বইমেলা ২০১৫ এর বই: সকলই সকল – তানিম কবির।
[pullquote][AWD_comments][/pullquote] বাংলা একাডেমি’র ২০১৫-এর বইমেলায় শুদ্ধস্বর তানিম কবিরের সেকেন্ড কবিতার বই – ‘সকলই সকল’ পাবলিশ করার কথা। এর আগে গত বছর একই প্রকাশনা পাবলিশ করছিল তাঁর কবিতার বই ‘ওই অর্থে’।
‘সকলই সকল’-এর প্রচ্ছদ করছেন শিল্পী খেয়া মেজবা।
কবিতার বই থিকা কবি’র বাছাই করা দশটা কবিতা।
________________________________________________________
তেহারি দোকান
যেন কারও রূপ রস গন্ধ নেহারি
ভুবনও কিনারে বসে খেয়েছি তেহারি
নাড়িয়া চামচ মম লঙ্ঘিত প্রাণ
যে হারান, তাকে ফের ফিরে পেতে চান
এ চাওয়া মাতৃহীন – এতিম শ্মশান
দেয়ালের উচ্চতা দেয়ালে খসান
উচ্চতাভীতি নিয়ে তেহারি দোকান
টায়ার ও টিউবসহ ঘূর্ণায়মান
সহজ অন্ধকার
তোমারে বিছরাব
পাব খাব হারিয়ে যাব
আবারো পস্তাব
প্রস্থে যতই দূর
বাড়ুক আমি দৈর্ঘ্য জুড়ে
খামোখা ঘুরঘুর—
করছি করে যাই
শখের ঢঙে বকের ঠ্যাঙে
সমস্ত ওড়াই
উড়তে নিলেই পর
আজাইরা ধরফরে আমি
বদ্ধপরিকর—
হয়ত জানো, আর
জানারে বারবার, জানতে দিও
মানতে এমন সহজ অন্ধকার
তোমরা দুজন
একদিন খুব সকালে
গাছের যে পাতাগুলো গাছেই ছিল,
সে সবুজ—
আলোর দ্বিধান্বিত অন্ধকারে
বেরিয়ে পড়েছিলে
তোমরা দুজন।
রাতজাগা পলেথিন
উড়ে উড়ে রাস্তায়,
যে হোটেল খোলেনি তখনও
তবু খুলবে বলে,
তবু জেগে উঠে কুলকুচি করবে বলে
এক লোক—
তখনও ঘুমিয়ে ছিল।
শুধু তার জেগে না ওঠার পাশ দিয়ে
হেঁটে চলে যাচ্ছিলে
তোমরা দুজন।
বৃহস্প্রতিভা
বৃহস্পতিবারের রাত মাত্রই
বৃহস্পতিবারের রাত্রি তো নয়
এমনই হয়
যে,
মাথা ঘুরে যায়;
কখনও এমনও বা
কাথা ঘুরে যায়—
আর,
বৃহস্পতিবারের প্রতিবারই চাই
বৃহস্পতিবারের প্রতিভার ঘাঁই
তবু এমন
যেন
তথাপিও তাই;
তবু এমন যেন কথাটিও তাই
অর্ধেক চাঁদে
সমস্ত গ্রাম নাড়াক্ষেতে বেষ্টিত
নিজ পদতলে মচমচ করে ফাটি
শুষ্কবক্ষা রোগা নদী হতে দূরে
অর্ধেক চাঁদে আড়াআড়ি হয়ে হাঁটি
পেরিয়ে অপার ভাঙা শ্মশানের সিঁড়ি
মাঠ খুড়ে কত ভগ্নাবশেষ লাটিম
খুঁজে পাই; খুঁজে পাওয়া সব হতে দূরে
অর্ধেক চাঁদে আড়াআড়ি হয়ে হাঁটি
গঞ্জের যত মেশিনেরা গাঢ় ঘুমে
প্রোথিত রয়েছে শুয়ে আছে পরিপাটি
অনাত্নীয়ের অনাদর হতে দূরে
অর্ধেক চাঁদে আড়াআড়ি হয়ে হাঁটি
ইউনিভারসাল ক্রাই
সেই কতকাল আগে
কোথাও আমি বইসা ছিলাম
ভাবতে কেমন লাগে!
হয় মনে হয়
আমার বইসা থাকাই
আমার আগে;
এই দুনিয়ায় আইসা আবার
ফেরত গেছিল চাঁদে।
তার বহুকাল বাদে
এখন এমন লাগে;
চাঁদের নিচে ওইসমস্ত
বইসা থাকা জাগে!
বিস্মৃত আজ
কখন কবে
দাঁড়াইছিলাম পরে;
এই দুনিয়ায় আগেই আসা
আমরা পরস্পরে।
এ নির্বাণ এ নির্বাণ
অন্ধকার আলস্যে
সঙ্ঘহীন সহাস্যে
রাত্রিভর রাত্রিময়
গোত্রহীন যাত্রীদ্বয়
শ্রুশ্রূষায়
যায় ভেসে;
এ নিস্তার এ লাস্য
এ বিস্তার প্রকাশ্য
চতুর্দিক চারপেশে
হায় ভেসে যায় ভেসে
শ্বাসপ্রধান
বাষ্পপ্রাণ
ইভনিং রেইন
দীর্ঘশ্বাসগুলি এ বিশ্ব বায়ুমণ্ডলে
ঘুরপাক খায়
দীর্ঘ ঘুর্ণি তারা দীর্ঘ পাকে;
যেন বা স্ক্রু কোনও
টাইট দেয় তোমাকে আমাকে
টাইট হয়ে এ নিখিল লেকের কিনারে
তুমি সহ বসে থাকি রুদ্ধশ্বাস
হঠাৎ বাতাস আসে;
মৃতদের রেখে যাওয়া দীর্ঘশ্বাসবাহিত
সে বাতাসে কান পাতি
চরাচরে সন্ধ্যার ব্যাপ্ত বাতি
লেকের পানিতে ক্রম সম্প্রসারিত হয়
আমাদের প্রসঙ্গগুলো;
বিজড়িত, বিস্তারিত, এছাড়াও
পারস্পরিক। ঘামে ভেজা, শীতে কাঁপা
যেন বৈ,চিত্রের শর্তপূরণে সদা
সক্রিয়, মনোযোগী, বাধ্য ও দায়িত্বশীল
সন্ধ্যার বাতি তার হলদে আলোর প্রতি
মেলে ধরে জেব্রাক্রসিং
বৃষ্টি নামলে উই নীড অ্যান আমব্রেলা
প্রিয়!
সর্দির দিন
সর্দি লাগল প্রাণে
আমি কুয়াতলা থেকে কুয়াতলা
দৌড়ালাম অঘ্রাণে
কলাপাতা নড়ে গেল
যা কিছু ধাতব ঝনঝন করে
অক্লেশে মরে গেল
ছায়া ছায়া হল সব
টিয়া পাখি তার বোকাসোকা ঠোঁটে
ঝগড়াটে কলরব
হিন্দুপাড়ার মেয়ে
জবাফুল নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে
আসলে তো ছোঁয়াচে
বরং এসব থাক
সর্দির দিনে কানটুপি পরে
একা শুয়ে থাকা যাক
আমার উদলা বুক
পারে যদি ব্যাঙ ঠাণ্ডা পেটের
মমতা নিয়ে আসুক
সকলই সকল
না মানে থাকে না যে, সকলই ফিরুক?
আমি তো চাই না তা গোপনে বাড়ুক
বরং একের প্রতি অপরের বুক
পারস্পরিক ভাবে সকলই ভুলুক
ভুলুক চিবুক তার বিপরীত টান
গ্রীবায় গ্রীবায় হাড়ে যত আশেকান
ঝুলে আছে ভুলে গিয়ে সকলে আসান
পাক মানে যাক ভুলে স্বকৃত দান
আকৃতিহীন হয়ে গাড়ির চাকার
নিচে পড়ে মরে থাকে মাদার ফাকার
এমনও হোক যেন মনে না থাকার
কারণে উবে যাক যেকারও আকার
Latest posts by তানিম কবির (see all)
- মধুরোড / তানিম কবির - জুলাই 11, 2015
- বইমেলা ২০১৫ এর বই: সকলই সকল – তানিম কবির। - জানুয়ারি 28, 2015
- শৈত্যস্বর - নভেম্বর 4, 2013