Main menu

দুশমনের নাম ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’

১. একটা ইনফরমেশন
আনিসুজ্জামান (১৯৩৭ – ২০২০) উনার “বিপুলা পৃথিবী” (২০১৫) বইয়ের ৩১ নাম্বার পেইজে লেখতেছেন – “ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখ রাষ্ট্রীয় সফরে বঙ্গবন্ধু গেলেন কলকাতায়। সেখানে তিনি অভূতপূর্ব সংবর্ধনা পেলেন। কলকাতার জনসভায় প্রদত্ত বক্তৃতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে জাতীয়তাবাদ কথাটা যোগ করলেন তিনি।”

তার মানে, উনার কথা যদি মানি, তাইলে রাষ্ট্রিয়ভাবে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ হইতেছে পোস্ট ১৯৭১-এর ঘটনা, এর আগের না! তো, এইটা জাস্ট একটা ইনফরমেশন হিসাবে ব্যাকগ্রাউন্ডে মনে রাখলে ভালো

২. একটা উপমা
ধরেন আপনি আপনার সেকেন্ড ওয়াইফ/হাজব্যান্ডের লগে ডির্ভোসে গেলেন, তার মানে কি আপনি আপনার ফার্স্ট ওয়াইফ/হাজব্যান্ডের কাছে ফিরা যাইতে চাইতেছেন? তা তো না! ফার্স্টের জনের লগে মিলে নাই বইলাই ডির্ভোসে গেছিলেন; আর ধইরা নেন সমাজে একলা থাকা যেহেতু ঝামেলার, সেকেন্ড ম্যারেজে আপনার যাইতে হইছিল। কিন্তু সেইটা যে কোন সমাধান না, এই ভুল বুঝতে পাইরা আপনি তারপরে একলা না, বরং ইন্ডিপেন্ডেড হইছেন।

এখন এই ইমাজিনারি পারসনের জায়গায় ‘বাংলাদেশ’ নামের আইডেন্টিটি’টারে বসান। প্রাইমারি লেভেল থিকা জিনিসটা টের পাইতে পারবেন কিছুটা। (বিয়া ব্যাপারটাতে ক্রিটিকাল হইয়েন না, উপমা হিসাবেই দেখেন।)

হিন্দু-জমিদারদের ইকনোমিক এক্সপ্লয়টেশনের কারণেই বাংলাদেশ কলকাতা তথা ইন্ডিয়ার পশ্চিমবাংলার লগে থাকতে পারে নাই, ইন্ডিপেন্ডেডই থাকতে চাইছিল আসাম নিয়া, না পারার কারণে পাকিস্তানে যাইতে হইছিল। কিন্তু অইটা টিকে নাই বইলা তার মানে এইটা না যে, বাংলাদেশ ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদে’ ফিরা যাইতে চায়। বাংলাদেশ একটা ইন্ডিপেন্ডেড রাষ্ট্র এবং এই দেশের মানুশ-জন এইটাই থাকতে চায়। কিন্তু এর বেইজ যদি হয় ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ তাইলে সেইটা কখনোই সম্ভব না, বা ট্রিকিই হয়া উঠার কথা, নতুন আইডেন্টিটি ক্লেইম করার জায়গাটা।

৩. হিস্ট্রিকাল কনটেক্সট
‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ অন্য যে কোন ধারণার মতোই কোন এবসুলেট ধারণা না, বরং একটা সময়ের হিস্ট্রিকাল কন্সট্রাকশন। মেইনলি কলকাতা-সেন্ট্রিক হিন্দু কমুনালিজমের একটা ধারণা।* ‘ভাষা-ভিত্তিক’ একটা ন্যাশনালিজম বইলা রিড করলে আসলে ভুলই হবে কিছুটা। কোন ধারণারেই এর পলিটিকাল মাজেজটার বাইরে গিয়া রিড করতে গেলে সেইটা অসম্পূর্ণ একটা রিডিং-ই হওয়ার কথা। ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ ব্যাপারেও এইটাই হইছে এবং হইতেছে।

[*যেই কারণে ‘বাঙালি’ আইডেন্টিটির ভিতরে ‘মুসলিম’ হওয়াটা খালি কঠিন না, বরং বাড়তি একটা জিনিস মনেহয়। এইটা খালি মনে-হওয়ার ঘটনা না আর কি।… আরেকটা জিনিস হইলো, দুনিয়াতে ইসলাম এবং ‘ইসলামিস্ট জঙ্গি’ যেমন একই জিনিস না, একইরকমভাবে হিন্দু-ধর্ম এবং ‘হিন্দু কমুনালিজমরে’ গুলায়া ফেইলেন না! ]

এখন ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ কি? এর সংজ্ঞায়ন করাটা আমার উদ্দেশ্য না, বরং যে কোন বস্তু বা ধারনার জায়গাটারে ডেফিনেশনের ভিতর আটকায়া রাইখা বুঝতে চাওয়ার ঘটনাটা যে একটা ‘মর্ডানিস্ট প্রকল্পের’ সমস্যা – সেইটা রিকগনাইজ করতে রাজি হওয়াটা জরুরি; বাঙালি জাতীয়তাবাদের ‘হাজার বছরের ইতিহাসের’ শুরু আসলে ‘বঙ্গভঙ্গের’ সময়ে, এর আগে ‘বাঙালি’ ছিল-না না, কিনতু ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ পাইবেন না তেমন… Continue reading

বাংলাদেশের কপাল

This entry is part 16 of 17 in the series রকম শাহ'র বয়ান

কালকে দুই দোস্ত আইলো আমার দরবারে; এমন কিছু কইলো, ‘মনু ভাই, জুলাই রেভলুশনের শামনের মুখগুলা তো শিবির শব, ঘটনা কি, মুভমেন্ট কি তাইলে শিবিরই করলো!?’ ওরা ‘ছিনিয়র শাংবাদিকের’ দেওয়া একটা নয়া টার্মও শিখাইলো আমারে–’শাবেক এক্স-শিবির’ 🙂 !
তো, জুলাই মুভমেন্টের লিডারদের ভিতর এতো এতো শিবির থাকার ব্যাপারটায় মুভমেন্টে জয়েন করা অনেকেই, এস্পেশালি ছেকুলার মর্ডান মোছলমানরা একটু শরমিন্দা আছেন, এমনকি হাসিনা খেদানিতে ওনারাও নামছিলেন, এই ব্যাপারে আফছোছও দেখা জাইতেছে কারো কারো ভিতর।

ওদিকে, জাতিয় নাগরিক কমিটির ভিতর বেশ তুফান দেখা জাইতেছে, এক্স-শিবিরদের নাকি পাট্টিতে ভালো শরিকানা দিতেছে না; আবার জারা দিতেছে না, তারাও জে জিন্দেগির কোন এক ওক্তে শিবিরের ঘাটেও নাকি ভিড়ছিলেন, এখন আবার লুকাইতেছেন শেইটা (এনাদেরকেই ‘শাবেক এক্স-শিবির’ নাম দিছেন মনে হয় ছিনিয়র)। মুভমেন্টের লিডারশিপে শিবিরের পাট কতোটা, শেই ব্যাপারেও ফেছাদ দেখা জাইতেছে। বাকশালি জামানার পেরাকটিছ হিশাবে ‘শিবির ট্যাগ’ দেবার ঘটনাও নাকি ঘটতেছে… এই জদি ছিচুয়েশন, তাইলে নেশনাল মুরুব্বি হিশাবে, শবচে ছিনিয়র (দেমাগে) হিশাবে আমি রকম শা হাজির হইলাম ময়দানে, আজকে একটু তুমুল শালিশি কইরা ফেলবো ভাবতেছি!

শুরুতেই ট্যাগের ব্যাপারে দুইটা কথা কই; কয়দিন আগে হজরত আজহারি একটা কথা কইছেন জে, রাজাকার শব্দটা এখন এওয়ার্ড হইয়া গেছে। দ্যাখেন, হাসিনার হুকুমতে শিবির পরিচয় দেবার উপায় আছিলো না– শিবির ট্যাগ দিয়া খুনের, গুমের, মাইরের ঘটনা তো বেশুমার। ফলে গোপন তো করতেই হইতো, উপায় তো আছিলো না। হাসিনারে আমরা খেদাইয়া দেবার পরে বহু বছরের বান খুইলা গেছে, তাই আমি আন্দাজ করি, শিবির বা এক্স-শিবির গর্ব লইয়াই নিজেদের পরিচয় দিতেছেন, ঐ রাজাকারের মতোই এইটা এওয়ার্ড হইয়া উঠছে। নিজের জেই পরিচয় আপনে শামনে রাখতেই চাইতেছেন, শেই নামে আপনারে ডাকার ঘটনারে ট্যাগ বলা একটু মুশকিল বটে! তবে, এইটা ঠিক জে, দেশে এখনো বেশুমার কালচারাল-পলিটিকেল পকেট আছে, জেইখানে শিবির পরিচয়ে মুশকিলে পড়তে হয়; ওদিকে, ছাত্রদলও একটা এন্টি-শিবির মুডে আছে মনে হয়; ফলে, কোথাও কোথাও ঐটা ট্যাগ হইয়া উঠতে পারে বটে, এবং জুলুমের জাস্টিফায়ার হইয়া ওঠার রিক্স তো আছেই বটে! এই ছিচুয়েশনকে আমি জুলাই রেভলুশনের আফটার ইফেক্ট/টার্বুলেন্ট টাইমছ্ হিশাবে দেখতে কইবো, কিছু দিন পরে জিনিশগুলা অতোটা ঝামেলার হবে না মনে হয়। পরথম আলোতে জামাতের আমিরের ইন্টারভিউ ছাপানো হয়তো শেই শান্তির আগাম নিশানা!

এই বার আশল আলাপে ঢুকি।

আমার বিচার আপনাদের কাছে একই লগে শিবিরের তারিফ এবং নিন্দা মনে হইতে পারে! তবে, আমি তার কোনটাই করতেছি না, আমি ইতিহাশের একটা বয়ান পেশ করতেছি, আমার বিচারে জেইটা টুরুথের শবচে কাছাকাছি!

জুলাই রেভলুশনে আমি শিবিরকে কেরেডিট তো দেই-ই, তারো বেশি জেইটা মনে হইলো, ঐ কেরেডিটটা আরো পিছাইয়া দিয়া, আরো অনেক আগে থিকা শুরু করতে হবে! মুভমেন্টের লিডারদের শিবির কানেকশন ঠিকঠাক বুঝতে জাইয়াই এইভাবে পিছাইতে হইলো আমার। Continue reading

প্লে-লিস্ট: আজম খান

বাংলাদেশের সিনেমা তো দেখি নাই আমি খুব একটা – এইটা যেমন খালি না-দেখা না, বরং একটা এসথেটিকাল পজিশন যে আমার দেখাদেখির জায়গাগুলা এতো লো না! এইরকম ভাবে, আজম খানের গান না শুইনা মহীনের ঘোড়াগুলি (একটা নাম হিসাবেই বললাম, কম্পিটিশন লাগায়া দিয়েন না আবার) শোনাটা একটা ‘রুচি-সম্মত’ ঘটনা তো! এইটা রিকগনাইজ করতে রাজি হওয়াটা ভালো।

মানে, আজম খানের গানগুলা ভালো বা খারাপ – এইরকম এসথেটিকাল জায়গা থিকা দেখার বাইরেও যে কিছু ঘটনা আছে, সেইটার কথা বলতে চাইতেছি আমি; আমরা কিশোর বয়সে (তখনো টিএনএইজ শব্দটা বাংলা হইতে পারে নাই) গোয়ার্তুমির কারনেই অনেকে শুনতে শুরু করছি, কোন এসথেটিকসের কারনে না… বরং আমরা যে বাপ-মা’দের হেমন্ত-মান্নাদে সলিল চৌধুরী ভূপেন হাজারিকা আশা ভোঁসলে লতা মুঙ্কেশকদের ‘আধুনিক গান’ শুইনা আসছি, অইগুলার চাইতে ডিফরেন্ট

কিনতু এই গানগুলা তো আবার চাষা-ভুষাদের মাজার-মজমার মতো অনেকটা! যার ফলে নাক সিঁটকানো ছিল কিছুটা, কারন ‘ফোক সং’য়ের গলার মালা বা কানের দুল আমরা আবিষ্কার করতে পারি নাই, যেইটা পরে হইছে যে, এইগুলা ‘মেইন স্ট্রিম’ 🙂 না, কিনতু এদেরকে তো আমাদেরই (মিডল-ক্লাসদেরই) ‘রক্ষা’ করতে হবে! 😁

আমি বলতে চাইতেছি, আজম খানের গান শুনতেছি – এইটা এখন অবশ্যই কোন রুচি-সম্মত কালচারাল পজিশন না বাংলাদেশে, বরং নাইনটিসের একটা নস্টালজিয়াই অনেকটা; আপনি খুব বেশি ইসমার্ট লোকজনের নোটিশে আসতে পারবেন না এইসব কইরা, কিনতু আমি দাবি করতে চাই যে, যদি (নট বাঙালি, বরং) বাংলাদেশের কালচার বইলা যদি একটা কিছুরে লোকেট করতে চান আপনি সেইখানে আজম খান’রে নোটিশ না কইরা পারবেন না! Continue reading

নতুন দলের প্রতি নসিহতনামা: এথিকস ও মেটাফিজিক্স নিয়া কয়েক ছত্র

যারা রাজনীতি করেন বা করবেন তাদেরকে বন্ধুর সংখ্যা বাড়াতে হয়। ইসলামের এথিকাল প্যারাডাইমে কতগুলো দারুণ নীতি আছে, যেগুলো একই সাথে ধর্মাচার ও প্রবলভাবে রাজনৈতিকও। যেমন, নিজেদের মানুষদের প্রতি রহমদিল হওয়া : রু্‌হামাও বাইনাহুম। আক্রমনোদ্যত শত্রুর প্রতি কঠোরতা প্রদর্শনও রাজনৈতিকতার জন্যে জরুরি (এই ক্ষেত্রে কোমলতা ও ক্ষমার প্রসঙ্গ আলোচনা করছি না, আপাতত)। নিজেদের মানুষদের সাথে নীতিপ্রণোদিত আসাবিয়া ব্যতিরেকে উন্নত শির নিয়ে কোন কমিউনিটি, পার্টি চলতে পারে না। তবে, এই “নিজ” ও “আপন” এর পরিমণ্ডলও বাড়াতে হয়।

অনেক ব্যাপারেই “নিজের চেয়ে অপরকে অগ্রাধিকার দেওয়া” আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি । পারিভাষিকভাবে, এটাকে “ইসার” বলা হয়। সুরা হাশরে, আনসারদেরকে প্রশংসা করা হয়েছে এই বলে যে, তাঁরা নিজেদের অভাব সত্ত্বেও অগ্রাধিকার দিত মুহাজিরগণকে। অনেক সময় নিজের প্রয়োজন ছেড়ে দিয়ে হলেও অপরের প্রয়োজন মেটাতে হবে ৷ এই কাজ বেশ কষ্টের, তাই এই কাজ খোদার কাছে পছন্দনীয়ও বেশি, অর্থাৎ সোয়াব বেশি। আবার, একই সাথে উপকৃত ব্যক্তির সাথে, যিনি শুধু ব্যক্তি নন, কেননা তারও পরিবার ও বন্ধুবান্ধবও আছে, কার্যকর একটা সম্পর্কও তৈরি হলো। জগতপরিমন্ডলে উপকৃত মানুষটিও উপকারকারীর কাজে লাগার সম্ভাবনাই বেশি। ইসলামে care of the self যেমন গুরুত্বপূর্ণ, care of the worldও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে সম্পর্কের নেটওয়ার্কও তৈরি হয়, যা একই সাথে আদর্শ ও মানবিক কনটিনজেন্সির দ্বারা রঞ্জিত। একটা হাদিসের মূলভাব এমন , যে তার ভাইয়ের কোনো প্রয়োজন মেটানোর জন্যে তাঁর সাথে হেঁটে গেল, তা নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম। আরেক জায়গায় সম্ভবত, মসজিদে এতেকাফে থাকার চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে তার ভাইয়ের কোন দুর্ভোগ বা মুসিবত দূর করলো, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাঁর দুর্ভোগ দূর করবেন। একজন আরেকজনকে সাহায্যরত থাকলে আল্লাহও তাঁকে সাহায্য করতে থাকেন। কমিউনিটির অপর ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলাকেও সাদাকা বলা হয়েছে। অভুক্তকে খাদ্য দান, চাকুরীহীনকে চাকুরী প্রদান, ঋণগ্রস্থ মানুষের ঋণ পরিশোধে সহায়তা করা, অধিকারহীন ও বঞ্চিতকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এই কাজগুলো মুসলিম কমিউনিটিসমূহের এথিকাল ফ্যাব্রিক। তাদের সাব্জেক্টিভিটি বা কর্তাসত্তার পরিগঠন ও তাগলিব (বিজয়) এইভাবেই ঘটেছিল, এই ভ্যালুসগুলোর ইন্টার্নালাইজেশনের মধ্য দিয়ে।

Continue reading

সৈয়দ আলী আহসান: আমার সাক্ষ্য – “আরবী হরফে বাংলা লিখবার প্রস্তাব” নিয়া

১৯৯৪ সালে সৈয়দ আলী আহসান (১৯২২ – ২০০২) “আমার সাক্ষ্য” নামে একটা বই লেখেন, উনার নামে চালু থাকা নানান ক্রিটিক ও অভিযোগের জায়গায় নিজের পারসপেক্টিভ তুইলা ধরেন

তো, অবভিয়াসলি এইগুলা কোন ভেরিফাইড হিস্ট্রিকাল ট্রুথ না, কিনতু একইসাথে হিস্ট্রিকাল ইভেন্টগুলাতে এনগেইজ থাকা একজন মানুশের বয়ান, যেইটা হিস্ট্রিকাল রেফারেন্স হিসাবে ফুল-প্রুফ ঘটনা না হইলেও একটা রেফারেন্সিয়াল পয়েন্ট, যেই কারনে উনার কথাগুলা সারফেইস লেভেলে থাকা, যাচাই কইরা দেখাটা হিস্ট্রির একটা কাজ

আরেকটা ঘটনা হইতেছে, পাকিস্তান আমলের বেশিরভাগ ঘটনাই আমাদের আলাপে এখনো ট্যাবু হয়া আছে যেন এইগুলা নিয়া কথা বলা যাবে না! কিনতু বাংলাদেশের হিস্ট্রি জানতে ও বুঝতে হইলে তো ইমিডিয়েট পাস্টের দিকেই তো আমাদেরকে তাকাইতে হবে সবচে আগে…

তোো এই জিনিসটা আমরা অনেকেই জানি যে, বাংলা হরফ চেইঞ্জ করার একটা কথা পাকিস্তান আমলে সরকারি-জায়গা থিকা উঠছিল, তো ঘটনাটা কি রকম ছিল – তার একটা ব্যাখ্যা রাখছেন সৈয়দ আলী আহসান, উনার বই থিকা সেই অংশটা ছাপাইতেছি আমরা এইখানে

লিপি বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে

…এখন আমরা হরফ পরিবর্তনের কথা বলি না। ভাষা পরিবর্তনের প্রশ্নই ওঠে না। তবু পাকিস্তানে এই পরিবর্তনের প্রশ্ন উঠেছিল, কিন্তু তা কখনই কোন আন্দোলনে রূপ নেয়নি। যাঁরা পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন, তাঁরা ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা এবং সেক্ষেত্রে সরকার পক্ষের সকলেই যে পরিবর্তনের কথা বলছিলেন তা-ও নয়। আমি এখানে ভাষার কথাটা বলব না। লিপি সংক্রান্ত উদ্ভট প্রস্তাবনার কথাই তুলব।

তৎকালীন পাকিস্তানের পশ্চিম অংশ অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানে আরবী লিপি প্রচলিত ছিল। সিন্ধী এবং উর্দু দুই-ই লিখিত হত আরবী বা ফারসী হরফে। পশতুও লিখিত হত আরবী হরফে। লোকভাষা হিসেবে পাঞ্জাবে কোন নির্দিষ্ট লিপি ছিল না। শিখরা গুরুমুখী হরফে পাঞ্জাবী লিখতেন এবং মুসলমান ফারসী হরফে। এক কথায়, পশ্চিম পাকিস্তানের সব ক’টি ভাষার জন্য একটি মাত্র বর্ণমালা ছিল এবং তা ছিল আরবী। সমগ্র পাকিস্তানের জন্য তখন ছিল-বাংলা ভাষার জন্য বাংলা হরফ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষার জন্য আরবী হরফ। এই হরফের পরিবর্তনের কথা সরকারীভাবে কখনও নির্দেশিত হয়নি। এ নিয়ে শুধু সরকারীভাবে আলোচনার সূত্রপাত করা হয়েছিল।

এই আলোচনাটির সূত্রপাত করেছিলেন মরহুম ফজলুর রহমান। তিনি ঢাকার অধিবাসী ছিলেন, কোন ভাষায় তাঁর ভাল দখল ছিল না। এহেন ব্যক্তি আরবী হরফে বাংলা লিখবার একটি প্রস্তাব করেন। ফজলুর রহমান তখন পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪৮ সালের জুন কি জুলাই মাসে তিনি ঢাকায় আসেন এবং ঢাকায় তাঁর বন্ধু মওলা মিয়ার বাসায় অবস্থান করেন। সেখানে একদিন তিনি আলোচনা বৈঠকের আয়োজন করেন। আলোচনায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হর্তেন: ফজলে আহমদ করিম ফজলী-তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা সচিব, ওসমান গণী-তিনি ছিলেন ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন, কবি জসীমউদ্‌দীন এবং আমি। সভায় পাকিস্তানের তথ্য দফতরের একজন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রামের হুরুফুল কোরআন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এক বৃদ্ধ মৌলভী সাহেবও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমরা জানতাম না, কেন আমাদের ডাকা হয়েছে। আলোচনার সূত্রপাতে ফজলুর রহমান সাহেব সভা আহবানের কারণ ব্যাখ্যা করলেন। তিনি বললেন, ‘প্রচুর রক্তপাতের বিনিময়ে আমরা পাকিস্তান পেয়েছি, এই পাকিস্তানকে বাঁচিয়ে রাখা এবং বিপদ থেকে মুক্ত রাখা আমাদের কর্তব্য। যেহেতু ভারতবর্ষ থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি, সুতরাং ভারতের কাজ পাকিস্তানকে গ্রাস করা। পশ্চিম পাকিস্তান যেহেতু একটি বিরাট অঞ্চল তাই সেদিকে তাদের দৃষ্টি পড়বে না, তাদের দৃষ্টি পড়বে পূর্ব পাকিস্তানের উপর। তারা যে সৈন্য নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান দখল করবে তা নয়, তারা নিজেদের সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং সমাজের প্রভাব বলয়ের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে আনবার চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে বাংলাভাষা তাদেরকে বিরাট সাহায্য করবে। পশ্চিমবঙ্গের ভাষা বাংলা, আমাদের ভাষাও বাংলা। এই বাংলা ভাষার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশ যত সহজে সম্ভবপর, অন্য কিছুতে তা সম্ভব নয়। আমাদের ভিন্ন ভাষা হলে অন্য কথা ছিল। কিন্তু ভাষা যেহেতু অভিন্ন, সুতরাং ভাষার প্রকৃতি যদি আমরা পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে অতি সহজে পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিমবঙ্গের কবল থেকে রক্ষা করতে পারব। সেই জন্য আমার প্রস্তাব হচ্ছে, আমাদের বাংলা ভাষার লিখন পদ্ধতির আমরা পরিবর্তন ঘটাব। এই পরিবর্তন ঠিক মত করতে পারলে আমাদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। আমি সেজন্য বাংলা ভাষার জন্য আরবী বর্ণমালার প্রবর্তন করতে চাই।’

আমরা ফজলুর রহমানের এই বক্তৃতার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। প্রস্তারের অসারতা এবং অবাস্তবতা এত প্রকট ছিল যে, আমরা সকলেই কিছুক্ষণ পর্যন্ত হতভম্ব হয়ে বসেছিলাম। আমাদের চুপ করে থাকতে দেখে ফজলুর রহমান সাহেব চট্টগ্রামের হুরুফুল কোরআন সমিতির মৌলভী সাহেবকে আমাদের সামনে উপস্থিত করলেন। মৌলভী সাহেব আরবী হরফে ছাপা একটি বাংলা পাক্ষিক পত্রিকা আমাদের সামনে পেশ করলেন। তিনি বললেন যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই পত্রিকাটিকে চালিয়ে আসছেন। বিভিন্ন মাদ্রাসায় এই পত্রিকার অনেক পাঠক আছে। মৌলভী সাহেবের পর ফজলুর রহমান সাহেব একটি তথ্য পেশ করলেন যে, এক সময় নাকি আরবী হরফে বাংলা লিখিত হত। কিছু পুরনো বাংলা পুঁথি পাওয়া গেছে যেগুলো আরবী হরফে লিখিত হয়েছে। Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →