Main menu

লাবিব ওয়াহিদের কবিতা (২০২১)

স্মৃতির কর্নিয়ায়

স্মৃতির কর্নিয়ায় মারকাজ মসজিদের
মোজাইক করা ফ্লোর –

কাঁপে ফর্সা রোদে

শিশুরা ছুটে গিয়ে
মুরুব্বির গায়ে বাড়ি খাইতে গিয়া
শেষ মুহূর্তে ব্রেক করতে পারার
মতো মনে হয় –

গোটা লাইফটারে

 

একইরকম দুপুরগুলা

ইলেকটিক পাংখার মতন
পাংখা হইয়া মন
ঘুইরা ঘুইরা একই সার্কেলেই
রঙ্গ তামশা করে নিজেরই লগে

বাদামের মতন
এই গরম দুপুর

বারান্দা দিয়া নিচে চাইয়া দেখতাছি
রিকশাঅলা তার খালি রিকশা
বাইয়া নিতাছে স্লোলি
তারে ডাক দিলো কেউ
“এই খালি” কইয়া

ছোটকালে আমরা ভাবসিলাম
“খালি” মনে হয় রিকশার কোনো সিনোনিম

কারেন্ট চইলা গেলে
ধীরে ধীরে পাংখার থামতে লাগার সাথে
থামতে থাকে এমপিথ্রির পাতাগুলির লড়াচড়া

আম্রিকার স্বাধীনতার ইতিহাস
শেষ হইবার আগেই
টেবিলে ভাত বাড়া হয়

মনে হয় একইরকম রইয়া গেছে এই দুপুরগুলা
কিন্তু এখন, কাঠের স্কেল হাতে লইয়া
আম্মা আর আসে না পড়া শিখাইতে

 


সবকিছু 

শিঙায় ফুঁক দেয়ার পরেই
স্লো মোশানে সবকিছু
তুলার মতো উইড়া যাবে

আমি দেখতে যেন পারি
পরিপুন্ন কোমলতায় –

সেইসব
ডালভাঙা ঘুঘুদের সুরগুলা
কেমন কইরা ছিড়া যাইতেছে

কেমন কইরা সমস্ত সূত্র
শেষমেশ জানাইতেছে
তাহাদের বিত্তান্ত –

বলতেছে তারা
কেমন কইরা প্রতিটা মোমেন্টে
তারা নিজেদের
অ্যাবসেন্সের ভিতর চিৎকার করে
যেমন
আমিও
একটা ইনভিজিবল –

খালি
চিৎকার কইরা গেছি
তোমার কানে

 

কথা বলার মানুষ না পাইলে

কথা বলার মানুষ না পাইলে
তখন মনে হয় কথার একটা
দোকান দিয়া ফেলি

যার কথা বলা লাগবে
টিকিট খরিদ কইরা সে
আমার সাথে কথা বলবে

কথা বলতে বলতে আমি
পয়শা কামাবো
পয়শা কামাইতে কামাইতে একদিন
একটা গরু কিনবো
তিন চার মাস পালার পর
কুরবানির হাটে বেচবো গরুটারে

এর কিছুদিন পরে
একটা ট্রাক কিনবো
আরো কিছুদিন পর
একটা সিএনজি পাম্প দিবো হাইওয়েতে

কিন্তু কোনোদিন কোথাও আমি তো
পাবো না তেমন কথা
আমার শামসের লগে যা কওয়া যাইতো

 

শামস

মনে হয় তোমারি দরদ দিয়া
তুমি আমারে বানাইলা

কাদার ভিতরে হাত গলাইয়া
চক্ষু কোটরে প্রাণ ভরিয়া
এ জগৎ
ফুলের মতো ফুটাইলা

যতোই দূরে গেলা
ততো এ হৃদয়ে জাগিলা

 

মোলায়েম সমস্ত আর্টওয়ার্ক

তুমি ত ফালতু-ই
তা আমার বুঝা আছে শুরুর থেকেই

তুমি ফালতু
ফালতু তোমার আশেপাশের সবাই

কিন্তু আবার তুমি ফালতু না
যখন কেউ থাকেনা তোমার লগে
যখন তুমি একলা হই যাও
তখন –

জংলার মধ্যে সবগুলা ঘাসের থেকে যেমন
একযোগে জেগে উঠে সারা শিশিরের দেশ
তেমনে তোমার মধ্যে থেকে
তালপাখার বাতাসের মতো
পুকুরের পানির বুদ্বুদের মতো
টিউবঅয়েলের গোড়ায় জমা
সাবানের ফেনার মতো
মোলায়েম সমস্ত আর্টওয়ার্ক
তোমার নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে জন্ম লয়

 

তুমি যেকোনো রাস্তায় যাও গা

তুমি যেকোনো রাস্তায় যাও গা
রাস্তার বাইরে নিয়া ফেলবে তোমারে
ঐ রাস্তাটাই

যেকোনো লেকের পাড়ে বইসা থাকো
পিরিতের কোল থেকে
মাথাটা তুলবে
পিরিতের না-থাকাই

থাকা আর না-থাকার
মধ্যেকার ব্রিজটাই

থাইকা যাবে তোমার জন্য

 

বিষ্টির পরের ঠাণ্ডা বাতাসে

গায়ের এখানে ওখানে
বিষ্টির পরের ঠাণ্ডা বাতাস
কিলবিল করে হেঁটে যাইতেছে

আমি হেঁটে হেঁটে যাইতেছি বাসায়
যেখানে
ল্যাপটপের সামনে ওয়েট করে আছে
আমার চুপ করে থাকা

বন্ধ হওয়ার জন্য ওয়েট করে আছে
আমার রুমের দরোজা

লিস্টে যোগ হওয়ার জন্য
নতুন কিছু বিতিষ্ণা
ওয়েট করে আছে ডাইনিং টেবিলে

কিন্তু সবকিছুরে ছাপাইয়া
উজ্জল হইয়া থাকবে নিশ্চই
শতরঞ্জিতে বসে আমার
কিছুই না করার টাইমটা

 

সাকিনা

ঘ্যাচঘুচ – ঘ্যাচঘুচ – ঘ্যাচঘুচ –
মাটি থেকে সাদা বরফের
কংক্রিট সরাইতে সরাইতে

আর ধবধবা সাদা ঐ পুডিংয়ে
রইদের কারিশমা দেখতে দেখতে

ঠিকই বানায়া নিতাছি কোনো
নতুন রাস্তা

যেই রাস্তার কাছ দিয়া
নরম ওড়নার মতো ডানা মেলিয়া
সাকিনার সুবাতাস বইয়া যাবে

যেইখানে একদিন এই দৌড়াদৌড়ি-ও
অফ দিয়া একটু শুইয়া পড়া যাবে
বলা যাবে, হাঁটতে হাঁটতেই
এইখানে আইয়া পড়লাম!

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

লাবিব ওয়াহিদ

কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →