Main menu

এডিটোরিয়াল: কোন একটা ইস্যু লইয়া কয়েকভাবেই ভাবতে পারেন আপনে

কোন একটা ইস্যু লইয়া কয়েকভাবেই ভাবতে পারেন আপনে। প্রায়ই দেখবেন, কোন একটা ইস্যুতে দুই দল মানুষ যখন কাইজা/ফ্যাসাদ করে তারা আসলে ভাবনার একই ডিসকোর্সে বা প্যারাডাইমে থাকতেছে।

ধরেন, হিন্দু মোসলমান ইস্যু লইয়া ফ্যাসাদ করতেছে দুই দল। উপরের দিকের কিছু হিন্দুর হাতে দেশের সব টাকাপয়সা, উপরের কিছু মোসলমান তখন ভাগ চাইলো–এই লইয়া ফ্যাসাদ। দুই দলই কিন্তু তাইলে ভাবতেছেন প্রোপার্টির মালিক অভিজাতরা…উচাবর্ণ বনাম আশরাফ ফ্যাসাদ এইটা। ঔনারশিপের একটা ডিসকোর্সেই আছেন দুই দল। হিন্দু বা মোসলমান যেই হন, আপনে তখন মার্ক্সের হেল্প লইয়া ‘বিয়ন্ড দ্যাট ডিসকোর্স’ ভাবতে পারেন–আপনে ক্লাসের আইডিয়া দিয়া একই লগে কম্যুনাল ডিসকোর্সের বাইরে যাইতে পারেন।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

কিছু ব্যাপার আছে যেইটারে সহজে চেনা যায় না অত; ধরেন, বাংলা হইলো সংস্কৃতের মাইয়া–এমন একটা ভাবনা আছে; এইটা যারা ভাবছেন তারা খুবই কনজার্ভেটিভ কাম করছেন–বাংলায় কথা কওয়া সমাজে চালু থাকা ফার্সি, আরবী শব্দগুলি ওনারা ডিনাই করছেন, ইংরাজি শব্দের খুবই অচল সংস্কৃত শব্দে তরজমা করছেন, যেইগুলি খোদ ঐ ইংরাজি শব্দের চাইতেও কম লোকে বোঝে, বা বোঝেই না কেউ–ব্রাকেটে ইংরাজিটা দিতে হয়! নজির? ইন্টারনেটের বাংলা করলেন একদল অন্তর্জাল!

এখন, সংস্কৃত যেহেতু হিন্দু ধর্মের কোর বুলি, হিন্দু বামুনরা ঐটারে পালে, মোসলমানরা তখন ঐ এটিচ্যুডের নাম দিল ‘হিন্দুয়ানী’, তারা তখন বাংলা কওয়া সমাজে যেইসব ফার্সি শব্দ চালু নাই তেমন শব্দও ঢুকাইতে চাইলেন, চালু সংস্কৃত শব্দগুলি পুরা বাদ দেবার চেষ্টা করলেন; দেখেন, ব্যাপারটা কেমন কম্যুনাল হইয়া উঠলো! তাইলে, দুই দলই মানুষের বুলিকে ধর্মের বাইরে থেকে বুঝলোই না! হিন্দুদের কাউন্টার দিতে মোসলমানদের মাঝে বেশি ফার্সি জানা একদল অভিজাত গজাইলো হিন্দুদের বামুনের মতোই! হিন্দুদের ভিতর মানী জিনিসের প্যারালাল জিনিস বানাইতে চেষ্টা করলো! নজির? মধুসূদন বা নবীনচন্দ্রের এপিকের কাউন্টার দিল মোসলমান কায়কোবাদ, মোসলমানের গীতাঞ্জলি লেখার আর্জ পয়দা করলো গীতাঞ্জলিরই ফার্সি তরজমা যেন–এবাদতনামা!

কেমন ডিসকোর্স এইটা? ঘেন্নার ডিসকোর্স। আপনে এখন ‘বিয়ন্ড দিস ডিসকোর্স’ কেমনে ভাববেন? ঐ ডিসকোর্সে থাকলে আপনারে তো মরা তক কম্যুনালই থাকতে হবে!

আপনে শুরুতেই ঐ লিঙ্গুইস্টিক কসমোলজি আর ইভোল্যুশনিজম, জনমের বায়োলজিক্যাল সিমিলি থেকে বাইরাইতে পারেন; স্পার্ম-ওভামের তালাশ বাদ দিয়া বহু বুলির যোগাযোগ দেখতে পারেন, বা বাংলার ৩০ জন বাপ-মা পাইতে পারেন; তখন সংস্কৃত বা ফার্সির প্রতি বাড়তি ভক্তি থাকলো না আপনের! ঘেন্নার ডিসকোর্স থেকে বাইরাইয়া আপনে জনতার কাছে গেলেন, সমাজে চালু থাকা সংস্কৃত-ফার্সি-আরবী-ইংরাজি-তামিল, সব গোড়ার শব্দই নিতে পারলেন, আপনে এইভাবে বাংলা লইয়া কম্যুনাল চিন্তা থেকে বাঁচলেন!

এমন বিয়ন্ড ডিসকোর্স ভাবা কেন দরকার? তালাশ করলে দেখবেন, সতীদাহ ব্যান করার পরে সহমরণ বাড়তে থাকে হিন্দু সমাজে! কেননা, নিজের খায়েশে ভাতারের চিতায় ওঠা বা সহমরণ ব্যান করে নাই ইংরাজ, ব্যান করছে জোর কইরা পোড়ানো বা সতীদাহ। হিন্দু বিধবাদের এই সুইসাইড/সহমরণ তাইলে কিন্তু কলোনাইজেশনের রেজিস্ট্যান্স! আমরা কি আজকে পোস্টকলোনিয়াল হইয়া সহমরণ শুরু করবো? আবার, মঙ্গলকাব্য পড়াও কলোনাইজেশনের রেজিস্ট্যান্স হইতে পারে, বা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিরোধিতাও।

আমরা যদি জাতীয়তাবাদী পোস্টকলোনিয়াল হইয়া হিস্ট্রি আনডু করার ডিসকোর্সে থাকি/ভাবি তাইলে সহমরণেও যাইতে কইতে হয়! যদিও খোদ ঐ জাতীয়তাবাদও কলোনিয়াল থিঙ্কিং!

আর কোন ডিসকোর্সে যাইতে/ভাবতে হবে আমাদের; পোস্ট কলোনিয়াল হইতে যাইয়া আমরা যেন পুরা প্রিকলোনিয়াল হইয়া না পড়ি!

কোন একটা ইস্যুতে আমাদের কাম যেন কোন অ্যাকশনের বিপরীতে স্রেফ রিঅ্যাকশন হইতে না পারে, আমরা যেন বিয়ন্ড যাইতে পারি!

তাইলে সহমরণের ব্যাপারে কেমনে ভাবলে বিয়ন্ড জাতীয়তাবাদ ভাবা যাইবে? মে বি, সমাজের এসেন্স ভাবা দরকার, সমাজের সারভাইভাল যদি সমাজের এসেন্স হয় তাইলে এমনে মরতে ফুসলাইতে পারে না সমাজ! তারউপর মেয়েরা হইলো সমাজের রিপ্রোডাকশনের উপায়, সার্ভাইভ করতে চাওয়া সমাজ মাইয়াদের মরতে কইতে পারে না তাইলে! সহমরণ তাইলে আর কারো স্বার্থে হইছে, মে বি এইটা পোলাদের দখলে পুরা সমাজ যাবার পরে হইছে, মাইয়াদের সেক্সুয়ালিটি কন্ট্রোল করতে এই ভায়োলেন্স, সমাজের স্বার্থ নাই তাতে কোন!

এমনি কইরাই, কোন একটা সিনেমা যদি খুনের প্রোপাগান্ডা হয়, বাট সেই সিনেমায় সুন্দর একটা কৈতর বা গোলাপ আছিল বলে সিনেমাটা আপহোল্ড করা ঠিক হবে না! কারো লিটারেচারের কোথাও গাছপিরিতি যদি থাকে, বাট তার লিটারেচার কম্যুনাল, সেক্সিস্ট হইলে, পেডোফিলি বানাইলে জনতার স্বার্থের দুশমন হইলে, জগৎ-জিন্দেগির ব্যাপারে বৈরাগী ব্রাহ্ম বানাইয়া তুললে, কোথাও আবার সুইসাইড করতে ডাকলে, খুনী হইতে কইলে–স্রেফ ঐ গাছপিরিতির কথা কইয়া তারে আপহোল্ড করলে আখেরে আমাদের লোকসান; গাছপিরিতি শিখাবার জিনিস আমরা পাবো, বাট কত কত মানুষ বাকি সব ভাবনায় ইনফেক্টেড হবে খোদা মালুম!

বহু জনের বেলায় আপনে কিন্তু অলরেডি করেনও না; আপনে আইউব খান বা এরশাদ বা মীরজাফর বা হিটলারের কোন পজিটিভ কোটেশন দেন না কিন্তু কখনো! আমাদের ঘেন্না বা পিরিতির চিপা থেকে চিন্তার মুক্তি হইলেই ভালো।

 

২২ শ্রাবণ ১৪২৩।

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →