Main menu

এডিটোরিয়াল: গনতন্ত্র হারাইয়া কি পাইলাম: ফেসিবাদ নাকি বাকশাল?

ফ্যাসিজম না কইয়া বাকশাল কওয়া দরকার এই দেশে। রক মনু এই কথা কইছেন আগে। তবে উনার কারনের লগে আমার কারনের ফারাক আছে। দুই কারনই শত্য। মনু কইতেছেন, বাকশাল দেশের দশের লগে কানেক্ট করানো ভালো, এই দেশে ওয়ান পার্টি ডিক্টেটরশিপের সিলসিলাটা ক্লিয়ার থাকে তাইলে। দেশি ভার্শনের লগে মানুশ কানেক্ট করবে শহজে। এছারাও বাকশালের ভেতরে যে ফেসিজমের বাইরেও এক প্রকার নন-আইডিয়ালিস্ট বাটপারি আছে, লুটপাটের মাফিয়া আছে এইটাও উনি কইতে চান। এগুলা ভুল না।

তবে বাকশাল কওয়া দরকার আরও একটা কারণে। বাকশাল কইলে এর এগেইনস্টে ডেমোক্রেসিরে লাগবে। ফ্যাসিজম কইলে নট নেসেসারিলি এর এগেইনস্টে ডেমোক্রেসিই লাগবে। ফেসিজম হইলো ওয়র্স্ট কাইন্ড অব শাশন, আদি ফেসিজম আমরা দেখি ডিক্টেটরের হাত ধইরাই হইছে। এবং কম্যুনিস্টরা হইলো এর প্রধান এনিমি। কম্যুনিস্টদেরও এইটা। বেলা চাও গানটা শুইনা থাকবেন অনেকে। এর লিরিক দেইখেন, ইটস এ কম্যুনিস্ট সং*- কমরেডদের বিদায় দিতেছে, ফ্যাসিস্টদের লগে লড়ার জন্য। ভেরি পইনিয়ান্ট এন্ড বিউটিফুল। তো কম্যুনিস্টদের কাছে ফেসিজমবিরোধিতা অপরিহার্যভাবে কোন গনতান্ত্রিক** লরাই না। বরং এইটা ব্যাড ডিক্টেটরের এগেইনস্টে, গুড ডিক্টেটরের লরাইও হইতে পারে। কিন্তু বাকশাল কইলে সমস্যাটা গণতন্ত্র আর অগনতন্ত্রের সমস্যা। এই কারনে বাকশালের পক্ষে সাফাই গাওয়া বামপক্ষের লোকজনও পাইবেন। শুধু পুরান বাম না, নতুন বাম-ও, ঢাকা মহানগর যুব ইউনিয়নের জনৈক সাবেক মাথা বঙ্গবন্ধুরে নিয়া লেখা উনার বইয়ের ফ্ল্যাপে কইতেছেন, বঙ্গবন্ধু এতটাই সেলফলেস ও সমাজতন্ত্রী ছিলেন যে বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক বাকশাল গঠনের সময় এমনকি নিজের দল আওয়ামী লীগরেও বিসর্জন দেন। বঙ্গবন্ধুর প্রশংসার বাইরেও বাকশালের প্রতি দরদটাও এইখানে প্রধান। এবং খেয়াল করবেন, নতুন বামদের অনেকে আওয়ামীফেসিস্টদের বাকশাল কইলে মন:ক্ষুন্ন হন।

কিন্তু গনতান্ত্রিকদের কাছে ভালো ওয়ান পার্টি সিস্টেম আর খারাপ ওয়ান পার্টি সিস্টেম প্রধান দ্বন্দ্ব না। কারন ‘ভালো’ ওয়ান পার্টির দ্বারা ‘ভালো’ কায়েমের জন্য***ও বড় বড় দাগে মানুশ খুনের ঘটনা ঘটছে। দরকার এমন একটা সিস্টেম, যেইখানে ভালোরেও তার শাশনের বৈধতারে নিয়মিত রিনিউ করতে হবে। কারন কেউ চাইলে ভাল কথা কইয়া কিন্তু খারাপ মতলব লইয়া সিস্টেমের টপে চইলা যাইতেই পারে, তখন যেন তারে সিস্টেম মোতাবেক পাবলিক পাওয়ার হইতে নামাইতে পারে সেইটাও ইম্পর্টেন্ট ডেমোক্রেটিকদের জন্য। অর্থাৎ পাবলিকেরে পলিটিকালি এমপাওয়ার করা।

এখন কথা হইলো, অন্য দেশে ডেমোক্র্যাটরাও ফেসিস্ট কয়। ওইসব দেশে এইটা যতটা না বড় সমস্যা আমাদের দেশে তার চেয়ে প্রকট। ইউরোপ এমেরিকায় সোশালিস্ট কম্যুনিস্ট লেফটিস্ট যারা আছে তারাও স্টঞ্চ ডেমোক্র‍্যাট। পাবলিকের ভোট চইলা গেলে প্রথম কনসার্ন হইলো ভোট নিয়া কথা কওয়া। স্ট্যালিন, সেতুং, এমনকি লেনিন লইয়াও ক্রিটিক আছে। চমস্কি লেনিনরে তো এমনকি ডানপন্থিই কইতে চান, মানে সোশালিস্টই না। বই আর লেকচার আছে উনার। আর আমাদের এইখানে কয়েক বছর আগেও স্ট্যালিনরে উপহাস কইরা নাটক বানানোয় একটা বাম দল বিক্ষোভ মিছিল করে। শেইখানে লেনিনরে নিয়া কওয়ার তো প্রশ্নই নাই।

এইটার লগে আরেকটা জিনিস হইলো এইখানে আওয়ামী লীগরে ফেসিস্ট কইতেছে ঠিকই, কিন্তু ফেসিস্টদের ফল করার কোন নিকট বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হইলেই ফেসিস্টবিরোধি যে গনতান্ত্রিক চক্র আছে তাদের নিয়া ক্রিটিক শুরু করে। যেমন, শ্রদ্ধেয় ফরহাদ মজহারকে দেখবেন, ইলেকশনের আগে আগে কইতেছে, ভোট দিয়া কি হয়! এমন আরও কিছু নতুন বামকর্মীদের লেখাও আছে, ওই সময়ের।এরা ফেসিস্ট কওয়ার ভেতর দিয়া আসলে যতটা না ফেসিজমের বিরোধিতা করে, তার চেয়ে বেশি ফেসিস্টবিরোধি অন্য পক্ষগুলিরে গৌণ হিশাবে দেখাইতে চায়, এবং নিজেদের প্রধান হিসাবে টিকায়ে রাখে। ফেসিজমবিরোধী অন্য পক্ষগুলিরে অবান্তর করা হইলো এদের পলিটিক্সের নেসেসারি স্টেপ, যাতে ফাইনালি ফল করলে, ভালো ওয়ান পার্টি হিসাবে তাদের কোন বিকল্প না থাকে। এইটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো কথা না। কারন আবার আরেকটা দখলের শাশনের ভেতরই ঢুকতে হয় এতে কইরা।

এইখানে ইশু বাম দলগুলা না। টেন্ডেন্সিটা হইলো বিবেচ্য। এখন এই যে বিএনপিও ফেসিস্ট কয় এই রেজিমরে, তাতে বিএনপিও একইরকমভাবে নিজেদের ভালো ওয়ান পার্টি হিসাবে তুইলা ধরতে চাওয়ার খায়েশ আমাদের ধইরা নিতে হবে। সতর্কতাশরুপ। বিএনপিরে আমরা গ্রেস দিই এর শক্ত পাবলিক সাপোর্টের কারনে। কিন্তু ভোট ছাড়া, পাবলিকের কনসেন্ট ছাড়া বছরের পর বছর ক্ষমতায় যে-ই থাকুক সে-ই সমস্যা। আওয়ামী, বিএনপি আর বাম, ডান নাই এর। এবং বাকশালের বিরুদ্ধে দরকার গণতান্ত্রিক বিপ্লব, অর্থাৎ ক্ষমতা দখলের বিপ্লব না( ইরানি ইসলামিক রেভ্যুলুশুন বা লেনিনিস্ট, কাস্ত্রোইস্ট রেভ্যুলুশন না), দরকার একটা ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন আয়োজনের বিপ্লব। বাংলাদেশে বাকশালবিরোধিতার ভেতর সেই আশা ও সম্ভাবনা আছে। একবার এট লিস্ট ইলেক্টোরাল ডেমোক্রেসিটা কায়েম হইলে তখন ফেসিজমবিরোধিতাও দরকারি পলিটিক্স। কারণ ইলেকশন হইলো ডেমোক্রেসির মিনিমাম চাহিদা, ডেমোক্রেসি এইটার উপরে বিল্ড করতে হয়, নতুবা ফেসিস্ট গোশঠি ইলেকশনের ভেতর দিয়া ক্ষমতায় থাকতে পারে এবং তাতে ডেমোক্রেসির কোন শ্রিবৃদ্ধি ঘটে না। তখন ফেসিজমবিরোধিতাও দরকার হইতে পারে; কিন্তু যখন ইলেকশনই নাই তখন একটা বাকশালি পরিস্থিতিতে ফেসিজমবিরোধিতা অভিশন্ধিমূলক। রক মনুর লগে এইখানে একটু বোধয় দ্বিমত আমার, উনি সব সময়ই বাকশাল কইতে চান। বাকশাল যেইটা সেইটা সব সময়ই বাকশাল, কিন্তু আল্ট্রা-নেশনালিস্ট, রেসিস্ট পলিটিক্স একটা হাফ-এসড ডেমোক্রেসিতে থ্রাইভ করতে পারে। বাকশাল কইলে তারে এটাক করা যায়না বড় একটা।

*কম্যুনিস্ট সং কইতে লিরিকে সরাসরি ওয়ার্ডগুলি আছে, সেই হিসাবে কইলাম। এমনি এই গানের ইউনিভার্সেল আবেদন আছেই।

**গণতান্ত্রিক তো সবাইই নিজেদের কয়। এমনকি বড় ডিক্টেটররা নিজেরে আরও বড় ডেমোক্রেটিক মনে করে। যেমন আইয়ুব খান তার শাসনরে কইত ‘মৌলিক গণতন্ত্র’. মানে গণতন্ত্র তো বটেই, ওইটাই মৌলিক। বা তাহেরেরা রাখঢাক না রাইখাই একনায়কত্বের দিকে আগাইতেছিল, তাহেরের ভাই যেইটারে কইতে চায় ‘গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব’। কিন্তু ওগুলি যে গণতন্ত্র না, এইটুক তো মানতে পারছি আমরা, যেমন হিটলারের সমাজতান্ত্রিক দল যে সমাজতান্ত্রিক ছিল না, তা মানতে পারি এখন।

***অনেকে কইতে চায় যে, বিশেশ কইরা উত্তরাধুনিক চক্র, দুনিয়ায় সব খারাপই হইছে ভালোর নাম কইরা। এইটা ট্রু না। ভালোর নাম কইরা হইলেও সেই ভালোর ব্যাপারে কনসেনসাস ছিলো না, এমনকি আতেল সমাজেও। এমেরিকা নেটিভ এমেরিকানদের লগে যা করছে বা, হিটলার যা করছে ইহুদিগো লগে, এগুলা তখনই সবাই জানত যে খারাপ নিয়তের কাম। কিন্তু লেনিন যা করছে, চেকা আর গুলাগ(অফিসিয়াল নাম না) বানাইয়া, দুনিয়ায় সাম্য আর শোশন হইতে মুক্তির ব্যাপারে, সেই নিয়তের ব্যাপারে সবাই একমত যে এইটা দরকার, এইটা ভালো। কিন্তু তরিকায় মতভেদ আছে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →