Main menu

বুক রিভিউ: মুহূর্তের ভিতর মুহূর্ত গইলা পড়ে

কেটাগরি: কবিতা
বইয়ের নাম: একটা পাখির গল্প একটা ঝাঁকের চেয়ে কত আলাদা
রাইটার: মাসিয়াত জাহিন
পেইজ: ৬৪
দাম: ১৫০ টাকা

কবিতা আমি কেমনে বুঝি? এইটা নিয়া আমি ভাবছি। ইন্ট্রোস্পেকশনের মত। আমি যে কিছু কবিতার সাথে এক ধরনের ইউনিফিকেশনের মত টের পাই আমার এক্সিস্টেন্সের সাথে, এইটা তো হয়। আবার কবিতা বা সাহিত্য, ইন জেনারেল, পড়ার ক্ষেত্রে, ক্রিটিকের ক্ষেত্রে আমার লিটারারি থিওরি, পোয়েটিক ডিভাইস, এইসব খুব মাথায় চলে তাও না। মানে, ওর কবিতা তো চিত্রকল্প নির্ভর, বা ছন্দ, অলংকার ইত্যাদি বিশয় আশয়, এমনে তো হয় না আমার। আমি দেখছি, কবিতারে আমি বোধের বাইরে থেকে বিচারই করতে পারি না। একটা সুইট স্পট আছে, সেই জায়গায় নক করতে হয়। কবিতা অবস্কিওর ফিলিংগুলারে কানেক্ট করতে পারতাছে কিনা এইটা আমার কবিতা বোঝাবুঝির কোর জায়গা খেয়াল করলাম। মানে কবিতা থিমেটিকালি পলিটিকাল, সোশাল, সাইকোলজিকাল যেইটাই হউক, আমার কনশাস ভাবনার লেয়ারগুলির নিচে চাপা পড়া, খুবই জ্যান্ত কিন্তু ভাশাহীন শিলাস্তর অব্দি ড্রিল করতে পারছে কি না, এইটা হইল আমার প্রধান বিবেচনা।

কেমনে বুঝির পর আরেকটা ডেডলক হইলো কী বুঝলাম। কবিতায় এইটা একটা ইশু। অনেক সময়ই, বিশেশ কইরা, কবিতার ক্ষেত্রে একটা কবিতা আমরা বুইঝা যাই পড়ার সাথে সাথে, কিন্তু বুঝাইতে গিয়া বিব্রত হইতে থাকি। কোন একটা ইমোশনাল-ইডিওলজিকাল হরাইজনরে ইনভোক করতে, ক্যাপচার করতে কবিতা যে ল্যাংগুয়েজ সিস্টেম নিয়া ডিল করে, সেইটা ওই পার্টিকুলার ওয়েতে ঘইটাই থাকে একটা পার্টিকুলার ইমোশনরে বুঝাইতে। আমি আমার নৈমিত্তিক ভাশা দিয়া যদি ওইটা এক্সপ্রেস করতে পারতামই তাইলে আর কবিতাটার দরকার হয় না। মানে কবিতাটাই বুঝাইতেছে ওইটা যা বুঝানোর জন্য লেখা হইছে। এর বাইরে অন্য কোনোভাবে বুঝাইতে গেলে একধরণের ট্রান্সফরমেশন ঘটবে যা কবিতাটার রিডিউসড এক্সপ্রেশনই হবে।

মাসিয়াত জাহিনের কবিতা নিয়া আলাপ করতে গিয়া এই দ্বিবিধ সংকট মনের ভেতর টের পাই। তারপর এইটার মিমাংসা দেখলাম এই টের পাওয়ার ভেতর আছে। মানে বোঝাবুঝির পরে আমাদের সামনে কতগুলা গেট যে আনলক হইল, সেইখান থেকে আমরা কিছু টের পাই। নতুন ধরনের উৎকন্ঠা? যা-ই হোক, মাসিয়াতের কবিতার লাইনেই কওয়া যায় প্রথমে ব্যাখ্যা দিয়া ভাল্লাগা উড়ায়া দেয়ার ধুমধাম চেষ্টা না কইরা, বরং টের পাওয়ার জায়গাটা নিয়া কথা বলা যাইতে পারে বৈ কি। কিন্তু তারপরও এইটা ব্যাখ্যাই- এক ধরনের অবিচার কবিতাগুলির প্রতি।

যে কোন উৎকৃষ্ট কবিতার মতই মাসিয়াত জাহিনের কবিতা সহজ এবং বিকল্পহীন। অর্থাৎ ওই কবিতাটা ছাড়া ওই কবিতাটা বোঝার বিকল্প কোন প্রনালি নাই এবং আপনি সাথে সাথে বুঝে যাবেন কবিতাটা। মাসিয়াতের কবিতা যা বলে, তা মুখ, বা, মস্তিষ্ক দিয়া বলে না। অনেক সময়ই মনে হয়, আঙ্গুলের ডগা হইতে সেই কথা বাইরইতেছে বা চুলের আগা বা কখনো হাতের রগ ফাইটা অথবা থাকে হাতের তালুতে/যখন আমার সংবেদন নাই। সুর কবিতার ফাষ্ট ছয় পংতি- তোমার ধমনীতে যত গানের ভিটা/ঠাই খুজতে আসছিলো ভিন্ন দুই পথ দিয়া//একটা সুরের মধ্যে হারায়ে তুমি,/গাথছো শব্দ অচেতনে, আর কখনো/শব্দাহত তুমি; তান খুজছো/সম্মোহনে।একটা ব্যথা শব্দগুলির সাথে এমনভাবে জড়ায়ে আছে, ইটস অলমোস্ট ফিজিকাল। মাসিয়াতের কবিতারা যে ইউনিভার্স ক্রিয়েট করে সেইখানে থমকাইতে থাকতে হয় চলতে চলতে। প্রতিটা মুহুর্তের এক ধরনের এক্সপ্যানশন ঘটে পরবর্তী মুহুর্তগুলাতে। এক ধরনের অবশাবস্থা আমরা দেখি, যেইটা অর্জিত হয় ইমেন্স পেইন টলারেন্সের ভেতর দিয়া। ফলে প্রতি মুহুর্তে পেইন ঘটতেছে। এবং আরও মুহুর্ত তথাপি আসতেছে। এই যে ওভারলেপিং এইটা ট্রাজিক। এইটা কোন রিলিফ দেয়না পেইন হইতে, বরং নর্মালাইজ করে টলারেন্স বাড়ানোর মধ্য দিয়া।

এবং এই যে পার্টিকুলার সাইকোলজিকাল ফিল্ডে এই কবিতাগুলি অপারেট করতেছে, সেইটা এক ধরনের পোস্ট এপোকেলিপ্টিক দুনিয়ার ইমেজ বয়ে নিয়ে বেড়াইতেছে। মাসিয়াতের ভোরগুলা দেখেন, ময়লা। ভোরগুলা কোন নতুনরে বলেনা, বলে একই ক্লান্তিকর, সুইসাইডবহুল, সময়ের কন্টিনিউয়েশনের কথা। ভোর কবিতার ছয় পংতি- চেয়ারটা এমন এক ক্লান্তিতে বসে—/পরিত্যক্ত এই ঘরের মাঝখানে/একটা ভগবানের মতোন;/বিগত অধিবাসীর ফেলে যাওয়া অসুখগন্ধ যায় নাই এখনও//চারিদিক রোশনাই করে মৃদুচালে আসতেছে ভোর,/ একটা চড়ুইয়ের ডিম এরমধ্যে ঘর থেকে মাটিতে পড়ে ফেটে গ্যালো— রোশনাই দেইখা খুশি হওয়ার জো নাই, চড়ুইয়ের মন খারাপ। নট ইওর রেগুলার ভোর। তারপর- একটা সাদা ঘোড়া পড়ে আছে মাটিতে/হঠাৎ দেখে চমকায় গেলাম? যেন মৃত/ একটা সাদা টেনিস বল../ সফেদ কাপড়?/ এভাবেই জীব কি পড়ে থাকে জড়ের উপর। একটা ডিস্টোপিয়ার মিস-অন-সিন! কেকোফোনাস মেডিটেশন।

যে পোয়েটিক ইউনিভার্সের ভেতর আমরা হাজির হই সেইখানে কবিতাগুলি আমাদের চোখের পেছনে ডিপলি পার্সোনাল হইতে ডিপলি পলিটিকাল হইতে থাকে। এই যে সাইকোলজিকাল হরর সেইটার পলিটিকাল নুয়ান্সগুলির একটা দিশা মাসিয়াতের কবিতায় স্পষ্ট। এইটা আমি টের পাই আমাদের পরবর্তী পলিটিকাল সংঘাত ঠিক কেমনে সাইকোলজিকাল থিয়েটারে ঘটতে যাইতেছে। মাসিয়াতও টের পায় কি?

জীবনের যা কিছু সুন্দর, তারে দেখার, দেখতে চাওয়ার একটা ডেসপারেশন আছে। সেইটা ডেসপারেশন। বৃষ্টি দেখা কবিতাটায় ‘অত্যগ্রভাবে’ তাকিয়ে বৃষ্টি দেখতেছে। কিন্তু এইটা, এই শুন্দর দৃশ্য একটা ইলাবোরেট নাইটমেয়ারেরই অংশ, তিনটা সাদাকালো কবুতর লাল পা যাদের, তাদের নাচ দেখে। হঠাত উইরা গেলে বৃষ্টির মুখের উপর জানলা আটকায় দেয়। কারণ দ্যাট র বৃষ্টি, জাস্ট প্লেইন বৃষ্টি দেখা উইদাউট দোজ কবুতর ড্যান্সিং ইন ইট, নেয়া যায় না। আবার ‘দেখা’ কবিতাতেও দেখি, দেখাগুলি কেমন ডিলেমাময়, অতৃপ্ত।

আলাদা কইরা সময়, গতি, ঘড়ি, ডুমার্স, প্রধানত চলা এই কবিতাগুলার দিকে তাকাইলে আমরা পলিটিকাল হিন্টগুলা খুইজা পাই। সময় কবিতাটাতে এক ধরনের এপিক এম্বিয়েন্স ক্রিয়েট হইতেছে। বড় রকমের পালাবদলের ডিপ রেজোনেন্স। ঘড়ি কবিতায় সময় সচেতনতার ব্যাপারে তীব্র অভিঘাত টের পাওয়া যায়। ডুমার্সের যে ক্রাইসিস, সব কিছু দেইখা ফেলার ক্রাইসিস, যেইটা কিনা একটা এবসোল্যুট মিনিংলেসনেসের ক্রাইসিস; দ্যাটস দা সাইন অফ এ ডুমার। খোচাগুলা চোখা ও পষ্ট- আম্মু/বেবি! ডুমার্স এবং একই সাথে একটা ইনফ্যান্টিলাইজড জেনারেশন। হল্ট কবিতাটায় এমন এক জাক্সটাপজিশন কবিতা আর বাস্তবের, এমন ডিস্টার্বিং, ফলে তীব্রভাবে হল্ট করতে বলে, এমনকি কবিতা লেখাও; কবিতা লেখাও?

কবিতার বইটার নাম একটা পাখির গল্প একটা ঝাকের চেয়ে কত আলাদা। প্রথম কবিতাটাই ডুমার্স। প্রথমেই একভাবে বুঝায়ে দিতেছে কি কি আমরা পড়তে যাইতেছি বইটাতে। তবে কি আমি মৃত- তারপরে হাটাবাবা কবিতাটার রেফারেন্স। ডাইরেক্ট। আলাদা কইরা কোন কাব্যিকতার দরকার নাই এই রেফারেন্স টানতে। একটা নতুন নেটওয়ার্ক অব রেফারেন্সের ভেতর নিজের বলাটা বইলা ফেলা। কবিতা তো এইটাই করে। ভণিতার দরকার নাই। কারণ আরও জরুরি কিছু বলতে হবে। এইটা একটা এবসোল্যুট মিনিংলেসনেসের ভেতর সকল জরুরি জিনিসের হারায়া যাওয়ার বয়ান। কেন হাটাবাবা হাটতে থাকে? সবকিছু দেখা শেশ তার। এই কবিতায় এক ধরনের প্রচ্ছন্ন বিলাপের ভেতর দিয়া কবি বিভিন্ন মাত্রায় তার বোধরে একসেনচুয়েট করতেছে।

‘ভোর’ কবিতাতে দেখতেছি এইটাও কোন প্রমিজ নিয়া শুরু হয় নাই, যেইটা যেকোনো ‘ভোর’ কবিতায় আমরা এক্সপেক্ট করতেই পারি। কিন্তু এই ভোর আটারলি হোপলেস। এটিপিকাল। সকল জড় ও জীবিত অনুষঙ্গ যেন মৃত্যু আর পচনের কোরাসে আছে। খুব গভীর সেনসিটিভিটি ছাড়া এই কোরাস টের পাওয়া যাবে না। সেই সেনসিটিভিটিরে রেন্ডার করতে নবজাতক, বাড়ন্ত কিশোর চলে আসছে। একটা এপিক এটমোস্ফিয়ার ক্রিয়েট হইতে দেখি আমরা পুরা বইটাতেই, যেন একটা ডিজেলপাঙ্ক দুনিয়ায় পুথিপাঠ।

যদি কোন একটা কবিতায় এই স্পিরিটটারে পুরামাত্রায় এনক্যাপসুলেট হইতে দেখি, সেইটা হইলো ‘সময়’। তিনটা ভাগে লেখা হইছে এইটা। খুবই মাইক্রোলেভেল অবজারভেশনের ভেতর দিয়া একটা হাইটেন্ড টেনশন ক্রিয়েট করছে। যেন পুরা দুইনা খুবই গ্র‍্যান্ড কিছু ঘটবার জন্য থাইমা আছে। মানুশের আঙুল দ্রুততর হইতেছে আবার ধীর।

পিপড়া আরেকটা ব্যাপার যেইটা মাঝে মাঝেই আসতেছে, ঘুরেফিরে। কারণ পিপড়া এক ধরনের সমাজচেতনা, প্রলেতারিয়ান রিয়েলিটিরে তুইলা ধরতে পারে সহজে, যেইটা মাসিয়াতের কবিতায় ডিপলি রুটেড। কিন্তু তাছাড়াও নবজাতক আর বাড়ন্ত কিশোরের মতই, পিপড়াও সূক্ষ্ম সংবেদনের পরিচায়ক- মৃত্তিকার নিচে হেটে যাচ্ছে নিঃসঙ্গ লাল পিপড়া।/ আর অন্যমনস্কতায় শুনছে গভীরতম জলের ন্যায় দুমদুম—/গম্ভীর/বিমর্ষ/অচল/অপ্রাসঙ্গিক/শব্দ—/মনুষ্যদলের।

দেখেন এইভাবে আমিই কবিতাগুলারে একটা সেন্ট্রাল থিমের ভেতর রিডিউস কইরা ফেলতেছি! বাট কবিতাগুলা সব সময়ই আরও বেশি কিছু বলতেছে, আরও বিস্তারিতভাবে বলতেছে, আরও কানেকশন তৈরি করতেছে তার শব্দগুলি দিয়া, তার গতাসু কাঠ আর মধুকূপী ঘাস দিয়া। আর আর কবিদের নিশানা আছে সেইখানে। সচেতন সক্রিয় জাল। যেমন যখন বলতেছে গোলাকার পৃথিবীর এই পথেই মানুশটা হাটতেছে, তখন জীবনানন্দ দাশরে ইনভোক করে কি না? তুমি কবিতার প্রেম? আছে। কিন্তু এগুলাই মাসিয়াতের কবিতা না। এগুলা অনেক কবিতায় আছে, থাকবে কিন্তু সেইসব কবিতা এই বিস্তারিত শব্দ আর রেফারেন্সের জাল ছাড়ায়ে মহৎ কোন উদবৃত্ত তৈরি করতে পারবে না, যেইটারে আমি বলতে চাই সত্তা। মানুশের সত্তা যেমন তার চোখনাকমুখমনসহই চোখনাকমুখমন এর অতিরিক্ত ক্রীড়া; মাসিয়াতের কবিতায় ওইটা আছে। যেকোনো ব্যাখ্যায় তার ঠাই পাওয়া মুশকিলই আসলে।

তবু সেই সত্তার নিজস্ব মর্ফোলজি বুঝতে গিয়া মনে হয়, মাসিয়াতের কবিতা ট্রাজিক। মডার্ন দুনিয়ার ব্যক্তিমানুশের এক্সপেন্সিভ ট্রাজেডি এইটা। প্রতিটা সেকেন্ড সে এই ট্রাজেডি ফিল করে। কিন্তু তারপর মনে করে এই ট্রাজেডি হইলো তার প্রগ্রেস। এক আত্মিক ইনার্শিয়া লইয়া শে ঘুরতে থাকে, শে মৃত টেনিস বল, গতাসু কাঠ। সাদা ঘোড়া। তার কাউরে দোশ দিতে ইচ্ছা করে, শে হারায় যাওয়াদের সাথে হারায়া যাইতে চায়, কেউ কারো হাত না ধইরা— আরো সংকীর্ণ স্থানে… আরো বিস্তীর্ণ স্থানে…

কবিতা লেখা সব সময়ই একটা ক্রাইসিসের ঘন্টা। কবিতার কোন কিছু যদি ইউনিভার্সালি পলিটিকাল হয় তবে, এইটাই। মাসিয়াতের কবিতা একটা প্রবল ঘন্টা। সেইখানে বিষন্নতার চেয়ে পেইন প্রকট। এই পেইনের সাথে জড়ায়ে আছে সকল পাপ ও পূণ্য অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের। মাসিয়াতের কবিতায় একটা সাধারণ অব্যয়ও(ও) তাই ইন্টেন্স। উৎকৃষ্ট কবিতায় শব্দের চিৎকার থাকতে পারে, কখনো কোন অপচয় থাকে না। বহু বহু শব্দ কোন কাজে আসে না বইলাই মানুশ কবিতা লেখে। তারপর লিখতেই থাকে। লিখতেই থাকুক। লিখতে লিখতে বাইচা থাক, মইরা যাক। আমরা তারপর বলবো, শি ডাইড ইন ফ্যান্টাস্টিক পেইন।

বইয়ের কয়েকটা কবিতা

ডুমার্স

তবে কি আমি মৃত
তবে কি ওই অনেকদিন আগে
হাঁটাবাবা কবিতাটা পড়ার পর পর
আমি মারা গেছিলাম

তবে কি এমনেই মানুষ মরে
হঠাত বন্ধ হয় কবিতা
বৃষ্টি ভাল লা গা
লজ্জ্বায় লা ল হয়া
তবে এমনেই মরে মানুষ
হঠাত হাঁটাবাবার হাঁটা কাটা বাটা
সব মিনিংলেস
লেস ফাকিং লেস লাগতে থাকা

পরদাদা কাকের চোখ কাটে
মুড়ির মত স্বপ্ন পোতায়
গাধার মত ভালোবাসা
অলস অলস গাধা গাধা

এভরিথিং ইজ সিনজোনড বেব!
তাই আমি আকাশও সিনজোন করেছি
কেমোনে হবে কবিতা বলো
বাতাস ও বিলাই খেয়ে ফেলেছে
খেয়ে মরে গিয়েছে পেট ফুলিয়ে

আহা।

ওর অস্তিত্ববাদ গেছে
অনস্তিত্ববাদ গেছে

বেবি আমাকে একটা স্লোগান দাও
রক্ত লাল! রক্ত লাল!

আমি কেন ঘুমে অসুখে বিসুখে
স্লোগান দিতে থাকি
এভরিথিং ইজ সিনজোনড বেব

আর সিনেমায় দেখি কাকের চোখ কাটা
ইজম না কোন আমি আম্মু
আমি তোমাকে তোমার আম্মুর মত ভালোবাসি
স্যুররিয়াল না আমি তো

কিন্তু স্বপ্নে দেখি কাকের চোখ কাটা
কাটা
কারণ আমার হাত কেটে বন্ধুরা
হাত
কেটে ছেড়েছে ছেড়ে গেছে?

আম্মু
বেবি!

এভরিথিং ইজ সিনজোনড বেব

ভোর

চেয়ারটা এমন এক ক্লান্তিতে বসে আছে—
পরিত্যক্ত এই ঘরের মাঝখানে
একটা ভগবানের মতোন;
বিগত অধিবাসীর ফেলে যাওয়া অসুখগন্ধ যায় নাই এখনও

চারিদিক রোশনাই করে মৃদুচালে আসতেছে ভোর,
একটা চড়ুইয়ের ডিম এরমধ্যে ঘর থেকে মাটিতে পড়ে ফেটে গ্যালো—

গোলাকার পৃথিবীর এই পথেই মানুষটা হাঁটতেছে

(এই দৃশ্যের মুখে গৃহিণী কাপড় মেলে দিতে দিতে ভাবলো তার বোহেমিয়ান স্বপ্নভঙ্গের কথা,
ঈর্ষান্বিত ঢুকে গ্যালো মাংসের গন্ধের মতো মাংসঢিপীতে;
ঈর্ষাও হারায় যায় পলকেই;
যেহেতু এখানে পিঁপড়ারা দলবেঁধে গান করলে খালি নবজাতকই আঁচ করতে পারে।

আর ওই যে বাড়ন্ত কিশোরের কাছে—
এ দৃশ্য নব বাতায়ন; আত্মার তল্লাটে ঝাপটা বাতাস।)

সূর্য নামক হারিকেন তার আঁচ বাড়াতে বাড়াতে পর্যায়ক্রমিক আলো ফেলতেছে মানুষটার উপর;
আর
উন্মোচিত হইতেছে সবকিছু—
আর
উন্মোচিত হইতেছে না কিছুই—
এই দৃশ্য দেখতে দেখতে
ওই চেয়ারটা নিজস্ব নাটবল্টু খুলে সচেতনভাবে নামতেছে অগ্যস্তযাত্রায়।

তার আগে
অন্তিম মুহূর্তব্যাপী হাওয়া বাতাসের জন্য
ব্যক্তিগত মহাকাল নিয়ে সে স্ফীত হয়,
হয় উদ্বাহু
কী নিদারুণ রসে—
কি সকাতর রসে—

ভোর;
ভোরের মতো মৃদুচালে আসে—

আসে।

সময়

১.
টিপে টিপে পড়তেছে বৃষ্টি—
জানলার গ্রিলে মাথা কাত কইরা একটা মানুষ
গ্রিলের উপর আঙুল দিয়া শব্দ করতেছে
ঠক—
ঠক—
ঠক—
এটা কি ব্যক্তিগত সেকেন্ডের কাঁটা নাকি?
সময় থাইমা গেলেও চলে
থামাথামির হিসাব রাখতে—?

সম্মুখে ধূসরের নানা প্রকার।
তীক্ষ্ম আলোর বিন্দু বেহায়া চোখের মতো জ্বলজ্বল করে;
গাছগুলারে প্রচুর ঘন কালোই মনে হয়— মাতালের মতো শরীর দোলায় এই বৃষ্টিতে,
তড়পানোর মতো লাগে।

পিছনে ছায়ার পরিবর্তন হইতেছে ক্রমাগত।

এই হারায় যাওয়ার ব্যাপারটাই— দ্যা অনলি ট্রুথ!

জ্যোৎস্নার আলো পড়লেও দেয়ালগুলা এমনই তো নকশা বানায়—
এখন যা বানাইতেছে সোডিয়ামের আলোতে।

এত অবাক হওয়ার কিছু নাই।
পৃথিবীর সব মানুষ নিজস্ব মৃতভাষায়ই কথা কয়।

২.
প্যারিসের দুইটা ভিন্ন রাস্তায় ধাঁধানো মূর্তির মত দাঁড়ায় আছে দুইটা লোক;
মরুভূমির অভিযাত্রীদের মধ্যে একটা দল সংগীত (সকলের সুপ্ত হাহাকারের মাতৃগর্ভ এমন) তৈয়ার করতেছে;

মুহূর্তের ভিতর মুহূর্ত গইলা পড়ে—

৩.
জানালার ধারে মানুষটার আঙুল দ্রুততর হইতেছে
আবার ধীর—
আরো ধীর—
নানারকম তালে বেতালে
সংগীত লাগতেছে এখন
ঠক
ঠক ঠক ঠক
ঠঠক
ঠক
ঠ……ক—।

সেকেন্ডের কাঁটা হইলো বোহেমিয়ানের হন্টনে প্রতি দশ কদম পর পর সচেতন পুলিশের মতন। লোকটার আশেপাশে দশ মাইলের ভিতর এদের স্বজাতিরা গণ আত্নহত্যার জন্য হাত ধইরা
গোল হয়া দাঁড়ায়।

প্রধানত: চলা

একটা গভীরতম বোধের অনুসন্ধানে
কতগুলো শব্দ হাতে নিয়ে যদি কবিতা বলে ডাকি
কিছু পুরনো বাক্য যেমন
“মানুষ ভালোবাসার কাঙ্গাল” বা “জীবে দয়া করো”
স্মিত হাসি দেবার জন্য নাকমুখ অনুসন্ধান করে।

আমরা কেউ নিজেদের বা বাক্যসমাজের হাসিকান্নার মানে বুঝতে পারি না
ঠিক কবে থেকে
সেই চিন্তা আমাদের মধ্যে খালি কয়েকজনকে শনশন বায়ুর মতো ঝাপটা দেয়
যখন বাকিরা পলিথিনের উপর দিয়ে চুমু খায়।

কারো তৃপ্তির হাসির মুখে আমরা নিতান্ত খাদ্য নিয়ে গেছি
আর সাইকেলের চাকার মত ঘুরতে ঘুরতে কোনদিকে চলছি তা খুব একটা ভাবার উপায় নাই।
সামুদ্রিক ঝড়ের মাঝে বসে স্থিরতার ওকালতিও করি না।

এখনো খেত থেকে ধান তুলি আমরা এবং
কবিতায় এক তীব্র অনুভূতি যোগানোর জন্য আত্মা নিংড়ে ফিরি।

নিজের জন্য করুণা বোধ করতে করতে
মানুষ থামে এ কথা ভুল; প্রধানতঃ চলা হয়।

চাঁদ বা তারা এর মধ্যে নিভে যাচ্ছে
ফ্লুরোসেন্ট বাতির তলে।

হতে পারে যে—
পৃথিবীর কেন্দ্রে বসে সত্যি কোন মায়েরা
আমাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে
আর আমরা ভাবছি সেখানে কেবল জ্বলন্ত-গলন্ত লাভা।

শরতের বাতাসে বসে
অজানা বিড়ালের সাথে ঘন্টাখানেক গল্প করে যে
তার জন্য আমি দশ রাত জেগে থাকবো।
আর মনোরাজ্যে কিছু দার্শনিক ঘুমিয়ে নেবে
বইয়ের আলমিরা পাকাপোক্ত করতে করতে।

পরিচয়

নিজ শরীরের ঘ্রাণ চিনতে বা চিনাইতে
যারে তুমি কইতে পারো ‘পরিচয়’
কোথাও স্থায়ী হইতে হয়।

আমি জাইগা থাকতে চাই একটা
বেবুনের সাথে এবং জংলার মধ্যেই।
কখনো শুধু অভিজ্ঞতার লোভে আমি
রওনা দেই সেখানে
যেখানে আমারে কেউ নিবে না
কেউ নিবে না।

আমি ঘরে থাইকা
ডাক্তার হইতে চাই নাই
কারণ আব্বা বলছিলো।
আর আব্বারে যে কেউ বলছিলো
এটা সে বোঝেও না।

আর আমি ঘর ছাড়লে
লাগে ডর
এমন ডর যে:
কেউ তো দেখতেছেও না
এই ঘর ছাড়া আর কান্নাকাটি।

তোমরা মনে করো যে নিজেরে
অদৃশ্য লাগা
খুব অস্থির ফিলিং
সুপারহিরো মার্কা।

কিন্তু,
নিজ শরীরের ঘ্রাণ চিনতে বা চিনাইতে
যারে তুমি কইতে পারো ‘পরিচয়’
কোথাও স্থায়ী হইতে হয়।

দোষ

১. ভয়ানক উঁচু স্থান থিকা পতন।
২. মসজিদের অজু করার জায়গায় গোসল করতেছিলাম। কাপড় ছিলো না। এক অপরিচিতের প্রবেশে হারায় যাওয়ার চেষ্টা করতেছিলাম। সারা জীবনের মত— আরো সংকীর্ণ স্থানে… আরো বিস্তীর্ণ স্থানে…
৩. বাপমা পাতলা অবলম্বনের উপর বাতাসে ভাইসা আছে; ঘরের সবচেয়ে ঘিঞ্জি জানলাটার বাইরে দিয়া।

আমি আবার অবিচ্ছিন্ন দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু করছি।
আর আমার কাউরে দোষ দিতে ইচ্ছা করে।

হল্ট

ভুল ছত্র সাজাই। ভুলগুলা ছাড়া পায়া ওয়ালটজ নাচে। ভাবরে ঠিক কতখানি সুপ্ত রাখলে কবিতা হবে বুঝতে না পাইরা পায়চারি করে শব্দ থেইকা ঊনআশি কদম দূরে। বারান্দা দিয়া আসা আলোর উৎস ফ্লুরোসেন্ট বাতি না সোডিয়াম? —এগুলা ভাইবা কি স্বপ্রদত্ত শাস্তি থেইকা রেহাই পামু নাকি? ছায়া তো আন্ধারেও নিজেরে বুইনাই রাখতেছে আম্মার উলের সোয়েটারে আফসোসের মতন। জানি এই মুহূর্তে আরো এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার ঘরে কেউ অন্ধকারেই ফিল করতেছে— কোজি— আর তাদের সবকিছু “হওয়া” থেইকা ঠিক দুই মিনিট, তিন শব্দ, দশ একক এক্যুরেসি আর বিশ একক দীর্ঘশ্বাস দূরে। কিন্তু এখন— এই মুহূর্তেই— এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার একটা ঘরে নিবিষ্ট “না হওয়ারা” পরম সত্য— সত্য—? আহা—

এই করুণতম বোধ একটা গুলিবিদ্ধ চড়ুইয়ের মতন তির্যক আকস্মিক গতিতে নৃত্যরত উচ্ছ্বল একটা ইস্তানবুলিয়ান তরুণীর মগজে আঘাত হানে। এমনে বাড়তে পারে বয়স। যখন আমরা সময় নিয়া বলদের মত অংক করি।
ভাই ও বোনেরা, এই বইলা বিদায় নিবো যে কালকে একটা শিশুরে দেখছি তারাগুলা গুড়া কইরা গিলা ফেলতে চাইতেছে—

বয়ামে
কিছুটা
জমায়া
রাইখা।

বইটা কিনতে পারেন বাছবিচার বুকসের ফেইসবুক পেইজ অথবা রকমারিডটকম থিকা।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →