Main menu

ফরহাদ ভাই নিশ্চই বুঝবেন

[youtube id=”CevxZvSJLk8″ mode=”normal” align=”center”]

ফরহাদ ভাই বুঝবেন, আমি নিশ্চিত; বিশেষ করে তাঁর রাজনীতিজ্ঞান এবং চিন্তার অনুগ্রাহী যাঁরা, তাদের কথা এই একটা বারের জন্য হলেও তিনি ফেলতে পারবেন না। বুঝি যে, এভাবে নিরন্তর গালাগালি আর বহুবিধ রিকগনাইজিং অথরিটির অবিরত প্রত্যাখ্যানে মনে উষ্মা জমে, ক্ষোভে ফুলে থাকে পেট, খাদ্যে অরুচি হয়, কৃষিবিপ্লব না ঘটা ধানক্ষেতে আজনম ঘোরা রাজহাঁসের ডিম চুনাপাথরের গোল্লার মতো মনে লাগতে পারে বা ব্রহ্মের পিচ্ছি অণ্ডের মতো; [pullquote][AWD_comments][/pullquote] ঠোঁট হয়ে উঠতে পারে ধাতব, এমন ঠোঁটে মানুষের চিরন্তন অনভ্যাস–প্রেমাস্পদকে চুমাইয়া আহত করবার ঝুঁকি আছে; কেননা, সেই ওষ্ঠাধর নাই আর মাখনের পুলি! কষ্ট হবারই কথা, এ বাষ্প বের করা দরকার, নচেৎ কমে যাবে আয়ু! কিন্তু নন-ফিকশনে এ বায়ু ধরে না, নিজেকে পুরাই খুলে ফেলবার জায়গা আসলে ফিকশন।

ফলে কবিতাই ভালো এবং নিরাপদ। এবং এ কবিতা হয়ে উঠবে নতুন; এমন বিক্ষোভ বাংলা কবিতায় আগেও পাওয়া যাবে; সমারূঢ় তো আইকনিক! কিন্তু ফরহাদ ভাইয়ের প্রত্যাখ্যান আছে ঐ সব কাব্যভঙ্গি আর অনুভূতিমালার প্রতি, দর্পিতা ঘোষণা দিয়াই। অধিকন্তু, কলোনাইজড মন আর নিও-ইম্পেরিয়াল ইডিওলজি যেইভাবে প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ করে তুলছে আমাদের ফরহাদ ভাই সেটা ভালোই বোঝেন; বলা যায়, দেশীয় জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রতিপালনে তাঁর নিষ্ঠা ও লড়াই আমার জন্মের আগে থেকেই; প্রাণময় দেহের একেকটা ধরন আমরা যেভাবে হারাচ্ছি আত্মধ্বংসী সেই যাবতীয় আকাম আনডু করবার রাস্তা খুঁজছেন দূরদর্শী ফরহাদ ভাই। মৎস্যখামারের একেকটা কচুরিপানা মরার আগে নিশ্চই ফরহাদ ভাইয়ের মতো সখা খোঁজে; ইনকিউবেটরকেই মা ডাকা বাচ্চা মুরগীর জন্য নিজের ডানার উম নিয়ে ছুটে যান ফরহাদ ভাই।

এই ফরহাদ ভাইয়ের কবিতায় প্রাণ-বৈচিত্র্য থাকবারই কথা; তা আছেও। কিন্তু যেই জিঘাংসা নিয়া কুকুরের গায়ে গরম পানি আর ভাতের মাড় ছুঁড়ে মারে মানুষেরা, ‘নেড়িকুত্তা’ হয়ে ওঠার সেই ইতিহাস ভুলে গেলেন ফরহাদ ভাই! মডার্ন ফার্মার যেই ক্রোধ চোখে নিয়া তাকায় ইঁদুরের দিকে, সেই ক্রোধ–সেই ক্ষিপ্ততা ফরহাদ ভাইয়ের চোখে; যেনবা, ফরহাদ ভাই নিজেই এক বন্দুক হয়ে উঠলেন নিজের হাতে, তাঁর চোখ সেই বন্দুকের বেয়োনেট। যেই তাচ্ছিল্য আর বিরক্তির সাথে মানুষেরা মৃত ডাইনোসরের গায়ে বসে থাকা আরশোলা দেখে দেখে ইতিহাসকে নিজের কাঁধে নিয়ে হাঁটছে, তার মর্মে উদ্বেল হলেন ফরহাদ ভাই। চামচিকা, শুকর, কাক, শজারু আর শৃগালের সাথে তাঁর শত্রুতা এখন।

কেউ কেউ বলবেন, এতো উপমাবিজ্ঞান। হ্যাঁ তাই তো! কিন্তু ফরহাদ ভাই অবশ্যই বুঝবেন যে, ইত্যকার প্রাণীর প্রতি ওই ক্রোধ, প্রতিহিংসা আর তাচ্ছিল্যের মধ্য দিয়াই অর্থময় হয়ে উঠছে এই উপমারাশি; বিবিধ শরীরে প্রাণের বাসে অসহিষ্ণু মানুষের সনাতন ঘেন্নাই এই কবিতারে মোক্ষম করে তোলে। ভাষার এই বহুমাত্রিকতা তিনি বুঝবেন; ক্ষুব্ধতায় যতোই কিনা শিকারী মাছের মতো একাগ্র হয়ে ওঠেন না কেন, তাতে নিশ্চই তিনি তাঁর ঘোষিত অঙ্গীকার ও রাজনৈতিক চৈতন্য ভুলবেন না; নিন্দুকদের সমালোচনায় থাকা এনজিওপনার অভিযোগ সপ্রমাণ করে তুলবেন না…!

দেশ ও সংস্কৃতি বোঝায় ফরহাদ ভাইয়ের প্রখরতা খুব বেশি মানুষের নেই দেশে। তাঁর রাজনৈতিক বুৎপত্তিও দেশে অবিরল নয়; অধিকন্তু প্রায়োগিক তত্ত্বচর্চাতেও তাঁর নাম আটার্ড হবে; কিন্তু, বয়স বা ক্ষোভ– যে কারণেই হোক না কেন ফরহাদ ভাই হয়তো খেয়াল করার ফুসরত পান নাই; বৃহৎ এক উৎকৃষ্ট কুড়াল হাতে নিয়ে তিনি লাকড়ি কোপাইয়া যাচ্ছেন, আধিভৌতিক এক তুরীয় ইউফোরিয়ায় অথবা লোকাল অ্যানেসথেসিয়ায় হয়তো বুঝতেই পারেন নাই যে, ঐ কাষ্ঠখণ্ডগুলি তাঁরই পদযুগল। ফরহাদ ভাইয়ের বন্ধুরা হয়তো তাঁর কুড়ালের সাথে তাঁর পায়ের মোলাকাতকে ভাবছেন ‘কী লীলা!’, বা বসে থাকা প্রেমিকেরে দোলনায় দুলতে দুলতে চুমাবার প্রমোদ! কিন্তু কোন এক অর্ধেকজন থাকবারই কথা যিনি ফরহাদ ভাইয়ের পায়ের ধুলা নিতে গিয়ে রক্তের ঘ্রাণ পাবেন…! বা রক্ত যে আদৌ বের হওয়া উচিৎ–ইস্পাতধর্ম অতিক্রম করে ফরহাদ ভাই ফের মানবিক হয়ে উঠলে, বুঝবেন।

পড়েন: ফরহাদ ভাইয়ের কবিতা

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →