Main menu

সেক্স কি অরিজিনাল সিন, নাকি রহমত?

“বিসমিল্লাহ্ বলে শফিক শফিকুনের ঠোঁটে কিস করা শুরু করলো।” এই লাইনটা পইড়া দেশের কতগুলা লোক হাইসা দেন; লোকগুলার পরিচয় মনে হয় সেক্যুলার বাঙালি, নিজেদের এনারা ‘সংস্কৃতিমনা’ বা কালচার্ড হিসাবে দেখতে কন প্রায়ই। তেমন দেখতে মুশকিল হয় না আমাদের, দেখতেই পারি।

কিন্তু তাতে ঐ হাসির কারণটা ক্লিয়ার হয় না আমাদের কাছে; কেন হাসলেন তারা? এমন একটা পিরিতের সিনে কেন হাসি পায় তাদের? তাগো আর্ট-কালচারে চুমাচুমি আদরের জিনিস; তাইলে কাশেম বিন আবু বকরের ঐ কেচ্ছায় (নভেল, সংস্কৃতিমনারা উপন্যাস নামে ডাকেন আর্টের এই ফর্মটারে।) এনাদের হাসি পাইতেছে কেন?[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

আর কিছু সওয়াল দিয়া বোঝার চেষ্টা চালাই ব্যাপারটারে। ধর্ম বা ধার্মিক জীবন কইতে কি বোঝেন এনারা? ধার্মিক জীবনে কাম কই, কাম কি ভালো? সেরা কাম কইতে যদি সেক্স বুঝি তাইলে ধর্মের লগে সেক্সের রিলেশন কেমন? ভরপুর সেক্সলাইফ ধার্মিক জীবনকে কি কোনভাবে দুষ্ট বানাইয়া ফালায়?

বাংলাদেশে যিনি কালচার্ড তারে সেক্যুলারও হইতে হয়, অন্তত এমন দাবি আছে; এই সেক্যুলারিজমও আবার কেবল ইসলামে চইলা যায়, আপনে যদি বারবার জনমে বিশ্বাস কইরা হিন্দু/বৌদ্ধ হইয়া থাকেন, জাতিস্মর নামে সিনেমা বানান, চার্চে কোরাস গান, শান্তি নিকেতনে সকালবেলা গাছের নিচে ‘অন্তর মম বিকশিত কর…’ গানটা গাইয়া ব্রাহ্ম প্রেয়ার করেন তাতে আপনের সেক্যুলারিজম কোন হুমকিতে পড়ে না। এবং আজব এই সেক্যুলারিজম এই কালচার্ড বাঙালিরই মাল, এমনকি বলিউডেও আপনে আল্লা-খোদা-সুবহানাল্লাহ-ঈমানদার কইলে বা হইলেও সেক্যুলার বা কালচার্ড হওয়া যাইতেছে আরামেই। যাই হোক, এইগুলা কইলাম কারণ, কেবল ‘কালচার্ড বাঙালি’ নামে ডাকতে চাইতেছি এই দলটারে, এই প্যারার আলাপটা দিয়া বুঝাইয়া লইলাম যে, এই নামেই আজব ঐ সেক্যুলারিজমও খালাস কইরা দেওয়া যাইতেছে।

তো, আমাদের সওয়ালে যাই আবার।  এই কালচার্ড বাঙালিরা ‘ধার্মিক জীবন’ কইতে যেইটা বোঝে তাতে সেক্স তেমন থাকতে পারে না। কারণ, সেক্স তো কাম, কাম খোদায় ডিভোশনে বাধা দেয় বইলা ধারনা এনাদের। এইখানে ধর্ম আর সেক্সের মাঝে একটা নেসেসারি দুশমনির আভাস পাওয়া যাইতেছে। এনাদের মতে ধর্ম যা তাতে সেক্সের পজিশন কেমন সেইটা বোঝা দরকার তাইলে। শুরুতে আমরা কয়েকটা ধর্মের ভিতর দেখি একটু, পরে ঐসব ধর্মে সেক্সের প্রস্তাবগুলার লগে এই কালচার্ড বাঙালির ধর্মের ডেফিনিশনের যোগাযোগটা দেখতে হবে।

খেয়াল করার ব্যাপার হইলো, সব ধর্মের প্রস্তাব একই কিসিমের না। হিন্দুধর্মে সেক্স মানে পোলাদের ভোগ, মাইয়াদের সেক্স নাই প্রায়, সেক্স হইলো মাইয়াদের জন্য পোলাদের সেবা করা। ভোগের লিপ্সা আবার রিপু। পোলারা দেবতা, সেবা করার মওকা দিতে হবে তার, সেবা করবে মাইয়ারা। কিন্তু মাইয়াদের সেবা নেবার মহৎ কামটা যেন ভোগের লিপ্সা হইয়া উঠতে না পারে, রিপুর দখলে চইলা না যায় দেবতা পোলা। সেবার মওকা দেওয়া যখন নিজের ভোগ হইয়া ওঠে, তখনই সেইটা রিপু; এই রিপু খুন করতে হবে। এইটার নামই সাধনা। মাইয়াদের জন্য সাধনা হইলো সেবা করা, সেবায় দেবতা খুশি হইলে পরে মাইয়া জনম থিকা মুক্তি ঘটবে। শ্রীকৃষ্ণ ভোগী না, তিনি রাধা এবং গোপীদের সেবা দেবার মওকা দিতেছেন, রাধা-গোপীর সেবা নেওয়া দেবতার মহৎ কাম–রঠা যেমন কন, ‘চরণ ধরিতে দিও গো আমায়, নিও না সরায়…’ কৃষ্ণ স্রেফ ধরার মওকা দিতেছেন, সরাইয়া লইয়া নিঠুরিয়া হইতেছেন না। শিবলিঙ্গের পূজারে মনে হইতে পারে মাইয়াদের সেক্সুয়ালিটি মঞ্জুর করা; কিন্তু ঐটা একদিকে সেবা করার মওকা চাওয়া, আরেক দিকে, শিবলিঙ্গ ফার্টিলিটির মেটাফর–শিবলিঙ্গ দিয়া মাইয়ারা সেক্স করবে না, প্রেগন্যেন্ট হবে–এবং এইভাবে, মা হওয়াই মাইয়াদের জীবনের সার কথা।

রামমোহন সহমরণ ঠেকাইতে বই লিখছিলেন। তাতে কইছেন, মাইয়া জনম হইলো পাপের ফল, ‘যোনী/ভোদা’ থিকা মুক্তি পাওয়াই হইলো মাইয়া জনমের সাধনা। সহমরণে এই সাধনার বরখেলাপ ঘটে, আবার ভোদা লইয়া জনম লইতে হবে সহমরণে গেলে। কেননা, সাধনা যেমন করা হইলো না, আবার পরের জনমে এই স্বামীর সেবা করতে পারার লোভও থাকতেছে, সেই লোভেই সহমরণে যাইতেছে বউ।

রামমোহনের প্রস্তাব তাই ‘ব্রহ্মচর্য’। বাকি জীবন বিধবারা সেক্স করবে না, আমিষ/প্রোটিন খাবে না, উপবাস করবে, সাদা শাড়ি পড়বে। ডাইরেক্ট সেবা করার মওকা পাবে না। এই ব্রহ্মচর্যে নর্মাল মরণ হইলে পরের জনমে ভোদা থিকা মুক্তি পাবে।

বৌদ্ধ ধর্মে সেক্স আর সব কামের মতোই মানুষের দুঃখের কারণ, বাণ। নির্বাণ পাইতে হইলে সেক্স বা কাম উতরাইয়া যাইতে হবে। এইখানে বাংলা ভাষার ছোট্ট একটা ইস্যু টানি। কাম মানে বাংলায় ‘কামনা’ বাদেও ‘কাজ/ওয়ার্কিং–সংসারের কাম যেমন’। সেইখান থিকা কামাই। এইটা মনে হয় বৌদ্ধ লিটারেচার থিকাই আসছে–বাংলা বা নেপালী বুলি/ভাষার লগে বৌদ্ধ লিটারেচারের যোগাযোগ হইছে বাংলার জনমের কালেই। মানে, কেউ কেউ যেমন কার্য>কাজ্যি>কাজ>কাম, ভাষার এমন একটা চেঞ্জ দেখেন সেইটা মনে হয় ভুল। বরং বৌদ্ধদের ‘বাসনা’ বা ‘লিপ্সা’ ধারনার মাঝে রিপুর ক্যাটেগরির নাম ‘কাম’, এর মাঝে সেক্স বা কাজ/সংসার বা মাগফেরাত কামনা–সবই ধরা আছে, সেইখানে ‘কার্য বা কাজ’ও কাম।

কামের এই আইডিয়া থিকা ‘করি মানা, কাম ছাড়ে না, মদনে…’ গানটা শোনেন। এই গানের ডিসকোর্সেও সেক্স কোন পজিটিভ ব্যাপার না, বরং সাধনার দুশমন। বৈষ্ণবদের মাঝেও শরীল হইলো সাধনার ময়দান, আলটিমেট মঞ্জিল হইলো, শরলী/সেক্স উতরাইয়া যাইতে পারা–বিষে বিষ ক্ষয় করার তরিকা। তান্ত্রিক সাধনাও তো সেক্স সেলিব্রেট করে না, সেক্স উতরাইয়া যাবার একটা স্টেজ বা ধাপ তাগো সেক্স।

খৃস্টধর্মের অরিজিনাল সিনের দোষটা প্রায় পুরাই ইভের, এডাম তার শিকার। ইভ কামুক, তার কাম থিকা যেই পাপ হইলো সেই পাপেই মানুষ মরে, আজকেও; ‘গার্ডেন অব ইডেন’ থিকা তাগো খেদাইয়া দিতেই সেই পাপের ফল শেষ হয় নাই; তাগো বাচ্চা-কাচ্চা, আজকের মানুষও সেই পাপের ফল ভোগ করতেছে, সেই অরিজিনাল সিনের কারণেই মানুষ মরে, নাইলে ইডেন গার্ডেনেই জিন্দা থাইকা নেভারএন্ডিং মজা করতে পারতো অনন্ত কাল, মরণ নাই কোন।

সেক্স তো সেরা কাম, সেক্সি ইভ এডামের খোদার কসম ভুলাইয়া দেয়! ইভ নিজে কামুক, আর তার সেক্সি ভঙ্গিমা এডামের ডিভোশন ছুটাইয়া দেয়। আমরা পার্বতীরেও দেখি শিবের ধ্যান ছুটাইয়া দিতে! সেক্সই শয়তান। সেই কারণেই হয়তো, খৃস্টানদের পপুলার কালচারে অরিজিনাল সিন কইতে সেক্সই বুঝায় আসলে!

ধর্ম এবং সেক্সের রিলেশনের ব্যাপারে এই ধর্মগুলার প্রস্তাবই আমাদের সেক্যুলারদের বোঝাপড়ার ফাউন্ডেশন। সেক্যুলারিজম নামে আমাদের ধর্মের গোড়ায়  ভিক্টোরিয় এথিকস্ আছে বইলা আমরাও ‘অরিজিনাল সিন’-এর আইডিয়া পুষি। ভিক্টোরিয় এথিক্সকে একটা সেক্যুলার চেহারা নিতে হয়; সেই কারণে পাপ বা শয়তান–এইসব ধর্মীয় নামের বদলে এসথেটিক্স দিয়া কাম করে, তাই হয়তো সেক্সের নয়া নাম হয় আগলিনেস।

এদিকে, রামমোহন-রঠা বা বৈষ্ণব তরিকাও আমাদের মাঝে সেক্সকে আগলি কইরা রাখে, সেক্স হইলো আমাদের উতরাইয়া যাবার রিপু, জয় করতে হবে আমাদের। নরেন্দ্র মোদী বা আমাদের ক্ল্যাসিকাল বামপন্থিদের ব্রহ্মচর্যের মাজেজা এইখানে। আমাদের ক্ল্যাসিক্যাল লিটারেচারে বা ঢালিউডি লিটারেচারে আছে রামমোহনের ঐ আইডিয়া; নায়িকারা সেক্স করে না নায়কের লগে, নায়িকারা সেবা করে, নায়ক সেবা নেয়, চরণ সরাইয়া নেবার মতো নিঠুরিয়া হইতে পারে না যেন নায়কদের নরম মন।  নায়িকাদের বাঁচায় নায়ক, নায়িকা তখন দেনা শোধ করে সেবা কইরা।

সেক্সের এই ডেফিনিশন দিয়া ইসলামের সেক্স বুঝতে যাইয়াই ঝামেলায় পড়েন কালচার্ড বাঙালি বা সেক্যুলার বাংলাদেশীরা। কেননা, সেক্সের ব্যাপারে ইসলামের প্রস্তাবটা একদম গোড়াতেই আলাদা।

ইসলামে অরিজিনাল সিন নাই, পাপ খুবই পার্সোনাল, আপনের থিকা আপনের বাচ্চায় যাইতে পারে না, এডাম-ইভের সেই পাপ মাফ কইরা দিছে আল্লা, মানুষের মরণের লগে সেই পাপের রিলেশন নাই কোন। পাপ-সেবা-মাইয়া হিসাবে জনম, ভোদা থিকা মুক্তির কোন ব্যাপারও নাই ইসলামে।

সেক্স কোন আগলি বা কুৎসিত ব্যাপার না, সেক্সে ধার্মিক জীবনের কোন হানি হয় না, বরং সেক্স না করলেই ধার্মিক জীবনের হানি হইতে পারে। সেক্স হইলো খোদার রহমত, আর সব রহমতের মতোই। পোলাদের জন্যও রহমত, মাইয়াদের জন্যও। সেক্স এমনকি একটা হক, স্বামীর হক, বউর হক, এবং হক আদায় করতে হয় মোসলমানের। হক আদায় করা সোয়াবের কাম, সেক্সও সোয়াবের কাম।

ইসলামের নবী এবং সাহাবীদের সেক্সলাইফ আছিল, সেক্সের আলাপ খুবই দরকারি আলাপ হিসাবে করা হইছে। আমাদের সেক্যুলার ভাবনায় মনে হয়, সেক্স যেহেতু কুৎসিত তাই মসজিদে সেক্সের আলাপ করলে বুঝি ধর্মের কোন হানি হইলো! কিন্তু ইসলামে সেক্স তো তেমন কিছু না, মসজিদে সেক্সের আলাপ করতে দোষ নাই, বরং না করাটাই খারাপ–আপনের উপর অন্যের হক হয়তো জানতে পারলেন না আপনে, ঠিক মতো সেক্সের হক আদায় করলেন না, পাপ হইলো! ইসলামে তাই সেক্সের আলাপও ধর্মের আলাপই। এমনকি ‘আজল’ করার মতো সেক্সের খুটিনাটিও আলাপ করছেন ইসলামের নবী। বউ-ভাতারের সেক্স সোয়াবের কাম, চুমাচুমি সোয়াবের কাম।

কাশেম বিন আবু বকরের কেচ্ছা-কাহিনি/রোমান্স নভেলে সেক্স এবং ইসলামের রিলেশনটা তাইলে বোঝা দরকার সেক্সের ব্যাপারে ইসলামের প্রস্তাবটা মাথায় রাইখা। খৃস্ট বা হিন্দু বা বৌদ্ধ বা ঐ ধর্মগুলার প্রস্তাব/থিয়োরি মোতাবেক সেক্স বোঝা সেক্যুলারিজম কাশেমে যাইয়া আউলাইয়া যাবে নাইলে।

এই সেক্যুলাররা ঐসব ধর্মের প্রস্তাব দিয়া ভাবে বইলা ধর্মের দুশমনি করতে আর্টে সেক্স ঢুকায়, তাগো বুদ্ধিতে মনে হইতে থাকে সেক্স হইলো ধর্মের বিরুদ্ধে রিভল্ট! কিন্তু সেক্সের লগে তো ইসলামের কোন দুশমনিই নাই, সেক্স দিয়া তাই ইসলামে তেমন কোন রিভল্ট করা যায় না। কোলকাতায় যেমন গান্ডু দিয়া বিরাট রিভল্ট করা গেল, তেমনটা কাশেমে হয় না; কারণ, ওদের মতো রিভল্ট কইরা কাশেম যা করবে তা অলরেডি ইসলামে সোয়াবের কাম। বউয়ের মাই দেইখা মাশাল্লা কইয়া উঠতে পারে কাশেমের নায়ক, ভাতারের গতর হাতাইতে হাতাইতে আলহামদুলিল্লাহ কইবার মাঝে কোন পাপ নাই, বরং সোয়াব। বিসমিল্লাহ্ কইয়া বউরে জড়াইয়া ধরতে পারে ভাতার, ভালো লাগতে হবে বউয়ের, ভালো লাগা বউয়ের হক, বউ একজন একটিভ সেক্স এজেন্ট, স্রেফ সেবা করার চাকর না, বউয়ের প্লেজারের খামচি হইতে পারে রহমতের নয়া ডাইমেনশন, ফূর্তির সেক্স রহমতের ফুল, রহমতের ফুলের ঘ্রাণে ফুরফুরা মনে আরো মনোযোগ দিয়া পড়তে পারে ফজরের নামাজ, তার আগে এক লগে নাইয়া লইতে পারে দুইজন, সেক্স তাগো ধার্মিক জীবনকে খোদার আরো প্রিয় কইরা তুলতে পারে।

ইসলামে সেক্স আর ধর্মে ডিসট্যান্স বা দুশমনি নাই; কিন্তু সেক্যুলারিজমের বানাইয়া লওয়া ধর্মের ডেফিনিশনে দুশমনি আছে। সেক্যুলারিজমের ধইরা লওয়া ডেফিনিশনে ধার্মিক জীবনের লগে সেক্সের নেসেসারি দুশমনি থাকায় এথেইজম করতে যাইয়া তারা ইনসেস্ট-হোমোসেক্সুয়ালিটি দিয়া ভরাইয়া ফেলে, ধর্মরে যেন কড়া থাপ্পড় দিলো একটা। সুনীল যেমন স্বরস্বতিতে চুমা দিয়া খুব রিভল্ট করলেন! কিন্তু ইসলামে চুমা নর্মাল খুবই, মূর্তি চুমাইয়া বড় কোন রিভল্ট করা যায় না।

এইখানে কই, ইসলামের আইন-কানুনের লগে সেক্সের ব্যাপারে ইসলামের কোর প্রস্তাব গুলাইয়া ফেলতে পারেন আপনে। আমার আলাপটা শরিয়ত লইয়া না, বরং খোদ সেক্সের ব্যাপারে ইসলামের ফিলসফিক্যাল পজিশন লইয়া, আর কয়েকটা ধর্মের বিপরীতে।

শরীয়ত আর দর্শন তফাতে রাইখা বোঝা সম্ভব। একটা মেটাফর দিয়া বুঝাই। আরেকজনের মঞ্জুরি ছাড়াই তার গাছের ফল খাওয়া ক্রাইম, কিন্তু খোদ ফল খাওয়া তো ক্রাইম না। সেক্সের ব্যাপারে শরিয়তি কানুনগুলা ঐ ফল চুরি বা ডাকাতির ক্রাইমের মতো, খোদ সেক্স ফল খাবার মতোই জায়েজ, ফল চুরি ক্রাইম হইলেও খোদ ফলটা যেমন রহমত, জেনা বা হোমোসেক্সুয়ালিটি তেমন ক্রাইম হইলেও খোদ সেক্সটা রহমত।

জেনা নাপছন্দ ইসলামে, কিন্তু সেক্স যেহেতু রহমত তাই বিয়া নামের ব্যাপারটা ইসলামে খুবই ফ্লেক্সিবল করা হইছে মনে হয়। ইসলামে বিয়া আর মহব্বত/পিরিত/লাভ-এর নেসেসারি যোগাযোগ/ডিপেন্ডেন্সি নাই। দুইজন মানুষের সেক্স করার ইচ্ছা হইলে আজকে বিয়া কইরা কালকে তালাক দিতে পারে, মুতা বিয়া আছে। বিয়া একটা চুক্তি, দুইজন লোকের, সাক্ষী থাকবে, বাচ্চা বা ইনহেরিটেন্স লইয়া পসিবল ইস্যুর ফয়সালা হবে বিয়া নামের চুক্তির ভিতর দিয়া। কিন্তু সেক্যুলার বা বৈষ্ণব বা খৃস্টধর্মের ভাবনা দিয়া বিয়ারে বুঝলে ঐ ফ্লেক্সিবিলিটি বোঝা মুশকিল হবে।

কাশেমের বই পড়ি নাই আমি, তাই তার বিয়া লইয়া কইতে পারি না। তবে লোকের আলাপে যতটা বুঝি, বিয়ারে উনিও সেক্যুলার/খৃস্টধর্মের আদলেই দেখেন, কিন্তু সেক্সকে ‘অরিজিনাল সিন’ হিসাবে না দেখায় উনি ইসলাম এবং বিয়ার পার্পেচুয়ালিটির ব্লেন্ডিং বানাইছেন। বাস্তবেও ইসলামে বিয়া ফ্লেক্সিবল হইলেও তালাক নাপছন্দ আল্লার, হালাল/জায়েজ কামগুলার মাঝে সবচে অপছন্দের একটা হইলো তালাক। ভাতার-বউয়ের মাঝে মহব্বত পছন্দ করেন আল্লা।

তাইলে ঐ হাসিটার গোড়া হইলো এই কালচার্ড  বাঙালির ধইরা লওয়া, ধর্মের আনুমানিক ধারনা বা ডেফিনিশনে পাওয়া ককন্ট্রাডিকশন! যেনবা অমন একটা কামঘন ঘটনায় বিসমিল্লা কওয়ানো কাশেমের বেকুবি, সেক্সের টাইমে বিসমিল্লা বা সোবহানাল্লা কওয়া যেন ইনস্ট্যান্ট টার্নঅফ; কারণ, পাপ করার টাইমে, আগলি বা কুৎসিত কিছু করার টাইমে ধর্মের কথা যেন আপনের ভুইলা থাকা কসম আর ডিভোশন মনে করাইয়া দেয়!

কিন্তু মোসলমান কাশেমে ডিভোশন পোক্ত হয় পিরিতে, খোদার কসম খাইয়া ইন্সট্যান্ট বিয়া কইরা বিসমিল্লা কইয়া সেক্স করায় ধার্মিক জীবনেরই এক্সটেনশন হইলো, কোন হানি ঘটলো না ধার্মিক জীবনের, খোদার আরেকটা রহমতের লগে পরিচয় ঘটায় আপনের ডিভোশন, খোদার শোকরানা আরো বাইড়া গেল!

সেক্সের ব্যাপারে কাশেমের ধর্ম বা ইসলামের এই তফাতের প্রস্তাব না জানার বেকুবিই ঐ হাসির কারণ, কাশেমের ফিকশনে বেকুবি নাই কোন। যে জানে সে কালচার্ড বেকুবদের ঐ হাসিটা লইয়াই হাসবে।

আগেই কইছি, কাশেমের কেচ্ছা পড়ি নাই আমি, তা আমি তো শাহাদুজ্জামানের কেচ্ছাও পড়ি নাই; ঢালিউডের সিনেমাও দেখি না, আয়নাবাজিও দেখি নাই। কাশেমের ফিকশন কি ভালো? জানি না আমি। এই ব্যাপারে আমিও ঐ কালচার্ড বাঙালির মতোই অনুমানে চলি। আমার অনুমান হইলো, আমাদের দেশে একটা ফিকশনাল রিয়েলিটি বানাইয়া তোলার মুন্সিয়ানা নাই তেমন, ইম্পোজড লাগে, হঠাৎ সব কাম করে কেচ্ছার চরিত্রগুলা, ফিকশনাল রিয়েলিটির লজিক দিয়া ঘটতেছে না ঘটনাগুলা! চরিত্রগুলা আগের থিকা সমাজে থাকা কতগুলা স্টেরিওটাইপের ভিতর দিয়া কায়কারবার চালাইতে থাকে। যেমন ধরেন, মাইয়ারা কান্দে, পোলারা কান্দে না, খোড়া হইলে সাহস কইমা যাবার কথা–ক্রাচের কর্নেল হওয়া তাই খুব চমকাইয়া যাবার মতো ঘটনা, বামপন্থিরা গরিব ভালোবাসে, ধনীরা খারাপ, মিডল ক্লাস ভন্ড, গ্রামের মানুষের পেটে অনেক প্যাচ, রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইরান-তুরানের পূর্বপুরুষ, আর্য, চাকমারা সাপ খায়, সেক্সে মাইয়াদের আগ্রহ কম, পোলারা ফুলে ফুলে মধু খায়, মা হওয়াই মাইয়া জনমের স্বার্থকতা–এইসব গৎ বান্ধা ধারনার ভীড়ে লেখকের ক্রিয়েশন খুইজা পাওয়া মুশকিল।

কাশেম বিন আবু বকর এই সমাজেরই লোক, ভারত থিকা মাইগ্রেট করার পরেও, হূমায়ুন আহমেদ তারও প্রিয় লেখক। যদিও হূমায়ুন প্রিয় লেখক হবার কারণেই তার মাঝে ফিকশন বেশি থাকার সম্ভাবনা, গৎ বান্ধা চরিত্র নাও হইতে পারে। তবে যতোটা পড়ছি তাতে হূমায়ুনের মাইয়ারাও খুবই সরল মনে হইছে, গৎ বান্ধাই। হূমায়ুনের নায়কও বইনের সেক্স মানতে পারে না, বিয়ার বাইরে ডিজঅ্যাবল বইন প্রেগন্যেন্ট হইলে বাড়ির লজিং মাস্টারকে খুন কইরা ফেলে নায়ক ভাই, বইনের সেক্সপার্টনারকে খুন কইরাই হূমায়ুনের মহা নায়ক হওয়া যাইতেছে! যদিও সেই বইন সেই পসিবল সেক্সলাইফে ফূর্তিতেই আছিল, কোন ব্যথা-বেদনার চিনা/সাইন দেখা যায় নাই!

এইসব ফিকশনের প্রেডিক্টিবিলিটি টানে না আমারে, মানুষের বহু মনের খবর ততো পাই না আমাদের ফিকশনে। ইসলামের তরফে সেক্স এবং ধর্মের ব্যাপারে কাশেমে একটা আলাদা প্রস্তাব থাকলেও তার ফিকশনে ঐ স্টেরিওটাইপের বাইরে অনেক সম্ভাবনা মনে আসে না। তবু কখনো হয়তো পইড়া দেখবো, কেমন লাগে। সো লং।

৩০ এপ্রিল ২০১৭

 

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →