ফিকশন: দেশ নাই
- বাংলা ক্ল্যাসিক। দ্বিজ কানাইয়ের মহুয়া।
- সুলতানার স্বপ্ন – রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন
- বাংলাদেশি ফিকশন: গালিভরের সফরনামা – আবুল মনসুর আহমদ
- বাংলাদেশি ফিকশন: অগ্নিগিরি – কাজী নজরুল ইসলাম
- বাংলাদেশি ফিকশন: নেড়ে – সৈয়দ মুজতবা আলী
- শাহেদ আলীর গল্প – ঐ যে নীল আকাশ
- বই থেকে: একটি নীল বোতাম – হুমায়ূন আহমেদ
- ফিকশন: দেশ নাই
- ফিকশন: দোস্তি
আরে, একটা দেশ হারায়া যাবে, এইটা কেমনে হয়! আমি তো বিশ্বাসই করতে পারতেছিলাম না। আউয়াল’রে ফোন দিলাম, কি রে এইটা কি ঘটনা, দেশ বলে নাই! আউয়াল মনেহয় নাশতা করতেছিল তখন, কি জানি চাবাইতেছে, দুইটা দম নিয়া কইলো, হ, তুই কি ঘুমাইতেছিলি নাকি এতোক্ষণ! যেন আমি কি করতেছিলাম, সেইটা বেশি ইম্পর্টেন্ট। অর অবশ্য সবসময় সবজান্তা-সবজান্তা একটা ভাব। কোন কিছু জিগাইলেই ফার্স্টে কইবো, ও, এইটা জানোস না! পরে ভং-চং একটা কিছু বুঝায়া দিবো। যেহেতু আমি কিছু জানি না জানে, যে কোন কিছু কইলেই তো আমি বিশ্বাস করবো! এইরকম বহুত ধরা আমি খাইছি। তারপরেও অরেই জিগাই, কারণ ও যে উল্টা-পাল্টা কথা কয় অইগুলা সত্যি না হইলেও একটা ভরসা পাওয়া যায়, ও, আমার চাইতে কেউ তো তাইলে একটু বেশি জানে! না জানুক, ভাবে যে জানে, এইটাও দরকারি জিনিস একটা।
কিন্তু আজকে মেজাজ খারাপ হইলো। আরে শালা, আমি কি তোরে বাজারের মাছের দাম জিগাইছি নাকি, যে একটা কিছু কইয়া দিলেই হইলো! আরে বেটা, দেশ নাই! দেশ মানে বুছোস! জাতীয় সংগীত নাই, জাতীয় পতাকা নাই, জাতীয় ফুল-ফল-পাখি কিছু নাই, একটা আইডি কার্ডও নাই। রাস্তায় পুলিশ ধরলে কি কইবি তুই! আর তুই জিগাছস আমারে, আমি ঘুমাইতেছিলাম কিনা! মেজাজ খারাপ হইলে আমি চুপ কইরা থাকি। আউয়ালও বুঝে সেইটা। একটু থাইমা কয়, না, আমিও সকালে হাঁটতে বাইর হয়া শুনি, দেশ বলে নাই। রাস্তা-ঘাটে লোকজন বলাবলি করতেছে। পয়লা আমারে কইলো সব্জিঅলা, ভাই, শুনছেন তো, দেশ তো নাই! বইলা হাসতেছিল। অর কথা আমি বিলিভ করি নাই। পরে আমাদের “হা হা হা” গ্রুপের কয়েকজনের লগে দেখা, অরাও কইলো। সার্কুলার ফাইনাল। ভোররাত ৪:৩০ মিনিটে, ফজরের আজানের আগে আগে, তাহাজ্জুদের নামাজের পরে এই জিনিস ডিক্লেয়ার হইছে। এরপরে সব মসজিদে ঘোষণা দেয়া হইছে, “আসালাতু খায়রুম মিনান নাউম…” আমি বাসায় ফিরা দেখলাম, ততক্ষণে মেসেজ চইলা আসছে মোবাইলে। তর ভাবী তো খুশি, হে তো দেশ-বিরোধী লোক….
আউয়ালরে কথা কইতে দিলে এই একটা সমস্যা, পটপট পটপট করতেই থাকে। আমি অরে থামায়া দিলাম কইলাম, “আইচ্ছা, তুই থাম, আমি মুইতা আইসা পরে তোরে আবার ফোন করতেছি…” আমি যেমন জানি, ও-ও জানে, আমি আর ফোন করবো না। আর এইটা ঠিকাছে। রিলেশন অনেকদিন হইলে এইগুলা কোন ঘটনা না। আর আমি যেহেতু বিয়া করি নাই, আমারে একটু কেয়ারই করতে চায়, পুরান ফ্রেন্ডরা। হয়তো ভাবে, ফ্যামিলি লাইফ পাইলো না! আবার আমার কাছে আইসা নিন্দা-মন্দও করে বউদের নিয়া। আমি চুপ কইরা থাকি এইরকম টাইমগুলাতে। কারণ কয়দিন পরেই আবার বাসায় দাওয়াত দিয়া দেখাবে, অরা কতো সুখে থাকে! আজাইরা!
কিন্তু আমি আসলেই ডরাইছি। এইটা কেন হবে! একটা নিয়ম-কানুন আছে না! অবশ্য বছর খানেক ধইরাই কথা হইতেছিল, দেশ রাইখা কি লাভ! লাভের চে তো লস-ই বেশি। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ট্যাক্স দেয়া লাগে, খামাখা কাগজ-পত্র বেশি লাগে। এইগুলা কতো আর কমানো যায়। মিনিমাম জিনিসপত্র তো লাগেই। তো, কানা-ঘুষা শুনতেছিলাম, এই সরকার তো ৫০ বছরের লাইগা সিলেক্টেড, কিন্তু এতোদিন টাইম নিবে না, এর আগেই দেশ বেইচা দিবে! এই প্রজেক্ট, অই প্রজেক্ট বেইচা কতো টাকা আর লাভ হয়! আর ৫০ বছর পরে হইলেও খামাখা ইলেকশন করার পেইন কেন নিবে! দেশের মালিক যেহেতু সরকার, মালিক হিসাবে তো বেইচা দিতেই পারে।
তবে কাগজে-কলমে বেচে নাই, ৯৯ বছরের লিজ দিছে। এইটা নিয়া কোন কথা-বার্তাও নাই, খালি মোবাইলে একটা মেসেজ দিয়া সবাইরে জানায়া দিছে। মানে, এখন উনাদেরকে গাইল্লাও লাভ নাই, উনারা তো দেশের মালিক না এখন আর! যে, কয়দিন পরে পরে বেকার-ভাতা চাইবেন, রেশনের চাইল চাইবেন। যেহেতু দেশ নাই, দেশের মালিক কই পাইবেন!
ইয়াং লোকজন অবশ্য খুশি। এতোদিনে গিয়া ইউরোপ-আম্রিকার স্ট্যান্ডার্ডে যাইতে পারতেছি আমরা। এইগুলা কেউ কয় না, কিন্তু টের পাওয়া যায়। অফিসে পোলা-মাইয়াদের চোখগুলা চক চক করতেছে। এরা তো পিছনে পিছনে আমারে “ন্যাশনালিস্ট বিস্ট” বইলা গাইল্লায়, আমি জানি। আমরা হইতেছি অই লাস্ট জেনারেশন যারা পত্রিকা পড়তাম, টিভি দেখতাম, জাতীয়তাবাদের ড্রিম থিকা বাইর হইতে পারি নাই। অরা অবশ্য এইগুলারে বলে, “ওয়েট ড্রিমস”! হাসে। এখনো হাসতেছেই। আমরা মইরা গেলে কারে নিয়া হাসবে অরা, আমি ভাবি। অদের পরের জেনারেশনও কি অদেরকে নিয়াই হাসবে না? এখনো রক্ত গরম তো, বুঝতে পারে না।
এমন একটা ভাব যেন কোন বিপ্লব কইরা ফেলছে অরা। যেন অরা চাইছিল বইলাই এইরকম হইছে! এইটা চাওয়ার লাইগাই যে অদেরকে বানানো হইছে, এই রোবটের দল’রে এইটা কে বুঝাইবে! আপনার বিপ্লব যখন অন্য কেউ কইরা দেয়, সেইটা যে ডেঞ্জারাস জিনিস – এই আন্দাজও অদের নাই। কয়েকজন গুজুর-গুজুর ফুসুর-ফুসুর কইরা সবচে সুন্দরী মেয়েটারে পাঠাইলো আমার কাছে। নওরীন আইসা আঙ্কেল না ডাইকা, কয়, ভাইয়া, আজকে লাঞ্চে আমরা একসাথে করবো, ‘দেশ নাই’ সেলিব্রেট করবো, আপনিও কন্ট্রিবিউট করেন! মেজাজ তো এমনিতেই টং হয়া আছে, কিন্তু আমাদের জেনারেশনের কিছু নিয়ম তো আছে, সুন্দরী মেয়েদের লগে তো মেজাজ খারাপ করা যায় না; দিলাম চান্দা। দুনিয়া এইরকমের খারাপ!
অদেরকে আমি দোষ দেই না। অরা জাস্ট হ্যাপি থাকতে চায়। একজন যতক্ষণ আরেকজনরে একটা ‘স্পেশাল পারসন’ ফিলিংসটা দিতে পারে, অরা ভাবে, প্রেম। কি মিজারেবল অদের লাইফ! অরা করুণা করে আমারে। আহারে, বেচারার ফ্রেন্ড নাই, বউ নাই, বাচ্চা-কাচ্চা নাই, বয়স পঞ্চাশ! অথচ আমি দেখি কেমনে সবাই ডুইবা যাইতেছে জীবনের ভিতর, এনজয় করার লাইগা কি যে মরিয়া অরা, জানতেই পারে না, লাইফ কি রকম! আমি ও ভাবি না আসলে। কিন্তু যখন অরা করুণা করার জন্য আসে আমার কাছে অদেরকে কি যে বিশ্রী লাগে! চিড়িয়াখানায় আটকায়া থাকা জীব-জন্তুর মনেহয়। আর অরা আমারে জিগায়া, আপনার কোন খাঁচা (মানে, গার্লফ্রেন্ড, ফ্রেন্ড, ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস) নাই কেনো!
কিন্তু আমার একটা দেশ তো ছিল! এখন নাই।
অরা খুশি যে, আমরা এখন ওয়ার্ল্ড সিটিজেন। দুনিয়ার কয়েকটা গরিব দেশ যেমন, ভূটান, মঙ্গোলিয়া… বাদে সবখানে যাইতে পারবো আমরা! কোন ভিসা লাগবে না। অরা প্ল্যান করতেছে কই কই যাবে। কেউ দেখি আমার মতো মন-মরা না। আউয়ালও ফোন দিলো, কয়, কি রে তুই না লাস ভেগাস যাইতে চাইছিলি! চল যাই! অবশ্য এই বয়সে গিয়া কি করবি! মেশিন ঠিকাছে তো তোর! যতসব ফাতরা আলাপ! আমি কই, এখন বিজি আছি, পরে ফোন দিবো নে। পরে আর ফোন দিবো না অরে। অর লগে দুইদিন কোন কথাই বলা যাবে না। ট্রেন্ডি হইছে শালার পুত!
একটু পরে পরে পুট পুট কইরা মোবাইলে খালি মেসেজ আসে। ট্যুর কোম্পানির, গর্ভমেন্টের, গ্লোবাল অফিসের, সিকিউরিটি কোম্পানির, ল অফিসগুলার। সবার আজকে ঈদ। কতো কতো সুবিধা, কতো কতো অফার দুনিয়া-ভরা। সবাই আমার ইনকামের ২%, ৫%, ১০% চায়; কারণ জানে বেতনের ৫০% লোনের ইন্সটলমেন্টে যায় আমার। আমার সব ডেটা অদের কাছে আছে। অরা আমার চাইতে বেশি জানে, আমার মন কি চায়!
অফিস তিনদিনের ছুটি। কারণ নতুন নিয়ম-কানুন বানাইতে টাইম লাগবে। দুপুরের হৈ-হল্লার পরে আমি বিকালে বাইর হয়া যাই রাস্তায়। মানুশ যে খুব সেলিব্রেট করতেছে – তা না, আবার অখুশিও না। এইটা যে হইতোই, সেইটা তো আমরা জানতামই। যখন হইতেছে, তখন বলার আর কি আছে! এইরকম। একটা টং’য়ের দোকানে বইসা চা খাই। যে যার নিজেদের আলাপ করতেছে। দেশ নিয়া কোন আলাপ নাই। অইটা তো ডেড। গতকালের ঘটনা। শেষ। ফুটপাতে ফেড হয়া আসতেছে বাল-ফালানি বুদ্ধিজীবীদের আলাপ – “দেশ আমার, দোষ আমার”। যেহেতু এখন দেশ নাই, এই খানকির পোলাদের এখন দোষ দিবে কারে? অরা কি নতুন কইরা লেখবো “দুনিয়া আমার, দোষ আমার”? দেশ কবে তোদের আছিলো, আর দুনিয়া কোনদিন তোদের হবে? দেশ ছিল আমাদের মতন একটা বেকুব জেনারেশনের, দুনিয়া কারোরই হবে না। দিন দিন একটা ইল্যুশনের ভিতর ব্লার হইতে হইতে হারায়া যাবে। সন্ধ্যার অন্ধকারে আমার চিন্তাগুলা ডুইবা যাইতে থাকে।
নাসির’রে ফোন দেই। নাসির কয়, চইলা আয়! গিয়া দেখি, শর্মিলাও আছে। রানাও নাকি আসার কথা। সেই একই পুরানা আলাপ অদের। আমার গলার ভিতরে মনেহয়, কি জানি আটকায়া আছে। এমনিতেই আজাইরা কথা বলার অভ্যাস আমার নাই। তারপরেও নাসির জিগায়, ঠিক আছোস তো তু্ই? আমি মাথা নাড়াই। গলার ভিতরে একটা কিছু নইড়া উঠে আমার। শর্মিলা খুব পাওয়ারফুল এখন। আমরা একসাথে চাকরি শুরু করছিলাম। অর ব্যাকগ্রাউন্ড তো আমার চে বেটার ছিল, আর কাজকাম নিয়া সিরিয়াসও। সারামাস দুবাই-সিঙ্গাপুর-চায়না ঘুইরা বেড়ায়। আমাদের ফ্রেন্ড হইলেও কলেজ থিকাই ও আর নাসির ক্লোজ, এই কারণে নাসিরের বউ অরে দেখতে পারে না। কিন্তু কিছু কইতেও পারে না, কারণ নাসিরের বিজনেসের অনেক কন্ট্রাক্ট আসলে শর্মিলার কারণেই পায় ও। শর্মিলাও বিজনেস পার্টনার কিনা এইখানে, আমি জানি না। নাসির এতো প্রফেশনাল না। কিন্তু আমি টের পাই, আমার বেশিক্ষণ থাকা ঠিক না, ক্যাজুয়াল আড্ডা হইলেও কিছু কথা আসলে আছে অদের। আমি উইঠা পড়ি।
বাসায় আইসা ভাত রান্ধি। ফ্রিজ থিকা আগেরদিনে তরকারির বাটি বাইর করি। খাইতে খাইতে জিনিসটা নিয়া আবার ভাবার ট্রাই করি। সারাদিন কি কারণে মেজাজটা খারাপ ছিল আমার! সবাই তো নরমাল। দেশ জিনিসটা যে ফাংশন করতেছে না – এইটা নিয়া তো বহুদিন ধইরাই কথা হইতেছিল, নতুন কিছু তো না! কিন্তু যা বলা হইতেছে, ঘটনা তো অইটা না। এমন না যে, আমার যেহেতু ফ্যামিলি নাই, দেশ নিয়া চিন্তা কইরা সময় কাটতো, এখন কি নিয়া চিন্তা করবো – এইরকম কোন ক্রাইসিস না। দেশ’টা তো বেইচা দেয়া হইছে আসলে! এইটা কি কেউ বুঝতেছে না! আসলেই!
আগে ট্যাক্স নিতো গর্ভমেন্ট। এখন আর কোন ট্যাক্স দেয়া লাগবে না। কিন্তু সিকিউরিটি তো কেনা লাগবে – তাই না? বরং মেন্ডেটরি সিকিউরিটি কেনা না থাকলে রাস্তা-ঘাটে হাঁটতেই বাইর হইতে পারবেন না আপনি। অনেক কোম্পানি আবার ‘ফ্রি’তে সিকিউরিটি দিবে আপনারে ‘মানবিকতার’ খাতিরে। পুরা একটা ভগিচগি অবস্থা। এইগুলা তো অনেক কমপ্লেক্স জিনিস, কি হবে এইগুলা নিয়া কথা বইলা! এইরকম একটা ভাব সবার। এর চাইতে জীবনের ফাইনার ফিলিংস নিয়া ব্যস্ত সবাই। প্রেম-ভালোবাসা-ফ্রেন্ডশিপ-সংসার-ক্যারিয়ার-পারসোনাল ফ্রিডম-ঘুরতে যাওয়া… আরো কতো কতো ইম্পর্টেন্ট জিনিস আছে আমাদের লাইফে!
আমার ঘুম আসে। কিন্তু আমি ঘুমাই না।
এইরকম ক্রাইসিস মোমেন্টে সবসময় নীলু আসে। অ্যাপলের যেইরকম সিরি আছে, মাইক্রোসফটের যেমন আছে কোরটানা, অইরকম। খালি ডিফরেন্স এইটুকই যে, নীলু আসলে ছিল। এখনো আছে হয়তো কোথাও। আমার ধারণা, সবাই এইরকম কাউরে না কাউরে চুজ কইরা নেয়। আমি চুজ করি নাই, এইটা জাস্ট হয়া গেছে। নীলু’র সাথে যে আমার খুব বেশি কথা হইছে, এইরকমও না। নীলু আমার প্রেমে পড়ে নাই। আমিও নীলুর প্রেমে কখনো পড়ি নাই। আই হোপ। লাইফে খুব বেশি হইলে চাইর-পাঁচবার কথা হইছে আমাদের। কিন্তু আমার মনেহয়, আমি যে নীলু’র কথা ভাবি, নীলু মনেহয় জানে। কিন্তু শে বেজারও হয়, কল্পনার নীলুরে সরায়া দিয়া শে বাস্তবের নীলু হয়া উঠতে পারে না বইলা। নীলু আইসা আমারে বলে, কি মন-খারাপ? দেশ বেচা হয়া গেছে বইলা?
তখন আমি নীলু’র কাছে আমার দুক্খের কথা বলি। বলি, এইটা কোন কথা! বলো!
বলতে বলতে আমরা ঘুমায়া যাই।
ঘুম-ভাঙ্গার পরে সেই একই সকাল। নাশতা বানাই। নাশতা খাই। কফি খাইতে খাইতে জানালা দিয়া দেখি, দুনিয়া যে কি সুন্দর! এইরকম সুন্দর দুনিয়াতে একটা দেশ না থাকলে কি হয়!
তিনদিন পরে অফিসে যাই। অফিসে অর্ধেক মানুশ নাই। অনেকে নাকি চাকরি ছাইড়া দিছে, লিভ উইথ-আউট পে নিছে, হোম-অফিস করবে। কোনটা যে আসলে কি – বুঝা তো মুশকিলই। আবার এইগুলা নিয়া তো কোন কথা বলা যায় না, মানুশের প্রাইভেট ব্যাপার। নিজের চরকায় তেল দেয়া ভালো। কিন্তু যেহেতু আমার তেমন কোথাও যাওয়ার নাই, তেমন কিছু দেয়ার নাই, তেল বেশি দেয়া লাগে না আসলে। গাড়ি চলতেই থাকে।
আউয়াল আবার ফোন করে। মাইগ্রেট কইরা যাইতেছে ও। এতোদিন ভিসা-টিসার ঝামেলা বইলা এড়াইতেছিল। কিন্তু এখন যদি এই অঞ্চলে থাকে তাইলে তো প্রেস্টিজ থাকবো না বউ-বাচ্চাদের। কিন্তু ও মনেহয় যাইতে চায় না। আমার কাছ ফোন করছে মানে হইতেছে, বুদ্ধি-পরামর্শ চাইতেছে। আমি কি বুদ্ধি দিবো অরে! যেন আমি অর মতলব বুঝি নাই, এইরকম একটা ভাব নিয়া কথা বলি। কবে যাবে, কই সেটেল হবে, এই-সেই।
পুরান মন নিয়া আমি ভাবি, দেশ না থাকলে, যে কোন দেশেই গিয়াই থাকা যায় না, বরং যাওয়ার মতো কোন দেশ থাকে না আসলে। আমরা সবাই রিফিউজি এখন। যেন দুনিয়াতে আটকা পইড়া আছি, ওয়েট করতেছি কোন এয়ারপোর্টে, কোন বন্দরে। কই যে যাই! কই যে যাবো! আমরা বলতে পারি না, কিন্তু আমরা বুঝতে পারি, এইটা ফ্রিডম না কোন। এইটা একটা ফোর্স মাইগ্রেশন। মরুভূমিতে মরীচিকার মতো আমরা খালি সারা দুনিয়ায় ঘুরতেই থাকবো যেন। অথবা আমার মতো কেউ কেউ ঘাড় গোঁজা কইরা বইসা থাকবে।
কতো কিছু করি। কতো কথা বলি। কিন্তু আমার ভিতরের মন-খারাপটা সরেই না আর! সবসময়ের একটা হ্যাং-ওভারের মতো, একটা শেষ না হওয়া ব্রেকাপের মতো, থাকতেই থাকে মাথার ভিতরে।
দেশটারে অরা বেইচাই দিল! আজব!
Latest posts by ইমরুল হাসান (see all)
- পলিটিকাল ডাইরি – ২০২৪ (দুই) - সেপ্টেম্বর 17, 2024
- পলিটিকাল ডাইরি – ২০২৪ (এক) - সেপ্টেম্বর 4, 2024
- ধর্ম প্রশ্নে পুরান কমিউনিস্টদেরকে ইনডেমনিটি দিতে চাওয়াটা অনেকটা ইন্টেলেকচুয়াল অসততার ঘটনা: ফরহাদ মজহারের ‘মোকাবিলা’ (২০০৬) বই নিয়া আলাপ - আগস্ট 9, 2024