Main menu

এডিটোরিয়াল: ভারতের রাজনীতি অথবা দুনিয়ারই তো…!

২৩ ডিসেম্বর ২০১৪//

বাংলাদেশে পাওয়ারফুল সিনেমা বানাইতে শুরুতেই আপনার বলিউড বুঝতে হবে। বলিউড আর বলিউডের পাওয়ার বোঝার জন্য ভারতের রাজনীতির লগে বলিউডের রিলেশন বুঝতে হবে।

বলিউডি আর্ট বোঝার সুবিধার জন্য কংগ্রেসী আর বিজেপি–এই দুই ধরনের মুভি চিনতে পারার চেষ্টা করতে পারেন।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

কংগ্রেস বা বিজেপি বলিউড চালায়, এমন না বিষয়টা; বরং বলিউড ডিটারমাইন করে অনেকখানি যে নির্বাচনে কে জিতবে!

বলিউডে বিজেপির শুরু মে বি ১৯৫২ সালে আনন্দমঠ সিনেমা দিয়া; আর ক্লিয়ার-কাট কংগেসী সিনেমার শুরু ১৯৭৫ সালে শোলে দিয়া। কংগ্রেস বা বিজেপির রাজনীতির প্রতি পিপলের কনসেন্ট তৈির করার মতো পাওয়ারফুল সিনেমা আগে পাতলা পাতলা হইলেও ২০০১ থেকে বেশ ঘন হচ্ছে।

২০০১ সালে তৈরি হয় বিজেপি মুভি নায়ক; কিন্তু ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই পাওয়ারফুল কংগ্রেসী সিনেমা আইসা পড়ে মুন্নাভাই এমবিবিএস (২০০৩)। ২০০৪ সালে বিজেপি মুভি আসে একটা–ম্যায় হু না; কিন্তু নির্বাচনে এইটা খুব ভূমিকা রাখতে পারে নাই; কারণ, এইটা যখন মুক্তি পায় তখন নির্বাচন অর্ধেক হইয়া গেছে; আরেকটা সমস্যা ছিলো–এইটা বিজেপি মুভি হইলেও বেশ কিছু কংগ্রেসী এলিমেন্ট আছে! সম্ভবত এই কারণে যে, এই সিনেমার মাস্টারমাইন্ডরা ডিরেক্টর ফারাহ খানসহ কিছু মোসলমান।

২০০৪ সালের নির্বাচনে জিতলো কংগ্রেস।

পরের নির্বাচন হয় ২০০৯ সালে; তার আগে ২০০৬ সালে একটা বিজেপি মুভি আর একটা কংগ্রেসী মুভি মুক্তি পায়: কৃশ এবং লগে রহো মুন্না ভাই। কৃশ অনেকখানি বাচ্চাদের সিনেমা, বিজেপি বাচ্চা হইছে তারা, পরে কামে দেবে; কিন্তু ভোটার হয় নাই তখনো। তাছাড়া পরে মুক্তি পায় মুন্না ভাই সিক্যুয়েল, কৃশ আগে। ২০০৯ সালে কংগ্রেস টাইনা টুইনা আবার জেতে।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সফল কংগ্রেসী মুভি নাই; কিন্তু একাধিক বিজেপি মুভি আছে: রা ওয়ান এবং কৃশ-৩। পিকে কংগ্রেসী মুভি, বাট মুক্তি পাইলো নির্বাচনের পরে! ততক্ষণে বিজেপি জিতে গেছে, নরেন্দ মোদী প্রধানমন্ত্রী অলরেডি।

এমন পাওয়ারফুলই তো মুভির হওয়া উচিত একটা আর্ট ফর্ম হিসাবে, আমরা না হয় মেঘমল্লারে থাকা কন্টিনিউ করলাম আরো কিছুকাল!

//কমেন্টের জবাব//

যেই যেই স্টেট বলিউডকে মোটামুটি ঠেকাইতে পারছে তারা নর্থ ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল পার্টিও তো ঠেকাইতে পারছে মনে হইতেছে! তামিলনাডু ভাবতে পারেন এই ব্যাপারে, নর্থ ইন্ডিয়ান প.পা. মানে কংগ্রেস বা বিজেপি। তামিলনাডু থিকা কংগ্রেস খেদানোর তালে তালেই মনে হয় তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি খাড়া হইতেছে, বা ফিল্মের তালে পলিটিক্স! সব স্টেটের পুরা হিসাব তো করতে পারি নাই, কিন্তু মনে হইতেছে, বলিউড ঠেকাইতে পারা স্টেটগুলা বাদেই দিল্লির গদির ফয়সালা হইয়া যাইতে পারে!

বলিউড মানে এখন হিন্দু হিন্দু লাগলেও হিন্দি তো মোঘল ব্যাপার, বলিউডের নাচা-গানাও মোঘল কালচার, বা ধরেন, শায়েরী! মারাঠারা তো হিস্ট্রিক্যালি মোঘলের বশে না যাওয়া কালচার পালে, তাগো হিম্মতের গোড়া সেই ইতিহাসে থাকতে পারে।

দীলিপ কুমারের নাম পাল্টাইয়া হিন্দু নাম লইতে হইছে, ৫০/৬০ বছর পরে পর্দার নামেই হয়, শাহরুখ-সালমান পর্দায় রা ওয়ান বা বজরঙ্গি হইলেই হয়। সার্ভ করে ইমেজ, পার্সন না।

দলিতরা সিনেমা দ্যাখে বইলাই মনে হয়, সন্দেহ কেন হইতেছে!?

খুন করতে পারা লোকের ইজ্জত বাড়ছে গ্লোবালি; আমাদের র‍্যাব বা আইডিয়া অব ডার্ক জাস্টিস ভাবতে পারেন, লাদেন খুন বা আইএসের ক্রেজ ভাবতে পারেন…আদভানী বনাম মোদী, হিসাব মিলতে পারে…

 

মার্চ ২১, ২০১৭//

আমেরিকার লিবারালরা যেই রাস্তায় ধরা খাইলো, ভারতের লিবারালরা সেই রাস্তায়ই হাঁটতেছে! সো ফানি :)!

ট্রাম্পের অডিও ফাস কইরা লিবারাল বেকুবরা লাফাইছিল, ট্রাম্পকে যেন খুব ধরা খাওয়াইয়া দিলো! হাসছিলাম আমি; কইছিলাম, ঐ অডিওতে যারা ভোট দেবেন না তারা অলরেডি ডেমোক্রেট, আর যারা ট্রাম্পে ভরসা করতে পারতেছিলেন না যে, ট্রাম্প এনাফ মাসকুলিন কিনা, তারা পোক্ত হইলেন এইবার–নাহ্, ট্রাম্পরে দিয়াই হবে, আসল পোলা!

এখন ভারতে একই অবস্থা। আগে একবার গুজরাটের কসাই কইয়া মোদীরে জিতাইছে। মোদী কসাই হইলে যারা ভোট দেবেন না, তারা তো অলরেডি কংগ্রেস বা বাম! তাগো ভোট আরেকবার এনসিওর করার মানে কি, আজব!

ওদিকে, এনাফ কসাই কিনা সেই ব্যাপারে যাগো সন্দেহ আছিল তারা ভরসা পাইলো লিবারালদের ঐ গালিতে! হুম, মোদীরে দিয়াই হবে, মোদী ডেমোক্রেসির জামানা, কলিযুগের ক্ষত্রিয়, আদতে শূদ্র হইলেও!

এখন লিবারালরা রামরাজ্যের ডর দেখায়, হা হা! ওরে বেকুবগুলা, রামরাজ্য চায় ৬০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7}, ডরায় ৩০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7}! তাইলে রামরাজ্যের ডর দেখাইলে মোদী জেতে, নাকি হারে!!!

 

অক্টোবর ১০, ২০১৬//

ট্রাম্পের অডিও শুনি নাই, ট্রান্সক্রিপশনও শুনি নাই, অন্যদের আলাপে অনুমান হইলো একটা, মিলাইয়া দেইখেন…

আলাপটা জেন্ডার ইস্যুতে ঠেকলো কিন্তু! দেখা যাইতেছে, ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ আসলে ‘মেক আমেরিকা মাসকুলিন এগেইন’, আমেরিকার ভিরিলিটি ফিরাইয়া আনা।

তো, আমেরিকানা কইলে ‘মাসকুলিন’ বোঝে দুনিয়া, আমেরিকাই এই ভাবনা বানাইছে ফরেন পলিসি আর হলিউড দিয়া, সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারও বিরাট ঘটনা। দুনিয়ায় আরেক আসল পোলা আছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, সেইটা ভাঙ্গার পরে দুনিয়ার দামড়া তো একটাই আছিল–আমেরিকা!

আরো কিছু দামড়া গজাইছে এখন, টেররিস্ট এটাক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চায়না-কোরিয়ার টেকনোলজি–অনেক দিক দিয়াই নতুন নতুন দামড়া গজাইছে দুনিয়ায়। পুতিন আছেন আরেক দামড়া, রাশিয়ার ভিরিলিটি ফেরত আইছে পুতিনে।

সো, যেইটারে ট্রাম্পের অডিও ফাস কইতেছেন, সেইটা আসলে ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনে পজিটিভ এডিশন একটা, ট্রাম্পের ভিরিলিটির দাবি পোক্ত করা, মোদির ৫৬ ইঞ্চি ছাতির মতো ব্যাপার, হিলারির তুলনায় আগাইয়া যাওয়া।

ওদিকে হিলারি হইলেন দুনিয়ার বাদ বাকি দামড়াদের কাছে আমেরিকার পুসি হইয়া পড়া! ট্রাম্পের ভিরিলিটি ফাস হওয়ায় যারা ভোট দিবেন না, তারা আসলে আগে থেকেই হিলারির ভোটার, পাবলিকলি সাপোর্ট উঠাইয়া নেওয়া আসলে অনেক কিছু মিন করে না, এইটা হইলো, পাবলিকলি যে আর নিজেরে রেসিস্ট দাবি করা যায় না, সেক্সিস্ট দাবি করা যায় না, সেই ব্যাপার; এই একই কারণে ‘মেক আমেরিকা সেরা দামড়া এগেইন’ কইতে পারেন না ট্রাম্প! বাট লোকে বোঝে, ট্রাম্পের বলস্ আমেরিকার বলস্ সিগনিফাই করতেছে, হিলারির যে ফিজিক্যাল বলস্ নাই, তাই সিগনিফাইও করা যাইতেছে না।

ট্রাম্পের অডিও হিলারির ফিজিক্যাল পুসিরে আমেরিকার ভার্চুয়াল পুসি বানাইয়া দিছে, আমেরিকার মাসকুলিন প্রাইড ডরাইতেছে, চায়না-পুতিন দামড়া, আমেরিকা পুসি; আমেরিকানায় ইন্টারকোর্স  কইলে মাইয়াদের ‘ফাকড’ হওয়াই বোঝে, মানে পোলা/দামড়াদের জিতে যাওয়া।

লিবারাল-কনজার্ভেটিভ ডিসকোর্স, রেসিজম, ওবামাকেয়ার, যুদ্ধবাজ ফরেন পলিসি–সব ছাপাইয়া আমেরিকার ইলেকশন এখন দামড়ার বলস্-এ; এমনিতেও, ট্রাম্পরে ঠেকাবার ডেমোক্রেট কায়দা তো আগেই বেকায়দায় ফালাইছে দুনিয়ারে–কে বেশি কনজার্ভেটিভ, ডেমোক্রেট না রিপাবলিকান…:)!

তবু দেখা যাক, ইন্টারকোর্স/ভিরিলিটি/বলস্/পুসি’র এই ডিসকোর্সের বাইরে আমেরিকার কত পার্সেন্ট ভোটার যাইতে পারছেন, ইলেকশনে যে জিতবেন–তাতে কিছু ধারনা পাওয়া যাইতে পারে…

 

মার্চ ২২, ২০১৭

গুরুজি গুরমিৎ রাম রহিম সিং ইনসান। ইন্টারেস্টিং লোক। কংগ্রেসের ডিসকোর্সের লগে যায় ভালো। কড়া নেশনালিস্ট, কিন্তু বিজেপির এজেন্ডার বাইরে। বিজেপির লগে ফাইট দিতে কংগ্রেস এই গুরুজির হিন্দুত্বকে আপহোল্ড করতে পারতো।

গুরুজি দরকারে নিজেরে কামাইতে রাজি। খোদার কসম, সত্য কথা! পয়লা সিনেমায় গুরুজির হাতে অনেক বড় বড় পশম দেখা গেছিল, এখন কামাইয়া ফেলছেন। একদম বেপশম হাত এখন।

সিনেমায় গুরুজি সুপার হিউম্যান। হাতিরে আছাড় মারেন। শয়তানকে ইনসান বানান গুরুজি। এইটা করতে যাইয়া অবশ্য মডার্নিটির বাইরের, ইন্ডিজেনাস পিপলকে গুরুজি শয়তান হিসাবে দেখাইছেন–‘অসভ্য’ অর্থে, অন্য কোন ধর্মে গুরুজির ঘেন্না অতো নাই, খালি ইসলাম আর পাকিস্তান গুলাইয়া ফেলেন, এই যা।

কিন্তু গুরুজি যেহেতু কামাইতে রাজি, কংগ্রেস ওনার লগে কাম শুরু করলে এইসবও দরকার মতো কামাইয়া নিতে পারতেন ব্রান্ডিং-এর দরকারে।

কিন্তু কংগ্রেস গেল না, গুরুজিরে পিক করলো বিজেপি। গুরুজি শিখ, তারে নিতে পারলো বিজেপি, কিন্তু এই মাইনোরিটি স্পিরিচুয়াল লিডারকেও নিতে পারলো না সেক্যুলার হিন্দু ব্রাহ্মণ কংগ্রেস!

বিট্যুইন দ্য লাইনস ভাবতে পারতে হবে রাহুল গান্ধিরে, নাইলে রক্ষা নাই। ইন এনি মেজার, রাহুলের চাইতে মোদী ফ্লেক্সিবল, কংগ্রেসের ডাব্বা মারার রহস্য এইটাই।

 

জুন ১৬, ২০১৭

মা কালী

মা কালী

কলোনাইজড মগজগুলা ইতিহাস-সমাজ-ধর্ম কম কমই বুঝবার কথা। তারা তো কালী চিনবেন না, কালীর নাচও চিনবেন না, নজরুলের কবিতা বা বিজেপি-মোদী-আদিত্যনাথ-শিবসেনাও তো ততো বুঝবে না। বোঝার জন্য একটু চাইয়া দেখতে তো হবে! দেশেরগুলার মাঝে আবার ভারতভক্তি আছে দেদার, এরা বিজ্ঞানমনস্ক-সেক্যুলার নাকি, এরা ধইরাই নেবে, কোহলি তো আলবত সেক্যুলার, সে কেন কালীর রেফারেন্স দেবে, যদি দেয়, আনুশকা কি নিতো তারে!

 

নোট অন ২৬ মে ২০১৯: নজরুল আছিলেন কালী ভক্ত, বিজেপি তারে হিন্দিতে তরজমা করতেছে। মিলাইয়া ভাবেন এইসব :)!

 

১৮ মার্চ ২০১৭//

ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হইলো, ইন্ডিয়ারে ব্রাহ্মণের (আপার কাস্টের) বাইরে একজন প্রাইম মিনিস্টার বামেরা দিতে পারে নাই, কংগ্রেস পারে নাই, আগের জনতা পার্টিও পারে নাই, দিতে পারলো বিজেপি–সবচে কট্টর হিন্দুত্ববাদী হিসাবে পরিচিত দলটা! মোদী হইলেন ঘানচি–তেলের ঘানি টানা কম্যুনিটির লোক, প্রায় আনটাচাবল!

পশ্চিম বংগে (বাংলায়) যদি বিজেপি আসে, সেই ঘটনারে কেমনে মাপবেন তাইলে? কংগ্রেস, বামফ্রন্ট বা তৃনমূলকে হারাইয়া বিজেপির জিত হইলে কেমনে বুঝবেন ঘটনাটা?

ঐ তিনটা দলই আসলে তো আপার কাস্টের, মমতাও ব্রাহ্মণ, তার ক্যাবিনেটও। নামটা যদি খেয়াল করেন, তৃণমূল হইলো সংস্কৃতরে বাংলা বইলা চালানো, ডেমোক্রেটিক বাংলা না, ইংরাজি গ্রাসরুটের সংস্কৃত তরজমা অনেকটা। এই সংস্কৃতের টর্চার থিকা শূদ্ররা আজাদি চাইছে কয় হাজার বছর? বিজেপির কাছে বাংলার শূদ্র কি আজাদির তালাশে যাইতেছে, যেইটা লিবারাল থিকা কম্যুনিস্ট–কেউ দেয় নাই! খেয়াল করলে দেখবেন, বিজেপির হিন্দি ভাষাটা বাম বা তৃণমূলের চাইতে কম হিন্দুত্বভরা! বিজেপির জয় আসলে কি ডেমোক্রেটিক ভারতে হিন্দু ধর্মকে আখেরে শূদ্রের দখলে নিতে পারা? যতই ভূয়া হৌক, আজাদির একটা ফিলিং পাইতেছে কি শূদ্র হিন্দুরা? বাম বা কংগ্রেস বা তৃণমূল কি ডেমোক্রেটিক না হইয়া বিজেপিরে ঠেকাইতে পারবে!?

 

মার্চ ২৪, ২০১৭//

না, এই আগুন ভারতের ইন্টার্নাল এফেয়ার লইয়া আমার ভাবনা থামাইতে পারে নাই।

রাজিব গান্ধির রেসিয়াল সুবিধা আছিল, রাহুলের সেইটা নাই। নিজে উঁচা কাস্ট, তার উপর বিয়া করছেন ইউরোপিয়ান হোয়াইট। আসল পুরুষ। হোয়াইট হবার সুবিধা সোনিয়াও পাইছেন। ইউরোপে সোনিয়া ল্যাটিনো হইতেও পারে, ভারতে হোয়াইট।

বাংলাদেশেও হোয়াইটের এমন ইজ্জত পাইবেন। হোয়াইট মাইয়া বিয়া করতে পারলে ভালো ফিল্মমেকার বা কবি-ক্রিটিক-থিয়োরিস্ট হিসাবে অর্ধেক আগাইয়া গেলেন যেন; আপনের ব্যাপারে সমাজ অনুমান করে–দুই সাইজ বড়ো জাইঙ্গা লাগে আপনার!

আরো আগে যান। মাইকেল যেমন কালা কায়স্থ আছিলেন। ব্রাহ্মণরা তারে ইজ্জত দিতেছে না। এই ব্রাহ্মণদের ডিফাই করবে কেমনে মাইকেল? খৃস্টান হই দুইজন সাদা মাইয়া বিয়া কইরা কড়া রিভেঞ্জ নিলেন। ক্ষত্রিয়- ব্রাহ্মণ সাদাদের উপর খেইপা রামকে বানাইয়া দিলেন কাপুরুষ! সাদা গৌরের লগে হোমোসেক্সুয়ালিটি চালাইছেন, উঁচা বর্ণের ফর্সা মাইয়া পাবার উপায় আছিল না নিজে কালা বইলা। মনে রাখবেন, মাইকেল লইয়া যেই ভাবনাগুলা পাইছেন আগে, তার প্রায় পুরাটা ভূয়া। ইন্ডিয়ান ব্রাহ্মণরা কতটা কনজার্ভেটিভ সেইটা সোজাসুজি তত বুঝেন না। ভাইবা দেখেন, আমাদের হাসান মাসুদ বা ফজলুর রহমান বাবুর কালারের কাউকে নায়ক হিসাবে পাইছেন কোলকাতায়? বলিউডেও প্রভু দেবা কিছুদিন পরেই ক্যামেরার পিছে গেছে। হলিউডে হ্যালে বেরি টাইপের ব্লাক বিউটির কনসেপ্ট আসার পরে কোলকাতায় দুয়েকজন কালা মাইয়া স্টার পাইতে পারেন, তাও আর্টি সিনেমায়।

পলিটিক্সে দেখেন, এমনকি মার্ক্সবাদী দলও ব্রাহ্মণের দখলে!

রাহুল দুইভাবে ধরা। ইন্ডিয়ান মাসকুলিনিটি কলোনিয়াল রিভেঞ্জ হিসাবে এখন হোয়াইটকে গ্যাঙ রেপ করে। এই রিভেঞ্জের আওতায় মোসলমানের লাশও আছে। সো, রাহুলের সাদা রক্তের সেই রেসপেক্ট নাই আর।

আবার, পোস্ট কলোনিয়াল কনটেক্সটে ইন্ডিয়ান কাস্টের হিসাবে রাহুল চন্ডাল ক্যাটেগরির পোলা, হাইব্রিড/খিচুরি :)!

ইন্ডিয়ার লিবারাল আইকনরা ইজ্জত হারাইছেন।

পোস্ট কলোনিয়াল ইন্ডিয়ার ডেমোক্রেসিতে ক্ষত্রিয় হইয়া উঠতেছে শূদ্রের পোলারা। ফানি থিং হইলো, এমন কাহিল দশার মালুম নাই লিবারালদের, তারা উল্টা ওভার কনফিডেন্ট হইয়া উঠছে!

বলিউডের লিবারাল প্রোপাগান্ডা সিনেমাগুলা খেয়াল করেন। শোলে বা মুন্না ভাই’র ভিতর ওভার কনফিডেন্স নাই, কিন্তু পিকের কথা ভাবেন। ৫০০ কোটি ব্যবসা করতে হয়তো ৫ কোটি টিকিট বেচা দরকার। তার মাঝে ভোটার কত, ৩ কোটি? ৩ কোটি ভোট ৮০ কোটি ভোটারের মাঝে কত পার্সেন্ট? কিন্তু এই লিবারাল বেকুবরা ভাবলো– আমাদের তো এখন আর বেলিবারালদের লাগে না! আমাদের তাই শোলের মতো সমাজকে সেজদা দেবার দরকার নাই; আমরা এখন পিকে বানাইয়া থাপ্পড় দিবো!

এই ওভার কনফিডেন্স লিবারালদের ফ্লেক্সিবিলিটি আরো কমাইয়া দিছে। শিখ বা জৈন টাইপ যেইসব রিলিজিয়াস গুরুর লগে এজেন্ডার ততো তফাত নাই, ভায়োলেন্স প্রোমোট করে না শিবসেনার মতো, তাগো নিতেও রাজি না এই লিবারালরা। এরা হাত দিয়া নিজেদের গোয়া লাগড় পাইতেছে না দেমাগে, টয়লেট টিস্যু দিয়া মোছাবার জন্যও চাকর রাখে প্রায়।

দেখা যাক, বিজেপির বগলের গন্ধে এদের হুশ ফেরে কিনা, কত দিনে!

 

জুলাই ২৬, ২০১৫//

দেশপ্রেমী সিনেমার পোস্টার

দেশপ্রেমী সিনেমার পোস্টার

 

দেশপ্রমী নামে ১৯৮২ সালের একটা হিন্দি ছবির পোস্টার এইটা; ইন্ডিয়ার ফ্রিডম ফাইটার অমিতাভ ১৯৪৭ সালের পরেও ডোমেস্টিক ভিলেনদের বিরুদ্ধে ফ্রিডম ফাইট চালাইয়া যাইতাছেন–মাস্টার হিসাবে, মাস্টারমাইন্ডও সিনামার।

আর উত্তম কুমার হইলেন ভারতনগর নামের একটা বস্তির চারটার ভিতর বাঙালি নামের একটা অংশের ডন; আরো তিনটা অংশের নাম হইলো পাঞ্জাবি, মাদ্রাজি এবং মুসলিম।

সো ইন্টারেস্টিং! ভারতে অমিতাভ আর উত্তমের পজিশন সো স্টানিংলি সিম্বলাইজড…ফিল্ম হিস্ট্রি আর পলিটিক্যাল হিস্ট্রি–সেইখানে হিন্দি এবং অন্যান্য, বাঙালি আর মোসলমান যেমনে দেখা হয়…ইত্যাদি…!

 

জুন ২৭, ২০১৭//

ফারহান আখতারের ‘দিল চাহতা হ্যায়’ সাকসেসফুল সিনেমা খুবই, বলিউডের লোকেরা এই সিনেমার সাকসেসের ভিতর দিয়া দরকারি একটা মেসেজ পাইছে, কনফার্ম হইছে, তাই খুশী। এই সিনেমারে পালাবদলের শুরু হিসাবে ধরেন অনেকে। কিন্তু মেসেজটা কি, কেন খুশী হইলেন তারা, পালাবদল হইয়া কোনখান থিকা কোনখানে গেল?

মেসেজটা হইলো–ভারতের ছোটলোকদের আর পাত্তা দেবার দরকার নাই, বলিউড স্বাধীন হইলো যেন, ছোটলোকদের কাছে টিকিট না বেইচাও বলিউড চলতে পারে। ভারতের মিডল ক্লাস এতোটা বড় হইছে যে, তাগো কাছে টিকিট বেচতে পারলেই সিনেমা সুপারহিট হইতে পারে। বাস্তবে কারা কত টিকিট কিনছে সেই জরিপের চাইতে আন্দাজ কইরাই অবশ্য ঐ অনুমানটা করা হইছে :)! তো, ছোটলোকরা হইলো আনকালচার্ড, বাচ্চা অডিয়েন্স–ম্যাচিউর হয় নাই, তাগো কারণে পাতলা রস/ভাবের সিনেমা বানাইতে হয়, সামাজিক কোড তোয়াজ করতে হয় খুব, আর্টিস্টের ফ্রি উইল দম নিতে পারে না, ‘ফাইন আর্ট’ করার উপায় নাই ছোটলোকদের পাত্তা দিলে!  তাই খুশী তারা।

তাইলে পালাবদলের কি অর্থ পাইলাম? এইবার বলিউড লইয়া আমজনতার বদলে কেবল মিডল ক্লাসের কোলে বইসা থাকা যায়, বলিউডের ‘ফাইন আর্ট’ কেবল মিডল ক্লাসের কালচার্ড কোলে আন্ডা পাড়লেই হবে, আমজনতা হইলো অডিয়েন্স হিসাবে আর্টের পাদের যোগ্য, কিছু লোক এই বেকুব অডিয়েন্সের নাকে পাদুক।

সবচে খুশী হইলেন, বলিউডি সেক্যুলাররা। এইবার ধর্মরে আর অতো পাত্তা দেবার দরকার নাই, সমাজের লগে কম্প্যাটিবল আর্ট বানাইতে হবে না, এইবার নিজের লাগাম ছাইড়া দেওয়া যায়। এই সেক্যুলারদের কাছে পয়সার জন্য, টিকিট বেচার জন্য ধর্ম আর সমাজকে পাত্তা দেওয়াটা নিজের উপর ঘেন্না হবার কারণ, দিল চাহতা হ্যায় হইলো নিজের ইজ্জত ফেরত পাবার খবর! এখন ভাবেন, ওনাদের এই মুক্তির ফল কেমন! ভারতের ছোটলোকদের লগে কানেকশনের গরজ থাকলো না আর সেক্যুলারদের।

বলিউডের এই স্বাধীনতার খবর দিয়া যখন সেক্যুলাররা ভারতের রাজনীতির হিসাব করলো তখন ঝামেলাগুলা টের পাইলো একটু! একটা সিনেমা সুপারহিট হইতে যদি ১০০ কোটি রুপি লাগে, তাতে টিকেট বেচতে হয় হয়তো ১ কোটি মাত্র! ভারতের মোট ভোটারদের ৫০ ভাগের এক ভাগও লাগতেছে না! তাইলে কংগ্রেস বা সেক্যুলারদের পাওয়ারে যাইতে হইলে বলিউডের ঐ ১ কোটিরে পাত্তা দিলেই চলতেছে না! তাগো লাগবে ৩০-৪০ কোটি ভোট, সেক্যুলারদের একেকজন তো আর কুড়ি ভোট দিতে পারে না, ভোটে ছোটলোক আর কালচার্ড/শিক্ষিত/মিডল ক্লাস/সেক্যুলার সমান!

সিনেমা হইলো পলিটিক্সের কালচারাল উইং/ব্রাঞ্চ। বলিউডে সেক্যুলার পলিটিক্সের কালচারাল উইং যখন ছোটলোক/দলিতকে পাত্তা দেবার দরকার পাইলো না, তখন সেক্যুলার পলিটিক্স ফেল মারতে বাধ্য! বলিউডের সেক্যুলাররা রাষ্ট্রের ক্ষমতার গুরুত্ব বুঝলেন না, সেক্যুলার পলিটিক্সের কালচারাল উইং হিসাবে নিজেদের রোলটা ঠিকঠাক ধরতে পারলেন না, আমরা কি বলিউডের এই সেক্যুলারদের বেকুব কইবো!?

এখন ছোটলোক/দলিতকে পাত্তা দেওয়া এবং না দেবার তফাতটা কেমন হয়, হইলো? বলিউডের সেক্যুলাররা যখন ছোটলোকের রুচি, সমাজ এবং ধর্মকে পাত্তা দিছে তখন তাগো সিনেমাতে ধর্ম আর সমাজের রুচিকে সাবধানে ডিল করছে। তাতে একটা কানেকশন হইছে, সেক্যুলাররা মনে শান্তি পায় নাই আপোষের কথা মনে থাকায়, কিন্তু আমজনতারে লগে পাইছে, আমজনতার ভোট পড়ছে সেক্যুলারদের বাক্সে।

খেয়াল করেন, সেক্যুলাররা যখন আমজনতারে পাত্তা দিয়া ধর্মরে আনছে সিনেমায় তখন ‘নায়ক’ সিনেমা হইছে, শিবাজী নামটারে ইউজ কইরা আজকের দিনের পলিটিক্সে ডেমোক্রেটিক রেভল্যুশন দেখাইছে সেক্যুলাররা। মাঠ ছাইড়া দেবার পরে কি পাইলাম আমরা? এখন এক শিবাজী খাড়া হইতেছেন যিনি হিন্দুত্বের মহানায়ক; সেক্যুলারদের হিন্দু নায়ক হইয়া উঠলেন হিন্দুত্বের সুপার হিরো! আমরা আরো সুপারহিরো পাইছি বলিউডে/ভারতের বিজেপির হাতে–’কৃশ’ পাইছি আমরা, ‘ছোটা কৃষ্ণা’ আর ‘ছোটা ভীম’ পাইছি! সেক্যুলাররা ধর্ম লইয়া যখন ব্যবসা করছে তখন ‘ভীম’ হইছে ডিশওয়াশিং সাবান, এখন ভীমকে পাইতেছি চাইল্ড সোলজার হবার আইকন হিসাবে! বলিউড পিকে বানাইলো ছোটলোক-সমাজ-ধর্মকে পাত্তা না দিয়া, এগো লগে তো ব্যবসা করার দরকার নাই আর, কেবল মিডল ক্লাসের লগে ব্যবসা করলেই সিনেমা সুপারহিট। সেক্যুলাররা যখন পিকে বানাইয়া খুশী খুশী হইয়া ওঠে মিডল ক্লাসের পয়সা পাইয়া, বিজেপি তখন রামরহিম সিং আর আর আদিত্যনাথকে দিয়া কোটিখানেক ভোট বাগাইয়া লয়!

হিন্দুত্ব পুরা ভারতকে দখল কইরা ফালাইলো, কাভারঅলা হিন্দু কংগ্রেস বা হিন্দু সেক্যুলার না, আসল শিবসেনা, আরো করতেছে। ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স, ইন্ডিয়াননেস বা পোস্টকলোনিয়ালিজমের লেবাস, এমন অনেক অনেক ফ্যাক্টর আছে; তবু দিল চাহতা হ্যায়ের দেওয়া বলিউডের ফ্রিডমও কম বড়ো ফ্যাক্টর না! বলিউডি সেক্যুলাররা ভরসা হারাইছে আমজনতার। এই আমজনতার লিডার হইতে পারছিল সেক্যুলাররা, সেক্যুলার হাতে আছিল আমজনতার লাগাম–এক পক্ষ আরেক পক্ষরে পাত্তা দেবার মহানিশান হইলো ‘শোলে’! তারপর বলিউডি সেক্যুলাররা নিজেদের আর্টিস্ট মনের লাগাম ছাইড়া দিছে, তার লগে ছুইটা গেছে আরো একটা লাগাম, সেই লাগাম এখন কার হাতে? বিজেপির। বলিউডের সেক্যুলারদের উপর আমজনতার সেই ভরসা থাকলে, আমজনতার মনের লিডার হইয়া থাকলে, দিল চাহতা হ্যায়ের অহংকার না দেখাইলে হয়তো রাজকুমার হিরানির এক সিনেমা দিয়া গরু ইস্যুর মোকাবেলা করতে পারতো সেক্যুলাররা! কিন্তু সেই আশা আর নাই খুব সম্ভব। দেশে দেশে হামবড়া সেক্যুলাররা সমান বেকুব হইয়া থাকেন।

 

আগস্ট ২৯, ২০১৮//

পাকিস্তানের পিএম ইমরান খা লইয়া ভাবতেছেন বাংলাদেশের অনেকে। ইমরানে দিশা পাইতে চাইতেছেন রাজনীতির। তাই যদি হয়, ইমরানকে চিনতে পারতে হবে তো আগে! কেন ইমরান কামিয়াব হইলেন, কোথায় ইমরান যুদা পিপিপি আর মুসলীম লীগ থিকা, বাংলাদেশে যারা রাজনীতি কইরা ইমরানের মতো কামিয়াব হইতে চান তারা ইমরানের কাছে কোন কোন ছবক পাইতে পারেন?

আমার তুলনায় অনেক অনেক বেশি পড়া ভাবুকেরা আছেন এই ব্যাপারে, কিন্তু তাদের ভাবনার লাইনে ঝামেলা আছে বইলা মনে হয় আমার! আমি তাই চিন্তার একটা লাইন প্রস্তাব করতেছি, দেখি, ওনারা আরেকটু সোজা রাস্তার হদিস পান কিনা আমার প্রস্তাবে :)!

আর্ট-কালচারে ‘স্টাইল ভার্সাস কন্টেন্ট’ নামে পুরানা একটা তর্ক আছে মনে হয়; এই তর্কে দুইটা পক্ষই একটা পয়েন্টে একমত আসলে! সেইটা হইলো, স্টাইল আর কন্টেন্ট যুদা দুইটা জিনিস। কিন্তু চোখা নজরে চাইয়া দেখেন, স্টাইল নিজেই কন্টেন্টও! ইমরান খা আর বাংলাদেশের রাজনীতির তুলনায় আর্ট-কালচারের এই তর্কটা আনার কারণ আছে; কারণটা বুঝতে ইমরান খা’র তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) আর বাংলাদেশের ‘গণসংহতি আন্দোলন’–এই দুই দলের স্টাইল আর কন্টেন্ট লইয়া আলাপ করা যাইতে পারে; ভারতের আম আদমী পার্টিও আলোচনায় আনা যায় অবশ্য।

এই ৩টা দলের পলিটিক্যাল এজেন্ডা একই; ৩টা দলই আসলে ইউরোপের ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট’ বানাবার প্রস্তাব দিতেছে! এই অর্থে কন্টেন্ট একই ৩ দলের, কিন্তু স্টাইল যুদা; মানে, কন্টেন্ট আর স্টাইল যদি যুদা ধরি শুরুতে।

স্টাইলে দেখেন, আম আদমী আর পিটিআই আমজনতার সবচে কমন বুলি হিন্দি আর উর্দু লইতেছে; পাকিস্তানে এবং স্পেশালি ভারতে আরো কয়েকটা বড়ো বড়ো ভাষা/বুলি আছে, সেই হিসাবে মনে হইতে পারে বাংলা গণসংহতিরে অনেক আগাইয়া দেবার কথা; কেননা, বাংলাদেশে তো বাঙালি ৯০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7}’র উপরে মনে হয়! কিন্তু গণসংহতির বাংলাটা খেয়াল করেন; এই দলের জনমের দিনের প্রোগ্রামের পোস্টারের কয়েকটা শব্দ পড়েন: আকাঙ্খা, সার্বভৌম, ঐক্যবদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, প্রতিষ্ঠায়… এর লগে নামটাও রাখেন, ‘গণসংহতি’। এরা নাকি ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’ বানাইতে চায়। গণতান্ত্রিক একটা হিসাবে দেখবেন, এই শব্দগুলা বড়জোর ১৫{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7} বাংলাদেশীর বুলির ভান্ডারে আছে, ‘সংহতি’ শব্দটা আরো কম হবে বইলা আমার আন্দাজ, ৭-১০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7}! ৮০/৮৫{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7} বাংলাদেশীর বাংলা না লইয়া আপনে যখন এমন বাংলা বানাইবেন, তখন আপনে কি আদৌ গণতন্ত্র চাইতেছেন? আপনের এমন বাংলায় আমজনতা কেমনে আপনের গণতান্ত্রিক কসমের পয়গাম পাইবে? আরো বড় ইস্যু হইলো, আপনের ওয়াজ বা বক্তিমা বা মেসেজ কত {855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7} বাংলাদেশীর মনে ঢুকতে পারলো? আপনে কি আদৌ আমজনতার লগে কথা কইতে চাইতেছেন এইসব শব্দের পোস্টার বানাইয়া?

এইখানে আইসাই আপনের স্টাইল কিন্তু কন্টেন্ট হইয়া উঠতেছে! ইমরান বা আম আদমীর স্টাইলও কন্টেন্টই, কিন্তু ঐ দুই স্টাইল ভাষার দিক থিকা আম হিন্দি বা উর্দু হবার কারণে মনে হয় যেন, ঐগুলা স্রেফ স্টাইল, কন্টেন্ট হইলো তাগো এজেন্ডা বা ইশতেহার বা পলিটিক্যাল কসম!

তাইলে উপরের এই আলাপের মোদ্দা কথা হইলো, বাংলাদেশের আমজনতার মনে ঢুকতে হইলে আপনের ভাষার স্টাইল, মানে আপনের বাংলা পাল্টাইতে হবে, আমজনতার বাংলা শব্দ, ভাব আর ভঙ্গি লইতে হবে! আমজনতার ভান্ডারে মুন্ডা, ফারসি বা ইংরাজি শব্দ আছে বহুত, কিন্তু বদলে আপনে যদি সংস্কৃত গোড়ার শব্দে বেশি পিরিতি দেখান, তাইলে তো আপনে আর জনতার জন্য পলিটিক্স করতে আসেন নাই, আপনে সংস্কৃতের লাঠিয়াল মাত্র! আপনে যদি কলোনিয়াল কোলকাতাই ভঙ্গি ধরেন বাংলাদেশের আমজনতার ভঙ্গি ডিনাই কইরা, সেইটা তাইলে আমজনতায় আপনের ঘেন্না; জনতায় এমন ঘেন্না লইয়া গণতন্ত্রের বুলি কপচানোর হক নাই আপনের! আপনের স্টাইল এমন হইতে হবে সেইটা যেন নজরেই না পড়ে জনতার, আপনের ইশতেহারের মেসেজটাই যেন ডাইরেক্ট ঢোকে জনতার মনে! ছোট্ট একটা নজির দেখাই: ‘ছয় দফা’র বদলে ধরেন কইলেন, ‘ষড় ধারা/বিধি’, যেমন ঐ বাংলায় লেখেন ‘ষড়ঋতু’… আপনারাই ভাবেন, কেমন হইতো ব্যাপারটা!?

তবে ইমরান খা’র পলিটিক্যাল সিগনেচার/দস্তখত আসলে আরেকটা! সেই ব্যাপারে খা সাহেব আম আদমীরে ছাড়াইয়া গেছে; ওদিকে উর্দু বা হিন্দি লইয়া বাংলার মতো এমন প্যাচ আর গিট্টু নাই! কেননা, ঐ দুই ভাষায় বিদ্যাসাগরের মতো কোন এলিটিস্ট বামুন আছিল না! তাই হিন্দি বা উর্দুতে বাংলার মতো আমজনতার থিকা দূরে যাবার এজেন্ডা আছিল না; এইটা বুঝতে মির্জা গালিবের কথা ভাবেন: মির্জা গালিবের সময়ের বাংলার কোন কবিরে যে আমরা আর পড়তে পারি না, তার আসল কারণ হইলো বিদ্যাসাগরের বাংলা ধোলাই!

যাই হৌক, কইতেছিলাম খা সাহেবের পলিটিক্যাল দস্তখতের কথা। খেয়াল করেন, খা সাহেব ইউরোপের ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট’ বানাইতে চাইতেছেন পাকিস্তানে, কিন্তু কইতেছেন ‘মদিনা সনদ’-এর কথা! এতে মনে হইতে পারে, উনি বুঝিবা ‘শরীয়া’ আইন জারি করতে যাইতেছেন পাকিস্তানে! কিন্তু না। এই কথায় আসলে একটা স্টেটমেন্ট দিতেছেন ইমরান: ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট’ বানাইতে ইউরোপের ছবক দরকার নাই! ইউরোপের লিবারালিজমের বাইরে থাইকাও যে ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট’ বানানো যায়, এমন একটা দাবি করতেছেন ইমরান!

ইমরানের কাছে মদিনা সনদ মানে স্রেফ রাষ্ট্রের কম্যুনিটিগুলার চুক্তি, যেই চুক্তির বলে কম্যুনিটিগুলা মিলতে পারে, এবং শান্তিতে রাষ্ট্র বানাইতে পারে, যেই রাষ্ট্র সবগুলা কম্যুনিটির জন্যই লাভের! খেয়াল করলে দেখবেন, ইমরানের মদিনা সনদ আসলে রুশোর ‘সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট’!

ইমরানের পলিটিক্যাল দস্তখত হইলো, পাকিস্তানে ওয়েলফেয়ার স্টেটের কনটেক্সচুয়ালাইজেশন! ওয়েলফেয়ার স্টেটের আর সব খাম্বাও আস্তে আস্তে কনটেক্সুয়ালাইজ করবেন ইমরান, আমার আন্দাজ। ‘সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট’ বাদে যেমন ধরেন, জাস্টিস ইমরানে ইনসাফ, রাইটস হবে সবার হক; আইনের নজরে সবাই সমান, এইটা ইমরান পাইতেছেন ইসলামেই। যাকাত, বায়তুল মাল–এইসবের ভিতর দিয়া কনটেক্সুয়ালাইজ করা সম্ভব ট্যাক্স, পেনশন, মুসাফিরের জন্য সরাইখানা বা ওল্ডহোম।

আরেকটু খেয়াল করলে দেখবেন, বাংলাদেশেও মদিনা সনদের আলাপ তোলা আছে; ইমরানের লগে বাংলাদেশের এই আলাপের তফাত হইলো, বাংলাদেশে এইটা গদি দখলে রাখার ধান্দা, ইমরানের কাছে যেইখানে মদিনা সনদ মানে গণতন্ত্রে যাবার তরিকা!

ইমরানের জন্য পোস্টকলোনিয়াল গণতন্ত্রে যাওয়া সোজা হবার কারণ হইলো, ইউরোপের ওয়েলফেয়ার স্টেটের পাটাতন হিসাবে যেই সব আইডিয়া আছে, তার প্রায় সবগুলা পাকিস্তানের কালচারে কনটেক্সুয়ালাইজ করা যায়! কিন্তু আম আদমীর ভারতে এইটা কঠিন; কেননা, প্রি-সুলতানী আমলের ভারতে ‘সবাই সমান’ বইলা কোন আইডিয়া নাই! তেমন আইডিয়া পাইতে হইলে অন্তত বৌদ্ধ ধর্মে যাইতে হবে ভারতের! ভারতের পলিটিক্সকে বিজেপি এমন একটা জাগায় নিয়া গেছে যে, মোগল বা সুলতানী আমল ভারতের রাজনীতির আইডিয়াল হইতে পারবে না আর; অশোকের ভারতে হয়তো কিছু আশা আছে।

বিজেপির গোড়া কলোনিয়াল ইংরাজের ভারতেই জোর  পাইছে মনে হয়, তবে কংগ্রেসের পক্ষে এইটা ওভারকাম করার মওকা আছিল! কিন্তু ইন্দিরা গান্ধি ভারতের গণতান্ত্রিক সম্ভাবনা খুন করেন। ইন্দিরা কংগ্রেস বিরোধী গণতান্ত্রিক দলকে খুন করছেন, সেই চিপা দিয়া বিজেপি বড়ো হইছে। এর লগে আছে ভারতের লিবারালদের হামবড়া ভাব। ভারতের লিবারালদের হামবড়া ভাবটা বুঝবেন বলিউড দিয়া; বলিউড হইলো নিশানা, ভারত কোন দিকে যাইতেছে সেইটার চিনা দেখা যায় বলিউডে। শোলে বা দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে–এইসব সিনেমায় ভারতের আমজনতারে, সমাজকে পাত্তা দিছে ভারতের লিবারালরা; কিন্তু দিল চাহতা হ্যায় থিকা দেখা যাইতেছে ভারতের লিবারালরা সমাজের তোয়াক্কা করে নাই আর। কাভি আল বিদানা কেহনা বানাইছে তারা, আগের সিলসিলার বদলে। ব্যাপারটা ভালো বা খারাপ সিনেমার না; ব্যাপারটা হইলো, সমাজ আর আমজনতার লগে লিবারালদের ভরসার রিশতা আলগা হইয়া যাওয়া! এই ঘটনা হলিউডেও ঘটছে আমার ধারনা, ‘ব্রোকব্যাক মাউন্টেন’ সিনেমার অস্কার পাওয়ার ভিতর দিয়া আমেরিকার লিবারালদের লগে আমেরিকার আমজনতার ভরসার রিশতা আলগা হওয়া শুরু হইছে মনে হয়।

ভারতের লিবারালদের ঐ হামবড়া ভাব আর ইন্দিরার পলিটিক্স খুনের ভিতর দিয়া বিজেপির দখলে চইলা যায় হিন্দুধর্ম, আমরা পাই কৃষ বা ছোট ভীমের মতো সুপারহিরো। কংগ্রেসের ভিতর এমনিতেই মিথিক্যাল ইন্ডিয়া আছিল অনেকখানি, তাই বিজেপির গোড়াও; তাই আমজনতার লগে লিবারালদের ভরসার রিশতা আলগা হবার মওকায় বিজেপির কব্জায় যাইতে থাকে আমজনতা। ভোটাভুটির মাঝে পপুলিজমের রিস্ক থাকে প্রায়ই, বিজেপির ভিতর দিয়া গণতন্ত্র হারাইয়া জিতে যায় পপুলিজম।

ইমরানের সুবিধাগুলা বাংলাদেশে হাজির আছে। বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তান ইতিহাসের কখনো না কখনো পোস্ট-কলোনিয়াল হইয়া উঠবেই। ওয়েস্টে লিবারালিজমের পতনের এই কালে পোস্ট-কলোনিয়ালিজম আরেক ধাপ আগাইলো মনে হয়; চীন-রাশিয়া ক্যাটালিস্ট হিসাবে কাম করবে।

ভারতে পোস্ট-কলোনিয়াল পলিটিক্সের সুরত হিন্দুত্বের দখলে গেছে, বিজেপির পপুলিজম ভারতের জনতারে খুনী-রেপিস্ট বানাইতেছে, হিন্দুত্বের বাইরে থাকা লোকেরা খুন হইবেন, রেপড হইবেন!

পাকিস্তানে পোস্ট-কলোনিয়ালিজম ইমরানের ভিতর দিয়া হাজির হইছে বইলাই আমার আন্দাজ; এবং এইটা ইসলামিজমের বদলে কনটেক্সুয়ালাইড গণতন্ত্র আর ওয়েলফেয়ার স্টেট দেবে। ইমরান পুরা কামিয়াব না হইলেও পাকিস্তানের রাজনীতির নয়া দিশা অলরেডি দিছে ইমরান নিজের ঐ পলিটিক্যাল সিগনেচার দিয়া!

বাংলাদেশে? আমরা যদি আমজনতার কাছে না যাই, আম বাংলায় পলিটিক্স না করি, কনটেক্সুয়ালাইড গণতন্ত্রের দিকে আগাইতে না পারি তাইলে খবর আছে! বিজেপির বাংলাদেশি ভার্সন পাবো আমরা, স্পেশালি বিরোধী দল খুনের ভিতর দিয়া সেইদিকে আগাইতেছি আমরা! ভারতের মতোই বাংলাদেশেও গণতন্ত্র হারাইয়া জিতবে পপুলিজম!

তবে বেকায়দায় পড়তেই হবে ইমরানকে; জিজিয়া কর বা ওহাবী/সালাফি মতের শরীয়া আইন কায়েম না কইরা ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট’ বানানো আর কনটেক্সুয়ালাইড গণতন্ত্রের কসম ক্লিয়ার করলেও ইমরানের সমালোচনা হবে। কেননা, কয়েকটা জিনিস আপাতত করতে পারবেন না ইমরান: গণতন্ত্রের দুশমন কলোনাইজড মনের লিবারালরা এখনি ব্লাসফেমি আইন বাতিল বা হোমোসেক্সুয়াল বিয়ার আবদার তুলতে পারেন, এইসব ইস্যুতে মনে হয় ধানাইপানাই করবেন খা সাহেব, ক্লিয়ার-কাট পজিশন লইবেন না! রাষ্ট্রে মাইয়াদের হকের ব্যাপারেও ঝামেলায় পড়বেন হয়তো। ঐসব ওয়েস্টার্নাইজড লিবারালরা তখন ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট’ হিসাবে মানতে চাইবেন না।

খা সাহেবের জন্য সবচে ভালো হইলো, প্রাইভেট স্পেসে ফ্রিডম বাড়াইয়া দিয়া পাবলিক স্পেসে পাকিস্তানের আমজনতার সোশিও-কালচারাল মতামতকে পাত্তা দেওয়া। মানে হইলো: তুমি পাকিস্তানি, তুমি ঘরের ভিতর কি কি করো রাষ্ট্র সেইটা দেখতে যাবে না, কিন্তু বিনিময়ে পাবলিক স্পেসে তুমি কিছু জিনিস আপহোল্ড করতে পারবা না। যেমন, হোমোসেক্সুয়ালিটির আবদার চলবে না, মাইয়াদের হকের ব্যাপারে কতগুলা বাড়তি কথা চলবে না। ইমরানের উচিত হবে, ঠিক বা ভুলের হিসাব কম কম কইরা ডায়লগের ভিতর দিয়া কন্ট্রাক্ট সাইন করা: কোথায় কতটা ছাড় দিলে কে কোথায় কতটা পাবে? এমন একটা চুক্তির ভিতর দিয়া সব পক্ষই কিছু ব্যাপারে ছাড় দিয়া শান্তিতে থাকারে প্রায়োরিটি দিতে পারে…

 

মে ০৪, ২০১৭//

22

 

গীতা আর রাজু মহালি হইলেন নকশালবাড়ির এক ট্রাইবাল (শিডিউল কাস্ট) ফেমিলি। বিজেপির মোড়ল অমিত শাহ এই ফেমিলির বাড়ি বারান্দার ফ্লোরে যোগাসনে বইসা দুপুরে ভাত খাইছেন, কলা পাতায়। এই ঘটনার ৭ দিনের ভিতর গীতা আর রাজু মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতার বাড়িতে থাকা শুরু করছেন, বাচ্চারা আরেক আত্মীয়ের বাসায়। গীতা হিন্দিতে জানাইছেন, তাগো ভালো লাগছে, তাই তারা তৃণমূলে যোগ দিছেন; বিজেপির দাবি, গীতা-রাজুর বডি ল্যাংগুয়েজে কয়, তারা ডরাইছে, জোর কইরা তৃণমূলে নেওয়া হইছে তাগো। এই ঝগড়ায় সব পক্ষই একটা ব্যাপার চাইপা যাইতেছে, বা মিস করতেছে। আসেন ইমেজ পড়ি।

গীতার তুইলা দেওয়া ভাত কলা পাতায় খাইতেছেন অমিত শাহ, ছবিটারে ভারতের কনটেক্সটে বসাইয়া লন আগে। কনটেক্সটটা কেমন? উঁচা কাস্টের হিন্দু শূদ্রের হাতে খাইবেন না। এই কাস্টের আইডিয়ার ভিতর আবার খুবই নজরে পড়ার মতো, কিন্তু বলাকওয়ার বাইরে থাকা জিনিস হইলো রেস। ঐ উঁচা কাস্টের (ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়) লোকেরা আর্য, আমাদের দেশে যেমন ইরান-তুরান থিকা আসা মোসলমানরা আশরাফ মোসলমান–আর্যের আরেক ব্রাঞ্চ, আরেকটা ব্রাঞ্চ যেমন ইংরেজরা। রেস এবং কাস্ট সিস্টেমের এমন জটিল কনটেক্সটে পয়দা হইতেছে ঐ ছবি। গীতা আর রাজু হইলেন শূদ্র। ইন্টারেস্টিং হইলো, অমিত শাহ জৈন, হিন্দু না ঠিক। আবার, হিন্দু কইতে অনেকেই যেমন ধর্ম বোঝেন, বিজেপি বা রঠা হিন্দুরে দেখতেছে জিওগ্রাফি দিয়া, বিজেপির কাছে ধর্মটা হইলো ‘সনাতন ধর্ম’। জৈন সনাতন ধর্মেরই আরেকটা ব্রাঞ্চ বা ডাল–গোড়াটা একই ইন্ডিয়ান। তো, অমিত শাহ হইলেন, জৈন ক্ষত্রিয়। আর্য-শূদ্রের শরীলের ব্যাপারে যেমন কওয়া হয়, ছবিতে দেখেন, অমিত শাহ ফর্সা, গীতা কালা। যাই হৌক, বিজেপি হিন্দু ধর্মরে অমন কইরা ‘সনাতন ধর্ম’ হিসাবে দেখে বইলাই অমিত শাহ বিজেপির মোড়ল / প্রেসিডেন্ট হইতে পারছেন।

————————-

এই কনটেক্সটে তাইলে ছবিটা কি কইতেছে? উঁচা কাস্ট শূদ্রের হাতে খাইবেন না, এমন একটা কনটেক্সটে শূদ্রকে ইজ্জত দেবার রাস্তা বা তরিকাটা কেমন হবে– শূদ্রকে খয়রাত দেওয়া, নিজের ঘরে তুইলা লওয়া নাকি শূদ্রের হাতে খাওয়া? অমিত শাহ শূদ্রের হাতে খাইছেন, ছবি আছে, শূদ্রের বাড়ির ফ্লোরে আসন গাইড়া বইছেন, কলা পাতে ভাত খাইতেছেন, শূদ্র গীতা তুইলা দিতেছে ভাত-শালুন। ছবিটাই এমন স্টেটমেন্ট দিয়া দিলো যেইটা আর কইতে হয় না মুখে, এ এক এমনই স্টেটমেন্ট যার লগে গীতা-রাজুর ১৪ গোষ্ঠী তৃণমূলে যোগ দেবার লগে কোনই রিলেশন নাই। মেসেজটা হইলো, ওয়েস্ট বেঙ্গলের বাম বা তৃণমূল বা কংগ্রেসের যেই ব্রাহ্মণের দখলে সেই ব্রাহ্মণের দখলে নাই বিজেপি, বিজেপিরে হিন্দুত্ববাদী আর কম্যুনাল বইলা ঐ ৩ দল গালি দেয়, কিন্তু বিজেপির চাইতে ঐ ৩ দলই বেশি মানে কাস্ট সিস্টেম (এইখানে মনে একটা জানার খায়েশ হইলো, রঠার রান্নাঘরে ব্রাহ্মণ ছাড়া কোন শেফ/পাচক আছিলো?)।

ছবিটা লইয়া মজার সব কায়কারবার হইতেছে। এক জায়গায় দেখলাম, ছবির ফ্রেম থিকা গীতারে কাইটা দিছে। বিজেপির আগ্রহ হইলো, ছবিতে ৩/৪টা জিনিস এস্টাবলিশ করা।

১. আর্য-অনার্য ডিভিশনটা ক্লিয়ার করা/রাখা।

২. উঁচা কাস্ট শূদ্রের হাতে খাইতেছে।

৩. শূদ্রের ঘর ছবিতে ক্লিয়ার করতে হবে।

৪. শূদ্র যেমন গায়ের রঙে ক্লিয়ার করতে হবে তেমনি এই শূদ্রকে গরিবও হইতে হবে। সো, ছবির ফ্রেমে কলা পাতে ভাতটা থাকতে হবে। টেবিল নাই, ফ্লোরে আইডিয়াল গরিবের মতো বইসাই খাইতে হবে। গরিবানার লগে এমনে বসার একটা রিলেশন আছে; এমনে বইলে পেটে একটা চাপ পড়ে, চেয়ার টেবিলে যেই চাপটা থাকে না। তাই গরিবানার ভিতরে যেহেতু কম খাবার থাকার কথা, তাই গরিব ঐভাবে বইয়া খায় যাতে পেটে ঐ চাপের কারণে পাকস্থলি পুরা ভরার আগেই পেট ভইরা যাবার ফিলিং হয়। মানে হইলো, ঐ ভাবে বইসা আপনে কম খাইবেন।

সবগুলা ব্যাপারই অমিত শাহের ছবির ফ্রেমে রাখা হইছে। কিন্তু ঐ দল তিনটা এই ঘটনারে স্রেফ ধনী-গরিব, মানে ক্লাসের ইস্যুতে আটকাইয়া ফেলতে চায়, সেইটারই ভায়োলেন্ট এক্সপ্রেশন পাইতেছেন গীতারে কাইটা দেওয়া ফ্রেমে। বিজেপির কেবল ঐ ছবিটা দেখাইলেই হইতেছে, ছবিতেই স্টেটমেন্টটা ক্লিয়ার হইতেছে, আর ঐ ৩ দলের ডাইরেক্ট রিলিজিয়াস পলিটিক্স না করার কসম খাওয়া আছে। তাই তারা কইতেও পারতেছে না যে, অমিত শাহ জৈন, তার এই ভাত খাওয়ায় কাস্ট সিস্টেম লইয়া তেমন কোন স্টেটমেন্ট দেওয়া হইতেছে না! যদিও সেইটা কইলেও আসলে হবে না; কারণ, অমিত শাহের লগে ওয়েস্ট বেঙ্গল বিজেপির হিন্দু মোড়লও তো আছিল, এই মোড়ল দিলিপ ঘোষ অবশ্য কায়স্থ, ঠিক ফর্সাও না, কিন্তু কায়স্থরা এখন বেশ উপরেই, মধুসূদনের টাইমে না হইলেও! ওদিকে, অমিত শাহ যে হিন্দু না সেইটা কইলে বিজেপির ব্যাপারে ওদের সব নালিশই তো মিছা হইয়া যায় প্রায়! বা ঘোষ যে আর্য (বিদ্যাসাগর মনুর রেফারেন্স দিয়া কইছেন, কায়স্থরা শূদ্র।) না সেইটা কইলেও একই প্রোবলেম!  নালিশগুলা বরং নিজেদের ঘাড়েই আইসা পড়তেছে, কেননা ঐ ৩ দলের মাথারাই তো ফর্সা আর্য, শূদ্রই প্রায় নাই কোন :)!

ফর্সা-কালা বা আর্য-শূদ্রের ব্যাপারটা কোলকাতায় যে কত পাওয়ারফুল সেইটা মালুম হয় না এমনিতে। কারণ হইলো, কোলকাতার মেইনস্ট্রিম ইতিহাস লেখা লোকেরা ঐগুলা চাইপা গেছেন প্রায়ই! আমি ছোট একটা ঘটনা কই ১৫০ বছর আগের। ঘটনা মাইকেল মধুসূদনের। ভারতের টেনিস প্লেয়ার লিয়েন্ডার পেজকে অনেকে চেনেন মনে হয়; এই লিয়েন্ডার পেজ মধুসূদনের নাতি/নাতনির মাইয়ার পোলা। লিয়েন্ডার পেজ কালা, মধুসূদন হোয়াইট মাইয়া বিয়া কইরাও লিয়েন্ডার পেজকে ফর্সা রঙ দিয়া যাইতে পারেন নাই। মধুসূদন কালা আছিল। কোলকাতায় মধুসূদন জমিদারের পোলা, বাপে বড় উকিল; কিন্তু মধুসূদনকে আর্য হিসাবে মানে নাই কোলকাতা। গায়ের রঙের এই যে ব্যারিয়ার, সেই কারণে মধুসূদন হিন্দু হিসাবে কোলকাতার কোন আর্য ফর্সা মাইয়া বিয়া করতে পারতেন না, বড়জোর ফর্সা গৌরের লগে হোমোসেক্সুয়ালিটিতে যাইতে পারছেন, ইনফর্মালি।  সেইখান থিকাই মধুসূদন খৃস্টান হইছেন, কোলকাতার আর্য হিন্দুদের গায়ের রঙের দেমাগের প্রতিশোধ নিছেন মধুসূদন। খৃস্টান হইয়া একজন হোয়াইট মাইয়ার লগে পরকীয়া করছেন, আর দুই জন হোয়াইট মাইয়ারে বিয়া করছেন। এর কয়, দেখাইয়া দেওয়া :)!

কালা মধুসূদনের এই শূদ্র ট্রিটমেন্ট, কোলকাতার গায়ের রঙের দেমাগ, আর্যামীর এইসব কাহিনি যখন মধুসূদনের বায়োগ্রাফিতে চাইপা যাওয়া হয় তখন পরের মানুষের মনে হয়, রঙ বা আর্য বা কাস্টের এইসব কথা বানাইয়া কইতেছি আমি, অমিত শাহের ঐ ছবিতে ঐসব কোন স্টেটমেন্টই নাই! আসলে কিন্তু বাংলা না জানা জৈন অমিত শাহ ভারতের বাঙালি শূদ্রের মাঝে নিজের স্টেটমেন্ট দিতে খুবই সাকসেসফুল হইলেন!

 

মে ০৩, ২০১৮//

ওয়েস্ট বেঙ্গলে কংগ্রেস আছিল, নাই এখন। সিপিএম আছিল মনে হয় আরো বেশিদিন, নাই এখন। তৃণমূল এখনো আছে। বিজেপি আসতেছে।

কংগ্রেস, সিপিএম আর তৃণমূল কলিকাতার লিবারালদের দল; এই লিবারালরা কংগ্রেস আর সিপিএম জিন্দা রাখতে পারে নাই, তৃণমূল এখনো থাকলেও বিজেপির দাবড়ানি খাইতেছে রেগুলার! আরো আগের কৃষক-প্রজা পার্টি বাঁচাইতে পারে নাই। তার আগে এই লিবারালরা ভারতের ক্যাপিটাল হারাইছে দিল্লির কাছে, রাখতে পারে নাই। ইউরোপের লগে পয়লা কানেকশনের পরেও দুইটা ক্যাপিটালিস্ট বানাইতে পারে নাই, কেরানি বানাইছে কতগুলা। এই লিবারালরা রায়টে লাখ লাখ খুনের হাত থিকা জনতারে বাঁচাইতে পারে নাই। ভাষাটারেও টিকাইতে পারে নাই, হিন্দির দখলে ওয়েস্ট বেঙ্গলের জবান। বাংলা কওয়া মানুষের জন্য একটা পলিটিক্যাল এনটিটি দিতে পারে নাই।

এতো এতো মরণ আর না পারার কারণ কি? হিসাব কইরা দেখেন, এই লিবারালরা ইতিহাসের কখনোই ডেমোক্রেটিক হইতে রাজি হয় নাই! তাই মরতে হইছে বার বার! ডেমোক্রেসির অভাবে পপুলিজম আর মব জিতছে বার বার!

এই কলিকাতার মুরিদ যদি হয় ঢাকা, ঢাকার আতেলরা যদি কলিকাতার লিবারালে দিশা চায়, আমাদের দশাও অমন হবে। এমনকি পাকিস্তানেও মুসলীম লীগ আর পিপলস পার্টি এখনো জিন্দা, হয়তো ইমরান আসতেছে; কিন্তু পাকিস্তানও এখনো লিবারালদের পলিটিক্যাল মাতবরিতে আছে! বাংলাদেশও এখনো লীগ-আর বিএনপি’র ভিতর দিয়া ফর্মালি লিবারালরাই কন্ট্রোল করতেছে! কলিকাতার মুরিদ থাকার কালে, গত ১০ বছর আমরা মারাত্মক রিস্কে পড়লাম, পপুলিজমের কাছে হার মানতেছে লীগ!

ইতিহাসে মাল্টি-ডাইমেনশনাল ফুসলানি থাকে, কার ফুসলানি লইবেন, বাছবিচারে হুশিয়ার থাইকেন, নিজেদের দরকারেই… গুড লাক।

 

জুলাই ০১, ২০১৭//

33

 

একটা থিয়োরি যখন রুল করতে থাকে তখন সেই থিয়োরির লোকদের আর বুদ্ধিমান থাকার দরকার হয় না। থিয়োরিটা তখন একটা খাসলত হইয়া পড়ে, আর খাসলত মানে ব্যাপারটা ইন্সটিংক্ট, চিন্তা তখন দরকারই নাই প্রায়! ব্যাপারটা অনেকটা গাড়ি চালাবার টাইমে হঠাৎ ব্রেক করার মতো; ব্রেকটা স্রেফ রিফ্লেক্স, কনসাস হিসাবে চিন্তা কইরা ডিসিশন নিতে গেলে এক্সিডেন্ট ঠেকাইতে পারবেন না, দেরি হইয়া যাবে! ড্রাইভিং যার যতো বেশি খাসলত হইয়া উঠছে, সে ততো ভালো ড্রাইভার।

লিবারালিজম জগত শাসন করতেছে ১৫০/২০০ বছর হইয়া গেল না, এখন লিবারালিজম বুদ্ধিমান লোক পয়দা করতে পারতেছে না বেশি, অন্তত সাবেকি লিবারালিজম! দুনিয়ার এইদিকে আরো কম; ভারত-বাংলাদেশের লিবারালদের এমনকি খাসলতও হয় নাই পুরা, তারা তো নকলই করতে পারে!

আমেরিকায়ও দেখেন, ট্রাম্পকে ঠেকাইতে তার অডিও লইয়া লাফাইলো লিবারালরা, তাতে উল্টা আমেরিকার মাসকুলিনিটি দিশা পাইলো, তারা কনফার্ম হইলো যে, ট্রাম্পই আসল পুরুষ :)!

এই ছবিটাও দেখেন। ইনি কৃষিমন্ত্রী। কৃষিমন্ত্রী যদি কইতেন, যতদিন দেশের সব কৃষক চিনা মাটির প্লেটে খাইতে না পারে, আমি ততদিন কলা পাতায় খাবো। তাতে পলিটিক্যাল লাভ নাকি লস? এইখানেও ঘটনাটা তেমনই, কংগ্রেসের প্রতি বিজেপির যেই নালিশ, কংগ্রেস অভিজাত-ফিউডাল, জনতার কাতারের লোক না রাহুল, সেইটাই আবার জানানো গেল এই ছবি দিয়া! ভারতের জনতার কাতারে নামে না রাহুল, বিজেপি জনতার কাতারের; তাই বিজেপির কৃষিমন্ত্রী জনতার মতোই রাস্তার পাশে মোতে, রাহুলের মতো এসিঅলা হাই-কমোডের টয়লেট লাগে না। ভারতের জনতার জন্য যতদিন বেড়া দেওয়া টয়লেট না দিতে পারবে বিজেপি ততদিন মন্ত্রীও জনতার মতোই মুতবে। এইভাবে মোতার ভিতর দিয়া উনি জনতার নায়ক হইয়া উঠতে পারেন, যে অভিজাতের/বড়লোকের বাড়ির দেয়ালে মুততে পারে বিজেপি, ৫৬ ইঞ্চি বুকের পাটা মোদির!

কিন্তু ভালো কইরা খেয়াল করলে দেখবেন, এই দেয়ালটারে স্রেফ একটা বাউন্ডারি ওয়াল কইতে পারবেন না। আবছা একটা কম্যুনাল আইডেন্টিটি আর স্টেটমেন্টও আছে এই দেয়াল ছবিতে! সেইটাও বিজেপির এজেন্ডার লগে যাইতেছে!

এতে কিছু লিবারাল হাউকাউ করবেন, বাট তারা তো আগে থিকাই বিজেপিরে ভোট দেয় না! কিন্তু আমজনতা উইল লাভ দিস বিজেপি ফাউন্টেন!

ওদিকে, গরুও দেখবেন বইসা মোতে না, হাই কমোডেও না! সো, এমনে মোতার ভিতর একটা স্পিরিচুয়াল ব্যাপারও আছে।

 

সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮//

হাউ লিবারালস সুইসাইড!

ট্রাম্পের টেবিল থিকা ফাইল সরায় হোয়াইট হাউজের আমলারা, আন্ধারে রাখে প্রেসিডেন্টকে; এইটা আবার বেনামী চিঠি ছাপাইয়া জানায় দুনিয়ারে! ইলেকটেড প্রেসিডেন্টের হুকুম মানে না!

তাইলে গণতন্ত্র আর ইলেকশনের অর্থ কি থাকলো! ওবামাও দেখলাম, আমেরিকার এই দশারে কইছেন ‘নট নর্মাল’। কেননা, আমলারা তো ইলেকটেড না, জনতার কাছে তাদের জবাবের মামলা নাই।

হোয়াইট হাউজ রিপাবলিককানদের দখলে, ট্রাম্প বাদেও। সেই রিপাবলিকানরাই এমন করতেছে ট্রাম্পের লগে। আমেরিকার বাম-ডেমোক্রেটদের কাছে রিপাবলিকানরা কনজার্ভেটিভ হইতে পারে, বাকি দুনিয়ার কাছে তো লিবারালই। ডেমোক্রেটদের মাঝে হয়তো একটু মার্ক্স টান আছে মাত্র। তাছাড়া ট্রাম্পে বহু রিপাবলিকানও সমান নাখোশ, আমাদের বাচ্চার বানানো বাপ ম্যাককেইনও মরার আগে তক তেমনই একজন, মরার পরের খবর জানি না অবশ্য। জুনিয়র বুশ আগে ভোটের ইজ্জতের ছুতায় ওবামা লইয়া কমেন্ট করতে নারাজ হইছিলেন আগে, সেই বুশ এখন ট্রাম্প ধুইয়া সাফ করতেছেন! ট্রাম্পের আমেরিকারে ‘নট নর্মাল’ কইতেছেন ওবামা।

দেখা যাইতেছে, লিবারাল গণতন্ত্রের পক্ষে যারা গলা ফাটাইয়া ফেলেন, ট্রাম্পে নাখোশ সেই লিবারালদের তরফেই ভোটের দেদার অপমান চলতেছে! তাগো যুক্তি কি? যুক্তি হইলো, ট্রাম্প পপুলিস্ট, গণতন্ত্রের দুশমন।

বটে। গণতন্ত্রে পপুলিজমের রিস্ক আছে; সেই রিস্ক মোকাবেলার রাস্তা গণতন্ত্রের সিস্টেমের মাঝেই থাকার কথা; আমেরিকার গণতন্ত্রে তাই সিনেট-কংগ্রেস-প্রেসিডেন্ট-কোর্ট-পুলিশ-ইলেকশন কমিশন ইত্যাদির মাঝে গোড়াতেই কতগুলা দুশমনি বা কন্ট্রাডিকশন রাখা হইছে, চেক এন্ড ব্যালান্স থাকার দরকারেই।

দেখা যাইতেছে, ঐগুলায় কাম হইতেছে না ট্রাম্পের মোকাবেলায়! তাই গণতন্ত্রের পাটাতন যেই ভোট, সেই ভোটেরই অপমান করা লাগতেছে গণতন্ত্রের সেপাইদের! এমন গ্যাড়াকলে কেন এবং কেমনে পড়লেন লিবারাল সেপাইরা?

আমেরিকা আর ভারতে লিবারালরা ফেল করছে অলরেডি, বৃটেনেও তো (বাংলাদেশে?); আন্দাজ করি, ফেল করার দিকে যাইতেছে কানাডা, জার্মানী আর ফ্রান্স। গ্লোবাল ফেইল্যুর একদম।

১ নম্বর কারণ হইলো, যুগ যুগ ধইরা জিততে জিততে ভোটের কথাই ভুইলা গেছে লিবারালরা; জেতা তাদের কাছে ডিফল্ট ঘটনা হইয়া উঠছিল!

ভোটের মানেই হইলো, এইটা না লইয়া ঐটা লইতে পারেন আপনে। লিবারাল প্যারাডক্স হইলো, ভোটের আইডিয়ার মাঝে আদতে একটা প্লুরালিটি বা বহু থাকলেও লিবারালরা ভাবে, কেবল তারাই ঠিক, বাকি সব ভুল। তাদের মাঝে কয়েকটা দল দেখা যায় মাঝে মাঝেই, কিন্তু সেইগুলা তো সবই একটা প্যারাডাইমের ভিত্রে! তারা দাবি করে, তাদেরটাই সহি রেশনাল একমাত্র ‘পয়েন্ট অব ভিউ’; কিন্তু ভোটের আইডিয়ার মাঝেই আছে যে, যেকোন পয়েন্ট অব ভিউ আসলে অনেকগুলার একটা মাত্র! তাই লিবারালরা যখন ‘পলিটিক্যাল কারেক্টনেস’র নিশান উড়ায়, তখন গোড়াতেই একটা ফ্যালাসি থাইকা যাইতেছে! পার্টি হিসাবে আপনে হয় ভোটে বিশ্বাসী অথবা পলিটিক্যাল কারেক্টনেসে! কোন একটা পার্টি যখন নিজেরে আর সন্দেহ করে না তখন সে আর গণতন্ত্রে নাই, সেই পার্টির আদত তখন ফ্যাসিস্ট!

এইখানেই পার্সন আর (গণতন্ত্রের) পার্টির তফাত। এই কারণে যেকোন ব্যক্তির বিচারে যেকোন পার্টি খারাপ! এই কারণে গণতন্ত্র মানে ‘ভালোর শাসন’ না, ‘কম খারাপের শাসন’! কিন্তু ‘ভালোর শাসন’-এর চাইতে ভালো শাসন! কারণ, যে কোন একটা ‘ভালো’ আসলে তো অনেকগুলা ভালো’র যে কোন একটা, স্রেফ আরেকটা পয়েন্ট অব ভিউ! তাই ‘ভালোর শাসন’-এর চাইতে ‘কম খারাপের শাসন’ নরম, ফ্লেক্সিবল! এই কারণেই হিটলার বা স্ট্যালিনের তুলনায় খালেদা জিয়ার শাসন আলগা, দম লইতে আরাম!

এখন, আপনে যদি গণতন্ত্র আর পপুলিজম যুদা করতে রাজি থাকেন তাইলে গণতন্ত্রের পক্ষের লোকজনদের কইতে পারেন লিবারাল, আমেরিকারে হিসাবে লইয়া বুঝলে মেইনস্ট্রিম রিপাবলিকান আর ডেমোক্রেট–দুইটাই লিবারাল প্যারাডাইমের দুইটা উইং।

এই দুই দলের ভিতর ডেমোক্রেটরা বইলা-কইয়া পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের কথা কইতেছে, রিপাবলিকানরা যেনবা বিপক্ষে, কিন্তু আসলে জাস্ট ওয়ান স্টেপ বিহাইন্ড! যুগে যুগে লিবারালরা এমন দুইভাগে ভাগ হইয়া থাকে। ধরেন, অ্যাবর্শন করা যাবে কিনা–এইটা লইয়া বাহাস হইছে আগে, আইনে জায়েজ করছে একদল, অন্য দল তখন বিপক্ষে থাকলেও পরে গদিতে বইসা আনডু করে নাই! একই জিনিস পাইবেন হোমোসেক্সুয়ালিটি ইস্যুতে; আরো আগে স্লেভারি, বা চার্চে কালা পাদ্রি, বা ইন্টাররেসিয়াল বিয়া। এইটারেই কইলাম ‘ওয়ান স্টেপ বিহাইন্ড’! এর মানে হইলো, দুই পক্ষের লিবারালই আগে পরে হইলেও আসলে পলিটিক্যালি কারেক্ট হইয়া উঠতে চাইতেছে!

এর ফল কি? ধরেন, হোমোসেক্সুয়াল বিয়া হইতে দেওয়া লিবারালদের হিসাবে পলিটিক্যালি কারেক্ট, কিন্তু জনতার ৭০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7} মনে করে এইটা একটা খারাপ কাম হইতেছে। লিবারালরা পাত্তা দিলো না, ফল কি হবে? বা আরেকভাবে জিগাই, লিবারালরা যদি জনতার ৭০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7}’কে পাত্তা না দেয় তাইলে তারা কি খোদ ভোটকেই উড়াইয়া দিল না? আপনে যখন এমন যুগের পর যুগ পাত্তা না দেবেন, আপনের লগে ঐ জনতার ভরসার রিশতা আর থাকবে আদৌ? আপনে যত ভরসা হারান জনতার তত ট্রাম্পদের (পপুলিজমের) জন্য স্পেস বানাইতে থাকেন!

কিন্তু লিবারালরা এইটা কেমনে করতে পারে? সোজাসাপ্টা জবাব হইলো, গায়ের জোর! পুরা রাষ্ট্র তাদের দখলে, গণতন্ত্রের দোহাই দিয়া যেই রাষ্ট্র তারা হাতে পাইলো, সেই রাষ্ট্রের জিম্মাদার হিসাবে তারা কেবল নিজের মত চাপাইয়া দিলো! জনতার বলে বলিয়ান হইয়া আগের ফিউডাল শাসন হটাইয়া দিতে পারছিল, কিন্তু গদি দখল কইরা জনতার মনমেজাজ পাত্তা না দিয়া সেই ফিউডাল শাসনের মতোই গায়ের জোরে শাসন চালাইতে শুরু করলো!

অথচ এই লিবারালদের তো হবার কথা পুরা জনতার তরফে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক জিম্মাদার! সমাজে অনেকগুলা পয়েন্ট অব ভিউ থাকবে; মানে হইলো অনেকগুলা মরাল পজিশন। গণতান্ত্রিক শাসকের ( লিবারাল প্যারাডাইমের ) দায়িত্ব হইলো, স্রেফ সালিসি করা, একমাত্র মরাল পজিশন (পলিটিক্যাল কারেক্টনেস) হইয়া ওঠা না! সালিসির ভিতর দিয়া সব পক্ষের কতকটা ছাড় আদায় কইরা একটা আলগা টেম্পোরারি ইউনিফিকেশন ঘটানো!

গত কয় বছরের ইতিহাসের কয়েকটা ঘটনা দিয়া আরেকটু ক্লিয়ার করার চেষ্টা চালাই। ওকে, আগের দুয়েকটা স্ট্যাটাস কপি করলেই চলে এইখানে:

১. অক্টোবর ২০১৬, আমেরিকার ইলেকশনের আগে:

“ট্রাম্পের অডিও শুনি নাই, ট্রান্সক্রিপশনও শুনি নাই, অন্যদের আলাপে অনুমান হইলো একটা, মিলাইয়া দেইখেন…

আলাপটা জেন্ডার ইস্যুতে ঠেকলো কিন্তু! দেখা যাইতেছে, ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ আসলে ‘মেক আমেরিকা মাসকুলিন এগেইন’, আমেরিকার ভিরিলিটি ফিরাইয়া আনা।

তো, আমেরিকানা কইলে ‘মাসকুলিন’ বোঝে দুনিয়া, আমেরিকাই এই ভাবনা বানাইছে ফরেন পলিসি আর হলিউড দিয়া, সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারও বিরাট ঘটনা। দুনিয়ায় আরেক আসল পোলা আছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, সেইটা ভাঙ্গার পরে দুনিয়ার দামড়া তো একটাই আছিল–আমেরিকা!

আরো কিছু দামড়া গজাইছে এখন, টেররিস্ট এটাক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চায়না-কোরিয়ার টেকনোলজি–অনেক দিক দিয়াই নতুন নতুন দামড়া গজাইছে দুনিয়ায়। পুতিন আছেন আরেক দামড়া, রাশিয়ার ভিরিলিটি ফেরত আইছে পুতিনে।

সো, যেইটারে ট্রাম্পের অডিও ফাস কইতেছেন, সেইটা আসলে ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনে পজিটিভ এডিশন একটা, ট্রাম্পের ভিরিলিটির দাবি পোক্ত করা, মোদির ৫৬ ইঞ্চি ছাতির মতো ব্যাপার, হিলারির তুলনায় আগাইয়া যাওয়া।

ওদিকে হিলারি হইলেন দুনিয়ার বাদ বাকি দামড়াদের কাছে আমেরিকার পুসি হইয়া পড়া! ট্রাম্পের ভিরিলিটি ফাস হওয়ায় যারা ভোট দিবেন না, তারা আসলে আগে থেকেই হিলারির ভোটার, পাবলিকলি সাপোর্ট উঠাইয়া নেওয়া আসলে অনেক কিছু মিন করে না, এইটা হইলো, পাবলিকলি যে আর নিজেরে রেসিস্ট দাবি করা যায় না, সেক্সিস্ট দাবি করা যায় না, সেই ব্যাপার; এই একই কারণে ‘মেক আমেরিকা সেরা দামড়া এগেইন’ কইতে পারেন না ট্রাম্প! বাট লোকে বোঝে, ট্রাম্পের বলস্ আমেরিকার বলস্ সিগনিফাই করতেছে, হিলারির যে ফিজিক্যাল বলস্ নাই, তাই সিগনিফাইও করা যাইতেছে না।

ট্রাম্পের অডিও হিলারির ফিজিক্যাল পুসিরে আমেরিকার ভার্চুয়াল পুসি বানাইয়া দিছে, আমেরিকার মাসকুলিন প্রাইড ডরাইতেছে, চায়না-পুতিন দামড়া, আমেরিকা পুসি; আমেরিকানায় ইন্টারকোর্স  কইলে মাইয়াদের ‘ফাকড’ হওয়াই বোঝে, মানে পোলা/দামড়াদের জিতে যাওয়া।

লিবারাল-কনজার্ভেটিভ ডিসকোর্স, রেসিজম, ওবামাকেয়ার, যুদ্ধবাজ ফরেন পলিসি–সব ছাপাইয়া আমেরিকার ইলেকশন এখন দামড়ার বলস্-এ; এমনিতেও, ট্রাম্পরে ঠেকাবার ডেমোক্রেট কায়দা তো আগেই বেকায়দায় ফালাইছে দুনিয়ারে–কে বেশি কনজার্ভেটিভ, ডেমোক্রেট না রিপাবলিকান…:)!

তবু দেখা যাক, ইন্টারকোর্স/ভিরিলিটি/বলস্/পুসি’র এই ডিসকোর্সের বাইরে আমেরিকার কত পার্সেন্ট ভোটার যাইতে পারছেন, ইলেকশনে যে জিতবেন–তাতে কিছু ধারনা পাওয়া যাইতে পারে…”

২. মার্চ ২০১৭, ভারতে মোদিরে যেন খুব ডরাইয়া দিতে পারলো লিবারালরা! বাস্তবে, এইসব কাহিনির পরেই কিন্তু আসামে জিতলো বিজেপি/মোদি, ওয়েস্ট বেঙ্গলেও আইতেছে:

“আমেরিকার লিবারালরা যেই রাস্তায় ধরা খাইলো, ভারতের লিবারালরা সেই রাস্তায়ই হাঁটতেছে! সো ফানি :)!

ট্রাম্পের অডিও ফাস কইরা লিবারাল বেকুবরা লাফাইছিল, ট্রাম্পকে যেন খুব ধরা খাওয়াইয়া দিলো! হাসছিলাম আমি; কইছিলাম, ঐ অডিওতে যারা ভোট দেবেন না তারা অলরেডি ডেমোক্রেট, আর যারা ট্রাম্পে ভরসা করতে পারতেছিলেন না যে, ট্রাম্প এনাফ মাসকুলিন কিনা, তারা পোক্ত হইলেন এইবার–নাহ্, ট্রাম্পরে দিয়াই হবে, আসল পোলা!

এখন ভারতে একই অবস্থা। আগে একবার গুজরাটের কসাই কইয়া মোদীরে জিতাইছে। মোদী কসাই হইলে যারা ভোট দেবেন না, তারা তো অলরেডি কংগ্রেস বা বাম! তাগো ভোট আরেকবার এনসিওর করার মানে কি, আজব!

ওদিকে, এনাফ কসাই কিনা সেই ব্যাপারে যাগো সন্দেহ আছিল তারা ভরসা পাইলো লিবারালদের ঐ গালিতে! হুম, মোদীরে দিয়াই হবে, মোদী ডেমোক্রেসির জামানা, কলিযুগের ক্ষত্রিয়, আদতে শূদ্র হইলেও!

এখন লিবারালরা রামরাজ্যের ডর দেখায়, হা হা! ওরে বেকুবগুলা, রামরাজ্য চায় ৬০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7}, ডরায় ৩০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7}! তাইলে রামরাজ্যের ডর দেখাইলে মোদী জেতে, নাকি হারে!!!”

এই কয়দিন আগের ঘটনার কথাও কই একটা। ভারতের আদালত নাকি হোমোসেক্সুয়ালিটি রিকগনাইজ করলো, অন্তত ভারতের লিবারাল মিডিয়া বেশ লাফাইতেছে সেই হিসাবেই। কিন্তু ঘটনাটা আরেকটু চোখা নজরে দেখা দরকার আমাদের। কিভাবে রিপ্রেজেন্ট করলে কে কেমন মেসেজ পায়, দেখা যাক।

আইনের যেই দফাটা (৩৭৭, একই দফায় একই টেক্সট বাংলাদেশের একই কলোনিয়াল আইনে বহাল তবিয়ত।) লইয়া আলাপ, সেইটা কলোনিয়াল ইংরাজের চার্চ/ভিক্টোরিয়ান এথিক্সের একটা দফা আসলে! এমন কোন আইন অশোক বা মোগল বা মিথিক্যাল রামরাজ্যেও আছিল না! আরো একটা ব্যাপার হইলো, এমন সব আইন তো আসলে নাগরিকদের জিন্দেগিতে রাষ্ট্রের নাহক খবরদারি; কেবল এইটাই না আরো অনেক আছে!

এখন, লিবারালদের এজেন্ডা যদি হয় নাগরিকদের জিন্দেগিতে রাষ্ট্রের খবরদারি কমানো, তাইলে এমন একটা আইন করতেই পারে না রাষ্ট্র! যেমন পারে না বাপ-মা-ভাই-বোন-দোস্ত, এমনসব রিশতার গ্রামার ঠিক করতে, জনতা লুঙ্গি নাকি প্যান্ট পরবে, আলু নাকি পটল খাবে, ভাতের লগে নুন খাবে কি খাবে না–এমন হাজারো পয়েন্টে রাষ্ট্র নাক গলাইতে পারে না! এই পয়েন্ট অব ভিউ থিকা তাইলে আদালত যেমন ‘নালিস করাই হয় নাই মর্মে’ রিট খারিজ করে, তেমনই রাষ্ট্রের খবরদারির এমন সব আইন কখনো করাই হয় নাই মর্মে বাতিল হবার কথা! কলোনিয়াল খোলস থিকা মুক্তিও একটা গণতান্ত্রিক এজেন্ডা হইতে পারে।

তাইলে আদালত কি আদৌ হোমোসেক্সুয়ালিটি রিকগনাইজ করলো? না। কিন্তু এখন আদালত এবং ভারতের লিবারাল মিডিয়া ঘটনাটারে যেইভাবে হাজির করলো তাতে পপুলিস্টদেরই মওকা বাড়লো, ভোটের তোয়াক্কা না করলেই কেবল এমন সব ইস্যু বানাইয়া ফূর্তি করা যায়!

আইনের এই ধারার আর সব পয়েন্ট বহাল থাকলো কিন্তু, সো রাষ্ট্রের খবরদারির মওকাও, সেই কলোনিয়াল জামানা বহাল তবিয়ত থাকলো! আন্দাজ করি, কিছুদিন পরে আবার মামলা হবে এই ধারা লইয়া, অন্তত দুইটা।

এনিমেল সেক্স এখনো মানা আছে আইনের ঐ ধারায়, এই ব্যাপারে মামলা করবেন কেউ! তখন লিবারাল আদালত হয়তো রিকগনাইজ কইরা ফেলবে, লিবারাল মিডিয়া মানুষ আর কুত্তার কাপল ছবি ছাপবে, উইকিতে দেখলাম, কানাডায় ‘নন পেনেট্রেটিভ’ এনিমেল সেক্সে প্রোবলেম নাই আইন মোতাবেক।

আরেকটা মামলা করবে কোন বউ; ‘আননেচারাল’ সেক্স মানা করা আছে ৩৭৭ দফায়। কোন বউ স্বামীর নামে আদালতে নালিশ করবে ‘এ্যনাল সেক্স’-এর! তখনো লিবারাল আদালত হয়তো রিকগনাইজ কইরা দেবে।

রাষ্ট্রের কত কত টর্চারের মাঝে আছে মডার্ন নাগরিকরা, কিন্তু লিবারালরা রাষ্ট্রের লাঠি দিয়া পিটাইতেছে জনতার মন! আবারো মনে করাইয়া দেই, গণতন্ত্রের কাম হইলো, বহু বহু মরাল পজিশনের মাঝে ফ্যাসাদ ঠেকানো, সালিসির ভিতর দিয়া ফয়সালার দিকে যাওয়া। কিন্তু লিবারালরা হোমোসেক্সুয়ালিটিকে ভাবতেছে ‘পলিটিক্যাল কারেক্টনেস’, আদালত নিজেদের দখলে থাকায় গণতন্ত্র হইয়া যাইতেছে লিবারালদের ‘পলিটিক্যাল কারেক্টনেস’-এর আলটিমেট ভিক্টরি!

কিন্তু ভারতের ধরেন ৭০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7} ভোটের তোয়াক্কা যদি করতো এই লিবারালরা, তাইলে কি এমন লাফানো যায় জনরুচির বিপক্ষ হইয়া? এই ৭০{855ff4e32ca5c8db0719e8f837cd158afce0d103a8821dfb7d995472b79aa6d7} কেন ভোট দেবে এই লিবারালদের? এই লিবারালরাই যেই পার্টির মুখ, সেই পার্টিরে ভোট দেবে? এই জনতার ভরসা যখন হারাইয়া ফেললো লিবারালরা, লিবারালদের এথিক্যাল ঘেন্না যখন হরদম টের পাইতেছে এই জনতা, তখন পপুলিস্ট বিজেপির জয় কতটা আগাইয়া যায় আসলে? এই ফূর্তি তাইলে কতটা ফূর্তি, আর কতটা সুইসাইড, নিজেদের সুইসাইড করতে করতে গণতন্ত্রেরও কবর খুড়তে থাকা?

কিন্তু কেন, কোন হিসাবে এমন করে লিবারালরা? স্রেফ বেকুব কি এরা! একটা কারণ মনে হয় হামবড়া দেমাগ; অন্যরে লইয়া মশকরাতেই এদের স্যাডিস্টিক প্লেজার।

**২ জুলাই ২০১৭/পাবলিক ডায়েরি**

নিজেদের এজেন্ডা/ইশতেহার কামিয়াব করার চাইতে লিবারালরা বেশি লাইক করে লিবারাল হিসাবে নিজেদের জাহির করতে; নিজেরে জাহির করতে যাইয়া এমনকি নিজের এজেন্ডাকে কোরবানি দিতেও কসুর করে না!

দুইটা নজির দেখাই। কোলকাতার শ্রীজাত (বামুন) ত্রিশূলকে কনডম পরাইলেন, তাতে নিজেকে লিবারাল হিসাবে দাবি করার বাইরে কি কি লাভ হইছে? বা ধরেন, চুমাচুমির মুভমেন্ট কইরা? ভারতের মোসলমান লিবারাল মীর নিজেরে লিবারাল হিসাবে পরিচয় করাইয়া দিছেন বাপের তুলনা কইরা, আর কোন লাভ? আপনে বাংলাদেশের হিন্দু, আপনে যে শিবসেনা নন, কেমনে জানাইবেন? আপনে ভারতের গরু প্রটেক্টরদের গালি দিলেন। আপনে বাংলাদেশের মোসলমান লিবারাল, আপনারে ভারতের দালাল বইলা গালি দেয় লোকে, আপনেও এখন মওকা পাইলেন একটা, গালি দিলেন–গরুর বাচ্চা! হিন্দু-মোসলমানকে ‘মৌলবাদী’ গালি দিলেন।

এর কোনটায় কি রিক্রুটমেন্টের রেট কমলো? নাকি আপনারে ফানা করতে নিরিহরাও ভায়োলেন্ট হবার আরেকটা কারণ পাইলো?

গরু যার কাছে দেবী তারে গরুর বাচ্চা কইলে হয়তো গালিও দেওয়া হয় না! গরুর গু যার কাছে গোবর, গরুর মুত যিনি ফ্রিজে রাখেন, সে গরুর বাচ্চায় নাখোশ হয় না। কিন্তু তার লাগে, লাগে আরেকভাবে। সে টের পায়, তারে গরুর বাচ্চা কইয়া আপনে আসলে গরুকে ছাগলের কাতারে লইয়া গেছেন!

ওনার তখন রাগ হয়, আরো ১০০ কোটি মানুষের রাগ হয়, তারা এই গরুকে ভক্তি করে। আপনি তাগো ভক্তি লইয়া মশকরা করতে পারেন না!

গরুকে কেউ ভক্তি করতে পারে, লিবারালরা যেমন পতাকা বা জাস্টিসাস বা শহিদ মিনার ভক্তি করে। ভক্তি একটা মানবিক ব্যাপার।

আরেকজন তেমন গরু খাইতে পারে। লিবারালদের এজেন্ডা হইলো, গরু যে খায় তার উপর গরুভক্তের হামলা ঠেকানো। তারা যদি গরু লইয়া মশকরা করে তাতে ঐ এজেন্ডা কি আগাইলো, নাকি গরুভক্তের গোস্বা বাড়াইয়া দিলো?

গরু আর তার ভক্তদের লইয়া মশকরা করায় গরু খাওয়া সোজা হইয়া ওঠার কোন কারণ নাই! তবু কেন করেন তারা? তাই কইতেছি, এইটারে কইতে পারেন–ইশতেহার কোরবানি দিয়া নিজের পরিচয় জানান দেওয়া!

গরু আপনি খাইলেও গরুকে আর কেউ ভক্তি করতেই পারে, এইটা লইয়া মশকরা না কইরা সোজা মাইনা লওয়া ভালো। তার ভক্তি যেন জখম না হয়, তেমন সিস্টেম করতে পারলে আরো ভালো।

ভারত এখন গরু ইস্যুতে বেসামাল, খুন হইতেছে লোক রেগুলার। এইটা ঠেকানোই এজেন্ডা। ভারতের ১০০ কোটি গরুভক্তকে ইরিটেট কইরা এইটা ঠেকানো যাবে না, তাতে শিবসেনাই বাড়বে আরো। ওয়েস্ট বেঙ্গলে কংগ্রেস, বাম আর তৃণমূল ছাপাইয়া বিজেপি উঠতেছে, এতেই তো আপনের স্ট্রাটেজির ভুল বুঝতে পারার কথা, যদি পরিচয় দেবার বাইরে এজেন্ডা আদৌ থাকে!

বিজেপি পলিটিক্সে কোথায় আগায় দেখেন। রাম-রহিম বিজেপির লোক আছিল না, কিন্তু আপনে সেন্সরে তার সিনেমা আটকাইয়া দিলেন! ফল? রাম রহিমকে লইয়া গেল বিজেপি! অথচ রাম রহিম হইতে পারতো আপনের ভালো কাভার!

গরুভক্তি লইয়া মশকরা না কইরা আপনে ইন্ডিয়ার সিটিজেনের হক লইয়া মুভমেন্ট করতে পারতেন, আপনে বানাইলেন পিকে! এমনকি জিএম গরু আদৌ গরু কিনা সেই ইন্টেলেকচুয়াল ডিসকোর্সও বানাইতে পারতেন! আপনে বাংলাদেশে গরু জবাই আউটসোর্স করতে কইতে পারতেন!

দলিতের লগে বিজেপির খাতির, অথচ বিজেপি বামুনবাদী, আপনে কি আরো বড়ো বামুনবাদী? অমিত শাহ শিডিউল কাস্টের লগে মাটিতে বইয়া কলাপাতায় খায়, আপনে এইটারে স্ট্যান্টবাজি কইয়া ‘সৎ’ থাকতে চান, ভন্ড কইয়া গালি দেন বিজেপিরে! আর অমিত শাহ জয় করে মন!

এইভাবে বিজেপি যাদের রিক্রুট করে তাগো মন আপনে কেমনে জয় করবেন, ভাবছেন একবারো? গরুর বাচ্চা কইয়া পারবেন?

 

The following two tabs change content below.
Avatar photo

রক মনু

কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →