Main menu

হাসান রোবায়েতের কবিতা

ইশক

যে চইলা গেছে
তার
যাওয়াটারেই ভালোবাইসা ফেলি—

 

সবুর

তোমার জন্যে সবুর করা

আল্লার
রহমতের দিকে
তাকায়া থাকার মতন—

 

রঙ্গনের বন

আমার রক্তের ভেতর খালি রঙ্গনের বন ডুকরে ওঠে
তুমি চইলা গেলা বলে—

 

পাশাপাশি

তোমারে যে ভালোবাসছিল
তার মুখ ভুলে যাইও না—
অসুখ হইলে তার পাশে বইসো—

কখনো জিজ্ঞাসা কইরো—
জলপট্টির চাইতে
কপালে হাত রাখলে ভালো লাগবে কিনা—!

যে তোমারে একদিন চিঠি লিখছিল
কাঁপা কাঁপা ভয়ে
তার কাছে যাইও; প্রশ্ন কইরো, মন খুব খারাপ হইলে
একটা গান তাকে আশ্রয় দেবে কিনা—

মানুষই মানুষের পাশে যায়—
দুঃখের কথা শুনে
নিমের ফুলের মতো হালকা কইরা দেয় সময়—

 

কাফের

যারেই ভালোবাসি

সে-ই দূরে যায়
যেভাবে কাবার থেকে দূরে যায় কাফেরের দল—

 

দোয়া

দুপুরে চুলে তেল দিতে দিতে
কাউরে বইলো—
উত্তরের আড়ায় আতনা গাছে ফুল আসতেছে
নামাজ শেষ হইলে
দোয়া কইরো
কদরের রাতে মোনাজাতে বইলো
যারে পর করেছি একদিন
সে যেন পেঁপের পাতার মতো
আর কোনোদিন
সবুজ না হয়ে থাকে সমস্ত মাঠে—

 

বিরহ

তোমারে যে কানের দুল কিনে দিছিলাম
মেলা থেকে—
নিশ্চয়ই হারায়ে ফেলেছ—

মাঝেমধ্যে খুব দেখতে মন চায়
তুমি এখন কী পরো!

বাইরে শিমলতায় ফুল এসেছে
বেগুনি পাপড়িতে ছলনা করতেছে শিশির—

তুমি তো সবই ভুইলা গেছ
কিছুই মনে নাই আর—

তোমার বিরহ আমি লিখে রাখি আমার ভাষায়—

 

ভালোবাসা

যে তোমারে পাইলো
আমি তার কাছে মিনতি করি
সে যেন সুখ দুঃখে তোমারেই পাশে রাখে—

বাড়িতে ফেরিঅলা আসলে
সে যেন তোমারে কিনে দেয় আলতা লিপিস্টিক

যে চইলা যায় তার ভালোবাসা
ঘুণাক্ষরেও বুঝবে না তুমি

 

তোমারে

তোমারে ভালোবাইসা যে চইলা গেল
তার জন্য সবুর কইরো না—
সে যে পথ দিয়ে চইলা গেছে তার গাছের নিচে দাঁড়ায়া
কাউরে জিজ্ঞাসা কইরো না
এই রাস্তার শেষ কোথায়?

যে চইলা যায় তার রাস্তার কোনো শেষ হয় না—

তার চে নিয়ম করে তুমি তোমার ওষুধ খাইয়ো
কখনো মন খারাপ হইলে
রোহিণী নক্ষত্রের দিকে তাকায়া
দুইটা কথা বইলো একা একা—

হৃদয়ে শান্তির দিন কবে যে শেষ হয়
কেউ জানে না—

যে তোমারে ছাইড়া গেছে তার জন্যে
মধ্য রাতে ঘুম থেকে উঠে
দাউদাউ কইরা কাইন্দো না—

 

তোমারে পাইলাম না

তোমারে পাইলাম না—
যেমন কই মাছ পায় না খরায় উছলে যাওয়ার পানি
তোমারে পাইলাম না—
যেমন মা মরা গরুর বাছুর পায় না দুধ
তোমারে পাইলাম না
যেমন হারানো কবুতরের ডিম আর পায় না উশুম

তুমি যার কাছে গেলা, তারে বইলো
যেন রাত না করে বাড়ি ফেরে—
বাতাস বইছে, লীন এক প্রশান্তির দিকে
যেন সেও তোমারে নিয়া যায়
কন্যা ও পুত্রসমেত নির্জন ঢেউয়ের দিকে—

তোমারে পাইলাম না—
যেমন কই মাছ পায় না খরায় উছলে যাওয়ার পানি

 

কসম

আমারে ভুলে যাইও না
খোদার কসম লাগে—

যদি মরে যাই
তুমি আসিও
বসিও খাটিয়ার পাশে—

দুপুরে খোঁপার বাঁধন খুলিও

বিরহ বহিয়া যায় নিশিদিন আমার ভাষায়—

 

চিক্কুর

যে তোমারে পাইলো
তারে আমি নিমগাছের চারা দিমু
যেন সে শাদা শাদা ফুলের সাথে দিতে পারে
বিবাহের উপমা—

তোমারে যে পাইলো
তারে আমি জলশরি ফুলের বেগুনি আওয়াজ দিমু
যেন সে পাঁপড়ি ভরে নিতে পারে
তোমার ছলনা—

আমি যে কই থাকি
কেউই পায় না খুঁজে, খালি তোমার কথাই
অন্তরে চিক্কুর দিয়া ওঠে
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কালামের মতন—

 

ভালো থাইকো

ভালোবাসতে বাসতে প্রায়ই ভুইলা যাই
আশলে তুমি নাই—

তুমি চইলা গেছ ধানের দুপুর ছাইড়া
এমন সব নদীনালা পাখিদের দিকে
যেইখানে আমি নাই—

পুত্র-কন্যা নিয়া ভালো থাইকো
যেমন ভালো থাকে তোমার কপালের টিপ
নির্জন আয়নার উপর—

 

তোমার কাছে

মাঝেমধ্যে আমার মন কয়
আমি খুব তাড়াতাড়িই মইরা যাবো

কিন্তু মইরা আমি কই যাবো—?

একটা ব্রিজ পার হওয়ার মতন
আমি মউতরে পার হইতে চাই—

মইরাও আমি খালি তোমার কাছেই
যাইতে চাই—

 

পর

বিবাহে পর হইয়াছ—
তাও তোমার কথা মনে পড়ে
এই রেল-রাত্রির আবহে—

বারান্দায় যে পুঁইলতা ফুলে ফুলে
অন্যতর হইয়াছে, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি
কোথায় বরফের নদী—?

আমার কাঁচা ঘুম ভাইঙ্গা দিয়া
তুমি যাইতেছ মাঠ থেকে মাঠে
বিবাহের সুর ধরে—

 

চাওয়া

এই যে তোমারে পাইলাম না
অথচ সারাজীবন পাইতে চাইবো
এ-ও কি ভালোবাসা নয়—!

 

যদি

যদি পেট পোড়ে
আমার লাগিয়া, কোনোদিন, কোনো ছলে
তবে অভিশাপ দিও
যেন মইরা গিয়া তোমারে বাঁচায়া দেই
বিরহের ছলনা থেকে—

চইলা গেলে

কেউ কেউ চইলা গেলে
রাস্তার পাতাটাও একা হইয়া যায়—

 

কথা

মাঝেমধ্যে আচমকাই মন খারাপ হয়
কী জন্যে হয়
আমি জানি না—
তখন হঠাৎ মনে পইড়া যায়
আমার তো কেউ নাই
যারে কিছু কইতে পারি
হেমন্তের নির্জনে
পাতা ঝরার পর—

 

অসমাপ্ত

তোমারে চাইলাম
কিন্তু পাইলাম না, এই না পাওয়ার
কোনো আদি নাই অন্ত নাই—

চইলাই গেলা—
দড়ি ছেঁড়া বাছুর যেমন চইলা যায়
দূর থেকে দূরে, অসমাপ্ত মাঠের দিকে—

 

ভালো থাকে যেন

যে গেল
সে তার চইলা যাওয়া নিয়াই
ভালো থাকে যেন—

The following two tabs change content below.
Avatar photo

হাসান রোবায়েত

[email protected] প্রকাশিত বই: ঘুমন্ত মার্কারি ফুলে (২০১৬) মীনগন্ধের তারা (২০১৮) এমন ঘনঘোর ফ্যাসিবাদে (২০১৮) আনোখা নদী (২০১৮) মাধুভাঙাতীরে (২০২০) তারাধুলিপথ (২০২১) মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (২০২১) রুম্মানা জান্নাত (২০২২) মুসলমানের ছেলে (২০২২)
Avatar photo

Latest posts by হাসান রোবায়েত (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →