Main menu

পোস্ট লিবারেশন ওয়ার বাংলাদেশ আর কতগুলা বান্দর Featured

এবং যখন শহীদুল জহিরের মুখের দিকে দেখি বইটা নিয়ে অনেককে আলোচনা করতে দেখি, দেখি এদের মধ্যে মোটামুটি সবাই বইয়ের ভুয়সী প্রশংসা করলেও কন্টেন্টকে পুরাপুরি উপেক্ষা করে যায়। এর অজুহাত হিসাবে তারা দেয় হয়তো তারা বইটা বুঝছে, হয়তো বুঝে নাই। তাই তারা তখন ভাবে বই যেহেতু তারা বুঝে নাই, খালি গল্পে কিছু আজিব আজিব ব্যাপার আছে, যেটা তাদের ভালোলাগছে, তাই তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসে জহিরের প্রশংসা করে মুখে ফ্যানা তুইলা ফালায়।

আমিও হয়তো বইটা বুঝছি, হয়তো বুঝি নাই। লেখনী হয়তো আমারও ভালোলাগছে, অথবা লাগে নাই। কে বলতে পারে, এই আলোচনা পুরাটাই হয়তো জহিরকে নিয়া এস্থেটিক পাঠকমহলের প্রিটেনশনের অংশ। কিন্তু বইটা পড়ে আমি অনেকগুলা জিনিস খেয়াল করছি। হয়তো, জহির যেই সুক্ষ্ম খোঁচাটা বইয়ের মাধ্যমে দিতে চাইছেন, সেটা আমি কিছুটা হলেও ধরতে পারছি, হয়তো পারি নাই। কিন্তু বলাতে তো দোষ নাই, তাই আমি বলে ফেলার স্পর্ধা করতেই পারি।

চানমিয়ার মাদি বান্দরের দুধ খাওয়া থেকে শুরু করে খরকোসের খাঁচায় আটকে থাকার মার্কেসীয় ধাঁচের গল্পটা আমাকে অনেকদিন মোহাচ্ছন্ন করে রাখছে। না রাখার কোনো কারন নাই; জাদুবস্তবতারে আমি অলস লেখকদের টেকনিক হিসাবে ধরলেও জাদুবস্তব সাহিত্য পড়তে আমি ভালোবাসি, গল্পে রস থাকলে আমার ভালোলাগে। জহির বাংলাদেশি সাহিত্যে ল্যাটিন আমেরিকান জাদুবাস্তবতার আমদানি করছেন, এটা আমার জানা ছিল।

কিন্তু জহিরকে অনেকদিন ফালায় রাখছিলাম এই ভাইবা, যে জহির হয়তো বাংলাদেশের তথাকথিত সেই প্রখ্যাত সাহিত্যিক গোষ্ঠীর মতই তাদের আষাঢ়ে গল্পরে গ্রহনযোগ্য করতে জাদুবাস্তবতার নাম দিয়া চালায় দেয়, অথবা দেয় না। কিন্তু পড়ার পর দেখলাম, তাঁর জাদুবাস্তবতা খুব সাট্ল, বুঝা যায় কিছু একটা হইতেছে, কিছু একটা গলদ আছে, কিন্তু কী গলদ আছে তাই বলা যায় না। তার গল্পে সবকিছু plausible, হইতে পারে, আবার নাও হইতে পারে। বাস্তবে না ঘটাই বেশি স্বাভবিক। এমন না যে ওইসব হইতেই পারে না, আজাইরা জাদুবস্তবতার মতো কোনো কার্পেট আকাশে ওড়ে না বা কাটা মাথা কথা কয় না।

আমার মনে হয়, জহির গল্পে যেহেতু চানমিয়ার জন্মতারিখ দিছেন ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, এইখানে রুশদীর মিডনাইটস চিলড্রেনের মত একটা খেলা তিনি দেখাইতে চাইছেন। তিনি হয়তো চানমিয়ারে বাংলাদেশের প্রতীক হিসাবে দাড়া করাইছেন, যে আবার হইলো কালার ব্লাইন্ড। সে লাল আর সবুজ রঙে পৃথকীকরণ করতে পারে না। এই জায়গাটায় গিয়া জহিরের চিন্তাশক্তির প্রতি আমাদের একটা শ্রদ্ধা জন্মায়, কারন আমরা আবিষ্কার করি লাল এবং সবুজ, এই দুইটা হলো বাংলাদেশের পতাকার রঙ।

বাংলাদেশের প্রতীক হইয়াও বাংলাদেশের পতাকার দুইটা রঙ সে চক্ষে দেখে না, তার কাছে সব ধূসর। সে বড় হইসে বান্দরের কোলে, বান্দরের দুধ খাইয়া, বান্দরেরা তারে নিয়ে খেলে, বান্দরের তার জীবন নষ্ট কইরা দেয়, আর চানমিয়ার মা খৈমনের তা চায়া চায়া দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। বান্দরেরা তার পোলার লগে এমুন করে ক্যান? ক্যালা? জুলির ভাষায় বললে, হোয়াই?!

জহির হয়তো বোঝাইতে চাইছেন বাংলাদেশ বড় হইসে কতগুলা বান্দরের হাতে।

এইটুকু বইলা হয়তো আমরা বেশি জেনারালাইজ করে ফেললাম, গল্পের অনেক শাখা প্রশাখা আছে, গাড়ি চুরি আছে, কলা আছে, আরো কত কী। কিন্তু আমরা বইটার আদ্যোপান্ত ব্যখা করতে বসি নাই। তাই আমি খরকোসের কথা না বইলাই ক্ষান্তি দিব। খরকোস নিয়া আমি এখনো ভাবতেছি, আরো ভাবতে থাকব, ভাবতেই থাকব। ভাবা শেষ হইলে একসময় হয়তো আলোচনা করব, হয়তো করবনা।

এই লেখাটুকুর আরেকটা উদ্দেশ্য আছে, জহিরের চিন্তাশক্তিতে বিভোর হইলেও, তার বাক্যে এবং গল্পে চমক থাকলেও, খুব সহজেই যে তার লেখা নকল করা যায়, তাই বুঝাইতে চাইলাম। কয়েকটা শব্দের পুন:পুন: ব্যবহারকে, আর লম্বা দোষে দুষ্ট বাক্য, ইংরেজিতে যাকে বলে run on sentence যে অত মুগ্ধ হবার কিছু, তা কিন্তু না। আবার স্পেসিফিকালি এই বইতে জহিরের অতিরিক্ত মার্কেস-নির্ভরতাও অনেক সময় দৃষ্টিকটূ। ভুল বুঝবেন না, জহিরের লেখার যথেষ্ট ভক্ত আমি হয়েছি, কিন্তু দেবতাতুল্য লেখক মানতে আমি রাজি না, যেমনটা বর্তমানে অনেকে মানেন।

The following two tabs change content below.
Avatar photo

স্পন্দন তাহসান

শিক্ষার্থী, লেখক, অনুবাদক।
Avatar photo

Latest posts by স্পন্দন তাহসান (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →