Main menu

“এটাই দরিয়া” – ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস

ব্যাকগ্রাউন্ড

ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস অরিজিনালি এই বক্তিতা দিছিলেন ২০০৫ সালে, কেনিয়ন কলেজের কমেন্সমেন্ট স্পিচ হিসাবে।

বক্তিতার লিখিত ভার্শন

প্যারেন্ট‘দের আমি সালাম জানাই, এই বছরের গেজুয়েট‘দের জানাই মোবারকবাদ। দুইটা পোনা মাছ সাতরাইয়া বেড়াইতেছিলো আর বিপরীত দিক থেইকা আসা একটা বয়স্ক মাছের লগে তাদের মোলাকাত হইলো, বয়স্ক মাছটা ওই পোনাদের দিকে তাকাইয়া কইলেন, “মর্নিং, বয়েজ, দরিয়ার কি অবস্থা আইজগা?” তখন পোনা মাছের জোড়া আরো কিছুদূর সাতরাইয়া গেলো, আর একটু পরে একজন আরেকজনের দিকে চাইয়া দুইজনেই কইয়া উঠলো, “দরিয়া আবার কি জিনিশ?”

এটা তো ইউএসের কমেন্সমেন্ট স্পিচগুলার একটা স্ট্যান্ডার্ড নিয়ম – রূপক’ওয়ালা এবং নীতিশিক্ষা-মূলক ছোট গল্পগুলারে পোয়গ করা। এই জনারের অন্যান্য কনভেনশনের তুলনায় এ গল্প বলার ব্যাপারটা ভালো, তুলনামূলক কম আজাইরা। কিন্তু তোমরা যদি টেনশনে থাকো যে আমি নিজেরে ওই গেয়ানি এবং বয়সে বড় মাছটা হিসাবে তুইলা ধরবো আর তোমাদেরকে ছোট মাছ হিসাবে ধইরা নিয়া বুঝাইতে শুরু করবো দরিয়া কি জিনিশ, তাইলে বলবো, দয়া করে এই ভয় পাইয়ো না। আমি গেয়ানি বড় মাছটা না। এই মাছের গল্পটার পয়েন্ট নিছক এটাই যে, সবচাইতে অবভিয়াস এবং সবচাইতে গুরুত্তপূর্ণ রিয়েলিটি’গুলা দেখতে পারা আর তা লয়া বাতচিত করতে পারাটা প্রায়ই সবচে কঠিন কাজ। অবশ্যই, একটা ইংরেজি সেন্টেন্স হিসাবে এটা একটা মামুলি-পুরাতন কথন, তবে সত্যিটা হইতেছে এডাল্ট লাইফের পোরতি দিনের যুদ্ধের ভিতর মামুলি-পুরাতন কথারাও জীবন-মিত্যুর ব্যাপার হয়া দাড়াইতে পারে, অথবা আমি এমনটাই সাজেস্ট করতে চাইতেছি তোমাদেরকে, এই সুন্দর শুকনা সকালে।

অবশ্যই, এরকম একটা বক্তিতায় আমার মূল দায়িত্ত হইতেছে লিবারেল আর্টস এডুকেশনের মিনিং নিয়া কথা কওয়া, বুঝাইতে চেষ্টা করা যে তোমরা যে ডিগরি’টা রিসিভ করতে যাইতেছো – কেবল বস্তুগত অর্জনের বাইরেও এটার একটা বাস্তব মানবিক মূল্য আছে। তো, আসো আমরা কথা বলি কমেন্সমেন্ট স্পিচের সবচাইতে হুজুগে কিলিশে’টা (cliché) লইয়া, আর সেটা হইতেছে লিবারেল আর্টসের পড়াশুনার লক্ষ্য এটা না যে তোমারে গেয়ানের সাগর বানাবে, বরং তার লক্ষ্য হইতেছে ‘কিভাবে চিন্তা করা লাগে সেটা শিখানো’। আমি ইস্টুডেন্ট হিসাবে যেমন ছিলাম তুমিও যদি সেই টাইপের হয়া থাকো, তাইলে তুমি কখনো এই কথাটা শুনতে পছন্দ করো নাই, এবং তুমি কিছুটা ইনসাল্ট হিসাবেই হয়তো লইছো ব্যাপারটারে যে আরেকজন আইশা তোমারে চিন্তা করা শিখাবে, যেহেতু তুমি এত ভালো একটা কলেজে চান্স পাইছো এটাই তো পরমান করে যে তুমি অলরেডি জানো কেমনে চিন্তা করা লাগে। কিন্তু আমি সত্যি কইরাই কইতেছি, এই লিবারেল আর্টস কিলিশে’টা মোটেই ইনসাল্টিং না, কেননা চিন্তা করতে শিখানোর ব্যাপারটা আসলে চিন্তা করার কেপাসিটির লগে রিলেটেড না, বরং কি লয়া চিন্তা করা দরকার সেই চয়েস’টা করতে পারার লগে রিলেটেড। আর, কি লইয়া চিন্তা করতে হবে সেটার ব্যাপারে তোমার ফিরিডম অফ চয়েস’রে তুমি যদি এতই অবভিয়াস মনে করো যে, এটা লইয়া কথা কইবার-ই যেন কিছু নাই, তাইলে আমি তোমারে বলবো মাছ আর দরিয়া নিয়া চিন্তা করতে, আর বলবো মাত্র কয়েকটা মিনিটের লাইগা ‘টোটালি অবভিয়াস’ জিনিশের গুরুত্ত বিষয়ে মনের সন্দেহ’টারে একটু পাশ কাটাইতে।

ছোট্ট আরেকটা প্যারাবল শুনাই। দুইজন লোক বইশা আছে আলাস্কার গভীরে দুর্গম কোথাও একটা বারের ভিতরে। দুইজনের মধ্যে একজন বিশ্বাসী, আরেকজন নাস্তিক, আর তারা খোদার অস্তিত্ব লয়া বাহাস করতেছে, চার নাম্বার বিয়ারের পর আলাপে যেই জোশ আসে সেইরকম-ই ইনটেন্স হয়া উঠছিলো তাদের আলাপ। নাস্তিকটা কইলো, “দেখো, এরকম না যে আমার কাছে খোদায় বিশ্বাস না করার কোনো কিলিয়ার রিজন নাই। এমন না যে আমি খোদা এবং মোনাজাত লয়া এক্সপেরিমেন্ট করি নাই। জাস্ট গত মাসেই বরফের মধ্যে তুফানে আমি আমার ক্যাম্প হারায়া ফেলছিলাম, আমি কিছুই ঠাওর করতে পারতেছিলাম না, কিছুই বুঝতে ছিলাম না, তাপমাত্রা শূন্যের ৫০ ডিগরি নিচে আছিলো, আর তখন আমি এটা টেরাই করলাম : আমি আমার হাটু গাইড়া বসলাম বরফে, কাইন্দা উঠলাম এই বলে যে, ‘হায় খোদা, যদি তুমি থাকিয়া থাকো, আমি তুষারঝড়ে আটকা পড়সি, আমি মারা যাবো যদি তুমি আমারে হেল্প না করো।’” তো, বারের মধ্যে, বিশ্বাসী লোকটা ধন্দে পইড়া গেলো, নাস্তিকের দিকে চাইয়া সে কইলো, “তাইলে তো তোমার এখন নিচ্চই খোদায় বিশ্বাস করার কথা। কেননা তুমি তো জিন্দা-ই আছো।” নাস্তিকটা চোখের মণি ঘুরায়া কইলো, “আরে না, ঘটনা হইতেছে দুইজন এস্কিমো হাটতে হাটতে ওইদিকে আইশা পড়সিলো, তারাই আমারে ক্যাম্পে যাইবার রাস্তা দেখায়ে দিছে।”

এই স্টোরিটারে সহজেই একটা স্ট্যান্ডার্ড লিবারেল আর্টস এনালাইসিসের ভিতরে ফালায়ে দেয়া যায় : হুবহু একই অভিগ্যতা থেইকাও দুইটা আলাদা মানুষ সম্পুর্ণ আলাদা মিনিং বাইর করতে পারে, এই আলাদা হইবার ফ্যাক্টর হইতেছে বিশ্বাসের ডিফারেন্ট ছাচ, এবং অভিগ্যতা থেইকা মিনিং তৈয়ার করার ডিফারেন্ট রাস্তা। যেহেতু লিবারেল আর্টসে টলারেন্স এবং বিশ্বাসের ডাইবারসিটি’রে এনকারেজ করা হয়, সেকারণে আমাদের লিবারেল আর্টস এনালাইসিসের কোথাও এরকম দাবি করা হবে না যে ওদের মধ্যে একজনের ইন্টারপিটেশন সত্য এবং অপর জনেরটা মিথ্যা। এই ব্যাপারটা তো ভালোই, কিন্তু আমাদের আলাপ কখনো ওই জায়গাটায় যায় না যে কোত্থেকে এই আলাদা আলাদা ছাচ এবং বিশ্বাস’গুলা জন্ম লয়। মানে, ব্যক্তির নিজের ভিতর কোথায় এরা তৈয়ার হইতেছে। এরকম লাগে যে, দুনিয়ার সাথে একজন মানুষের একেবারে মূল বুঝাপড়ার জায়গাটা এবং তার অভিগ্যতা’গুলার মিনিং সামহাও জাস্ট তার হার্ডওয়ারের অংশ, হাইট কিংবা জুতার সাইজের মতোই; অথবা যেন ভাষার মতোই অটোমেটিকালি কালচার থেইকা ব্যক্তির ভিতরে মিশে গেছে ওগুলা। লাগে যে, মানুষ কিভাবে তার মিনিং তৈয়ার করতেছে সেটা তার নিজের ব্যক্তিগত চয়েসে বাইছা লওয়া না। আর এর পাশাপাশি, এরোগেন্সের টোটাল ব্যাপারটাও আছে। অবিশ্বাসী লোকটা সম্পুর্ণ নিচ্চিত যে, হাটতে হাটতে আইশা পড়া এস্কিমো’রা কোনোভাবেই তার খোদার কাছে ফরিয়াদ জানানোর ঘটনার লগে রিলেটেড না। আবার, পোচ্চুর বিশ্বাসী লোকও আছে যারা এরোগেন্ট এবং নিজের ইন্টারপিটেশন নিয়া পুরাপুরি নিচ্চিত, এটাও সইত্য। তারা হয়তো নাস্তিকদের চাইতেও বেশি রিপালসিভ, এটলিস্ট আমাদের অনেকের চোখে। কিন্তু ধর্মিয় মতবাদি’দের সমস্যাটা’টা আর এইমাত্র বলা গল্পের নাস্তিকের সমস্যা’টা একই সমস্যা : অন্ধ নিচ্চয়তার মধ্যে থাকা, মনটা এতটাই আবদ্ধ হয়া পড়া যে এমন এক বিপুল কারাগারে সে বন্দি যেখানে সে এটাও জানে না সে বন্দি।

তো, পয়েন্ট’টা হইলো, চিন্তা করতে শিখার মানে কি হওয়া উচিত সেইটার একটা পার্ট এইটা। জাস্ট আরেকটু কম এরোগেন্ট হইতে পারা। জাস্ট একটু কিরটিকালি (critically) সতর্ক থাকা নিজের সম্পর্কে এবং নিজের নিচ্চয়তা’গুলার সম্পর্কে। কারণ যেসব ব্যাপারে আমি অটোমেটিকালি নিচ্চিত, তার একটা বড় অংশই আসলে ভুল এবং ডিলিউশন। আমি এটা বুঝতে পারসি অনেক দাম চুকানোর পরে, এবং আমার বিশ্বাস তোমরা যারা গেজুয়েট হইতেছো তারাও এটা বুঝতে পারবা একসময়।

যা কিছু নিয়া আমি অটোমেটিকালি শিউর সেগুলাও যে টোটালি ভুল হইতে পারে, জাস্ট একটা উদাহরণ দিই সেটার : আমার সরাসরি অভিগ্যতায় যা কিছুর আগমন ঘটে, তার সবকিছুই আমার এই গভির বিশ্বাস’টার গোড়ায় পানি ঢালে যে, আমিই এই মহাবিশ্বের পরম সেন্টার; এগজিসস্টিং মানুষদের মধ্যে আমিই সবচাইতে বাস্তব, স্পষ্ট এবং গুরুত্তপূর্ণ মানুষ। এরকম নেচারাল, বেসিক আত্ত-কেন্দিকতার ব্যাপারে আমরা খুবেকটা চিন্তা করি না, কারণ সামাজিকভাবে এটা খুব রিপালসিভ ব্যাপার। অথচ এই স্বভাবটা আমাদের সবার ভিত্রেই কমবেশি একই। এটা আমাদের ডিফল্ট সেটিং, আমাদের জন্মের সময় থেইকাই এটা আমাদের মাদারবোর্ডে বসানো রইছে। চিন্তা কইরা দেখো, এরকম কোনো অভিগ্যতা কখনো তোমার হয় নাই যে তুমি সবকিছুর সেন্টার না। দুনিয়াটারে তুমি সবসময় এক্সপেরিয়েন্স করো এই হিসাবে যে এটা তোমারি সামনে আছে, কিংবা তোমারি পিছে, বা তোমারি ডাইনে, বা তোমারি বামে, অথবা তোমার টিভিতে সে আছে, বা তোমার মনিটরে তারে তুমি এক্সপেরিয়েন্স করতেছো, ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্য মানুষের চিন্তা আর ফিলিং এর সাথে সামহাও তোমার যোগাযোগ তৈয়ার হয়, কিন্তু তোমার নিজের চিন্তা আর ফিলিং খুবই ইমিডিয়েট, জরুরি আর বাস্তব।

দয়া কইরা তোমরা এই ভয় পাইয়ো না যে আমি তোমাদেরকে এখন দয়ামায়ার বিষয়ে কিংবা অন্যদের মর্জি বুইঝা চলার বিষয়ে অথবা সো-কল্ড নীতি-নৈতিকতার বিষয়ে লেকচার দেয়া এস্টাট করবো। এটা নীতি-নৈতিকতার ব্যাপার না। বরং এটা হইতেছে নিজের নেচারকে, নিজের হার্ড-অয়ারের ডিফল্ট সেটিংকে উতরাইয়া যাইতে পারার ব্যাপার, যেই ডিফল্ট সেটিংটা হইতেছে গভীরভাবে আত্ত-কেন্দিকতায় ডুইবা থাকা, সবকিছুরে নিজস্ব সত্তার লেন্স দিয়া দেখতে এবং ব্যাখ্যা করতে চাওয়া। যেই মানুষেরা এভাবে নিজের নেচারাল ডিফল্ট সেটিংকে এডজাস্ট কইরা লইতে পারে, তাদেরকে অনেকসময় “ওয়েল-এডজাস্টেড” বলা হয়, যেটার ব্যাপারে আমার মত হইলো এটা কোনো ভুল কইরা জন্ম লওয়া টার্ম না।

যেহেতু আমরা এখন এমন একটা জায়গায় আছি যেখানে একাডেমিয়ার জয়জয়কার কায়েম হইছে, সুতরাং এই পোশ্ন’টা সামনে আইশা পড়েই যে, নিজের ডিফল্ট সেটিংরে এডজাস্ট কইরা লওয়ার এই পোক্রিয়ার লগে একচুয়াল নলেজ আর ইন্টেলেক্টের সম্পর্ক কতটুকু। এই পোশ্ন’টা অনেকসময় জটিল হয়া উঠতে পারে। একাডেমিক পড়াশুনার সবচেয়ে ডেনজারাস ব্যাপার সম্ভবত এইটা – অন্তত আমার খেত্রে তো বটেই – এই পড়াশুনার পোভাবে আমার মধ্যে সবকিছুরে অতিমাত্রায় ইন্টেলেকচুয়ালাইজ করার টেনডেন্সি তৈয়ার হয়, নিজের মাথার ভিতরে আমি আজাইরা তর্ক-বিতর্কে জড়াইয়া পড়ি, অথচ আমার উচিত আমার চোখের সামনে যা ঘটতেছে সেইটাতেই নজর ফেলা, এবং আমার ভিতরে কি ঘটতেছে সেইটাও খেয়াল করা।

আমি নিচ্চিত এতদিনে তোমরা টের পাইছো যে, সবসময় সজাগ থাকা এবং মনোযোগী হওয়া খুবই কঠিন কাজ, নিজের মাথার মধ্যে সারাক্ষন চলতে থাকা আলাপগুলার ভিতরে তুমি সহজেই হারায়া যাইবার পারো (হয়তো এই মুহুর্তেও এটাই ঘটতেছে)। আমার নিজের গেজুয়েশনের ২০ বছর পর, আমি ধিরে ধিরে এটা বুঝতে পারসি যে চিন্তা করতে শিখানো বিষয়ক লিবারেল আর্টস কিলিশে’টা আসলে একটা শর্টহ্যান্ড – আরো গভির এবং আরো সিরিয়াস একটা আইডিয়ার দিকে যাইবার, যে আইডিয়াটা হইতেছে চিন্তা করতে শিখবার মানে আসলে কিভাবে চিন্তা করবো এবং কি নিয়া চিন্তা করবো সেটার উপর নিজের কিছু নিয়ন্তন বসাইতে শিখা। চিন্তা করতে শিখার মানে হইতেছে কোনদিকে তুমি তোমার এটেনশন দিবা এবং কিভাবে তুমি তোমার এক্সপেরিয়েন্স থেইকা মিনিং তৈয়ার করবা সেটারে নিজে চুজ করতে পারার মতো যথেষ্ট পরিমাণে কনশাস হওয়া এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারা। কারণ তুমি যদি এডাল্ট লাইফে এই ধরনের চয়েস’গুলা ঠিকমতো করতে না পারো, তাইলে তুমি বিশাল মারা খাবা। ওই পুরাতন কিলিশে’টা আমি তোমারে মনে করায়া দিতে চাই, “মন হইতেছে খুবই ভাল চাকর, কিন্তু খুবই জঘন্য মনিব।”

এটা আরো অনেক কিলিশে’র মতোই, সারফেস লেভেলে খুব লেইম এবং ভোঁতা শুনাইলেও, বাস্তবে এমন এক সত্যরে তুইলা ধরে যেটা একইসাথে মহৎ এবং টেরিবল। এটা পুরাপুরি কাকতালীয় না যে, যেই এডাল্ট’রা ফায়ার-আর্ম দিয়া সুইসাইড করে: প্রায় সবসময়ই তারা গুলি করে মাথায়। তারা গুলি করে জঘন্য মনিব’টারে। আর সত্যিটা হইলো এসব সুইসাইডের বেশির ভাগের খেত্রেই আসলে মরনটা হয়া গেছে টিরিগারে টান দিবারও বহু আগেই।

এবং আমি বলতে চাই যে এটাই তোমাদের লিবারেল আর্টস এডুকেশনের সত্যিকারের অ-আজাইরা ভ্যালু : একটা আরামদায়ক এবং সামনে আগাইতে থাকা, সম্মানজনক এডাল্ট লাইফের ভিতর দিয়া যাতে তুমি একটা ডেড এবং আন-কনশাস মানুষে পরিণত হওয়ার দিকে চইলা না যাও, যাতে নিজের মাথার গোলামি না করো, যাতে নিজের নেচারাল ডিফল্ট সেটিং এর গোলামি করতে করতে – ডে ইন, ডে আউট – তুমি পুরাপুরি নিজের একলা রাজ্যের ভিতর একলা রাজা হইয়া না পড়ো, সেইটা শিখানো। এইটারে মনে হইতে পারে বাড়ায়া-বলা বেহুদা কথা। আসো কংকিরিট হই। সরল সত্য হইতেছে তোমরা যারা গেজুয়েট হইতে যাইতেছো তারা এখনো জানো না ‘ডে ইন, ডে আউট’ কী জিনিশ। এডাল্ট এমেরিকান লাইফের এমন অনেক দিক আছে যেইটার কথা কমেন্সমেন্ট স্পিচে কেউ বলে না। এই লাইফের একটা বড় পার্ট হইলো একঘেয়েমি, রুটিন এবং হতাশা। প্যারেন্ট’রা এবং বয়স্ক’রা ভালমতোই বুঝবেন আমি কিসের কথা কইতেছি।

উদাহরণ হিসাবে বলি, ধরো এইটা এডাল্ট জিবনের একটা এভারেজ দিন, এবং তুমি সকাল-সকাল জাইগা উঠলা, তোমার চ্যালেনজিং – হোয়াইট কলার – কলেজ গেজুয়েট জব’টার লাইগা তুমি বাইর হয়ে পড়লা, এবং তুমি আট-দশ ঘন্টা খাটলা, তারপর দিন শেষে তুমি টায়ার্ড এবং কিছুটা বিধধস্ত, আর তুমি এখন যা চাও তা হইতেছে বাসায় ফিরা যাওয়া, ভালো খাওয়া-দাওয়া করা, তারপর হয়তো ঘন্টাখানেক রিলাক্স করা, আর শেষে তাড়াতাড়ি ঘুমায়া পড়া, কারণ তোমারে পরের দিনও জাগতে হবে এই পুরা জিনিশটা আবার করার লাইগা। কিন্তু তখনই তোমার মনে পড়লো যে ঘরে কোনো খাবার-দাবার নাই। তোমার চ্যালেনজিং জবের কারণে তুমি এই সপ্তায় কিনা-কাটা করার কোনো সময় পাও নাই। আর তাই এখন অফিস থেইকা বাইর হয়ে তোমারে গাড়ি নিয়া যাইতে হবে সুপার মার্কেটে। এটা হইতেছে অফিস টাইমের শেষ, যার ফলে রাস্তায় টেরাফিক সিচুয়েশন থাকবে খুবই খারাপ। ফলে দোকান পর্যন্ত পোছাইতে অনেক বেশি সময় লাইগা যাবে তোমার, এবং যখন তুমি ফাইনালি পোছায়ে যাবা, সুপার-মার্কেটে থাকবে পোচ্চুর ভিড়, কেননা এটা হইতেছে দিনের ওই সময় যখন অন্য চাকুরিজীবি’রাও কিনা-কাটা করতে আসবে। এবং দোকানটায় তখন অতিরিক্ত আলো জ্বলতে থাকবে, এবং যেই মিউজিক কিংবা কর্পোরেট পপ বাজতে থাকবে সেইটা তোমার আত্মা’রে খুন করতে থাকবে, এবং এটা হবে সেই জায়গা যেখানে তুমি এক মুহুর্তও থাকতে চাও না, কিন্তু তুমি মোটেই এখান থেইকা জলদি জলদি বাইর হয়া যাইতে পারবা না; তোমার দরকারি জিনিশগুলা খুইজা পাওয়ার লাইগা তোমার হাটা লাগবে এই বিশাল দোকানের সবগুলা গলির ভিতর দিয়া, যেইগুলা অতিরিক্ত আলোয় ভাইশা যাইতেছে, যেইগুলা কনফিউজিং, এবং তোমার বিরক্তিকর শপিং-কার্ট’টা লয়া তোমারে কায়দা কইরা চলতে হবে অন্যান্য কার্ট’ওয়ালা লোকের ভিতর দিয়া, যেই লোকেরা নিজেরাও টায়ার্ড এবং তাদেরও অনেক বেশি তাড়া (এছাড়াও আরো অনেক কাহিনি করতে হবে, এইটা একটা লম্বা রিচুয়াল, তাই কাইটা ছোট কইরা নিতেছি) এবং শেষমেশ তুমি তোমার সকল দরকারি জিনিশ খুইজা পাবা, তবে এবার তুমি দেখবা যে দিনের শেষভাগের এই অতিব্যস্ত কালেও এনাফ সংখ্যক চেকআউট লেন খোলা নাই, সুতরাং তুমি ইয়া লম্বা চেকআউট লাইনের পিছে গিয়া খাড়াইবা, চারপাশের ইস্টুপিডিটি’তে তোমার মন চাইবে রাগে ফাইটা পড়তে, কিন্তু তুমি তো ওই বিধধস্ত মহিলাটার উপরে রাগ ঝাড়তে পারবা না যে রেজিস্টারের কাজ করতেছে, এই মহিলা নিজেই অতিরিক্ত কাজের বোঝায় কাহিল, এবং তার পোরতি দিনের জীবনের একঘেয়েমি আর অর্থহীনতা’রে আমাদের মতো এসব স্বনামধন্য পোরতিষ্ঠানের মানুশরা কল্পনাও করতে পারবো না।

যাইহোক, শেষ পর্যন্ত তুমি চেকআউট লাইনের সামনে পোছায়া যাবা, আর তুমি তোমার বিল পে করবা, আর তারপর “আপনার দিনটি ভালো কাটুক” এই শুভেচ্ছা বাণী তোমারে শুনতে হবে, এমন একটা কন্ঠ থেইকা এই বাণী বাইর হবে যে মনে হবে যেন স্বয়ং মরণ কথা কইতেছে। তারপর তোমার ওই বিরক্তিকর, অস্বস্তিকর, পেলাস্টিক ব্যাগ’গুলিরে তুলতে হবে তোমার কার্টের থেইকা, কার্ট’টার আবার একটা চাক্কা’র মাথা খারাপ আছে, সে হুদাই বামে যাইতে থাকে। তারপর ব্যাগ’গুলিরে নিয়া তোমারে চলতে হবে পার্কিং লটের উচা-নিচা, কাচরা ভরা ফোলোরের উপর দিয়া ভিড় ঠেলতে ঠেলতে। আর এরপরে গাড়ি চালায়া ঘর পর্যন্ত যাইতে হবে একটা ধিরগতির, অতি ঘন, এসইউভি দিয়া ভরা, রাশ-আওয়ার টেরাফিক পার হয়া, এবং আরো অনেক রকম প্যারার ভিতর দিয়া।

অবশ্যই, এখানে যারা আছে সবাই-ই এসব কাজ করসে। কিন্তু এটা এখনো তোমরা যারা গেজুয়েট হইতেছো তাদের সত্যিকারের লাইফ রুটিনে পরিণত হয় নাই, এইটা এখনো দিন পার হয়া – সপ্তা পার হয়া – মাস পার হয়া – বছরের পর বছর ধইরা চলতে থাকা বাস্তবতা হয়া উঠে নাই।

কিন্তু এটা হবে। এবং এরকম আরো অনেকগুলা রিপিটিটিভ, বিরক্তিকর, আপাত দিষ্টিতে অর্থহীন কাজকাম তোমার রুটিনে ঢুকবে। তবে আমার কথার পয়েন্ট এইটা না। আমার পয়েন্ট’টা হইতেছে, এইসব বিশ্রি ব্যাপার’রে ডিল করতে গিয়াই চুজ করার ব্যাপারটা আসে। কারণ টেরাফিক জ্যাম এবং চলার পথের ভিড়বাট্টা আর লম্বা চেকআউট লাইন আমারে দেয় চিন্তা করার সুযোগ, আমি যদি কিভাবে চিন্তা করা লাগবে আর কিসের দিকে মনোযোগ দেয়া লাগবে সে ব্যাপারে সচেতন ডিসিশন না লই, তাইলে যতবার আমার বাজার করা লাগবে ততবারই আমার মাথা নষ্ট অবস্থা হবে। কেননা আমার নেচারাল ডিফল্ট সেটিং আমারে বলে যে এই সবকিছু তো আমার লাইগা-ই। সবকিছু আমার পেটের খিদা বিষয়ক, আমার টায়ার্ড লাগা বিষয়ক আর আমার বাসায় যাওয়া বিষয়ক, এবং অন্য সবাইরে মনে হবে যে তারা আমার পথ আটকায়া দাড়াইছে। আর এই পথ আটকায়া দাড়ানো লোকেরা কারা? দেখো কতটা রিপালসিভ এদের বেশিরভাগ, দেখো চেকআউট লাইনে এদেরকে কত ইস্টুপিড, কত গোরু মনে হয়, এদের চোখের কোনো ভাষা নাই, দেখো এদেরকে কেমন অ-মানুষ লাগে, অথবা দেখো এটা কতটা অসহ্যকর – কতটা নিশঠুর – যখন মানুষেরা লাইনের মাঝখানে দাড়ায়া জোরে জোরে ফোনে কথা বলে। দেখো জিনিশটা কতটা গভির ভাবে তোমার পোরতি একটা অন্যায়।

অথবা, হ্যা, আমি যদি আমার ডিফল্ট সেটিং এর আরেকটু সামাজিকভাবে সচেতন লিবারেল আর্টস ফর্মে থাকি, তাইলে আমি অফিস টাইম শেষের টেরাফিক জ্যামের সময় এই জিনিশগুলার পোরতি ডিসগাস্টেড হওয়ার মাধ্যমে আমার সময়টা কাটাইতে পারি – বিশাল সাইজের গর্ধবের মতো রাস্তা আটকায়া রাখা এসইউভি’গুলা, আর হেমার’গুলা আর ভি-টুয়ালভ টেরাক’গুলা, যারা স্বার্থপরের মতো এদের চল্লিশ গ্যালন গ্যাস পুড়াইয়া খতম করতেছে বেহুদাই, এবং আমি এই সত্যের উপরে অটল থাকতে পারি যে দেশ-পেরেম মূলক কিংবা ধর্মিয় বাম্পার-স্টিকার লাগানো গাড়িগুলাই সবচাইতে চোখে লাগে এবং এরাই সবচাইতে বড় স্বার্থপর, যাদের ডেরাইভিং সিটে থাকে সবচাইতে বিশ্রি [এইসময় দর্শকদের তুমুল করতালির জবাব দিতে গিয়ে] – কিভাবে চিন্তা করা যাবে না সে বিষয়ে উদাহরণ দেয়া হইতেছে যদিও – সবচাইতে চোখে লাগে এবং এরাই সবচাইতে বড় স্বার্থপর, যাদের ডেরাইভিং সিটে থাকে সবচাইতে বিশ্রি, সবচাইতে অবিবেচক এবং এগ্রেসিভ লোকেরা। এবং আমি ভাবতে পারি কিভাবে আমাদের নাতি-নাতিন’রা আমাদেরকে গালাগালি করবে, যেহেতু আমরা ভবিষ্যতের সব জ্বালানি নষ্ট কইরা ফেলতেছি, এবং সম্ভবত জলবায়ুর মায়েরে বাপ কইরা দিতেছি, এবং আমি ভাবতে পারি আমরা সবাই কতটা নষ্ট, কতটা স্বার্থপর এবং কতটা ডিসগাস্টিং সেটা নিয়ে, ভাবতে পারি এই আধুনিক ভোগবাদি সমাজ কতটা জঘন্য, এবং এরকম ভুরিভুরি বিষয়ে।

বুঝতেই পারতেছো।

যদি দোকানে বা রাস্তাঘাটে আমি এই ধাচে চিন্তা-ভাবনা করতে পছন্দ করি, ফাইন। অনেকেই তো তা করে। তবে ব্যাপার’খানা হইলো, এইভাবে চিন্তা করাটা খুবই সহজ এবং অটোমেটিক, এইটা কোনো চয়েস না। এইটা আমার নেচারাল ডিফল্ট সেটিং। এটা হইতেছে সেই অটোমেটিক উপায়, যেভাবে আমি এডাল্ট জিবনের বোরিং, ফাস্টেটিং এবং লোকের ভিড়ে ভরা অংশ’গুলারে এক্সপেরিয়েন্স করি, এক্ষেত্রে আমি একটা অটোমেটিক, আন-কনশাস বিশ্বাসের উপ্রে খাড়ায়া অপারেট করি, সেই বিশ্বাসটা হইতেছে আমিই এই পিথিবি’র সেন্টার, এবং আমার এই মুহূর্তের দরকার অনুযায়ী-ই সবার পেরায়োরিটি ঠিক হওয়া দরকার।

ব্যাপারটা হইতেছে অবশ্যই এরকম সিচুয়েশনে চিন্তা করার লাইগা টোটালি ডিফারেন্ট রাস্তা’গুলাও আছে। এই কঠিন টেরাফিকে, আমার পথে আগলায়ে দাড়ায়া থাকা বা ধিরে ধিরে চলতে থাকা গাড়িঘোড়ার মধ্যে, এটা অসম্ভব না যে এসইউভি-র মধ্যে থাকা কারো কারো হয়তো অতীতে ভয়ংকর এক্সিডেন্টের অভিগ্যতা আছে, এবং এখন তারা গাড়ি চালাইতে আতংক ফিল করেন, আর তাই তাদের থেরাপিস্ট তাদেরকে বড়সড় দেইখা এসইউভি লইতে বলছে, যেইটা চালাইতে তারা সেইফ ফিল করবেন। কিংবা যেই হামার’টা এই মাত্র আমারে চাপ দিয়া বাইর হয়া গেলো সেটা হয়তো এক বাপে চালাইতেছে তার আহত বা অসুস্থ বাচ্চাটারে পাশে লয়া, আর বাপটা চাইতেছে বাচ্চারে হাসপাতালে লয়া যাইতে, এবং সে আমার চেয়ে বেশি তাড়ার মধ্যে আছে, যেই তাড়া’টা আমার তাড়ার চেয়ে বেশি লেজিটিমেট : আমি-ই পথ আগলায়া রাখসি তার

অথবা আমি নিজেরে এইভাবে কন্সিডার করার ব্যাপারে চাপ দিতে পারি যে, সুপার মার্কেটের চেকআউট লাইনের অন্য সবাইও আমার মতোই বোর ফিল করতেছে, আমার মতোই বিরক্ত তারাও, এবং এদের মধ্যে কারো কারো জীবন আমার জীবনের চাইতেও কঠিন, আরো বেশি বিরক্তিকর এবং জন্তনা-দায়ক।

আবার বলি, পিলিজ এইটা ভাইবো না যে, আমি তোমাদেরকে কোনো মোরাল এডভাইস দিতেছি, বা এটাও ভাইবো না যে আমি এভাবে চিন্তা করাটারে তোমার দায়িত্ত কইতেছি। কেউ তোমার কাছে আশা করতেছে তুমি অটোমেটিকালি-ই এভাবে চিন্তা করবা – এটা আমি কইতেছি না। কারণ কাজটা সহজ না। এটার জন্য ইচ্ছাশক্তি এবং এফোর্টের দরকার হয়। যদি তুমি আমার মতো হও তাইলে কোনো কোনো দিন তুমি এটা পারবা না বা তোমার জাস্ট ইচ্ছা করবে না।

কিন্তু যদি তুমি নিজেরে সচেতন রাখতে পারো বেশিরভাগ দিন, তুমি তাইলে চুজ করতে পারো এই মোটকা এবং নিশ-পেরান চোখ’ওয়ালা, কড়া মেকাপ দেয়া মহিলাটার দিকে আরেক ভাবে তাকানোর। চেকআউট লাইনে দাড়ায়া থাকতে থাকতে যে কিনা এইমাত্র নিজের বাচ্চাটার উপ্রে চিৎকার করলো। হয়তো সে সাধারণত এইরকম না। এমনও হইতে পারে তার হাজব্যান্ড বোন-ক্যান্সারে মারা যাইতেছে, এবং সে হাজব্যান্ডের হাত ধইরা জাইগা ছিল গত তিন রাইত। অথবা এমনও হইতে পারে এই মহিলা মোটর ভেহিকেল ডিপার্টমেন্টে একজন অল্প-বেতনের কেরানি, যে কিনা জাস্ট গতকালকেই তোমার বউ বা জামাইকে একটা ছোটখাট বুরোক্রেটিক কাইন্ডনেসের মাধ্যমে হেল্প করসে একটা মারাত্তক বিরক্তিকর দালিলিক জটিলতার হাত থেইকা সহজে উদ্ধার পাইতে। অবশ্যই, এইগুলির সম্ভাবনা খুব বেশি না, কিন্তু এইগুলি অবাস্তব-ও না। ডিপেন্ড করতেছে তুমি কতটুকু পর্যন্ত কন্সিডার করতে চাও তার উপর। যদি তুমি অটোমেটিকালি শিওর হও যে, তুমি জানো রিয়েলিটি’টা কী, আর যদি তুমি তোমার ডিফল্ট সেটিং এর উপ্রেই অপারেট করতে থাকো, তাইলে তুমিও আমার মতোই হয়তো ভুইলা যাবা ওইসব সম্ভাবনাকে যেইগুলা রাইগা যাওয়ার মতো না, যেইগুলা অতটা বাজে না। কিন্তু যদি তুমি আসলেই শিখতে পারো যে কিভাবে মনোযোগ দিতে হয়, তাইলে তুমি দেখবা যে তোমার কাছে আরো অপশন আছে। দেখবা, একটা ভিড়-আক্রান্ত জায়গার গরম এবং ধির চলাফেরার মধ্যে একটা ভোগবাদি-জাহান্নামের মতো সিচুয়েশনকেও, মিনিংফুল এমনকি পবিত্র হিসাবে আবিস্কার করার খমতা তোমার আছে। দেখবা, যেইসব ফোর্স দিয়া এই তারকা’রাজি সাজানো : প্রেম, বন্ধুত্ব, সমস্ত কিছুর গভিরে একটা মিস্টিকাল ওয়ান-নেস, এইসব ফোর্সকে তুমি ওই সিচুয়েশনের ভিতরেও খুঁইজা পাবা।

এমন না যে এই মিস্টিকাল ব্যাপার’টা সত্য হওয়াই লাগবে। একমাত্র যে ব্যাপারটা পরম সত্য, সেটা হইতেছে, তুমি কিভাবে একটা কিছুকে দেখবা সেইটা তুমি চাইলে নিজে চুজ করতে পারো।

এটারেই, আমি বলতে চাই, পোকরিত শিক্ষা থেইকা অর্জিত ফিরিডম, যে কিভাবে একজন মানুষ ওয়েল-এডজাস্টেড হয়া উঠতে পারে। তুমি নিজে সচেতন ভাবে ডিসাইড করতে পারবা যে কিসের মিনিং আছে এবং কিসের মিনিং নাই। তুমি নিজেই ডিসাইড করবা যে তুমি কিসের এবাদত করবা।

কারণ, আরেকটা ব্যাপার আছে যেটা উইয়ার্ড হইলেও সইত্য : এডাল্ট লাইফে যেভাবে আমরা একেকটা দিন পার করি সেখানে আসলে নাস্তিকতা বলতে কিছু নাই। এবাদত না করা বলতে কিছু নাই এখানে। সবাই-ই পুজা করে। তোমার হাতে যে একমাত্র চয়েস’টা আছে সেটা হইলো তুমি কিসের পুজা করবা। কোনো খোদা কিংবা স্পিরিচুয়াল ধরনের কোনোকিছু – হোক তা যিশু বা আল্লাহ, ইয়াওয়েহ বা উইকান মাতৃদেবী, কিংবা চার আর্য সত্য অথবা নীতি-নৈতিকতার এমন কিছু সুত্র যা লংঘন করা যাবে না – এই ধরনের কোনোকিছুকে পুজা করার পিছনে একটা জোরালো অনুপেরণা হইতেছে, এসবের বাইরে অন্য যেসব জিনিশের পুজা করা যায় সেগুলা তোমারে কাচা খায়া ফেলবে। যদি তুমি টাকা এবং বস্তুর পুজা করো, যদি এইগুলার মধ্যেই জিবনের আসল মিনিং ঠিক করো, তাইলে তুমি কখনোই এনাফ পরিমাণে এইগুলা পাবা না, তোমার সবসময় কম-কম ফিল হবে। কিংবা নিজের শরিল, সোন্দর্য, যৌন আবেদন – এইগুলার পুজা কইরা দেখো, তোমার কাছে সবসময় নিজেরে আগলি ফিল হবে। তারপর যখন সময় ও বয়সের ভার তোমার ঘাড়ে চাইপা বসবে, তখন মিত্যুর আগেই তুমি হাজার বার মরণের জন্তনা টের পাইবা। একটা লেভেলে, আমরা সবাই অলরেডি এই সত্যটা জানি। এটাই নানাভাবে বলা আছে পুরাণে, পোবাদে, কিলিশে’গুলাতে, এপিগ্রামে, নীতিগল্পে; এটাই সব মহান গল্পের কংকাল তৈয়ার করে। এখানে ফন্দিটা হইলো, পোরতি দিন নিজেদের মনোযোগের সামনে সত্যটারে তুইলা আনা।

খমতারে পূজা কইরা দেখো, দেখবা সবসময়ই তোমার নিজেরে খমতাহীন মনে হবে, সবসময়ই তুমি ভয়ে থাকবা, এবং তখন তোমার দরকার হবে সবার চাইতে বেশি খমতা যাতে তুমি নিজের ভয়টা থেইকা নিজেরে বাচাইতে পারো। নিজের ইন্টেলেক্টের পুজা কইরা দেখো, নিজেরে এসমাট হিসাবে তুইলা ধরাটারে পুজা কইরা দেখো, দেখবা শেষমেশ তোমার নিজেরে ইস্টুপিড মনে হবে, পোতারক মনে হবে, মনে হবে যে এখনই ধরা পইড়া যাবা। কিন্তু এই ধরনের এবাদত-গিরির ক্ষতিকর দিক এইটা না যে এইগুলা শয়তানি বা পাপ, বরং এইটা সমস্যা যে তারা আন-কনশাস। এইগুলা ডিফল্ট সেটিং।

এইগুলা হইতেছে সেই টাইপের ওরশিপিং যেগুলার ভিতর তুমি ধিরে ধিরে ঢুইকা যাও, দিনের পর দিন ধইরা, একটু একটু কইরা তোমার দেখার জগত ছোট হইতে থাকে, তুমি কেমনে কোনোকিছুর ভ্যালু ঠিক করো সেইটা দিন দিন ন্যারো হইতে থাকে, এবং এটা কখনো ঠিকমতো তোমার খেয়ালেও আসে না যে এটাই ঘটতেছে তোমার ভিতর।

আর এই সো-কল্ড বাস্তব দুনিয়া তোমারে নিজের ডিফল্ট সেটিংয়ের উপর আমল করা থেইকা আটকাবে না, কারণ এই মানুষজন আর ট্যাকা-পয়সা আর খমতার এই সো-কল্ড বাস্তব দুনিয়া টিকে থাকে ভয়ের উপর, রাগ-ক্ষোভের উপর, বিরক্তি-হতাশা আর চাহিদা আর আত্ম-পুজার উপর। আমাদের বত্তমান কালচার এইসব ফোর্স’রে এমন কায়দায় কাজে লাগাইতে সক্ষম হইছে যেটার থেইকা জন্ম নিছে এক্সটা-অডিনারি সম্পদ এবং আরাম এবং পার্সোনাল ফিরিডম। যে ফিরিডম কেবল একেক জনরে তার নিজের ছোট মাথার সাইজের কিংডমে রাজা বানাইসে, সকল মাখলুকাতের সেন্টারে যে একলা বইসা আছে। এই ফিরিডমের পক্ষে অবশ্যই অনেক যুক্তি আছে। কিন্তু অবশ্যই এর বাইরেও আরো অনেক রকমের ফিরিডম আছে, এবং এর মধ্যে যেইটা সবচাইতে দামি সেইটার বিষয়ে তুমি বাইরের ওই চাওয়া-পাওয়ার জগতে খুবেকটা শুনতে পাইবা না … আসলেই গুরুত্তপূর্ণ ফিরিডম যেইটা সেটার সাথে জড়িত আছে মনোযোগ, সচেতনতা আর ডিসিপ্লিন, এবং অন্য মানুষদের জন্য আসলেই কেয়ার করতে পারা, আর তাদের জন্য বারবার বারবার সেক্রিফাইস করতে পারা – ছোট ছোট আনসেক্সি পথে, পোরতি দিন।

এটা হইতেছে আসল ফিরিডম। এটা হইতেছে শিক্ষিত হওয়া, এবং বুঝতে পারা যে চিন্তা করার পোক্রিয়াটা কি। এর অল্টারনেটিভ হইতেছে আন-কনশাস, ডিফল্ট সেটিং, ইন্দুর দৌড়, কি ছিলো আর কি হারাইলো সেইটা নিয়া সারাক্ষণ মাথার মধ্যে কামড়া-কামড়ি, কিছু জিনিশ যার কোনো শেষ নাই।

আমি জানি একটা কমেন্সমেন্ট স্পিচ যেরকম ফান হওয়ার কথা, হালকা বাতাসের মতো এবং অত্যন্ত অনুপেরণা-মুলক হওয়ার কথা, সেরকমটা হয়তো হয় নাই আমার কথাগুলা। আমার বুঝমতে, এই কথাগুলা হইলো পরম সত্য কথা, যেইগুলা থেকে অনেক অনেক সুন্দর রেটোরিকাল জামাকাপড়’গুলা খুইলা নেয়া হইছে। তুমি অবশ্যই এই ব্যাপারে যা খুশি ভাবতে পারো। কিন্তু দয়া কইরা এটারে ডঃ লরা’র সারমনের মতন ডিসমিস কইরা দিয়ো না। এটা মোটেই নীতিশিক্ষা বা ধর্ম বা মতবাদ কিংবা মিত্যুর পরের জিবন নিয়ে বড় বড় ফ্যান্সি কোশশেন করা না।

পরম সত্যটা আসলে মিত্যুর আগের জিবন লইয়া।

এবং এটা রিয়েল শিক্ষার রিয়েল ভ্যালু লইয়া, যেটার লগে নলেজের পেরায় কোনো সম্পর্ক-ই নাই, বরং পুরা জিনিশটাই সিম্পল এওয়ারনেস; সেইটা লইয়া এওয়ারনেস যেটা একদম বাস্তব এবং সবচেয়ে দরকারি – যা সবসময় লুকানো থাকে স্বাভাবিক চোখের দেখার থেইকা আড়ালে, আর তাই নিজেরে বারবার এটার কথা মনে করায়া দিতে হয় :

“এটাই দরিয়া”

“এটাই দরিয়া”

এডাল্ট দুনিয়ায় দিনের পর দিন ধইরা সবসময় কনশাস এবং এলাইভ থাকা কল্পনার চাইতেও কঠিন। তার মানে আরো একটা বড়সড় কিলিশে’র সত্যতা পরমান হইতেছে : তোমার শিক্ষাটা আসলে তোমার সারা জিবনের চাকরি। আর এই চাকরির শুরু হইতে যাইতেছে : এই মুহুর্ত থেইকা।

আমি শুভ কামনার চাইতেও বেশি দোয়া রাইখা গেলাম তোমাগোর লাইগা।

The following two tabs change content below.
Avatar photo

লাবিব ওয়াহিদ

কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →