Main menu

কনসার্ট ডাকা এজ এন একটিভিজম – প্রসঙ্গে

ঢাকা ভার্সিটির প্রগতীর ধ্বজাধারীরা কনসার্ট ডাকসে।

আমি জানি না লোকজন “ব্রেভ নিও ওয়ার্ল্ড” এর দুনিয়ায় থাকে কিনা, যে কোন উসিলায় তাকে যেন প্লেজারের দিকেই যেতে হবে,
তাও লোকজনকে মনে করায় দিচ্ছি -শেষ পর্যন্ত কনসার্ট একটা উৎসবই, ভাই।

১৫ সালের হ্যারাসমেন্ট উপলক্ষে যে কনসার্ট দেওয়া হইসিলো, এর কথা তো মনে আছে কী হয় এখানে।

এখানে লোকজন আসবে, গান টান গাইবে প্রিয় ব্যান্ডের সাথে। গানের ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞাপন বিরতীর মতো কেউ কেউ এসে এখানে স্লোগান বা আলাপ দিবে। হয়ত লোকজন বেশ খুশি ই, ক্যাম্পাস এদ্দিন বন্ধ ছিলো, এদ্দিন পর কনসার্ট তো একটা লাগেই! সবাই একসাথে জড় হবে, দেখা সাক্ষাত হবে।

এদিকে হিন্দু এলাকায় হামলা আজকেও বন্ধ হয় নাই। একটু জগন্নাথ হলে গেলেই গল্প শুনবেন, গন্ডগ্রাম, এমনকি জেলা শহরেও হিন্দু পাড়া গুলোয় গুজবের পর গুজব। অমুক পাড়া টার্গেট হইসে, তমুক এলাকায় সন্দেহজনক কাউকে দেখা গেসে, তমুক অডিও রেকর্ড ফাঁস হইসে যেখানে বলা হচ্ছে ওরা হামলা করতে পারে অমুক পাড়ায়। প্যানিকড লোকজন। মানুষ ভাবে তার বাসা সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা, এ জায়গাতেও সে সেফ ফিল করছে না। এই হয়ত আগুন লাগলো এই হয়ত লুট হলো।

যারা এই অবস্থার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে, তাদের সেই জায়গা আমি ফিল করতে বলি না, যাস্ট চাইতেসি আপনি একটু বুঝেন এই সময় এই উসিলায় কনসার্ট দেওয়া প্রচন্ড ইনসেন্সিটিভ। আল্টিমেটলি তা এদ্দিন পর ক্যাম্পাস খোলার উৎসব হিসেবেই সার্ভ করবে। তা যতবড়ই গালভরা নামে বা স্লোগানেই হোক না কেন। এটা বরং ডার্ক কমেডির মতো মনে হয়।

আমি কিছু আলাপ দিতে চাই এ নিয়ে। যেহেতু আমিও চাই চেইঞ্জ হোক। আপনারা কি শুনবেন?

 

আলাপ একঃ

প্রথম আলাপ হলো এই যে হামলা হলো- এটা কে আপনি কোন “মোডে” দেখেন? এটা কি পলিটিক্যাল প্রবলেম নাকি কালচারাল প্রবলেম।

পলিটিক্যাল প্রবলেম ধরে নিলে – আপনি ধরে নিতেসেন জাস্টিস, ইন্সটিউশনাল ডেমোক্রেসি এসব থাকলে সহিংসতা চলে যাবে। আসলেই যাবে। বাট ইন্সটিটিউশনাল রেসিজম যাবে না। বুরোক্রেটিক সাম্প্রদায়িকতা যাবে না। আমেরিকা ইংল্যান্ডে এসব গনতান্ত্রিক ঐতিহ্য ভালোমতই আছে, কিন্তু ইন্সটিটিউশনাল রেসিজম যায় নাই। আছে।

ইন্সটিটিউশনাল রেসিজম মানে কিন্তু হামলা হওয়া না, হোয়াইট রা ব্ল্যাক দের উপর হামলা প্রায় করে না ওদেশে। ইটস রিলেটেড টু গেজিং, রিলেটেড টু আপনার দায়িত্ব পালনের সময় একটিভ প্যাসিভ আচরন। আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েড’রে পুলিশ ধরার সময় হাইপার একটিভ আচরন করসে। আপনি ধরে নিতেসেন পুলিশ একটা নিউট্রাল রাষ্ট্রীয় একক, তার কাজ সে দায়িত্ব পালন করবে। কাহিনী হল, তারও ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট আছে, সেও কোন না কোন রেসিয়াল সেন্টিমেন্টে অবস্থান করে।

আবার কালচারাল সমস্যা ভাবলে আপনি ধরে নিচ্ছেন লোকজনকে “সচেতন” করা হলে লোকজন কম্যুনাল হবে না। এই কার্যক্রমে হয়ত ইন্সটিটিউশনাল রেসিজম মিনিমাল হবে। সমস্যা হল একটা টোটালারিয়ান দেশে এইটা কাজ করবে না। এর চেয়ে বড় আলাপ, যখন জাস্টিস থাকে না, তখন লোকজন আরও বেশি আইডেন্টিটি ইউজ করে নিজের জন্য।

একটা অফিসে আপনি আছেন, আপনি বাটে পড়লে ঠিকই ঢাবি আইডেন্টিটি ইউজ করবেন বা ঢাবিয়ান নিয়ে গ্রুপিং করবেন, ঠিকই এলাকার আইডেন্টিটি ইউজ করবেন বা তার ভিত্তিতে গ্রুপ করবেন, ঠিকই ক্লাবের আইডেন্টি ইউজ করবেন। একই ভাবে কোন প্রতিষ্ঠানে লোকজন ঠিকই ধর্মের ভিত্তিতেও “আমরা” “ওরা” করতে পারে। দাবী আদায়ের সব পন্থা বন্ধ হলে আইডেন্টিটি পলিটিকস বাড়ে। এই পন্থায় ই নেয় সাধারন লোকজন, যেহেতু আর কোন উপায় সে পায় না। এই আলাপে আমি পলিটিক্যাল পরিসরের কথা বলছি না, সামাজিক পরিসরের কথাই বলছি।

কনসার্ট হওয়াটার অর্থ হলো, আপনি ভাবেন এটা সামাজিক প্রবলেম। এই চিন্তা সমস্যার। তাও তাত্ত্বিক ভাবে বেনিফিট অফ ডাউট দেওয়া গেলো। যেহেতু রেসিজম/ কমুনালিজম এগুলোকে ইনক্লুসিভ এপ্রোচেই দেখা হয়। আপনি না হয় সামাজিক এপ্রোচে দেখলেন।

আমার প্রশ্ন হলো, কনসার্ট এখানে কী পারপাস সার্ভ করবে? তাও ঢাবি এলাকার মধ্যেই?

একজন আমাকে বলল, গান জনগনের সাথে কানেকশন করতে পারে নাকি! ওকে, আপনি যদি একই সাথে কানেকশন ভালো করে করতে চান আবার লোকজনকে সচেতন করতে চান, তাহলে হোয়াই নট একটা সাম্প্রাদায়িকতা বিরোধী ওয়াজ মাহফিল?

হোয়াই কনসার্ট? একটা কনসার্ট শেষ পর্যন্ত গানের জন্যই ইনজয়িং হয়ে উঠবে, তাতে আপনার সাম্প্রাদায়িকতা বিরোধী মেসেজ হারায় যাওয়ার কথা। এই অবস্থায় আপনার কনসার্ট ইনজয় করা কতটুকু ইথিক্যাল?

পারপাসের আলাপ হলে তাতে কতটুকু মেসেজ যাবে? বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রাদায়িকতা বিরোধী ওয়াজ মাহফিল হলে যে ইফেক্ট হবে আপনি কি মনে করেন কনসার্ট এ এর থেকেও বেশি ইফেক্ট হবে?

সবচেয়ে বড় কথা, আপনার সচেতনতা প্রজেক্টের রোডম্যাপ কই? বার্বি ডল স্টাডি বাংলার বুদ্ধিজীবি মহলে সেই পরিচিত। জানায় রাখি এটার ইফেক্ট ফেলতে ৩০ বছর লাগসিলো। আপনি কত বছরের সিস্টেমেটিক প্ল্যান নিসেন? আরেকটা বড় বিষয় – সচেতন করতে টার্গেট জনগোষ্ঠির ডাটা লাগে। আপনি এমন ই “বস্তুবাদী” যার কাছে টার্গেট জনগোষ্ঠির কোন ডাটাও নাই।

এর আগেও ১৫ সালের হ্যারাসমেন্ট ইস্যুতে দেখসি এই কনসার্ট হওয়ার পর এই রিলেটেড আর কোন জনসংযোগমুলক কার্যক্রমে যায় নাই তারা। ওটাতেই আন্দোলন শেষ। তাহলে কি এটা মনে করা হয়, একটা কনসার্ট হবে, তাও ঢাবির মধ্যে, সাথে সাথে সবাই সচেতন হয়ে যাবে? যেখানে সাম্প্রাদায়িক হামলা ঢাবি বা ঢাকা এলাকায় হয়ই নি।

 

আলাপ দুইঃ
 
কালচারালি প্রতিরোধ করার যে ধারনা এটা প্রবলেমেটিক। এটা বেইসড অন গ্রামসি মিসরিডিং। এখানে ধরে নেওয়া হয়,মানুষ একটা ইথিক্যাল এনিমেল। যেন আপনি তাকে যদি একবার “সচেতন” করেন অন্যায় অবিচার হচ্ছে দেশে, সাথে সাথেই যেন সে একটিভ হয়ে যাবে। ফাইট দিবে অথরিটির বিরুদ্ধে। এটা সাঁ সিমে, ব্ল্যাংকিরা মনে করতো।

দেশে তো কম পাঠচক্র কার্যক্রম হয় না, সবাই তো খুব একমত – অন্যায় অবিচার হচ্ছে দেশে, তাহলে ফাইট হয় না কেন? নুন্যতম একটা আন্দোলনে ৪/৫ হাজার জনসমাগম তো আশা করা যায়!

আমি আরেকটা উদাহরন দিই। গতবছর আল জাজিরা নিউজ করসে, ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং, সাবেক আর্মি প্রধান নিয়ে। এটার বাংলা যখন বের হয় তখন প্রচুর প্রচার হয় বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে। বিএনপি অভুতপূর্ব একটিভিটি দেখায় জিনিসটা প্রচারনায়। জেলাশহর গ্রাম গুলোতে পর্যন্ত এই ভিডিও নিয়ে গল্প গুজব হইসে চায়ের দোকানে। প্রশ্ন হলো, প্রতিরোধ হয় নাই কেন?

এর কারন হচ্ছে, যদি সচেতনতা কে আপনি একটা “টুল” হিসেবে চিন্তা করেন, তবে এটার কিছু লিমিটেশন আছে।

সচেতনতা প্রজেক্ট সেই জায়গাতেই কাজ করে যেখানে ব্যক্তি স্বার্থ বা ক্লাসগত স্বার্থ ডমিন্যান্ট না।

মানে মিনা কার্টুনে পায়খানা ব্যবহারের পর হাত ধোন – এই জায়গায় সচেতনতা প্রজেক্ট কাজ করে। কিন্তু এমন জায়গায় কাজ করে না যে জায়গায় আন্দোলন করলে আপনি বাটে পড়বেন, বিসিএস হবে না, কেইস দিবে, লাইফ হ্যাম্পারড হবে। কেননা এটায় ইথিক্যাল প্রেশারে এক্ট করার চেয়েও বাস্তব cost বেশি।

এজন্য এদেশে অবশ্য বঙ্গীয় বুদ্ধিজীবি গোষ্ঠি অন্য এপ্রোচ নেয়। সে ফ্যাসিজম নিয়ে পাঠচক্র করে, এটায়ও হিডেন ইন্টেশন আছে, তা হলো বুদ্ধিজীবি হিসেবে নাম ফাটে। সমস্যা হলো দেশে যদি ১ কোটি মানুষ ঘৃনা করে কোন শাসককে, ঘৃনাটা বিভিন্ন পাঠচক্র, অনলাইন নিউজ পেপারের কারনেই হইলো ধরে নিলাম, তাহলে ও এটা কোন সমস্যা না। এটা অথরিটি চ্যালেঞ্জ করে না। এজন্য দেখবেন প্রচন্ড সেলিব্রিটি লোকের হাজার লাইক পাওয়া আলাপ ও সরকার থ্রেড হিসেবে গুরুত্বই দেয় না। সমস্যা তখন হয় যখন এক লক্ষ লোক রাস্তায় নামে। এক কোটি প্যাসিভ লোকের চেয়ে শহরের রাস্তা আটকানো এক লক্ষ একটিভ লোক বেশি সিগনিফিক্যান্ট।

সচেতনতা প্রজেক্ট এখানেই মারা খায়।

এই কারনে, একেক আন্দোলনের তাত্ত্বিক একেক জায়গায় ফোকাস করতে বলসেন। যেমন মার্ক্স ফোকাস করতে বলসেন ক্লাসগত স্বার্থ ও কনফ্লিক্টকে।

সচেতনতা নিয়ে আরেকটা আলাপ দেওয়া যায়। সোশ্যাল ডিজাইনের আলাপ। তা হলো বাথরুমের সুযোগ, সাবান কেনার সুযোগ না দিলে, মীনাকে হাজার হাত ধুইতে বললেও সে হাত ধুবে না। এই দুই জিনিস সচেতনতা প্রজেক্টে মনে রাখা দরকার।

কাহিনী হলো, যদি আসলেই চেইঞ্জ চান আপনারা, তাহলে বলতে বাধ্য হচ্ছি এই কনসার্ট এবং সচেতনতা প্রজেক্ট কাউরে “একটিভ” করে না। “সচেতন” করে। আপনার “একটিভ” করার এজেন্ডা কই?

আলাপ তিনঃ
 
একটু আগেই সাঁ সিমের আলাপ দিচ্ছিলাম। এটা থেকেই বলতে চাই, দয়া করে ইথিক্যাল ইস্যুর ভিত্তিতে আন্দোলন বন্ধ করেন। এইটা একটা ইউটোপিয়ান সোশালিস্ট আচরন, আনহেলদি জিনিস।

আমি অনেককেই বলতে দেখি, আমি রাস্তায় নামসি কেননা আমি পরের প্রজন্মকে কী জবাব দিবো? কিংবা আমার মনে হইসে এখানে নামা উচিত নাহলে নিজেকে কী জবাব দিবো?

কাহিনী হইলো এটাকে যদি “মেটা লেন্সে” দেখেন, এটা বিশাল সমস্যা করে।

ব্যাখ্যা করি, একটা সফল আন্দোলন আরও সফল আন্দোলন হওয়ার মাইলফলক হিসেবে কাজ করে। কোটা আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন এজন্যই সরকারপ্রধান পুরোপুরি তাদের কথা মানেন নাই। ১০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7} কোটার কথা আসছিলো, বরং উনি “রাগ করে” পুরা কোটাই তুলে দিসেন। কেননা একদম পাই টু পাই আন্দোলনের দাবী মেনে নিলে এটা সামনে আরও অনেক আন্দোলনের স্পিরিট হিসেবে কাজ করবে।

এখনও দেখবেন লোকজন ৬৯’র গন অভ্যুত্থান, একাত্তর, ৯০র আন্দোলন এর আলাপ দেয় কোন আন্দোলনের টাইমে। একটা সফল আন্দোলন যেমন আরও সফল আন্দোলন হওয়ার স্পিরিট তৈরি করে, লিগ্যাসি তৈরি করে, ঠিক তেমন এক/একাধিক ব্যর্থ আন্দোলন লোকজনের স্পিরিট ধ্বংস করে। সে পেসিমিস্টিক হয়ে যায়, ভাবে আন্দোলন করে লাভ নাই। বাস্তবগত অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যাওয়ার কারনে এমনকি একজন একটিভ আন্দোলনকারীর আনকনশাসে পর্যন্ত কাজ করে “আন্দোলন করে লাভ নাই” । এই যে একজন ভাবছে “আন্দোলন করে লাভ নাই”, এটার দায় তো আপনার।

আপনি আন্দোলনের টাইমে স্ট্রাটেজি ঠিক করেন নাই, লং টার্ম প্ল্যান ঠিক করেন নাই, ফান্ড প্ল্যান ঠিক করেন নাই, পাবলিক রিলেশন প্রচারনা ঠিক করেন নাই।কেবল রিয়্যাকশনের ভিত্তিতে আন্দোলন করসেন। এমনকি জয়ীও হতে চান নাই আন্দোলনে। যাস্ট “বিবেকের কারনে দাড়িয়েছি।” এই যে ক্রমাগত ব্যর্থ আন্দোলন দেওয়া, এটা তো আরও কন্ডিশন তৈরি করে আন্দোলনের উপর বিশ্বাস হারানোর। আরও ব্যর্থ আন্দোলনের ভূমি তৈরি করে। একটা সময় আপনি রাইট কথা বললেও আপনার মানসিকতার জনগন ও আপনার পিছনে দাঁড়ায় না।

রোডম্যাপ বানান, স্ট্রাটেজি ঠিক করেন, দরকার হলে পাবলিক রিলেশন অফিসার নিয়োগ দেন টাকা দিয়ে। সফল হওয়ার জন্য আন্দোলন করেন, নাহলে বাদ দেন। আন্দোলন করার জন্য আন্দোলন করে – ক্ষতি করতেসেন।
 

আলাপ চারঃ
 
এটা আলাপ তিনের এক্সটেনশন। তা হলো ইস্যু ভিত্তিক আলাপ।

বাম আন্দোলনের একটা কমন স্ট্রাটেজি হলো সে ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন করবে। এটার কারন সম্ভবত এই যে, সে মনে করে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করে বিভিন্ন ইস্যুর মানুষকে এক করে সে একটা বড় আন্দোলন গড়ে তুলবে। রেভুলিউশনারি প্রজেক্ট থেকে আসা এই ধারনা, যদিও এখন আন্দোলন হয় সব রিভিশনিস্ট গোলে।

কাহিনী হলো গত ত্রিশ চল্লিশ বছরে এই জিনিস কাজ করছে না। করার কথা না, সময়ের পরিবর্তনে নতুন নতুন কন্ডিশনের সাথে সাথে চেইঞ্জ হওয়ার কথা স্ট্রাটেজির। এই জিনিস কাজ করলে তো রেভুলিউশন ই হয়ে যেত।

কিন্তু সমস্যা হলো, এই ইস্যু আন্দোলন এর মেইন কনসার্ন “বর্তমান”। সে আন্দোলনটাকে সিস্টেমেটিক এপ্রোচে নিয়ে গিয়ে “ভবিষ্যত সিকিউরড” করে না।

জর্জ ফ্লয়েডকে যখন সাফোকেশনের কষ্ট দিয়ে মারা হলো, প্রথমে আন্দোলনের বিষয় ছিলো তার হত্যার বিচার চাই। এরপরই আন্দোলনের দাবী হইসে, পুলিশ ডিপার্টমেন্টে এমন ঘটনা হলে সেটা অডিট করবে থার্ড কোন প্রতিষ্ঠান, পুলিশ প্রতিষ্ঠান না। এটাই দাবী আন্দোলনের।

কারন হলো, এতদিন ধরে আমেরিকায় কোন পুলিশ অফিসারের ব্রুটালিটি বিষয় মিডিয়ায় আসলে সেটা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ই তদন্ত করতো। যথারীতি পুলিশ তাদের ডিপার্টমেন্টের ব্রো কোড ও ইন্সটিটিউশনাল ভাবমূর্তির কারনে তাদের বাঁচাতে চেষ্টা করতো।অধিকাংশই বেকসুর খালাস পাইতো। বেকসুর খালাস উৎসাহিত করে আরও কোন ভায়োলেন্সের। থার্ড কোন প্রতিষ্ঠান অডিট করলে এটা মিনিমাল হবে – এজন্য এ দাবী।

এই ধরনের সংস্কার মুলক দাবীর সুবিধা হচ্ছে আপনি এটাকে সিস্টেমেটিক এপ্রোচে নিয়ে গেলেন, যে কারনে এটার ভালো ফল ভবিষ্যতের কেউ পাবে। ইস্যু আন্দোলন সফল হলে কেবল ওই ইস্যুই সলভ হলো, সেইম ক্যাটাগরির আরও ইস্যু কিন্তু না। সংস্কার আলাপ সলভ হওয়ার সুবিধা হলো আপনাকে আর এটা নিয়ে আন্দোলন করতে হবে না,বরং আপনি নতুন কিছুতে ফোকাস করতে পারেন।ইউরোপ এজন্যই আঠারোশ সালের পর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নাই। বিভিন্ন প্রবলেম আসছে, সে অনুসারে নিউ সলুশন ও সিস্টেম বের করসে। রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ যদি ভালো হয় তাহলে তো আপনার হেফাজত হত্যা বলি, অভিজিৎ হত্যা বলি কিংবা তনু হত্যা কোন হত্যার জন্যই তো আলাদা করে আন্দোলন করতে হয় না। সমস্যা হয় আপনি ইস্যুতেই থামেন, এটাকে সংস্কারের দিকে যাওয়ার কোন কন্সট্রাকটিভ আলাপের দাবী তুলেন না। যদিও বা তুলেন তাহলে আপনার কাছে মোস্ট রেশনাল আলাপ লাগে এটা যে, কঠোর আইন করতে হবে! আরও বিপদ।

কাহিনী অন্যও হতে পারে। আমি অনেককেই দেখসি এই জিনিস জানেন। কিন্তু এই বিষয়ে আলাপ দিতে অস্বস্তি বোধ করেন। কারন আছে। তা হলো এই এপ্রোচে গেলে তো তাকে একটা সময় এই দাবী তুলতে হবে – যারা সরকারী কর্মকার্তা তারা দায়িত্ব অবহেলা করলে চাকরী নট করে দেয়া যাবে। কিংবা যারা চেয়ারম্যান এমপি তাদের এলাকায় কাহিনী হলে তার বিচার করতে পারবে স্থানীয় প্রশাসক। তাহলে নিজের পাছা বাচানোর জন্য হইলেও সবাই একটিভ থাকবে। এটা তো বিশাল প্যারার। কারন সেও তো ওই জায়গায় যাইতে চায়, বা ঢাবি তো সুতরাং বন্ধু, বান্ধব, বড় ভাই আছে। তাছাড়াও, তার কন্সট্রাক্টে সরকারী জব মানেই লাইফ সিকিউরড বিষয়। এটা তো সেও একটু আধটু চায় আরকি!

কাহিনী হলো, অস্বস্তি হলে – আলাপটা এমন নাও হতে পারে তো। আন্দোলনকারীদের এটাও তো দায়িত্ব, প্রবলেম সলভের জন্য ইনভেস্টিগেট করা, সংকটের পয়েন্ট চিহ্নিত করা, কোন নিউ কন্সট্রাকটিভ সলুশন ভাবা।

তারপর ইস্যু থেকে একটা কন্সট্রাকশনের দিকে পুশ করা। যেমন এরপর ফ্লয়েড মারা যাবার পর এ, বি, সি, ডি যেই মারা যাক না কেন পুলিশ ব্রুটালিটিতে, ওরা ওই একই আলাপ ই তুলবে, ওটাই পুশ করবে সামনে। এবং আলাপ টা আরও বাড়বে। একটা সময় এটা আইনী হলে, এটার সুফল ভোগ করবে ভবিষ্যত ফ্লয়েড রা।

ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন না করে কন্সট্রাকশনের দিকে নিয়ে যান আন্দোলন। রেভুলিউশনারি ভান করলেও আপনি তো সংস্কার আন্দোলন ই করতেসেন, তাইলে এত রাখঢাক কেন?

আন্দোলন নিয়ে আলাপ আরও অনেক দেওয়া যায়।আমি পারপাস, সচেতনতা,শুধু ইথিক্যাল কারনে আন্দোলন, ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন – এই চার জায়গায় বললাম কারন এটা কনসার্ট জাস্টিফিকেশন আর্গুমেন্টের সাথে রিলেটেড। আপনি বলতে পারেন কনসার্ট অনেক পারপাস সার্ভ করবে (বস্তুবাদী তো আপনি, দয়া করে ডাটা দেখান), কনসার্ট সচেতন করবে লোকজনকে, কনসার্ট করসি কেননা আমার জায়গা থেকে এটাই সবচেয়ে বড় ইথিক্যাল এক্ট, কনসার্ট করসি কেননা বাংলাদেশে এখন এটাই বড় সংকট বা ইস্যু। এই আলাপ সেটার কাউন্টার।

আপনারা না দেখার ভান করতে পারেন, যদি আপনার নিড থাকে কনসার্টে যাওয়া -তাহলে নতুন নতুন যুক্তিও দাঁড় করাতে পারেন, তখন তো আর কথা বাড়ায়ে লাভ নাই। খালি বলবো সামনের পরিস্থিতির জন্য আপনাদের এইসব কাজও দায়ী থাকতে পারে। থ্যাংক্যু।

The following two tabs change content below.
Avatar photo

প্রিতম ঘুম

বই পড়তে পছন্দ করেন। সব রকম বই। রিসার্চ করেন।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →