এডিটোরিয়াল: ‘উইন্টার ইজ কামিং’
একটা মাকড়শা তার বাচ্চাদের গুতা দিতেছে বারবার, বাচ্চাগুলার তুমুল খিদা, তবু শুরুতে মশকরাই ভাবলো বুঝি! কিন্তু মা মাকড়শা থামে না, আরো জোরে থাপ্পড় দিতে থাকে, ব্যথা পায় বাচ্চাগুলা–এমন চলতে চলতে বাচ্চাগুলার ভিতর কিলার ইন্সটিংকট জাইগা ওঠে, তারা শবাই তখন এক লগে ঝাপাইয়া পড়ে মায়ের উপর, মায়ের গতর ফুটা কইরা ঢুইকা জায় ভিতরে, বেশুমার ব্যথা লইয়া মরতে থাকে মা–ছুইছাইডেও ব্যথা তো লাগে… পালায় না, মারার চেশ্টাও করে না বাচ্চাদের, নিজেরে খাওয়াইয়া ফেলে পুরা… এই বাচ্চাদের পয়লা শিকার তাহাদের মা, শিকারের ছবক পাইলো এইভাবে, এখন থিকা পারবে নারাজ শিকার ধরতেও! মাকে খাইয়া ফেলা তাই জরুর দরকারি ছবক ঐ বাচ্চাগুলার।
মাকে খাইয়া ফেলার পরে ভরপেট বাচ্চাগুলার কেমন লাগতেছে? জানি না আমি 🙁 !
তবে জানি, মানুশের ইতিহাশে অমন ঘটনা ততো ঠিক না ঘটলেও কতগুলা ঘটনারে ঐভাবে কদ্দুর বুঝতে পারি হয়তো!
পুরাতনের লগে নতুনের একটা নেছেছারি জুদ্ধ হয় পেরায়ই, পুরাতন জদি খুব নাছোড় হয়, আকড়ে থাকতে চায়, পেরায়ই ভায়োলেন্স হয় তখন! বাদশাহি মছনদ লইয়া অমন কায়কারবার ইতিহাশে বেশুমার আছে। কিন্তু পুরাতন জদি ছাড়তে রাজি হয়, খুবই পিরিতির ভিতর দিয়া, পিছফুল দরদি তরিকায় ঘটনাগুলা ঘটতে পারে। ইতিহাশে ডেমোক্রেছি খুব শম্ভব এই অর্থে টেরান্জিশনকে পিছফুল করার একটা কায়দা।
তো, এই আলাপটা পাড়ছি দুয়েকদিনের ভিতর ঘটতে জাওয়া একটা জলশা/মশলিশের ব্যাপারে। ভাববৈঠকি-১৩ নামে ঐ মজলিশ বশবে ঢাকার পরিবাগে, শেইখানে ভাশার ব্যাপারে অনেক আলাপ হবে।
ইতিহাশের এমন একটা টাইমে এমন একটা মজলিশের জরুরত কেমনে ঘটলো, শেইটাই ভাবতেছিলাম এবং শেই ভাবনার শুরুতেই পেরায় বেহুদা ঐ কথাগুলা পেশ করলাম!
গত কয় বছরে বাংলা ভাশা লেখা এবং বুলিতে এমন একটা দশায় হাজির হইছে জেইখানে কোন বাংলাটা পুরাতন, কোন খোশাটা ছাইড়া বাইরায়া জাইতেছে শাপটা, শেইটা বেশ কিলিয়ার হইয়া উঠছে! ছোশাল মিডিয়া থিকা নাটক-ছিনামা-গান, এফএম রেডিও, তরজমা থিকা অরিজিনাল ফিকশন-কেচ্ছা-কাহিনি, ইতিহাশ-রাজনিতি-ভাবের আলাপ–শবখানেই বোরিং একটা পুরাতন বাংলার ছেন্স পয়দা হইছে, হালের জেনারেশন তাদের বলনে-লেখনে [এরা হয়তো ইংরাজি মিডিয়ামে পড়ে, তাই কেলাছিক বাংলা কেতাবের বদলে বাংলাটা শিখতেছে ডাইরেক শমাজ থিকা] একটা নয়া বাংলা পেশ করতেছে, জেইটা আশলে নয়া না, ডাইরেক শমাজ থিকা লওয়া, কলোনিয়াল কলিকাতার ছিলছিলার বাইরের একটা বাংলা, জেইটা রাধারমন-চন্ডিদাশ-হাছন রাজা-শা আবদুল করিম-মোমেনশাহি গিতের ভাব আর ভংগিমার কাছের একটা বাংলা!
এতে কেলাছিকের আরাম হারাম হইয়া গেছে, তারা নয়া বাংলার এই ফর্মেশনের দশার নাম দিছে এনার্কি! ঐ এনার্কি ঠেকাইতে আমাদের বাহানা পার্লামেন্টে আইন পাশ করার চেশ্টার কথাও শুনছি আমরা!
ভাশার ব্যাপারে ডাইরেক জবরদস্তি চালানো তো খুব কঠিন, তাই ওনারা এখন একটা কালচারাল রিভাইভালের টেরাই করতেছে এবং তারই আলামত হিশাবে আমরা ঐ জলশা/মজলিশকে পাইতেছি।
তাইলে ঐটা একটা কনজার্ভেশন পোজেক্ট, ফরহাদ মজহারের বিজভান্ডারের আদলে একটা ভাশাভান্ডার পয়দা হইতেছে; ডিফরেন্সটা হইলো এই জে, বিজভান্ডার হইলো দেশি-বিদেশি পাওয়ারের জবাব দেবার কোশেশ, আর ভাশাভান্ডার হইতেছে আমজনতার ডেমোক্রেটিক ইমার্জেন্সকে এনার্কি হিশাবে দেইখা তারে ঠেকাইয়া দেবার ধুরন্ধর বান! তবে একটা বাহানা আছে, শেইটা হইলো, একোমোডেট করবার বাহানা, নিজেরে কতোটা ঢিলা কইরা দিলে ছার্ভাইভ করা জাবে, শেইটা বুইঝা একটা বাকশাল পয়দা করা– রিয়াল অপোজিশনকে খুন কইরা কিছু ফেইক অপোজিশন বানাইয়া নিজের ভিতর তাদের জাহির করতে থাকা, তাদের দেখাইয়া নিজেরে ফেলেক্সিবল লিবারাল হিসাবে দাবি করার তরিকা! একটা রিভল্ট, একটা হুলাহুলি খাইয়া ফেলার নজিরগুলা ইতিহাশে অমনই হয়।
এখন, ঐ মজলিশে হাজির পছিবল অপোজিশন জে ফেইক, এইটা বুঝবেন কেমনে? খুবই কিলিয়ার একটা নিশানা আছে, এবং শেইটা হইলো, ঐখানের শকল বয়াতি এক প্যাট্রিয়ার্কের ওয়ারিশ হিশাবে নিজেরে মানে, এবং শেই প্যাট্রিয়ার্কের নাম রঠা।
মানে হইলো, ডেমোক্রেটিক ইমার্জেন্সের ভিতর দিয়া জেই বাংলার ফর্মেশন ঘটতেছে, শেইখানে কেউ কেউ তো রঠারে বেহুদাও ভাবতে পারে বা কলিকাতার পুলক বানার্জির মতো ছেরেফ একজন লিরিছিস্ট ভাবতে পারে; কিন্তু তাতে তো রঠারে বাংলার প্যাট্রিয়ার্ক ভাবার উপায় থাকে না! ওনাদের রঠা আর পুলকের ফারাক হইলো, আব্রাহাম আর নেতানিয়াহুর ফারাকের মতোই মস্ত!
এদিকে, আমরা জদি ভাবি, প্যাট্রিয়ার্ক হিশাবে রঠারে লইবার ফায়দা কি? ফায়দা হইলো–কতগুলা মানুশ, জারা নিজেরা শবাই রাইটার, রঠার এছথেটিক বাছুর, তাদের রিডেবল থাকতে থাকা!
মানে ভাবেন; ঐ মজলিশের হজরত ফরহাদ মজহার থিকা হজরত মোহাম্মদ আজম বা হজরত জাভেদ হুসেন জিন্দেগিতে কতো কি লেইখা ফেলছেন, কেতাব ছাপাইছেন, শেই শবই তো তাহাদের কেপিটাল; শেই কেপিটাল হারাইয়া ফেলবার রাস্তায় কি ওনারা হাটবেন? নয়া বাংলার রিডারদের কাছে ঐগুলা জদি আর রিডেবল না থাকে, ‘প্রাত্যহিক উত্তুঙ্গ বিহ্বলতা’ টাইপের শব্দেরা জদি হালের এবং আগামির জেনারেশন উচ্চারনই করতে না পারে, ওনাদের শেই মরন কেন চাইবেন ওনারা! উপায় কি তাইলে? শেই উপায়ের নামই রঠা। রঠাকে রিডেবল রাখতে পারাই ওনাদের রিডেবল থাকতে পারা। রঠার ভাশার এছথেটিক পেরাকটিছ বহাল রাখার রাজনিতিটা তাই ওনাদের করতেই হয়, নাইলে নিজেরে তরজমা কইরা কাটাইয়া দিতে হবে বাকি জিন্দেগি!
আন্দাজ করি, রঠার আরেকটা ফায়দা ওনারা/অনেকেই পেশ করবেন–একটা গর্বের পাস্ট রাখার নেশনালিস্ট তাগাদা। কিন্তু ইতিহাশ তো অমনে হাটে না পেরায়ই, জাতি থিকা বাইরায়া জায় জাতি, নয়া নয়া জাতি হয়, গর্বের পাস্টের মায়া উতরাইয়া হাটতে থাকে নয়া, বানাইয়া লইতে থাকে, শুরু থিকা শুরু করার আফছোস থাকে না মনে! পেমের কারনে জাতি-কুল-মান ছাড়ে তো মানুশ, অতো ঘটাইতে হয় না, পেম জিনিশটা এমনই এক পেরেশানি, শে ঘটাইয়া দিতে থাকে!
পুরানা তাই মরে, কখনো পিছফুলি, কখনো ঐ মা মাকড়শার মতো–একটা বাশনার ভায়োলেন্স, কখনো বা জুদ্ধের ভিতর দিয়া। জনমের পরেই দুনিয়ায় শবচে নর্মাল ঘটনার নাম মরন! কালিদাশ মরছেন, তবু দরিয়ায় ঘোরে জেলিফিশ। বেকার হয় নাই কোন মেঘ, আমরা কতো কতো নাইয়া নিতেছি তাহাদের বেনোনা মুতে!
তবু আমি শেই বাচ্চা মাকড়শাদের কথা ভাবি, মাত্রই মাকে খাইয়া ভরপেটে তারা কি মন খারাপ করে, শরমিন্দা চুপচাপ বইশা আছে, নিজের ভাইবোনেরাই আজকে খুব জেন বেগানা কতোগুলা পোলা আর মাইয়া! তাহাদের না হোক, আমার হয়! বেদনা জাগে মনে, ছেনেহ করবার পেরেশানি হইতে থাকে, মায়া লাগে…
ওনারাও মা মাকড়শা না, আমরাও মাকড়শার বাচ্চা না, তবু কনজার্ভেশন পোজেক্ট চলতে চলতে মরতে থাকবেন ওনারা, কেউই খাইয়া ফেলবে না ওনাদের, ছেরেফ একটা নয়া পয়দা হইতে থাকবে, বড়ো হইয়া হইয়া ভইরা ফেলবে শকল ময়দান… শিত আশে দুনিয়ায়, পাতা ঝড়ে…
#রকমশাহেরবয়ান
১৪ ফেবরুয়ারি ২০২৪
রক মনু
Latest posts by রক মনু (see all)
- এডিটোরিয়াল: ‘উইন্টার ইজ কামিং’ - মার্চ 10, 2024
- ফিকশন: দোস্তি - এপ্রিল 4, 2023
- রাজনিতির দাগ খতিয়ান: বাকশাল-দুছরা বিপ্লব এবং তার পর - ডিসেম্বর 5, 2022