আমার ভিজুয়াল আর্টের পথ এবং তারপর
আমি কি আর্ট বুঝি? আর্ট কি আলাদা নাকি ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতির সাথে এর কোনো যোগ আছে?
আমার রেগুলার ইন্টারমিডিয়েট এর ব্যাচ ছিলো ২০০৮। তো সেবার পরীক্ষার মধ্যে চিকেন পক্স হইছিলো। ৪ টা পরীক্ষা বেডে দিয়েই বুঝছিলাম যে পাশ করলেও রেজাল্ট ভালো হবে না। আসলে তাই-ই হইছিলো। বন্ধুরা সব ঢাকা চইলা গেলো এডমিশন এর প্রিপারেশন নিতে। আর আমি বাসায় বইসা থাকলাম আরেকবার পরীক্ষা দিতে হবে বলে।
তো ওই ফ্রি টাইমে প্রচুর গান শুনতাম, এলাকায় এভেইলেবল যেইসব কবিতা, উপন্যাসের বইপত্র পাওয়া যাইতো সেইগুলান কিনে পড়তাম। আর ছোটোবেলা থেকে ছবি আকতাম বইলা আবার ড্রয়িং করা শুরু করছিলাম। পত্রিকায় ভিজ্যুয়াল আর্ট রিলেটেড লেখাপত্র পড়তাম। মনে আছে ভ্যান গগ ও গগা রে নিয়া কার যেনো একটা লেখা এত ভালো লাগছিলো যে পত্রিকা থেকে কেটে রাখছিলাম। তো ঐ টাইমেই ডিসিশন নিয়া নিছিলাম যে চারুকলায় পড়বো।
২য় বার ইন্টারমিডিয়েট পাশ কইরা যখন ঢাকায় কোচিং করতে আসতে চাইলাম তখন বাসা থেকে চারুকলার জন্য রাজি না মোটেও। জোর কইরা যশোরে এ ইউনিটের(সাইন্স বেইজড সাবজেক্টের) এডমিশন কোচিং-এর জন্য ভর্তি করাইলো। যশোরে কাজিনের সাথে থাকতাম, কোচিং এ যাইতাম না। যাতায়াত এর টাকা আর কোচিং এ ভর্তির টাকা পুরোটা না দিয়ে সেই টাকা জমাইলাম। আরো কিছু টাকা আগেই জমানো ছিলো। সব মিলিয়ে হাজার ২০ এক টাকা নিয়ে বন্ধু নাজমুল এর কাছে এসে উঠলাম ঢাকায়। চারুকলার ভর্তি কোচিং এ ঢুকলাম। পরীক্ষার মাত্র ২৮ দিন বাকি আর। এপ্লিকেশন যশোর থেকে আগেই কইরা রাখছিলাম।
কোচিং এ আইসা হতাশ, সবাই ন্যাচারালিস্টিক ফিগার ড্রয়িং এর প্রিপারেশন নিচ্ছে। দুর্দান্ত আকে। আর আমি স্রেফ গ্রামের দৃশ্য আকা লোক। কোচিং এ এক কোনায় বইসা থাকতাম, বুঝার চেষ্টা করতাম আর ইম্প্রুভ করার ট্রাই করতাম। পরীক্ষার সপ্তাহ খানেক আগে থেকে খুব সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়া একা একটা মডেল ভাড়া কইরা ড্রয়িং করতাম। আর হতাশ হইতাম। কারণ বুঝতাম কিছুই হচ্ছে না। পরীক্ষার আগের দিন সনদ দা আমার একটা ড্রয়িং দেখে কইলো- এইটা তোমার আকা?
কইলাম হ্যাঁ ভাই।
উনি কইলেন এরকম আকতে পারলে টিকে যাবা। ভরসা পাইছিলাম ওনার কথায়।
তো পরীক্ষার দিন তত্ত্বীয়টা ভালো দিলাম। কিন্তু ড্রয়িং পরীক্ষায় আইসা দেখি কেল্লা ফতে। প্রশ্ন বেশিরভাগেরই কমন পড়ে নাই। মানে ফিগার ড্রয়িং তো আসে নাই।
প্রশ্নপত্রে লেখা: রেখাচিত্রের মাধ্যমে একটা নিসর্গ দৃশ্য আকো, যেখানে কমপক্ষে ৩টা মানব ফিগার থাকতে হবে।
কয়েকজন বন্ধু নিসর্গ দৃশ্য কি জিনিস বুঝতেছিলো না। কইলাম ল্যান্ডস্কেপ।
যাইহোক, বুঝলাম টিকে যাবো। টিকেও গেলাম। পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট ভর্তি হইলাম। ক্লাস শুরু হইলে হতাশার চরমে পৌছাইলাম। ঐ চারুকলার ভর্তি কোচিং যে স্টিল লাইফ, ফিগার, পার্টস ড্রয়িং যা শেখাইতো এখানেও দেখি তাই-ই শেখাচ্ছে। শুধু পেন্সিলের জায়গায় পরবর্তীতে মানে সেকেন্ড ইয়ারে (ওয়াটার কালার), থার্ড আর ফোর্থ ইয়ার(অয়েল কালার) আইসা মিডিয়ামগুলো চেইঞ্জ হইছিলো।
ফার্স্ট এনকাউন্টার হইলো এক মহান শিক্ষকের লগে। যিনি কাইন্ড অফ গডফাদার অফ চারুকলা। উনারে জিগাইলাম- স্যার যা দেখছি তা তো ফটোগ্রাফি কিংবা ট্রেসিং কইরাও আকা যায়। এইটা শিখে কি হবে?
উনি উত্তরে কইলেন- তাই? তো ফটোগ্রাফিতে ভর্তি হইতা। এখানে আসছো ক্যান? তারপর ঠান্ডা মাথায় আবার কইলেন নিয়ম ভাঙতে হইলে নিয়ম জানতে হয়। Continue reading