই, রাইতের আরামদায়ক পোশাকআশাক পইরাই আমরা ঘুরাঘুরি করতেছি। আনন্দেরই সাগরে আমরা ভাইসা যাইতেছি, আমাদের হাত – পায়ের ফাঁকে দিয়া বাতাস ছুটতাছে, আমাদের একে অপরের মধ্যের ছোট ফাঁকগুলা দিয়া বাতাস বইয়া যাইতাছে, আমাদের গলাগুলা একবারে ক্লিয়ার হইয়া উঠতাছে, পাহাড়ের উপর আমাদের কণ্ঠ কতইনা স্বাধীন! কেন এখনও চিল্লায়া গান গাইয়া উঠতেছি না আমরা, এই ব্যাপারটাই অবাক করা।”

 

ব্যাচেলারের ফাটা কপাল

ব্যাচেলার হিসাবে জীবন কাটানোটা একটা ভয়ের ব্যাপারই মনে হয়। বুইড়া বয়সে যখন সন্ধ্যার পরে একটু গল্প করার খায়েশ হবে, অথচ কাউরে ধইরা রিকোয়েস্ট করতে গেলে তো ইজ্জত থাকবে না। কিংবা যখন অসুখবিসুখ হবে, তখন দিনের পর দিন বিছানায় কাইত হইয়া ফাঁকা রুমটার দিকে ফ্যালফ্যাল কইরা চাইয়া থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। সবসময়ই, ‘গুড নাইট’ কথাটা কওয়া হবে সামনের দরোজায়। কখনোই, বউ সহ একলগে সিঁড়ি বাওয়া হবে না। নিজের রুমটায় থাকবে খালি পাশ দরোজা, যা দিয়া অন্য মানুষের লিভিং রুমে যায়। রাইতের খাবার সবসময় হাতে ক্যারি কইরা আনা লাগবে। অন্য মানুষের বাইচ্চার তারিফ করা লাগবে, কিন্তু নিজের বেলায় “না, আমার বাচ্চা নাই” এই কথাটাও কওয়ার রাইট নাই যেন। কম বয়সের স্মৃতিগুলা ঘাঁটলে যে দুই-একজন ব্যাচেলার মানুষ দেখার কথা মনে পড়ে, তাদের মতো কইরাই নিজেরে সাজাইতে হবে, তাদের মতোই আচার-আচরণ করা লাগবে।

এইগুলাই হবে, কিন্তু বাস্তবতা হইলো – ব্যাচেলার লোকটা ঠিকই চোখের সামনে খাড়াইয়া থাকবে তার শরীরটা সহ, এবং তার সত্যিকারের মাথাটা সহ, যেই সত্যিকারের মাথায় আছে একটা সত্যিকারের কপাল, যাতে নিজের হাতে সেই কপালটারে চাপড়ানো যায়।

 

 

উদাস মনে জানলায় চাইয়া থাকা

ঘনাইয়া আইতাছে যে বসন্তের দিনগুলা, তাগোরে লই আমরা কী করিবো? আজকে সকালের দিকেও আকাশটা ছিল ছাইয়ের মতো, কিন্তু এখন জানলায় গিয়া দেখো – তুমি টাশকি খাইবা, গিরিলের উপর গালটা ঠেকাইয়া চাইয়া থাকবা তুমি।

সূর্য অলরেডি ডুবতি পথে। কিন্তু নিচে একটা ছোট মাইয়া – চাইরপাশ দেখতে দেখতে যে আস্তেধীরে হাঁইটা যাইতাছে রাস্তাটা দিয়া – তার গালে ঐ ডুবতে থাকা সূর্যের আলো পড়সে। আর তখনই, পিছন থেকে দ্রুত আগাই আসতে থাকা লোকটার ছায়া মাইয়াটারে ঢাইকা দিলো চন্দ্রগ্রহণের মতো।

তারপর, লোকটা মাইয়াটারে ওভারটেক কইরা গেলো গা। তখন মাইয়াটার গালে আবার সূর্যের আলো পড়লো।

 

ঘরে যাইবার পথে

বিষ্টিবাদলের পরে বাতাসটা কেমন উসকানি মূলক হই উঠসে দেখো! আমার গুণগুলা এখন আমি দেখতে পাইতেছি। এইসব চিন্তা আমারে দখল কইরা ফেলতেছে। কোনো বাধাও আমি দিতেছি না।

লম্বা লম্বা কদমে আমি চলতেছি। রাস্তার এই সাইডটার লগে আমার চলার ছন্দ খাপ খাইতেছে। গোটা রাস্তার লগেই, গোটা এলাকাটার লগেই আজকে খাপ খাইতেছি আমি। যেন আমারই হাত আছে – দুনিয়ার দরোজা আর টেবিলগুলার উপ্রে যতো টোকা পড়তেছে তার পিছে, যতগুলা টোস্টের পর গিলা হইতেছে যতগুলা মদ তার পিছে, যতো প্রেমপাখিরা বিছানায় আছে, বা নতুন বিল্ডিংয়ের রাজমেস্তরির তক্তার উপ্রে আছে, অথবা আন্ধারে চিপা গলির মধ্যে দেয়ালের লগে ঠেশ দিয়া জড়াজড়ির মধ্যে আছে, কিংবা যারা আছে মাগীপাড়ার সোফার উপরে – সবকিছুর পিছেই যেন আমার হাত আছে।

পাল্লার একপাশে আমার অতীত আর অন্যপাশে আমার ভবিষ্যৎ রাইখা দেখি, কোনোটাই কোনোটার চেয়ে কম না। কমপ্লেইন করার কোনো সুযোগ আমার নাই। কপালটা যে আমারে এত ফেবার কইরা গেলো, এটাই বরং বে-ইনসাফি।

কেবল ঘরে ঢুকার পরেই, আমি ঢুকতে থাকি চিন্তার আরো ভারী লেয়ারে। সিঁড়ি দিয়া উঠার সময়ও এইরকম কিছু আমার মাথায় আসে নাই। আর এখন, আমি যখন জানলাটা বড় করে খুইলা দেই, আর বাগানে এখনও বাজতে থাকা মিউজিকটা আমার কানে আসতে থাকে, তাতেও আমার বিশেষ কোনো উপকার হয় না।

 

পাশ দিয়া যাইতে থাকা পথচারীরা

যখন, রাইতের বেলায় তুমি রাস্তার উঁচাদিক বাইয়া বাইয়া আগাইতেছো, এবং অপজিট থেকে দৌড়াইয়া আসতে থাকে আরেক লোক, যেহেতু সে উঁচাদিক থেকে নাইমা আসতেছে এবং যেহেতু এখন চান্নি রাইত সেহেতু লোকটার বডির শেইপ তুমি পরিষ্কার দেখতে পাইতেছো, কিন্তু তারপরও তুমি তারে ধরতে যাও না, যদিও সে হয় এক পলকা এবং ছ্যাঁড়াব্যাঁড়া কিসিমের লোক, এবং এমনকি যদি তার পিছে পিছে দৌড়াইতে থাকে আরেক লোক – তারে ধরার জন্য, যদি এই সেকেন্ড লোক “ধর ধর” কইয়া চিল্লায়, তারপরও তুমি তারে চইলা যাইতে দাও।

কেননা এখন রাইত, তা ছাড়া, রাস্তাটা ঢালু আর রাইতটা পুন্যিমার হওয়াটা তো তোমার কসুর না, আর এইসব বাদ দিলেও, এমনও ত হইতে পারে যে এই লোক দুইটা জাস্ট একটা খেলার মধ্যে আছে, হইতে পারে এরা দুইজন মিলে তিন নাম্বার কাউরে ধরতে চাইতেছে, অথবা হইতে পারে ফার্স্টের জনের কোনো দোষ নাই আর সেকেন্ড জন চাইতেছে তারে মার্ডার করতে, আর তা যদি হয় তাইলে তুমি এদের মধ্যে ঢুকলে বেহুদাই ঝামেলাটায় জড়াই যাবা, অথবা এমনও হইতে পারে এরা কেউ কাউরে চিনেনা, হয়তো আলাদা আলাদাভাবেই এরা দৌড়াইতেছে যার যার ঘরের দিকে, বা এমনও হইতে পারে এরা রাইতের বেলা বাইরে বাইরেই থাকে, কিংবা, হইতে পারে প্রথম জনের কাছে অস্ত্র আছে।

আর এইসব যাই হোক বাল, তোমার তো অন্তত টায়ার্ড হইবার অধিকারটা আছে, নাকি? তুমি কি অনেকবেশি ওয়াইন খাইয়া ফালাও নাই? এখন অবশ্য শান্তি লাগতেছে এই কারণে যে, সেকেন্ড লোকটাও পাড় হইয়া অনেকদূর গেছে গা।

 

ট্রামে

ট্রামের আখেরি প্লাটফর্মটায় আমি খাড়াই। এই দুনিয়ায় / এই শহরে / নিজের ফ্যামিলিতে – আমার অবস্থাটা কী, তা নিয়া একটা পূর্ণাঙ্গ ধন্দের ভিতর আমি খাড়াই। নরমাল কথাবাত্রায়ও আমি এইরাম কিছু একটুও ক্লেইম করতে পারবো না যে, অমুক বা তমুক ডিরেকশানে আমি যাবো। এমনকি আমি কইতে পারবো না কেন এই প্লাটফর্মে আমি আছি, কেন আমার হাতে এই ফিতাটা ধরা আছে, কেন নিজেরে তুইলা দিতেছি ট্রামটার মধ্যে। আমি কইতে পারবো না কেন লোকেরা ট্রামের সামনে থেইকা সইরা যাইতেছে, কেন কেউ চুপচাপ হাঁটতেছে ট্রামের পাশ দিয়া, কেন কেউ চোখ দিতেছে দোকানের ভিতরে। না, এইগুলা কেউ আমারে জিগাইতে আসবে না, বাট কথা সেইটা না।

ট্রামটা একটা স্টপেজের কাছাকাছি আইসা পড়ে, তখন একটা মাইয়া সিঁড়ির কাছে আইসা দাঁড়ায়। তারে আমি এতটা পরিষ্কার দেখতে পারি যে, মনে হয় তার সারাগায়ে আমি হাত বুলাইয়া দিলাম। কালা ড্রেস পইরা আছে সে, তার স্কার্টের কুচিগুলা কোনো লাড়াচড়া করতেছে না, তার ব্লাউজটা টাইট, কলারে সাদারঙের একটা চিকন লেস লাগানো, তার বামহাত ট্রামের গায়ে চ্যাপ্টা কইরা ধরা, ডানহাতে ছাতাটা নিয়া সে সিঁড়ির উপর-থেইকা-দুই-নাম্বার-ধাপে ঠেশ দিয়া ধরে। তার গাল বাদামি, তার নাকের দুই সাইড চাপা আর আগাটা গোল এবং ছড়ানো। তার মাথায় অনেক বাদামি চুল, এর মধ্যে দল ভাইঙা কয়েক গোছা আইসা পড়সে তার ডাইন কপালে। তার কানটা মাথার লগে একদম ক্লোজলি বসানো, কিন্তু আমি যেহেতু কাছেই আছি সেহেতু কানের একবারে পিছেটা দেখতে পাইতেছি, দেখতে পাইতেছি কানটা যেইখানে মাথার লগে জোড়া লাগসে ঐখানকার ছায়াও।

ঐ মোমেন্টে আমার মনে যেই প্রশ্ন জাগে তা হইলো, মাইয়াটার কি নিজেরে মচৎকার লাগে না? কেন সে তার ঠোঁটগুলারে বুজাইয়া রাখসে এবং এই ব্যাপারে কোনোকিছুই কইতেছে না?

 

পোশাকআশাক

শেইরাম সব পোশাকআশাক আমার নজরে আসে। নানারকমের ভাঁজ, কুঁচি, আর সিলাই দিয়া লাগানো এশটা পার্টগুলা সহ এইসব সুন্দর সুন্দর ডেরেস সুন্দর মতন লাইগা থাকে সুন্দর সুন্দর দেহগুলায়। কিন্তু আমার লাগে যে এত মসৃণ এরা থাকবে না বেশিদিন, বরং এমনভাবে বটবে যেইটা ইস্তারি কইরাও ঠিক করা যাবে না, এম্বোয়ডারির উপ্রে এমনভাবে ময়লার আস্তর পড়বে যেইটারে ঘষা দিয়া তুলা যাবে না। আর এইটাও মনে হয় যে, একই দামী জামা কেউ ডেইলি সকাল থেইকা রাত পর্যন্ত পইরা নিজেরে দুঃখী মানুষ আর ছাগলা মানুষে পরিণত করবে না।

তারপরেও, আমার নজরে আসে সেইসব মাইয়ারা, যারা এনাফ সুন্দরী, এবং যারা দেখায় তাদের পুলক জাগানিয়া মাংসপেশি, ছোট ছোট হাড়, শরিলের মোলায়েম চামড়া, চুলের বাহার, আর প্রইত্যেক দিন তারা পইরা আসে কমবেশি এক রকমেরই ফ্যান্সি জামা, সবসময় একই গালটারে তারা রাখে একই হাতের তাইল্যাতে, আর সেই সিনটারে লুকিং গ্লাসে দেখা যাইতে দেয়।

খালি কখনো কখনো রাইতের বেলায়, কোনো পার্টি শ্যাষে দেরীতে ঘরে যাইবার সময়, লুকিং গ্লাসে অগোরে দেখলে মনে হয়, জামাটা পুরান হই গেছে, সুতানাতা বাইর হই গেছে, ময়লা ময়লা হই গেছে, অনেক অনেক মানুষ এইটা দেইখা ফালাইসে, এই জামাটা আর পরার সুযুগ নাই।

 

নারাজি

যখন কোনো সুন্দরীর লগে আমার মোলাকাত হয়, আর আমি মিনতি করিয়া তারে কই, “রহম করো, চলো আমার লগে”, আর সে জবাবটাও না দিয়া চইলা যায়, তখন আসলে সে যা বুঝায় :

“তুমি কোনো বড় নামওয়ালা ডিউক না, রেড ইন্ডিয়ান ফিগারওয়ালা দামড়া আমেরিকানও তুমি না – যার চোখে থাকবে নির্বাণের নিশানা, যার চামড়ায় থাকবে প্রেইরির বাতাস আর তার মধ্যে দিয়া যাওয়া নদীর জলের টেম্পারিং, কোনোদিন তুমি সাত সমুদ্রের কাছে যাও নাই, সাত সাগরের উপর দিয়া যাত্রা তো করোই নাই, কী জানি ঐগুলা কই আছে! যাই হোক, তাইলে কও, আমার মতন সুন্দর রাধে ক্যান তোমার লগে যাবে?”

“কন্যা তুমি ভুইলা যাইতেছো কোনো প্রাইভেট কার আইসা তোমারে রাস্তার ঠ্যালাঠেলি থেইকা উদ্ধার করে না; একদল ভদ্দরলোক তোমারে পিছন থেইকা ঈদের চান্দের শেইপে ঘিরা গার্ড দেয় না, আর তোমার মাথায় বিড়বিড় কইরা আশীর্বাদের বাণী ঢালে না; ঠিক আছে তোমার বুক দুইখান তোমার বডির উপ্রে সুন্দরমতন – মাপমতন বসানো আছে, মাগার তোমার থাই আর পাছা তো সংযমের মায়েরে বাপ কইরা রাখসে; তুমি একখান ক্যাটক্যাটা সিল্কের ড্রেস পইরা আছো, লগে যে স্কার্টটা পইরা আছো সেটায় ফোল্ডিং দিয়া সিলাই করা আছে – এইরকম ড্রেস দেইখা আমরা লাস্ট আনন্দ পাইসিলাম গত বছরের আশ্বিন মাসে, আর তারপরও তুমি হাসতেছো – মানুষরে মারা যাইবার রিক্সে ফালাইয়া – তুমি টাইম টু টাইম হাইসা উঠতেছো।”

“হুম, আমরা দুইজনই ঠিক। কিন্তু এই সত্যগুলা যাতে আমাদের মাথায় সেট হইয়া না যায়, তার জন্যই আমাদের উচিত যার যার রাস্তায় হাঁটা ধরা।”

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

লাবিব ওয়াহিদ

কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →