Main menu

জাকির হোসেনের কবিতা

ছায়াহরিণ

আমি ভালোবাসি ছায়াহরিণ
কোথাও কি যাইতে পারে সে কল্পনার বাহিরে?
আমার আপোন বাস্তবতায়
বসন্তের পাতা দিবো তারে চিবাইতে
তোমার কানের দুলের মতো নড়ে যে পাতা,

সে কি পারবে?
যেমন পারবে না সে হারায়া ফেলতে আমারে
যদি না হই উদাস আমি!

নিজেরে হারাইতে দিবো আমি
তবু
দিবো না তোমারে অন্য কারো কল্পনায়
অন্যের সিংহ সময়ে।

আমার কল্পনার ছায়াহরিণ
তুমি থাকো
আমি একদিন ঘাস হবো।

 

পরাণের গহীন ভিতর

তোমারে ছাইড়া আসার পরে
কি যে আনন্দ লাগতেসিলো আমার!
মনে হইতেসিলো- একটা ফ্রিডমের বাচ্চা পয়দা করছি আমি,
তোমারে ভুইলা থাকলেই বাচ্চাটা বড় হইবো আমার!
কয়েকজোড়া কইতর কিনছি আমি
নিজেরে ট্রিট দেয়ার উসিলায়।

ইদানীং
তোমারে মনে পরে অনেক
তোমার কথা ভাবি আমি
যেভাবে মাটির নিচে পলাতক ব্যাং ভাবে বর্ষা
ধানকাটা খেতের কথা ভাবে চড়ুই!

কি আশ্চর্য!
তোমারে মন দিয়া যেদিন ভাবতে থাকি
ওইদিন একটা কইরা কইতর হারায়া যায় আমার,
আগে ক্যানো বল্লা না তুমি
ওই কইতরগুলাও তুমি আছিলা?

 

ঘুঙ্গুর

অনেকভাবেই হারায়া যাইতে পারো তুমি
সুন্দর হয়; যদি
ঘুঙ্গুর পরো পায়ে।

 

সুন্দর

তোমার চইলা যাওয়া কি যে সুন্দর!
যেন তুমি কুয়াশা চইলা গেলা সকালের রইদে।

তোমার স্মৃতি কি যে উজ্জল এখনো
যেন
মরা নদীটার বুকে চিকচিকা বালি।

 

সাও পাওলো

সাও পাওলো থেইকা রোইদ পাঠাও মরিয়ম
বাংলা মদের মতো এখানকার রোইদ
গা পুইড়া যায়, শার্ট ছিড়া যায় উত্তাপে
তবু ভাইটামিন ঠিকঠাক আসে নাহ।

আসছে গরমে ছায়া পাঠায়ো এমাজনের
ছাতার দাম বাইড়া গেছে বাকশালের মরুঅঞ্চলে।

 

দৃশ্যের প্রতিদিন

কোনো কোনো দৃশ্যের ভিতর আমি থাইকা যাই চিরদিন।
কলের দুয়ার-
ছাতার মত পাতা মেইলা আছে পেপে গাছটা পাশে
তার শরীলভরা ভিটামিন ইস্তনের নিচে পাঁইকা উঠি আমি ইরোটিক সিনে!
কলের পানি চইলা যাওয়ার পথে-
পিথীবির সব জেনে ফেলা বৃদ্ধটার মতো চুপচাপ ঝাপসা নেবুগাছ বইসা আছে,
তবু তার কাঁটা গান্ধীর মতো অহিংস নয় জেনে ভালোবাসি তাকে।

কোনো কোনো দৃশ্য লাগে চিরদিন স্টাপলার দিয়া গাইথা রাখি ;
কচি আমড়া পাতার মতো অতিশয় যত্নে নড়ে তার চুল
ভাটিয়ারি লেকের মত সহজ শরীল
মুগডালের রঙে সাজানো বিরহী পিঠের নারী
ডালিমের রক্তে রাঙানো চুড়ি হাতে পইরা যখন নড়ায়া উঠায় হাতখানি, মনে হয় আজ ২৩ এ ফেব্রুয়ারী।
গাইতে থাকি –
আমার মোনে বিরহের শান্তি জাগালো নারী
আমি কি ভালো না বেসে থাকিতে পারি?

 

দেখা

সে তোমারে সবসময় দ্যাখে নাহ।
পিথিবী দেখার দুইটা চোখ খুলে
যখন সে থাকে হোমার
যখন সে সূর্যমুখী
তোমারে সে দ্যাখে তখন,
ডাঙায় থাকা মাছের বাস্তবতা নিয়া
তোমারে সে ভাবে জল।

 

বাকশালের ফুল

প্রেমিকাদের ফুল কিনে দ্যান
একটা গোলাপ অথবা একথোকা রজনীগন্ধা,
এত সস্তায় এত গভীর প্রেম
আগামী বছরে হয়তো হবে নাহ!

 

আমি’র কোবিতা

আমি তো সেই পথিক
আজীবন যে একই পথে
ঘুরপাক খায়া হাঁইটা গেলো,

আমি সেই কামার টা-
যে লোহা ধার দিয়া গেলো আজীবন
নিজেরে ধার দেয়া ছাড়া,

আমি সেই চাকা টা
অন্যেরে নিয়া
ঘুরতে ঘুরতে
যাইতে যাইতে
আর যাওয়া হইলো না কোথাও!

আমি সেই আয়না
যে নিজেরে দেখতে পাইলো না কহনো!

 

দুইজন

কার এ কইরা যাইতেছে দুইজন
একসাথে
আলাদা গন্তব্যে।

সক্রেটিছ কইতেছে, দেখ
চাইরপাশের গাছগুলা কি যে চার্মিং!

এত সুন্দর যে মনে হয় এখনই মইরা যাই
আর তো দেখার কিছু নাই!

প্লাটো কইতেছে
হ ওস্তাদ
সুন্দর!
কিন্তু আপনার শাশ্বত শুভ’র মতই
এই বিকালটা আর তার মনোরম ছবি
আনরিয়েল!

 

কালচারাল গ্যাপ

আমাদের দূরত্ব তো চিরদিনের
আসো তবু, হিসাব কষি
কতটা ব্যতিক্রমে আমরা থাকতে পারতেছি আলাদা
কিরকম আজাদি আমরা পাইছি
কতটা কালচারাল গ্যাপ তৈরি করতে পারছি।

তোমার ওখানে সময়ের কি হিসাব?

ডিসেম্বার এখন, জল শুকায়া যাইতেছে
মদের দামও বাইড়া গেছে
এবার করবো আমরা কুয়াশার নেশা!
কি অবাক করা কান্ড জানো? তোমারে ছাইড়া যাওয়ার পর থেইকা প্রকৃতিতে কেমন চেন্জ আইছে, সবকিছু ন্যাচারাল ন্যাচারাল লাগে!
মনে হইতেছে,তোমারে হারায়া আমি নিজেরে খুইজা পাইলাম।

তোমার?

আমার এখানে পৌষ, বরইগুলা বড় হইতেছে।
গরুরা অনেক আনন্দিত, এই মাসেই খড়ের যোগান দ্বিগুন হইতেছে, পাশের ঘরে আইছে নতুন শিশু।
আমাদের এদিকে যারা জন্মায় তাদের জন্য ভয়ই লাগে বুচ্ছো,কতটা মানুষ তারা হইতে পারবে কি জানি!

তোমার আগে আমার যে প্রেমিকা আছিলো,তার ঘর ভাইঙ্গা গ্যাছে এবার বর্ষায়।
মেঘনা আর ভাঙে না এখন, সারাবছরের পরিশ্রমে উদরায়া গ্যাছে, মনে হইতেছে তারে -বাইচ্চা বিয়ানো মহিলাটার মতো, শান্ত, ধীর, নমনীয়, মায়াময় ও দুর্বল।
আমার এখন সারোদ, পিয়ানো, বীণার সুর ভালো লাগে
ওইখানে আমি খুঁইজা পাই নিজেরে, নিজেরে খুঁইজা পাইলে আমি তোমারেও পাই। আমার কোন চেন্জ আসেনাই, আমি এখনো প্রেমিক হয়া আছি।
দিওয়ানা।

 

খোঁজ দ্য সার্চ

আমারে চাইতে থাকো
যেমনে তুমি চাও
বিউটিফুল ড্রেছ

আমারে চাইতে থাকো
যেমনে তুমি চাও
স্পাইসি ফুচকা প্লেট

আমারে চোখে চোখে রাখো
সুরমা’টার মত,

রোইদের চশমাটা যেমন
শান্তি দেয়
আমারো ভাবো ওই শান্তিটা তোমার দিলে,

আমারে পাইতে পারো
বর্ষায়
কৈ মাছের মত
যদি বৃষ্টির মত অঝোরে ইবাদত করো!

আমারে পাইতে পারো
ফসিলটার মত
যদি জীবন খুঁইড়া দেখো।

 

আদিম মাছ

মেঘনায় মাছ ধরতে গিয়া
ধৈর্য “ধইরা বসে আছে লোকটা;
যেন
ধৈর্য –
সকল পরিবর্তনের জননী।

 

শীতকাল

এই শীত যেন
অবৈধ শাসনের মতো
দীর্ঘ হয়।

শোয়েটারের গর্তে বইসা থাকবো আমরা
একটা লুপের ভিতর।

আগুন নিয়া করবো খেলা
যেইভাবে শাসক
খেলো করে জনতারে নিয়া!

ফুল ফুটবো
আমরা মাথা নত কইরা থাকবো সৌন্দর্যের কাছে-
হেলেন
রাধা অথবা
জোলেখা’র কাছে যেমন।

 

জিরো

যেইখানেই যাই আমি
সেইটাই
নেইদার ল্যান্ড।

 

গতির সূত্র

দৌড়ায়া পারতেসি না
পার হয়ে যাইতেছে ওরা আমারে
ওদের আছে ব্রিজ
গাড়ির ভালো চাকা
আছে রাবার বাগান
আছে মুনাফা!
আমি মেঘনার সাম্পানে
বেদনাহূত
আমার আছে যে চাকা, সে –
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!
দৌড়ায়া পারতেসি নাহ আমি
বরং
সোনালি আপেলের গতি এর থেইকা বেশি
দুনিয়ার সবর্ত্রই সে আছে,
খালি পায়ের কুলির কান্ধে
কাপ্তানের মনোযোগী জাহাজে
ফুটপাথ ধইরা হাইটা যাওয়া লোকটার বিচ্ছিন্ন দৃশ্যের ভেতর সে আছে,
বাস্তবতা থেইকা কয়েক সেকেন্ড মিস করার ফলে যে লোকটা আচমকা
হাড়ভাঙা হাসপাতালে নিজেরে আবিষ্কার করলো
তার বিছানার পাশে
ভ্যাবলা ছাত্রটার মতো চুপচাপ বইসা আছে আপেলটা।
তাহলে মানুষ কোনদিকে যাইবে বইলা মনে হয়?
কি তার গতি?
কি তার গান?
মানুষ যাবে প্যানথেইজমের দিকে
বহুক্রোশ পার হয়া সে দেখবে এখনো গুলিস্তান
তার পকেট কাটা যাবে আর
সে গাইবে ডিলডোর গান!

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

জাকির হোসেন

জন্ম: লক্ষীপুর। পড়াশুনা : চবি, দর্শন বিভাগ। সমাজ, রাজনীতি, দর্শন,ও সাহিত্য নিয়ে আগ্রহী। একজন সাধারণ অবজারভার।
Avatar photo

Latest posts by জাকির হোসেন (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →