Main menu

যেভাবে প্রেস রিলিজ কপি করে সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়

মার্কিন কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকস এর বক্তব্য সংক্রান্ত খবর বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে পড়লাম।

প্রায় সবগুলো সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাংলাদেশের দূতাবাসের পাঠানো প্রেস রিলিজ থেকে প্রতিবেদন করা হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম ‘সংবাদ প্রতিবেদন’ এর আদলে দূতাবাসের পাঠানো প্রেস রিলিজটি হুবহু অক্ষরে অক্ষরে দাঁড়ি-কমাসহ প্রকাশ করে দিয়েছে।

প্রেস রিলিজের ডাউনলোড করে পড়ুন এখান থেকে: http://www.bdembassyusa.org/index.php?page=press-release

যেমন ইউএনবি। পোস্টে যুক্ত স্ক্রিনশটে দেখুন বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ইউএনবি কিভাবে প্রেস রিলিজ কপি করেছে। (লাল চিহ্নিত ৮টি শব্দ প্রেস রিলিজের বাইরে থেকে যোগ করেছে!)
লিংক: https://archive.ph/Kiy20

ইউএনবির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আবার ঢাকা ট্রিবিউন এবং প্রথম আলো ইংলিশ।
প্রথম আলো: https://perma.cc/Z282-J4Q9
ঢাকা ট্রিবিউন: https://perma.cc/AY7R-PC57

রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাসস-ও একই কাজ করেছে। দূতাবাসের প্রেস রিলিজ হুবহু তুলে দিয়েছে প্রতিবেদন আকারে (ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষায়)।
বাসস ইংরেজি: https://archive.ph/GbLKs
বাসস বাংলা: https://perma.cc/B8T9-G7JE

বাসস এর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডেইলি স্টার (ইংরেজি ও বাংলায়)
ডেইলি স্টার ইংরেজি: https://perma.cc/23SG-2PMD
ডেইলি স্টার বাংলা: https://perma.cc/HGD2-UWQQ

মজার বিষয় হলো ডেইলি স্টার এর ইংরেজি ভার্সনে (মূলত বাসস থেকে আউটসোর্স করা, আর বাসস কপি করেছে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস রিলিজ থেকে) দুটি প্যারা আছে এমন:

“Meeks also replied to a question on certain quarter, from inside and outside Bangladesh, that is strongly lobbying for imposing sanctions against more officials and the politicians as well.

”But we will not do it as per their words … it’s not possible, and we’ll take right steps after scrutinising all things,” he said.”

স্টার এর বাংলা ভার্সনে অনুবাদে প্যারা দুটি হয়ে গেছে:

“মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য গ্রেগোরি আরও জানান, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে থেকে একটি সুবিধাবাদী মহল আরও কিছু কর্মকর্তা, এমনকি রাজনীতিবিদদের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রবলভাবে লবিং চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা তাদের মুখের কথায় কাজ করবো না। এটা সম্ভব নয়। সবকিছু যাচাই-বাছাই করার পর আমরা সঠিক উদ্যোগ নেব।”

অর্থাত, মিকস’কে প্রশ্নকারী ব্যক্তি যে কথাগুলো বলে প্রশ্ন করেছেন সেই কথাগুলোকে মিকস এর বক্তব্য হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে বাংলা ভার্সনের রিপোর্টে!!

ডেইলি স্টার এর প্রতিবেদনের ক্রেডিট থেকে বুঝা যাচ্ছে তারা বাসস থেকে প্রতিবেদনটি আউটসোর্স করেছে।

কিন্তু বাসস এর ওয়েবসাইটের বাংলা ভার্সনে ওই প্যারাটির অনুবাদ দেখা যাচ্ছে:

“আরো কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জোরালোভাবে লবিং করছে এমন বাংলাদেশের ভিতরে ও বাইরে থেকে তৎপর একটি স্বার্থান্বেষী মহল সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মিকস বলেন, ‘তবে, আমরা তাদের কথা অনুযায়ী কিছু করব না। আর এমনটা সম্ভবও নয় এবং আমরা সবকিছু ভালভাবে যাচাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।”

হতে পারে বাসস প্রথমে ভুল অনুবাদ করে পরে ঠিক করেছে। কিন্তু ডেইলি স্টার এর রিপোর্টে ভুল অনুবাদটিই রয়েছে। এবং এই ভুল অনুবাদ প্রকৃতপক্ষে মিসইনফরমেশন দিচ্ছে ডেইলি স্টার বাংলা ভার্সনের পাঠকদেরকে।

কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম আবার দূতাবাস এর পরো প্রেস রিলিজ হুবহু কপি করেনি। বরং কিছু প্যারা হুবহু কপি করেছে।

যেমন:
বিডিনিউজ: https://archive.ph/BkqDk
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা: https://archive.ph/o5ND7
যুগান্তর: https://archive.ph/ZTiO4
সময় টিভি: https://perma.cc/3MZZ-Y92B
ইন্ডিপেন্ডন্ট টিভি: https://perma.cc/647F-SZUC
দেশ রুপান্তর: https://perma.cc/E4S9-DCMZ
ঢাকা পোস্ট: https://archive.ph/vD7uX
এরকম আরও অনেকে।

এসব সংবাদমাধ্যম দূতাবাসের প্রেস রিলিজের সেই প্যারা দুটির অনুবাদ ভুলভাবে করেছে। অর্থাত, মিকস’কে যে ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন তার বক্তব্যকে মিকস এর বক্তব্য হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।

এরমধ্যে বিডিনিউজ, যুগান্তর, দেশ রুপান্তর ইত্যাদি সংবাদমাধ্যম এই প্যারাটির ওপরই শিরোনাম করেছে।

বিডিনিউজের শিরোনাম: “বাংলাদেশের একটি মহল আরো নিষেধাজ্ঞার তদ্বির চালাচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য মিকস”।

ভেতরে এক জায়গায় লেখা হয়েছে: “নিউ ইয়র্কের অনুষ্ঠানে কংগ্রেস সদস্য গ্রেগরি মিকস বলেন, “একটি মহল বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তদ্বির চালাচ্ছে, যাতে আরও অনেক কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। “কিন্তু তাদের কথায় তো আমরা সেটা করব না।… সেটা সম্ভবও নয়। সব যাচাই করে দেখে আমরা সঠিক পদক্ষেপই নেব।”

এই প্যারা দুটিসহ বিডিনিউজের ”নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি”র ক্রেডিটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আরও কয়েকটি প্যারা দূতাবাসের প্রেস রিলিজের অনুবাদ। কিন্তু বিডিনিউজ তাদের প্রতিবেদনে সেই প্রেস রিলিজের কোনো কথা উল্লেখ করেনি।

আবার দূতাবাসের প্রেস রিলিজে গ্রেগরি মিকস এর বক্তব্য কতটা সঠিকভাবে উঠে এসেছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে।

গ্রেগরির পুরো বক্তব্যের রেকর্ড একসাথে অনলাইনে খুঁজে পেলাম না। তবে আলাদা দুটি ক্লিপে তার মূল বক্তব্যের প্রায় ১৮ মিনিট (বক্তব্যের শুরু এবং শেষের কথাগুলোতে মনে হয়েছে এটি পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য) এবং প্রশ্নোত্তর পর্বের আরও ৬ মিনিটের রেকর্ড অনলাইনে পাওয়া গেছে।

মূল বক্তব্যের লিংক: https://www.facebook.com/shahid.islam.14019/videos/358790962655109
প্রশ্নোত্তরের অংশ: https://www.facebook.com/mnazrul.islam.50/posts/3094998537413131

মূল বক্তব্যে মিকস বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং অন্যান্য বিষয়াবলীর পাশাপাশি বাংলাদেশের বিগত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সমালোচনামূলক বিভিন্ন কথা বলেছেন এবং ২০২৩ সালের নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ হয় সেদিকে যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য রাখবে বলেও উল্লেখ করেছেন; যেগুলো দূতাবাসের প্রেস রিলিজ এবং বাংলাদেশি মিডিয়ার রিপোর্টে আসেনি।

দূতাবাসের প্রেস রিলিজে একটি প্যারায় বলা হয়েছে: “We are not imposing any embargo against Bangladesh. The sanctions were imposed on some individuals of an organisation, not the entire organisation … we are looking into the scenario there,” he added.”

কিন্তু প্রশ্নোত্তর পর্বে (৬ মিনিটের ভিডিওর শুরুর অংশ) মিকস এক জায়গায় বলেছেন: “We want to make sure that you are clear. It’s not a sanction against Bangladesh. We are still working with the government and the people of Bangladesh. So it’s not a sanction against Bangladesh. It’s RAB.”

অর্থাত, স্পষ্টভাবেই তিনি বলেছেন স্যাংশন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ওপর দেয়া হয়নি বরং rab (সংস্থা) এর উপর দেয়া হয়েছে।
আর গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত ঘোষণায় র্যাবের সাত বর্তমান সাবেক কর্মকর্তার পাশাপাশি সংস্থা হিসেবেও র্যাবের নাম উল্লেখ ছিল।

এবং সেই ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র ”বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা” দেয়ার কোনো কথাই বলেনি, বলেছে কিছু কর্মকর্তা আর সংস্থা হিসেবে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা।

লিংক: https://home.treasury.gov/news/press-releases/jy0526

The following two tabs change content below.
Avatar photo

কদরুদ্দীন শিশির

কদরুদ্দীন শিশির একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক ও ফ্যাক্ট চেকার। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন প্রতিরোধ এবং এ বিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন। বর্তমানে কর্মরত আছেন আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি'র বাংলাদেশ ফ্যাক্ট চেক এডিটর হিসেবে। এর আগে বাংলাদেশে ফেসবুকের প্রথম ফ্যাক্ট চেকিং পার্টনার 'বুম বাংলাদেশ' এর টিম লিডার ছিলেন। শিশির বিডি ফ্যাক্ট চেক'র একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সম্পাদক। মিডিয়া ম্যানিপুলেশন, প্রোপাগান্ডা, ডিইসইনফরমেশন ক্যাম্পেইন এবং অনলাইন ইনভেস্টিগেশন ও ভেরিফিকিশন তার আগ্রহের জায়গা।
Avatar photo

Latest posts by কদরুদ্দীন শিশির (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →