Main menu

অন রাইটিং (লেখালেখি নিয়া) – রেমন্ড কার্ভার

(রেমন্ড কার্ভার হইলেন আমেরিকান শর্ট স্টোরি রাইটার। এই লেখাটা ‘RAYMOND CARVER COLLECTED STORIES’ বইটা থেকে নেওয়া। – সারোয়ার রাফি)

১৯৬০ এর মাঝামাঝি সময়ে আমি খুঁইজা পাইছিলাম যে, লম্বা ন্যারেটিভ ফিকশনে মনোযোগ দিতে আমার সমস্যা হইতেছে। কিছু সময়ের জন্যে পড়ার পাশাপাশি লেখার চেষ্টার ক্ষেত্রেও তীব্র অসুবিধা অনুভব করতেছিলাম। আমার মনোযোগ আমার থিকা দূরে সইরা যাইতেছিল; আমার মইধ্যে আর উপন্যাস লিখবার মতোন ধৈর্য ছিলো না। এখানে একটা গল্প জড়িত, আর এ ব্যাপারে এখানে কথা বলা বিরক্তিকরই খুব। কিন্তু এখন আমি জানি যে আমি কেন কবিতা এবং ছোটগল্পগুলা লিখতেছি। উইঠা পড়ো, বাইর হয়ে যাও। দেরি কইরো না। চালায়ে যাও। এইটা হইতে পারে বিশ বছরের শেষের দিককার সময়টাতে আমি কোনো মহান এম্বিশান হারায়ে ফেলছিলাম। যদি আমার তাই হয়, তবে আমার ধারণা এইটা ঘটাতে ভালোই হইছিলো। এম্বিশান ও সামান্য নসিব একজন লেখকের সামনে আগায়ে যাওয়ার জন্যে ভালো জিনিস। খুব এম্বিশান ও বাজে নসিব অথবা একেবারেই ভাগ্যহীন, যে কাউরে মাইরা ফেলতে পারে। সেখানে অবশ্য প্রতিভা থাকতে হইবে।

কিছু লেখকের বহু ট্যালেন্ট আছে; আমি এমন কোনো লেখকদের চিনি না যাদের এইটা নাই। কিন্তু একটা ইউনিক এবং সঠিক উপায়ে কোনো জিনিসরে দেখা, এবং দেখার জিনিসটারে প্রকাশ করতে সঠিক কনটেক্সট খুঁইজা বাহির করা হইলো অন্য ব্যাপার। গার্পের মতে পৃথিবীটা, অবশ্যই, জন এরভিংয়ের মতে পৃথিবীটা হইলো আজব এক জিনিস। ফ্ল্যানারি ও’কর্নারের আবার আরেকটা পৃথিবী, এবং এই তালিকায় অন্যদের মইধ্যে আছে উইলিয়াম ফকনার এবং আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। এই অনুসারে আরো ডিফরেন্ট পৃথিবী হইলো শিভার, আপডাইক, সিঙ্গার, স্ট্যানলি এলকিন, এ্যান বিট্টি, সিনথিয়া ওজিক, ডোনাল্ড বার্থেলমে, ম্যারী রবিসন, উইলিয়াম কিটট্রেজ, ব্যারী হান্নাহ, উরসুলা কে. লিগুইনদের। প্রতিটা গ্রেট অথবা ভালো রাইটার তাদের নিজস্ব বর্ণনার মাধ্যমে পৃথিবীটারে তৈরি করেন।

স্টাইল নিয়া আমি কথা বলতে চাই, কিন্তু এইটা শুধু স্টাইলেই আটকায়া থাকবো না। এইটা হইলো রাইটারের সবকিছুতে নির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট সিগনেচার, যা কিনা সে লিইখা থাকে।

এইটা হইলো তার পৃথিবী এবং আর কারো না। এইটা হইলো এমন একটা বিষয় যার থেকে একজন রাইটার আরেকজনের থেকে আলাদা হইয়া থাকে। এইটা প্রতিভার বিষয় না। আমাদের চারপাশে এমন বহু লোক আছে। কিন্তু যে রাইটার নির্দিষ্ট কোনো জিনিসরে দেখার বিশেষ ক্ষমতা রাখে এবং এই দেখার প্রতি আর্টিস্টিক নজর দিতে পারে: এমন রাইটার সম্ভবত কিছু সময়ের জন্যে আমাদের চারপাশে থাকলেও থাকতে পারে।

ইসাক ডিনেসেন বলছিলেন যে, তিনি রোজ কোনো আশা এবং হতাশা ছাড়াই অল্প অল্প লিখেন। কোনোদিন আমি সেটারে থ্রি বাই ফাইভ কার্ডে লিইখা রাখব এবং আমার ডেস্কের পাশের দেয়ালে আটকায়ে দিবো। আমার দেয়ালে এখন কিছু লেখা থ্রি বাই ফাইভ কার্ড লাগানো আছে। এজরা পাউন্ড বলেছিলেন, “লেখালেখির একমাত্র মেইন মোরালিটি হইলো নির্ভুল বর্ণনা থাকা”। এইটা কোনভাবে সবকিছুরে বোঝায় না, কিন্তু যদি কোনো লেখকের মইধ্যে বর্ণনার স্পষ্টতা থাকে, সে আসলে সঠিক পথেই আছে।

চেখভের একটা গল্পের অংশ আমার থ্রি বাই ফাইভ কার্ডে লিইখা রাখছিলাম: “…হঠাৎ সবকিছুই তার কাছে পরিষ্কার হইয়া গেল।” আমি এই শব্দগুলারে বিস্ময় এবং সম্ভাবনার সাথে খুঁইজা পাইছিলাম। আমি তাদের মইধ্যে লুকায়ে থাকা সাধারণ স্পষ্টতা ও বিস্ময়কর প্রকাশ খুব পছন্দ করি। সেখানেও রহস্য আছে। এর আগে অস্পষ্ট কী ছিলো? এখন কেন এগুলো স্পষ্ট হইয়া আসছে? কী ঘটছে? সর্বোপরি-এখন কী হইবে? এই ধরণের আকস্মিক জাগরণের কিছু ফলাফল আছে। আমি এগুলার মাধ্যমে নিজের মইধ্যে স্বস্তির তীক্ষ্ণ অনুভূতি ও প্রত্যাশা অনুভব করি।

“কোনো সস্তা ছল-ছাতুরি নাই” আমি এইটা রাইটার জিওফ্রে উলফরে শিক্ষার্থীদের লেখার গ্রুপের কাছে বলতে শুনছিলাম। এইটা থ্রি বাই ফাইভ কার্ডের লেখা হিসাবে যাবে। আমি এইটারে “ছল-ছাতুরি নয়” এটুকুতে সংশোধন করছি। সময়। আমি ছল-ছাতুরি অপছন্দ করি। প্রথমত ফিকশনের কোন অংশে কৌশল অনুযায়ী চিহ্ন, সস্তা কৌশল অথবা বিস্তৃত কৌশলের ব্যাপারগুলা থাকে আমি তা ধরবার জন্যে প্রথমে কভারের লেখা পড়ি। টেকনিক শেষমেশ বিরক্তিকর, এবং আমি সহজেই ক্লান্ত হইয়া যাই, যা আমার মনোযোগরে বেশিক্ষণ ধইরা রাখতে পারে না। অত্যন্ত চালাকি চি-চি লেখা, অথবা শুধু তামাশা পূর্ণ লেখা আমারে ঘুম পাড়ায়ে রাখে। লেখকদের টেকনিক অথবা গিমিকের প্রয়োজন পড়ে না অথবা এমনকি ব্লকের স্মার্ট ফেলো হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মূর্খ বইলা মনে হওয়ার ঝুঁকিতে, একজন লেখকরে কখনও কখনও এই বা সেই জিনিসটা-একটা সূর্যাস্ত বা পুরানো জুতা পরার মতন পরম এবং সাধারণ বিস্ময় নিয়া দাঁড়ায়ে থাকবার মতন যোগ্য হইতে হবে।

কিছু মাস আগে, নিউইয়র্ক টাইমসের বুক রিভিউতে, জন বার্থ বলছিলেন, উনার ফিকশন রাইটিং সেমিনারে বেশিরভাগ স্টুডেন্টরা “ফরমাল ইনোভেশনে” আগ্রহী ছিলো এবং এইটা (এক্ষেত্রে তেমন কোনো বিষয়ই না।) উনি কিছুটা চিন্তিত ছিলেন যে ১৯৮০ সালের দিকে লেখকেরা ছোটোখাটো ব্যবসায়িক নভেলগুলো লিখতে শুরু করছে। উনার দুশ্চিন্তা এই যে এমন ধরণের এক্সপেরিমেন্ট হয়তোবা লিবারেলিজমের সাথে মুক্তির পথ হইতে পারে। আমার কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিলো ফিকশন রাইটিংয়ের “ফরমাল ইনোভেশন” সম্পর্কে বিরক্তিকর আলোচনায় না যেন আবার আমারে খুঁজে পাইতে হয়। বেশিরভাগ সময়ই এক্সপেরিমেন্ট করার অর্থ হইলো রাইটিংয়ে যত্ন না নিয়া, সিলি অথবা অনুকরণের বৈধতা দেওয়া (বেশিরভাগ সময়েই “এক্সপেরিমেন্ট” হইলো লেখার ক্ষেত্রে অসতর্ক, মূর্খ বা অনুকরণীয় হওয়ার লাইসেন্স।) আরো খারাপভাবে, এই লাইসেন্স বাজেভাবে পাঠকরে আলাদা কইরা দিতে চেষ্টা করে। প্রায়ই এমন ধরণের লেখা আমাদেরকে পৃথিবী নিয়া কোনো মেসেজই দেয় না, অথবা একটা মরুভূমির ল্যান্ডস্কেপ এবং তাতে থাকা কিছু পাহাড় এবং এখানে সেখানে থাকা গিরগিটির ব্যাপারে শুধু বর্ণনা দেয় কিন্তু কোনো মানুষের ব্যাপারে কিছু বলে না; মানুষের দ্বারা জনবসতিহীন একটা জায়গা, শুধুমাত্র কয়েকজন বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞের আগ্রহের জায়গা হইতে পারে।

এইটা মনে রাখা উচিত যে, ফিকশনে রিয়েল এক্সপেরিমেন্ট হইবে মৌলিক, খাটুনির ব্যাপার এবং এর ফল হইবে আনন্দ দেওয়া। কিন্তু কারো কোনো জিনিসগুলা দেখার পদ্ধতি– বার্থেলমোর মতে, অন্যান্য লেখকদের মাধ্যমে অনুকরণ করা উচিত না। এইটা কাজ করে না। শুধুমাত্র একজন বার্থেলমে, এবং অন্য একজন লেখকের জন্য বার্থেলমের অদ্ভুত উত্তেজনাময় নানান দৃশ্য এবং রুব্রিকের আলাদা আবিষ্কাররে খোলা মনে ব্যবহার করা আরেকজন লেখকের জন্য বাজে এবং আরও খারাপ ব্যাপার হইতে পারে। এইটা নিজেরে ধোঁকা দেওয়ার পাশাপাশি তালগোলও পাকায়ে ফেলতে পারে।

রিয়েল এক্সপেরিমেন্টরে নতুন হিসেবে তৈরি হইতে হবে, পাউন্ড যেটা বলছিল, এবং এমন একটা প্রক্রিয়ার মইধ্যে দিয়া যাইতে হবে যারা নতুন জিনিসগুলা খুঁইজা পাইতে পারে। কিন্তু লেখকরা তাদের ফিলিংসরে না ছাইড়াও আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন এবং বিশ্বের খবরাখবর আমাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন।

এইটা সম্ভব, কোনো কবিতায় অথবা ছোট গল্পে, কোনো মামুলি কিছুর সম্পর্কে লেখলে এবং মামুলি জিনিস ব্যবহার কইরা কোনো বস্তু নিয়া লেখলে এবং স্পষ্ট ভাষায় এইটারে চেয়ার, জানলা, পর্দা, চামচ, পাথর, এমনকি নারীর ইয়ারিং দিয়ে সাজাইলে, সেইটা দারুণভাবে ফুইটা উঠতে পারে।

বর্ণনায় একটা সাধারণ ডায়লগের লাইন লিখে রুচিসম্পন্ন পাঠকের শিরদাঁড়া বরাবর তীক্ষ্ণ অনুভূতি তৈরি করবার মাধ্যমেও খুশি করা যাইতে পারে। নবোকভ তার লেখায় এমনটা করতেন। এমন ধরণের লেখার প্রতি আমার আগ্রহ অধিক। আমি এইটা ঘৃণা করি অগোছালো বা এলোমেলো লেখা, যা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যানারের নীচে উইড়া যায় বা নাইলে বাস্তবতারে যা-তা ভাবে তুইলা ধরা হয়। ইসাক বাবেলের “গী দ্যা মোপাসা” নামে চমৎকার ছোটগল্পে, ন্যারেটর ফিকশন লেখা নিয়ে এই কথাগুলো বলে: “শক্তি দিয়া কোনো লোহা-ই হৃদয়রে বিদ্ধ করতে পারে না কিন্তু সময় ঠিকই তারে সঠিক স্থানে বসায়ে দেয়।” এইটারেও আমার থ্রী বাই ফাইভ কার্ডে লিখে রাখবার মতন সহজ হবে।

ইভান কন্নেল একবার বলেছিলেন, উনি জানতেন উনি একটা ছোটগল্প শেষ করতে পারছিলেন যখন এর মইধ্যে দিয়া গিয়া নিজেরে খুঁইজা পাইছিলেন এবং তারপরে এই পাওয়াটারে গল্পটার মইধ্যে দিয়া নিয়া গেছিলেন। আমি এমন কিছুর উপর এইভাবে কাজ করতে পছন্দ করি। যা শেষ করা হইছে তার প্রতি এমন ধরণের সম্মান রাইখাই আমি আশা করি। এগুলোই যা আমাদের আছে, সবশেষে শব্দগুলা এবং সেগুলার সঠিক ব্যবহার, যতিচিহ্নের সঠিক জায়গায় ব্যবহারের সাথে তারা যা বলতে চায় যাতে তারা সেই দারুণ কথাটা বলতে পারে। যদি শব্দগুলা লেখকের আবেগের সাথে ভারী হইয়া ওঠে, অথবা যদি অন্য কোনো কারণে সেগুলো অস্পষ্ট ও ক্রুটিযুক্ত হইয়া ওঠে – যদি শব্দগুলা ঝাপসা হয় তবে তা পাঠকের চোখ থিকা নিমিষেই চইলা যাবে এবং এর ফলে কিছুই এচিভ করা হইবে না। পাঠকের আলাদা আর্টিস্টিক ফিলিং এখানে সাধারণতই কখনো যুক্ত হইবে না। হেনরী জেমস এই ধরণের অসহায় লেখারে “দুর্বল বর্ণনা” বলতেন।

আমার বন্ধুরা আমারে বলছিল যে, তাদের জলদিই একটা বই শেষ করতে হয় কারণ তাদের টাকার দরকার, নাইলে তাদের সম্পাদক অথবা তাদের বউয়েরা তাদের উপর গজগজ করে অথবা তাদেরকে ছাইড়া চইলা যায় – ফলে কিছুর জন্যে, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বলতে হয় লেখা একদমই ভালো হয় না। “এইটা খুবই ভালো হইতে পারতো যদি আমি সময় নিতাম”। আমি বেকুব হইয়া গেছিলাম যখন আমার এক ঔপন্যাসিক বন্ধু আমারে এই কথা বলছিল। এখনো যদি এই ব্যাপারে ভাবি তবে বুঝতে পারি এমনটা আমি একেবারেই না। এইটা আমার বিষয় না। যদি লেখাটা আমরা যেভাবে লিখতে চাই সেভাবে লেখা না হইয়া ওঠে, তবে কেন সেইটা করা হবে? সবশেষে আমাদের সেরা কাজ করবার সন্তুষ্টি এবং কঠোর শ্রম দেওয়ার উদাহরণই একটা বিষয় যেটা আমরা কবরে নিয়া যাইতে পারি। আমি আমার বন্ধুরে এতটুকু বলতে চাই, ঈশ্বরের দোহাই অন্য কিছু কর গিয়া। আরো বহু সহজ সম্ভবত সৎ উপায় আছে রোজগার করবার। নাইলে নিজের যোগ্যতার, মেধার সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু কইরা যা এবং সবশেষে এইটারে জাস্টিফাই করিস না অথবা ছুঁতা তৈরি করিস না। কোনো অভিযোগ না, না কোনো ব্যাখা।

একটা সহজ প্রবন্ধের কথা বলাই যথেষ্ট হবে, “রাইটিং শর্ট স্টোরিজে”, ফ্ল্যানারি ও’কনার লেখার সম্পর্কে বলছিলেন যে, এইটা হইলো একরকমের আবিষ্কার। ও’কনার বলছিলেন, উনি বেশিরভাগ সময়ই জানতেন না উনি কোথায় যাইতেছেন আর উনি কখন বসে একটা ছোটগল্পের কাজ শুরু করবেন। উনি বলছিলেন, উনি সন্দেহ করেন বহু লেখকেরা জানে যে তারা কোথায় যাইতেছে, কখন তারা কিছু শুরু করবে। উনি “গুড কান্ট্রি পিপল”রে উদাহরণ হিসাবে টাইনা বলছিলেন, উনি কিভাবে এইটারে ছোট গল্প হিসাবে জোড়া লাগাইছেন এবং যেইটায় যতক্ষণ না তিনি সেখানে হাজির হইতেছেন ততক্ষণ পর্যন্ত ভাবতে পারতেন না এর শেষ কী হইবে:

যখন আমি গল্পটা লিখতে শুরু করি, তখন আমি জানতাম না একজন পিএইচডি করা মেয়ের পা দুইটা কাঠের হইবে। আমি এক সকালে দুই নারীর বর্ণনা লিখতে গিয়া নিজেরে খুঁইজা পাইলাম যার ব্যাপারে আমি কিছু জানতাম, এবং কিছু বুঝতে পারার আগেই, আমি একজনের মেয়েরে কাঠের পা দিয়া তৈরি করলাম। আমি এখানে বাইবেলের বিক্রেতারে আনলাম কিন্তু আমার কোনো ধারণাই ছিলো না যে আমি এর সাথে এখন কী করতে যাইতেছি। আমি জানতাম না সে এখন এই কাঠের পা’টা চুরি করবে দশ অথবা বারো লাইনের আগেই সে এইটা কইরা ফেলবে, কিন্তু আমি খুঁইজা পাইছিলাম যে এইটাই ঘটতে চলছে, আমি বুঝতে পারছিলাম এটাই তার নিয়তি।

যখন আমি এইটা কয়েক বছর আগে পড়ি তখন আমি শকড হই কারণ সে অথবা অন্য কেউ এই বিষয়ে, এমন ধরণেও ছোটগল্প লিখছিল। আমি ভাবতাম এটাই ছিলো আমার সিক্রেট ব্যাপার এবং আমি এটায় সামান্য অস্থিরতাও বোধ করছিলাম। এইটা নিশ্চিত জাইনা আমি ভাবতাম একটা ছোটগল্পে এমন উপায়ে কাজ করা, এতো কথা আমার নিজের ভুল ত্রুটিরে প্রকাশ কইরা দিবে। আমার মনে আছে সে এই বিষয়ে যা বলছিলো তা পইড়া আমি খুব উৎসাহিত হইছিলাম।

একসময় আমি একটা গল্প লিখতে বসছিলাম যেইটা একটি সুন্দর ভালো গল্প হইয়া উঠছিল, যদিও গল্পটা নিজেই তার প্রথম বাক্য আমাকে অফার করছিলো যখন আমি এটা লেখা শুরু করছিলাম। কয়েকদিন ধইরা এই বাক্যটাই আমার মাথায় নিয়া ঘুরেছিলাম: সে যখন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার চালাচ্ছিল মোবাইল ফোনটা বাইজা উঠে।” আমি জানতাম সেখানে একটা গল্প আছে এবং এইটা আমারে সে গল্পটা বলতে চায়। আমি আমার সমস্ত হাড় দিয়া তা অনুভব করছিলাম যে একটা গল্প এমন ধরণেই শুরু হইবে, যদি আমি এটা লেখার জন্যে একটু সময় বাইর করতে পারি শুধু। আমি সময় খুঁইজা পাইছিলাম, দিনে বারো কি পনেরো ঘণ্টা যদি আমি তা ব্যবহার করতে চাইতাম আরকি। আমি করছিলাম, এবং আমি সকালে বইসা প্রথম বাক্যটা লিখছিলাম, এবং অন্যান্য বাক্যগুলাও জলদি জোড়া বাঁধতে শুরু করে। আমি যেমন একটি কবিতা তৈরি করি ঠিক তেমনই গল্পটা তৈরি করছিলাম; একটা লাইন এবং তারপর পরেরটা এবং পরেরটা। খুব জলদিই আমি একটি গল্প দেখতে পাইলাম, এবং আমি জানতাম যে এইটা আমার গল্প, যেটা আমি লিখতে চাইছিলাম।

আমি এইটা পছন্দ করি যখন ছোট গল্পে কিছু হুমকি বা হুমকির অনুভূতি থাকে। আমি মনে করি একটা গল্পে ছোটোখাটো হুমকির অনুভূতি থাকা ভালো। এটা সার্কুলেশনের জন্যে ভালো। উত্তেজনা থাকতে হবে, একটা অনুভূতি যে কিছু আসন্ন, কিছু জিনিস ধীর গতিতে আছে, সেখানে কেবল একটা গল্প থাকবে না। গল্পের একটা অংশে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয় কংক্রিট শব্দগুলার মাধ্যমে দৃশ্য তৈরি করবার ফলে। তবে এইটা সেই জিনিসগুলাও যা বাদ পইড়া যায়, যেগুলা উহ্য থাকে, জিনিসগুলার মসৃণ (তবে কখনও কখনও ভাঙা এবং অস্থির) পৃষ্ঠার নীচে ল্যান্ডস্কেপে।

এস. প্রিচেটের একটা ছোটগল্পের সংজ্ঞা হইলো “চইলা যাওয়া সময় চোখের কোণা থিকা কিছু কিছু দেখা যাইতেছে।” এর “ঝলক” অংশটা লক্ষ্য করেন। প্রথমে আভাস। তারপরে জীবন দেওয়া আভাস, এমন কিছুতে পরিণত হইছে যা মুহূর্তটারে আলোকিত কইরা তোলে এবং হইতে পারে, যদি আমরা ভাগ্যবান হই – তবে সেই শব্দটার আবার – এর আরও বিস্তৃত পরিণতি এবং অর্থ আছে। ছোটগল্প লেখকের কাজ হইলো তার ক্ষমতার সবটুকু ঐ ঝলকে বিনিয়োগ করা। সে তার বুদ্ধিমত্তা এবং সাহিত্যিক দক্ষতা (তার প্রতিভা), তার অনুপাতের ধারনা এবং জিনিসগুলার ফিটনেসের অনুভূতি নিয়া আসবে: জিনিসগুলা আসলেই কীভাবে আছে এবং অন্য কেউ যেমন সেগুলা দেখে না সে কীভাবে দেখে।

এবং এইটারে করা হয় ভাষার মধ্য দিয়া, এমন ভাষা ব্যবহার করা যাতে পাঠকের জন্য গল্পটা ফুইটা উইঠা এমন বর্ণনারে আর্কষণীয় করতে সাহায্য করে। বিশদভাবে বর্ণনার জন্য এবং এর অর্থ বোঝাইতে ভাষাটা অবশ্যই সঠিক এবং সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা উচিত। শব্দগুলা এতই সুনির্দিষ্ট হইতে পারে যে সেগুলা এমনকি ফ্ল্যাট শোনাইতে পারে, কিন্তু তারা এখনও সেই আবেদন বহন করতে পারে; সঠিকভাবে শব্দগুলা ব্যবহার করা হইলে, তারা পুরা লেখাটার সুরে আঘাত তৈরি করতে পারে।

The following two tabs change content below.
Avatar photo

সারোয়ার রাফি

আপাতত স্টুডেন্টই। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করতেছেন।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →