Main menu

রিডিং বেয়ন্ড দা লাইনস

আমরা জানি আর্ট আর্টিফিশিয়াল, তারপরও আর্টে আমরা ডুবি। সিনেমায় এই জিনিসটা সবচে বেশি চোখে পড়ে। দেখতেছি ডিকেপ্রিও জ্যাক আর উইনস্লেট রোজ, মানে জ্যাক আর রোজ বলতে কিছু নাই, পুরা টাই বানাইনা, তারপরও জ্যাক আর রোজের কষ্টে কানতেছি। এইটা কেন হয়? মনে হয় যেন আমাদের সচেতনতা এনাফ না।

জানা দিয়া আসলে জানাটুকুই হয়, টাইম মত ঠিকই আমরা কাইন্দা ফেলি। আমাদের অচেতনতার আলাদা সিস্টেম আছে, যেইটা সচেতনতার প্যারালালি থাকতে থাকে। ভিআর টেকনোলজি লইয়া বিবিসির একটা ভিডিওতে এইটা দেখায়। হেডসেট লাগাইয়া ভি আর দেখা লোকজনরে দেখবেন শান্তভাবে বইসা দেখতে পারে না, সব সময় ব্যালান্স সামলাইতে থাকে, যেন ভি আরে যা দেখতেছে সেইটা রিয়েল। ওদিকে ভি আরে যা দেখায় তা আপনে দেখলেই বুঝবেন জিনিসটা রিয়েল না। যে এইটা দেখে সে কি তাইলে বুঝে না এইটা রিয়েল না? সেও বুঝে। কিন্তু তার বডি বুঝে না। ব্রেইন রিয়েলিটি বুঝে না, ব্রেইন শুধু বুঝে পারসেপশন। এমন কিছু যদি ডিজাইন কইরা ব্রেইনের সামনে রাখা যায়, যা ব্রেইন রিয়েলিটিরে যেমনে পারসিভ করে, সেই পারসেপশনরে হ্যাক করতে পারে তাইলে ডিজাইনড জিনিসটার রিয়েলিটি না হইলেও চলবে, আপনের বডি ওইটারে রিয়েলিটি ধইরা নিয়াই রিয়েক্ট করতে থাকবে।

আর্টের সাথে এইটার মিল নাই। আর্ট প্রোফাউন্ড। তবে এইটুকু বোঝা যায়, আর্টও একটা রিয়েলিটিরে কনস্ট্রাক্ট করায় নিয়োজিত। সেইটারে আমরা বলবো আর্টিস্টিক রিয়েলিটি। এই রিয়েলিটিও সেরেফ আরেকটা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হইয়া যাইতে পারে, যদি তা আমাদের সচেতনতারে তলব না করতে পারে।

তবে আমার মনে হয় আর্টিস্টদের জন্য আর্টিস্টিক রিয়েলিটি আরেকটু রিয়েল আছে, যেহেতু তাদের ইমোশনাল ইন্টেলেক্টের সবকিছু এই রিয়েলিটির নির্মাণে জড়িত থাকে, এইটার একটা মেন্টাল টোলিং থাকতেই পারে। বা আর্টিস্ট গ্রুপগুলি একটা প্রধান কালচারাল গোষ্ঠী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাইতে পারে। যেমন মুসলমান, হিন্দু, এমেরিকান, ইন্ডিয়ান, উইঘুর, তেমন আর্টিস্টরাও একটা গ্রুপ। স্লটারডাইক মডার্ন দুনিয়ায় যে তিনটা প্রধান বাস্টার্ড গ্রুপের কথা বলছেন, তার মইধ্যে আর্টিস্টরা আছেন, মডার্ন আর্টিস্টরা।

তো আর্ট জাস্ট এক্সপ্রেশনের বেপার হইয়া থাকতে পারেনা। বা এক্সপ্রেশনও তো আসলে সর্বদা গুলায়মান। রুবেন উস্টল্যান্ডের স্কয়ার ছবিটাতে আর্টের দুনিয়ার বহিরাঙ্গ লইয়া ক্রিটিক আছে। যে কেমন ঢংসর্বস্ব সবকিছু। যেন আয়োজনটাই আর্ট। আর্টের ইন্ডাস্ট্রি আর্টরে ওইভাবেই রাখতে চায়। তারপর এক পারফর্মেন্স আর্টিস্ট আসেন, যিনি বান্দরের মত এক্ট করতে থাকেন। প্রথমে অডিয়েন্সরা বেপারটা পারফর্মেন্স হিসাবেই নিতে থাকে, হাততালিটালি দেয়। কিন্তু যত সময় যায় ততই রিয়েলিটির লগে আর্টিস্টিক রিয়েলিটির ক্ল্যাশ লাইগা যাইতে চায়। যে বান্দরের পারফর্মেন্স করে, সে তো বান্দরই, নইলে পারফর্মেন্সের মূল্য থাকলো কি! একটা ট্রুথরে যদি কনস্ট্রাক্টই না করতে পারলো তাইলে আর্টের মিথ্যার লগে রিয়েল মিথ্যার আর পার্থক্য কি! সুতরাং আর্টের ভিতরে, আর্টের সীমারেখার ভিতরেই এক্সপ্লয়টেশনের দরজা খোলা আছে। আমি আর্টের অজুহাতে এক্সপ্লয়টেশনের কথা বলতেছি না, বলতেছি উইদিন আর্টস এক্সপ্লয়টেশনের কথা।

মনে করেন, এপোকেলিপ্স নাউ তে মার্টিন শিনের লগে ফোর্ড কপোলার তো গেঞ্জামই লাইগা গেছিল, অতিরিক্ত খাটাইতে ছিল সে তার এক্টররে দিয়া। বা ব্লু ইজ দা ওয়ার্মেস্ট কালারে কেশিশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কাম করানোর নালিশ আইনা কামই বন্ধ রাখছিলো তার দুই এক্টর। কিন্তু ডিরেক্টরদের যে দোষ দিবেন, এগুলা তো আর্টের দীক্ষার ভিতরেই আছে! ডিরেক্টররা নিজেরাও যে শান্তিতে ছিলেন তাও না! এরা আর্টের দরকারে নিজেরাও নিজেদের পেইন দিতে রেডি থাকে। উস্তল্যান্ডের বান্দর যেইটা করতেছিল বা মারিনা আব্রামোভিচ যেইটা করছে, নিজেরে বিলায়ে দিছে। স্কয়ারের মত সিমিলার একটা জায়গা দিয়া একে ভার্সেস একেরে রিড করা যাইতে পারে। মানে সিনেমারে যে বিশ্বাসযোগ্য হইয়া উঠতে হবে, নইলে হবেই না, এমন অবসেশনের প্রবলেম লইয়া ডিল করছে এইখানে। শেষ পর্যন্ত একে কাশ্যপেরই ক্রিটিক করলেন মোটোয়ান, সেইটারে ব্যালান্স করতে কাশ্যপেরেই কাস্টিং করলেন তিনি।

মানে আর্ট ধইরাই আর্টের ক্রিটিক বা ক্রিটিকের জওয়াব দেওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। হইতে পারে আর্টিস্টরা আর্টের কন্টিনিউয়ামের ভিতরেই থাকতে থাকেন। সুতরাং আর্টিস্টিক নেগেশনের দরকার হইতেই পারে। এইভাবে তারা একটা রিয়েলিটিরেও মাইনা নিতে পারেন মনে হয়, যেহেতু রিয়েলিটিনিচয় একটা আরেকটার সাথে গুলাইতেই থাকে অলওয়েজ। দেখেন স্যাম মেন্ডেজ টাইটানিকে উইনস্লেট আর ক্যাপ্রিওর টইটম্বুর প্রেম দেইখা জেলাস যে হয়নাই তা আমরা বলতে পারি না বুকে হাত দিয়া। উইনস্লেটের লগে বিয়ার পর হয়ত মেন্ডেজের মনে মাঝেমাঝেই উকিঝুকি মারত রোজ আর জ্যাকের প্রেমগাথা। ফলে তারে রিভোল্যুশনারি রোডের মত একটা সিনেমা বানাইতেই হইত যেইখানে কেপ্রিও আর উইনস্লেটের দুর্দান্ত কিছু কাইজ্জার দৃশ্য আছে। বা, ওয়েস এন্ডারসনের মুনরাইজ কিংডমের কথা ধরতে পারেন যেইখানে একদম নাবাল দুই পোলামাইয়ার প্রেম দেখাইছে, এডাল্টের প্রেমের মতই প্রেম করতে চায় পিচ্চি দুইটা; প্রেমের জন্য ঘর ছাইড়া পালায় যায় দুইজন, একলগে থাকে, কিসাকিসি করে। এইটা নিয়া কিয়ৎ গালিগালাজ যে ওয়েস এন্ডারসনরে সইতে হয়নাই তা তো না। আর্টিস্টের বিপদে তো আর্টিস্টই আগায় আসবেন। তাই জিম জারমুশ আগায় আসলেন তার আর্টিস্টিক সেন্সিবিলিটিসমেত। জারমুশ তার প্যাটারসনে দেখাইলেন মুনরাইজের পিচ্চি দুইটা বড় হইয়াও একলগে ঘুরে ফিরে, ভার্সিটিতে যায়, ইন্টেলেকচুয়াল আলাপ সালাপ করে। যেনবা কইতে চাইলেন, ছোটরাও বড় হয়, বড় হইয়াও ছোটকালের প্রেম কন্টিনিউ করতে পারার পসিবিলিটি থাকে তো। সিনেমা হইতে সিনেমান্তরে একটা আনইন্টেরাপ্টেড রিয়েলিটি দেখাইতে চাইলেন।

দ্য রেভুলেশনারি রোড সিনেমার একটা সিন। ছবি গুগুল সার্চ থিকা নেয়া।

আর্টিস্টদের যে রিয়েলিটির গ্রাফ ডিফরেন্ট এবং উইদিন দ্যাট রিয়েলিটি যে এক্সপ্লয়টেশন আছে সেইটারে এড্রেস করারও একটা ব্যাপার তৈরি হইতেছে। সিনেমার সেক্স সিনগুলি এখন আরও অধিক কোরিওগ্রাফড করার কথা শুরু হইয়া গেছে। পিওর আর্টে যে ইম্প্রোভাইজেশন থাকে, ফলে কোআর্টিস্টের সোলের গ্লিম্পস দেখা যাইতে পারে, সেক্স সিনে সেইটা এক্সটেন্ড করলে প্রাইভেসির ব্রিচ ঘটে তো। কোরিওগ্রাফি এইক্ষেত্রে পর্দা হিসাবে থাকতে পারে, আর্ট হইতে পর্দা। আর্টিস্টিক লিবারেশনের দিন ফুরায় আসতেছে, আর্টকে আরেকটু লেস আর্ট হইতে হবে মনে হয়। আর্ট বইলাই সমস্ত ক্রিটিক হইতে অব্যাহতির দিন শেষের দিকে। এই ক্ষেত্রে নতুন সময়ে ক্রিটিকও হইয়া উঠতে পারে নতুন ধরণের আর্ট। আর্টের ভিতরেই আর্ট নিয়া এম্বেডেড ক্রিটিক থাকার চল শুরু হইতে পারে। শুরু মানে, সব সময়ই তো ছিল, উপন্যাসের জবাবে উপন্যাস, স্পুফ মুভি এগুলি তো ছিলোই, এখন সেইটা প্রধান হইয়া উঠতে পারে। উস্তল্যান্ডের স্কয়ার, গ্যাসপার নয় এর ক্লাইমেক্স, মোটোয়ানের একে ভার্সেস একে বা জারমুশের প্যাটারসনে যেটুকু আছে সেইটাও সূক্ষ্ম ও অপ্রধানভাবে এক প্রকার ক্রিটিকই। এগুলা আরেকটু বাড়তে পারে মনে হয়।

এইটা আসলে আর্টের দুনিয়াটারে রিকগনাইজ করাই এক প্রকার। মানে এই দুনিয়াবি টেনশনে আর্ট অলরেডি এমবেডেড আছে। যত দিন যায় আরও গুলাইতেছে। ফলে যদিও আমরা বুঝতে পারি আর্টিফিশিয়াল, তবু্ও আমরা ডুবি। রিয়েল মনে করলে হয়ত আরেকটু সচেতন হওয়া যাবে এই ব্যাপারে। কারণ রিয়েলিটিও তো আর্টিফিশিয়াল। আমার বলার জায়গাটা হইল, ধর্মের নাম নিয়া গরুর মুত খাওয়া, যেমন সমস্যা হিসাবে বুঝতে পারতেছি আমরা, সেইরকম মনে করতে পারতেছি কি ক্রিশ্চিয়ান বেলের শুকাইয়া যাওয়া বা মোটা হইয়া যাওয়ারে। বা ডে লুইসের ডিপ্রেশনে ঢুইকা যাওয়ারে? সো আর্টরে তো একটা গ্রেস দিতেছি আমরা। সেইটা আরও কমতে থাকবে কালে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →