Main menu

সুমন রহমানের সাথে আলাপ

সুমন রহমান: কবি, গল্পকার, গবেষক। বর্তমানে ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া ষ্টাডিজ বিভাগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসাবে কাজ করছেন। উনার এই ইন্টারভিউটা নেয়া হইছিল ২০১১ সালের সালের জুন মাসের ৯ তারিখ। তখন তিনি অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে থাকেন, পিএইচডি করতেছিলেন সেইখানে। কয়েক মাসের জন্য ঢাকায় আসছিলেন। প্ল্যান ছিল ইন্টেলেকচুয়ালস নামে একটা পত্রিকা প্রকাশ করার এবং সেই পত্রিকায় ছাপানোর জন্য ইন্টারভিউটা নেয়া হইছিল, উনার ‘কানার হাটবাজার’ বইয়ের প্রকাশক দুয়েন্দে’র পরিবাগের অফিসে।

রেজাউল করিম মনু এবং ইমরুল হাসান আলাপ করছেন উনার সাথে। আমিনুল বারী শুভ্র উপস্থিত হইছিলেন পরে, কিন্তু আলাপে অংশ নেন নাই আর।

_____________________________________________

 

ইমরুল হাসান: ব্রাকগ্রাউন্ডটা আবার একটু বলি তাইলে হয়তো আপনার কাছে ক্লিয়ার হবে। আমরা মনে করতেছি যে, চিন্তার ব্যাপারে একটা পত্রিকা বের করার। পত্রিকা বলতে কিছু জিনিস যেটা চিন্তা করি বা যারা চিন্তা করেন যেটা মনে হয় যে গুরুত্বপূর্ণ হইতে পারে – এই জিনিসগুলি নিয়া একটা সংকলন টাইপের করতে চাই। যেইখানে আমরা যাদের চিন্তাকে গুরুত্বপূর্ন মনে করি বর্তমান সময়ে, উনাদের একটা ইন্টারভিউ নিতে চাই। এই জন্য আপনার সাথে আসলে বসা। তো এইটাতে আসলে প্রথমেই প্রশ্ন আসতে পারে, যেহেতু চিন্তা নিয়া কথা বলতেছি, চিন্তা জিনিসটারে আপনি সামাজিক কর্মকান্ডের মধ্যে কিভাবে গুরুত্বপূর্ন মনে করেন বা অবস্থানটা কি?

সুমন রহমান: চিন্তা, মানে যেটাকে… অ্যাকাডেমিক ডিসকোর্সে যেটাকে বলে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এইটা তো ডেফিন্টেলি একটা এক ধরনের অ্যাক্টিভিজম। এইটা আমাদের দেশে যেইটা হইছে যে এইটা সবসময়… এইটা একটা মানে পলিটিক্যালি এফিলিয়েটেট… পলিটিক্যালি এফিলিয়েটেট বললেও আসলে ইয়ে শোনায়… মানে একটা পার্টিজান এফেক্ট ছিল সব সময়। চিন্তাগুলা এইজন্যে মানে… ফ্রি থিংকার বা ওরকম যে একজন বুদ্ধিজীবী যার পার্টি এফিলিয়েশন নাই ওইরকম কাউকে আমরা সনাক্ত করতে পারি নাই খুব সহজেই, অতীতে বা ওইরকম যদি কাউকে আমরা দেখতাম তার এফিলিয়েশনটা ঐ ভাবে আমরা আমরা সনাক্ত করতে পারতাম না। তো ঐ সময়ে একটা কালচার ছিল যে তাকে তার পিঠে ছাপ্পর দেয়া হইতো। কিন্তু একাডেমিক ডেপথ রাইখা চিন্তা করা বা চিন্তার চর্চা করা… মানে সেইটার পরিবেশ আমাদের ছিল না। এইটা যে একটা সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম… এবং এই ক্রিয়াটার যে সোসাইটিতে একটা বিশাল ভূমিকা আছে, এই বিষয়ে আসলে আমরা খুব সম্প্রতি সচেতন হই। এখন আমার মনে হয় যে অনেকেই বুঝে বা ভাবে যে এই চিন্তাগুলা জরুরি, চিন্তাগুলা হাজির রাখা জরুরি, চিন্তাগুলা যাচাই করা জরুরি। তো সেই অর্থে আমাদের এই সাম্প্রতিক যে কর্মকান্ড… আমরা যেটা নিউ মিডিয়াতে খুলতেছি। আমরা এটা শুরু করছিলাম খেলাচ্ছলে। ঠিক আছে একটা মিডিয়া আসছে, এটাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়? মিডিয়ার নানারকম ফাংশানালিটি আছে, সেগুলো আমরা এক্সপ্লোর করতেছিলাম। সেগুলো আমরা প্রথমে, তোমার মনে আছে যে আমরা ইয়াহু গ্রুপ দিয়া শুরু করছিলাম রাইসু, কবিসভা, ওইখানে এক ধরনের তর্ক… দেখা যাচ্ছে তখন ওইখানে তর্কগুলো যখন হচ্ছিল তখন অনেক লোক তর্কগুলোতে রিঅ্যাক্ট করতে শুরু করেছে। এ রকম তর্ক, উতপ্ত তর্ক, বিতর্ক, কুতর্ক নানানকিছু বলা হচ্ছিল যে আসলে এই তর্কের ভবিষ্যৎ কি? বা এত তর্কের দরকার কি? তো, এখন আমার যেইটা মনে হয়, তাদের যেটা হলো যে অরিয়েন্টশনটা ভিন্ন ছিল, ফলে তারা আসলে এই জায়গাগুলা তাৎক্ষণিকভাবে সনাক্ত করতে পারে নাই। এখন ইভানচুয়ালি এই তার্কিকতা… যেটাকে বলে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং, আমরা যদি বলি… ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এর গুরুত্বটা যে নিচ্ছে না, সেও টের পাচ্ছে যে এটার গুরুত্ব আছে। যে কারণে তুমি দেখবা যে আমাদেরকে যারা গালাগালি করতেছে তারা গুরুত্ব দিয়াই করতেছে। মানে গুরুত্বহীনকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আসলে এতটা গুরুত্ব আমাদের প্রাপ্য না। বেশি গুরুত্ব দিয়া ফেলতেছে… এইটা একটা ব্যাপার আছে। জায়েন্টিফিকেশন করা হচ্ছে… অতিমানবীয়, ফরহাদ মজহারের ক্ষেত্রেও যেইটা হয়, এমন কিছু একটা বানানো হয় যে মনে হয় বিশাল একটা মাফিয়া সে, বসে আছে।

ইমরুল হাসান: তো ফরহাদ মজহারের প্রসঙ্গটাতে একটু পরেই আসি। আমার একটা জিনিস মনে হচ্ছিল যে, আপনি চিন্তার জায়গাটাতে… দুইটা জিনিস আপনার কথাতে আসে। একটা হচ্ছে যে অ্যাকাডেমিকস এর জায়গায়; চিন্তার ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিকসের এর ভূমিকাটা কি? মানে ভালো খারাপ বা সংশ্লিষ্টতাটা… মানে আনটিল অর্মত্য সেন পড়ার আগ পর্যন্ত আমার কাছে অ্যাকাডেমিক একটা ভুয়া ব্যাপারই ছিল। মানে, তারপর আমার কয়েকজন অ্যাকাডেমিশিয়ানের কথা দেখি যে, না চিন্তাতে উনাদের একটা কন্ট্রিবিউশন আছে। আর একটা জিনিস আপনি বলেলেন যে, অ্যাক্টিভিজম এর ব্যাপার, অ্যাক্টিভিজম এর জায়গাটাতে কিছুদিন আগে আমার মনে হচ্ছিল যে চিন্তার সাথে অ্যাক্টিভিজম এর সম্পর্কটা আসলে কি রকম? দুইটা জায়গা আর কি…

রেজাউল করিম: পরের প্রশ্নটা কনসাইজ করতে চাচ্ছি একভাবে… সেটা হচ্ছে, যে চিন্তা করছে, সোশ্যাল সিস্টেমে তার কাজটা যে ভূমিকা রাখে সেটা সম্পর্কে খুব কনশাস হওয়া, আবার একাধারে সে পার্টিজান হবে না, এটা কিভাবে সম্ভব তার? মানে আমি বলতে চাচ্ছি যে কনশাস হওয়াটা তাকে পার্টিজান হবার দিকে ঠেলে দেয় কি না?

সুমন রহমান: তাকে সে নেসেসারিলি যেইটা করে তারে পলিটিক্যাল করে তোলে। পলিটিক্যাল কইরা তোলার পরে… একটা লেভেলে সে পার্টিজান হতে পারে। একটা লেভেলে সে পার্টিজান মানে সে যদি মনে করে যে কোন পার্টি এফিলিয়েশন তার চিন্তাকে হোল্ড করে, সে পার্টিজান হইয়া যাইতে পারে। এইটা নট আনলাইকলি। এইটা অতীতে আমার মনে আছে যে আমরা একবার একটা স্টাডি সার্কেল করছিলাম, মার্কসীয় অধ্যয়ন সম্পর্কে। ওইটার শর্ত ছিল এই রকম যে আমরা চিন্তা চর্চা করব। পড়াশোন করবো, করে… একটা পার্টি সিস্টেমকে স্টাডি করবো, মানে বিদ্যমান পার্টি সিস্টেমগুলাকে স্টাডি করব। করে যেটাকে আমরা গুরুত্বপূর্ন মনে করব তখন আমরা ঐ পার্টি সিস্টেমে জয়েন করব। এর অর্থ হচ্ছে আপনি অ্যাকাডেমিক জায়গা থেকে অ্যাক্টিভিস্টের জায়গায় যাচ্ছেন। এটা একটা ওয়ে আউট, এটা হচ্ছে মার্কিস্ট ওয়ে আউট। মার্কিস্ট চিন্তাগুলো এভাবে… ঠিক আছে আমি চিন্তা করব, এভাবে চিন্তা করে একটা জায়গায় পৌঁছাব। যেখান থেকে আমি এরপরে সমাজের জন্য সরাসরি মুক্তির কাজটা করব। কিন্তু আমি পারসোনালি ঠিক ঐ জায়গাতে না… আমি মনে করি যে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং ইটসেলফ একটা অ্যাক্টিভিজম। সে সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজমকে যেমন নিবিড় পর্যবেক্ষণ করবে আবার অ্যাকাডেমিক যে জার্গনগুলা আছে, অ্যাকাডেমিক চিন্তার একটা শেপ আছে… মানে এটা একটা অ্যাবস্ট্রাকশনের এর দিকে যায় সবসময়। যে অ্যাবস্ট্রাকশন থেকে একধরনের কংক্রিট জায়গা খুঁজে বের করতে হবে, করে দুইটাকে লিংক-আপ করতে হবে। ঐ লিংক-আপ করতে গেলে আসলে ঐ যে দড়ির উপর দাঁড়ায়ে থাকতে হবে তখন। মানে এটা খুব আন-পপুলার একটা জায়গা, রিস্কি একটা জায়গা। আপনাকে অ্যাকাডেমিশিয়ানরা বলবে যে, শ্যালো। যারা খুব হার্ডকোর অ্যাকাডেমিশিয়ান তারা আপনাকে শ্যালো বলবে আর যারা হার্ডকোর অ্যাক্টিভিস্ট তারা আপনাকে সুবিধাবাদী বলবে। কিন্তু এই জায়গাটায় দাঁড়ায়া থাকার গুরুত্ব আছে। আমি মনে করি যে, আমি এই জায়গাটায় দাঁড়াইতে চাই, কারণ এই জায়গায় না দাঁড়াইলে আপনি জায়গা দুইটাকে বুঝবেন না। অ্যাকাডেমিশিয়ানরা যেমন অ্যাক্টিভিজমকে বুঝে না অ্যাক্টিভিস্টরাও ঠিক হার্ডকোর অ্যাকাডেমিকদের বুঝে না। আপনাকে… যদি আপনি এই চিন্তার প্রক্রিয়া মানে, অ্যাক্টিভিজম তো একটা চিন্তার পক্রিয়া মাধ্যমেই আসে, সেইটা শ্যালো হইলেও। এই চিন্তার পক্রিয়ার ডেভেলাপমেন্টটা যদি বুঝতে হয় তাহলে আপনি অ্যাক্টিভিজমের জায়গায় চলে গেলে আর বুঝবেন না। মানে আপনি আপনারটা বুঝবেন। এর পরে যখন আপনি আর একটি চিন্তার প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত হবেন বিং এন অ্যাক্টিভিস্ট তখন খুবই ডিফিকাল্ট হবে ওইটাকে ভোলা। আসলে এইটা একটা ফ্রেম ওয়ার্ক… আসলে ঐ ধৈর্য্যটা আপনার থাকবে না। কারণ অলরেডি আপনি ওরিয়েন্টেড, এফিলিয়েটেড।

রেজাউল করিম: না, আমি কয়েকটা জিনিস… ধরেন চিন্তা, ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং বা বুদ্ধিজীবিতা, সেটা বলতে আমার একভাবে মনে হয় যে, একটা তর্কের মধ্যে তার থাকতে হবে। তো তর্কের মধ্যে থাকা যদি চিন্তক, বুদ্ধিজীবী বা থিঙ্কার এর একটা প্রবণতা হয় এবং বিপরীতে পার্টিজান হওয়া যদি কতগুলো গোল-অরিয়েন্টেড, অঙ্গীকার-অরিয়েন্টেড কর্ম হয় সেটা তো আসলে তর্কের এগেনেস্টে এ একটা ষ্ট্যাবল জায়গা অ্যাজিউম করে। ফলে বুদ্ধিজীবিতা এবং পার্টিজান হওয়া দুটাতো কনফ্লিক্ট করবার কথা। সেখানে সে মূহূর্তে যে পার্টিজান হলো সে মুহূর্তে তার বুদ্ধিজীবিতা থাকে কি না?

সুমন রহমান: একটা লেভেলে তার বুদ্ধিজীবিতার অবসান হয়। কারণ সে একটা সারটেইন পাটাতন নিজের জন্য খুঁজে নিবে। এখন ঘটনা হচ্ছে যে, আরেকটা প্রব্লেম হচ্ছে যে আপনি কি এন্ডলেসলি তর্ক করতেই থাকবেন? তাহলে এটার সোশ্যাল ইয়ে কি?

রেজাউল করিম: এইখানে আপনি আগে যেইটা বলছিলেন যে, তর্ক এবং কুতর্ক কোন জায়গায় আমরা আলাদা করব? বা কোথায় আপনি করেন?

সুমন রহমান: আমি যেমন আলাদা করি না। কারণ আমার কাছে মনে হয় যে… কুতর্ক বলতে আমরা যেটা বুঝি, যাকে কুতর্ক বলা হচ্ছে, আমরা যখন একটা তর্ক করি… আমরা কি করি? মানে আমি একদম আমাদের নিজেদের তর্কের কথা বলি, যে আমরা তখন তর্কের প্রিমাইজগুলাকে প্রশ্ন করতে শুরু করি। আমরা আসলে যে গ্রাউন্ড এ দাঁড়ায়া তর্ক করতেছি, যে ইন্সেট্রুমেন্টগুলা ইউজ করতেছি সেইগুলা ঠিক আছে কিনা? এইটা অনেকের কাছে কুতর্ক মনে হচ্ছে। মানে… কথা বলতেছি আমরা টুইন টাওয়ারে… কথার কথা আল কায়দার বিমান হামলা নিয়া। সেইখান থিকা যদি কথার কথা আমরা আল-কায়দার সোশ্যাল ফাংশন, আল কায়দার ফরমেশন এইসব নিয়া এদিকে আসি, অনেকের কাছে এইটা মনে হইতে পারে এইটা ইরিলিভেন্ট। আমাদের এইটা কিন্তু অ্যাকাডেমিক কন্ট্রিবিউশন, অ্যাকাডেমি কিন্তু আপনাকে এই জায়গাটাতে উৎসাহিত করে। আপনি যেই তর্কটা করছেন, এই তর্কের যে ডিসর্কাসিভ ইন্সট্রুমেন্টগুলা ইউজ করছেন সেগুলো আপনি প্রশ্ন করেছেন। পোস্টমর্ডানিজম কিন্তু তাই। পোস্টমর্ডানিস্টরা প্রথমে আসলে খুব মানে… এর আগে মর্ডানিস্টরা কিছু ইন্সট্রুমেনটকে ধ্রুব ধরে নিছে… যেমন ডেমোক্রেসি এটা ধ্রুব, ফ্রিডম অফ উইল এটা ধ্রুব। মানে এইগুলাকে আমরা মেনে নিব। এইগুলাকে মেনে নিয়া আমরা কথা বলব। অর্থাৎ আমরা যে তর্কই করব সে তর্কটা করব ডেমোক্রেসির স্বার্থে, মানবতার মুক্তির স্বার্থে, ফ্রিডম অফ উইল এর স্বার্থে।

রেজাউল করিম: ওইটাই তো পার্টিজান হওয়া।

সুমন রহমান: হ্যাঁ ।

রেজাউল করিম: পার্টিজান হওয়া তো আসলে ঠিক আওয়ামীলীগ বি.এন.পি না। যখন আপনি সারটেইন একটা পলিটিক্যাল অ্যাজাম্পশনের এর জন্যই ফাইট করতেছেন, এটাইতো পার্টিজান হওয়া।

সুমন রহমান: একজেকটলি। এখন যেটা হয় যে, পোস্টমর্ডানিস্টরা আইসা প্রথমে এই পিলারগুলাকে প্রশ্ন করতে শুরু করলো। যে ফ্রিডম অফ উইল জিনিসটা আসলে কি? বা ডেমোক্রেসি জিনিসটা কি ? বা সেক্যুলারিজম জিনিসটা কি? এখন এইটা যখন আমি লং টাইম, ১০০ বছর ধরে যখন আমি এই ধরণের জিনিসগুলাকে প্রশ্নাতীত চিত্তে মেনে নিচ্ছি বা মেনে নেয়ার চর্চার মধ্যে আমি বড় হইছি। ডেমোক্রেসি এমন একটা জিনিস যেইটা বাই এনি মিনস এইটা আমার লক্ষ্য। মানবতাবাদ এমন একটা জিনিস যেইটা বাই এনি মিনস এইটা আমার লক্ষ্য, সেক্যুলারিজম… ফলে তার কাছে এই জিনিসগুলাকে প্রশ্ন করা, তার কাছে প্রাথমিকভাবে কুতর্কই মনে হবে। কিন্তু আমরা এখন বুঝি যে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এর এই জায়গাগুলাকে আমরা প্রশ্ন না কইরা আমরা আগাইতে পারি না, মানে আগাইতে পারি নাই এখনো…

ইমরুল হাসান: আমি যদি আবার এই অ্যাকাডেমিকস এর জায়গাটাতে যদি আরেকবার যাই আর কি। মানে আপনি বলতেছেন যে চিন্তার সাথে অ্যাকাডেমিকসের একটা সর্ম্পক আছে… আমার কাছে মনে হইছে যে অ্যাকাডেমিকস অনেক বেশি রেফারেন্স নির্ভর আর কি। চিন্তার ক্ষেত্রে ফ্রি থিঙ্কিং এবং রেফারেন্স-নির্ভর চিন্তা দুইটা তো আমার মনে হয় যে কিছুদূর পর্যন্ত কন্ট্রাডিকশন আছে। মানে ফ্রি থিঙ্কিং হচ্ছে যে সর্ট অফ আপনার অনেকটা অভিজ্ঞতা থেকে আপনার একটা ফিলিংস, গাট ফিলিংস থেকে তৈরি হয়। আর অ্যাকাডেমিকস তো ট্রুলি আপনার দাঁড়ায়া আছে একটা রেফারেন্সের উপর, জেনেলোজির উপর। পরম্পরা ছাড়া তো অ্যাকাডেমিকস তৈরী হইতে পারে না। তো ফ্রি থিঙ্কিং এর সাথে আপনার অ্যাকাডেমিকসের একটা কনফ্লিক্টিং একটা চান্স…

সুমন রহমান: কনফ্লিক্ট না, যেটা হয় যে আপনার অ্যাকাডেমিকস তো ব্রিক বাই ব্রিক তারা ডেভেলাপ করে। যেহেতু ব্রিক বাই ব্রিক ডেভেলাপ করে, অ্যাকাডেমি যদিও ডেভেলাপ হচ্ছে… পৃথিবীতে ফ্রি থিংকার আসলে ঐ অর্থে কতজনকে বলা যাবে আমার সন্দেহ আছে।

ইমরুল হাসান: ওইটাও আসলে কোন না কোন অর্থে অ্যাকাডেমিকসের মধ্যে পরে।

সুমন রহমান: মানে কোন না কোন অরিয়েনটেশন তার থাকে। আর যদি আমরা ফ্রি থিংক করার কথা উইথআউট অ্যাকাডেমিক শুরু করি… তাহলে আসলে আল্টিমেটলি ঐ জুতা আবিষ্কারের মতই হবে। কারণ অ্যাকাডেমিক কন্ট্রিবিউশনটা তো আছে সোসাইটিতে। বা তারা চিন্তাটাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে সে জিনিসগুলাকে আমি ইনডিভিজুয়ালি প্রশ্ন করতেছি… আপনি একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে অতীতে অনেক আগে প্রশ্ন করা হইছে এবং অতীতে আলোচনা হইছে। ফলে এই বিষয়ে কনশাস না থাইকা এখন তাহলে ফ্রি থিংকার কারা? ফ্রি থিংকার হচ্ছে… আপনি অ্যাকাডেমিকরা কি করে? মানে অ্যাকাডেমিক অ্যাচিভমেন্টগুলো হয় খুব মাইনর অ্যাচিভমেন্ট। আপনি লট অফ জিনিস দেখলেন চিন্তাগুলা দেখলেন সেখানে আপনি খুব মাইনর একটি কন্ট্রিবিউশন করলেন। অ্যাকাডেমিস্টরা এভাবে এগিয়ে যায়। কারণ তারা খুব ডিফেন্সিভ। যে জিনিস ডিফেন্ড করতে পারবে না সেই জিনিস নিয়ে তারা কথা বলবে না। মানে ১০০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7} ডিপেন্ডবল জিনিস নিয়েই অ্যাকাডেমিকসরা কথা বলবে। এখন আমরা যারা এর বাইরে যাদেরকে চিনি তারা ট্রুলি অ্যাকাডেমিশিয়ানও না আবার ট্রুলি অ্যাক্টিভিস্টও না, যেমন : যদি বলি ফুকো বা দেরিদা।

ইমরুল হাসান: অবশ্য ওনারা মাচ মোর অ্যাকাডেমিশিয়ান… মানে অ্যাকাডেমিশিয়ানদের মধ্যেও হয়তো…

সুমন রহমান: না মানে ট্রুলি অ্যাকাডেমিশিয়ান বলতে যা বুঝায়, তা না। কারণ অ্যাকাডেমিক চেয়ার হোল্ড করলেও তারা ঐরকম না, তাদের সোশ্যাল একটা ফাংশন ছিল। ফলে এরা কিন্তু আবার ঐ অর্থে আমি যেটা দেখলাম আর কি যে…

রেজাউল করিম: এদের মানে ঐ অর্থে আমার এক্সজাম্পল দিতে পারব না। আমার মনে হয় যখন তারা সোশ্যাল বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকা রাখতে গেছে তখন তারা প্রায়শই নিজেদের চিন্তার সাথে কনফ্লিক্ট করেছে। এমন কিছু বলেছে যেটা আসলে তার যে থিওরিটিক্যাল পজিশন সেটা হয়ত সে নিজেই ভুলে গেছে। মানে দেখা গেছে যে, ফুকো নিজেই একজন ফুকোলডিয়ান না।

সুমন রহমান: এদেরকে মনে হয় যে সব সময় ঠিক মাঝামাঝি হাঁটার লোক আরকি। সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজমগুলা থেকেও নিজেকে এলোফ করতে পারে না বা চায় না। আবার পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক রিগোর যেটা, সেইটাকেও সে কম্প্রোমাইজ করে না। এখন এই জায়গাটায় থাকলে যেটা হয় আরকি সেটাই হবে। আপনি কন্ট্রাডিক্টারি হবেন। মানে কন্ট্রাডিক্টারি হওয়াটাকে আমি খুব দোষের কিছু মনে করি না।

রেজাউল করিম: না না, আমি সেটা বলি নাই। আমি যেইটা বলেছি যে, ধরেন, যেটাকে সে নাকচ করে আসছে সেটাকেই সে বলবে। যেমন, দেরিদা সম্ভবত ৯/১১ পরে, সে এইরকম একটা প্রতিক্রিয়া… ওয়েস্ট নিয়া তার যে বিশ্লেষণ যেগুলা সে খারিজ করে দিয়া আসছে লজিক্যালি, থিওরেটিক্যালি; সেই জায়গায় সে আবার ফেরত যাচ্ছে।

ইমরুল হাসান: আমার মনে হয় যে এই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ক্রিটিক্যাল চিন্তার ক্ষেত্রে আমরা আজকাল পরিচিত হই ইন্টারপ্রিটেশনের মাঝখান দিয়া, এই ইন্টারপ্রিটেশনের ভিতর আমরা যেইটা পাই, সেইটা আসলে কারেক্ট ইন্টারপ্রিটেশন কিনা, সেই জায়গাটাতে একটা সন্দেহ আছে।

সুমন রহমান: কারেক্ট বলে কিছু নেই। সবই ইন্টারপ্রিটেশন ।

রেজাউল করিম: আমিএকটা প্রস্তাব দেই। আমরা বিদেশ যাবার চেষ্টা কম করি। এটা মনে হয় যে আমাদের উপকারই হবে।

ইমরুল হাসান: এটা যদি বলা হয় যে, আমার পার্টিজান শব্দ শুনতে এগিয়ে মনে হচ্ছিল যে সলিমুল্লাহ খান অনেক পছন্দ করবেন… আপনি যে কি শব্দ ইউজ করেন নাই, লুম্পেন শব্দটা ইউজ করেন নাই, আমার মনে হয় এইটা ছাপা হইলে উনি খুশিই হবেন যে আপনি পার্টিজান শব্দটা আপনি নিছেন, মানে পুরানো শব্দ হিসাবে। আমার মনে হইতেছিল আপনার কথায়, যে দুইটা ঝামেলা দেখলাম যে আপনি বলতেছেন ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং-টা হচ্ছে যে নট অ্যান অ্যাকাডেমিক বা নট ফুললি অ্যাক্টিভিজম যদিও দুইটাতে তার একটা জায়গা থাকে।

রেজাউল করিম: আচ্ছা, আমি এইখানে একটা টিকা সংযোজন করতে চাই। অ্যাকাডেমিকে আমি আরও ওয়াইডারঅর্থে দেখার প্রস্তাব দিচ্ছি। কি অর্থে? ধরেন সোসাইটি এবং কালচার এইটাকে আমরা কেন কেন অ্যাকাডেমি বলব না? সেটাতে সোসাইটি এবং কালচার, আজকে আমি যেখানে আছি সেইখানে যে আমি সোশ্যাল এবং কালচারাল লোকেশনে আছি সেইটার রেফারেন্সের মধ্যে দিয়াই আমি এইখানে আছি।

সুমন রহমান: আমি এই জায়গাটাতেই আসতে চাচ্ছি। ঘটনা হয়েছে হচ্ছে যে আমি যে বিষয়ে আসলে গবেষণা করি সেই বিষয়টার নাম হচ্ছে কালচারাল ষ্টাডিজ। কালচারাল ষ্টাডিজ ডিসিপ্লিন হিসেবে যখন ফর্ম করে তখন তার সামনে এই প্রব্লেমটা ছিল। মানে লট অফ হট ডিসকাশনস ওয়্যার মেড সেই সময়ে। যেটা বার্মিংহ্যাম স্কুল অফ কালচারাল ষ্টাডিজ যেইটা বলে, ষ্টুয়ার্ট হল টল এরা… এরা যেহেতু কমিটেড মার্ক্সিস্ট ছিল। এদের অনেকেই। আবার মার্ক্সিস্ট না হইলেও সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ছিল, কমিটেড;তারা সোসাইটির জন্য কাজ করতেছে, এ রকম একটা কমিটমেন্ট তাদের ছিল। ফলে প্রথম তাদের এই প্রব্লেমটা হয়। আমরা এইগুলোকে মিলাবো কি করে? তখন তারা এই ডিসিপ্লিনটা তৈরি করে। এই ডিসিপ্লিনটা কালচারাল ষ্টাডিজ। কালচারাল ষ্টাডিজ আসলে কেন কালচারাল সোশিওলজি না। এই যে পার্থক্যটা কোথায় কোথায় হল? কালচারাল সোশিওলজি আর কালচারাল ষ্টাডিজ-এর পার্থক্যটা কি? স্টুয়ার্ড হল বা স্যামুয়েলসন কেউ একজন বলতেছে, আমি শিউর না, যে একটা পার্থক্য আছে। সেটা হচ্ছে যে এই ডিসিপ্লিনে আমরা… এটা নিয়ে আমি কিন্তু কনফিউজড এখনও। ওদের ডিসকাশনটা বলতেছি, ডিসিপ্লিনটা ফর্ম করার ক্ষেত্রে তারা কি চিন্তাটা করছে সেভেনটিসে। এই ডিসিপ্লিনটা কাজ করবে হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের, মানে সংখ্যাগরিষ্ট ঠিক না, সুবিধা বঞ্চিত মানুষের স্বার্থে। সুবিধা বঞ্চিত মানুষের স্বার্থে এই ডিসকাশনগুলাও যখন হবে তখন আমরা আসলে একটা পক্ষ নিব, এই ডিসকাশনগুলাতে। সুবিধা বঞ্চিত মানুষগুলার জায়গায় দাঁড়ায়া আমরা এই ডিসকাশনগুলো করব। এটা ছিল তাদের মানে ডিসটিংক্ট করা, কালচারাল সোশিওলজি থেকে কালচারাল ষ্টাডিজকে ডিসটিংক্ট করার জন্য একটা ক্রাইটেরিয়া, অন্যতম ক্রাইটেরিয়া…

ইমরুল হাসান: আমি অ্যাকাডেমিকস বলতে, যেইখানে মনু স্পেসটাকে এক্সপান্ড করলেন, আমি লিমিট করতে চাচ্ছিলাম, যেই কারণে এই জিনিসটা আসছে, আমার মনে হচ্ছে যদি লিমিটেড-ই রাখি দুটি জায়গার মাঝখানের জায়গাটা হচ্ছে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং, ত ক্রিটিক্যাল থিংকং ইটসেলফ ব্যাপারটা কি রকম?

সুমন রহমান: আমি আমার কথাটা শেষ করি। যদি এটাকে আমি একজন ডিসিপ্লিনের একজন লোক বাই ট্রেনিং আমি যদি আমার ডিসিপ্লিন নিয়া আমার প্রিমাইজগুলারে মান্য করি তাইলে আমি অ্যাকাডেমিক হইয়াও এর মাঝখানে নাই। কালচারাল ষ্টাডিজ ইটসেলফ একটা মাঝখানের ডিসিপ্লিন, মানে যে জায়গাটা আমরা মাঝখানে সনাক্ত করছি,সেই জায়গাতেই কালচারাল ষ্টাডিজ বলতেছে যে, এইটা আমার জায়গা এবং আমি একটা ডিসিপ্লিন; সেই অর্থে আমরা যারা এই ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং করতেছি যেমন ইমরুলের এই লেখাটা,  এইটা ডেফিনেটলি কালচারাল ষ্টাডিজের একটা লেখা, মানে কালচারাল ষ্টাডিজ ডিসিপ্লিনে অ্যাকোমোডেড করার মতো।

ইমরুল হাসান: আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং ইটসেলফ কিছু কারেক্টারিস্টিকস  থাকতে পারে, যেমন আপনি বলতেছিলেন যে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং ব্যাপারটা কি রকম; এটা কি সেক্যুলার একটা জিনিস কিনা? মানে এটা কি পাবলিককে সবসময় সত্য কথা বলবে এরকম একটা জিনিস? মানে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিংটাকে যদি আমরা লোকেট করতে চাই ইটসেলফ এটা সোসাইটি’র অ্যাক্টিভিটির মধ্যে আসলে কিভাবে লোকেট করবো?

সুমন রহমান: মানে যখনই একটা ডিসকোর্স আসবে সামনে; ডিসকোর্স তৈরী হবে উইট ভ্যারাইটি অফ লজিক, ভ্যারাইটি অফ ফাউন্ডেশন অফ থিঙ্কস, তখন ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এর কাজ হচ্ছে, এর প্রত্যেকটা কমপোনেন্টকে ইনডিভিজ্যুয়াল কোশ্চেন করা, তার পরে বোথ জিনিসটাকে ধরা।

ইমরুল হাসান: এইটাই আসলে সোসাইটি’র অ্যাক্টিভিটির মধ্যে আমার যে জিনিসটা মনে হয় যে কমন পিপলের মধ্যে প্রব্লেমটা ক্রিয়েট করে যে আপনি বলছেন বা আপনি কোশ্চেন করছেন কিন্তু কোন অ্যানসার করছেন না। কোন জায়গা দেখাচ্ছেন না, কোন রেসপন্সবিলিটি নিচ্ছেন না। মানে আগের দিনে যেটা বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব ছিল যে, বলা এটা ভুল এটা ঠিক। এখনকার ক্রিটিক্যাল থিংকার এর দায়িত্ব তো সেটা না। এই যে প্যারাডাইম শিফটটা হয়া গেল এতে তো যেটা হইছে যে ওভারঅল চিন্তা করার জায়গাটা অনেক বেশি ভারনারেবল হয়া গেছে আর কি, মানে সোসাইটির অ্যাক্টিভিটির ভিতর…

সুমন রহমান: মানে আপনি মাস-কে ইনফ্লুয়েন্স করতে পারছেন না, মানে ইনিসিয়ালি পারতেছেন না, মানে আপনি যেটা করতে পারছেন সেটা হচ্ছে মাস-কে এক্সপ্লিট করতে পারতেছেন। মাস আপনারে অপছন্দ করেতেছে কারণ আপনি তাকে এক্সপ্লিক্ট কইরা ফেলছেন।

রেজাউল করিম: মাস অপছন্দ করল, মাস-এর পছন্দ যদি বুদ্ধিজীবিতার গোল হয়… মাস অপছন্দ করলে সমস্যা কি…

সুমন রহমান: একটা সময় তো বুদ্ধিজীবীদের কাজ ছিল মাস-কে দিক নির্দেশনা দেয়া, সমাজকে দিক নির্দেশনা দেয়া। এখনও বুদ্ধিজীবিতা সমাজকে দিক নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এখন ওয়েটা ভিন্ন । আগে যেটা করত প্রেসস্ক্রাইব করা, পলিসি রিকমেন্ডশন দিত।

রেজাউল করিম: এখানে দেয়া এবং নেয়া, সাবজেক্ট অর্থাৎ কর্তার এখানে একটা পার্থক্য তৈরি ত; ফলে আমার প্রস্তাব হচ্ছে বুদ্ধিজীবিতা দিক নির্দেশনা দেবে তা না, বরং বুদ্ধিজীবিতার যে চিন্তা সেই চিন্তা থেকে পলিটিশিয়ান দিক নির্দেশনা পাবে বা মাস দিক নির্দেশনা পাইতে পারে, কিন্তু দেয়াটা বুদ্ধিজীবিতার উদ্দেশ্য কিনা এ ব্যাপারে আমি সন্দিহান।

সুমন রহমান: না উদ্দেশ্য না… উদ্দেশ্য না বলেই তো এই প্রব্লেমটা হচ্ছে। একটা সময় এইটা আমাদের প্রাকটিস ছিল। আমরা মনে করতাম সোসাইটিকে বুদ্ধিজীবীরা এইটা বলবে এই রকম একটা প্রব্লেম হইছে এখন বলেন কি করা যায়? বুদ্ধিজীবীরা কলাম লিখবে, টক শো করবে। যে এটা করা উচিত, গর্ভমেন্টের এটা করা উচিৎ। এখন এটা চমস্কিরাও করেন কিন্তু খুব ভাইটালি যেটা করেন সেটা হলো কোশ্চেন করেন…

রেজাউল করিম: চমস্কিরা যেটা করেন… ফুকো চমস্কিরে বুদ্ধিজীবী থিকা কলামিস্ট বানাইয়া দিছে। ফুকো আর চমস্কির যে তর্ক ওইটার ক্ষেত্রে আমার মনে হইছে…

সুমন রহমান: মাস তো হচ্ছে গ্রাভেটি একটা। এটা তো বিশাল গ্রাভিটি. এখন আপনি যখন, আপনি তো প্রো-পিপল মানুষ তো বুদ্ধিজীবী আমি যদি কালচারাল ষ্টাডিজের ওই প্রিমাইজটাকেও যদি মানি, আসলে আপনি যে চিন্তা করেছেন আপনি কিন্তু অগোচর শুধু অ্যাবাস্ট্রাক্ট চিন্তাকে নিয়াই ভাবতেছেন না। চিন্তাটা কাজে লাগানোর, ইমপ্লিকেশন বা সোশ্যাল ফাংশন নিয়াই আপনি কিন্তু ভাবতেছেন। না হলে আপনি খামোখা চিন্তা করবেন না। তখন হয় যে কি, ক্রমশই আপনি এই গ্রাভিটি’র বলয় এর ভেতর থাকেন। সেখান থেকে আপনাকে এই গ্রাভিটি একসময় আপনাকে পপুলারিজমের দিকে ঠেলে দিবে। একটা সময় আপনি দেখবেন যে আপনার একটা কথায় মুভমেন্ট হয়ে যাচ্ছে।

অরুন্ধতির কথাই যদি আমরা ভাবি; অরুন্ধতি যখন দেখল যে তার কথায় এত ইনরমাস ইনফ্লুয়েন্স সোসাইটিতে, ফলে এই ইনফ্লুয়েন্স দিয়া সে নিজে ট্রাপড হয়। অ্যাক্টিভিজমের দিকে চলে যায়। অরুন্ধতিকে কেন তাহলে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে মেধা পাটেকার বারবার নিয়ে আসতেছে? আমি তাদের ডকুমেন্টারিগুলা দেখছি। মেধা পাটেকার দুর্দান্ত বক্তৃতা দেন। অরুন্ধতী কিন্তু সে রকম বক্তা না। তবে অরুন্ধতীর প্রেজেন্সটা একটা ফ্যাক্টর।

রেজাউল করিম: একটা ডিফারেন্স তৈরি করে…

সুমন রহমান: অরুন্ধতী যেহেতু এই প্রেজেন্সটা ইউজ করতেছে ফলে চিন্তার জায়গায় কম্প্রোমাইজ করার সম্ভাবনা তৈরী হয়। চমস্কির ক্ষেত্রে এই রকম ঘটনা গুলো ঘটে। এইগুলা আমরা দেখছি। এখন ঘটনা হচ্ছে এই গ্রাভিটি থেকে আপনি দূরে থাকবেন কি থাকবেন না; বা এইটা বুদ্ধিজীবিতার শর্ত কি না আমি কনফিউজড। এই জন্য যে এটা আসলে ম্যান টু ম্যান ভ্যারি করে। এটা নির্ভর করে আপনি কিভাবে বেড়ে উঠতেছেন? আপনি কতটুকু লোড নিতে পারবেন? আপনি পপুলিজমের দিকে আপনার যাত্রার ধরনটা কি? অ্যাবষ্ট্রাকশনের এর দিকে আপনার চাওয়ার ধরণটা কি? ফলে আমরা কিন্তু আসলে এই যে মিডল-এর মধ্যে আমরা রেঞ্জ অফ চিন্তা পাচ্ছি। অ্যাক্টিভিজম পাচ্ছি। কোনটা অ্যাবস্ট্রাক্ট, কোনটা একটু সেপারেট, কোনোটা প্রো-পিপল, অনেক বেশি অ্যাক্টিভিস্ট। এখন ঘটনা হচ্ছে যে আমাদের এখানে টোটাল রেঞ্জটাকে আমাদের কাউন্ট করতে হবে। মানে এখানে কিছু আছে বাম ঘেঁষা কিছু আছে ডান ঘেঁষা মানে বামপন্থী কিছু আছে অ্যাকাডেমি ঘেঁষা, কিছু আছে অ্যাক্টিভিজম ঘেঁষা।

সুমন রহমান ও ইমরুল হাসান

সুমন রহমান ও ইমরুল হাসান

ইমরুল হাসান: আমি কয়েকটা জায়গায় টেনডেন্সির-র কথা বলি বাংলাদেশে… এইখানে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং মানে হচ্ছে মার্ক্সিস্ট থিঙ্কিং, এর বাইরে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং সম্ভব না, এখন পর্যন্ত এইটা এস্টাবলিশ ধারা; কিন্তু কখনোই মার্কিস্ট চিন্তার বাইরে গিয়া কখনও চিন্তা আসে নাই…

সুমন রহমান: মার্ক্সিস্ট চিন্তা দিয়াই কিন্তু শুরু। আসলে শুরুটা মার্ক্সিস্ট চিন্তা দিয়েই করতে হবে। মার্ক্স-ই হচ্ছে প্রথম।

রেজাউল করিম: এটা নিয়তি।

সুমন রহমান: হ্যাঁ, এইটা নিয়তি হইয়া গেছে আসলে। মার্ক্স-ই প্রথমে এই ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এর সূচনা করছে। ইট কেইমস লাস্ট ইন দ্য কোশ্চেন…

ইমরুল হাসান: মানে এইটা একদিকের কথা। মার্ক্সস্টিদের একটা ফেনোমেনা আছে। আর একটা হচ্ছে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং মানে পাশ্চাত্যের ব্যাপার হয়া যায়। এই পর্যন্ত আমরা যে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং গুলা এইটা ত আসলে পাশ্চাত্য থেকেই আসা। দুইটা ব্যাপার আছে; একটা হচ্ছে আমাদের ট্রেন্ড হচ্ছে মার্ক্সসিজম থেকে আসা। আরেকটা হচ্ছে এখন যে পোস্ট মর্ডানিজমের কথা বলে আসতেছি। এইগুলিও আসলে তো পাশ্চাত্য থেকে আসা। মানে এখানে সোসাইটি-র মধ্যে আমাদের কোন ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং-এর হিস্ট্রি ছিল কিনা?

সুমন রহমান: এখন আমি যেটা পাশ্চাত্য,যদি বলি আর কি, এসব জায়গায় পাশ্চাত্য বললে…

ইমরুল হাসান: মানে ইন এ ব্রডার সেন্স বললে…

সুমন রহমান: এখন আমার যেটা করি লজিক্যাল থিঙ্কিং করি বা রিজনিং থিঙ্কিং করি। এখন যদি আমরা ডেভেলাপমেন্ট লজিক কনসিডার করি, লজিক হচ্ছে বাই ডিফল্ট একটা ওয়েষ্টার্ন ফেনোমেনা, লজিক, লজিকের প্রাকটিস, আমরা যদি গ্রীক সভ্যতার কথা বলি ঐ দিক থেকে আসছে, তার মানে এই না যে আমাদের এইখানে লজিকের প্রাকটিস ছিল না। লজিকের প্রাকটিস ছিল। এখন আমি কোন প্যাটার্নে করব।

ইমরুল হাসান: এইখানে আসলে পাশ্চাত্যের সাথে ফরহাদ মজহার এর প্রসঙ্গটা আসে। উনার একটা চিন্তা আমার কাছে ইর্ম্পটেন্ট মনে হইছে যে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম যে, সোসাইটির মধ্যে চিন্তাটা খুব গুরুত্বপূর্ন। মানে ডিসপাইট বিইং ইকনোমিক্যালি স্ট্রং বা মিলিটারিলি ষ্ট্রং, চিন্তার দিক থিকা যদি ষ্ট্রং না হইতে পারলে জাতি হিসেবে টিকে থাকাটা মুশকিল। কিন্তু উনি চিন্তা হিসাবে রিকমেন্ড করলেন হচ্ছে নদীয়ার চিন্তারে, মানে নদীয়ার চিন্তা হচ্ছে বাংলার চিন্তা। তো সেইটার ক্ষেত্রে আমি স্পষ্ট না; কিন্তু এই যে গুরুত্বের জায়গাটা, উনি চিন্তার গুরুত্বের জায়গাটাতে বলেন, সেইখানে আমার মনে হয় যে ইন্টেলেকচুয়ালিটিটা একটা ইর্ম্পটেন্ট পার্ট সোসাইটিতে। মানে আপনি যদি চিন্তা দিয়ে লোকেট করতে না পারেন সোসাইটিকে, ওয়ার্ল্ডকে যদি আপনি না ক্রিটিসাইজ করতে পারেন বা সব আলোচনার মধ্যে না নিয়ে আসতে পারেন তাহলে তো আপনি…

সুমন রহমান: ফরহাদ ভাই আমাদের ভাবান্দোলন, যে শব্দটা উনি ব্যবহার করেন, আমাদের এইখানকার চিন্তার যে ইতিহাস এটাকে লোকেট করার চেষ্টা করছেন। যখনি উনি এটাকে ফ্রেমিং করতে গেছেন, এইটা করতে গিয়া উনি কি চিন্তা ইউজ করেছেন? কোন ফ্রেমিংটা ব্যবহার করেছেন? মার্ক্সসিজম! একদমই মার্ক্সিস্ট ফ্রেমওয়ার্ক এ তিনি আসলে পুরো জিনিসটা দেখেছেন। ফলে উনি ওই ফ্রেমওর্য়াকগুলার বাইরে যাইতে পারেন নাই, বা যান নাই। এখানেই মনে হইছে যে মার্ক্সিস্ট ফ্রেমওর্য়াক দিয়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এখন যতই ভাব আন্দোলন হওয়ার চেষ্টা হোক ।

রেজাউল করিম: আমার একটা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে যে… ফরহাদ মজহার যখন লালনের কথা বলে, লালনের যে সংঙস বা থট, সেই থট তো আমি দেখি অ্যান্টি-মার্ক্স একটা অবস্থানে দেখতে পাই, সেটা হচ্ছে পিপলকে আর্থি ব্যাপারে যে ইন্টারেস্ট সেইটার ব্যাপারে প্যাশন-শূন্য করতে চায়। যে এটার অর্থ নাই। তো সেই অর্থে মার্ক্স রিলিজিয়নকে দোষগুলো দিছিলো, যে তুমি গরিব এটা মেনে নাও যে ঈশ্বর তোমারে গরিব বানাইছে। মানে রিলিজিয়ন হইলো আফিম, তো লালনের যে চিন্তা তার সাথে এই রিলিজিয়াস আফিমের পার্থক্য কোথায়? যদি না থাকে তাহলে এমনি…

সুমন রহমান: পার্থক্যটা হচ্ছে যে লালন তো চিন্তার একটা মুভমেন্ট তৈরি করেছে। চিন্তার মুভমেন্টটা এই অর্থে যে, সে যে টার্মগুলা ইউজ করতেছে পরম সত্তা বা মনের মানুষ এটা দিয়ে তার আত্মার মুক্তি ঘটতেছে। এইখানে ফরহাদ ভাই হচ্ছে, জায়গাটাকে খুব প্রাইম মনে করেন, এই যে আত্মার মুক্তি ঘটল এবং এই মুক্তি ঘটার মাধ্যমে একটা অভিন্ন চিন্তা শেয়ার করার মাধ্যমে এই সবার আত্মার মুক্তি ঘটানোর মাধ্যমে একটা কম্যুনিটি তৈরী হইলো। এইটা একটা বিপ্লবী কম্যুনিটি। উনি ওইখানে চলে গেছেন।

ইমরুল হাসান: আমার মনে হয়, আপনি যেইভাবে ইন্টারপ্রেট করলেন মার্ক্স এবং লালন কে। ফরহাদ মজহার আসলে ভিন্নভাবে ইন্টারপ্রেট করেন। এখন ভিন্নভাবে ইন্টারপ্রেট করেন বইলা হয়তো মিলাইতে পারেন।

রেজাউল করিম: মার্ক্সসিজম মানে কিন্তু গরিব হওয়া না বরং সবাই ধনী হওয়া। লালন কিন্তু ধনের অর্থ নাই, এই কথাটা বলেন। ফলে তার একটা বিপ্লবী কমিউনিটি তৈরী করলো। ধরেন আমরা এখন আত্মহত্যা করতে চাই। আমরা আত্মহত্যাকারীদের একটা বিপ্লবী কমিউনিটি তৈরী করলাম। যে কমিউনিটি হচ্ছে প্রতি সপ্তাহে পাবলিকলি সুইসাইড করবে। সেইটাও তো বিপ্লবী। সেটা কি মার্ক্সসিস্ট হইলো? মানে বিপ্লব মানেই ত মার্ক্সসিস্ট বিপ্লব না…

সুমন রহমান: না, বিপ্লব মানেই মার্ক্সস্টিট না। ফরহাদ ভাই যে জায়গাটায় যেতে চান সেটা হচ্ছে যে সোসাইটিতে যখন ক্লাস, কাস্ট এইগুলা দিয়ে খুব বেশি এননেস্ট, সোসাইটিগুলা হাইলি ক্লাস-বেইজড এবং কাস্ট-বেইজড, লালনের আশেপাশ তখন যে সোসাইটি ছিল আর কি; সেই জায়গায় লালন যখন এই সহজ মানুষ এই মতাদর্শের মাধ্যমে যে কমিউনিটিটা তৈরি করল, এই কমিউনিটিটা তখন ইটসেলফ একটা পরিষ্কার ডিপারচার টু একজিস্টিং যে অপ্রেসিভ সিস্টেম; সেই অর্থে, ফরহাদ ভাই বলতেছে যে এইটা একটা বিপ্লবী। কারণ এইটা একজিস্টিং অপ্রেসিভ সিস্টেমটাকে কোশ্চেন করতেছে এবং কোশ্চেন করে একটা পাল্টা পজিশন নিচ্ছে সোসাইটিতে।

রেজাউল করিম: কোশ্চেন করতেছে না স্কেইপ করতেছে?

ইমরুল হাসান: ওইটাই ইন্টারপ্রিটেশন…

সুমন রহমান: কোশ্চেন করতেছে; ‘‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’’ – মানে ’জাত’কে সে কোশ্চেন করতেছে। কোশ্চেন করে সে তাঁর টেক্সট হাজির আছে। স্কেইপ না। ঐ অর্থে এইটা কোশ্চেন ইনিসিয়েট করার মাধ্যমে বিপ্লবের সম্ভাবনা আছে।

ইমরুল হাসান: আমি আরকেটু ব্রডার আসপেক্টে যাইতে চাই আর কি। মানে উনি এই চিন্তাটাকে পাশ্চাত্য চিন্তা এবং বাংলার চিন্তা এই ডিভাইডেশনটা কিভাবে দেখেন?

সুমন রহমান: না উনি এইটা মিলাইতে চান…

ইমরুল হাসান: ওইটা করতে গেলে তো বাংলার চিন্তাটা বলে একটা চিন্তাকে আইডেন্টিফাই করার দরকার পড়ে। যেইখানে উনি লালনের চিন্তাকে বাংলার চিন্তা বলে আইডেন্টিফাই করেন। এই আইডেন্টিফিকেশনটাকে আপনি কিভাবে দেখেন? মানে এইটা কি আসলে বাংলার মূল চিন্তা কি হইতে পারে কি না?

সুমন রহমান: এখন… আমি বাংলার মূল চিন্তা সনাক্ত করতে যাব কেন? প্রথম কথা। এটা কি ন্যাশনালিজমের কোন প্রবনতা? আই অ্যাম নট ন্যাশনালিস্ট। বাংলার চিন্তা নিয়া ঐ অর্থে আমার কোন ইয়ে নাই…

রেজাউল করিম: আমার মনে হয় যে আপনি এই বিষয় গুলো বললেন, তা থেকে মনে হয় উনি আসলে নিজেকে একটা জায়গায় দেখতে চান যার মধ্যে তিনি ওয়েস্টরে সাথে একটা ডায়ালগে যেতে পারেন। এই যে ডায়ালগ একটা দরকারি জিনিস, সেই দরকারি জিনিসটা উনি চায়। নাইলে আমি যদি কেউ না হই, তাইলে আমি ত ডায়ালেক্টিসেই তেরি করতে পারতেছি না।

সুমন রহমান: ফরহাদ ভাইয়ের গুরত্বটা ঐখানেই।

ইমরুল হাসান: এখন কথা হচ্ছে আমি যে জায়গাটাকে আমার জায়গা বলে আইডেন্টিফাই করেছি সেইটা আসলে সে জায়গা কি না?

রেজাউল করিম: এখন আমার যদি ভিন্ন কোন জায়গা না থাকে তাহলে খরকুটোর মত ধরতে হবে।

সুমন রহমান: না, আমি এটা মনে করি যে লালনকে চিন্তক হিসাবে আইডেন্টিফাই করা বা বাউল দর্শনকে আমাদের ডিটারমিনিং দর্শন হিসাবে আইডেন্টিফাই করা, এইটা ফরহাদ ভাই না এইটা অনেক আগেই রবীন্দ্রনাথ করছে। এবং একশ বছর ধইরাই এটার গুরুত্ব কিন্তু আছে। গুরুত্ব কমে নাই; আমিও প্রকারান্তরে যে ফর্মগুলা নিয়া আমি কাজ করি, গানের ফর্মগুলা নিয়া, সেখানে আমি দেখতেছি যে বাউল চিন্তার গুরুত্ব, এই সাধারন মানুষের সমাজে মারাত্মক গুরুত্ব আছে। এমন কোনো গ্রাম আপনি পাবেন না বাংলাদেশে, যে গ্রামে অন্তঃত ৫-৬ জন লোক ফকিরি করে না। ফকিরি করা কিন্তু অন্য জিনিস। বাউল, অ্যাজ এ প্রাকটিসিং বাউল না; প্রাকটিসিং বাউল বলতে আমি বুঝাচ্ছি যে বাউল ধর্ম, বাউলের যে ফিলসফি, মোড অফ এক্সপ্রেশন, গান; সেগুলো নিয়া সে আছে। এইটা আমি ইভেন বস্তিতে দেখছি, এমন বস্তিতে আমি যাইতে পারি নাই যেইখানে বাউলিয়ানা ধরনের লোক আমি পাই নাই; এদের মধ্যে কিন্তু যোগাযোগ আছে। চিন্তার যোগাযোগ আছে।

রেজাউল করিম: এই যে রবীন্দ্রনাথরে এই জায়গায় যে কৃতিত্ব দিলেন। আমি সেই কৃতিত্বটা দিতে চাই না। কেন চাই না কিংবা আমি আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই যে, এটা দেয়া যায় কিনা? যেখানে কিনা ধরেন লালনকে রবীন্দ্রনাথের রিকগনিশেন বলেন, সেটা আসতেছে হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের উপনিষদীয় যে আগ্রহ, সেই উপনিষদীয়’র যে একটা লোকজ সংস্করন সে এই জায়গায় দেখতে পাচ্ছে; এটা কি রকম?

সুমন রহমান: না এটা না। কারণ হচ্ছে যে আমি যদি খুব প্রাকটিক্যাল অর্থে বলি, রবীন্দ্রনাথ আসলে লালনকে পিক করে নাই, এটাতো আমরা আমরা জানি; এইখানে আন্ডারনিথ ঘটনাটা কি ঘটছে দেখেন, একটা জায়গায় চিন্তা করেন; ধরেন গানে রবীন্দ্রনাথের কথা ভাবেন। রবীন্দ্রনাথের গান, বিফোর হি মিটস লালন এবং আটাফার হি মিটস লালন, কি হইছে? আগের গানগুলা হচ্ছে নর্থ ইন্ডিয়ান মিউজিক ট্রাডিশনের সিম্পল, মানে কি বলব একদম অস্বচ্ছ ঝাপসা কপি মাত্র।

রেজাউল করিম: আচ্ছা এটার কি সন তারিখ আমরা জানি…

সুমন রহমান: এইটার ধরেন আপনার উনিশ’শ দশ টশ, এর আগে মনে হয় সে পরিচিতি ছিল না। ১৯০৫ বা ১০…

রেজাউল করিম: লালন মারা গেছে কত সালে?

সুমন রহমান: আরো আগে… লালনের সাথে তার দেখা হয়নাই তো, লালন মারা গেছেন ১৮৮০/৮৫’র দিকে

ইমরুল হাসান: ফ্যাক্টের ব্যাপারে আমার আগ্রহটা কম আর কি… আমি বরং মোর কনসানট্রেট করতে চাই অন থট প্রসেস…

রেজাউল করিম: না, আমি গানের ব্যাপারটাতে দেখতে চাচ্ছিলাম…

সুমন রহমান: আমি সেটাই বলছিলাম, আমি শেষ করি। এখন আমি যখন রবীন্দ্রনাথের গানকে দেখি, রবীন্দ্রনাথের আগের গানগুলো .. ’ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি’ জাতীয় গান গুলোর সাথে আপনি যদি ভারতীয় সঙ্গীতের যে ঐতিহ্য , সেই ঐতিহ্যে আপনি সেই গান গুলোকে স্থাপন করেন, রবীন্দ্রনাথের গান কিছুই না। সঙ্গীতজ্ঞ হিসাবে রবীন্দ্রনাথ নিজেও টের পাইছে তার গান আসলে নর্থ ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের ট্রাডিশনে কিছুই না, জাস্ট কপিমাত্র। রবীন্দ্রনাথের বাংলা একটা টপ্পা আপনি যদি শোনেন এবং কোনো একটা হিন্দি টপ্পা যদি শোনেন আপনার এটাতে জেলো-ই মনে হবে। তো এখন সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে রবীন্দ্রনাথ কিন্তু এই জায়গাগুলো লেক করতেছিলো, দেখতেছিলো যে টিউনগুলো তার দরকার আসলে ওইগুলা আসলে এইগুলা না। ঐ টিউনগুলা বরো কইরা সুবিধা করতে পারছেন না। এই জায়গায় যখন উনি লালনকে মিট করলেন তিনি কিন্তু লালনের ফিলসফি মিট করলেন না। লালনের টিউনগুলাকে মিট করলেন।

রেজাউল করিম: না ফিলসফি বলতে আমি লোকজ সংস্করণ যেটা বললাম ‘ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’; এই যে ’কে’ এই কে হচ্ছে এখানে ব্রক্ষ্ম। লালন-এর হচ্ছে সহজ মানুষ, দুইজনের তো দুইটা কে। এখন এই সহজ মানুষকে দিয়া, রবীন্দ্রনাথ যে সহজ মানুষরে যে ব্রক্ষ্ম ভাবল বা ভাবতে পারল ঐ কারণে আমি লালনের ভিতরে উপনিষদের লোকজ সংস্করণ পাইছে ফলে সে অলরেডী ব্রাক্ষ্ম সেই জায়গায় থেকে তার যে কালচারাল লোকেশন এই অর্থে আমি লালনের সাথে তার একটা ঐক্য দেখতে পাই। ফলে সে লালনকে নেয় নাই, উপনিষদের একটা সংস্করণকে নিছে। ইন ফ্যাক্ট ওইটাই একমাত্র চর্চিত সংস্করণ, লালনের।

সুমন রহমান: পার্টলি সেইটা হইতেই পারে। সেটা সমস্যা না। বাউল দর্শন ইটসেলফ কোত্থেকে আসছে? বাউল তো যে চৈতন্যের সমাজ দর্শনের কন্ট্রিবিউশন। বাউল তো কোনো ইউনিক দর্শন না।

ইমরুল হাসান: আমি বাংলার দর্শনের জায়গাটাতে একটা জায়গাতে আইসা ক্লোজিং টানতে চাই। আপনি যেইটা বলতেছিলেন যে, সব সমাজেই দুই-একজন ফকিরি থাকে। এরা পারস্পারিক কমিউনিকেশনের ভিতরে থাকে; এখানে রেজাউল করিমের যে কথা ছিল যে, স্কেপটিজম এবং রেভিউলেশন দুইটার মধ্যে ডিফারেন্সটা কি? কারেন্ট যে ষ্ট্যাটাসটা এই চিন্তাটার; ইন প্রাকটিস এইটা কিন্তু স্কেপটিজমের মতো রেভিউলেশনের মত না। মানে ঐখানে ফরহাদ মজহার হয়তো দেখতেছেন রেভিউলেশনের সম্ভাবনাটা। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এইটা একটা জায়গা, এইখানে আপনার কনসার্নটা কি? রবীন্দ্রনাথের চিন্তাটা কিন্তু বাংলাদেশে সাহিত্যের মাধ্যমে এস্টাবলিশ বা অনেক বেশি ইনফ্লুয়েন্সিয়াল। মানে, অ্যাজ এ থিঙ্কার, উনি সাহিত্যিক বলেই চিন্তাবিদ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত। এখন একটা জেনারেল টেনডেন্সি আছে আমাদের সোসাইটিতে, যিনি ভালো সাহিত্য করেন কিন্তু ভাল চিন্তা করেন এরকম একটা মনে হয়। বা যিনি আসলে চিন্তা করেন তিনি আসলে ভালো সাহিত্য করেন। এই যে চিন্তা এবং সাহিত্যের যোগাযোগ…

রেজাউল করিম: মানে শর্তযুক্ত… শর্তাধীনে আছে…

ইমরুল হাসান: মানে শর্তাধীনে আছে কি না? মানে যদি খুব প্লেইন কোশ্চেনের কথা যদি বলা যায়, সাম্প্রতিক চিন্তাগুলার সাথে খুব একটা সংশ্লিষ্ট না তার পক্ষে কি সাহিত্য রচনা করা কঠিন কি না?

সুমন রহমান: তোমার প্রথম প্রশ্নের আমার জবাবটা; তুমি বলতেছো যে স্কেপটিজম; এইটা আমি মনে করি না, কারণ হচ্ছে যে রেভিউলেশন শব্দটা বাদ দিই, রেজিস্টেন্স যদি বলি; প্রতিরোধের কিন্তু অনেকরকমের ফর্ম আছে। দেয়ার আর লট অফ হিডেন ফর্মস।

রেজাউল করিম: এখানে ছোট একটা প্রশ্ন করে রাখি; আমরা যে আলোচনা করছিলাম, যে আপনার আগ্রহ যদি হয় রেজিসটিং, তখন আপনার বুদ্ধিজীবিতা খারিজ হয় কি না? কারণ ঐ জায়গায় আমরা ছিলাম; কারণ রেজিসটিং শেষ পর্যন্ত ত পার্টিজান হওয়া।

সুমন রহমান: না নিজে রেজিস্ট করা না। রেজিষ্ট্যান্টসকে লোকেট করা। নিজে রেজিস্ট করা এক জিনিস; বুদ্ধিজীবী রেজিস্ট করবে না। বুদ্ধিজীবী রেজিষ্ট্যান্টগুলাকে লোকেট করবে। সোসাইটিতে কোথায় মানুষ কিভাবে রেজিস্ট করছে, যেমন: একটা খুব প্রথাগত রেজিষ্ট্যান্ট এর ধরন হচ্ছে রেভিউলেশন। একটা বিদ্যামান তন্ত্রকে উৎখাত করা। আমরা মার্ক্সসীয় ধারাতে দেখছি যে শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কতন্ত্র… অভিজাত শ্রেণী করছে, নানান রকম ফর্ম হয়। কিন্তু এরপরে যেটা হলো যে রেজিষ্ট্যান্স এর মানে অনেক হিডেন ফর্ম আমরা ইয়ে করলাম। এটা নিয়ে বহু কাজ হইছে। বিখ্যাত কাজ আছে জেমস স্কট এর; উইপেনস অফ দ্য উইক, ইউনিফর্মস অফ রেজিষ্ট্যান্স, এভরিডে ফর্মস এ যেটাকে আমরা স্কেপিজম বলতেছি, মানে স্কেপিজম ইন মার্ক্সিস্ট টার্ম, এইটা স্কেপিজমই। জেমস স্কট বলেতেছেন এটা এভয়ডেন্স প্রোটেস্ট। এভয়েড বললাম এই জন্য যে এটা ইনসিসটেন্স ফর্মও হতে পারে। বা সার্ত্রও বলতেছে পোচিং, পিলফারিং; জেমস স্কটের ইয়ে হচ্ছে যে আমি গিবত করছি একজনের নামে এটাও একটা রেজিষ্ট্যান্স এক অর্থে। হ্যাঁ, তো এখন এইরকম নানারকম ফর্ম আছে যেই ফর্মগুলা দিয়া সাধারন মানুষ ষ্ট্যাটাস ক্যু কে চ্যালেঞ্জ করে। ফলে একদম হার্ডকোর রেভিউলেশনারি হইতে হবে এমন না। মানুষের আসলে এই জিনিসগুলোকে ওভারকাম করার অনেক রকম ধরন আছে। ক্রিটিক্যাল থিংকার হিসাবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ধরণগুলাকে ঠিকঠাক সনাক্ত করতে পারা; যেমন, তোমাদের তাই আমি জানি, আমাদের ছাত্র জীবনে মার্কিস্ট ওরিয়েন্টশনে আমরা বাইড়া উঠছি। মার্কিস্ট মানে কমউিনস্টি পার্টি ছাত্র ইউনয়িন, এই ধরনের একটা ঘরানার মধ্যে আমরা ছিলাম।

রেজাউল করিম: আমি নাই

সুমন রহমান: আচ্ছা, যা-ই হোক, এখন এটা একটা লেভেলে কিন্তু আমরা সরে আসলাম। সরে আসলাম যথেষ্ঠ ফ্রেজাইল হয়া গেল আমাদের পজিশন, আমরা না আওয়ামীলীগ হইলাম না বিএনপি হইলাম। হইছিলাম তাও একটা ছাত্র ইউনিয়ন, এইটাও নাই। ফলে আমাদেরকে কেউ-ই আর পছন্দ করে না। বিশ্বাসও করেনা। এইটা কি? এরা আসলে কি চায়? তো এই রকম লোক যারা, তাদের অনেককে দেখছি যে তারা গিয়া পপুলিস্ট দলগুলাতে জয়েন করেছে, পত্রিকা বের করেছে। যে আসলে একটা জায়গা দরকার। এইরকম ধরেন যে নিজেকে আনসেটেল রাখা নিজেকে। এইটা খুব শক্তির ব্যাপার, একান্ত আপনি, আমার ক্ষেত্রে বলব যে সত্যি না। আমি প্রকৃতিগবভাবেই আনসেটেল ছিলাম। ফলে আমার জন্য এটা ন্যাচারালি হয়ে গেছে। কিন্তু যারা সেটেল মানুষ তাদের পক্ষে এমন আনসেটেলমেন্টে যাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার। আপনার একটা ইনফ্লুয়েন্স আছে সমাজে। আপনার বাড়ি-ঘর মিলিয়ে টিলিয়ে এমন একটা অবস্থায় যে সেটেলমেন্ট নিতে হবে। তো এখন এই বুদ্ধিজীবী কাজটা হচ্ছে এইরকম যে আনসেটেল অবস্থান নিজের জন্য করা। মানে সোসালি আনসেটেল অবস্থা। যেখান থেকে আপনি আসলে ইক্যুয়ালি আনপপুলার টু এভ্রি সেক্টর। মানে আপনি যে মানুষের পক্ষে কথা বলতে যাবেন যে মানুষ আপনাকে মিস-আন্ডারষ্ট্যান্ড করবে।

রেজাউল করিম: বুদ্ধিজীবী যখন নিজেকে দেখলো যে সে পপুলার তখন তার নিজের বুদ্ধিজীবীতার ধার সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে উঠবার কথা।

সুমন রহমান: ডেফিনেটলি।

ইমরুল হাসান: আমার মনে হয় এইটাকে তাহলে এই পর্যন্ত পার্ক করে ফেলি। এই জায়গাগুলাতে তর্কে যাওয়ার জন্য তো আরো জায়গা আছে। ইন্টারভিউ’র উদ্দেশ্য তো আপনার ভিউগুলাকে জানা।

সুমন রহমান: তোমার আরেকটা প্রশ্ন আছে, তা হলো সাহিত্য ও চিন্তার যে জায়গাটা। এইটা তো খোদ মার্ক্সের আমল থিকা আশ্রিত হয়ে গেছে।

ইমরুল হাসান: হ্যাঁ, উনি ত কবিতা লিখছেন…

সুমন রহমান: হ্যাঁ, কবিতা,উপন্যাস নাটক এই জাতীয় অনেক কিছু আছে। এখন সাহিত্য মানে আমরা যদি প্লেটো দেখি, প্লেটো’র যে ডায়ালগস ইটসেলফ তো সাহিত্যই, সাহিত্যিক মূল্য আছে। পৃথিবীতে গদ্যের ফর্ম তো বেশি দিনের না। তো একসময় রূপক উপমা, কাহিনি এসবের মাধ্যমেই তো চিন্তাগুলোকে স্প্রেড করা হতো। ফলে সাহিত্য চিন্তার সাথে আটাচড ছিল, ঐতিহাসিক ভাবে। এখন নট নেসেসারিলি যে আমাকে সব সময় ফর্ম হিসাবে সাহিত্যকে নিতে হবে। এটা খুব জরুরী না। তবে সাহিত্য একটা ভাল ক্যামোফ্লেজ; একটা ক্রুড চিন্তা যদি তুমি সরাসরি সোসাইটিতে হাজির কর, সেই চিন্তাটা যদি খুব বেশি বিপ্লবী হয়, মানুষের পক্ষে চিন্তাটাকে ক্রুডলি নেয়া সম্ভব না। কিন্তু এটা যদি একটা সাহিত্যিক বাতাবরনে হাজির হয়, ইম্পেরিক্যাল একটা ইয়ের মাধ্যমে হাজির হয়, তাহলে মে বি এইটার একটা বেশি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে। এটার একটা ক্যামোফ্লেজ থাকবে; যেভাবে বাউল দর্শন, বাউল কেন গানকে আশ্রয় করবে?

রেজাউল করিম: যেভাবে রবীন্দ্রনাথ তার ব্রক্ষ্মবাদ আমাদের ভিতরে চালাইয়া যাইতেছে।

সুমন রহমান: সঞ্চার করছে। তার চেয়ে ভয়াবহ, ব্রক্ষ্মবাদ তো সমাজে রিজেকটেড বা তত বেশি এফিলিয়েটেড হয় নাই।

রেজাউল করিম: ততো বেশি ব্রহ্ম না যত বেশি জেসাস।

সুমন রহমান: হ্যাঁ… বাউলদের প্রব্লেমটা কি? বাউলদের তো মূল দর্শন হচ্ছে যে ভাববাদ… বাউলদের যে সেক্সচুয়াল সালভেশন সেটাকে তো তারা মূখ্য মনে করে; এটাকে তারা যদি গান ছাড়া প্রকাশ্যে বলতো তাহলে তো তাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভবই ছিল না। ফলে গান বা সাহিত্য শিল্প হয়ে গেছে আসলে চিন্তাগুলোকে প্রকাশের মাধ্যম, যে মাধ্যমে আসলে ক্যামোফ্লেজ থাকে।

রেজাউল করিম: তাহলে কি আপনি লিটারেচারকে চিন্তার পরবর্তী বললেন?

সুমন রহমান: না, আমি বলি নাই, আমি বলতেছি এক্সজিস্টিং যে প্রাকটিসটা আছে।

ইমরুল হাসান: যেটা বলতেছিলাম, রবীন্দ্রনাথের চিন্তাটা কিন্তু চিন্তার ক্ষেত্রে এতটা গুরুত্বপূর্ন না, ওই জিসাস বা ব্রক্ষ্ম ওইগুলার বাইরে নতুন কোন চিন্তা আনতে পারেন নাই বা আগে একটা ক্লেইম ছিল বা এখনো হয়তো আছে, মানে বলা হইতো যে সাহিত্য আসলে আগে, তারপরে হচ্ছে ফিলসফি বা থট প্রসেসের জায়গাটা আসে, যেমন আপনার ধরেন সিক্সটিজে…

রেজাউল করিম: মানে ধরেন, ভাষা এবং গ্রামারের মত একটা ব্যাপার…

সুমন রহমান: আর একটা জিনিস এইখানে ইর্ম্পটেন্ট; আমি একটু বইলা নেই… সেইটা হচ্ছে যে, ইলিয়াসের একটা প্রবন্ধ নিয়া সলিমুল্লাহ ভাই এর একটা আলোচনা আছে। ইলিয়াসের পজিশন বা…

ইমরুল হাসান: সলিমুল্লাহ খান তো খুব মাইনর ইস্যু নিয়া কথা বলেন

সুমন রহমান: যা-ই হোক, আমি সলিমুল্লাহ খান না, ইলিয়াস প্রসঙ্গে কথা বললাম আর কি…

ইমরুল হাসান: আমরা সলিমুল্লাহ খান নিয়াও কথা বলবো নে

সুমন রহমান: সেইটা ঠিক আছে… তো ইলিয়াসের সমাজচিন্তাকে উনি খারিজ করে দিচ্ছেন, আমার ঠিক একজেক্টলি মাথায় এখন রেফারেন্সটা নাই; তো ওই প্রবন্ধে ইলিয়াসের অবস্থানটা আঙুল দিয়া দেখাইয়া ইলিয়াসকে সমাজ চিন্তক হিসাবে খারিজ করে দিচ্ছেন। কিন্তু ইলিয়াসের একই চিন্তাকে এস্টাবলিশ করা সম্ভব, সলিমুল্লাহ ভাই যদি এই প্রবন্ধটাকে পিক না কইরা, চিলেকোঠার সেপাই-কে পিক করতেন তাহলে ইলিয়াস কে উনি যতটুকু খারিজ করছেন তার চাইতে ডাবল প্রেইজ করতে পারতেন। এখন ঘটনা হচ্ছে যে ইলিয়াস একই ইলিয়াস এবং ঐ প্রবন্ধে যা আছে তা খারিজ করার মতোই। সলিমুল্লাহ ভাই যে অন্যায় ভাবে খারিজ করেছেন আমার সেইটা মনে হয় নাই। লজিক আছে। মানে ইলিয়াস তার প্রবন্ধে, আমি ঐ রেফারেন্সগুলা দিচ্ছি। কিন্তু এই একই ইলিয়াস, যে প্রাবন্ধিক ইলিয়াস আরো অনেক আগেই চিলেকোঠার সেপাই লিখেছেন। চিলেকোঠার সেপাই এর আমি যে হাড্ডি খিজির নিয়ে প্রবন্ধটা লিখছি সেইখানে আমি বলার চেষ্টা করেছি যে এই যে হাড্ডি খিজির একটা ক্যারেক্টার এবং এই ক্যারেক্টারটার ডেভেলাপমেন্ট উনি যদি উপন্যাসিক না হয়ে উপন্যাসের বা শিল্পের প্ররোচনা না নিতেন উনি যদি, সার্ত্রিয়ান বা সার্ত্র যেইভাবে উপন্যাস লিখতেন চিন্তাকে প্রকাশ করার জন্য, অ্যাবস্ট্রাক্ট চিন্তাকে প্রকাশ করার জন্য উপন্যাস লিখছেন। প্রকারান্তরে একজন উপন্যাসিক তার চিন্তাকে অবশ্যই এক্সপ্রেস করবে। প্লাস ইম্পেরিকাল এভিডেন্স কিন্তু তাকে প্ররোচিত করবে। এখন ইলিয়াসের ক্ষেত্রে যেটা হইছে যে, হাড্ডি খিজির উনি যদি একদম মার্ক্সীয় জায়গায় দাঁড়াইয়া হাড্ডি খিজিরকে প্রোট্রেট করতে চেষ্টা করতেন, তাইলে হাড্ডি খিজিরের এই ভারসিটালিটি আমরা পাইতাম না। হাড্ডি খিজির বহু জায়গায় লুম্পেন প্রলেতারিয়েত থিকা ডিপারচার।

ইমরুল হাসান: আমি ঐ জায়গাটাতে আসি বরং আর একটু এক্সটেন্ড হইলো আর কি… যেটা বলতে চাচ্ছিলাম যে সাহিত্য সবসময় চিন্তার পূর্ববর্তী ব্যাপার। মনে করা হইতো যে, ওইখানে যে কিউবিজমগুলি হইছে ইউরোপে, অনান্য যে সাহিত্যিক আন্দোলনগুলা হইছে, সুরিয়ালিজম হইছে, কোথাও পড়েছিলাম যে, এখান থেকে নাকি ফরাসি নতুন দর্শন চিন্তা অনেক ফুড নিছে। আপনি বলছিলেন যে অনেক চিন্তাকে এক্সপ্রেস করার জন্য সাহিত্যকে একটা ক্যামোফ্লেজ হিসাবে ব্যবহার করে। কিন্তু আমার যেটা মনে হয়, সাহিত্য অনেক বেশি আনসেটেলড একটা জায়গা, আনসেটেলড বলে সাহিত্য প্রথম চিন্তাটাকে লোকেট করে, তারপর চিন্তাটা এক্সপ্রেসড হয়।

সুমন রহমান: এইটা দুইভাবেই ঘটছে। সুরিয়ালিস্ট বা এইগুলা তো বেসিক্যালি এসথেটিকস মুভমেন্ট। প্রাইমারি এক্সপ্রেশনের জায়গা।

রেজাউল করিম: সাহিত্যকে আমরা আসলে আর্ট অর্থে ব্যবহার করতেছি।

সুমন রহমান: হ্যাঁ, আর্ট অর্থে… আবার যদি পোস্ট-মর্ডানিস্টকে যদি বলি এইটা একান্তভাবেই তত্ত্ব-চিন্তার মাধ্যমে, সাহিত্যে এইটার ইমপ্লিকেশন আসছে পরে।

ইমরুল হাসান: মানে আনসেটেলিং এর জায়গাটা…

রেজাউল করিম: পোস্ট মর্ডানিজমের যে এসেন্সগুলা আপনি দাদাইজমের মধ্যে পাবেন…

সুমন রহমান: মানে এসেনশিয়ালি…

রেজাউল করিম: হ্যাঁ, ওইটাই ত বললো…

ইমরুল হাসান: আপনি ত বললেন যে, চিন্তার একটা মূল কাজ হচ্ছে আনসেটেল থাকা। মানে দুই দিক দিয়াই, একটা অ্যাক্টিভিজমের দিক দিয়া, আরেকটা অ্যাকাডেমিকের দিক দিয়া। সাহিত্য অ্যাজ এ মিডিয়া তো অনেকবেশি আনসেটেল থাকতে পারে, ওইটার তো সুবিধাটা আছে, এখন দুইটা ধরণের ফ্লো হয়, আমি চিন্তাটাকে সাহিত্যে রূপান্তর করলাম, আবার সাহিত্য থেকে চিন্তাগুলা রিফ্লেক্টেট হইলো; তো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেইটা মনে হইছে, এইখানে সাহিত্যিকরাই ত চিন্তাবিদ, ইন টোটালে দেখতে গেলে, যেমন ফরহাদ মজহারের উদাহারণই হয়তো আসতেছে…

রেজাউল করিম: আমরা পুরানো উদাহারণেও যাইতে পারি, যেমন বঙ্কিমচন্দ্র

ইমরুল হাসান: হ্যাঁ, উনি তো প্রবন্ধ লিখছেন, উপন্যাসও লিখছেন।

রেজাউল করিম: ইন ফ্যাক্ট বঙ্কিমচন্দ্রই আদর্শ লোক এইক্ষেত্রে, লোকেট করার ক্ষেত্রে।

ইমরুল হাসান: এই দুইটার ইন্টারঅ্যাকশনটা কিভাবে ঘটে? যদি চিন্তাটা আগে থাকে আপনি ক্যামোফ্লেজ হিসাবে সাহিত্যটা করতেছেন এইটা বুঝাটা একটা সমস্যা না। কিন্তু সাহিত্য থেকে আপনি চিন্তাটারে ডিরাইভ করেন কিভাবে? আপনি বলতেছিলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জায়গাটা, উনি কিন্তু উনার সাহিত্য থেকে কিন্তু উনার চিন্তাটা নিতে পারেন নাই; মানে উনার সাহিত্যটা যে জায়গাটায় গেছে, উনার চিন্তাটা ওই জায়গায় যাইতে পারে নাই, ঐ ডাইভারসিফেশনটা…

সুমন রহমান: উনি প্রাবন্ধিক যখন, সাহিত্যে ইটসেলফ চিন্তাটা আছে।

ইমরুল হাসান: উনি ফ্রেমটারে ট্রান্সফার করতে পারেন নাই।

সুমন রহমান: এইটা হয় কি যে, সাহিত্য যখন থাকে, যেইটা আমি বলার চেষ্টা করলাম, সাহিত্য যখন আমি করি, বেসিক্যালি যেইটা করি, সার্ত্রিয়ান ট্রিলজি লেখার সাহিত্য যেইটা, যেইটা ম্যানিফেস্টো লেখা, চিন্তার মেনিফেস্টো লিখতে গিয়া সাহিত্য করতেছে।

ইমরুল হাসান: ওইটা ত আসলে সাহিত্য না…

সুমন রহমান: সাহিত্য না শেষ পর্যন্ত

রেজাউল করিম: এইটা ত ক্যামোফ্লেজ

সুমন রহমান: হ্যাঁ, ক্যামোফ্লেজ; এর বাইরে যে সাহিত্য, যেইটা প্রকৃত সাহিত্য, আমার সোশ্যাল অবজারভেশন থিকা উইঠা আসা, আমার চিন্তা এবং আমার অবজারভেশন। অবজারভেশনের পাওয়ার ত ইনরমাস… অবজারভেশন একটা লেভেলে আপনারে চালিত করতেছে, যেমন ইলিয়াস যখন হাড্ডি-খিজির তৈরি করছে, সে এই কারেক্টারকে দেখছে সে এইভাবেই মুভ করতেছে, ফলে এইটা মার্ক্সীয় ফ্রেমওর্য়াকে যায় কি যায় না, এইটা ফ্যাক্টর না, হি মুভড বাই হিজ অবজারভেশন, এখন সাহিত্য বা আর্টের শক্তিটা হচ্ছে অবজারভেশন, সোশ্যাল অবজারভেশন, ইম্পিরিক্যাল নলেজ যেইটা, তো ইম্পিরিক্যাল নলেজ একটা লেভেলে রুল করে, সেইটা সাহিত্যের ক্ষেত্রে করে, চিন্তার ক্ষেত্রেও করে অনেক সময়, সাহিত্যের ক্ষেত্রে করেই; তখন সে অ্যাবস্ট্রাকশনগুলাকে তৈরি করে। আমরা যখন একটা চিন্তাকে কোশ্চেন করি, তখন দুইভাবেই করতে পারি; একজন বলতে পারে যে আমি এইটা দেখি নাই, আমার অবজারভেশনে নাই; আরেকটা হইলো যে অ্যাবষ্ট্রাকশনের অসঙ্গতিগুলারে বের কইরা আমরা ধরতে পারি, দুইভাবেই; সাহিত্য যেইটা করে, সাহিত্য ইটসেলফ যেহেতু ইম্পিরিক্যাল ওয়ার্ল্ডটাকে এক্সপ্লোর করে, তখন ওইভাবে অসঙ্গতিগুলা আসলে বের হয়ে যায়।

ইমরুল হাসান: এই জায়গাটাতেই আসি, তাইলে চিন্তার কাজটা কি এক্সপ্লোর করা না চিন্তার কাজটা কনসাইজ  করা? যখন ক্রিটিক্যাল চিন্তার কথা বললাম, তখন চিন্তার কাজও তো এক্সপ্লোর করা…

[pullquote]সলিমুল্লাহ ভাই হচ্ছেন ইউটোপিয়ান; ইউটোপিয়ান বলা যায় কারণ যে দুইটা সোসইটি আমরা কোনদিনও দেখব না ওইখানেই আর্ট সম্ভব উনি বলতেছেন। তাহলে এখন এই জায়গায় দাঁড়াইয়া যখন উনি প্রশ্ন করেন আর্ট কি জিনিস, তখন আমার উত্তর কী হবে?[/pullquote]

সুমন রহমান: চিন্তার কাজ এক্সপ্লোর করা, আসলে চিন্তার কাজ হচ্ছে তোমাকে কিছু…

ইমরুল হাসান: কনসাশনেসের মধ্যে নিয়া আসা

রেজাউল করিম: অ্যানালাইসিস করা মোস্ট প্রভাবলি

ব্রাত্য রাইসু, ৫ জুলাই ২০১৩, পান্থপথ, ঢাকা।

ব্রাত্য রাইসু, ৫ জুলাই ২০১৩, পান্থপথ, ঢাকা।

সুমন রহমান: মানে বেসিক্যালি চিন্তা মানে তো বিশ্লেষণ। বিশ্লেষণের মাধ্যমে একজিস্টিং একটা নলেজকে তুমি চ্যালেঞ্জ করবা যে, এই প্রিন্সিপালগুলা ঠিক আছে… সাহিত্য এই কাজটাই করে, এক্সপ্লোরেশনের মাধ্যমে আর চিন্তা করে হচ্ছে থিওরাইজেশন এবং অ্যাবস্ট্রাকশনের মাধ্যমে; এইটারও অনেক রকমের ভার্সন আছে, মোস্টলি যেইটা করে যে অ্যাবস্ট্রাকশন করে, অ্যাবস্ট্রাকশন করে একরকম…

রেজাউল করিম: ডিডাকটিভ

সুমন রহমান: হ্যাঁ, ডিডাকটিভ আর সাহিত্যের কাজটা অনেকবেশি ইনকাডটিভ

ইমরুল হাসান: এখন সলিমুল্লাহ খানের প্রসঙ্গটাতে আসি, উনি ত সাহিত্যের বাইরের লোক

সুমন রহমান: না, উনি তো সাহিত্যিক

রেজাউল করিম: উনি কেন সাহিত্যিক?

সুমন রহমান: উনার কবিতা আছে তো, কবিতার বই আছে

ইমরুল হাসান: মানে ওইটা কি ক্যামোফ্লেজ নাকি এক্সপ্লোরেশন?

রেজাউল করিম: ওইটা থাকতেই পারে, সেইটা বঙ্কিমচন্দ্রেরও কবিতা ছিল, তারে কি কবি বলেন আপনি?

সুমন রহমান: ওই অর্থে তো সলিমুল্লাহ খান সাহিত্যিক না

ইমরুল হাসান: ধরেন, ফরহাদ মজহারের চিন্তার জায়গাটা তো ধরতে পারছি, কিন্তু সলিমুল্লাহ খানের চিন্তার জায়গাটা আপনার কি বইলা মনে হয়?

সুমন রহমান: এখন এটা একদম সাম্প্রতিক যে ঘটনা, এর প্রেক্ষিতে বলাটাই বেটার; এইটা নিয়া আমি হয়তো লিখবোও; উনি যখন আমার বইয়ের আলোচনায় যেটা বললেন যে আর্টের নিন্মবর্গীয়পণা, এই জায়গাটায় উনি উনার আপত্তি প্রদর্শন করলেন। আর্ট-এর নিন্মবর্গীয়পণা বলতেছি উনার ভাষায়, উনি অবাক হয়ে গেছেন যে, আমি আর্ট  নিয়া প্রশ্ন করতেছি কেন? আমি তখন অনেক চিন্তা ভাবনা করলাম যে, আর্ট  নিয়া আমি কি প্রশ্ন করতে পারতাম? আমি আসলে পাজলড হয়ে গেলাম।

ইমরুল হাসান: কিছু ব্যাপার অলরেডী গন কেইস… কথা-বলার কিছু নাই

সুমন রহমান: কিন্তু উনি শুনতে চাচ্ছেন। তারপর আমি ওই অনুষ্ঠানে খুব সেইফ আনসার যেইটা ছোট কইরা দিলাম, আর্ট কি বা আর্ট কাকে বলে আসলে আমি ঠিক এই আলোচনাগুলো প্রাইমারি আলোচনা বইলা আমার যে টপিক সেইটার মধ্যে আমি আনি নাই। আমার যে ভূমিকা সেইখানে আমি স্পষ্ট কইরা দিছি যে, আমি কি ইস্যুগুলা নিয়া কথা বলব,  কি কথা বলব। এনিওয়ে, পরে এইটা নিয়া ফেসবুকে যখন পোস্ট দিলাম, তখন উনার এক সুহ্নদ, ভক্ত উনার একটা প্রবন্ধের লিংক আমারে পাঠাইলো। এটা হচ্ছে ‘‘আর্ট ও পরধনতন্ত্র’’। প্রবন্ধটা আমি মনোযোগ দিয়া পড়লাম। পরে আমি দেখলাম যে উনি বলতে চাচ্ছেন যে

রেজাউল করিম: বলছেনই তো, চাইছেন আর কই…

ইমরুল হাসান: যেহেতু ইন্টারপ্রিটেশন হাজির করতেছেন…

সুমন রহমান: উনার বক্তব্য অনুযায়ী, আর্ট জিনিসটা আসলে সম্ভব হচ্ছে যদি আমি মার্ক্সীয় সমাজের যে কাঠামো, আর্ট সম্ভব ছিল আদিম সাম্যবাদী সমাজে। আর্ট সম্ভব হবে সমাজতন্ত্রের পরে যে সাম্যবাদ আসবে সেই সমাজে।

ইমরুল হাসান:  মাঝখানে আমরা কি করব ?

সুমন রহমান: মাঝখানে এই যে ক্যাপিটালিজম, ফিউডালিজম এই যে সমাজগুলাতে আমরা বসবাস করতেছি, সেইগুলা আর্ট না; এইগুলা বুজরুকি মাত্র।

ইমরুল হাসান:  আর্ট মানে অ্যাবষ্ট্রাক্ট।

সুমন রহমান: না, আর্ট মানে হচ্ছে শোষণ-বঞ্চনা এইগুলি  কিছুই থাকবে না। তখন একটা পিউর…

ইমরুল হাসান: মানে আর্ট করা সম্ভব না। এখন আসলে আমি বরং বলতে চাচ্ছিলাম যে ফরহাদ মজরের একটা চিন্তাকে আমি মনে করছি উনার মেইন চিন্তা । পাশ্চাত্য-চিন্তার সাথে ইন্টার-অ্যাকশন করতে চান বাংলার একটা চিন্তা দিয়ে। আমার মনে হইছে, এইটা উনার চিন্তার জায়গা; সলিমুল্লাহ খানের চিন্তার মূল জায়গাটা কোথায়? মানে উনি একজন মার্ক্সসিস্ট, একজন পোস্ট-মর্ডানিস্ট মানে উনার চিন্তাটারে…

সুমন রহমান: আমি সেই জায়গাটাতে আসি আস্তে আস্তে। এখন ঘটনা হচ্ছে যে আমি তখন দেখলাম যে উনি আসলে আর্ট  নিয়া যে চিন্তাটা হাজির করলেন, এই প্রবন্ধটা উনার সাম্প্রতিক লেখা প্রবন্ধ; আমি একটু অবাক হইলাম যে, আর্ট সম্পর্কে এই ধরনের কথা-বার্তা আমরা পড়ছি মার্ক্সের একদম প্রথমদিকের কিছু ভালগার ইন্টারপ্রিটেশন আছে ক্রিস্টোফার কডওয়েল, এদের লেখার; ইভেন, খোদ মার্ক্সও এইরকম কথা বলেন নাই। এখন ঘটনা হচ্ছে যে, ঠিক আছে, আমি সেটা বাদ দিয়াও যদি বলি তাহলে পুঁজিবাদী সমাজে একটা ব্যাক্তি যখন তার প্রতিরূপ হাজির করবে, সেটাকে যদি আমি পুঁজিবাদী সমাজের একটা ইউনিট হিসাবে সেইটা অবজারভ করি, সেটাকে আমি সাহিত্যে এক্সপ্লোর করি, বা গানে এক্সপ্লোর করি, সেটা তাহলে আর্ট  হবে না। কারণ সেখানে আমার লট কম্প্রোমাইজের মধ্যে দিয়া যাইতে হয়।

ইমরুল হাসান: আমরা সলিমুল্লাহ খানের তথ্য মত বুঝতে পারি… আর্ট ইজ ইক্যুয়াল টু বুজরকি আর কি…

রেজাউল করিম: না, মার্ক্সের ত আর্ট বিষয়ে কোন চিন্তাই নাই, মার্ক্স যে চিন্তা সেই অনুযায়ী বাংলাদেশের সবচাইতে বড় আর্টিস্ট হচ্ছে ধরেন শাহাদুজ্জামান আর অদিতি ফাল্গুনী… যারা  লিখছেন, লিখবেন, মানে একটা সোশ্যাল ডকুমেন্টেশন করেন, একদম গোড়া রিয়ালিস্ট যে জিনিসটা, ওইটা হচ্ছে মার্ক্সের আর্টের জায়গা

সুমন রহমান: সলিমুল্লাহ ভাই হচ্ছেন ইউটোপিয়ান; ইউটোপিয়ান বলা যায় কারণ যে দুইটা সোসইটি আমরা কোন দিনও দেখব না ওইখানেই আর্ট সম্ভব উনি বলেতেছেন। তাহলে এখন এই জায়গায় দাঁড়াইয়া যখন উনি প্রশ্ন করেন আর্ট কি জিনিস, তখন আমার উত্তর কী হবে?

ইমরুল হাসান: উনার চিন্তাও কি ইউটোপিয়ান?

মেহেরজান ছবি'র পোস্টারসুমন রহমান: না উনি এমনিতে মূলগতভাবে উনাকে আমার কাছে অনেকখানি ন্যাশনালিস্ট মনে হয়। মানে উনি এখন শিফট হচ্ছেন। যেমন, মেহেরজান ইস্যুতে উনাকে অনেক ন্যাশনালিস্ট মনে হয়…

ইমরুল হাসান: উনি অনেক আনসেটেল হচ্ছেন। মানে চিন্তার জায়গায় আনসেটেল হচ্ছেন। কিন্তু আনসেটেলের মধ্যেও একটা জায়গা…

সুমন রহমান: না, আনসেটেল না। উনি কিন্তু আনসেটেল হচ্ছেন না। উনি নিজের পজিশন শিফট করতেছেন।

ইমরুল হাসান: উনার যেটা চিন্তার ক্ষেত্রে সমস্যা উনার পজিশনটা বা লোকেশনটা… উনি আসলে কি নিয়ে কথা বলতে চান? মানে প্রত্যেকটা চিন্তারই তো একটা জায়গা থাকে। ঐ জায়গাটা আমার কাছে স্পষ্ট হয় না, আপনার কাছে স্পষ্ট কিনা ?

সুমন রহমান: আমি আসলে উনার সব লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ছি এমন না। আমার যেটা মনে হয় উনি সাদ্দাম হোসেন, সিরাজ উদ্ দৌলা মানে এইভাবে উনি একটা…

রেজাউল করিম: সিরাজউদ্দোলা না, স্রাজেরদৌলা…

সুমন রহমান: হ্যাঁ, স্রাজেরদৌলা, সাদ্দাম হোসেন, তার মানে কি? এইভাবে লোকেট করার অর্থ কি?

রেজাউল করিম: মানে সার্চিং অফ হিরো…

সুমন রহমান: মানে, উনি হিরো খুঁজতেছেন…

ইমরুল হাসান: তার মানে কি এইটা যে উনি যথেষ্ঠ জনপ্রিয় হইতে পারেন নাই?

সুমন রহমান: না, ব্যাপারটা অনেকবেশি ইয়ে হয়ে যাচ্ছে…

ইমরুল হাসান: সরি, আমি মনে হয় ফার্সিকাল হয়ে যাচ্ছি…

সুমন রহমান: হিরো খুঁজতে যাওয়ার প্রজেক্টটা নিঃসন্দেহে একটা ন্যাশনালিস্ট প্রজেক্ট।

রেজাউল করিম: ধরেন সবসময় যারা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন করতে চায়, তাদেরও তো হিরোর দরকার হয়। হিরোরা যে ন্যাশনালিস্ট হবেই তা হয়তো না। আমি বলতে চাচ্ছি, মার্কিস্ট যে প্যারাডাইম, পলিটিক্যাল যে প্যারাডাইম, সেইখানে একজন হিরো লাগে।

সুমন রহমান: এখন উনার যে ডিসর্কোসগুলা, উনার বইটার নামে মনে হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিকে।

ইমরুল হাসান: মনে হচ্ছে এইখানে উনি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ন্যাশনালিস্টদের দাঁড় করাচ্ছেন…

সুমন রহমান: এখন ঘটনা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনগুলার কনসিকিউয়েন্স কিন্তু শেষ পর্যন্ত ন্যাশনালিজমই… কম্যুনিজম কিন্তু বাই ইটস এসেন্স ন্যাশনালিজম… তা না হইলে এন্টি-ইম্পিরিয়ালিজম দাড়াঁয় না। ফলে ওই অর্থে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী যতো মুভমেন্টগুলার সাকসেস কিন্তু ডিপেন্ড করছে যে, কোন সোসাইটি কত বেশি ন্যাশনালিস্ট হইতে পারছে। ফলে সলিমুল্লা ভাই এর চিন্তা হচ্ছে সিক্সটিইজের চিন্তা। সম্ভবত উনি সিক্সটিইজের, ফাঁনো’র বইপত্র পড়েতেছেন… যেইটা অনেকে বলে যে উনি যখন সে বই পড়েন তখন সেই বইটাকে সবখানে দেখেন…

ইমরুল হাসান: আপনি বলতে চাচ্ছেন যে উনার জায়গাটা ন্যাশনালিস্ট একটা জায়গা।

সুমন রহমান: উনার জায়গাটা একটা ন্যাশনালিস্ট জায়গা।

ইমরুল হাসান: আবার আমি যদি সাম্প্রতিক চিন্তার জায়গাটাতে আসি, মানে সাহিত্যের জায়গাটাতে… আপনার রাইসুর চিন্তাটাকে কোন জায়গার চিন্তা মনে হয়? তার তো হচ্ছে মূল জায়গা মনে হইছে সে ভাষা, সাহিত্য এই জায়গাগুলিতে সে কিছু তর্ক হাজির করার চেষ্টা করছে বা তার লেখালেখির মধ্যে সেই জায়গাগুলো আনার চেষ্টা করছেন…

সুমন রহমান: রাইসু… অনেক খানি পোস্ট-মর্ডান… মনে হয় কারণ সে যেটা করে যে সবসময় ফাঁকিবাজিগুলাকে প্রশ্ন করে। এইটা তার মোটামুটি একটা অভ্যাস। আপনি কি তর্ক করতেছেন সেইটা তার চোখে পড়ে পরে, তার আগে কি দিয়া তর্ক করতেছেন। মানে কি খাইতেছেন না, কি দিয়া খাইতেছেন… ফলে ওর একটা পোস্ট-মর্ডানিস্ট স্ট্যানস আছে। এইটা তার আছে। আমি বলবো যে এইটা তার অনেকখানি ন্যাচারাল ট্রেইনিং-এর মতো। কিন্তু সাহিত্যে ওর যে কন্ট্রিবিউশনটা যেইটা আসলে আমরা না জাইনাও রাইসুর কন্ট্রিবিউশনটাকে ফারুকী বা আনিসুল হকের মিডিয়ার কল্যাণে আমরা এই যে ভাষাটা, এখন সবাই…

রেজাউল করিম: মানে আক্রান্ত…

সুমন রহমান: আক্রান্ত। এই ভাষা বেসিক্যালি রাইসুর ভাষা। রাইসুর মাধ্যমেই এটা সঞ্চারিত হয়। তো রাইসু যেহেতু এত পপুলার ফর্ম নিয়া কাজ করে নাই ফলে রাইসু লাইম লাইটে আসতে পারে নাই… এই যে ভাষা নিয়ে তার ইয়েটা…

ইমরুল হাসান: প্রিমাইজগুলাকে প্রশ্ন করাটা, এইটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

সুমন রহমান: যথেষ্ঠই গুরুত্বপূর্ণ।

ইমরুল হাসান: এই জিনিসটা সোসাইটিতে কি ধরণের এফেক্ট তৈরী করে?

সুমন রহমান: রাইসু তো এখনও হাজির আছে। রাইসুর রেজাল্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভিজিবল। রাইসু নাই সিনে, কিন্তু রাইসুর ভাষায় আজকে জাতি কথা বলতেছে, অনেকটা। এইটা আরেকটা মিডিয়াতে যাবার কারনে হইছে। ফলে এই যে প্রভাবটা এই প্রভাবটা আমরা যদি বলি যে…

রেজাউল করিম: কিন্তু একইসাথে এটাতো রাইসুর প্রভাবের যে ফলাফল হইতে পারত তার সবচে’ ওরস্ট ফলাফল হইলো বলে আমার ধারণা। কারণ ক্রমশ এইটা কিন্তু অধিপতি একটা ভাষা হইয়া উঠতেছে। ফলে ভাষার যে অন্য ফর্মগুলা সেই ফর্মগুলারে আবার আন্ডারমাইন করতে চায়। ফলে যেমনি করে ধরেন ৫২ তে বাংলা আন্দোলন করছে, এখন বাংলা তো সাপ্রেস করতেছে…

সুমন রহমান: না যখনি এই বিভিন্ন রকমের ডায়ালেক্ট থাকবে, তারা যে গনতান্ত্রিক উপায়ে পরস্পরের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করবে এইটা ভাবার কোন কারণ নাই… এইখানে ডেফিনেটলি এই সাবঅরডিনেট করার টেনডেন্সিটা থাকবে, এটা হবেই। এই ভাষা এখন রুল করার চেষ্টা করতেছে বিকজ কিছু লোক আছে যারা এই ভাষা ইউজ করে এবং তারা প্রভাবশালী।

রেজাউল করিম: যখন রুল করতে চাচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ভাষা তার মানেই হচ্ছে আসলে সে তার গতিশীলতাটাকে নষ্ট করছে। ফলে রাইসুর এই ভাষার ক্ষেত্রে তার যে ধরেন ইয়ে ছিল, আপনার যাকে বলে, যেইখান থেকে করা কিংবা যে উদ্দেশ্যগুলা আসলে তো তার সে এগেইস্টনে দাঁড়াচ্ছে। মানে সে একটা ভাষার যে চলমানতা, সেই চলমানতার জায়গা থেকে নির্দিষ্ট ভাষা, চলমান ভাষা ব্যবহার করতে চাচ্ছিল। কিন্তু সেই ভাষাটা যখন আবার দাঁড়াইয়া পড়তেছে…

সুমন রহমান: এখন দাঁড়াইয়া পড়তেছে সেইটা আপনার অবজারভেশনের জায়গা; এইটা অধিপতি হয়ে উঠতেছে, মানে কতোটা অধিপতি হয়ে উঠতেছে এইটা কিন্তু প্রশ্ন করা যায়। এটা একটা দুইটা মিডিয়াতে আপনি দেখতে পাচ্ছেন…

রেজাউল করিম: না, কবির চৌধুরী’রা তো মারা যাবে কিছুদিনের মধ্যে…

ইমরুল হাসান: হ্যাঁ, তখন ত আনিসুল হক’রাই আসবে…

সুমন রহমান: না, না, এইটা বলা মুশকিল… অন্যভাবেও হইতে পারে। এখন ঘটনা হচ্ছে যে রাইসু তো নিজেকেও , রাইসু মনে করে যে, সে যে জিনিস তৈরী করেছে এইটা একটা নোটেশন যে এভাবে লিখতে হবে রাইসু তো এটা মনে করবে না…

রেজাউল করিম: আমি রাইসুর কথা বলতেছি না। আমি বলতেছি যে যখন কোন একটা চিন্তা সমাজে অতিমাত্রায় কনজিউমড হয়, তখন সেই চিন্তাটা নিজেই… হয়তো একটা রেজিস্ট্যান্স তৈরি হইছিলো কিন্তু যখনই দাঁড়াইয়া পড়ে সে তখনই…

সুমন রহমান: যে কোনো চিন্তার ক্ষেত্রে এটা হয়। সোসাইটিতে রেজিস্টিং একটা পাওয়ার নিয়া সে আসে তারপরে একটা সময়…

ইমরুল হাসান: মানে, বিপ্লবের পরবর্তী দিন সবচে’ বিপ্লবী লোকটাই বেশি রক্ষণশীল হয়া উঠে। তার মানে যেইটা দাড়াঁলো যে, যে চিন্তাটাই এস্টাবলিশ হয়া যাচ্ছে যে চিন্তাকেই বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হচ্ছে সন্দেহের মধ্যে নিয়ে আসা।

সুমন রহমান: হ্যাঁ, সন্দেহ তো করতেই হয়।

রেজাউল করিম: তাহলে মানে এর আগে যে বিষয়টা যাচ্ছিল চিন্তা এবং আর্ট, দর্শন এবং আর্ট, তো আর্টিস্ট যারা আছে তাদেরকে বুদ্ধিজীবী বলতে না চাওয়াটা কেন আছে?

সুমন রহমান: আর্টিস্ট যারা আছেন তারা বুদ্ধিজীবী বা ক্রিটিক্যাল থিংকার এই জন্য না তারা মোস্টলি যেটা করেন তারা একটা চিন্তাকে রিফ্লেক্ট করেন। কেউ ন্যাশনালিস্ট, কেউ বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ… এইখানে নাম বলার প্ররোচনা আছে, তারপরও আমি বলতেছি না…

রেজাউল করিম: এইসব জিনিস বইলা ফেলাইবেন…

সুমন রহমান: না, বলি না…

রেজাউল করিম: যেইখানে আপনি বলেন না, সেইখানে আপনার বুদ্ধিজীবীতা লঘু হয়…

সুমন রহমান: যা-ই হোক, আমার চিন্তাটা আমিই করি। মোস্টলি সাহিত্যিকরা কিন্তু তাই করেন, ইভেন বঙ্কিমচন্দ্র, একটা চিন্তাকে উনি হোল্ড করেন। যেহেতু তিনি সাহিত্যিক, যেহেতু উনার সোশ্যাল অবজারভেশনটা কিন্তু মারাত্মক ফলে তার সম্পাদনাটা আসলে চলতে থাকে ওইখানেই। তিনি সোসাইটিকে দেখেন ঐ চিন্তার মাপে। সোসাইটি থেকে ওই চিন্তাটাকে উনি বের করেন। বড় মাপের সাহিত্য হয়তো উৎরাইয়া যায়। তখন সম্পাদনার কাজ করে না কিন্তু অবজারভেশনটা হয়তো রুল করে। কিন্তু ম্যাক্সিমাম সাহিত্যের ক্ষেত্রে এবং ম্যাক্সিমাম আর্টের ক্ষেত্রে এটা হয়। একটা চিন্তা আমার মাথায় আছে সেই চিন্তা অনুযায়ী আমি প্রাকটিক্যাল ফেনোমেনাগুলাকে অবজারভ করতেছি। যেটা আমার সুরিয়ালিস্ট ইয়ের সাথে যায় সেটাই আমি দেখতেছি। এখন এই কারণে ক্রিটিক্যাল চিন্তা বা বুদ্ধিজীবিতা হচ্ছে যে কোনো একটা চিন্তাকে এস্টাবলিশ করা।

রেজাউল করিম: কিন্তু আর্টিস্টদের যে পর্বান্তরগুলা হয় সেগুলো তো আসলে এক ধরনের…

সুমন রহমান: পর্বান্তর মানে চিন্তার শিফট…

রেজাউল করিম: যেমনি করে একজন আর্টিস্ট দাড়াঁইয়া যাইতে পারে তেমনি করে একজন ইন্টেলেকচুয়ালও দাঁড়াইয়া যাইতে পারে। ফলে একই ধরনের পরিণতি দুইজনেরই হতে পারে।

ইমরুল হাসান: কিন্তু যেটা হচ্ছে যে আর্টিস্টদের এর চিন্তা দাঁড়াইয়া গেলেও আর্টিস্ট থাকতে পারেন তার ফর্মের কারণে,  বুদ্ধিজীবীতার চিন্তাটা আমার মনে হয়…

সুমন রহমান: আমি সেই জায়গাটাতেই বলতে চাচ্ছি… বাঙালী জাতীয়তাবাদ নিয়ে একটা উৎকৃষ্ট উপন্যাস লেখা সম্ভব। কিন্তু আপনি এখন বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে একটা উৎকৃষ্ট চিন্তা হাজির করবেন কোন একটা ইয়ে ধরে এটা খুব ডিফিকাল্ট কারণ আপনার কাজ হল প্রথমে এর প্রিমাইজগুলাকে চ্যালেঞ্জ করা।

রেজাউল করিম: যেখানে আসলে উৎকৃষ্টতা সেখানে আসলে অজাতীয়তাবাদ।

সুমন রহমান: মে বি… হইতে পারে, আবার নাও হইতে পারে।

ইমরুল হাসান: আমার মনে হয় যে আমরা আলোচনার একটা ইতি টানার চেষ্টা করি।

রেজাউল করিম: আমরা একটা উল্টা প্রক্রিয়ায় ইতি টানবার চেষ্টা করতে পারি। সেটা হচ্ছে সাধারণত যারা ইন্টারভিউ নেয়, তাদের সন্তুষ্টির উপরই ইতিটা নির্ভর করে। যে দিচ্ছে তার সন্তুষ্টির উপরে যেহেতু আলোচনা সন্তোষজনক হইলো কিনা নির্ভর করে…

রেজাউল করিম: আমি প্রথম জায়গাটাতে যেতে চাচ্ছিলাম আলোচনাটা শেষ করার জন্য। যেহেতু টাইমের একটা ব্যাপার আছে, এই আলোচনাগুলা তো চলতেই পারে… আমরা শুরু করেছিলাম যে সমাজে আসলে বুদ্ধিজীবিতার দরকার আছে কিনা বা দরকারটা কোন জায়গায় বা পরবর্তী যে চেইঞ্জ হচ্ছে আগে যে ব্যাপারটা ছিল… এখনকার প্রক্রিয়াটা দেখা যায়, যে বুদ্ধিজীবিতাকে খারিজ করে দেয়ার এটা তো আসলে আমার ফিলিংস আর কি, সমাজের মধ্যে বুদ্ধিজীবিতার দরকার আছে। তো এই বুদ্ধিজীবিতাটাকে আপনি সমাজে কিভাবে এফেক্টিভ করতে পারেন?

সুমন রহমান: বুদ্ধিজীবিতা এই খারিজ হওয়ার আশংকার মধ্যে সব সময় বিকশিত।

ইমরুল হাসান: যে আসলে খারিজ করে সে তো আসলে গোপনে খেয়াল-ই করে ।

সুমন রহমান: এবং যখনি আপনি এটার পক্ষে লবিং করতে যাবেন তখন আপনি নিজেই বুদ্ধিজীবী থেকে প্রপাগান্ডিস হয়ে যচ্ছেন।

ইমরুল হাসান: এখন কথা হচ্ছিল যে আপনার এই যে মানে প্রক্রিয়াটা এটা সমাজে কিভাবে ইনফ্লুয়েন্সিয়াল…

সুমন রহমান: এটা হতেই থাকবে। মানে এইটা আন্ডারনিথ হইতেই থাকবে। এটা হচ্ছে বিষের মত আর কি… এটা যে বমি করে ফেলবে এটা তারও পেটে দুই ফোঁটা যাবে। এটা বুদ্ধিজীবিতা সমাজে এভাবেই কার্যকর থাকে।

রেজাউল করিম: মানে সমাজে আমি যেটি বুঝি, যে বুদ্ধিজীবিতা সমাজ প্রত্যাখ্যান না করে বা রেজিস্ট না করে বাড়তে না দেয়…

ইমরুল হাসান: সেই বুদ্ধিজীবিতা তো আসলে নাই

রেজাউল করিম: তাইলে সেই বুদ্ধিজীবিতা আসলে কি? সে আসলে বুদ্ধিজীবিতার মাঝে নাই। এটা অতীতের অতীত থেকেই, বুদ্ধিজীবীরা যখন ঝগড়া ঝাটি করে তখন বিভিন্নজন বিভিন্ন কথাবার্তা বলে। কিন্তু আসলে তো সেটা একই সাথে পলিটিক্যাল পার্টিগুলার ক্ষেত্রেও আমি প্রযোজ্য মনে করি। যদি পরস্পরের সাথে ঝগড়া না হয়, যদি খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা মিইলা যায় তাহলে তো জনগনের ব্যাপক ক্ষতি। খালেদা জিয়ার দায়িত্ব হচ্ছে শেখ হাসিনা তার পরিবারের নামে যে জমি নিছে এইগুলা আবার রাষ্ট্রের কাছে নিয়ে আসা। ফলে জনগণ উপকৃত হবে। ফলে বুদ্ধিজীবীদের মিল আসলে জনগনের জন্য সর্বনাশ তৈরি করে। এবং একইসাথে ধরেন বুদ্ধিজীবীদের যে সমাজে দরকার এটা আমার মনে হয় যে বুদ্ধিজীবী নিজে যত কম উপলব্ধি করে ততো বুদ্ধিজীবীদের জন্যও ভাল। সেটা সমাজ তার প্রয়োজনে করবে। ফলে বুদ্ধিজীবিতার দায়িত্ব হচ্ছে নিজেকে আপহোল্ড করা। ব্যক্তি মানে আমি; এই যে আমিকে সে যত এক্সপ্লোর করবে আমার মনে হয়  বুদ্ধিজীবিতা ততো তীক্ষ্ণ হবার সম্ভাবনা।

সুমন রহমান: ডেফিন্টেলি, কারণ এইটাকে সামাজিক কাজ হিসেবে যত কম আইডেন্টিফাই করা যায় ততো মঙ্গল। সামাজিক প্রেশার যদি নিতে হয়…

ইমরুল হাসান: তাইলে মুশকিল

সুমন রহমান: তাহলে মুশকিল… কমিটমেন্টের প্রেশারটা না থাকাই ভালো।

রেজাউল করিম: আমরা মুশকিল-ই সমাপ্ত করি। আছানের দিকে আর না যাই, আমরা আমাদের পর্বান্তর ঘোষণা করি…

ইমরুল হাসান: এখন সুমন ভাই যদি কিছু বইলা শেষ করতে চান

সুমন রহমান: না, এইটাই, আমার তো আসলে… প্রথমত আমি…

রেজাউল করিম : আমি কৃতজ্ঞ…

সুমন রহমান: হা হা হা… না… আমি বুদ্ধিজীবী, মানে ঠিক এইভাবে আমি ঠিক এভাবে দেখি না। আমার কাছে মনে হয় যে আমি এমনিতেও ইম্পেরিক্যাল ইয়ের মানুষ… সোসাইটিকে আমি অবজার্ভ করি সোসাইটি সর্ম্পকে আমি আমার অ্যানালাইসিসগুলা হাজির করি। সেইটাতে আমি আনন্দ পাই। আমি যখন ইভেন কলাম লিখি তখন সেইগুলা একদম অচ্ছ্যুত এর মতো অবস্থা ধরে থাকে… আমি কোথাও কোন সমাধান দিতে পারি না, এডভাইস দিতে পারি না। আমি আমার অ্যানালাইসিস হাজির করি এবং সেইটা নিয়া আমি খুশিই থাকি, মানে আমার একটা অ্যানালাইসিস আছে।

ইমরুল হাসান: মানে আপনি বুদ্ধিজীবিতার ভিতরই থাকেন…

রেজাউল করিম: এইটা নিয়া আপনার নোটে মনে হয় কারো সাথে আমার তর্ক  হচ্ছিল… কে সেটা? এই নভেরা-টভেরা জাতীয় কেউ একজন হবে…

সুমন রহমান:  তো, এটা… আমার যেহেতু অরিয়েন্টশন সাহিত্যিক হিসাবে… এই সাহিত্যিক অরিয়েন্টশনের মাধ্যমেই আমার চিন্তার জগতে আসা। সাহিত্যিক হিসাবে আমার ট্রেনিংটা হইছে সাহিত্যিক অবজারভেশনের মাধ্যমে। সোশ্যাল অবজারভেশন বা সমাজকে দেখার এই যে চর্চা, এই চর্চাটা একটা পর্যায়ে তো আমি কবিতাটা লিখি বা গল্পটা লিখি…

রেজাউল করিম: তো, সুমন ভাই এই অবজারভেশনটাকে যে এতোটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, এতে কি ফিউচারিস্টিক একটা আর্টের সম্ভাবনা খারিজ হয়?

সুমন রহমান: আমি ফিউচারিস্ট না।

রেজাউল করিম: ফিউচারিস্ট না-ই হইতে পারেন, কিন্তু সেই আর্ট কি আর্ট না?

সুমন রহমান: না পসিবল… কিন্তু বেসিক্যালি আমি খুব ইম্পেরিক্যাল… মানে, কারো পক্ষেই প্রিন্সিপাল বেইজড ইয়ে করা সম্ভব… আমার নিজের অপারেশনের পদ্ধতি হইলো এইটা। কারো ক্ষেত্রে অন্য কোন একটা। যেমন আপনার কবিতার ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, আপনি অনেকখানি ডিডাক্টিভ; মানে, এইরকম… অনেক কবিতাই আছে যেইখানে ডিডাক্টিভ হইতে হয়, আমার ক্ষেত্রে একদম প্রাকটিক্যাল ইয়ে ছাড়া চিন্তায় যাওয়াটা মুশকিল হয়… অ্যাবস্ট্যাক্ট চিন্তা নিয়া স্বচ্ছন্দ্য না। এইটা হচ্ছে বিষয়।

রেজাউল করিম: ও.কে.। তাইলে আমরা ওয়াইনে যাই।

ইমরুল হাসান: হ্যাঁ… পৌনে দশটা বাজছে… সাড়ে নয়টার প্ল্যান ছিল…

 

 

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →