নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭)
মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা হিসাবে ‘জীবন থেকে নেয়া’রে (১৯৭০) যতোটা হাইলাইট করা হয়, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’র (১৯৬৭) কথা ততোটা শুনবেন না। অথচ যদি সোশ্যাল ইমপ্যাক্টের কথা চিন্তা করেন, সিরাজউদ্দৌলা ম্যাস লেভেলে ‘বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার’ আইডেন্টিটিটা ছড়ায়া দেয়ার কাজটা করছিল। যেইখানে একটা মিডল-ক্লাস অডিয়েন্সের বাইরে ‘জীবন থেকে নেয়া’ যাইতে পারারই কোন কারণ নাই, এর এসথেটিক এপ্রোচের কারণেই। কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমার রিডিং-এ এইটারে আমরা বানাইছি ‘মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা’ আর ‘সিরাজউদ্দৌলা’র কোন নাম-গন্ধও নাই।
/আ ক্রিটিকাল হিস্ট্রি অফ বাংলাদেশি সিনেমা, ২০২২
১. মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা
১৯৬৭ সালের ১২ই জানুয়ারি রিলিজ হওয়া খান আতাউর রহমানের “নবাব সিরাজউদ্দৌলা” (১৯৬৭) যে ‘মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা’ – এই রিকগনিশন কোথাও পাইবেন না! ১৯৬৭ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বা ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’র ধারনা তো ক্লিয়াললি ভিজিবল হইতে পারে নাই, কিনতু পুরা সিনেমা জুইড়া দেখবেন ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ নিয়া প্যাশোনেট কথা-বার্তা। এমনকি সিনেমা শুরু-ই হইছে ‘দেশপ্রেমের’ গান – “ও আমার জন্মভূমি মাগো মা…” দিয়া; এবং এই ‘দেশপ্রেম’ পুরাটাই ‘বাঙালির’ এবং ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদে’ ভরপুর; পুরা সিনেমাতে পাকিস্তান শব্দটাও কোথাও পাইবেন না। তারপরও এই সিনেমারে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের পুর্ন-জাগরনের’ মুভি বইলা ভাবতে না পরার কতোগুলা কারন তো আছেই।
এক নাম্বার ঘটনা হইতেছে, যেইটা বলতেছিলাম, তখনকার কনটেসকটে তো ইনডিপেনডেনসের কোন ক্লেইম নাই বা ছিল না, বরং ব্রিটিশ-বিরোধি মুভমেনটে পুব-বাংলাও শামিল ছিল – এইরকম একটা হিস্ট্রিকাল ক্লেইমই ছিল। এই সিনেমারে তখন পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি থ্রেট হিসাবে দেখা তো হয়-ই নাই, বরং এই সিনেমা উর্দু-ভার্সনেও রিলিজ দেয়া হইছিল একইসাথে পশ্চিম পাকিস্তানে, এবং ৩২ সপ্তাহ ধইরা চলছিল। দুইটা ন্যাশনাল (নিগার) এওয়ার্ডও পাইছিল মনেহয়। মানে, হিট-সিনেমা ছিল একটা! এখন যেই সিনেমা পাকিস্তানে ‘নিন্দনীয়’ হইতে পারে নাই, সেইটারে ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের’ ঘটনা হিসাবে রিড করবো কেমনে আমরা! এইটাই হইতেছে ফ্যাক্টচুয়াল ডিলেমাটা।
মানে, এই যে হিস্ট্রিকাল ভিউ-পয়েনট থিকা আমরা দেখি, সেইটারেই প্রবলেমেটিক মনে করি আমি। ১৯৪৭’র পর থিকা পুব-পাকিস্তান কখনোই একটা কনফেডারেশনাল স্টেইট হওয়ার দাবি ছাড়ে নাই, ১৯৫৪’র ইলেকশনে যুক্তফ্রন্ট যে জিতলো এবং মুসলিম লীগ নাই হয়া গেলো, সেইটার কারনও ছিল যে পুব-পাকিস্তানরে অনেক কিছু আলাদা কইরা দিতে হবে, এবং এরই পলিটিকাল মেনিফেস্টশন হইতেছে এই সিনেমা। তখন ১৯৬৬’র ছয় দফাও চলে আসছে, যেই জায়গাতে এই সিনেমা ‘বাঙালি’ আইডেনটিটিরে শেইপ-আপ করার কাজটা করছে, পলিটিকালি। এই জায়গাটা নিয়া ডাউট করাটা মোটামুটি ইমপসিবল-ই হবে আসলে।
সেকেন্ড হইতেছে, খান আতাউর রহমান নিজে; যিনি মুক্তিযুদ্ধের পরে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ (১৯৭৩) [যেইটা এখন বাংলাদেশে আন-অফিসিয়ালি নিষিদ্ধ] সিনেমা বানায়া মুক্তিযুদ্ধের ইনডিয়ান-নেরেটিভ’টারে বিপদে ফালায়া দিয়া ‘বির্তকিত’ হয়া উঠছেন! তো, উনারে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ একজন সার্পোটার হিসাবে দেখলে তো বিপদ! এইটার কনট্রিবিউশনও এইখানে আছে।
থার্ড হইতেছে, এইটা তো যাত্রা-সিনেমা! মানে, বাংলাদেশি সিনেমা আসলে শুরু-ই হইছে ‘রূপবান’ (১৯৬৫) থিকা; যেইটা গেরামের যাত্রা’র একটা সিনেমা-এডাপশন; তখনকার সময়ে ‘আধুনিক’ হইতে চাওয়ার বিপরীতে এইগুলা তো ‘কুসংস্কারচ্ছন্ন’ ঘটনা, এবং কোনভাবেই ‘আর্ট’ হয়া উঠার যোগ্য না – এই নেরেটিভ এখনো খুবই স্ট্রং, যার ফলে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ও যেহেতু যাত্রা-পালা হিসাবে পপুলার ছিল, তারে ‘সিনেমা’ হিসাবে ‘স্বীকৃতি’ দেয়াটাই তো টাফ! এখন না হয় ‘অরিয়েন্টালিজম’ শিখার পরে নাম নিতে রাজি হইতে পারি আমরা, সেইটা তো কয়দিন আগেও পসিবল ছিল না আসলে।
Continue reading