Main menu

নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭)

মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা হিসাবে ‘জীবন থেকে নেয়া’রে (১৯৭০) যতোটা হাইলাইট করা হয়, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’র (১৯৬৭) কথা ততোটা শুনবেন না। অথচ যদি সোশ্যাল ইমপ্যাক্টের কথা চিন্তা করেন, সিরাজউদ্দৌলা ম্যাস লেভেলে ‘বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার’ আইডেন্টিটিটা ছড়ায়া দেয়ার কাজটা করছিল। যেইখানে একটা মিডল-ক্লাস অডিয়েন্সের বাইরে ‘জীবন থেকে নেয়া’ যাইতে পারারই কোন কারণ নাই, এর এসথেটিক এপ্রোচের কারণেই। কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমার রিডিং-এ এইটারে আমরা বানাইছি ‘মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা’ আর ‘সিরাজউদ্দৌলা’র কোন নাম-গন্ধও নাই।

/আ ক্রিটিকাল হিস্ট্রি অফ বাংলাদেশি সিনেমা, ২০২২

 

১. মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা

১৯৬৭ সালের ১২ই জানুয়ারি রিলিজ হওয়া খান আতাউর রহমানের “নবাব সিরাজউদ্দৌলা” (১৯৬৭) যে ‘মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা’ – এই রিকগনিশন কোথাও পাইবেন না! ১৯৬৭ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বা ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’র ধারনা তো ক্লিয়াললি ভিজিবল হইতে পারে নাই, কিনতু পুরা সিনেমা জুইড়া দেখবেন ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ নিয়া প্যাশোনেট কথা-বার্তা। এমনকি সিনেমা শুরু-ই হইছে ‘দেশপ্রেমের’ গান – “ও আমার জন্মভূমি মাগো মা…” দিয়া; এবং এই ‘দেশপ্রেম’ পুরাটাই ‘বাঙালির’ এবং ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদে’ ভরপুর; পুরা সিনেমাতে পাকিস্তান শব্দটাও কোথাও পাইবেন না। তারপরও এই সিনেমারে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের পুর্ন-জাগরনের’ মুভি বইলা ভাবতে না পরার কতোগুলা কারন তো আছেই।

এক নাম্বার ঘটনা হইতেছে, যেইটা বলতেছিলাম, তখনকার কনটেসকটে তো ইনডিপেনডেনসের কোন ক্লেইম নাই বা ছিল না, বরং ব্রিটিশ-বিরোধি মুভমেনটে পুব-বাংলাও শামিল ছিল – এইরকম একটা হিস্ট্রিকাল ক্লেইমই ছিল। এই সিনেমারে তখন পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি থ্রেট হিসাবে দেখা তো হয়-ই নাই, বরং এই সিনেমা উর্দু-ভার্সনেও রিলিজ দেয়া হইছিল একইসাথে পশ্চিম পাকিস্তানে, এবং ৩২ সপ্তাহ ধইরা চলছিল। দুইটা ন্যাশনাল (নিগার) এওয়ার্ডও পাইছিল মনেহয়। মানে, হিট-সিনেমা ছিল একটা! এখন যেই সিনেমা পাকিস্তানে ‘নিন্দনীয়’ হইতে পারে নাই, সেইটারে ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের’ ঘটনা হিসাবে রিড করবো কেমনে আমরা! এইটাই হইতেছে ফ্যাক্টচুয়াল ডিলেমাটা।

মানে, এই যে হিস্ট্রিকাল ভিউ-পয়েনট থিকা আমরা দেখি, সেইটারেই প্রবলেমেটিক মনে করি আমি। ১৯৪৭’র পর থিকা পুব-পাকিস্তান কখনোই একটা কনফেডারেশনাল স্টেইট হওয়ার দাবি ছাড়ে নাই, ১৯৫৪’র ইলেকশনে যুক্তফ্রন্ট যে জিতলো এবং মুসলিম লীগ নাই হয়া গেলো, সেইটার কারনও ছিল যে পুব-পাকিস্তানরে অনেক কিছু আলাদা কইরা দিতে হবে, এবং এরই পলিটিকাল মেনিফেস্টশন হইতেছে এই সিনেমা। তখন ১৯৬৬’র ছয় দফাও চলে আসছে, যেই জায়গাতে এই সিনেমা ‘বাঙালি’ আইডেনটিটিরে শেইপ-আপ করার কাজটা করছে, পলিটিকালি। এই জায়গাটা নিয়া ডাউট করাটা মোটামুটি ইমপসিবল-ই হবে আসলে।

সেকেন্ড হইতেছে, খান আতাউর রহমান নিজে; যিনি মুক্তিযুদ্ধের পরে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ (১৯৭৩) [যেইটা এখন বাংলাদেশে আন-অফিসিয়ালি নিষিদ্ধ] সিনেমা বানায়া মুক্তিযুদ্ধের ইনডিয়ান-নেরেটিভ’টারে বিপদে ফালায়া দিয়া ‘বির্তকিত’ হয়া উঠছেন! তো, উনারে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ একজন সার্পোটার হিসাবে দেখলে তো বিপদ! এইটার কনট্রিবিউশনও এইখানে আছে।

থার্ড হইতেছে, এইটা তো যাত্রা-সিনেমা! মানে, বাংলাদেশি সিনেমা আসলে শুরু-ই হইছে ‘রূপবান’ (১৯৬৫) থিকা; যেইটা গেরামের যাত্রা’র একটা সিনেমা-এডাপশন; তখনকার সময়ে ‘আধুনিক’ হইতে চাওয়ার বিপরীতে এইগুলা তো ‘কুসংস্কারচ্ছন্ন’ ঘটনা, এবং কোনভাবেই ‘আর্ট’ হয়া উঠার যোগ্য না – এই নেরেটিভ এখনো খুবই স্ট্রং, যার ফলে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ও যেহেতু যাত্রা-পালা হিসাবে পপুলার ছিল, তারে ‘সিনেমা’ হিসাবে ‘স্বীকৃতি’ দেয়াটাই তো টাফ! এখন না হয় ‘অরিয়েন্টালিজম’ শিখার পরে নাম নিতে রাজি হইতে পারি আমরা, সেইটা তো কয়দিন আগেও পসিবল ছিল না আসলে।
Continue reading

নজরুলের চিঠি: ফজিলাতুন্নেসা ও নারগিস’কে

[চিঠি লেখা একটা সময়ে ‘সাহিত্য’ ছিল; এখন তো তেমন কেউ আর কাউরে চিঠি লেখে না, পারসোনাল লেভেলে ‘লাভ লেটার’ বা ‘প্রেম পত্র’ কিছুটা চালু থাকতে পারে, কিনতু সেইটার ‘সাহিত্য মর্যাদা’ও মোটামুটি ‘বাতিল’ হইতে পারছে; ইমেইলে ঠিক চিঠি-লেখার অই ইমোশন নাই বা থাকে না, বরং যে কোন আলাপের ‘স্ক্রিনশট’ ফাঁস হওয়ার  ভিতর দিয়া ‘বেইজ্জতি’ হওয়ার চান্স এখন অনেক বেশি, মানে, এইসব জায়গাতে আগের দিনের কনভারসেশন বরং রিটেন ফরমেটে চলে আসছে… যা-ই হোক, আগে রাইটার’রা কবি-সাহিত্যিকরা যখন চিঠি লিখতেন, সেইটা পুরাপুরি পাবলিক-ঘটনা না হইলেও উনাদের মনে এই ধারনা থাকার কথা যে, কোন সময় এই চিঠি ছাপানো হইতে পারে; চিঠি পারসোনাল জিনিস-ই, কিনতু সেইটার ‘ঐতিহাসিক’ গুরুত্বও তৈরি হইতে পারে, ফিউচারে… চিঠি-লেখাতে এইরকম একটা জায়গা ছিল, বা থাকার কথা একভাবে

তো, এই জায়গা থিকা নজরুলের ৮৮টা চিঠি ছাপা হইছে বা পাবলিক ডেমোইনে এভেইলেবল আছে; এর মধ্যে কিছু জিনিস অফিসিয়াল-লেটার বা পত্র-সাহিত্যই, যা পত্রিকার সম্পাদক বা সভা-সমিতির আয়োজকদেরকে লেখছেন; তবে সবচে বেশি চিঠি লেখছেন কাজী মোতাহার হোসেনকে (অবশ্য চিঠি-তে ফজিলাতুন্নেসা’র কথাই লেখছেন অনেক); ইয়াং-কবিদেরকে কিছু চিঠি লেখছেন; আর সুন্দর দুইটা চিঠি লেখছেন শামসুরনাহার’কে, অইগুলা অনেকটা ‘পত্র-সাহিত্য’; আর এর বাইরে ‘প্রেমপত্র’ বা ‘ঐতিহাসিক গুরুত্ব’ আছে হইতেছে ফজিলাতুন্নেসা ও উনার প্রথম বউ নারগিস আসরার খানম’রে লেখা চিঠি দু্‌ইটার।

এই দুইটা চিঠি এইখানে রাখা হইলো।]

১৯২৮

[মিস ফজিলতুন্নেসাকে]

১১, ওয়েলেসলি স্ট্রিটে
সওগাত অফিস
কলিকাতা
শনিবার, রাত্রি ১২টা

আজ ঈদ। ঈদ মোবারক।

অসহায় হইয়া আপনার নিকট এই পত্র লিখিতেছি। যদি বিরক্ত করিয়া থাকি, মার্জনা করিবেন। আজ ১৪ দিন হইল মোতাহার সাহেবের কোনো চিঠি পাই নাই। তাহার শেষ চিঠি পাইয়াছি ১০ই মার্চ। তাহার পর আমি তাহাকে দুইখানা পত্র দিয়াছি ১০ই ও ১৮ই মার্চ। আজো কোনো উত্তর না পাইয়া ছটফট করিতেছি। জানি না তিনি ঢাকায় আছেন কি না, না অসুখ করিয়াছে–কত কি মনে হইতেছে। আপনার শারীরিক সংবাদটুকুও তাহার মারফতই পাইতাম। বড় উদ্বিগ্নে দিন কাটাইতেছি।

আপনি যদি দয়া করিয়া – জানা থাকিলে আজই দু লাইন লিখিয়া তাঁহার খবর জানান, তাহা হইলে সবিশেষ কৃতজ্ঞ থাকিব।

তিনি আমার ঐ চিঠি দুইখানা পাইয়াছেন কি-না জানেন কি? তিনি কি আমার উপর রাগ করিয়াছেন? না অন্য কারণ? জানা না থাকিলে জানাইবার দরকার নাই।

আমি সওগাতের লেখা লইয়া বড় ব্যস্ত আছি। কলিকাতায় আরো দুই চারিদিন আছি। পত্র সওগাতের অফিসের ঠিকানাতেই দিবেন।

আপনার শরীর খুবই অসুস্থ দেখিয়া আসিয়াছিলাম। কেবলি মনে হয়, যেন আপনার শরীর ভালো নাই। দুদিনের পরিচয়ের এতো বড় আস্পর্ধাকে আপনি হয়তো ক্ষমা করিবেন না, তবু সত্য কথাই বলিলাম।

– আপনাকে দিয়া বাংলার অন্তত মুসলিম নারী-সমাজের বহু কল্যাণ সাধন হইবে – ইহা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তাই আপনার অন্তত কুশল সংবাদটুকু মাঝে মাঝে জানিতে বড্ডো ইচ্ছা করে। যদি দয়া করিয়া দুটি কথায় শুধু কেমন আছেন লিখিয়া জানান – তাহা হইলে আমি আপনার নিকট চির-ঋণী থাকিব। আমার ইহা বিনা অধিকারের দাবি।

আমি এখন বেশ ভালোই আছি। আর একটা কথা। আপনি বার্ষিক সওগাতের জন্য একটি গল্প দিয়াছেন ‘শুধু দুদিনের দেখা’ শীর্ষক। সওগাত সম্পাদক আমায় তাহা দেখিয়া দিতে দিয়াছেন। কিন্তু আপনার অনুমতি ব্যতীত তাহার একটি অক্ষর বদলাইবারও সাহস নাই আমার, আমি লেখাটি পড়িয়াছি। যদি ধৃষ্টতা মার্জনা করেন – তাহা হইলে আমি উহার এক-আধটু অদল-বদল করিয়া ঠিক গল্প করিয়া তুলিবার চেষ্টা করি। সামান্য এক আধটু বাড়াইয়া দিলেই উহা একটা ভালো গল্প হইবে। অবশ্য এ স্পর্ধা আমার নাই যে আপনার লেখার তাহাতে কিছুমাত্র সৌন্দর্য বা গৌরব বাড়িবে।

মনে হয় গল্পটা বড্ডো তাড়াতাড়ি লিখিয়াছেন। উহা যেন আপনার অযত্ন-লালিতা।

অবশ্য আপনার অসম্মতি থাকিলে যেমন আছে তেমনটা ছাপিবেন সম্পাদক সাহেব। আপনার অমত থাকিলে স্পষ্ট করিয়া লিখিবেন, কিছু মাত্র দুঃখিত হইব না তাহাতে।

আর আমার লিখিবার কিছু নাই। আপনার খবরটুকু পাইলেই আমি নিশ্চিত হইতে পারিব।

হাঁ আর একটি কথা। আমার আজ পর্যন্ত লেখা সমস্ত কবিতা ও গানের সর্বাপেক্ষা ভালো যেগুলি সেগুলি চয়ন করিয়া একখানা বই ছাপাইতেছি ‘সঞ্চিতা’ নাম দিয়া। খুব সম্ভব আর এক মাসের মধ্যেই উহা বাহির হইয়া যাইবে।

আপনি বাংলার মুসলিম নারীদের রানী। আপনার অসামান্য প্রতিভার উদ্দেশে সামান্য কবির অপার শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ ‘সঞ্চিতা’ আপনার নামে উৎসর্গ করিয়া ধন্য হইতে চাই। আশা করি এজন্য আপনার আর সম্মতিপত্র লইতে হইবে না। আমি ক্ষুদ্র কবি, আমার জীবনের সঞ্চিত শ্রেষ্ঠ ফুলগুলি দিয়া পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা ব্যতীত আপনার প্রতিভার জন্য কি সম্মান করিব? Continue reading

আবার কখোন আসবে বর্ষাকাল

[বিস্টি ও বর্ষাকাল নিয়া কবিতার একটা ইবুক বানাইছি আমি। অই বইয়ের কিছু কবিতা এইখানে ছাপানো হইলো।]

বাংলা-ভাষায় এইরকম কোন কবি মেবি নাই যিনি বিস্টি নিয়া কোন কবিতা লেখেন নাই; বিস্টি নিয়া লেখা অনেক ভালো-ভালো কবিতা পাইবেন, এমনকি এমন কবি অনেক পাইবেন যাদের সবচে ভালো-কবিতাটা বিস্টি নিয়া লেখা; মানে, বাংলা-ভাষায় কবি হইতে হইলে বিস্টি নিয়া কবিতা লেখতে পারতে হবে আপনারে, বা কবিতা লেখতে হয় আসলে…

বাংলাদেশে সবচে বড় ঋতুও বর্ষাকাল, যদিও ‘নিয়ম অনুযায়ি’ আষাঢ়-শ্রাবন (জুন-জুলাই-অগাস্ট) বর্ষকাল, কিনতু বিস্টি সারা-বছরই হয়, চৈত্র-বৈশাখে হয় ঝড়, শরত-হেমন্তেও বিস্টি হয় কিছু, এমনকি শীতকালেও দুই-একবার বিস্টি না পড়লে ঠান্ডা’টা ঠিকমতো পড়তে পারে না; সারা বছরই বিস্টি ও বর্ষা আমাদের মন’রে ভিজায়া রাখে, বিস্টির কবিতাও লেখা হয় বেশি

আমারও অনেকগুলা কবিতা লেখা হইছে বিস্টি ও বর্ষাকাল নিয়া, নানান সময়ে লেখা সেই কবিতাগুলা এইখানে থাকলো

২.
এর আগে হেমন্তকাল নিয়া “হেমন্তে আমি তোমার গান গাই”, শীত নিয়া “শীত আসে আমাদের বসন্ত মনে” বসন্ত নিয়া “বসন্ত বাতাস”, গরমের দিন নিয়া “আ ব্রাইটার সামার ডে” নামে চাইরটা কবিতার বই বানাইছি আমি, এইটা পাঁচ নাম্বার বই

এর পরে শরতকাল নিয়া আরেকটা বই বানাবো, ছয়টা ঋতুর ছয়টা বই

পরে কখনো হয়তো ছাপাইতেও পারি, আরেকটু এডিট-টেডিট কইরা

৩.
ইচ্ছা ছিল পয়লা আষাঢ়ে বইটা পাবলিক করার, কিনতু দেখলাম এই বছরে বর্ষাকাল একটু আগেই চলে আসছে; টাইমিংয়ের একটা বেপার তো আছেই, কিনতু অইরকম দিন-ক্ষন মাইনা তো ঋতু আসে না; কখনো একটু আগে চইলা আসে, কখনো একটু পরে, কখনো একটু বেশি সময় থাকে, কখনো অল্প কিছু সময়, কিনতু ফিল করা যায় সব সিজনের ভাইব-ই

আর ফিলিংস যে সবসময় একইরকম হয় – তা তো না, কখনো মনেহয় বিস্টি আসে না ক্যান, এতো গরম! কখনো মনেহয় এতো বিস্টি ভাল্লাগে না, প্যাঁক-কাদা, বেশি বিস্ট হইলে তো শুরু হবে বন্যা! কিনতু তাই বইলা কি বিস্টি হবে না? এইরকম নানান কিছু, প্যারাডক্স…

এইসবকিছুর ভিতর দিয়া আসে আমাদের বর্ষাকাল

বর্ষাকাল। সুদূরতম পাইন। আবার কখোন আসবে বর্ষাকাল। বিরহের গান। বৃষ্টি আর ডালিম গাছের কাহিনি। সিলেট শহর। পয়লা আষাঢ়। বিকাল আসতেছে ধীরে। আবিদ আজাদ। রেইন, রেইন।মিথ্যাবাদী রাখাল। এভারেজ কবিতা। সিন্ডারেলা। আমি আর আমার টেবিল। ভৈরববাজারে সন্ধ্যা।পরদেশি মেঘ। বৃষ্টি। বৃষ্টি সুন্দর। আমাদের লোহার আত্মাগুলি। দিওতিমা। একটা হাসি-খুশি বৃষ্টির কথা। আফটার রেইন। একটা গরু বিস্টিতে ভিজতেছে। শশীদল। দীর্ঘ ক্লান্ত বর্ষাকাল। ট্রাভেলগ। বিস্টি ভালো।

 

বর্ষাকাল

মৌন রাস্তা, কাদামাখা চোখ
তোমাকে দেখে আসন্ন সকাল;

বৃষ্টির ভিতর তিল তিল ফাঁক,
ক্যারাম খেলতেছে মানুষ;

স্বল্প আলো
দীর্ঘ, বিশাল ছায়া, নিভে যাইতেছে…

/১৯৯৬

 

সুদূরতম পাইন

পাইন, দীর্ঘ বাতাস তোমারে আলোড়িত করে। কান্নায় আর কেঁপে কেঁপে ওঠা আলোগুলি

মুগ্ধ চোখ নিয়ে দেখে, তোমার পুরানো ঘ্রাণ এখনো হয় নাই মলিন।
বিশুষ্ক ল্যাম্পপোস্ট অন্ধকারে, দাঁড়ায়া থাকে;
কেন আর কি করে পাইন, তুমি দেখবে শীর্ণ ও অতিকায়
রশ্মিগুলা নিয়া যায় আমাদের

তোমার গান আমরা শুনি, অন্ধকার নিরব হলে, দীর্ঘ বৃষ্টির পথে পথে
তোমার প্রতিরূপ; কবে, কে, তোমাতে ঠেস দিয়া দাঁড়ায়াছিলো
আজ তা সত্যি মনে হয়।

উদগ্রীব একটা শিশু গাছ, যে শুশ্রুষাহীন, ছোট আর নমনীয়
কান পেতে শোনে তোমারে;

পাইন, এই সন্ধ্যায়, বৃষ্টির অন্ধকারে, তুমিও শোনো একা;
যে কেউ-ই হারিয়ে যেতে পারে

/১৯৯৮

 

আবার কখোন আসবে বর্ষাকাল

অনেক সূর্যের দিন শেষ হইলো।
এখন বর্ষাকাল।

আকাশ নুয়ে আসে
লেকের পানিতে ভাসতেছে ছোট্ট নৌকা একটা
রাস্তায় হাঁটতেছে মানুষ, ভয়ে, তাড়াহুড়া কইরা
– এই চিহ্নগুলা মুইছা যাবে।

বৃষ্টি আসলেই ধুইয়া যাবে সব।

আর আমরা ভাববো যে, কেবলমাত্র একটা বৃষ্টির পরেই একটা নতুন শুরু সম্ভব!

সকালের আকাশের দিকে তাকাই, সন্ধ্যার আলোর মতো লাগে;
দুপুরের মলিন রাস্তা – মনে হয় বিকাল
সময় ভাঙতে থাকে
আর একটা বৃষ্টির পর আবারো অপেক্ষা করি, বৃষ্টি হোক তবে!

পানিতে ভরে থাক পথ-ঘাট
আজকে বাসায় ফিরা হয়ে উঠুক আরো অ্যাডভেন্চারাস…

ডুবন্ত শহরের ভিতর খাবি খাবি খাইতে খাইতে
মানুষের বন্দীত্ব জাইগা উঠুক, একটা ঘণ্টার জন্য করুক জেলখানার চিন্তা
তারপর বৃষ্টি থামলে, রাস্তার পানি নাইমা গেলেই মনে হবে, শেষ হইলো বর্ষাকাল!

অনেক সূর্যের নিচে আমাদের রৌদ্র-তপ্ত দিন
রাতের গরমের ভিতর, লোডশেডিং-এ বারান্দায় দাঁড়ায়া দেখা
অন্ধকার আকাশে ভুস ভুস উড়ে যায় বিমান
দীর্ঘশ্বাস আসে

আবার কখোন, আসবে বর্ষাকাল!

/২০১০

Continue reading

“খাশ বাংলা” বই নিয়া – কে এম রাকিব, ইব্রাকর ঝিল্লী

[বাছবিচার বুকস থিকা রক মনু’র “খাশ বাংলা” নামে একটা বই ছাপাইতে যাইতেছি আমরা। বইটা নিয়া লেখছেন কে এম রাকিব এবং ইব্রাকর ঝিল্লী। যেহেতু একই বই নিয়া দুইটা লেখা, এই কারনে লেখা দুইটা একটা জায়গায় রাখা হইলো; যদিও দু্‌ইজনের বিবেচনা আলাদা আলাদা ঘটনাই।]

কে এম রাকিব
অন খাশ বাংলার ছিলছিলা

শুরুতে ১টা ডিসক্লেইমার দিয়া নিই।

আমার তরফে এইখানে ফাকিবাজি আছে। ১টা বই সম্পর্কে লিখতেছি অথচ পুরা পান্ডুলিপি/বইটা পড়ি নাই। যদিও ভাষা নিয়া রক মনু ভাইয়ের ভাবনার সাথে আমার পরিচয় আছে আর বইয়ের ক১টা লেখাও আগে পড়ছি, কিন্তু বইয়ে তা ক্যামনে আছে জানি না। আবার পুরা বই পড়ার মতো অবস্থায়ও নাই এখন। নানান ঝামেলা ও ব্যস্ততায় আটকায়ে আছি। ফলে সেই আগের পড়া এবং সদ্য খালি বইয়ের টাইটেল লেখা খাশ বাংলার ছিলছিলা পড়ার ভিত্তিতে এইখানে ক১টা মন্তব্য করি।

বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড বাংলা ভাষা কেমন হওয়া উচিৎ? —এই প্রশ্নের উত্তরে বাহাসের বয়স কম না। দরকারি আলাপ হইছে অবশ্য কম। আর এখনও পর্যন্ত এই বিবাদের মীমাংসা হয় নাই। প্রমিত বাংলা দুনিয়ার সকল ভাষার মধ্যে সবচাইতে জনবিচ্ছিন্ন ভাষা। এই জনবিচ্ছিন্নতার কথাও কারও অজানা না। লিঙ্গুয়িস্টিক সার্ভে অভ ইন্ডিয়া বা এলএসআইত’তে সেই ১৯০৩ সালে জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন প্রমিত বাংলা সম্পর্কে লিখছেন, ‘স্ট্যান্ডার্ড লিখিত বাংলা হইতেছে সবচাইতে অদ্ভুতুড়ে ভাষা; আমার বিশ্বাস, এইরকম অদ্ভুত জিনিস দুনিয়াতে আর ১টাও নাই। … যেখানে লিখিত রূপ সংস্কৃতের কপি করতে চায় কিন্তু উচ্চারণ করে বাংলার মতো। লেখে, লক্ষ্মী (লাক্সমি) কিন্তু উচ্চারণ করে লখখি।’ চালু থাকা প্রমিত বা মানভাষায় জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা ও ভঙ্গির জায়গা তো হয়ই নাই, উলটা আমের বুলি বুলিড হইছে। আমের জবান ও ভঙ্গি ক্লাস হেইট্রেড ও ডেমোনাইজেশনের শিকার হইছে, হইতেছে।

ভাষা-ভাবুকদের এইগুলা জানা কথা। প্রশ্নটা হইতেছে, বাংলাদেশে প্রমিতের চেহারা কেমন হবে? কিভাবে হবে। এই বিবাদ দেশে এখনও চলমান আর নানা রকম প্রস্তাবও আছে। রক মনুর খাশ বাংলার ছিলছিলা এই ধারার নতুন সংযোজন এবং সম্ভবত সবচে দরকারি ও র‍্যাডিকেল প্রস্তাব।

স্ট্যান্ডার্ড ভাষায় সাধারণত, বেশিরভাগ লোকের বাকভঙ্গির অলিখিত নিয়ম-কানুনরে, মানে ভাষার মৌল-প্রবণতাগুলারে শনাক্ত করে, সেগুলা আমলে নিয়া স্ট্যান্ডার্ড প্রস্তাব করা হয়। রক মনুর খাশ বাংলার ছিলছিলা বাংলার এই মৌল প্রবণতারে বলতেছে ‘খাশ বাংলার কানুন’, গ্রুদেব এরে বলছেন ‘প্রাকৃত বাংলা’। তবে মনুর প্রাকৃত বাংলা, গ্রুদেবের প্রাকৃত বাংলা থেকে বহুদূরে।

তাহলে, রক মনুর বিচারে খাশ বাংলা কেমন? সেই খাশ বাংলার স্বভাব-চরিত্র কেমন? বর্তমানে চালু থাকা প্রমিত থেকে সেইটা কতখানি দূরে? উত্তরে তার টাইটেল প্রবন্ধ লেখা থেকেই ২টা লম্বা উদ্ধৃতি দিতেছি। Continue reading

আমার ফিরার অধিকার: এডওয়ার্ড ডব্লিউ. সাইদ

যতদিন না ইসরাইল ফিলিস্তিনি জনগনের সাথে যা করসে সেইটার মোরাল রেসপনসিবিলিটি নিজেদের কাধে নিতেসে, ততক্ষন পর্যন্ত এই কনফ্লিক্টের কোনো শেষ হইতে পারে না

ইসরাইলের সবচে ইনফ্লুয়েনশাল দৈনিকে আগেও আমার ইন্টারভিউ ছাপা হইসে। কিন্তু এইটা ছিল সবচে লম্বা ও সবচে বেশি প্রিপারেশন নিয়া করা ইন্টারভিউ। ২০০০ সালের আগস্ট মাসের শুরুর দিকে নিউইয়র্কে রাইটার এবং জার্নালিস্ট আরি শাভিত (Ari Shavit) তিন দিন সময় নিয়া আমার সাথে কথা বলসিলেন। আমারে এই ব্যাপারটা সবচে নাড়া দিসিল যে, এরকম একটা ইন্টারভিউ ইসরাইলে জাতিয় দৈনিকে পাবলিশ হইতে পারে, কিন্তু মার্কিন আমেরিকার সেটাপে এরকম কিছু করা সম্ভব না।

– এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাইদ

নিউ ইয়র্ক রওনা হওয়ার কিছুক্ষন আগে বাড়িটা আমি দেখতে গেসিলাম। বেশি দুর যাইতে হয় নাই আমার। আমি যেখানে থাকি তার থেকা বাড়িটা মোটামুটি ৩০০ মিটারের ভেতরে এবং যাওয়ার পথে একটা পাবলিক গার্ডেনের দেখা পাওয়া যায়, যেইখানে আমার মেয়ে খেলতে পছন্দ করে। বাড়িটার স্ট্রাকচার নিয়া বলার মতো তেমন কিছু নাই। দুইতলা, কোনাকুনি, তেমন কোনো সাজসজ্জা ছাড়া প্রটেস্ট্যান্ট ঘরানার একটা আর্কিটেকচার হিসেবে বাড়িটারে কনসিডার করা যায়। তখনকার তালবিয়ার খ্রিষ্টান আরবরা বসবাসের জন্য নিজেদের সবটুকু দিয়া যেরকম ঝকমকা পরিপাটি বাড়িগুলা বানাইতেন, এই বাড়িটা তেমন না। বরং খুব বেশি ফরমাল, আয়তাকার, সামনের উঠানে একটা তালগাছ, ছোটো একটা সিড়ি আর সুন্দর একটা প্রবেশপথ। এই প্রবেশপথের কথা-ই সাইদ নিয়মিত বিভিন্ন জায়গায় বইলা থাকেন। এই তালগাছটার কথা এখনো তার মনে আছে। আর বাড়িটার আশেপাশে অন্য কোনো বিল্ডিং না থাকার বিষয়টাও। এগুলার সবই শৈশবে একটা কনভারসেশন শুইনা প্যানিকড হওয়ার আগের ঘটনাঃ কেউ একজন ইহুদিদের তরফ থেকা আসন্ন বিপদের কথা বলতেসিল। আরেকজন বলসিল, ভয়ের কিছুই নাই। সময় হইলে হকিস্টিক লাঠিসোটা নিয়া পোলাপানরাই ইহুদিদের ভাগায়া দিবে।

নিজের ফ্যামিলির বাসা ছাড়ার এগজাক্ট মোমেন্ট সাইদের মনে নাই। বাসায় শেষ দিন, বা শেষ সময়ের কোনো মেমোরিও নাই। যা ঘটসিল সেটা হইতেসে, প্রতি বছরের মতো ঐবারও শীতের শুরুতে উনারা কায়রোর বাসায় ফিরা গেসিলেন। কিছুদিন পরে সাইদ শুনসিলেন, ফিলিস্তিনে ভয়ংকর কিছু একটা ঘটসে। আর আস্তে আস্তে, আরো পরে তিনি বুঝতে পারসিলেন, তারা আর ফিরা যাইতে পারবেন না। জেরুজালেমে তাদের আর কোনো জায়গা নাই। তাদের কিছু আত্মিয় এবং ফ্যামিলি ফ্রেন্ড নিজেদের সবকিছু হারায়া এখন রিফিউজি হয়া গেসে।

আগস্টের শুরুতে সামার ভ্যাকেশনের মাঝামাঝি সময়টাতে নিউ ইয়র্কের আধা-খালি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি একলা একটা জায়গা। আর ফিলসফি ডিপার্টমেন্টের করিডোরে যেন অন্ধকার তার ডালপালা ছড়ায়া নিয়া বসছে। কিন্তু পাচ তলার উপরে এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাইদের অফিসটা ভালোই চওড়া, আর আলো-বাতাসের সুন্দর যাতায়াত সেইখানে আছে। বিভিন্ন ভাষার ডকুমেন্ট, বই আর জার্নালের গাদাগাদিতে ভর্তি এই রুমে কমফোর্টেবল একটা বিশৃঙ্খল ব্যাপার আছে। সবকিছুর মাঝে একটা কর্নারে ইয়েশ গভুল মুভমেন্টের একটা পুরানা পোস্টার ঝুলতেসে যেইটাতে লেখা: Don’t say ‘I didn’t know.’ আর তারও উপরে একটা শেলফে দেখা যাইতেসে সোনালি রঙের ফিলিস্তিনের একটা ম্যাপ।

গত এক বছরে তার চুল সাদা হয়া গেসে। পাকস্থলি ক্যান্সারের বাইড়া যাওয়ার বিষয়টাও বেশ ভোগাইতেসে উনারে। এতো কিছুর পরেও এডওয়ার্ড সাইদ এখনো হ্যান্ডসাম একটা মানুষ, নিজের এপিয়ারেন্স ও ড্রেসের ব্যাপারে বেশ সচেতন। জ্যাকেটের পকেটে সিল্কের একটা রুমাল দেখা যাইতেসে আর ডেস্কে রাখা পেলেগ্রিনোর বোতলের দিকে যখনই হাত বাড়াইতেসিলেন, গোল্ডের ঘড়িটা চকচক কইরা উঠতেসিল।

পারসোনালিটির দিক থেকা সাইদের তুলনা হয় না কারো সাথে। পশ্চিমের সবচে ফেমাস ফিলিস্তিনি ইনটেলেকচুয়াল খুবই মাইডিয়ার টাইপের মানুষ। একইসাথে জ্ঞানি এবং চালাক। খুবই পলিটিকাল, ইমোশনাল, সেইসাথে সেন্স অফ হিউমারওয়ালা একটা লোক। খুব সহজে তিনি দান্তের পোয়েটিক কথাবার্তা থেকা স্টার্নহেলের জায়নিস্ট-প্যাদানো আলাপে গিয়া আবার একই জায়গাতে ফিরা আসেন। বিভিন্ন ভাষা ও কালচারাল লেভেলের মাঝামাঝি যে জায়গায় উনার বসবাস, নিজের আলাদা আলাদা আইডেন্টিটি, সেগুলার মধ্যে দিয়া চলাফেরা করতে তিনি বেশ আনন্দ পান। যেন বা একইসাথে ব্রিটিশ, আমেরিকান ও আরব হওয়ার বিষয়টারে উনি সেলিব্রেট করতেসেন। একইসাথে রিফিউজি ও অভিজাত, সাবভার্সিভ ও কনজারভেটিভ, লিটারারি একজন ব্যক্তি ও প্রোপাগান্ডিস্ট, ইউরোপিয়ান ও মেডিটেরেনিয়ান।

টেপ রেকর্ডার চালু করার আগে সাইদ আমার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়া বিস্তারিত জানতে চাইলেন। আমি কতোদিন ধইরা ইসরাইলে আছি, আমার ফ্যামিলি কোথা থেকা আসছে এইসব। আর আস্তে আস্তে আমরা আমাদের কমন এলাকা নিয়া কথা বলতে শুরু করলাম। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় আগে কিছু সময়ের জন্য সেইখানে তিনি থাকতেন। এখন ঐখানে আমি থাকি। আর আমরা কথা বললাম আমাদের দুইজনের পরিচিত বিভিন্ন বিল্ডিংগুলা নিয়া। আমাদের দুইজনের পরিচিত অনেকগুলা পদবিওয়ালা ফ্যামিলির ব্যাপারেও কথা হইল। আমি চেষ্টা করতেসিলাম, আলাপের ভেতর খুব সতর্কতার সাথে সবচে সেন্সিটিভ জায়গাটা নিয়াও নাড়াচাড়া করতে, যেহেতু তিনি আমার ‘অপর’ (Other)। আমি তার ‘অপর’। এবং আমাদের আজিব ও ট্রাজিক ইন্টিমেসি। তার, আমার ও তালবিয়ার মধ্যে।

/আরি শাভিত; আগস্ট, ২০০০

প্রফেসর সাইদ, আপনার মতো রেকগনাইজড একজন স্কলার গ্রীষ্মের শুরুর দিকে লেবানিজ বর্ডারে ইসরায়েলি আর্মি পোস্টে পাথর মারসে শুইনা বহু ইসরায়েলি এবং নন-ইসরায়েলি অবাক হইসে। দক্ষিণ লেবানন থেকা ইসরাইল চইলা যাওয়ার পরেও কোন জিনিসটা আপনারে দিয়া এরকম আজিব একটা কাজ করাইসিল?

একটা সামার ভিজিটে আমি লেবানন ছিলাম। ঐখানে আমি দুইটা লেকচার দিসি এবং বন্ধুবান্ধব আর ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে কিছুদিন ছিলাম। তারপর হিজবুল্লাহ’র [/ref]লেবানিজ শিয়া ইসলামিস্ট পলিটিকাল পার্টি ও মিলিট্যান্ট গ্রুপ সাথে আমার একটা মিটিং হয়। খুবই ইম্প্রেসিভ মনে হইসে মানুশটারে। খুব সিম্পল, বেশ ইয়াং, এবসলুটলি নো বুলশিট। আমেরিকার এগেনস্টে ভিয়েতনাম যে স্ট্রাটেজি ফলো করসিল, ইসরাইলের বিরূদ্ধেও এই লোক সেইম জিনিস এডপ্ট করসিলেনঃ অদের সাথে আমরা ফাইট করতে পারবো না কারন অদের হাতে আর্মি, নৌবাহিনি আর নিউক্লিয়ার বোমা আছে, কাজেই অদের সাথে ফাইট করার একমাত্র উপায় একের পর এক কফিন পাঠায়া তাদের বুঝায়া দেয়া। আর এগজাক্টলি এই কাজটাই তিনি করসেন। মিডল ইস্টে যতো পলিটিকাল লিডারের সাথে আমি দেখা করসি, তাদের ভেতর একমাত্র এই লোকটাই ঠিক সময়ে মিটিংয়ে আসছিলেন। বিষয়টা নিয়া খুবই ইমপ্রেসড হইসিলাম আমি। তার আশেপাশে কালাশনিকভ হাতে কোনো লোকজন ছিল না। আমরা এই ব্যাপারে একমত হইসিলাম যে, ফিলিস্তিনি অধিকার রিক্লেইম করার রাস্তায় অসলো চুক্তি পুরাপুরি ইনেফেক্টিভ একটা জিনিস ছিল। তিনি আমারে বলসিলেন যে, দক্ষিণ অঞ্চলটা আমার অবশ্যই একবার গিয়া দেইখা আসা উচিত। তাই কিছুদিন পর আমি গেসিলাম ঐখানে।

আমরা ছিলাম নয়জন। আমার ছেলে আর অর ফিয়ান্সে, আমার মেয়ে আর অর ফ্রেন্ড, আমি ও আরো কয়েকজন। সাথে লেবানিজ একজন গাইড। প্রথমে আমরা গেলাম খিয়াম কারাগারে জায়গাটা আমাদের সবার ওপর কঠিন ছাপ ফেলসিল। জীবনে অনেক বাজে জায়গা আমি দেখসি কিন্তু, এইটা ছিল সম্ভবত সবচে বাজে। অনেকগুলা সলিটারি কনফাইনমেন্ট সেল আর টর্চার চেম্বার। অদের ইউস করা ইলেকট্রিক প্রোবগুলাসহ টর্চার করার বিভিন্ন ইনসট্রুমেন্ট তখনো রয়া গেসিল ঐখানে। মানুষের পেশাব-পায়খানা আর অত্যাচারের গন্ধে ভরা ছিল জায়গাটা। এই হরর ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আমার মেয়ে গোঙ্গানি কইরা কানতে শুরু করসিল।

সেখানে থেকা আমরা ডিরেক্ট বর্ডারে গেলাম। জায়গাটার নাম ছিল বোয়াবিত ফাতেমা, ফাতেমা গেট (Bowabit Fatma, Fatma’s Gate)। শত শত টুরিস্ট ঐখানে প্রচুর পরিমাণ কাটাতারের মুখামুখি দাড়ায়া ছিল। আরো প্রায় ২০০ মিটার দূরে ছিল একটা ওয়াচ-টাওয়ার। এইটাও কংক্রিট আর কাটাতার দিয়া ঘেরাও করা। সম্ভবত টাওয়ারে ইসরাইলি সৈন্যরা ছিল, কিন্তু আমি দেখি নাই তাদের। টাওয়ারটা মোটামুটি ভালোই দূরে ছিল।

আমার রিগ্রেটের জায়গাটা হইতেসে, (পাথর মারার) বিষয়টা মানুষের কাছে ক্লিয়ারলি প্রকাশ পায় নাই। লোকে ভাবসে আমি হয়ত কারো দিকে পাথর মারতেসিলাম। কিন্তু আসলে ঐখানে কেউ ছিল না। ঘটনা হইতেসে, আমার ছেলেসহ আরো কিছু ইয়াং পোলাপান দেখতেসিল কে কতোদুরে পাথর ছুইড়া মারতে পারে। আমার ছেলে যেহেতু বেসবল খেলা বিশাল বডির আমেরিকান, অর পাথরটাই সবচে দূর পর্যন্ত গেসে। আমার মেয়ে তখন বলল, ‘আব্বু, তুমি ওয়াদি (Wadie) পর্যন্ত একটা পাথর ছুইড়া মারতে পারবা?’ আর জিনিসটা তখন ইদিপাল (Oedipal) একটা কমপিটিশন হয়া দাঁড়াইল তখন। তাই আমিও একটা পাথর ছুইড়া মারসিলাম।

Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →