।। তিনখানা নারীবাদ ।। এক নম্বরঃ সামার উইথ মনিকা বাই ইংমার বার্গম্যান ।।
সামার উইথ মনিকায়, মনিকা শুরুতেই যে পার্টটা লয়! হিরোর কাছ থেকে ম্যাচ নিয়া সিগারেট ধরায় মেবি। হিরো তো জায়গায় ফিদা। তো এইটা আশেপাশের লোকজন যেভাবে নিতেছিল, তাতে ধইরা নেয়া যায় ওইটা ইউরোপের কালচার হিসেবে তখন মোটামুটি একসেপ্টেড। ধরা যাক তা নারীবাদী কালচারই। এবং যে কোন কিছুই কালচারে খুব ন্যারো সেন্সে ইনফিল্ট্রেট করে। এই ক্ষেত্রেও সেইটা হইছে। অর্থাৎ নারীবাদী কালচার ঠিক অতটা নারীবাদ না; ডিসকোর্সটা লস্ট ইন কালচার। আমি সামার উইথ মনিকা ছবিটারে বার্গম্যানের, নারীবাদী ডিসকোর্সরে রিবার্থ করানোর ট্রাই হিসেবেও দেখতে পারছি মনে হয়; দেখা যাক।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]
.
মনিকার এই সিগারেট খাওয়া বা পোলার লগে আগ বাড়ায়া কথা কওয়া, ধরলাম একসেপ্টেড, এবং তা মনিকার তরফ হইতে নারীবাদী পার্ফর্মেন্স দ্বারা অনুপ্রাণিত হইয়াই। কিন্তু এই ধরণের প্রদর্শনের বাইরে অপরাপর ক্ষেত্রগুলাতে তখনকার দিনে নারীবাদী ডিসকোর্স যে মোস্টলি অনুপস্থিত এবং তাতে কার কি অসুবিধা এবং তাতে সমাজ কীভাবে ফেমিনিস্ট কন্ট্রিবিউশন থেকে বঞ্চিত হইতেছে সেগুলা হালকা বিস্তারে এই ছবিতে দেখা যায়। মানে শুরুর ওই অংশটার পরপরি আমরা তো দেখতে পাই যে বাপের লগে মনিকার ধুন্ধুমার অবস্থা, মদ-টদ খায়, মাইয়ারে সহ্যই করতে পারে না। তারপর মনিকা যেখানে কাজ করে ওইখানেও মনিকারে খুব একটা সিরিয়াসলি নেয়ার ব্যাপার নাই, সেইটা এতটাই বাজে অবস্থা যে কো-ওয়ার্কাররা ফাইজলামি কইরা মনিকার গায় হাত দিতেছে, মনিকা যে বিরক্ত হইতেছে তাতে ভ্রুক্ষেপই নাই কোনো। আবার মনিকার বিরক্ত হওয়াটাও অত সিরিয়াস কিছু হইয়া উঠতে পারে নাই, কারণ বিরক্ত তো খুব স্বাভাবিক রেসপন্স হিসেবে হওয়া যাইতেইছে কিন্তু এই সকল ব্যাপারে মেজাজ দেখানোর রেওয়াজ তখনও নাই। মানে মেজাজ দেখানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের যে পলিটিকাল উপস্থিতি থাকতে হয় সমাজে, তা নাই। ফলত চাকরীটা ছাইড়া যদিও দেয় মনিকা, তা বালকি চালে হালকা সুরে বিরক্ত হইয়াই (ক্রিটিকান্তরে- প্রেমে পইড়া), মেজাজ দেখায়া না।
.
একই সময়ে হিরোও চাকরী ছাইড়া দেয়, তখন তো নায়ক আর মনিকার পূর্বরাগ চলে, বসের ঝাড়ি তথা চাকরীর প্রেশার কি আর সইতে চায় মন! দেখেন, মেদের চাকরী করার অধিকার নিয়া কথার তো শেষ নাই, যেন চাকরী করাটাই ফেমিনিজম; এদিকে পোলাদের যে নাভিশ্বাস চাকরী করতে গিয়া এবং মাইয়াদেরও যে তা হইতে পারে- এই ডিউটিপরায়ণতার মইধ্যে- সেই আলাপ কিন্তু উধাও হইয়া গেল। ফলে চাকরী করাটাই একটা সেলিব্রেশনের ব্যাপার হইয়া দাড়াইছে। এইখানে সেলিব্রেশনের কিছু তো নাই, তাইলে সেলিব্রেশনটা হয় মূলত পয়সা নিয়া। এইভাবে সোসাইটিতে পয়সার ফেটিশ তৈরি হয়, সেইটাতো বাই প্রোডাক্ট, বড় সমস্যা হইল নারীবাদ সমাজে যে লার্জার প্রবলেমগুলা নিয়া ডিল করে/করতে পারে বা পারত সেইটা অন্তরালে পইড়া রয়।
.
যা হোক, এহেন অবস্থায়, মানে গ্রীষ্মে দুইজনই যখন বেকার তখন তারা প্রেম করা শুরু করে। এই প্রেমের সময়টা এবং তারপরে বিয়ার পর মনিকার প্রবণতাগুলা লক্ষ্য করলে তার পূর্বেকার কাজ ও জীবন নিয়া অসন্তুষ্টির প্রমাণ পাওয়া যায়। এই সময় একটা আইডিয়াল লাইফ সে লিড করতে চায় যেইখানে তার সমস্ত নিড উইল বি টেকেন কেয়ার অফ বাই হার সোয়ামি। এই পর্যায়ে, তার ইনিশিয়াল সংস্কৃতিকৃত-ফেমিনিস্ট অ্যাক্টগুলি যে ফেমিনিস্ট ডিসকোর্সের বাইরে এক অসচেতন ক্রিয়া মাত্র, তা খোলাসা হইতে শুরু করে। এবং পোলা সেইটারে স্বাভাবিকভাবেই নেয়; মানে এতদ খোলামেলা পিরিতি সত্ত্বেও সেইখানে যে নারীবাদী ডিসকোর্সের শূন্যতা ছিল তা বোঝা যায়। পোলা মনিকার চাহিদা পূরণের তরেই পড়াশুনা টড়াশুনা শুরু করে, চাকরিও করতে হয়। তখন মনিকা পোলার অনুপস্থিতিতে সামান্য বেসামাল হইয়া পড়ে। এমতাবস্থায় পোলা মনিকারে মারেও। এইখানে নায়ক যে নিরুপায় তা বোঝা যায়, কিন্তু মনিকার তরফ হইতেও যে কিছু কন্টিবিউট করার আছে তা এমনকি এই নিরুপায় মুহূর্তেও পোলার মাথায় খেলা করে না। ফলে মাইর দেয়াটা একটা অবভিয়াস ওয়ে আউট হইয়া ওঠে। আবার মনিকারে যে কাজ করতে কইবেন, মনিকারে কি এইভাবে আপনে তার নোংরা ওয়ার্কপ্লেসে ফিরা যাইতে কইতেছেন না! নোংরা ওয়ার্কপ্লেসের ব্যাপারটা তো মনিকাই আইডেন্টিফাই করে নাই, কারণ ওই ফেমিনিস্ট ডিসকোর্সটাই ছিল না। কিন্তু এই যে মনিকা ও মনিকার শোয়ামি কোন অবস্থাতেই মনিকার কামের কথা এমনকি ভাবতেও পারতেছে না, সেইটা মেবি ওই হয়রানির কারণেই। ডিসকোর্স না থাকার সমস্যা হইতেছে, হয়রানিটা আইডেন্টিফাইও করা যায় না; ‘মেবি’ বইলা কাজ সারতে হইল আমারে। (এইখানে খেয়াল করেন মনিকা যদি আরেকটু কম স্বার্থপর হইতে পারত, শোয়ামির মন জোগায়ে চলতো, তাইলে কিন্তু এই পুরুষতান্ত্রিকতার মইধ্যেও মনিকার মৌজেই কাটত। কাটে তো অধিকাংশের। তাদের মুখে জয়গান কি শোনেননাই পুরুষতন্ত্রের?)
.
তো বার্গম্যান এই ছবির মধ্য দিয়া যে ডিসকোর্সগুলার সন্ধান আমাদের দিলেন, যা সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের মইধ্যে লুপ্ত হইতে ধরছে প্রায়, তার মইধ্যে পয়লাই বলতে হয়, নারীবাদে পোলাদের উপকারিতার কথা। পুরুষতন্ত্র মানুষের সামাজিক জীবন নির্বাহের জন্য যে আঁটসাঁট ছক বাইন্ধা দিছে, তা পোলা, মাইয়া ও সমাজ সবের জন্যেই কাল হইতে পারে; মাইয়াগেরে শাসানোই যদি পোলাদের একমাত্র আরাধ্য না হইয়া থাকে এইটা পোলামাত্রই টের পাওয়ার কথা। সেই জায়গা থেকে এইটা তো বলাই যায় নারীবাদ পোলাদেরও ব্যাপার। মানে নারী না থাকলে ‘নারীবাদ’ টার্মটা হয়ত আমরা পাইতাম না, কিন্তু অন্য টার্মের ভিতর দিয়া তাদৃশ ডিসকোর্সের উপস্থিতি থাকতেই হইত। সুতরাং ডিসকোর্স-ওয়াইজ নারীবাদ অত্যন্ত নারী-নিরপেক্ষ ব্যাপার। নারী শব্দে যদি আপনার সমস্যা থাকে, তবে আপনের জানা দরকার ‘নারী’ ও ‘পুরুষ’ নামক যে সামাজিক কন্সট্রাকশন তাও এই পৌরুষেয় সমাজেরই অবদান। তাই ‘নারী’ নামক শক্তির এবং ‘পুরুষ’ নামক গালির লায়াবিলিটি এই সমাজরে নিতে পারতে হবে বা, এইটাও নারীবাদের একটা কাজ, সমাজরে প্রস্তুত করা যেন কালে সমাজ তা নিতে পারে।
.
আরেকটা যে দিশা দিলেন বার্গম্যান সেইটা হইল, পার্ফর্মেন্স একটি অতিসাংস্কৃতিক ঘটনা; যেকোন পার্ফর্মেন্সই যেকোন সমাজে চালু থাকতে পারে। সেইটা দিয়া সমাজের গুণাগুণ যাচাই হইতে পারে না; মেদের খাটো পোশাক পরা বা সিগারেট খাওয়া বা যৌন স্বাধীনতা এগুলা পুরুষতান্ত্রিক সমাজেও চালু থাকতে পারে। মানে এগুলা দিয়া সমাজের শোষণতান্ত্রিক চরিত্র উদঘাটন করা যাবে না। সুতরাং তা না করাই ভালো; তাতে ডিসকোর্স মাডল করাই হয়, ভিজিবিলিটি নষ্ট হয়। আপনার যা যা করার অধিকার আছে বইলা আপনে মনে করেন, তা তা করার অধিকার আপনে আলাদা আলাদাভাবেই প্রতিষ্ঠা করার লড়াই চালাইতে পারেন। এবং সেইখানে আপনে কী কী বাধা ফেস করতেছেন সেই বাধাগুলির গুণাবলী যাচাইসাপেক্ষে সেই বাধাগুলিকে অপরাপর প্রাসঙ্গিক ডিসকোর্সের সাথে জোড়া লাগাইতে পারেন। কিন্তু এইটা করতে গিয়া পার্ফর্মেন্সগুলিকে স্মারক বানায় ফেললে চলবে না।
ইব্রাকর ঝিল্লী
Latest posts by ইব্রাকর ঝিল্লী (see all)
- এডিটোরিয়াল: গনতন্ত্র হারাইয়া কি পাইলাম: ফেসিবাদ নাকি বাকশাল? - মার্চ 27, 2024
- ইব্রাকর ঝিল্লীর ১২খান বাংলা কবিতা (বানান ইগনোর কইরেন পিলিজ) - ফেব্রুয়ারি 9, 2024
- বুক রিভিউ: মুহূর্তের ভিতর মুহূর্ত গইলা পড়ে - নভেম্বর 7, 2023