Main menu

পাওয়ার অ্যান্ড পপুলার সভারিনিটি

বছর দুয়েক আগে অনেকটা হঠাত করেই একনায়কন্ত্রের ইতিহাস নিয়া ঘাটাঘাটি করার শখ হয়েছিল।

জিম্বাবুয়ে থেকে রোমানিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া। বিশেষ করে জিম্বাবুয়ের ইতিহাস বেশ আগ্রহ করে পরেছিলাম। ঐখানে “মহান মুক্তিযুদ্ধ” এবং তার নেতৃত্বপ্রদানকারী দল ক্ষমতা দখল করেছিল কয়েকদশক। মুগাবে তো নেমে গেল এই কয়েকদিন আগে। ইতিহাস ঘেটে আমি যেই ধারনাতে পৌছালাম সেটা হচ্ছে একনায়কতন্ত্র খুবই সহজেই আধুনিক রাষ্ট্রগুলোতে চলে আসতে পারে। অধিকাংশ একনায়কন্ত্র এর জন্ম হয়েছে খুব অল্পসময়ের ঘটনার পরম্পরায়। এইসময়ে কটকিনের স্ট্যালিনের দুই খন্ড পড়ার সুযোগ হয়। আমি এই ট্রিলজিটা (তৃতীয় খন্ড এখনও প্রকাশিত হয় নাই। প্রথম খন্ড ১৯২৮ পর্যন্ত। সোভিয়েত রাশিয়ার র‍্যাপিড ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন তখনও পুরোপুরি শুরু হয় নাই। স্ট্যালিনকে ঘিরে পার্সোনালিটি কাল্টও ততটা ছিলনা তখন। দ্বিতীয় খন্ড ত্রিশের দশক নিয়া। দ্বিতীয় খন্ডের ট্যাগলাইনই “ওয়েটিং ফর হিটলার”) সকলকে খুব পড়তে রিকমেন্ড করি। কারণ এই মনুমেন্টাল বায়োগ্রাফি আসলে ঠিক স্ট্যালিনের নয়, বরং সমগ্র সোভিয়েত রাশিয়ার। তারপরও অক্টোবরের বিপ্লব সহজেই একদিনে হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে ক্ষমতা কনসলিডেট করতে গিয়ে রাশিয়ান বলশেভিক পার্টি প্রচুর চাতুর্য এবং নির্মমতার আশ্রয় নেয়। কিন্তু শুরুতে কিন্তু কথা ছিল ক্ষমতা ফিরে যাবে অটোনোমাস সোভিয়েত গুলোর কাছে। কিন্তু ক্রেমলিনের রাষ্ট্রযন্ত্র হাতে পাওয়ার পর, জারের গোপন পুলিশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবহার করে ‘চেকা’ গঠনের পরে ঐসব মিলিয়ে গিয়েছে। এই ধরনের ঘটনা আরও অসংখ্য বার ইতিহাসে ঘটেছে। একনায়কন্ত্র বরং আধুনিক রাষ্ট্রেই সম্ভব বেশী ।

পুরানদিনের রাজা/সম্রাটরা আধুনিক অর্থে একনায়ক ছিলেন না। তারা পাড়ার চাঁদাবাজ বড় ভাইয়ের মত। তাকে চাঁদা সময়মত দিলে তিনি আর ঘাটাতে আসেন না। চাঁদা না পাইলে অবশ্যই অত্যাচার করতেন, কিন্তু কোর্ট এবং রাজস্ব কর্মচারী ছাড়া রাজার সাথে প্রজার আর বিশেষ কোন সম্পর্ক ছিল না। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোর্ট গুলো স্থানীয় মানুষ দ্বারা পূর্ণ ছিল। কেন্দ্র থেকে বেতন পেলেও মূলত এরা অধিকাংশ ক্রিমিনাল/সিভিল ম্যাটারে ফ্রি এজেন্ট ছিলেন।

আমি দ্বিতীয়বার চিন্তা শুরু করলাম। আমার মনে হতে লাগল এইসবের উত্তর ইতিহাসে নেই। কেন প্যারাডক্সিকালি আধুনিক রাষ্ট্র একই সাথে গণতন্ত্রের কথা শুনিয়েও একনায়কতন্ত্রের জন্য তেমন একটা বাধা হয়ে দাড়ায় না।

আমি তখন ম্যাক্স ওয়েবার পড়ছিলাম। ‘দ্যা প্রোটেস্টান ওয়ার্ক এথিক’। পড়ে মনে হইল এই বইটা কেবল একজন জার্মানই লিখতে পারতেন। কেননা বিসমার্ক জার্মান ছিলেন।

আমার প্রশ্ন আসল আধুনিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে ডিফাইনিং বৈশিষ্ট্য কি?

এই সময়ে আমি John C. G. Röhl এর মাল্টিভলিউম কাইজার উইলহেলম এর বায়োগ্রাফির একটা ভলিউম পড়ছিলাম। সেখানে বিসমার্কের কর্মকান্ড নিয়ে বিপুল কথাবার্তা ছিল। বিশেষত প্রফেশনাল বুরোক্রেসির ধারনা। এইটা নিয়ে আরেকটু চিন্তা করা দরকার। প্রোফেশনাল বুরোক্রেসির ধারনা খুব বেশী পুরনো নয়। উনিশ শতকে এসেও লন্ডন শহরে বেতনভোগী ফুলটাইম পুলিশ ছিল না (১৮২২ এ এসে প্রথম লন্ডন পুলিশ তৈরি হয়)। নিউ ইয়র্ক শহরে ছিলনা দমকল কর্মী। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো এইসব সার্ভিস দিত। কোন বাড়িতে আগুন লাগলে প্রতিযোগী দমকল কোম্পানি এসে বাড়ির মালিকের সাথে পয়সা নিয়া রফা করত আগে। কথায় না মিললে তার পানির গাড়ি নিয়া চইলা যাইত। প্রফেশনাল বুরোক্রেসির স্ট্রাকচার মূলত ফর্মুলেটেড হয় বিসমার্কের আমলে। নাজি পার্টির সরকারের খ্যাতি ছিল স্ট্যাপলার আর রুলার কেনায় রেকর্ড তৈরিতে। বড়সড় গণহত্যার জন্যেও আসলে এফিসিয়েন্ট বুরোক্রেসি লাগে। কাকে কখন কিভাবে মারা হবে, লাশ কৈ যাবে এইসব সিদ্ধান্ত লজিস্টিকস এর সাথে সম্পর্কিত। আইখম্যান তার বিচারের সময়ে এই ডিফেন্সই করতে চেয়েছিল। হানা আরডেন্ট যা দেখে লিখেছিলেন (আইখম্যান ইন জেরুজালেম, ব্যানালিটি অফ ইভিল)। আরডান্ট যেই সিদ্ধান্তের কাছ দিয়ে গিয়েও পৌছাতে পারেননি সেটা হচ্ছে, এই ব্যানালিটি Is a defining charecteristic of beurocracy. বুরোক্রেসির স্ট্রাকচারটাই ইনডিফারেন্স এর উপর তৈরি ।

তাহলে আমরা ফেরত যেতে পারি প্রথম করা প্রশ্নটিতে, সেটি হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্রের কোন বৈশিষ্ট্য তাকে একনায়কতন্ত্রের জন্যে উপযোগী করে তোলে। বলাবাহুল্য বুরোক্রেসি।

তাহলে প্রশ্নটাকে আরেকটু পেছনে নিয়ে যেতে চাই।

কেন বুরোক্রেসি দরকার।

এই প্রশ্নের উত্তর ইতিহাসে নেই। কারণ এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের জানতে হবে কেন আমাদের সমাজের স্ট্রাকচার এমন যাতে বুরোক্রেসি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পরে।

উত্তর খুঁজতে গেলাম জীববিজ্ঞানে। মানুষের সমাজ মূলত ইউসোশালিটির একটি উদাহরণ।

ইসুসসোশালিটি নিয়ে অথরিটি হচ্ছে এডওয়ার্ড ইউলসন। তার ‘সোশিওবায়োলজি ‘ বইটা এই বিষয়ের ভালো রেফারেন্স। ইউসোশাল প্রাণীরা খুবই জটিল এবং স্তরসম্পন্ন সমাজে বসবাস করে। অধিকাংশ ইউসোশাল প্রাণী হচ্ছে আর্থোপোড। মৌমাছি, কিছু জাতের পিঁপড়া, ওয়াস্প ইত্যাদি। সমস্যা হচ্ছে এদের এই সমাজ মূলত জেনেটিক্যালি হার্ডকোডেড। সকল কর্মী মৌমাছি মূলত রানী মৌমাছির জিনে তৈরি। সুতরাং প্রাইমেট এবং অবশ্যই মানুষদের সামাজিক স্ট্রাকচার বোঝার জন্যে খুব বেশী কাজে আসে না। এর সরাসরি ফলাফল হচ্ছে অধিকাংশ প্রাইমেট সমাজ , আর্থোপোড সমাজের চেয়ে সরল। জেইন গুডাল দীর্ঘ গবেষণা করেছেন শিম্পাঞ্জি সমাজ নিয়ে। তার বরাতে জানতে পারি এই ক্ষুদ্র সমাজগুলো মূলত সমাজের মাঝে ক্ষমতার বিন্যাস তৈরি পর্যন্তই আটকে থাকে। এর বেশী যেতে পারে না। কিছু বেবুন সমাজ আছে যেখানে গ্রুপ মেম্বারশীপ অতটা কড়া নয়। কিন্তু সেই ক্ষেত্রেও সমাজের স্ট্রাকচার খুব বেশী গভীর নয়। ইন্টারেস্টিঙ্গলি কিছু শিম্পাঞ্জিজাত পাথরের টুলস/ অস্ত্র বানানো শিখে গেছে, মূলত আফ্রিকাতে। কিন্তু তাদের সামাজিক স্ট্রাকচারে এখনও কোন জটিল স্তরবিন্যাস তৈরি হয়নি যা মানুষ যখন প্রস্তরযুগে ছিল তখনকার সমাজের সাথে সমান্তরাল ভাবা যায়।

জেনেটিক হার্ডকোড ছাড়া বড় আকৃতির গ্রুপ তৈরি করা কঠিন। একারনেই শিম্পাঞ্জিদের গ্রুপগুলো ছোট। এমনকি হান্টার গ্যাদাদারা মানুষের গ্রুপ আকৃতি ১৫০/২০০ এর বড় ছিল না। প্রতধানত Kin Selection দ্বারা চালিত এইসব গ্রুপ কখনওই হাজার কিংবা মিলিওনে পৌঁছানো খুবই কঠিন। আমাদের সোশাল ইন্টিলিজেন্সও মূলত ১৫০/২০০ এর মাঝেই সীমাবদ্ধ। তাইলে মানুষ পারল কিভাবে?

এর মূল উত্তরে যাওয়ার আগে আমরা একটু ফেরত যাই একনায়কতন্ত্র কেন সহজ সেই প্রশ্নে।

যেহেতু আধুনিক রাষ্ট্র অনেক বেশী সংখ্যক মানুষকে নিয়ে তৈরি, যা মানুষের জিনে থাকা সোশাল ক্যাপাবিলিটির বাইরে, আধুনিক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বুরোক্রেসির উপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল। যাকে আমি চিনি এবং একসাথে বাজারে যাই, তার প্রতি আমি অন্যায় থেকে বিরত থাকব অনেক সময়ই। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্র যেহেতু আমার সাথে আমার অপরিচিত মানুষকে একই আইন বিচার ইত্যাদিতে রাখতে চায়, সেহেতু প্রয়োজন , টমাস হবসের মত একটা লেভিয়াথান। যার ভায়োলেন্সের এক্তিয়ার আছে, যে আমার আপনার মাথা ভাঙ্গাভাঙ্গিতে রেফারি হতে পারবে।

সুতরাং আধুনিক রাষ্ট্রের জন্যে বুরোক্রেসির প্রয়োজনীয়। তবে আধুনিক রাষ্ট্রই প্রয়োজনীয় কিনা সেইটা ভাবা যেতে পারে। অন্ততপক্ষে আধুনিক রাষ্ট্র যে একটা ইডিওলজিক্যাল প্রোজেক্ট হিসেবে হাজির হয়, সেইটাকে প্রশ্ন করা যেতে পারে। কারণ বুরোক্রেসি থাকার অর্থ হচ্ছে এর লেজিটিমেসি প্রশ্নাতীত। ফলে ক্ষমতাবানদের পতন হলেও বুরোক্রেসি দাড়িয়ে থাকে। আর যেহেতু বুরোক্রেসিই রাষ্ট্র, সেহেতু একজন একনায়কের শুধু প্রয়োজন ক্ষমতার কেন্দ্রটিকে দখল করা। কোনমতে সেইটা করতে পারলেই বুরোক্রেসির উপরে ভর করে তিনি চালিইয়ে যেতে পারবেন। নিরুঙ্কুশভাবে।

বুরোক্রেসি যে পপুলার সভারিনিটির বাইরে সেইটা বোঝা দরকার। আর আধুনিক রাষ্ট্রে যে ইডিওলজিক্যালই হোমোজেনাস লোকজনই ক্ষমতার কাছে থাকবে সেইটাও স্বাভাবিক। একনায়কও বুরোক্রেসিতে ঈমান আনেন। তিনিও জানেন কোনভাবে একবার ক্ষমতা দখল করতে পারলেই হয়।

এরপরও প্রশ্নটা থেকেই যাই, কেন ব্যুরোক্রেটদের এত ক্ষমতা। কেন সমাজ এমনভাবে তৈরি হয় যাতে আমরা ক্ষমতার সম্পর্কগুলো মোটাদাগে মেনে নেই। অর্থাৎ আমরা কিভাবে জেনেটিক বেসিসের বাইরে গিয়ে জটিল সমাজ তৈরি করতে পারি, এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কেন আমরা সমাজের বিদ্যমান অন্যায্য ক্ষমতার সম্পর্কগুলো মেনে নেই। তাই এই উত্তরের দিকেই ফেরা যাক।

এর উত্তর মূলত অনেকগুলোই হতে পারে। তবে প্রধান বিষয় ভাষা এবং ‘গল্প’। গল্প বললাম কারণ , এই আকৃতির চেয়ে বড় গ্রুপের প্রয়োজন কল্পনা করা।

আমাদের সমাজের প্রায় পুরোটাই কল্পনা করে নেয়া। যেমন টাকা। টাকার কোন মূল্য সত্যিকার অর্থে নেই। বিশেষত এখন যেহেতু গোল্ড স্ত্যান্ডার্ড উঠে গেছে, সব দেশই মূলত ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং প্র্যাকটিস করে। টাকার মূল্য আছে কারণ আমরা সবাই বিশ্বাস করি এর মূল্য আছে।

সমাজের অধিকাংশ ক্ষমতাই মূলত অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করার কারণে সত্যি। ধরেন দেশের বাউন্ডারি অথবা সরকার ইত্যাদি। এইখানে ভায়োলেন্সের একটা এলিমেন্ট আছে, ভায়োলেন্স সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার কেন্দ্র ব্যবহার করে ডিটারেন্স হিসেবে। কারণ লজিস্টিক্যালি সকল মানুষকে একই সাথে ভায়োলেন্স দিয়ে আটকানো সম্ভব নয়। ভায়োলেন্স এর দায়িত্ব একটা ক্রিটিক্যাল ম্যাস অফ পিউপলকে ভয় পাওয়ানো। সেইটা যতক্ষণ জাড়ি থাকবে ততক্ষণ অধিকাংশ মানুষ ‘ক্ষমতার গল্পে’ বিশ্বাস করবে।

এই বিষয়টা আরও বিশদ বুঝতে গেলে আমাদের বায়োলজি থেকে যেতে হবে পদার্থবিজ্ঞানে। পদার্থবিজ্ঞানে একটা কনসেপ্ট আছে ‘ফেইজ ট্রানসিশন’। স্ট্যাটিসকিক্যাল মেকানিক্স মূলত প্রতিটি পার্টিকেলের জন্যে খুব সহজ একটি এজাম্পশন নেয়। কিন্তু দেখা যায় ম্যাক্রো লেভেলে অনেক জটিক স্ট্রাকচার মাইইক্রো লেভেলে সহজ অনুসিদ্ধান্তের ফলে হয়েছে। কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা আছে যেখানে ম্যাক্রো লেভেল বিশাল পরিবর্তন হয়ে যায়। যদিও মাইক্রোলেভেলের অনুসিদ্ধান্ত একই আছে। যেমন ধরা যাক, পানি এবং বরফ। মলিকুলার লেভেল কোনই পার্থক্য নেই। কিন্তু হঠাত পানি বরফ হয়ে যায়। অথবা চুম্বক হঠাত করেই ক্রিটিকাল টেম্পারেচারে তার চৌম্বকত্ব হারিইয়ে ফেলে। এই ঘটনাগুলোই ফেইজ ট্রান্সিশনের উদাহরণ। Abrubt and discontineuous change of state at the macro লেভেল। মজার বিষয় হচ্ছে এই ঘটনাগুলো ‘স্বতস্ফূর্ত’।

এইবার আমরা জিম্বাবুয়ের লোকজন যে সাউথ আফ্রিকান ডলারে কেনা বেচা করে এই ব্যাপারটা একটু বুঝি। জিম্বাবুয়ের লোকজন সবাই মিলে একসাথে সিদ্ধান্ত নেয় নাই যে তারা আর জিম্বাবুয়ের মুদ্রা ব্যবহার করবে না। প্রত্যেকটা মানুষই খুবই সাধারণ মাইক্রো নিয়ম দ্বারা চালিত। যেমন নিজের বা পরিবারের সারভাইবাল। সবাই স্বতস্ফুর্ত ভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কোন একটা ক্রিটিকাল পয়েন্টে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ জিম্বাবুয়ের মুদ্রা নিতে অস্বীকৃতি জানানো শুরু করেছে। ব্যস। ফেইজ ট্রাঞ্জিশন কমপ্লিট।

অধিকাংশ রায়ট/বিপ্লব এই মেকানিজমেই হয়। যেদিন বিপ্লব হয় তার আগেরদিন বিপ্লবের কারণগুলো উপস্থিত ছিল না তা কিন্তু না। কিন্তু কেন একদিন হয় অন্যদিন না। এর কারণ এই ফেইজ ট্রান্সজিশন। যথেষ্ট সংখ্যক মানুষকে প্রথমত বিপ্লব পূর্ববর্তী স্ট্যাটাসকো কে অস্বীকার করতে হয়। এর পরে বিষয়টা সহজ।

তাহলে বটমলাইন কি?

বটমলাইন হচ্ছে যাদের ক্ষমতা আছে, তাদের ক্ষমতা আছে কারণ ক্রিটিক্যাল ম্যস অফ পিউপল তাদের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। ক্রিটিক্যাল ম্যাস অফ পিউপল মনে করে these people have power over them.

সুতরাং ফেইজ ট্রাঞ্জিশনে যাইতে হইলে প্রথমেই দরকার এই বিশ্বাস ভাঙ্গার। তাই সবচেয়ে ছোট রিবেলিওনগুলোই সেই ফেইজ ট্রান্সজিশনে পৌঁছানোর পথে কন্ট্রিবিউট করে। আপনি যত পলিটিক্যালি এনগেইজড থাকবেন তত কন্ট্রিবিউশন বাড়বে।

যখন হতাশ হবেন তখন সিচেস্কুর শেষ বক্তৃতাটি দেখতে পারেন। নিজের দলের কর্মী সমাবেশ করে ভাব নিচ্ছিলেন। বক্তব্য দিচ্ছিলেন, হঠাত জনসভা থেকে কেউ কিছু বলল। তিনি আমলে নিলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই সই সাবধানী স্লোগান আগুনের মত ছড়িয়ে পড়ল।

পরাক্রমশালী একনায়ক, যার কথায় রোমানিয়ায় বাঘ আর হরিণ এক ঘাটে পানি খেত, তিনি বৃথাই “কমরেডস, কমরেডস” করে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন।

ঐ মুহুর্তেই তিনি বুঝতে পারলেন তার আসলে কোন ক্ষমতা নেই। দশকের পর দশক তার ক্ষমতার গল্পে রোমানিয়া বিশ্বাস করে গেছে। আর করবেনা তারা। ভদ্রলোক এবং তার স্ত্রী কেউই শেষ পর্যন্ত তাদের কল্লা বাচাতে পারেন নাই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ট্রাইব্যুনালের রায়ের পরে নয়, বরং ঐ ভাষণ মুহুর্তেই তার ভাগ্য তিনি দেখে ফেলেছিলেন।

এই ছোটও ছোটও পলিটিক্যাল এনগেজমেন্ট তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইসব ছোট ছোট থেকেই একদিন হঠাত দেখবেন আবার মেরুদণ্ডটি ধনুকের ছিলার মত টান টান হয়ে গেছে, আপনি বলছেন
“এক দফা এক দাবী …………”

/অগাস্ট ০১, ২০১৮

The following two tabs change content below.
Avatar photo
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →