Main menu

এডগার এলান পো’র ফিকশন: ইলিয়োনোরা

পো’র মাধ্যমেই কবিতার প্রতি ভালোবাসা জন্মাইসিল আমার। আরো ৭-৮ বছর আগে, প্রথম যখন ওর রেভেন কবিতাটা পড়লাম, তব্দা খায়া গেসিলাম। পরে যে মজার জিনিসটা খেয়াল করসিলাম, যে এরপরে মেজর যত লেখক বা কবির লেখাপত্রের সাথে পরিচয় হইতেসে তারা প্রায় সবাই-ই কোনো না কোনো পর্যায়ে পো’র লেখাপত্র দিয়া ভালোভাবেই প্রভাবিত হইয়া আসছে। জীবনানন্দের বেশকিছু কবিতা পো’র কবিতার ভাবানুবাদ এমন আলাপ তো পুরানোই। বোদলেয়ারেরও সাহিত্যজীবন শুরু হইসিল পো’র লেখা ফরাসিতে অনুবাদ কইরা। লাভক্র‍্যাফট আলাদা একটা ঘরানা তৈরি করসিল পো’র হররের টেকনিকের উপর দাঁড়ায়ে। এমনকি প্রথম গোয়েন্দা উপন্যাসও লিখসিল এই ব্যাটা, যার থেকে ইন্সপিরেশন নিয়া পরে আর্থার কোনান ডয়েল শার্লক হোমস লিখলো। এরম আরো অনেক বলা যাবে। তো, আমার ধারণা হইলো ওই শতকে সাহিত্যের দুনিয়ায় সে ছিল একটা ইভেন্ট। মানে এডগার অ্যালান পো হইয়াই আসতে হইত লেখকদের।

এইটার কারণও আছে। ওর মত কনশাস লেখক সম্ভবত খুব কমই ছিল। গল্প-কবিতার পাশাপাশি পো ছিল একজন সাহিত্যসমালোচক। সমসাময়িক লেখকদের খুবই নির্মমভাবে ক্রিটিক করতো, যেই কারণে অনেকের অপছন্দেরও ছিল সে। তা যাইহোক, এই সাহিত্যসমালোচকের নজর সে নিজের লেখা হইতেও সরায় নাই সম্ভবত। গল্প লেখার বেলায়ও তার কিছু রুল ছিল। একটা রুল হইলো, গল্প হইতে হবে ছোট, এক বসায় পইড়া ফেলার মত। আরেকটা রুল হইলো, প্রত্যেকটা শব্দ হইতে হবে নিরেট। মানে এমন একটা শব্দও থাকা যাবে না যা সরায়ে ফেললে গল্পের ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না। এইজন্যই দেখা যায় তার গল্পগুলা এত টানটান।

পো’র গল্পগুলার একটা কমন উপাদান হইলো হরর। কিন্তু ওর হরর একটু অন্যরকম লাগে আমার। কোনো অলীক হরর না ঠিক, যদিও তাও আছে। বরং আরো অনেক বাস্তবিক, দুনিয়াবি একটা আতংক। সবচাইতে কাছের বন্ধু, নিজের ঘরের মানুষ কেউই ভরসাযোগ্য না। এবং আরো মজার জিনিস হইসে, তাদের এই হঠাৎ মাথায় খুন চাপার কোনো কারণ আপাতভাবে খুইজাও পাওয়া যায় না, কোনো মোটিভই বলতে গেলে নাই। এই হররটা আমার কাছে ভূতপ্রেতের চাইতেও ভয়াবহ লাগে, কারণ এই হররটা অনেক বেশি বাস্তবিক, আমাদের যেকারো সাথে ঘটার সম্ভাবনা রাখে। আবার এই প্রচন্ড ভয়ানক সিনারিগুলারে পো বর্ণনা করে এত টানটান, কাব্যিক ভাষায় যে বলার মত না। ব্যাটা তো মূলত কবিই আসলে।

মাহীন হক
এপ্রিল, ২০২৪

আমি এমন এক জাতির সন্তান যারা তাদের কল্পনাশক্তি আর বাড়াবাড়ি রকমের আবেগের জন্য পরিচিত। বহু লোক আমারে পাগল বলসে; কিন্তু এই প্রশ্নের কোনো মীমাংসা এখনো হয় নাই, পাগলামি আদতে সবচাইতে উঁচু পর্যায়ের বুদ্ধিমত্তারই অপর নাম কিনা—যাকিছু মহৎ—যাকিছু গভীর—তার বিশাল এক অংশ চিরকালই উল্টাপথের চিন্তা থেকে, সাধারণ মানুষের বুদ্ধির চেয়ে উপরের কারো মেজাজ থেকেই জন্মায় কিনা। যারা দিনের বেলায়ও স্বপ্ন দেখতে পারে তারা এমন অনেক জিনিস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, যার খবর কেবল রাতেই স্বপ্ন দেখনেওয়ালারা কখনো পায় না। তাদের আবছা নজরে তারা অনন্তের খানিক আভাস দেখতে পায়, এবং ওঠার পর তারা শিউরায়ে উঠে এই জাইনা যে কোনো এক মহান রহস্যের নাগাল তারা পাইসিল। খামচায়ে খামচায়ে তারা অর্জন করে কিছু জ্ঞান যা ভালো, এবং নিছক কিছু তথ্য যা মন্দ। তারা তবু ভেদ কইরা ঢুইকা যায়, কোনো হাল কিংবা কম্পাস ছাড়াই, সেই ‘না-দেখা আলোর’ সাগরে। সেই নুবিয়ান ভূগোলবিদের অভিযানের মত, “তারা এসে পৌঁছাইছিল ছায়ার সাগরে, এখানে কী আছে তা জানতে।”

আমরা তবে বলবো যে আমি পাগল। এইটুকু অন্তত স্বীকার করি যে আমার মানসিক অস্তিত্বের দুইটা আলাদা অবস্থা আছে। একটা হইলো স্পষ্ট যুক্তিবাদী অংশ, যারে বাতিল করা যায়, এবং আমার জীবনের পয়লা ভাগের অভিজ্ঞতা হইতে তার জন্ম। আর আছে আরেক অংশ, যেইটা ছায়া ও দ্বন্দ্বের, যা আমার বর্তমান, এবং আমার জীবনের দ্বিতীয় যুগের স্মৃতি হইতে পাওয়া। সুতরাং, আমার জীবনের শুরুর দিকের যে ঘটনা বলবো, তা বিশ্বাস করেন; আর পরের দিকের ব্যাপারে যা বলবো, তারে কেবল তার যোগ্য স্বীকৃতিটুকু দিয়েন; অথবা পুরাটারেই একবারে সন্দেহের কাতারে ফালান; আর যদি সন্দেহ করতেও না পারেন, তাইলে ঈডিপাসের এই ধাঁধায় মইজা থাকেন।

সে, যারে আমি ভালোবাসতাম আমার যৌবনে, আর যার নামে এখন শান্ত ও স্পষ্টভাবে লিখতেসি এই স্মৃতিগুলা, ছিল আমার মরা মায়ের একমাত্র বোনের একমাত্র মেয়ে। ইলিয়োনোরা ছিল আমার খালাত বোনের নাম। আমরা একসাথেই থাকতাম, একই তপ্ত সূর্যের নিচে, যেই প্রান্তরে বহুরঙা ঘাস জন্মাইত। কোনো ইতস্তত পায়ের ছাপ কখনো সেইখানে পড়ে নাই, কেননা এইটা ছিল বিশাল বিশাল পাহাড়ের সারির মধ্যে দূর এক কোণায়, যেইখানে সূর্যের আলোও আসতো না। এর আশপাশ দিয়া কোনো পথ ছিল না; এবং নিজেদের সুখী ঘরে ফেরার জন্য জোর দিয়া আমাদের হাজারো গাছের ঝরাপাতা সরায়ে দিরতে হইত, এবং লক্ষ লক্ষ সুগন্ধী ফুলের দম্ভ মাড়ায়ে আসতে হইত। তো এমনই ছিল সবকিছু, আমরা একা থাকতাম আর ওই প্রান্তরটুকু ছাড়া দুনিয়ার কিছুই বুঝতাম না — আমি, আমার খালা আর তার মেয়ে। Continue reading

কত সময় গেলে প্রিয়জনরে বিদায় বলার পার্ফেক্ট টাইম হয়?

এই বছর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অব দ্যা ইয়ার হইসে যে ছবিটা সেই ছবিটা মেবি আমরা সবাই দেখসি। যারা দেখি নাই তাদের দেখার জন্য ছবিটা আমি ইনক্লুডো করে দিসি। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন হইলো এইযে ফটোগ্রাফটা ফটো অব দ্যা ইয়ার হইলো- তাতে আসলে কার কি আসে যায়?

না যুদ্ধ বন্ধ হইসে, না একটা বোমা পড়া থামসে, না মানুষের মরা কমসে, না কমসে ক্ষুধার্ত মানুষের পেটের খিদা। যেই ঘটনা গুলা এই ছবিটারে সম্ভব করসে, তার কোনোটাই কি এই ছবিটা বন্ধ করতে সক্ষম?

না, সক্ষম তো না। তাতো আমরা নিজের চোখেই দেখতেসি।

তাইলে আসলে কি লাভ? আবার করি প্রশ্নটা- কার কি আসে যায়? এর মধ্যে দিয়া আমি আরো একটা প্রশ্ন আসলে করতেসি… সেইটা হইলো, এই ডিজিটাল টাইমে যখন প্রতিদিন লাখ লাখ ইমেজ প্রোডিউস হইতেসে, তখন একজন ফটোগ্রাফারের ছবি তোলার মানেটা কি? কি অর্থ বহন করে একটা ছবি, আজকের এই সময়ে? ইমেজের ইফেক্ট কি আমাদের উপর কমতেসে?

ছবিটা আরো একবার দেখি আমরা… প্লাস আমি কি দেখতেসি তা আপনেদেরে আমি বাংলায় তরজমা করেও বলতেসি। যদিও আপনেরা নিজেরাই দেখতে পারতেসেন ইমেজ টা… তাইলে আমি ক্যান আবার ছবিটারে বাংলায় বলতেসি? বলতেসি কারণ আমি কি দেখতেসি তা আমি বলতে চাই। এমনতো প্রায়ই হয় যে আমি যা দেখি আপনে তা দ্যাখেন না… মানুষ শুধু তাই দ্যাখে যা সে দেখার জন্য প্রস্তুত থাকে, বা যা সে দেখবে বলে আশা করে। যা সে দেখতে প্রস্তুত থাকে না, যা তার আশার বাইরে থাকে- তা সে মিস করে যায়। একদম চোখের সামনে থাকলেও। তাই আমি কি দেখতেসি তা আমি আপনেদেরে বলতে চাই। প্লাস ইমেজ নিজেও তো একটা ভাষা… বাংলাও একটা ভাষা… দুইটাই আমি পড়ার চেষ্টা করি, এবং দুইটা দিয়াই আমি লেখারো চেষ্টা করি… এবং ভাষা যখন একটা থেকে আরেকটায় তরজমা হয় তখন অনেক কিছু চেঞ্জ হয়ে যায়, বাতিল হয় আবার অনেক কিছু এডো হয়। লস্ট ইন ট্রান্সলেশন বইলা একটা কথাও চালু আছে। তো সেই ব্যাপারটাই আমি আসলে করতে চাইতেসি। আমি কি বাতিল করলাম বা এড করলাম, বা কি হারায় গেলো আমার এক ভাষা থেইকা আরেক ভাষায় করা তরজমায়। তা আপনেরা আমারে জানান দিতে পারেন।

Continue reading

বুদ্ধিজীবীদের মজ্জার ভিতরেই এই জিনিসটা আছে যে তারা সবকিছু নিয়া ভুয়া আইডিয়া বানাইতে পারে – হানা আরেন্ট

জার্মানির ফ্রেইবার্গ, হেইডেলবার্গ এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন নিয়ে পড়ালেখা করছেন আরেন্ট। তারে পড়াইছেন হেইডেগার, কার্ল জ্যাসপাগো মতো বড় বড় দার্শনিক। তয় তিনি নিজেরে দার্শনিক বলেন না। উনার লেখাপত্তর সব পলিটিকাল থিওরি নিয়ে। তাই নিজেরে মনে করেন এক পলিটিকাল থিওরিস্ট। রাজনীতি আর দর্শনের ভিতর ভাইটাল একটা দ্বন্দ্ব আছে। দার্শনিকরা নিরপেক্ষ থাকতে পারে, আর পলিটিকাল থিওরিস্টগো নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব না, প্লেটোর পর কেউ থাকতে পারে নাই আরকি। দ্বন্দ্ব নাকি আছে নারী-পুরুষের বোঝাপড়াতেও। পুরুষ সবসময় চায় প্রভাব বিস্তার করতে, আর আরেন্টের মতো নারীরা চান সবকিছু বুঝতে। আরেন্ট ইহুদি। জন্মাইছিলেন ১৯০৬ সালে, জার্মানির হ্যানোভারে। বাপ মা ছিলেন ইহুদি সেক্যুলার। তিনি বড় হইছেন আর তার সাথে পাল্লা দিয়া বাড়ছে হিটলারের দাপট। যার শেষ পরিণতি তো ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ইহুদিগো একেবারে মাইরা ফেলা। আর যারা বাঁচছিলো, তারা একেবারে ফিলিস্তিন গিয়া ওঠে। এবং আমরা সবাই জানি, সেইখানে তৈরি হইছে আরেক কাহিনি।

হিটলারের অত্যাচার তুঙ্গে উঠলে দেশ ছাইড়া পালাইয়া আসেন তিনি। ফ্রান্সে ইহুদি সংগঠনগো সাথে কাজ করছেন। ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি গইড়া তুলার সাথে সরাসরি কানেক্টেড ছিলেন। কিন্তু এখন ইসরায়েল সেইখানে যা চালাচ্ছে, সেইডা তিনি দেখতে পারেন না। তাই এখনকার ইহুদি জাতীয়তাবাদিরাও তারে দেখতে পারে না। ১৯৪১ সালে তিনি আমেরিকা চইলা যান। তার একদশক পরে বই লেখালেখির মাধ্যমে একাডেমিক তাত্ত্বিক হিসাবে নিজের অবস্থানডা শক্তপোক্ত কইরা নেন।

রাজনীতিতে একটা জিনিস উনি খুব মানেন। সেইডা হইলো ‘কিছু করা’। ‘কিছু করাডা’-রে উনি অত্যন্ত পজিটিভ হিসাবে দেখেন। আর মনে করেন যে, আমাগো অবশ্যই লাইফের পুরা আনন্দ পাইতে হলে পাবলিক লাইফে আসতে হবে, ‘কিছু করতে’ হবে। আর এইডা তখনই সম্ভব হবে, যখন অন্য মানুষের উপর আমাগো আস্থা থাকবে। কম্যুনিজম নিয়া আরেন্টের বোঝাপড়া বেশ ইন্টারেস্টিং। কম্যুনিস্টগো উনি খুব একটা কাজের মনে করেন না। সমালোচনা করেন অনেক শক্ত কইরা। যুক্তি দিয়া দেখান যে এইডা পুঁজিবাদেরই অন্যরূপ। কিন্তু ওনার দ্বিতীয় স্বামী, হেনরিক ব্লুচার ছিলেন একজন কমুনিস্ট। লোকে বলাবলি করে, সমালোচনা করলেও নাকি কমুনিস্টগো উপর উনার সিমপ্যাথি ছিলো। আর আমেরিকারেও উনি পুরোপুরি সুবিধার জিনিস মনে করতেন না।

উনার বিখ্যাত বইগুলার মধ্যে আছে দ্য অরিজিন্স অফ টোটালিটারিয়ানিজম (১৯৫১), দ্য হিউম্যান কন্ডিশন (১৯৫৮), অন রেভ্যুলিউশন (১৯৬৩), ইশমান ইন জেরুজালেম (১৯৬৪)।

১৯৭৫ সালে উনি মারা যান।

সুমাইয়া ফেরদৌস
জানুয়ারি, ২০২৪

[ইন্টারভিউ’র শেষের দিকের অংশ…]

গাউস: মিস আরেন্ট, আপনার রাজনৈতিক-দার্শনিক ভাবনাচিন্তা, বা সামাজিক বিশ্লেষণ, এইগুলার মাধ্যমে আপনি যেইটা জানতে পারেন, সেইটা প্রকাশ করাটাকে কি আপনার দায়িত্ব বইলা মনে করেন? নাকি আপনি যেইটা জানেন, সেইটা নিয়া নীরব থাকারও বিষয়-আশয় থাকে?

আরেন্ট: হুম, এইটা আসলে অনেক কঠিন একটা সমস্যা। আইখম্যানের বই নিয়া যে বিতর্ক হইছিলো, শুধু এই প্রশ্নটার কারণেই ঐটা নিয়া আমার আগ্রহ ছিলো। কিন্তু আমি শুরু না করলে এইটা নিয়া কখনো কথা হইতো না। এইটাই ছিলো একমাত্র সিরিয়াস প্রশ্ন, বাকিসব হইলো পিওর প্রোপাগান্ডা। তো, প্রশ্ন হইতেছে, ফিয়াট ওয়েরিটাস, এট পেরেয়াট মুন্ডুস [দুনিয়া ধ্বংস হোক, তাও সত্য কও]? কিন্তু, আইখম্যানের বইতে আসলে এই ধরণের কোনো বিষয় ধরাই হয়নি। বইটা কোনোভাবেই কারো বৈধ স্বার্থের কোনো ক্ষতি করে না। কেউ কেউ এমনটা ভাবছে আরকি শুধু।

[ফিয়াট ইয়াস্টিয়া, এট পেরেয়াট মুন্ডুস [দুনিয়া ধ্বংস হোক, তাও ন্যায় থাক] — এইডা একটা পুরালো ল্যাটিন প্রবাদ। আরেন্ট এইটারেই ঘুরাইয়া কইছিলেন। চাইলে আরো দেখতে পারেন পাস্ট & ফিউচারের (নিউ ইয়র্ক: ভাইকিং প্রেস, ১৯৬৮) ১২৮ নাম্বার পাতা।]

গাউস: কোনটা বৈধ, সেই প্রশ্নটা অবশ্যই আলোচনার সুযোগ রাখা উচিত।

আরেন্ট: হ, সেইটা সত্য। আপনি ঠিক বলছেন। কোনটা বৈধ, সেইটা নিয়া আলোচনার সুযোগ এখনও আছে। আমি আসলে “বৈধ” [লেজিটিমেট] কইতে যেইটা বুঝাইছি, সেইটার সাথে মনে হয় ইহুদি সংগঠনগুলো যেইটা বুঝায়, তার মিল নাই। কিন্তু ধইরা নেওয়া যাক, সত্যিকারের স্বার্থ ঝুঁকিতে ছিলো, যেইটা আমিও স্বীকার করতেছি।

গাউস: তারমানে সত্য জাইনাও কেউ চাইলে চুপ থাকতে পারে?

আরেন্ট: আমি কি চাইলে চুপ থাকতে পারতাম? অবশ্যই! আসলে আমি লিখতাম হয়তো… কিন্তু দেখেন, আমারে একজন জিজ্ঞাস করছিলো, আমি যদি কোনো না কোনো একটা বিষয় ধইরা নিতাম, তাইলে কি আইখম্যানের বইটা ভিন্নরকম কইরা লেখতাম না? আমি কইছিলাম, না। বরং, বিকল্প নিয়া ভাবতাম। সেইটা হইলো, বইটা লিখবো, নাকি লিখবো না? কারণ, চাইলে কেউ চুপ কইরাও থাকতে পারে।

গাউস:হ্যাঁ।

আরেন্ট: কাউরে সবসময় কথা কইতে হবে বিষয়টা এমন না। কিন্তু এরপর যে প্রশ্নটা আসে, সেইটারে আঠারো শতকে ‘ট্রুথস অফ ফ্যাক্ট’ নামে ডাকা হইতো। এইটা কিন্তু আসলেই ট্রুথস অফ ফ্যাক্টেরই একটা বিষয়, কার কি মতামত সেইটার বিষয় না। এই ট্রুথস অফ ফ্যাক্টের গার্ডিয়ান হইলো বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ইতিহাস বিজ্ঞানগুলা পড়ানো হয়, সেইগুলা।

গাউস: তারা গার্ডিয়ান হিসাবে সবসময়ই যে ভালো, সেইটাও কিন্তু না।

আরেন্ট: না। তারা কলাপস করে। তাগোরে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে। আমারে কেউ একজন এক ইতিহাসবিদের কথা কইছিলো। সেই ইতিহাসবিদ নাকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অরিজিন নিয়া লেখা কোনো বইয়ের উপর মন্তব্য করছিলো: “আমি এইটারে ওইরকম চমৎকার একটা সময়ের স্মৃতি নষ্ট করতে দিবো না।” এ হইলো এমন এক মানুষ যে আসলে জানেনা সে কে। কিন্তু এইটা তেমন ইন্টারেস্টিং না। বাস্তবে সে হইলো ঐতিহাসিক সত্যের গার্ডিয়ান, ট্রুথ অফ ফ্যাক্টের গার্ডিয়ান। আর বলশেভিক ইতিহাস থাইকা আমরা জানি এই গার্ডিয়ানগো গুরুত্ব আসলে কতখানি। যেমন, পাঁচ বছর পর পর ইতিহাস নতুন কইরা লেখা হয়, কিন্তু সত্যি কথা অজানাই থাইকা যায়: যেমন ধরেন, মিস্টার ট্রটস্কি বইলা একজন ছিলো কিন্তু। আমরা কি এইরকম কিছু চাই? সরকার কি এইসব জিনিস নিয়া ইন্টারেস্টেড?

গাউস: এইগুলা নিয়া তারা ইন্টারেস্টেড হইতেই পারে। কিন্তু তাগোর কি এইসব করার রাইট আছে?

আরেন্ট: তাগোর কি এইসব করার রাইট আছে? দেইখা মনে হয় যে এইটা তারা নিজেরাও বিশ্বাস করে না। নাইলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলারে সহ্য করার কোনো দরকার ছিলো না তাগোর। তারমানে সত্য নিয়া রাষ্ট্রেরও আগ্রহ আছে। আমি কিন্তু মিলিটারি সিক্রেটের কথা কইতাছি না; ওইডা ভিন্ন জিনিস। কিন্তু এই ঘটনাগুলার বয়স বিশ বছর। তাইলে সত্যিটা না কওয়ার কি কারণ আছে?

গাউস: এমন তো হইতে পারে যে বিশ বছর এখনো অনেক কম সময়?

আরেন্ট: এইকথা ম্যালা মানুষ কয়; আবার অনেকেই আছে কয় যে বিশ বছর পর আসলে কেউ আর সত্যিটা খুঁইজা বাইর করতে পারে না। ব্যাপার যা-ই হোক, আসল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ব্যাপারে একটা ইন্টারেস্ট আছে। কিন্তু তার মানে এই না যে সেইটা একটা বৈধ ইন্টারেস্ট। Continue reading

পোস্ট লিবারেশন ওয়ার বাংলাদেশ আর কতগুলা বান্দর

এবং যখন শহীদুল জহিরের মুখের দিকে দেখি বইটা নিয়ে অনেককে আলোচনা করতে দেখি, দেখি এদের মধ্যে মোটামুটি সবাই বইয়ের ভুয়সী প্রশংসা করলেও কন্টেন্টকে পুরাপুরি উপেক্ষা করে যায়। এর অজুহাত হিসাবে তারা দেয় হয়তো তারা বইটা বুঝছে, হয়তো বুঝে নাই। তাই তারা তখন ভাবে বই যেহেতু তারা বুঝে নাই, খালি গল্পে কিছু আজিব আজিব ব্যাপার আছে, যেটা তাদের ভালোলাগছে, তাই তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসে জহিরের প্রশংসা করে মুখে ফ্যানা তুইলা ফালায়।

আমিও হয়তো বইটা বুঝছি, হয়তো বুঝি নাই। লেখনী হয়তো আমারও ভালোলাগছে, অথবা লাগে নাই। কে বলতে পারে, এই আলোচনা পুরাটাই হয়তো জহিরকে নিয়া এস্থেটিক পাঠকমহলের প্রিটেনশনের অংশ। কিন্তু বইটা পড়ে আমি অনেকগুলা জিনিস খেয়াল করছি। হয়তো, জহির যেই সুক্ষ্ম খোঁচাটা বইয়ের মাধ্যমে দিতে চাইছেন, সেটা আমি কিছুটা হলেও ধরতে পারছি, হয়তো পারি নাই। কিন্তু বলাতে তো দোষ নাই, তাই আমি বলে ফেলার স্পর্ধা করতেই পারি।

চানমিয়ার মাদি বান্দরের দুধ খাওয়া থেকে শুরু করে খরকোসের খাঁচায় আটকে থাকার মার্কেসীয় ধাঁচের গল্পটা আমাকে অনেকদিন মোহাচ্ছন্ন করে রাখছে। না রাখার কোনো কারন নাই; জাদুবস্তবতারে আমি অলস লেখকদের টেকনিক হিসাবে ধরলেও জাদুবস্তব সাহিত্য পড়তে আমি ভালোবাসি, গল্পে রস থাকলে আমার ভালোলাগে। জহির বাংলাদেশি সাহিত্যে ল্যাটিন আমেরিকান জাদুবাস্তবতার আমদানি করছেন, এটা আমার জানা ছিল।

কিন্তু জহিরকে অনেকদিন ফালায় রাখছিলাম এই ভাইবা, যে জহির হয়তো বাংলাদেশের তথাকথিত সেই প্রখ্যাত সাহিত্যিক গোষ্ঠীর মতই তাদের আষাঢ়ে গল্পরে গ্রহনযোগ্য করতে জাদুবাস্তবতার নাম দিয়া চালায় দেয়, অথবা দেয় না। কিন্তু পড়ার পর দেখলাম, তাঁর জাদুবাস্তবতা খুব সাট্ল, বুঝা যায় কিছু একটা হইতেছে, কিছু একটা গলদ আছে, কিন্তু কী গলদ আছে তাই বলা যায় না। তার গল্পে সবকিছু plausible, হইতে পারে, আবার নাও হইতে পারে। বাস্তবে না ঘটাই বেশি স্বাভবিক। এমন না যে ওইসব হইতেই পারে না, আজাইরা জাদুবস্তবতার মতো কোনো কার্পেট আকাশে ওড়ে না বা কাটা মাথা কথা কয় না। Continue reading

ডায়েরি : ঢাকা খ্রিশ্চিয়ান গ্রেইভইয়ার্ড

ঢাকায় আইসা আমার কোনদিনই গা ছমছমে টাইপ ফিলিংস হয়নাই৷ কিন্তু আজকে ভোরবেলা চারশ বছরের পুরানা ওয়ারীর খ্রিশ্চিয়ান গোরস্থানটাতে ঢুইকা যে ভয়টা পাইছি তা আর বলার মত না!

অনেকদিন ধইরাই এই গোরস্থানে যামু যামু ভাবতেছিলাম৷ সারা রাত না ঘুমায়ে সাত সকালে নাফিরে বললাম – চলো মামা ঘুইরা আসি৷ নাফি যে রাজি হইবো— জানতাম৷ গোপালের কাচা ঘুম ভাঙাইলাম৷ কেমনে যামু জিগাইতে ও কইলো – বলধা গার্ডেনের অপজিটেই তো! এক ঢিলে দুই পাখি মারার আনন্দ হইলো ৷ বলধা গার্ডেনেও যাই নাই কোনদিন। ঠিক করলাম আগে বলধা গার্ডেনেই ঢুকি ৷ ওয়ারীর রিকশা সূর্য উঠার সাথে সাথে আমাদের বলধা গার্ডেন গেইটে নামায় দিলো ৷

বসন্ত যেন একলাই ফুইটা আছে এই এলাকায়! তাও নিরিবিলিতে। আগে দেখিনাই এমন ছয় সাত রকমের ফুল দেখলাম৷ নতুন গাছও চিনলাম অনেকগুলা ৷ সারা উদ্যানেই ডায়বেটিস, হার্টের রোগী, মিড ও এইজড লাইফ নরনারী চারপাশে ভয়ংকর তাড়া নিয়া হাটাহাটির নামে ছোটাছুটি করতেছেন ! বলধা গার্ডেনের দুইটা উদ্যান! সাইকি আর সিবলী ৷ সাইকি বন্ধ থাকে বিধায় সিবলীর উপর বেশি চাপ থাকে ৷ সেই চাপের কারনেই বসন্ত সম্পর্কে কারো ফ্লাইং ফাক দেয়ার টাইমটাও নাই । ম্যাক্সিমাম লোকজনের চেহারাতেই বয়স হওয়ার কারনে ডরের ছাপ, থলথলে ভুড়ি আর ম্যাক্সিমামেরই চুলে পাক ধইরা গেছে৷ ওল্ড ম্যানস কেইভ পুরা ! মহিলারা হাটাহাটির ক্ষেত্রে বেশি একটিভ ৷ মশার কারনে বেশিক্ষণ ঘুরতে পারলাম না ৷ তারপরেও দারুন আরাম লাগলো ৷ কিন্তু মজা হইলো বের হবার সময় ৷ এক লোক থামাইলো আমাদের ৷ বললো— টিকেট নেন ৷ বিশ টাকার টিকেট ৷ টিকেট দিয়াই সামনে একটা ঝুড়ি দেখায় দিলো ৷ বললো— ছিড়া ফালায় দেন! লোকটারে ইন্টারেস্টিং লাগলো ৷ জিগাইলাম— ভাইয়ের নাম কী? কঠিন রাইগা গেলেন উনি! বললেন— আপনারে নাম বলা তো আমার ডিউটি না ভাই! ডিস্টার্ব কইরেন না!

এই ঘটনা নিয়া হাসতে হাসতে বলধা গার্ডেন থিকা বাইর হয়া গোরস্থানের রাস্তা ধরলাম ৷ হাটতে হাটতে মনে হইলো এই গোরস্থান আর্মেনিয়ানটা গোরস্থানটার থিকা দ্বিগুন তিনগুন বড় হবে ৷ ভাল ছবি পাইতে পারি প্লাস সাথে ভাল একটা ক্যামেরাও আছে — আনন্দে মনটা পুরা চনমন কইরা উঠলো! Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →