Main menu

মৃদুল দাশগুপ্ত যেন শশাঙ্কের গদা, বৌদ্ধ মনে ওনার কবিতা কেমন তখন

আমাদের পোয়েটিক্সের গড়নে ধর্মের মদদ আছে, কখনো হয়তো গোপন, কখনো খুব আলগা নজরেও ধরা পইড়া যায়।

এথেইস্টদের মাঝেও দেখবেন, যে যেই ধর্ম থিকা বাইরাইয়া এথেইস্ট হইছেন সেই ধর্মে যারে ইনসেস্ট কয়, সেইটাই ঐ ঐ এথেইস্টের ইনসেস্টের আইডিয়া; তারা নিজের ছাইড়া আসা ধর্মের সাজেশন মোতাবেক ইনসেস্টের আইডিয়ার সায়েন্টিফিক বেসিস বা খাম্বাও জোগাড় কইরা ফেলে। এইটারে গোপন কইতে পারেন।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

এথেইস্ট যারা না, তাগো এতো গোপন করার দরকার হয় না। তবে ধর্মের আইল পার হইয়া আরো বেশি রিডারের মাঝে নিজের ধর্ম ছড়াবার ফন্দি লইয়া ঢুকতে চাইলে ধর্ম গোপন করতে চাইতে পারেন অনেকে। রঠা যেমন নিজের ধর্মের গান লিখছেন ব্রহ্মকে সর্বনামে ডাইকা, সর্বনামের এই এক ফায়দা–নেতানিয়াহু বা ট্রাম্প বা পুতিন বা এরদোগান বা আব্বাস, সবাইরেই ‘সে’ কইয়া আপনে অচেনা বানাইয়া ফেলতে পারেন! কারো মনে নামের চাইতে ভাব পাচার করায় লাভ বেশি, সবর্নামেই পাইতে পারেন সেই মওকা।

এমন সব ধান্দা কম কম করা কবিও আছেন দুনিয়ায়, তাগোই বেশি ভালো লাগে আমার। বঙ্কিম ‘বন্দে মাতরম’ লিখছেন, সেইখানে নিজের হিন্দুতা লুকাইতে চেষ্টা করেন নাই; হিন্দু হিসাবেই মায়ের ভক্ত উনি, সেই মায়ের বাছুর হিসাবে বাংলার মোসলমানদের বাদ দেবারও দরকার হয় নাই ওনার, কইতেছেন পুরা ৭ কোটির কথাই। হিন্দু বঙ্কিমের এই মা-ভক্তি ভালো লাগে আমার।

মির্জা গালিব যখন দুনিয়ায় এমন জায়গার হদিস চান যেইখানে খোদা নাই, যাতে উনি নিরালায় একটু মদ খাইতে পারেন–এই যে উনি বিশ্বাসে সহি মোসলমান হইয়া উঠলেন, এই পোয়েটিক্সও ভালো লাগে আমার।

‘বনমালি তুমি পরজনমে হইও রাধা…’, হিন্দু ধর্মের ভিতর দিয়া মনকাড়া পোয়েট্রি হইতে পারতেছে।

জীবনানন্দ লিখলেন ‘আবার আসিব ফিরে…’, এইখানেও পরজনমের কথা কইয়া হিন্দুতা দিয়াই পোয়েট্রি করলেন কবি; কবির সুমন জাতিস্মর গানেও পরজনমের গান গাইতেছেন, কে যেন কোলকাতায় সিনেমা বানাইলেন ‘জাতিস্মর’ নামে। বুদ্ধদেব বসুর ‘ধৃতরাষ্ট্রের বিলাপ’ও ফেভারিট একটা কবিতা ছিলো আমার।

হিন্দুদের কবিতায় হিন্দুতা থাকবে না কেন, থাকাটাই নর্মাল। মোসলমানের কবিতায় ইসলাম থাকতেই পারে, ক্রিসমাস লইয়া কত কত সিনেমা হইতেছে। নর্মাল।

কিন্তু হুশিয়ার থাকার দরকার আছে, নাইলে প্রোবলেম হইতে পারে। বঙ্কিম হিন্দু হিসাবে যেইভাবে মা-ভক্তি জানাইছেন সেইটা যদি আপনে ইহুদী বা বৌদ্ধদের কাছেও চাইতে থাকেন, তখন মুশকিল হয়; বঙ্কিম নিজে তেমন কিছু করেন নাই, কিন্তু পরের কংগ্রেস যখন এইটা মোসলমানের কাছে চাইছেন, প্রোবলেম হইছে। দুশমনি আর খুনাখুনির সেই ইতিহাস এখনো টানতে হইতেছে আমাদের।

কোন কবির কোথাও হিন্দুতা বা ইসলাম থাকলেই তারে হিন্দু কবি বা মোসলমান কবি ডাকার দরকার হয় না আমাদের। কারো পোয়েট্রিতে ধর্মের থাকা যদি নর্মাল হিসাবে দেখতে পারি আমরা, তাইলে হিন্দু বা বৌদ্ধ কবি হিসাবে ডাকতে হয় না, আবার ডাকলেও কবিত্ব কমে না মোটেই।

তবু দুশমনির সেই ইতিহাসে কতগুলি ঘটনার এমনসব অর্থ খাড়াইছে যে হুশিয়ার থাকার দরকার বাড়ছে আমাদের। তাই মৃদুল দাশগুপ্তকে শশাঙ্কের গদা বা নবারূণ ভট্টাচার্যকে ‘আদভানীর তর্জনী’ উপমায় বা নামে ডাকা ঠিক হবে না, খুব পোয়েটিক হইলেও এইটা দিয়া দুশমনির সেই ইতিহাসই আগাইয়া নেওয়া হয়। একজন হিন্দু কবিরে আরেকজন হিন্দুর লগে গুলাইয়া দেখার ফায়দা কি, পুর্ণেন্দু পত্রীর হাতের লেখারে আওরঙ্গজেবের ক্যালিগ্রাফি কইয়া টাসকি খাওয়ানো যাইতে পারে, কিন্তু পোয়েট্রি পাতলাই!

মৃদুল দাশগুপ্ত যেমন আল মাহমুদকে কইলেন ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’, হিন্দুরা তাইলে কেমনে দেখবে আল মাহমুদকে? আমাদের সেই দুশমনির ইতিহাসের ছাচে বখতিয়ারকে আমরা চিনি এখন। হাছা-মিছা যাই হৌক, বখতিয়ারের ঘোড়া মানেই কম্যুনাল হারজিতের কাহিনি! নরেন্দ্র মোদীর ইন্ডিয়ায় তাজমহলও ভাঙতে চাইতেছে লোকে, সেই ইন্ডিয়ায় আল মাহমুদকে বখতিয়ারের ঘোড়া হিসাবে কেন পরিচয় করাইয়া দিতেছেন মৃদুল দাশগুপ্ত!

আমাদের ইতিহাসের লোকেরা তুর্কি বখতিয়ারকে কেবল মোসলমান বানাইয়া ফেলছে, লক্ষ্মণ সেন স্রেফ এক রাজা নাই আর, হিন্দু রাজা উনি, নদীয়া হইলো হিন্দুতার মুকুট। আমাদের উপমারা আমাদের এইসব ইতিহাসের ভিতর দিয়া অর্থ বানায়, ইতিহাসের বাইরে উপমা নাই। ইতিহাসের ঘটনারা আমাদের মেমোরির ভিতর পাল্টাইতে থাকে হামেশাই, মেমোরির অতীতেরা সব সময়ই খুবই কন্টেম্পরারি। জামানার তালে তালে পাল্টাইতে থাকা মেমোরির আদলে ইতিহাস দিয়া অতীত লিখতে থাকি আমরা। উপমা মানে ইতিহাস লেখার আরেকটা এটেম্পট। আমাদের এই ইতিহাস কম্যুনাল, সাজেশন দিতে থাকে সে হিন্দুদের–নদীয়া থিকা হটাও বখতিয়ারের ঘোড়া!

বখতিয়ারের ঘোড়া কই পাই এখন– জিগায় তারা, মৃদুল দাশগুপ্ত তখন আল মাহমুদকে দেখাইয়া দেন।

১১ জানুয়ারি ২০১৭

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →