Main menu

তর্ক: মুসলমান-লেখকদের বাংলা সাহিত্য – বুদ্ধদেব বসু ও আবুল মনসুর আহমেদ (১৯৪২)

১৯৪২ সালে বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮ – ১৯৭৪) একটা কলাম লেখছিলেন “সাহিত্যে পাকিস্তান অসম্ভব” নামে, যে পলিটিকালি পাকিস্তান আন্দোলন হইলেও সাহিত্যে মুসলমানি-সাহিত্য হওয়া ঠিক না, বাংলা-সাহিত্যই হইতে হবে! নাইলে উর্দু সাহিত্য করেন আপনারা!

তো, এর জবাব দেন আবুল মনসুর আহমেদ ১লা নভেম্বর, ১৯৪২ সালে পাকিস্তান রেনেসা নামে একটা সংগঠনের সভায় একটা লেখা পড়ার ভিতর দিয়া যেইটা পরে “সাহিত্যে সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য” নামে মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায় ছাপা হয়।

বুদ্ধদেব বসুর আরগুমেন্ট ছিল মেইনলি তিনটা –

১. নারী-সাহিত্যের মতোই মুসলমানি-সাহিত্য একটা সাব-সেট হয়া আছে বাংলা-সাহিত্যের, এর থিকা বাংলার মুসলমান সাহিত্যিকদের বাইর হইতে হবে!

২. অনেকে অভিযোগ করেন যে হিন্দু-সাহিত্যিকরা কেন মুসলমানদের নিয়া লেখেন না? কারন হিন্দুরা তো মুসলমানদের তেমন কিছু জানেন না! এই কারনে মুসলমান সাহিত্যিকদেরই মুসলামানি সমাজ থিকা বাইর হয়া সবার জন্য সাহিত্য করা লাগবে

৩. আর উনারা যদি সবার জন্য না লেখতে পারেন তাইলে বাংলা-সাহিত্য বাদ দিয়া উর্দু সাহিত্যই করা দরকার!

আবুল মনসুর আহমেদের জবাবগুলা অনেকটা এইরকম:

১. মুসলমান-লেখক যে একটা সাব-কেটাগরি হয়া আছে – এইটা বানাইছে কারা? কিভাবে তৈরি হইছে?

২. একই সমাজে থাকার পরেও হিন্দু-লেখকরা মুসলমান-সমাজ নিয়া জানে না কেন? নাকি না-জানাটারেই তাদের বাহাদুরি মনে করে?

৩. তো, মুসলমান সাহিত্যিকরা তাদের স্বাতন্ত্র্য ধইরা রাইখাই বাংলা-সাহিত্য করবে, আর সেইটা  থিকা মাওলানা বা পন্ডিতদের থ্রেটে সইরা যাবে না!

এইখানে, আবুল মনসুর আহমেদ ইন্টারেস্টিং একটা জায়গা কিছুটা এড়ায়া গেছেন বইলা দেখি আমি, যে বাংলা-সাহিত্যের যেই ডিফল্ট বা ‘সাধারন পাঠক’ আছেন, তারা হইতেছেন মেইনলি – শিকখিত হিন্দু! বাংলা-ভাষা বইলাও যেইটা আছে সেইটা হইতেছে ‘সংস্কৃত বাংলা’ বা এখনকার ‘প্রমিত বাংলা’! এর বাইরে যা কিছু আছে, সবই হইতেছে – ব্যতিক্রম, অ-শুদ্ধ ও ভুল!

এবং খেয়াল কইরা দেখবেন অইসব ‘মুসলমান রাইটারদেরকেই’ (যেমন, কাজী নজরুল ইসলাম ও জসীমউদ্দিন) হিন্দু সাহিত্য-সমাজ ‘সাহিত্যিক’ বইলা মাইনা নিতেছেন যারা উনাদের লগে যোগাযোগ রাখেন, মিনিমাম রিলেশন রাখেন এবং তাদের সাহিত্যিক-সুপিরিয়রিটি মাইনা নিতে রাজি আছেন; তার আগেও মীর মোশাররফ হোসেনরে যে মুসলমান-সাহিত্যিক হিসাবে একসেপ্ট করছেন তার কারন উনার ‘মুসলমানি-সাহিত্য’ না বরং ‘সংস্কৃত বাংলা’য় লেখতে রাজি হওয়ার ঘটনা! যেই কারনে দেখবেন ফররুখ আহমেদ অই লিস্টে নাই! ভালো-বাংলা মানে হইতেছে অই ট্রাডিশনটা, আর এখনো এইটা সেলিব্রেটেড ঘটনা… আপনি ‘মুসলমান-রাইটার’ হয়াও ‘বাঙালি লেখক হইতে পারবেন যদি ‘পরমিত বাংলায়’ লেখেন! 

তো, এই যে এটিটুড বুদ্ধদেব বসুর, সেইটা এখনো কন্টিনিউ হইতেছে আসলে, যেই কারনে তর্কের এই প্রিমাইজটা এখনো রেলিভেন্ট।

লেখা দুইটা পূর্ব বাঙলার ভাষা বইয়ে রিপ্রিন্ট করা হইছিল 

বুদ্ধদেব বসু
সাহিত্যে পাকিস্তান অসম্ভব

শোনা যাচ্ছে পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী (এবং সহযোগী) স্বরূপ একটি অদ্ভুতস্তানের কল্পনা ভারত ভাগ্যবিধাতার দপ্তরে অচিরেই পেশ করা হবে এবং তারই সঙ্গে সঙ্গে একটি জেনানাস্তান (কিংবা পাকিস্তান)-এর দাবী যদি বিংশতি কোটি ভারতীয় ললনার কণ্ঠে কল কলম্বরে ধ্বনিত হয়ে ওঠে তাহলেও অবাক হবার কিছু নেই। আমি রাজনীতিক নই, বিশাল ভারতকে অনেকগুলি খণ্ড ক্ষুদ্র স্থান কিংবা স্থান-এ বিভক্ত করবার প্রস্তাবে বিমূঢ় মৌনই আমার একমাত্র মন্তব্য। কিন্তু এই স্বাতন্ত্র্যকামী মনোভাব যখন সাহিত্য ক্ষেত্রেও সংক্রামিত হতে দেখি তখন আমার পক্ষে চুপ করে থাকা শক্ত হয়। যখন দেখি একজন লেখক, যিনি দৈবক্রমে মুসলমান হয়ে জন্মেছেন, কিংবা অন্য একজন লেখক, যিনি প্রকৃতির খেয়ালে স্ত্রীলোকের দেহ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন, তিনি লেখকের বৃহৎ ও বহমানকর পদবী অগ্রাহ্য করে মুসলমান লেখক কিংবা মহিলা লেখক-এর সংকীর্ণ আখ্যার জন্য লালায়িত তখন প্রতিবাদ না করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। কতদিন আমি মনে মনে ভেবিছি যে আমাদের মেয়েদের মধ্যে যারা সাহিত্য চর্চা করেন তাঁরা কি চিরকালই লেখিকা থাকবেন, কোনোদিন লেখক হবেন না? সাময়িক পত্রে, সমালোচনায় কিংবা পণ্ডিতজন রচিত সাহিত্যের ইতিহাসে যখন বঙ্গীয় মহিলা কবি কি মহিলা ঔপন্যাসিকদের বিবরণ পড়ি, তখন ক্ষুব্ধচিত্তে এ প্রশ্নই বার বার জাগে, যে মেয়েদের আমরা আর কতকাল নাবালক করে রাখবো, তাঁরাই বা এই পিঠ চাপড়ানো আর কতকাল সইবেন? অথচ সবচেয়ে আশ্চর্য এই যে, এই অপমানকর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মেয়েরা নিজেরা কখনো প্রতিবাদ করেন না, নিজেদের ‘লেখিকা’ বলে পরিচয় দিতে কদাচ তাঁরা লজ্জিত নন, বরং সেই আখ্যাই যেন তাঁরা কামনা করেন। অর্থাৎ সাহিত্যিক জেনানাস্তানের মাইনরিটি প্রিভিলেজেস-এর প্রতি তাঁদের লোলুপ দৃষ্টি। তাঁরা কি কখনো, ভেবেছেন যে এ ব্যবস্থায় তাঁদের যে আদপে আমলে আনা হচ্ছে তা তাঁরা ভালো লেখেন বলে নয়; তাঁরা মেয়ে হয়ে জন্মেছেন বলেই। মহিলা লেখকদের ফিরিস্তি যখন কোথাও প্রকাশিত হয় তার মধ্যে এমন অনেকেরই নাম পাওয়া যায় যাদের লেখক বলাই ভুল, প্রজাতিশ্রেষ্ঠ মহিলা কবি বলে সম্মান জানাচ্ছি বাংলার কবি-সভায় হয়তো তাঁর কোনো স্থানই হতে পারে না। এই নির্বোধ ব্যবস্থার ফলে মেয়েদের মনে সাহিত্যের আদর্শা ক্রমেই নেমে যেতে থাকে, কোনো রকমে দুচার লাইন মেলাতে পারলেই মহিলা কবি আখ্যা পাওয়া যায়, কোনো একটি উন্মত্ত প্রলাপ ছাপার অক্ষরে বের করতে পারলেই মহিলা-ঔপন্যাসিক হিসেবে মাল্যলাভের সম্ভাবনা থাকে, অপরপক্ষে যে দুচারটি মেয়ে সত্যি ভালো লেখেন, অর্থ্যৎ যারা লেখিকা মাত্র নন, যাঁরা লেখক, তাঁদেরও ঐ মহিলা-লেখকদের গড্ডলিকার ভিড়িয়ে দেওয়া হয়, যথাযোগ্য সমাদর তাঁরা পান, যতই তারা ভালো লিখুন, মেয়েদের মধ্যে ভালো লেখেন এই কলংকময় অপবাদ কাটিয়ে উঠতে তাঁরা পারেন না। এ সবই দুঃখের কথা, কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের কথা এই যে, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মেয়েদের তরফ থেকে কখনো আসেনি, প্রতিবাদ করতে হচ্ছে আমাকে – যে মেয়ে নয়। Continue reading

বেহুদা দস্তখতের বুরোক্রেছি

This entry is part 15 of 15 in the series রকম শাহ'র বয়ান

নয়া ভ্যাটের জুক্তি হিশাবে শরকার কইতেছে, হাসিনা লুটপাট কইরা গেছে, তাই রাশ্টের খরচ মেটাবার পয়শা নাই শরকারের হাতে, দরকারি শেই পয়শা পাবলিকের পকেট থিকা নেবে শরকার।

মজার ব্যাপার হইলো, রাশ্টের খরচের ব্যাপারে শরকার তো চুপ বটেই, পাবলিক ফোরামেও তেমন কোন আলাপ উঠতেছে না দেখি!

রাশ্টের খরচের ব্যাপারে শুরুতেই আমাদের বোঝা দরকার জে, এইটা টাকার খরচের মামলা, ডলার/ফরেক্সের মামলা না; মানে বিদেশের লগে লেনদেনের বেলায় রাশ্টের হাতে টাকা থাকলে চলবে না, তাই ভ্যাটের এই বাড়তি টাকা দিয়া বিদেশি লোনের কিস্তি টানা জাবে না। এই টাকাটা দরকার দেশের ভিতর, টাকায় জেই পেমেন্ট দেয় রাশ্টো, শেইখানে। তবে এই টাকার একটা ভাগ বিদেশের লগে লেনদেনেও খরচ হবে, কেননা, ডলার তো টাকা দিয়াই কিনবে রাশ্টো।

দেশের ভিতর রাশ্টের খরচগুলা বা টাকার খরচ কেমন দেশে? শবচে বড়ো খরচটা মনে হয় পাবলিক ছেভিংসের ইন্টারেস্ট, তারপর রাশ্টের/পাবলিক খাদেমদের বেতন। এই দুইটা বান্ধা খরচ, ডেভলাপমেন্ট চাইলে মুলতবি রাখা জায়, কিন্তু এই দুইটা খরচ করতেই হবে। এই খরচ দুইটা দুইভাবে মিটানো জাইতে পারে–আরো বেশি পাবলিক লোন অথবা ভ্যাট-খাজনা বাড়ানো।

২০২৪-২৫ ফিছকেল ইয়ারে দেখলাম রাশ্টের/পাবলিকের চাকরদের, মানে পাবলিক ছার্ভেন্টদের বেতনভাতা দিতে খরচ হবে ৮০ হাজার কোটি টাকা। ম্যাক্রো-ইকোনমির এই ডিটেইলে আমার ততো এখতিয়ার নাই, দেখি জিয়া হাসানের লগে একটা পডকাস্ট করতে পারি কিনা…!

এনিওয়ে, হাসিনার বাকশালে এই ঘটনাটা ঘটছে জে, মালিকের চাইতে চাকরের বেতন বেশি। দেশে একটা টাইম আছিলো জখন, পাবলিকের চাকর/খাদেম বা রাশ্টের চাকর হওয়াটা ততো লোভের ব্যাপার আছিলো না, পেনশনের ব্যাপার বাদে পেরাইভেট ছেক্টরের ছার্ভিছে গড়পরতা বেশি বেতন আছিলো, তারা মৌজ-মাস্তি করতো, পাবলিকের চাকরেরা চাইয়া চাইয়া দেখতো আর ঘুশ খাইতো। পরে ঘুশ কমাবার কথা কইয়া রাশ্টের চাকরদের বেতনভাতা দেদার বাড়ানো হইলো এবং তাতে দেখা গেলো ঘুশের রেটও তার চাইতে বেশি রেটে বাড়তে থাকলো; আগে ঘুশের পয়শায় ঢাকায় বাড়ি করতো, হাসিনার বাকশালে কানাডায় বাড়ি কিনতে শুরু করলো তারা। Continue reading

সাফা প্রামাণিকের কবিতা

স্থির স্বপ্নে ৷ আমার ঘুমের ওপাড়ে ৷ নভেম্বরের শীতে ৷ কেমন শোক করবেন ৷ শহিদদের নাম ৷ স্বপ্নের প্যাটার্ন ৷ বিষ্টি নামলো অনেক বছর পর ৷ আফগানি নাম ৷ রাতের ট্রেনে ৷ আংটি বদল ৷

স্থির স্বপ্নে

একটা স্বপ্ন দেখে শেষ করার পর পরই
আমার ঘুম ভাঙে—
আর তারপর দেখি চোখের স্ক্রিনের ভিতর দৃশ্যগুলা
একে একে পার হয়
বিষাদ বিষণ্ণ হরিনের মত ৷
যোগাযোগ কি কখনো শেষ হয় বলো?
স্বপ্নে ঠিক দেখা হবে, জানো তুমিও

আমাদের আত্মা থেকে ছিটকে বের হওয়া
সেইসব নাবাল স্মৃতি
বিষ্টির আদর ছাড়াই বাড়তে থাকা তেজি ঘাসের মত
তোমার রিদয়ে পৌছেছিল ৷
লিভিংরুমের বাতাসে গোঙানি ছড়ানো স্বর আর ইতস্তত টুকরা টুকরা টান ধরা কান্না
তোমার রিদয়ে পৌছেছিল ৷

এই আজকে সকালেই,
চোখ মুছতে মুছতে তোমার সুন্দর সুশ্রী মোলায়েম চেহারাটা স্বপ্নের দৃশ্য থেকে আরো একবার মনে পড়ে যাবে—

১৭ ডিসেম্বর ‘২৪

 

আমার ঘুমের ওপাড়ে

আমার ঘুমের ওপাড় থেকে যে শব্দের দোলানি
আমার কানে এসে লাগত
সেখানে আমি আমার মায়ের গলা শুনতাম

আমি শুনতাম—থেমে থেমে একটা মৃদু ছন্দের আওড়ানি
এক তালে বাতাসের সাথে বেজে বেজে আসত
আমার মাথার কাছে এই উত্তুরে জানলার শিকের ওপর—

যেনো একদল সুফি তাদের দরগা থেকে ছড়ায়ে দিচ্ছে খোদার জিকিরের খুশবু আর বাতাসের ফেরেশতা তাকে আমার কান পর্যন্ত পৌছে দিচ্ছে উড়ে আসা পাতলা জরিদার পর্দার মত

আমার এখনো কিভাবে যে মনে পড়ে যায় ! পাচতলা ছাদের বাসাটাতে আমরা ছিলাম যখন সেই সময়ের কথা
আমি ত কখনোই আগে জাগতে পারিনাই তাহাজ্জুদে!

আমার মায়ের মোনাজাতে ঘরের ভিতর বাতাসের যে গোঙানি উঠত সেই শব্দ আমার ঘুম ভাঙে দিত প্রতিদিন
আমি চোখ মেলে দেখতাম তার নীল মখমল জায়নামাজের
সুতার পাড় মেঝেতে বিছিয়ে আছে
বিগলিত প্রার্থনার মত
আর সেখানে একটা নাবাল আত্মা সেজদার ভিতর শুধুই হাহাকার করছে—

তখন আমার মনে পড়ে যেত তুরে সিনার কথা
তখন আমার মনে পড়ে যেত সেই রোশনির কথা
যে উজ্জ্বল রোশনি আমার নবী মূসা দেখেছিলেন সফরের পথে—

আমি কতটুকু আর ডাকতে পারলাম খোদা তোমাকে? আমার ফজর ত শুধু কাযাই হয়ে যায়

আমার মায়ের যেই তাসবি অন্ধকারেও জ্বলে উঠত আমি আমার কবরে সেই তাসবিটাই শুধু আমি নিতে চাই!

২১ নভেম্বর ‘২৪
Continue reading

পপুলারিটির ধান্দা

জুলাই ম্যাসাকার আর্কাইভের হাসান ইনাম একটা পোস্ট দিছিলো, অর্থনৈতিক এবং লজিস্টিক সাপোর্ট না পেয়ে কাজ করতে না পারা প্রসঙ্গে। পোস্টটা ভাইরাল হয়।

সেইখানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কমেন্ট করে, আমার অফিসে এসে দেখা করো, কি কি লাগবে বলো।

এই কমেন্ট দেখে যে কী পরিমাণ বিরক্ত হ‌ইছি! বিরক্তির কারণগুলা বলি।

প্রথমত, আসিফ মাহমুদের নেটওয়ার্ক এত বাজে না যে, হাসান ইনামের নম্বর ম্যানেজ করতে ৫ মিনিটের বেশি সময় লাগবে। তারে ফোন দিয়েই পার্সোনালি বলা যায়, তাইলে আরো বেশি আন্তরিকতা থাকে। কিন্তু সে আন্তরিকতার বদলে পপুলারিটি বাইছা নিলো!

দ্বিতীয়ত, কাজ তো শুধু জুলাই ম্যাসাকার আর্কাইভ করতেছে না, এরকম কমসে কম ২০টা প্রতিষ্ঠান শুধু রাজধানীতেই আছে যারা জুলাই নিয়ে কাজ করতেছে। তাদের যদি এমন অর্থনৈতিক এবং লজিস্টিক সমস্যা হয় তাইলে কি করবে? পোস্ট করবে, ভাইরাল হবে, তারপর সেখানে গিয়া আসিফ মাহমুদ কমেন্ট করবে? এইটা কি সম্ভব? এইটা কোনো সমাধান?

মানে বলতে চাইতেছি, সিস্টেম আপগ্রেড না ক‌ইরা পার্সোনাল শো অফ করে পপুলারিটি বাইছা নিচ্ছে কেন? জুলাই নিয়ে কাজ করার সবগুলো প্রতিষ্ঠানরে সহায়তা করার মতো সিস্টেম না তৈরি করে পার্সোনাল শো অফ করে কেন?

আজকেও আসিফ মাহমুদের এক‌ই ধরনের কাজ।

ফেলানীর পরিবারের লগে দেখা করছে। তারপর ঘোষণা দিছে, তাদের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব সে নিবে।

কথা হ‌ইলো, বর্ডারে বিএসএফের গুলিতে তো শুধু ফেলানী না, এরকম হাজারো ফেলানী খু-ন হয়, তাদের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব কে নেবে? ফেলানীর মতো তারা ভাইরাল না বলে কেউ নিবে না দায়িত্ব? Continue reading

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের বিভীষিকাময় নির্বাচন ও কিছু অভিজ্ঞতা

অভিজ্ঞতা জঘন্য, কেঁদেছি নিজের অক্ষমতায়।

আমি প্রিজাইডিং অফিসার ছিলাম। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েও পাইনি, যদিও তখনো জানতাম না কি ঘটতে যাচ্ছে। ট্রেনিং-এর সময়ও প্রশাসনের হাবেভাবে মনে হয় নি এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। আমার কিছুই করার ছিলনা। আমার কেন্দ্রে ভোটার ছিল ২৩৮৭ টা। ওরা রাতেই (২৯ ডিসেম্বর,২০১৮) ১৫০০ ব্যালটে সীল মেরেছে। দিনেও জোর করে আরো ৪০০ ব্যালট নিয়া নিজেদের লোক দিয়ে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়েছে। শুধু এভাবেই ওরা ভোট নিয়া নেয় ১৯০০; এই কেন্দ্রে ধানের শীষ পেয়েছে মাত্র ২৭ ভোট, তাতেই তাদের মাথা গরম। এই ২৭ জন কারা, এটাও তাদের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে!

আসল কথা বলি: এসপি, ডিসি, নৌকার প্রার্থী এরা সকলে বসে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এভাবেই ভোট হবে। সকালে আর কোন লুকোছাপা ছিলনা। ছিলনা কোন গোপনীয়তার ব্যাপারও। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রশাসন ও উচ্চপর্যায়ের পুলিশ অফিসারদের প্রশ্রয়ে ও সম্মতিতে খুব নিরাপদে, উৎসাহ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট ডাকাতি করছে, কিছুই করার ছিলনা অন্য কারো! তাদের সামনে আমরা সকলে ছিলাম অসহায়।

আমাকে ইউএনও, এসপি, ডিসি সবাই ফোনে কল দিয়েছে। একইভাবে অন্য কেন্দ্রে দায়িত্বরত আমাদের সহকর্মীদেরও কল দিয়ে বলে দেয়া হয়েছে, কি করা যাবে না এবং কাদের কথা শুনে কাজ করতে হবে।

বলা হয়েছিল, স্থানীয় নেতারা যেভাবে বলে ঠিক সেভাবেই সহযোগিতা করতে হবে। একই মিটিং-এ এসপি, ডিসি ও প্রার্থী বসে থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ফোনে কল দিয়া বেশীর ভাগ ব্যালট রাতেই আওয়ামী লীগের কর্মীদের দিয়ে দিতে বলছিল। তা না করলে, আমাদের সমস্যা হবে বলে শাসিয়েছিল!

আমাদের এখানে সব কেন্দ্রে একই ঘটনা ঘটছে। আমার কাছ থেকে জোরাজুরি করে প্রথমে ৬০০ ব্যালট (৬ বান্ডিল) নিয়া নেয় । সীল শেষে আবার চাইতে আসে ব্যালট, আমি নিষেধ করায় ফোনের পর ফোন। পরে আরো ৬ বান্ডিল নেয় তারা । সেগুলো সীল মারার পর আবার আসে। এবারো দিতে চাই নাই বলে স্থানীয় আওয়ামী নেতা হুমকি দেয়। তার পর আরো ৩ বান্ডিল দেই, মোট ১৫০০ (পনের শ’)। এই সকল কর্মীদের নাকি এসপি, ডিসি বলে দিয়েছে, যে কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে, সে কেন্দ্রের দায়িত্বশীল গ্রুপ পুরস্কার পাবে। ওই নেতা রেগেমেগে চিৎকার করে বলে, আপনি আমাকে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করতে চান?

এই সব কিছুই প্রশাসনের সহায়তায় হয়েছে। দুই দিনের অসহনীয় ও অসম্মানজনক ঘটনার ভেতর দিয়ে কষ্টকর বিপুল অভিজ্ঞতা আমাদের সকল সহকর্মীদের হয়েছে। এমন কি, আমাদের নারী কলিগদের একই ধরণের ঘটনার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে! সবাই একে অন্যের ঘটনা আমরা জানি। আজকে আরো জানছি!

আমি মাঝখানে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টদের কয়েকজনকে সরিয়ে দিয়ে, ইয়াং ভোটারদের জোর দিয়ে বলছি, তোমরা যাকে ইচ্ছে তাকে ভোট দাও, এদের কথা শুনবা না। তাতেও লাভ হয়েছে বলে মনে হয় নাই। Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →