Main menu

“খাশ বাংলা” বই নিয়া – কে এম রাকিব, ইব্রাকর ঝিল্লী

[বাছবিচার বুকস থিকা রক মনু’র “খাশ বাংলা” নামে একটা বই ছাপাইতে যাইতেছি আমরা। বইটা নিয়া লেখছেন কে এম রাকিব এবং ইব্রাকর ঝিল্লী। যেহেতু একই বই নিয়া দুইটা লেখা, এই কারনে লেখা দুইটা একটা জায়গায় রাখা হইলো; যদিও দু্‌ইজনের বিবেচনা আলাদা আলাদা ঘটনাই।]

কে এম রাকিব
অন খাশ বাংলার ছিলছিলা

শুরুতে ১টা ডিসক্লেইমার দিয়া নিই।

আমার তরফে এইখানে ফাকিবাজি আছে। ১টা বই সম্পর্কে লিখতেছি অথচ পুরা পান্ডুলিপি/বইটা পড়ি নাই। যদিও ভাষা নিয়া রক মনু ভাইয়ের ভাবনার সাথে আমার পরিচয় আছে আর বইয়ের ক১টা লেখাও আগে পড়ছি, কিন্তু বইয়ে তা ক্যামনে আছে জানি না। আবার পুরা বই পড়ার মতো অবস্থায়ও নাই এখন। নানান ঝামেলা ও ব্যস্ততায় আটকায়ে আছি। ফলে সেই আগের পড়া এবং সদ্য খালি বইয়ের টাইটেল লেখা খাশ বাংলার ছিলছিলা পড়ার ভিত্তিতে এইখানে ক১টা মন্তব্য করি।

বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড বাংলা ভাষা কেমন হওয়া উচিৎ? —এই প্রশ্নের উত্তরে বাহাসের বয়স কম না। দরকারি আলাপ হইছে অবশ্য কম। আর এখনও পর্যন্ত এই বিবাদের মীমাংসা হয় নাই। প্রমিত বাংলা দুনিয়ার সকল ভাষার মধ্যে সবচাইতে জনবিচ্ছিন্ন ভাষা। এই জনবিচ্ছিন্নতার কথাও কারও অজানা না। লিঙ্গুয়িস্টিক সার্ভে অভ ইন্ডিয়া বা এলএসআইত’তে সেই ১৯০৩ সালে জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন প্রমিত বাংলা সম্পর্কে লিখছেন, ‘স্ট্যান্ডার্ড লিখিত বাংলা হইতেছে সবচাইতে অদ্ভুতুড়ে ভাষা; আমার বিশ্বাস, এইরকম অদ্ভুত জিনিস দুনিয়াতে আর ১টাও নাই। … যেখানে লিখিত রূপ সংস্কৃতের কপি করতে চায় কিন্তু উচ্চারণ করে বাংলার মতো। লেখে, লক্ষ্মী (লাক্সমি) কিন্তু উচ্চারণ করে লখখি।’ চালু থাকা প্রমিত বা মানভাষায় জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা ও ভঙ্গির জায়গা তো হয়ই নাই, উলটা আমের বুলি বুলিড হইছে। আমের জবান ও ভঙ্গি ক্লাস হেইট্রেড ও ডেমোনাইজেশনের শিকার হইছে, হইতেছে।

ভাষা-ভাবুকদের এইগুলা জানা কথা। প্রশ্নটা হইতেছে, বাংলাদেশে প্রমিতের চেহারা কেমন হবে? কিভাবে হবে। এই বিবাদ দেশে এখনও চলমান আর নানা রকম প্রস্তাবও আছে। রক মনুর খাশ বাংলার ছিলছিলা এই ধারার নতুন সংযোজন এবং সম্ভবত সবচে দরকারি ও র‍্যাডিকেল প্রস্তাব।

স্ট্যান্ডার্ড ভাষায় সাধারণত, বেশিরভাগ লোকের বাকভঙ্গির অলিখিত নিয়ম-কানুনরে, মানে ভাষার মৌল-প্রবণতাগুলারে শনাক্ত করে, সেগুলা আমলে নিয়া স্ট্যান্ডার্ড প্রস্তাব করা হয়। রক মনুর খাশ বাংলার ছিলছিলা বাংলার এই মৌল প্রবণতারে বলতেছে ‘খাশ বাংলার কানুন’, গ্রুদেব এরে বলছেন ‘প্রাকৃত বাংলা’। তবে মনুর প্রাকৃত বাংলা, গ্রুদেবের প্রাকৃত বাংলা থেকে বহুদূরে।

তাহলে, রক মনুর বিচারে খাশ বাংলা কেমন? সেই খাশ বাংলার স্বভাব-চরিত্র কেমন? বর্তমানে চালু থাকা প্রমিত থেকে সেইটা কতখানি দূরে? উত্তরে তার টাইটেল প্রবন্ধ লেখা থেকেই ২টা লম্বা উদ্ধৃতি দিতেছি।

‘বাংগালি ফার্ছি আর শংস্কৃত, দুই ভাশা থিকাই বহু শব্দ নিছে, কিন্তু অবিকল লয় নাই, উচ্ছারন করতে জাইয়া ফার্ছি বা শংস্কৃত হইয়া ওঠে নাই, বরং শেই শব্দগুলারে বাংলার কানুনে ছাটাই কইরা লইছে দরকার মতো। শেই ছাটাইয়ের ঘটনাই এখনো আমরা দেখতেছি ইংরাজি শব্দ নেবার বেলায়–ডাইরেক, কিলিয়ার, পেছিডেন, ডাইভার! খোদ ‘বাংলা’ শব্দটাই ঐ ছাটাইয়ের নিশানা ধরে, শংস্কৃত বংগ বা ফার্ছি বাংগালাহ্–দুইটাতেই নারাজ হইয়া হইছে ‘বাংলা’! কলোনিয়াল ইংরাজের কারখানায় পয়দাকালে বামুনেরা জেই শব্দগুলার নাম দিছে ‘তদ্ভব’, শেই শব্দেরাও ঐ টক্করের নিশানা। ‘মনুষ্য’ না লইয়া ‘মানুশ’ বানাইছে ফাইটার বাংলা। ঐ হিশাবে ফার্ছি-ইংরাজি-শংস্কৃত, পোরতিটা থিকা আশা শব্দরাই ‘তদ্ভব’!’

মনু ভাইয়ের খাশ বাংলা বিষয়ক প্রস্তাব বুঝতে এই প্যারাগ্রাফ দরকারি। খাশ বাংলা বিষয়ে তার চিন্তা-পদ্ধতির এইটা ১টা সেন্টার। ‘বাংলার কানুনে ছাটাই কইরা লইছে’র এই ‘কানুনে’র ব্যাপারে মনু ভাইয়ের কিছু প্রস্তাব ও অনুমান আছে। পুরা বইরে সেই প্রস্তাব ও অনুমানের এক্সটেনশন বলা যায়।

প্রমিতের সাথে খাশ বাংলার তফাত সম্পর্কে তিনি বলতেছেন—
আমাদের এখন ভাবা দরকার এলিট বাংলার লগে খাশ বাংলার তফাত আশলে কেমন? তফাতের কিছু পয়েন্ট খুবই অটোমেটিক পাইবেন, জদি কলোনিয়াল এলিট বাংলার উল্টাদিকে খাশ বাংলার তারিফ লইয়া হুশিয়ার থাকেন! বাংলারে জদি শংস্কৃতের মাইয়া হিশাবে না দেখেন তাইলে বাংলা গেরামারে শংস্কৃতের আছর অতো থাকার কারণ নাই। এলিট বাংলায় অতোগুলা ‘শ’ থাকার কারণ পাইতেছেন না তাইলে, ‘ষ’ হইলো ঐ ফেমিলি ভাবনার আলামত। ছ এবং শ’র মাঝামাঝি একটা হরফ হিশাবে স থাকতে পারে, কিছু শব্দে অমন একটা হরফ আছে–দরখাস্ত, বরখাস্ত, এস্তেমাল, পলিটিক্স জেমন। য নাই। শন্ধি-শমাশ-পোত্যয়-উপশর্গ খুবই ছিম্পল হইয়া পড়বে। দুইটা ই বা উ লাগে না। শব্দের শুরুতে ‘্র’ বাংলার ফোনেটিক্সে নাই, এইটাও শংস্কৃতের গোলামির আলামত। প্রথম নাই, বাংলা হইলো পরথম, পোরমান, পোশ্ন; তবে শব্দের ভিতরে ইউজ করা জায়, ‘ভিত্রে’ হইতে পারে। এমন কিছু তদবির হুমায়ুন আজাদ এবং আরো কারা জেন করছিলেন আগে; কিন্তু ঘটনা এমন কিছিমের হইলেও তাদের মোটিভের কিছু ঝামেলা আছে, তাদের লজিক খাড়ায় নাই ঠিক।

এই লাইনে আমিও ২-১টা জিনিস এ্যাড করতে পারি। যেমন, বাংলার বিবর্তনে ফার্সি-তুর্কি ভাষার প্রভাব যে মাত্রায় ধরা হয়, আসলে তার চাইতেও বেশি হওয়ার কথা। ফার্সি-তুর্কি ভাষায় ডাবল কনসোন্যান্ট হয় না। ব্রাদার (ব, র ধ্বনি) হয়ে যায় বেরাদর/বিরাদার। স্কুল (স, ক) হয়া যায় ইশকুল/স্কুল। গ্লাস (গ, ল) থেকে গেলাশ। বাংলার বেশিরভাগ লোকের উচ্চারণে এই নিয়ম পাওয়া যায়। তারা প্রোজেক্ট বলে না, বলে পোরজেক্ট।

খাশ বাংলা বা আমের বাংলা কেমন হইতে পারে তার সম্ভবত সবচে র‍্যাডিকেল প্রস্তাব রক মনুর। প্রস্তাবে আমার আপত্তি না ঠিক, সংশয়ের জায়গা হইতেছে এই মর্মে যে, এইটা কায়েম করা কতটুকু বা কোন মাত্রায় সম্ভব। ফলে আমার কিছু সংশয়ের কথা বলি।

১৯ শতকের গোড়ার দিকে, ফোর্ট উইলিয়ামে বাংলারে সংস্কৃতের মাইয়া বানানোর আর মানুষের কমন বুলিতে থাকা আরবি-ফার্সি খেদানোর যে কমুনাল প্রোজেক্ট তার প্রভাব রইয়া গেছে এখনও, অক্ষরজ্ঞানওয়ালা ক্লাসের মগজে।

এইটারে কতটা আনডু করা সম্ভব আমি সন্দিহান। ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর’ টাইপ এপ্রোচ ভাষায় অন্তত কাজ করার কথা না। কারণ ভাষা বইসা থাকে না, ফর্মালাইজড ভাষা যেহেতু রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়া অবিরাম এনফোর্সড হইতে থাকে, ফলে মুখের ভাষাতেও সেই ‘ফর্মাল’ ভাষার প্রভাব পড়তে থাকে। আর ২০০ বছরের চর্চায় অক্ষরজ্ঞানওয়ালা ক্লাসের মুখের জবানেই সেই জিনিস ঢুকে পড়ছে। ফলে ‘বাংলার কানুন’ মোতাবেক ‘পোরজেক্ট’ আমের জবানে কমন হইলেও, স্বাক্ষর ক্লাসের জবানেই ‘প্রোজেক্ট’ এখন অনায়াসে চলে আসে। যুক্তি দেওয়া যায় যে, বেশিরভাগ মানুষের জবানে তো পোরজেক্ট আর কেলাসই অনায়াসে আসে। আমের কোলে উঠলে সেইটা আমল করাই কাজের। কিন্তু আমি আইডিয়ালের কথা বলতেছি না, বলতেছি, প্র্যাক্টিকালিটির কথা।

শিক্ষিত ক্লাস শিক্ষিত ক্লাসের সাথে যোগাযোগে তাদের স্বাভাবিক জবানের বাইরে আমের জবানরে ব্যবহার করতে যাবে কেন? এইটা তাদের জন্য এখন আরোপিত। ফোর্ট উইলিয়ামের ভাষা আরও বেশি আরোপিত হইলেও, ২০০ বছর ধরে রাষ্ট্রযন্ত্রের লাগাতার প্রচারের ফলে শিক্ষিত জবানে এখন তা অনায়াস লাগে। এছাড়া সারা দুনিয়াতেই প্রমিত নামের জিনিসটা সবসময়ই রাজধানী ও হেজিমনিক ক্লাসের বুলির লগে লগে থাকে। এই ইস্যুগুলা সমাধান রক মনুর প্রস্তাবে পাওয়া যায় না।

খাশ বাংলার ছিলছিলা গত ২০ বছরে বাংলায় লেখা ভাষা সেরা প্রবন্ধগুলার একটা। মোটাদাগে এরে বামুন-শূদ্র বা আশরাফ-আতরফদের শ্রেণিযুদ্ধের লেন্সে বাংলা ভাষার বিবর্তনরে দেখা বলা যায়। রক মনুরে মার্ক্সবাদের বিরোধীই মনে হয় অথচ খাশ বাংলার ছিলছিলা আমার দেখা বাংলা ভাষার বিবর্তনরে মার্ক্সীস্ট লেন্সে দেখা উল্লেখযোগ্য একমাত্র লেখা।

বইটা অবশ্য খালি স্ট্যান্ডার্ড ভাষা কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে প্রস্তাব আর পর্যবেক্ষণ না। ভাষার সাথে কালচার আর পলিটিক্স ক্যামনে লেপ্টে, ক্লাসের সম্পর্ক কেমন, তার অনেকগুলা লিংক ধরার চেষ্টাও আছে। রক মনুর মতে, আমাদের ডমিন্যান্ট ক্লাসের (মূলত কালচারাল মিক্লা) আর্ট-কালচারে ‘বরকত’ (পড়েন, বাজার ও একসেপ্টেন্স) না থাকার কারণও প্রোডিউসারদের আমের ভাষার প্রতি ঘেন্না।

গত ১০০ বছরে, ভাষা-ভাবুকদের তরফে স্ট্যান্ডার্ড বাংলা বিষয়ে যত প্রস্তাব আসছে, তার মধ্যে সবচে আম-ঘেঁষা প্রস্তাব রক মনুর। মূল ভাবটা সহজ। মান ভাষায় আমের জবানরে জায়গা দেয়া। ভাষার পলিসির ক্ষেত্রে কবুলিয়তের শাসন মানা, অর্থাৎ ভাষা প্রশ্নে ডেমোক্রেটিক হয়া ওঠা। ভাষা, কালচার, রাজনীতি আর এই তিনের ইন্টারসেকশনে যাদের আগ্রহ আছে, তাদের জন্য খুব দরকারি এই বই। আপনি একমত হন বা ভিন্নমত, বাংলাদেশের ভাষা ও রাজনীতির ভবিষ্যত গতিপথ বুঝতে, রক মনুর ভাষা বিষয়ক এই ভাবনা-চিন্তারে মোকাবেলা জরুরি।

জুন,২০২৪

ইব্রাকর ঝিল্লী
খাশ বাংলা: আপত্তি ও খন্ডনমালা

খাশ বাংলা। এইখানে খাশ মানে আম। এই খাশ মানে খাশ মহলের খাশ না, বরং অনেকটা খাশ জমির খাশের মত। আমের বাংলা। রক মনু একটা খাশ বাংলা পরস্তাব দিতে চায়। এই খাশ বাংলায় বাংলার মানুশ জে বাংলায় কথা কয় তার শুর আর শররে ধরতে চাওয়া হইছে। এইখানে জে পরমিত বাংলা বইলা একটা বেপার আছে, জেইখানে বাংলাদেশের মানুশ জে বাংলায় কথা কয় তার মিনিমাম কদর নাই। এমন আলগা জিনিশ পরমিত হইয়া থাকায় অন্তত দুইটা ঘটনা ঘটছে। এক হইলো পরমিত শেখা এডুকেটেড কেলাছ চুরান্ত পোরকারে আম বিদ্দেশি হইছে। দুই হইলো, শেখাশেখির লগে আমের তেমন দিদার ঘটেনাই। লারনিং তথা শিক্ষা একটা এক্সটার্নাল ব্যাগেজের মত কান্ধে ঝুলায়ে ঘোরে। বরো জোর একটু ঠাটবাট দেখাইলো।

এখন খাশ বাংলার কথা কইলে কিছু আপত্তি চোখে পরে। এক নম্বর আপত্তি হইলো, বাংলাদেশে কি এইরকম কোন এক বাংলা আছে? বরং একেক অঞ্চলে একেক বাংলা! তো এই বেপারে বইলা রাখা দরকার, খাশ বাংলা একটা নতুন পরমিত ধারা তৈয়ারির দিকেই জায়, বর্তমান পরমিতের এগেইনস্টে। অর্থাত এখন জদি একটা পরমিত থাকতে পারে, অনেক অনেক আঞ্চলিকের ভিতরেও, তাইলে খাশ বাংলার খেত্রে কেনো এইটা একটা ইশু হবে তা আপত্তি উত্থাপনকারিদের একটু খোলাশা করতে পারা উচিত। কথা হইতে পারে ‘খাশ বাংলা’ কেনো নতুন পরমিত হইয়া উঠতে চায় শেইটা নিয়া। এর কারন এইটা বাংলাদেশের মানুশের হরেক আকারের বুলির ভেতরেও জে পোরধান শুরটা আছে তারে জায়গা দিতে চায়। এই রকম জে একটা পোরধান শুর আছে এই বিশয়ে কারু আপত্তি থাকার কথা না; আপত্তি থাকতে পারে শেইটা মনুর পোরপোজ করা খাশ বাংলার শুরের লগে মিলবে কিনা তা-ই নিয়া। এই পোরধান শুরের বেপারটা বুঝতে, এইখানে জেইশব গান ‘লোকগান’ কইয়া পরিচিত শেইশকল গানের উচ্চারন রিতির দিকে কান দিলেই বুঝার কথা। জসীম উদ্দীনকুল অবশ্য ভোমররে ‘ভ্রমর’ লেইখা কিছু ইমপ্রিন্ট মুইছা দিতে চাইছে, তারপরও…

দুই নম্বর আপত্তি হইলো, মুখের ভাশা আর লেখার ভাশা এক হওয়ার দরকার কি! এইটা শব শময়ই আলাদা। শইত্ত! এবং খাশ বাংলায় দরকারি এলাইনমেন্টগুলি হওয়ার পরও এইটা আলাদাই হবে। এই এলাইনমেন্টগুলি হওয়া দরকার কারন বাংলার চলিত রুপ বইলা জে অলরেডি মুখের ভাশার প্রতিরুপ লেখার ভাশা চালু আছে, তা বাংলা ভাশার লেখার চেহারারে মুখের ভাশার অনুগামি কইরা ফেলছে। আপনে না চাইলেও বাংলা ভাশার রিটেন ফরমের টেরেন্ড ওইটাই জে এইটা মুখের ভাশার লগে এলাইনমেন্টে আশবে, ফলেই কালোক্ক্রমে রিটেন ফরম আবার ওরাল ফরমরে মডিফাইও করবে। এখন মিলায়ে নেন, বাংলাদেশের আজকের শিক্ষিত মিডল কেলাছ, তের চইদ্দ বচ্ছর শিক্ষা ধোলাইয়ের ভিতর দিয়া জাইয়া ‘শুদ্ধ’ বাংলা কইয়া জেই জিনিশ মুখে তুলতে চায়(কিন্তু অনেকেই খুব শাভাবিকভাবেই পারে না, এবং তখন জারা পারে তাদের দারা, পেরায় রেছিস্ট, তামাশার শিকার হয়), তা ওই রিটেন ফরমের ‘চলিত’ বাংলাই। শেই জন্নই রিটেন ফরমটা লইয়া কাজ করার অবকাশ থাকেই। এইটা না করলে একটা কেলাছ বুলিতে পুরাই আমের উলটা ভাব লইয়া বাইরা ওঠে। শমোশ্যা হইলো এইটারে এইদেশের বাম পোরগোতির লোকজন পপুলিজম কইতে চায়; গনলাইনের জেকোনো কিছুরে পপুলিজম কওয়ার এলিটিজম লইয়া মার্ক্স পেরাকটিছ করে এরা! পপুলিজম হইলো আম জা চায়, তারেই আনকিরটিকালি কেটার করার পলিটিক্স। ডেমোক্রেটিক থাকা হইলো নিজের পরস্তাব আমরে বুঝাইয়া আমের দরবার হইতে পাশ করায়া আনা। ডেমোক্রেটিক থাকার কন্ডিশন তাইলে দারায় আমের বুলিতে মিনিংফুলি কমুনিকেট করতে পারা, না কি? পপুলিজম আর ডেমোক্রেছির এই ফারাক এই দেশের টেরডিশনাল পোরগোতির লোকজনদের শিখানো হয়নাই। ফলে জা-ই আম, তা-ই এদের কাছে খারাপ। ডেমোক্রেছিতেও গররাজি এরা।

তিন নম্বর আপত্তি হইলো, এখন জেইটা পরমিত, তা নিয়া জেই গেরাউন্ডে শমোশ্যা, তাতে এইটা কতক শাম্প্রদায়িক, জেনোফোবিক হইয়া জায় কিনা। জেহেতু কলিকাত্তাই(ক্যালকেশিয়ান) বইলাই শমোশ্যা। আশলে তা না। খাশ বাংলাতে বিদেশি শব্দ, শংস্কৃত, আরবি, ফারশি, ইংরাজির পেরজেন্স আছে। বাংলাদেশের মানুশের ভাশা নানান শময়, নানান শাশনের ভিতর দিয়া শেইপড হইছে, শেইটা এইখানকার মানুশের ওরাল টেরডিশনে তুইলা রাখা হইছে। জেনোফোবিক, রিএকশনারি হইতো জদি খাশ বাংলার পোরস্তাবে ওগুলিরে বাদ দেওয়ার শুপারিশ হইত। খাশ বাংলায় বরং আমের বুলিতে জা জা জখন জখন জায়গা পাইছে তারে আমের বুলির ফরমেই চালু বা ফের চালু করার পরস্তাব করা হইছে। এখনকার পরমিতেই বরং ইংরাজি খেদায়ে নয়া বাংলা শব্দ চালুর বেপারে অনর্থক ঝোক দেখা জায়। এবং তাতে আবার অনর্থক শংস্কৃতের পেরায়রিটি, আমের ফরম বাদ দিয়া। মানে আম তো একটা ফরম এডপ্ট করছে, আগে তাও ওই ফরমটারে বাংলা হিশাবে একছেপ্ট করার বেপার ছিলো(জেমন- আফিম, বুরুশ, হাশপাতাল), কিন্তু বাংলাদেশের মানুশের মুখ থেকে বাইরইলে শেইটা ছেরেফ ‘ভুল’ উচ্চারন হইয়া থাকে, জেমন, রিশকা, পিলিজ, টেরেন। এখনকার পরমিতে জেই বাংগালি জাতিবাদি ঝোক আছে তাতেই বরং এইটা শবকিছুর ছহি বাংলা ছিনোনিম বানাইতে চায় এবং লগে এর বামুনবাদি কলোনিয়াল রুটের কারনে বাদ দিতে চায় আমের গোরা।

চাইর নম্বর আপত্তি হইলো বানান। বানানে ছ, শ, জ, ন,র রে ওয়াইডলি একছেপ্ট করা হইছে। তো এইটা বেশিরভাগটাই বানানরে ছিম্পলিফাই করার জায়গা থেকেই করা। এইশবের ইশারা, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, এমনকি আজাদদের আলাপেও অল্প অল্প আছে, উনারা পেরাকটিছের দিকে আগাননাই আর। কিছু কিছু পুব বাংলার লেখন ধারায় অলরেডি ছিলো। জেমন, ছ এর উচ্চারন প্রমথ চৌধুরীদের মত হয় না এইখানে। ছ এর উচ্চারন তালুতে না হইয়া দাতের গোরাতেই করে পুব বাংলায়। এইখানে কোথাও কোথাও ফয়সাল নামরে ফয়ছাল লেখা হয় ওই জায়গা থেকেই। আহমদ ছফার নামটাও এই বেপারে দেখা জাইতে পারে।

পাচ নম্বর আপত্তি হইলো, জেইটারে মনু খাশ কইতে চায়, ওইটাই তো পরতে কশটো হয়। পরতে কশটো হওয়ারই কথা, লেখায় এমন বাংলা দেইখা অভভাশ নাই। পরতে কশটো হওয়া দিয়া এর মেরিট বিচার জথাজথ হয় না আদো।

রক মনুর ‘খাশ বাংলা’ একটা দরকারি পরস্তাব। বাংলাদেশের বাংলা কেমন হবে এই পোশ্নো এখনো রিলেভেন্ট। এর লগে দেশের ছিশটেমের ডেমোক্রেটিক হইয়া উঠার রিশতা আছে। মনু শেই জায়গা থেকেই এই আলাপ আনছে এবং তারপর ডিটেইলে গেছে। জেইখানে এখনো কন্ট্রিবিউশানের শুজুগ আছে। কারন এই আলাপ একটা খাশ বাংলা কায়েম করার আলাপ না, বরং এইটা ‘পরমিত’ বাংলার ডেমোক্রেটিক পছিবিলিটিরে খতায়ে দেখার মামলা। দেশের ডেমোক্রেছিহিনতার তত্ততালাশে এবং ডেমোক্রেটিক বুনিয়াদ তৈয়ারিতে মনুর ইইন্টেলেকচুয়াল ততপরতায় ‘খাশ বাংলা’ ছিগনিফিকেন্ট শংজোজন।

মে-জুন,২০২৪

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →