ভীতু মধ্যবিত্তের ৫ আগস্ট
এই লেখাটা আমি ২৪ এর আগস্টের ৬ তারিখ থেকে লিখতে চাইতেছিলাম। কিন্তু সেই সময়ে চারদিকে যে ঝড়তুফান চলতেছিল আর একই সাথে নিজের ভিতরে যে অস্থিরতা এবং বিজয়ের আনন্দ পাশাপাশি বিরাজমান ছিল তাতে সেই মেমোরি লেখা হয়ে উঠে নাই। আর এমন লেখার মাঝে আবেগের যেই উথালপাথাল, তাতে এইটা দ্রুত লেখার ক্ষেত্রে আতিশয্যের কিছু রিস্ক থাকে। সেইটা বাদ দিতে কিছু সময় পেরোতে দেওয়া সেইফ। তাতে অবশ্য কিছু স্মৃতিভ্রমের ঝুঁকিও থাকে। কিন্তু মাত্র চার মাসের মাথায় এই মুহূর্তে যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে চারদিকে, প্রতিদিন নতুন নতুন যেসব বয়ান, ন্যারেটিভ পড়ছি, দেখতেছি, শুনতেছি, নায়ক, খলনায়ক বানানোর প্রবণতা দেখতেছি তাতে কিছুদিন পরে মনে হবে আমি মনে হয় ৫ আগস্টে কল্পনায় ছিলাম। বা ছিলামই না। ফলে লেখাটা জরুরি। অন্য কারও জন্য না হলে নিজের জন্যই জরুরি।
ইন্টারনেট শাট ডাউনের সময়ে বা কারফিউ চলাকালে কাগজে কলমে প্রচুর লিখেছি। সেগুলো এই আলোচনার মুখ্য বিষয় না। প্রাসঙ্গিকভাবে আগের পরের কিছু ঘটনা আসতে পারে। মূলত ৫ তারিখ নিয়েই লিখব। তখনকার জ্ঞানের আন্দাজে লিখব। তখনো যা জানিনা, পরে জেনেছি, সেই তথ্য সেইভাবেই আনব।
এটা একেবারেই ব্যক্তিগত লেন্সের একটা নির্দিষ্ট সময়ের লেখা। ফলে বৃহৎ প্রেক্ষাপটের বিশ্লেষণ আশা করলে হতাশ হবেন।
আমি ১ তারিখ থেকে মাঠে, রাস্তায়, শহীদ মিনারে ঘুরতেছি। কখনো একা, কখনো পরিচিত ছোটভাইদের বা অন্য কোনো সার্কেলের সাথে। আমার কাছের দোস্ত বা সমসাময়িকরা কেউ ঢাকার বাইরে, কেউই দেশের বাইরে কিংবা পরিস্থিতি মেনে নিয়ে খুনী হাসিনাকে তীব্র ঘৃণা করে নিজের বাস্তবতা মেনে বাসায়। আমার পরিচিত সেকেন্ডারি সার্কেলের (পরিচিতের পরিচিত) অন্তত ১৫/২০ জনের নিহত হওয়ার খবর আছে। সবচেয়ে প্যাথেটিক খবরটা ছিল এক পরিচিত ছোটবোনের বান্ধবীর যার জানালা দিয়ে ঢোকা টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় বাসার সবাই প্রাণে বেঁচে গেলেও সপ্তাহখানেক বয়সের নবজাত সন্তান মারা গেছে। জাস্ট ইমাজিন! এরই মাঝে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচী এক দিন এগিয়ে ৬ তারিখের বদলে ৫ তারিখে এগিয়ে আনা হয়েছিল। এমেজিং মুভ। সম্ভবত সরকারকে হতচকিত করতেই এই মুভ।
১৬ তারিখে আবু সাঈদের শহীদ হওয়ার ভিডিও দেখার পর থেকেই আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে হাসিনার দিন শেষ। সেই সময়ে কারফিউয়ের মাঝে যাদের সাথে মোবাইলে কথা বলে মাথা ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি তাঁদের মাঝে জনাকয়েক লেখক, প্রকাশক, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন আছেন। (তাঁদের কয়েকজনকে ট্যাগ করলাম) ১৭ তারিখ থেকে আমি যা বলেছি সেইটাই ৪ তারিখে পোস্ট করেছিলাম ফেসবুকে। আমার ওয়ালে এখনো আছে। পোস্ট টা কপি করি এখানে –
“রোগীর আত্মীয়স্বজনকে ডাক্তার বলে দিছে, হাসপাতালে রাইখা লাভ নাই। বাড়িতে নিয়া যান। যা খাইতে চায় দেন।
এই মুহূর্তে এই সরকারের অবস্থা সেই রোগীর মতো।
প্রশ্ন শুধু এইটা, কখন?
৩ ঘন্টা, ৩ দিন, নাকি ৩ সপ্তাহ নাকি ৩ মাস…
ইটস অন দ্য কার্ড। আল্লাহ্ ভরসা।”
Continue reading