Main menu

সেন্ট্রাল (জাতীয়) রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট

কয়দিন আগে মার্ক্সিজমের হালচাল লইয়া একটা মাহফিলে বা সেমিনারে গেছিলাম, এম এম আকাশ, বিণায়ক সেন – এনারা ওয়াজ করলেন; একদম শেষে হাজির হইছি বলে কেবল বিণায়ক সেনের ওয়াজের আখেরি পাট শুনতে পারছিলাম। নানা কথার মাঝে জন স্টুয়ার্ট মিলের ব্যাপারেও কইলেন উনি; কইলেন, মিল আছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলিসি মেকারদের একজন। তো, বিণায়ক সেন হিসাবটা মিলাইতে পারেন না–উনি এইটারে মিলের একটা প্যারাডক্স/কন্ট্রাডিকশন হিসাবে প্রস্তাব করলেন।

আমি এইটা জানতাম না, ইন্সট্যান্টলি মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলাম তাই – কিছু সওয়ালের জবাব পাইতে সুবিধা হইলো বিণায়ক সেনের দেওয়া ঐ খবরে।

নেটিভদের এডুকেশনের ব্যাপারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মনোযোগ আছিল কেন? নেটিভ মেয়েদের এডুকেশন লইয়া বাড়তি চেষ্টার গোড়া কোথায়? হিন্দু বিধবাদের বিয়া বা পোলাদের একের বেশি বউ থাকা লইয়া কোম্পানির পেরেশানি কেন? আমার মনের এইসব সওয়ালের জবাবের ভিতর মিসিং লিঙ্ক আছিল, জন স্টুয়ার্ট মিলের খবরটা জবাবগুলিরে মিলাইয়া দিল। কন্ট্রাডিকশন তো নাই-ই, বরং কোম্পানি এবং মিল কমপ্লিমেন্টারি, কোম্পানি হইলো, ‘অ্যাপ্লাইড মিল’। বিণায়ক সেন তাইলে হিসাব মিলাইতে পারলেন না কেন–কোম্পানি বা মিলের ব্যাপারে এত এতো ঘটনা/কথা জানার পরেও? কারণ, উনি থিয়োরাইজেশনের লোক নন, ওনার কামটারে তাই কেমনে রিকগনাইজ করবো আমরা?

আমি বুঝলাম, ভারতে নেটিভদের সিভিলাইজিং প্রজেক্ট মিলের চিন্তা/ইন্টারভেনশনের কারণেই অমন হইছিল; এই কারণেই বঙ্কিমচন্দ্র (বঙ্কিমের সাম্য জেন্ডার ইস্যু লইয়া লেখাগুলি মিলের মন দিয়া বোঝাবুঝি) মিলের ফ্যান আছিলেন কতক, স্বদেশী আন্দোলনের মাঝেও বেগম রোকেয়ারে ইংরাজের ডোনেশন/হেল্পিং-এর কারণ রোকেয়া ইংরাজেরই বাচ্চা, মিলেরই প্রজেক্টের ফল। ইভেন ভারত/পাকিস্তানের লিবারেশন আসলে মিলের সিভিলাইজিং প্রজেক্টের এন্ডিং-এর ঘোষণা, দরকারি ট্রেইন্ড নেটিভ এজেন্ট হইছে ততদিনে, যারা প্রজেক্টটা রান করতে পারবে; রেগুলেট করার দরকারে পরে ইন্টারন্যাশনাল এনজিও, ইউনিসেফ, ডোনেশন, কমনওয়েলথ–মোট কথায় ডেভলাপমেন্ট ডিসকোর্স পয়দা হইছে – এখনো তো বাংলাদেশ সরকার উন্নয়নই করতাছে! (In On LibertyA Few Words on Non-Intervention, and other works, Mill defended British imperialism by arguing that a fundamental distinction existed between civilized and barbarous peoples.[16] Mill viewed countries such as India and China as having once been progressive, but that were now stagnant and barbarous, thus legitimizing British rule as benevolent despotism, “provided the end is [the barbarians’] improvement.”/Harris, Abram L. (1964-01-01). “John Stuart Mill: Servant of the East India Company”The Canadian Journal of Economics and Political Science / Revue canadienne d’Economique et de Science politique 30 (2): 185–202. doi:10.2307/139555 । আরেকটু ডিফরেন্ট পয়েন্ট অব ভিউ থেকে মিলের সিভিলাইজিং প্রজেক্ট বুঝতে পড়েন এই লেখাটা।)

তাইলে, বিণায়ক সেন ভালো একজন রিসার্চ এসিস্ট্যান্টের কাম করলেন, যার কাছে অজানা খবর/ইনফরমেশন আছে, কিন্তু রিসার্চার পদেও উনি বইসা আছেন বইলা রিসার্চ ব্যাপারটা ঘটতে পারতাছে না, টিমওয়ার্ক ঘটতে পারতাছে না–সো, হিস্ট্রি বোঝাবুঝিতে গলদ থাইকা যাইতেছে আমাদের!

বাংলাদেশে আরো অন্তত দুইজন ভালো রিসার্চ এসিস্ট্যান্টের খবর জানি আমি – আজফার হোসেন এবং সলিমুল্লাহ খান; দুইজনেই ডক্টরেট (বিণায়ক সেনও তো!) করা লোক, থিয়োরাইজেশনের কাম করার কথাই তাগো; কিন্তু তাঁরা যেসব কাম করতাছেন সেইটা ভালো রিসার্চ এসিস্ট্যান্টের কাম। কেন কইতাছি তাইলে? আজফার হোসেন যেমন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন এমন:

“তিরিশী আধুনিকতাবাদীদের অনেকেই – বিশেষ করে বুদ্ধদেব বসু – ডি, এইচ, লরেন্স নিয়ে ফালাফালি করেছেন অনেক। বুদ্ধদেব বসু খানিকটা তাঁর দ্বারা সরাসরি প্রভাবিতও ছিলেন। লরেন্স অবশ্যই করিৎকর্মা ঔপন্যাসিক। কিছু ভালো কবিতাও লিখেছেন তিনি। কিন্তু সাহিত্যের সাদা মহারথীদের মতার্দশিক অবস্থান এবং তাঁদের অনেক ফাঁক আর ফাঁকি নিয়ে প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা বা ইচ্ছা ছিলো না বুদ্ধদেব বসুদের বা তিরিশী আধুনিকতাবাদীদের অনেকেরই। আসলে এঁরা ছিলেন বিকিয়ে-যাওয়া প্রশ্নহীন নান্দনিক ‘কোলাবরেটর’। এইবার তাহলে লক্ষ্য করেন লরেন্সের এইসব কথাঃ

“যতই দিন যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে আমার কাছে যে, এই যে আমাদের পশ্চিমের সভ্যতা, এ তোমার প্রাচ্য বলো, ভারতীয় বলো, ফার্সি বলো, সবার তুলনায় অনেক উঁচুতে। এতো উঁচুতে যে ওদের পক্ষে কল্পনা করাও অসম্ভব। … এই যে প্রাচ্যের প্রশংসা এ তো মস্ত একটা জোচ্চুরি। এই যে রবীন্দ্রপূজার অভিশপ্ত প্রবণতা এতে আমার গা ঘিনঘিন করে ঘেন্নায়। ‘পঞ্চাশ বছরের ইউরোপ হাজার বছরের প্রাচ্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট’ (https://web.facebook.com/rk.manu/posts/10153523845317027)”

আমি তারে কইলাম, “কড়া রেসিজমের একটা কালচারাল/পলিটিক্যাল স্পেসে পয়দা হওয়া কারো কাছে রেসিজমের পুরা বাইরে থাকাটা দাবি করা যায় না। আবার, কারো মাঝে রেসিজম থাকলেই সে বাতিল হইয়া যায় না। একইভাবে কলোনাইজড একটা পিরিয়ডের কারো কাছে কলোনাইজেশনের পুরা বাইরে থাকা মন দাবি করা যায় না।

আবার, কলোনাইজেশনও অপজিট টাইপের হইতে পারে; জাতীয়তাবাদও কলোনাইজেশনের ছবক, সেই ছবকেই স্বদেশী হইতাছে তখনকার ইন্ডিয়া, বাট সেই কলোনাইজেশনের ছবকেই তিরিশ অস্বদেশী – হোয়াইট সুপ্রিমেটিস্ট!

এদিকে, তিরিশকেও মই দেওয়া প্লেইন কলোনাইজড ভাবা যায় কি? জীবনানন্দ যেমন কলোনাইজারের ছবক বহু লইলেও পূবের একটা দার্শনিকতা কখনোই ছাড়েন নাই মনে হয়, অমন দার্শনিকতা বিভূতিভুষণেও পাইতে পারেন! রেসিজমও বহু আবার! বিভূতি যখন সাঁওতাল রাজার কবরে ফুল দেয় আর্য হিসাবে, সেইটাও রেসিস্ট, বাট লরেন্সের রেসিজমের লগে মিলাইবেন এইটা?

মোটের উপর, চিন্তার ওয়ান ডাইমেনশনালিটিই মে বি ওর্স্ট কাইন্ড অব কলোনাইজেন, জনাব হোসেন সেই রিস্কের মাঝে আছেন মনে হইতাছে।”

উনি পাত্তা দেন নাই আমারে, মানে কইলেন না কিছুই; “কিন্তু সাহিত্যের সাদা মহারথীদের মতার্দশিক অবস্থান এবং তাঁদের অনেক ফাঁক আর ফাঁকি নিয়ে প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা বা ইচ্ছা ছিলো না বুদ্ধদেব বসুদের বা তিরিশী আধুনিকতাবাদীদের অনেকেরই। আসলে এঁরা ছিলেন বিকিয়ে-যাওয়া প্রশ্নহীন নান্দনিক ‘কোলাবরেটর’।” – আজফার হোসেনের এই কথাটার মাঝে থিয়োরাইশনের আলামত আছে কতক, আলবত; কিন্তু আমার কমেন্টে দেখেন, ওনার থিয়োরাইজেশনটা কেন বেশ আনাড়ির কাম হইছে সেইটা কইছি। কিন্তু এইটা তো মানতেই হবে যে, ওনার এই পড়া – ইতিহাসের অলিতেগলিতে থাকা বহু তথ্য যে উনি জোগাড় করছেন সেইটা থিয়োরাইজেশনের বিরাট কামে লাগবে। ওনারে রিসার্চ এসিস্ট্যান্টের একটা অনারেবল পোস্ট দেওয়া গেলে উনি মনে ফূর্তি লইয়া দেশের ইতিহাস চর্চায় অনেক কিছু দিতে পারবেন।

আমাদের কপাল ভালো, আজফার হোসেনের মতোই সলিমুল্লাহ খান অনেক পড়েন, সময় আর টাকা এফোর্ড করতে পারেন, কতো কতো তথ্যে ঠাসা ওনার মগজ! পপ সিম্বল দিয়া কইলে, বিসিএস গাইডের মতোই ড. খান উইটি এবং তথ্য ভরা। উনি এখন থিয়োরাইজেশনের ভালো একজন লোকের লগে টিমওয়ার্ক শুরু করলে দেশের অনেক লাভ। টিমওয়ার্কটা দরকারি; ওনারেই থিয়োরাইজেশনের চেষ্টা করতে মানা করি আমি। কারণ, উনি যেই দুয়েকবার করছেন, আজেবাজে ডিসিশন নিছেন প্রায়ই! একবার যেমন বেগম রোকেয়ারে লইয়া একটা প্রস্তাব পেশ করছিলেন; কইছিলেন, রোকেয়া কলোনাইজেশনের কারণ দেখাইছেন সুলতানার খোয়াবে; রোকেয়া নাকি কইছেন, পুরুষের শাসনের কারণেই ইংরাজে কলোনাইজড! খুবই পাতলা চিন্তা, ভুল–রোকেয়া এইটা কয়ও নাই, ড. খান রোকেয়ার জবান নিজে বানাইছেন! যে-ই কইয়া থাক–ভুল; কারণ, পুরুষ জাতির শাসন দিয়া ইংল্যান্ড তো খালি নিজেই স্বাধীন না, ভারতসহ কত কত দেশ কলোনি বানাইয়া রাখছে!

বা ধরেন, শামসুর রাহমানের এক কবিতা লইয়া একটা জিনিস লিখছিলেন একবার; সেইটা আসলে আছিল তালাল আসাদের ভাবনা বাংলা কওয়া কম্যুনিটির মাঝে পরিচয় করাইয়া দেওয়া, কিন্তু ড. খান প্রায় তাঁরই থিয়োরাইজেশন হিসাবে হাজির করলেন! এইসব না পারা বা ঝামেলা ওনারও কতকটা মালুম হইছে মনে হয়, ইদানিং যেইসব কলাম-টলাম লিখছেন বা ওয়াজ করছেন তাতে থিয়োরাইজেশনের চেষ্টা খুব একটা দেখি না–বহু বহু জানা-অজানা কেতাবের বহু তথ্য ভইরা সাবাড় কইরা ফেলছেন আলাপ।

এমন রসে ভরা বিসিএস গাইডেরা কোন একটা সমাজের বুদ্ধির গোদা হিসাবে রাজত্ব করার আরেকটা বড় সমস্যা আছে। অমন হাফেজি যারা পড়েন না, কতগুলি অবজার্ভেশন আর টুকরা টুকরা তথ্য দিয়া কোন একটা প্রস্তাব দেন,  ধরেন কার্ল মার্ক্সের মতো থিয়োরেটিক্যাল কনক্লুশনে হাজির হন–তারা বেশ চাপে পড়েন; অথচ দুই ধরনের লোকের কাম তো দুই ধরনের!

নজরুল লইয়া ওই মেমোরিয়াল ওয়াজেই যেমন ড. খানের পরে ওয়াজ করতে ওঠা কয়েকজন কুকড়াইয়া আছিলেন যেন–অমন পাতা নম্বর আর এডিশনের ব্যাপারে হাফেজি পড়েন নাই বলে! অথচ তাগোই যা দুয়েকটা পয়েন্ট আছিল,  ড. খানে যা গরহাজির!

ভিডিওটা দ্যাখেন, নজরুল লইয়া সলিম খানের একটা ওয়াজ এই ভিডিও; বুদ্ধদেব বসু নজরুল লইয়া কবে কি কইছিলেন. কয়টা এডিশন, বাংলা বা ইংরাজি, কোন এডিশনের কোন পাতায় কি কি চেঞ্জ করছিলেন সেই সব ফিরিস্তি দিছেন ড. খান।

তথ্যের ভালো একটা কম্পাইলেশন -দরকারি; ভালো একজন রিসার্চার বা থিয়োরাইজ করতে পারা কেউ একজনের জন্য দরকারি মালামাল। ড. খানের ডিউ ক্রেডিট দিয়া এখন আমাদের ওয়েটিং শুরু তেমন একজন লোকের; এইজন্যই টিমওয়ার্কের কথা তুলছিলাম! এইজন্যই আমি ফেসবুকে কইছি, সরকারি একটা পোস্ট ক্রিয়েট করতে হবে–সেন্ট্রাল  রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট (‘জাতীয় রিসার্চ এসিট্যান্ট’ কইতে চাইবেন কেউ কেউ, আমি ‘জাতীয়’ না কইবার কারণ, বাংলাদেশটাকে এক জাতির স্টেট হিসাবে দেখতে পাই না আমি, বাংলাদেশ নেশন স্টেট নয়–কোন দেশই নয়!)। অনারেবল এমন একটা পোস্টে ড. খান আরামে কাম করতে পারবেন, ওস্তাদ হইয়া দেশে আরো অনেক ভালো রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট পয়দাও করতে পারবেন।

কেউ কেউ জিগাইতে পারেন, আমি কেন এমন ভাগ করতে চাই, ওনারাই কেন থিয়োরাইজ করতে চেষ্টা কইরা যাইতে পারবেন না! আমার ভাবনার এইখানেই ‘ডিউ ক্রেডিট’ -এর ব্যাপারটা আইবে। আমার পেরেশানি সেইসব সাচ্চা রিসার্চার লইয়া যারা এক ধরনের ঝামেলায় পড়েন ড. খানরা যদি আলেম হিসাবে এনলিস্টেড হন! কেমন?

ড. খান বা আজফার হোসেন বা ড. সেন যদি আলেম বা রিসার্চার হিসাবে পরিচিত থাকেন সমাজে তাইলে তো তাগো থিয়োরাইজেশনের কাম থাকা দরকার; তেমন কাম এনারা পারেন না বলে তাগো ঐ পরিচিতি সমাজে এলেমের একটা ভূয়া আইডিয়া ছড়াইতে থাকবে। সাচ্চা রিসার্চাররা যখন দেখবেন, এনাদের ডিউ ক্রেডিট দিতে গেলে রিসার্চ এসিস্ট্যান্টেরা রিসার্চার/আলেম হিসাবে পরিচিতি পাইতাছে আরো, সেইটা ঠেকাইতে চাইয়া সাচ্চা রিসার্চাররা ড. খানদের ডিউ ক্রেডিট দিতে চাইবেন না খুব সম্ভব! তারা হয়তো সলিম খানদের লেখা/ওয়াজ থেকেই তথ্য নিতাছেন কিন্তু গোপন রাইখা দেবেন সেইটা! একটা বে-ইনসাফি  সমাজে আরো আরো বে-ইনসাফ ঘটাইতে থাকবে হরদম এবং দেশে চিন্তার ইতিহাসে কতগুলি মিসিং লিংক পয়দা হইতে থাকবে।  ইতিহাস লইয়া অমন সব মুশকিলে আমরা আছি , এই মুশকিল বাড়াবার বদলে আসান করার ট্রাই করতে হবে আমাদের! পোস্ট বরাদ্দে ইনসাফ না থাকলে সমাজে জাজমেন্টে সিস্টেম কাম করতে পারে না, আমাদের চিন্তার ইতিহাস ঝাপসা হইতে থাকে।

 

২৩ জুন ২০১৬

 

দুইটা নজির:

১. যেই কাম করতে চান তার জন্য দরকারি এলেম না থাকলে কী হইতে পারে? ফেসবুকের ঘটনা জানাই একটা (আমার একটা স্ট্যাটাস: https://web.facebook.com/rk.manu/posts/10151183012027027
 )

“নর্থ আমেরিকান পিএইচডি নিয়া দুই-তিনটা নর্থ আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘Liberal/Interdisciplinary Studies’ পড়ান এমন একজন বাংলাদেশী অধ্যাপক একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিছিলেন কয়দিন আগে। আমি একটা মন্তব্য করলাম সেইখানে; কয় মিনিট পরেই দেখি স্ট্যাটাসটা নাই।

———

স্ট্যাটাস:
“মাঝে মাঝে দেখে নিতে হয় একেকটি শব্দকে কিভাবে অন্তত একটি হাতবোমা হিসেবে নিক্ষেপ করা যায়।”/অধ্যাপক

আমার মন্তব্য:
“হাতবোমা না থাকার আক্ষেপগুলি এমনই হবার কথা হয়তো; শব্দ নাই যাদের, হাতবোমা আছে–তাঁরাও শিক্ষিত হইতে পারবে এই উপমাশাস্ত্রে; হাতবোমা মারবে শব্দ হিসাবে! এমতো হিসাব নিপাত যাক।”
——

অধ্যাপক বক্তব্য প্রত্যাহার করছেন বইলা নাম নিতে চাইলাম না। কিন্তু বিষয় গুরু। শব্দ/কবিতাকে উনি যেইভাবে দ্যাখেন সেইটার প্রেজেন্স টের পাই সবপাশে প্রায়। তো তর্ক করতে চাচ্ছি; ওনার দেখবার ভঙ্গির পক্ষের কেউ প্রকাশ হইতে চাইলে আমার সমালোচনার জবাব দেন, পরে আগাই।”

২. রোকেয়ারে লেখা আমার চিঠি ( http://www.toolittledots.com/rock.184.manu )

।। সলিমুল্লাহ খানের প্রেম: সাবধান রোকেয়া! ।।

প্রিয় রোকেয়া,

আপনি গত বহুকাল; সাবধানতার মানে কি আর আছে সেইখানে? জানি না। তবু সাবধান রোকেয়া! এ যে সলিমুল্লাহ খানের প্রেম! আপনারে ভাসাইয়া নিতে ধাবমান!

আপনারে ইদানিং পড়ছেন সলিমুল্লাহ খান—‘একবার প্রতিবেশী কোনো দেশ কোনো কারণে নারীস্থান আক্রমণ করে। কিন্তু পুরুষ সেনাবাহিনী যুদ্ধে হারিয়া যায়। দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হয়। এমন সময় নারীজাতির প্রতিনিধিরা বাহুবলে নহে, বুদ্ধি ও বিজ্ঞানবলে দেশ রক্ষা করিতে সমর্থ হয়েন।’

এতে নাকি ‘গভীর ছক’ ‘দেখা যাইতেছে’, ‘ ভারতবর্ষের পরাধীন অবস্থার জন্যও পুরুষজাতির শাসনই দায়ী।’ এবং আপনি নাকি ‘পরাধীনতার দায় চাপাইয়াছেন ‘জেনানা’ প্রথা তথা পুরুষজাতির শাসনব্যবস্থার ঘাড়ে।’

আপনি লিখছিলেন, ‘ জানেন ভগিনী সারা। ভারতবাসীর বুদ্ধি সুপথে চালিত হয় না–জ্ঞান বিজ্ঞানের সহিত আমাদের সম্পর্ক নাই। আমাদের সব কার্যের সমাপ্তি বক্তৃতায়, সিদ্ধি করতালি লাভে! কোন দেশ আপনা হইতে উন্নত হয় না, তাহাকে উন্নত করিতে হয়।’

খান-ই জানাইতেছেন, ‘বুদ্ধি ও বিজ্ঞানবলে দেশ রক্ষা করিতে সমর্থ হয়েন।’, তিনিই আবার এর অনুবাদ করেন– পুরুষের বদলে নারীর শাসন এই দেশ রক্ষার কারণ!

ভাইবা দেখেন রোকেয়া, খানের এই বিশ্লেষণ দিয়া আপনারে যে পাঠক-ই চিনবে, সে-ই আপনার বুদ্ধিমত্তার বালখিল্যতায় কিরূপ হাস্যরব উৎপাদন করিবে! ভারতবর্ষ যদি পুরুষশাসনের কারণে পরাধীন হয় তাইলে পৃথিবীতে স্বাধীন কোন রাষ্ট্র কি আর থাকতে পারে? পৃথিবীর সবদেশের শাসনই তো পুরুষের হাতে! পুরুষজাতির শাসন দিয়াই বৃটিশরা তো নিজের স্বাধীনতাই রক্ষা করে নাই কেবল, ভারতরেও অধীন কইরা রাখছে! খানের ফরাসি বুদ্ধির এই ফালতু তত্ত্ব তিনি চাপাইছেন আপনার মৃত ঘাড়ে। ‘সুলতানার স্বপ্ন’ উত্তম বিপ্লবী সাহিত্য হিসাবে পরিচিত হইতে কি সেইখানে ঔপনিবেশিকতার কার্যকারণতত্ত্বও আবিষ্কার করা দরকার বইলা আপনার মনে হয়? সলিমুল্লাহ খান এই আবিষ্কার তাঁর অঞ্জলিতে নিয়া আপনার কাছে প্রেম নিবেদন করতেছে; এই প্রেম আপনি কি নিবেন?

সাবধান রোকেয়া!

–মনু

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →