Main menu

যুবা রহমানের কবিতা

চায়ের দাওয়াত

আমি এদিকেই থাকি
মোড়ের দোকানে চা খাই

তুমি চাইলে আসা যাওয়ার মাঝে
আমাকে ইউজ করতে পারো

এই ধরো একটা চা খাইলাম
খুব বেশি হইলে, কোনোদিন
একসাথে সূর্যডুবা দেখলাম।

তারপর আর কিছু না

দুইজনে নিজ নিজ অন্ধকারের
দিকে যাইতে থাকলাম

 

সকালে ওঠে আমি

সকালে ওঠে আমি
জীবনের মানে পাল্টে দিতে থাকি

প্রথমেই দুই গ্লাস পানি, এরপর কিছুটা টাইম দিয়ে
ধনেপাতা, পিঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ভাজা জিরার গুঁড়া,
বাদাম, আদা দিয়ে
মুড়ি মাখি। বাটিতে মুড়ি নিয়ে রোদে বসামাত্রই
লাইফ চেইঞ্জ হইতে শুরু করে
মনেহয়, সাকসেসের কাছাকাছি চইলা আসছি।
এরপর চিনিছাড়া কড়া দুধ চা নিয়া
বড় চেয়ারে হেলান দেয়া মাত্রই লাইফ বিন্দাস!

দুপুর নাগাদ মানেটা ঠিকঠাক থাকে
বিকেল বা সন্ধ্যা নাগাদ মানেটা কিছুটা খুন-খারাবির দিকে
চইলা যায়, তারে ফিরানি যায় না। ফিরতে ফিরতে রাত।

তারপর সকালে আবার মানে বদলানির কাজটা করা লাগে

 

কিচেনের লাইট

কিচেনের লাইটটা
সুইচ দিলে সাথেই সাথেই
জ্বলে না।
৫/১০ মিনিট সময় নেয়।
কয়েক দিন আগে আধাঘণ্টা
পরও জ্বলছে।
তিন-চারমাস থেইকাই এই অবস্থা!
এর মধ্যে
একজন মেকানিক
আইসাও ঘুইরা গেছেন
উনি বলছেন ‘ঠিকাছে তো’
আমি কথা বাড়াই নাই।
আস্তে আস্তে এতে
মজা পাইতে শুরু করছি
সুইচ দিলেই লাইট জ্বলা লাগবো
এমন তো কথা নাই
বাসায় ফিরাই
সুইচটা দিয়া রাখি
পরে কোনো এক সময় জ্বলেন উনি
কিন্তু কোনো দিনও মিস হয় নাই
উনি আসেনই।
এই কয় মাসে
এই লাইট দিয়া আমি জীবনের
গভীর ব্যাখ্যা করা শিখছি!
খেলাও খেলি।
মানে এই লাইটরে আর দশটা
লাইটের মতো মনে হইতেছে না
‘ওস্তাদ’ বইলা মনে হইতেছে।
কত যে শিক্ষা!
এর প্রভাবে নিজেও
পাল্টাইতে শুরু করছি।
আগের থেইকা ধৈর্য্য বাড়ছে,
কি এক দরজা খুইলা গেছে নিজের ভিতর!
কিন্তু এইভাবে আর কত দিন
একটা লাইট কি সারা জীবন এমন থাকবো?
থাকব না তো।
এই ডরেই আছি
কোনদিন, কখন যে
উনি সব লাইটের মতো
সুইচ দিলেই জ্বলা শুরু করে!
সমাজের একটা চাপ থাকে তো
এই চাপের সামনে
কিচেনের একটা
লাইট কতোদিন আর
‘জ্বলে তো জ্বলে না’ হয়া থাকত পারবো।

প্রেম

একদিন পৃথিবীর সব ফুল আমাদের ছিল

যেখানেই ফুল ফুটত
মনে হইত, আমাদের জন্যই ফুটছে

এরপর

দিন গেছে, মাস গেছে
বছর গেছে

আর নিয়ে গেছে আমাদের

 

হাইটফোবিয়া

তুমি ফিরায়া দেয়ার পর মনে হয়,
একশ তলা থেইকা পইড়া গেছি…
পড়তে পড়তে বাঁইচা আছি

পড়তে পড়তে হাইটফোবিক
লোকটা ভাবতেছে
এমন ধাক্কাই দিছে
পড়া আর শেষ হইতেছে না

 

কথার নিত্যতার সূত্র

আমরা যখন কথা বলি
তখন কিছু কথা মাটিতে পড়ে
কিছু বাতাসে মিলায়া যায়

কোনো কথাই হারায়া যায় না

মাটিতে পড়া কথারা ডালাপালা ছড়ায়
ফল দেয়, ফুল দেয়

আর যারা হাওয়ায় ভর দিয়ে
চলতে শিখছে তারা শেষ পর্যন্ত
আকাশের তারা হয়ে যায়

কিন্তু যে কথাগুলা বলা হইতেছে না,
বা বলার ভিত্রে দিয়া যাইতে পারতেছে না;
সেই বোবাদেরও আছে শেষ ঠিকানা।

অরা বসে থাকে পাখিদের গলায়

 

কথার নদীতে

কথার নদীতে
কথা দিয়া একটা
ব্রিজ বানাইতেছি

তোমার বাড়ি যাওয়ার

গিয়া দেখি, বাড়িতে
তুমি নাই, গোসলে গেছ
কথার নদীতে

 

আমি আমারে দিব ভুলিতে

আমারে অপছন্দ করার
বেশ কয়েকটা অপশন
বিছায়া রাখছি

তোমার পছন্দ মতো
যে কোনো একটা
বাইছা নিতে পারো

জাস্ট টেইক ইট ইজি

আমি আমারে দিবো ভুলিতে

 

ওভারব্রিজের ওপরে

ওভারব্রিজের ওপরে
একটা লোক
বিকালটারে ধইরা রাখতে চাইতেছে

কিন্তু সন্ধ্যাটারে
সে ঠেকাইতে পারতেছে না

 

….

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

যুবা রহমান

কবি ও দুনিয়া যে দিকে যাইতেছে সেই দিকে তাকায়া থাকা লোক
Avatar photo

Latest posts by যুবা রহমান (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →