Main menu

মুশকিলের নাম পিনাকি ইলিয়াস

This entry is part 18 of 18 in the series রকম শাহ'র বয়ান

জুলাই রেভলুশনের একটা এস্কেচ বানাবার খায়েশ আছিলো মনে, তা আর হইলো কই 🙁 ! এইখানে বেশ মাঝখান থিকা আতকা কতোগুলা কথা লেইখা রাখতে চাইতেছি, পরে কখনো ঐ খোয়াব পুরন করতে পারলে এই লেখাটা কামে লাগবে খুব শম্ভব!

রেভলুশনের এস্কেচ করার বেলায় একটা ছেন্ট্রাল রিছার্চ কোশ্চেন আছে আমার–আমি রেভলুশনের শহিদদের ‘ওয়াচলিস্ট’ জানতে চাই, মানে পেরাইভেছির উপর হামলা করতে চাইতেছি না, জাস্ট তাদের পলিটিকেল কনশাছনেছ বুঝতে চাইবো আমি এবং শেই কনশাছনেছের লগে তাদের ওয়াচ-লিস্টির একটা রিশতা আছে বইলা আন্দাজ করতেছি আমি! এই রিছার্চটা আর কেউও করতে পারেন, মুভমেন্টের গাজিদের ইন্টারভিউ এই ব্যাপারে কামে লাগতে পারে; মানে গাজিদের ওয়াচ-লিস্টি দিয়া শহিদদের ব্যাপারে আরেকটু মজবুত আন্দাজ করা জাইতে পারে!

এনিওয়ে, আবু সাইদ শহিদ হবার পরে, জুলাইতে হাসিনার কার্ফু শুরুর ঠিক আগে আমি বাড়িতে আইশা আটকা পড়ছিলাম, বরিশালে কাদানে গ্যাশও খাইয়া আশতে হইছে।

কার্ফু শুরুর পরে ঢাকা থিকা এক দোস্ত ফোন দিলো, মোহাম্মদপুরে ঐ দোস্ত রাস্তায় আছিলো মুভমেন্টে; বেশ আপছেট শে, এমন কইলো–ভাই, পারলাম না তো, শয়তানটা তো টিকা গেলো! আমি কইলাম, আমরা জানি না ওস্তাদ, এখনো ডিছিশন নেবার টাইম হয় নাই; এই কার্ফুর ব্যাপারে দেশের আমজনতা কেমনে রিয়েক্ট করে, তার উপর ডিপেন্ড করে বাকিটা!

ইন্টারনেট ফেরার পরে আরেক দোস্ত ফোন কইরা কইলো–ভাই, তুহিনেরে থামান, মাইনা নিতে কন জে, আমরা হাইরা গেছি 🙁 ! তারে কইলাম এমন: আমি আপনে জাই না, নামি না, ডরাই হয়তো, কিন্তু জারা ময়দানে গেলো, নামলো, এখনো আছে, তাদের এই থাকার অর্থ আছে ইতিহাশে; কেউ না কেউ মরবে, হাসিনা মারবেই, আমাদের চেনা লোকগুলারে বাচাবার বাড়তি ইচ্ছাও হবে আমাদের, কিন্তু নিজেদের না নামা জাস্টিফাই করতে ময়দানের লোকজন ডাইকা ঘরে তুলবো না! ওদের এই নামার কি অর্থ ইতিহাশে, আমরা এখনো জানি না, হয়তো হাইরা গেছি আমরা, কিন্তু থামাবার চেশ্টা করবো না আমি।

তো, ঢাকা ভার্ছিটির হল থিকা ছাত্রলিগ খেদাইলো ‘বৈশম্ম বিরোধি’ ইস্টুডেন্টরা; তারপর হাসিনা ঢাবি দখল করলো আবার, ইস্টুডেন্টদের বাইর কইরা দিলো হল থিকা। ঢাবি থিকা ছাত্রলিগ খেদাইয়া দেওয়া তক ইতিহাশ কিন্তু আগেই আগাইছে, শেই ২০১৮ শালেই নুরুরা ঐটা করতে পারছিলো, অতোটা শামাল দিতে পারে হাসিনা, ২০১৮ শালেই শেইটা পারার নজির আছেও তার। ফলে এইবার ইতিহাশ আরো আগাবার দরকার হবেই, নাইলে হাসিনার কিছু হবে না, নামাইতে পারবো না আমরা, হিশাব এইখানে বেশ শোজাই।

২০১৮ থিকা এইবারের তফাত হইলো, এইবার, এই ২০২৪ শালে ইস্টুডেন্টদের হাত থিকা ডিউটি নিজেদের হাতে নিয়া নিছে দেশের আমজনতা! এতোটাই নিছে জে, কার্ফু দিতে হইছে হাসিনার।

কিন্তু হাসিনার কার্ফু মানে নাই আমজনতা; ঢাকার জাত্রাবাড়ি, উত্তরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর এবং চিটাগাঙের কথা এস্পেশালি কইতে হইলো আমার, ঠিকঠাক রিছার্চ আমার নাই বইলা দেশের বাকি এলাকার কথা আমার মাথায় নাই ততো, আপনারা আরো অনেক এলাকা/শহরের কথা জানেন আলবত। কিন্তু ঐ ৫টা এস্পটই কাফি, ছাত্রজনতার উপর পাইকারি গুলি চালাইছে হাসিনা, কিন্তু কার্ফু মানাইতে পারে নাই। আমার আগ্রহ হইলো, এরা কারা? কার্ফু ভাংগার এই হিম্মত, বেশুমার শহিদি জোশের জেই পলিটিকেল কনশাছনেছ, এইটা কেমনে পয়দা হইলো!? Continue reading

আমার জীবন দর্শন – আমাদের শক্তির উৎসঃ কোরান ও রসূল (মাহবুব-উল আলম)

[মাহবুব-উল আলম এর ‘রঙবেরঙ’ বই থিকা লেখাটা নেয়া হইছে]

ইতিমধ্যে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে আমার জীবন দর্শন ব্যক্ত কর্তে।

সত্য দৃষ্টি

কোরানে তিন রকমের দৃষ্টির কথা বলা হয়েছে: জড়-দৃষ্টি, বৈজ্ঞানিক-দৃষ্টি ও সত্য-দৃষ্টি (আয়নুল এক্কিন, এলমুল এক্কিন ও হক্কুল এক্কিন)। এর মধ্যে জড়-দৃষ্টি ও বৈজ্ঞানিক, দৃষ্টি বিষয়টিকে অংশতঃ প্রকাশ করে, একমাত্র সত্য দৃষ্টিই উহাকে সর্বতোভাবে প্রকাশ করে।

জড়-দৃষ্টি দেহের জন্ম-কালেই প্রকৃতির দান স্বরূপ উহার সাথে যুক্ত থাকে, বৈজ্ঞানিক-দৃষ্টি দেহী লেখা-পড়া ও গবেষণা দ্বারা লাভ করে। সত্য-দৃষ্টি লাভ হয় আত্মিক সাধনা দ্বারা এবং আল্লাহতা’লার রহমতের ফলে। সত্য-দৃষ্টি দ্বারা শুধু যে সত্য দর্শন হয় তাহা নহে, চিত্তও স্থিরতা লাভ করে।

কোরানের ডাইমেনশন ফিলজফি

এই ফিলজফি মতে আল্লাহতা’লা মানুষকে সব সময় ডেকে জিগ্যেস কচ্ছেন। ১. কোথায় আছ? ২. কোন সময়ে আছ? ৩. কার সাথে আছ? ৪. কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আছ? আমরা এটাকে সহজে ‘স্থান-কাল-পাত্র ও উদ্দেশ্যের ফিলজফি’ বলে বর্ণনা করতে পারি। এগুলোকে একটু বিশদ ভাবে আলোচনা কচ্ছি।

স্থানের ডাইমেনশন

কেয়ামতের প্রথমেই স্থান ধ্বংস হবে। এর অর্থ স্থানই মনুষ্য-জীবনের প্রথম ও প্রধান নিয়ামক।

দুইটি ভিন্ন দেশকে এক ভাবার চেষ্টা ইতিহাসে সব সময়েই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত পাকিস্তান।

পাকিস্তানে দুইটা অংশের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার মাইল ব্যবধান ছিল। আয়ুব খাঁ ‘প্যারিটী’ বা সংখ্যা-সাম্যের সাহায্যে এই ব্যবধান মুছে দিয়ে দুই দেশকে এক কর্তে চেষ্টা করেন। কিন্তু, অসাম্য দিন দিন আরও বাড়তে থাকে।

আমি তাঁকে বলি: আপনি বরং এক কাজ করুন ছয় মাস পূর্ব পাকিস্তানে রাজধানী করুন, ছয় মাস পশ্চিম পাকিস্তানে রাজধানী করুন। আর ঢাকাকে ২য় রাজধানী বা ‘সাবসিডিয়ারী’ রাজধানী না বলে উভয় রাজধানীর নাম দেন: পূর্বের রাজধানী ও পশ্চিমের রাজধানী অথবা শীতকালীন রাজধানী ও গ্রীষ্মকালীন রাজধানী।

পরে স্থান-অনৈক্যের দরুণই পাকিস্তান ভেঙ্গে যায়।

স্থানের ডাইমেনশন জন্মভূমির মাটির প্রতি মানুষকে অনুগত থাকতে বলে। এরই নাম দেশপ্রেম।

অন্নদাশঙ্কর রায় আমাকে সাহিত্যিক হিসেবে কলিকাতার মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করতে চান এবং ব্যবস্থা করে দিতে চান যে আমি হুমায়ূন কবিরের ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকায় লিখি।

আমি তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করিনি। আমার মাটি-মাকে আমি সেবা করে যাব, আমার দেশ তাকে মূল্য দিতে পারুক, আর না-ই পারুক।

১৯৭১ সালের এপ্রিলে পাঞ্জাবীদের আক্রমণ থেকে বাঁচবার জন্যে আমার পরিবারের লোকেরা চট্টগ্রাম শহরের বাড়ী ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র সরে যায়।

কিন্তু, আমি আমার মাটিকে ছাড়তে অস্বীকার করি, একা পড়ে থাকি।

দেশের প্রতি ভালবাসার জন্যে যে মূল্যই চাওয়া যাক, সেটা আমাদের দিতে হবে। Continue reading

পোস্ট পলিটিকাল ক্রাইসিস

মনে করেন, আপনি হাঁটতে যান সকালে। এই হাঁটার মধ্যে ভাল লাগা/ফ্রেশ লাগার ব্যাপার আছে। তাই যান। কিন্তু, সাথে এই আলাপও জোড়া দেন যে, হাঁটলে শরীরের উপকার হয়।

এইটা কথা মিছা না। কিন্তু এইটার উপরে যখন জোর দিবেন বেশি, তখন ফ্রেশ লাগার যে এনজয়মেন্ট, তার বদলে এইটা একটা একম্পলিশমেন্ট হয়ে দাঁড়ায়। আর ফ্রেশ লাগার এনজয়মেন্ট যখন হারায়া ফেলেন, তখন মেইন নিউরোলজিকাল ইফেক্টটাই হারায়া যায়।

কোথাও বেড়াইতে যান। ছবি তোলা স্বাভাবিক। কিন্তু ছবি তুলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রামে দেয়াটা যদি ঘুরতে যাওয়ার মনোশারীরিক প্রক্রিয়ার চেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট হয়, তাহলে স্ট্রাগলটাই হারায়া ফেললেন। আর যেইখানে স্ট্রাগল নাই, সেইখানে কনট্রাডিকশন নাই। আপনি লেস বিয়িং, মোর কমোডিটি।

কোন দেশের যোগ্য নেতা দরকার। এইটা ইম্পোর্ট কইরা আনতে পারবেন? না। তার জনসংযোগের মধ্যে দিয়ে পলিটিকাল হরাইজন আবিষ্কার হবে। সোসাইটি চেঞ্জ হবে। কনফ্লিক্ট হবে। যোগ্য নেতার চাইতেও এইটা দরকার। পলিটিক্সের মেইন কাজই এইটা।

শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর খালি দেশ চালাইছেন। রাজনীতি করেন নাই। প্রথমে বাকিদের এভয়েড করছেন। পরে কনফ্লিক্ট এভয়েড করতে এক পার্টি করছেন। ফলে, রাজনীতি হয় নাই।

যুদ্ধের আগে উনি কি করছেন? মুসলিম লীগের সাথে ফাইট করছেন। অপোজিশনের সাথে ফাইট করছেন। ফলে পলিটিকাল হরাইজন তৈরি হইছে। তিনি নেতা হয়ে উঠছেন। বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি হইছে। পরে নিজেই নিজেরে পোস্ট পলিটিকাল কাল্টে স্থাপনের চেষ্টা করছেন। ফলে, ব্যার্থ হইছেন। আব্দুর রাজ্জাক স্যার কি বলছিলেন? Continue reading

হিন্দুস্তান ডিভাইডেড

This entry is part 17 of 18 in the series রকম শাহ'র বয়ান

জিন্না কি ইতিহাশের ভিলেন, নাকি নায়ক? বাংগালি নেশনালিজম জেই ইতিহাশ বানাইছে তাতে জিন্না হইলেন ভিলেন। এইটা শেয়ার করে মতি-মাহফুজ গং, আওমি লিগ, ছিপিবি, কলিকাতা, ইনডিয়ার কংগেরেছ, বিজেপি, ১৯৪৭ শালের আগের জামাত; বিম্পির ভিতরও বাংগালি নেশনালিজমের আছর আছে, কিন্তু জিন্নার ব্যাপারে খুব কিলিয়ার পজিশন দেখতে পাই না আমি বিম্পির ভিতর।

এদের কাছে জিন্না একজন ভিলেন কারন, এরা শবাই ‘অখন্ড ভারত’ নামে একটা খোয়াব শেয়ার করে, জেইখানে জিন্না কইতেছেন, ‘দুই জাতি’র কথা! আর বিটিশ ইনডিয়ার কংগেরেছের দাবি, এক জাতি, জার নাম ‘ভারতি’, একটাই দেশ, জার নাম ‘ভারত’। এই জায়গাটা ঠিকঠাক বিচার করা গেলেই মাত্র আমরা ৪৭, ৭১, ২৪ বুঝতে পারবো ঠিকঠাক।

বিটিশ ইনডিয়ায় জদি একটা ‘জাতি’র কোন শম্ভাবনা আদৌ থাকে, তার নাম ‘ভারতি’ বা ‘ইনডিয়ান’ না, ইতিহাশের কখনোই তা আছিলো না; মোগল আমলে ‘জাতি’র আইডিয়ার কাছাকাছি একটা জিনিশ আছিলো খুব শম্ভব, জেইটার নাম ‘হিন্দুস্তানি’ এবং এইটাই বিটিশরাও ইউজ করতো শুরুতে; পরে ওরিয়েন্টাল এস্টাডিজ ডেভলাপ করার পরে বিটিশরা ঐটারে ‘ইনডিয়ান’, হিন্দুস্তানরে ইনডিয়া ডাকা শুরু করে; কংগেরেছ ঐ ওরিয়েন্টাল এস্টাডিজের মুরিদ হিশাবে ‘ইনডিয়া/ভারত’ পছন্দ করা শুরু করে, জেই ভাবনার ডেভলাপড গোড়া বঙ্কিমে এবং পরে বিবেকানন্দের ভিতর দিয়া আরো মজবুত হইছিলো। এই কারনে আমি কইছি, ইনডিয়া বা ভারত ডিভাইডেড হয় নাই, বরং হিন্দুস্তান ডিভাইডেড হইয়া পাকিস্তান আর ইনডিয়া হইছে।

জিন্না হিন্দুস্তান মানতে রাজি আছিলো এবং জিন্নার কাছে হিন্দুস্তান মানে বহুজাতির একটা কনফেডারেশন, জেইটা হিন্দুস্তানি নামে একটা মহাজাতির শম্ভাবনা পয়দা করে। কিন্তু কংগেরেছ এইটা মানতে নারাজ, তারা মুখে ‘না না’ কইতে থাইকা ধর্মের বেছিছে ‘ইনডিয়া/মিথিকেল ভারত’ খোয়াব দেখতে থাকে এবং হিন্দুস্তানের মানুশের ভিতর বহু ভাগ-ধর্ম-কালচার আছে বইলা মানতে একদমই নারাজ। ওরিয়েন্টালিস্ট কংগেরেছের এই ভাবনার জবাবে জিন্না হিন্দুস্তানে মোছলমানদের মাইনোরিটি হিশাবে দেখতে পায় এবং ঐ মাইনোরিটির নেতা হইয়া ওঠে। জিন্না ইহিতাশের নায়ক কিনা, শেই ব্যাপারে আগে জদি কোন শন্দেহ থাকেও, আজকের ইনডিয়ায় মোছলমানদের হালতে নজর দিলেই আমাদের বুঝতে পারার কথা জে, জিন্না ওয়াজ রাইট–ইনডিয়ান মানে একটা ধর্মের পরিচয়, ভারত মানে ইজরায়েলের মতো একটা মিথিকেল ভুবন এবং কংগেরেছের মোছলমান মানে বিদেশি এবং ফরেন কালচারাল/রিলিজিয়াছ হামলা এবং এইগুলা তখনই ভাবনা হিশাবে খুবই কিলিয়ার-কাট আছিলো। কংগেরেছ শেইটা অশিকার করছে, জিন্না শেইটা দেখাইয়া দিছেন। Continue reading

‘মুখ ও মুখোশ’ বানানের কথা – আবদুল জব্বার খান

[আবদুল জব্বার খানের জবানিতে লেখছিলেন সিদ্দিক জামাল। ছাপা হইছিল সাযযাদ কাদির সম্পাদিত পাক্ষিক তারকালোক পত্রিকার ১৫-৩১ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ এবং ১-১৪ জানুয়ারি ১৯৮৭ সংখ্যায়। হেডলাইন ছিল “আমার কথা”। সেইখান থিকা ‘মুখ ও মুখোশ’ সিনেমার অংশটা নেয়া হইছে এইখানে।]

১৯৫৩ সালের জানুয়ারি। পরিসংখ্যান বিভাগের ডাইরেক্টর ড. আবদুস সাদেক একটা মিটিং ডাকলেন। দাওয়াটা ছিল চা-চক্রের। এতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও সংম্পাদক সিনেমা হলের মালিক, পরিবেশক প্রমুখ। আমি ও নুরুজ্জামান সাহেবও গেলাম। তখনকার সেক্রেটারিয়েট, ছনের ঘর। এর ভেতর ৪০/৫০ জন লোক। সাদেক সাহেব খুব আবেগপ্রবণ ভাষায় বললেন, ‘আমাদের দেশে ৯০টি সিনেমা হল আছে। এগুলোতে লাহোর, কোলকাতা, বোম্বের ছবি চলে। চলচ্চিত্র শিল্পকে গড়ে তুলতে, হলগুলোকে বাঁচাতে হলে আমাদের পূর্ব পাকিস্তানে ছবি তৈরি করতে হবে। গুলিস্থানের মালিক এস এম দোসানী উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের আবহাওয়া অর্দ্রে, এখানে ছবি তৈরি সম্ভব নয়।’ সাদেক সাহেবের মুখটা কালো হয়ে গেল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, ‘কথাটা আমার কাছে যুক্তিসংগত মনে হচ্ছে না। আর্দ্র আবহাওয়ায় ছবি হবে না কেন? কোলকাতার ছবিরও কিছু কিছু অংশ পর্ব পাকিস্তানে শ্যুটিং হয়। ছবি দেখার সময় সেগুলো তো আলাদা কিছু মনে হয় না। ভদ্রলোক এবার চটে গিয়ে বললেন, ‘আমার চৌদ্দ পুরুষ ফিল্মের সঙ্গে জড়িত, আমাদের পরিবেশনা আছে, স্টুডিও আছে, সিনেমা হল আছে। অর্থাৎ ফিল্মের সাথে সংশ্লিষ্ট সব শাখাই আমাদের আছে। অতএব আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, পূর্ব পাকিস্তানে যে বাজেট সেই অর্থ দিয়ে কাঁচা মালের একটা কারখানা করা সম্ভব নয়। এভাবে বেশ বড় সড় একটা বক্তৃতা দিলেন তিনি। আমি আবারও উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, ‘এটা কোনো যুক্তির কথা নয়। কোলকাতায় যদি ছবি তৈরি হয় তবে ঢাকায় মাটিতে হবে না কেন? ওরা নেগেটিভ বাইরে থেকে এনে ছবি করে। আমরাও পারব। ছবি অবশ্যই হবে। আর এক বছরের মধ্যে যদি কোনো ছবি তৈরি না হয়, কেউ না করে তবে এই জব্বার খানই ছবি বানাবে!’ রীতিমতো চ্যালেঞ্জ দিয়ে ফেললাম। ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলনের পর এক বিশেষ চেতনা ছড়িয়ে পড়েছে-আমরা সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চাই, আমরা স্বনির্ভর হব, আমরা দেশাত্মবোধের পরিচয় দিব যার যার ক্ষেত্রে কাজ করে। আমি রাজনীতি করি না — আমি নাটক লিখছি, নাটক করছি। এ মুহূর্তে সিনেমার ওপর চ্যালেঞ্জ দিয়ে ফেললাম-অনেকটা বোকার মতোই। চলে আসার সময় জামান বলল, ‘এটা ভুল করলে হে সিনেমা তুমি করতে পারবে না।’

আমার ‘ডাকাত’ নাটকের রিহার্সেল তখন প্রায় শেষ। ভিক্টোরিয়া ক্লাবে বসে বিকেলে চা খাচ্ছি। এই ক্লাবেই আমি খেলেছি। সরওয়ার সাহেব এলেন। ‘জব্বার সাহেব আপনারা নাকি ছবি বানাচ্ছেন?’ বলে খবরের কাগজে বের করলেন। ‘খান জামান ফিল্ম প্রোডাকশন’-খবর বের হয়েছে। কে দিয়েছে জানি না। আমি অবাক! কই আমরা তো ছবি শুরু করি নি। জামান বলল, তুমি ওই কথা বলেছ তাই এই অবস্থা। এখন বানাও ছবি। আমি পড়লাম মহাবিপাকে। ছবি করব, ক্যামেরা পাবো কোথা? সরওয়ার সাহেব বললেন, ক্যামেরা আমার আছে, কাজ শুরু করেন। বললাম, আপনার ক্যামেরায় কাজ হবে তার প্রমাণ? আমরা মাঠের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করছিলাম। আমাদেরই সে সব তুলে পরে দেখালেন। দেখলাম কাজ চলবে। উনি দুই রোল কোডাক ফিল্ম আনতে বললেন, আনলাম। আমরা ঘরে চৌকির তলায় সে ফিল্ম পড়ে রইল অনেকদিন।

ভাবলাম ছবি করবই। কোলকাতার একজন ‘ইকবাল ফিল্মস’ করেছিল কিন্তু ছবি করে নি। সেই ভদ্রলোকের প্রস্তাবে তাকে শেয়ার করে নিলাম। আমি পরিচালক (বলাকা সিনেমার) এম এ হাসান চেয়ারম্যান, নুরুজ্জামান ম্যানেজিং ডিরেক্টর। আমি, মালেক সাহেব, কচি সাহেব সবাই পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কোম্পানি গঠন করলাম। এরপর জয়েন্ট স্টক কোম্পানি করার অনুমোদন নিলাম। ছবি করার পুরো দায়িত্ব এখন আমার ওপর। Continue reading

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
জীবিকার জন্য একটা চাকরি করি। তবে পড়তে ও লেখতে ভালবাসি। স্পেশালি পাঠক আমি। যা লেখার ফেসবুকেই লেখি। গদ্যই প্রিয়। কিন্তু কোন এক ফাঁকে গত বছর একটা কবিতার বই বের হইছে।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →