Main menu

‘অদ্ভুত আঁধার এক’: জীবনানন্দ দাশ ।। বিনয় মজুমদার (১৯৬৬)

ভালো রাইটাররা যে সবসময় ভালো ক্রিটিক হইতে পারেন বা হইতেই হবে – তা না, ভাইস-ভার্সাও; কিন্তু বিনয় মজুমদারের এই ক্রিটিকটা পইড়া মনে হইছে, উনি আসলে ক্রিটিক হইতে চান নাই। এইরকম আছে তো, উনার সময়েও ছিলো সাহিত্য-সমাজের নর্মস, যে, একবার ক্রিটিক বানায়া দিতে পারলে কবি হওয়াটা তখন টাফ হয়া যাবে! আমার অনুমান, বিনয় মজুমদার ক্রিটিক হওয়ার ফাঁদে পা দিতে চান নাই, কবিই হইতে চাইছেন। কিন্তু এই যে একটা কবিতা নিয়া কথা কইছেন বা ক্রিটিক করছেন, এইটাত বুঝা যায়, উনি ঠিক ‘কবিতার শহীদ’ বা ‘আধ্যাত্মিক’ কোন কবি ছিলেন না, কবিতার টেকনিকের জায়গাগুলারে কনশাসলিই লোকেট করতেন!

এমনকি উদাহারণ যে ইর্ম্পটেন্ট একটা জিনিস, এইরকম জায়গাতও ‘উদাস’ ছিলেন না! উদাহারণে রবীন্দ্রনাথের কবিতার সাথে নিজের কবিতারেই রাখছেন। 🙂 

উনি হয়তো অইভাবে কইতে চান নাই, কিন্তু কিছু জিনিস বইলা ফেলছেন আসলে। যেমন, কবিতাতে রহস্যময়তা একটা দরকারি জিনিস। 🙂 আর বলার সময় কিছু জিনিস বাদ দিয়া, বাদ দিয়া কইলে ভালো ‘রহস্যময়তা’ ক্রিয়েট করতে পারবেন! তো, খুব বেশি যে উনি বলছেন, তা না। ‘গভীরতা আছে’ বইলা এড়াইয়াও গেছেন। কিন্তু না বলতে চাইয়াও যট্টুকই উনি বলছেন, বিউটিই হইছে একটা, জিনিসটা। পড়তে পারেন!

ই. হা. 

………………………………………………………………..

অদ্ভুত আঁধার এক: জীবনানন্দ দাশ

অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,

যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;

যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই – প্রীতি নেই –

করুণার আলোড়ন নেই

পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।

যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি

এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়

মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা

শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।

কবিতাটিতে সৌন্দর্যতত্ত্বর কয়েকটি ব্যাপার অনুপস্থিত। উপস্থিতির সুযোগের অভাবহেতু এ-প্রকার ঘটেছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা উচিত নিম্নলিখিত ব্যাপারগুলি নেইঃ

১। এতে elimination নেই। যে-কোনো রচনা সঠিক পরম্পরাবদ্ধ এবং ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ-সংবলিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা থেকে কোনো অংশ (স্তবক ইত্যাদি) কিংবা বাক্য সুপরিকল্পিতিরূপে বাদ দিলে এই বাদ দেওয়ার ব্যাপারটিকে যদি elimination – যেমন রবীন্দ্রনাথের ‘পুজারিনি’ কবিতাটির শেষ স্তবক এবং ঠিক তার আগের স্তবক-এই দুইয়ের মাঝখানে ঘটনার বিবরণ মহাকবি স্বেচ্ছায় সুপরিকল্পিতরূপে বাদ দিয়েছেন। শেষ স্তবকের ঠিক আগের স্তবকে কবি লিখেছেন যে প্রাসাদের প্রহরীরা দেখতে পেল রাজার বিজন কাননে স্তূপপদমূলে প্রদীপমালা জ্বলছে। তারপরেই শেষ স্তবক – শেষ স্তবকে শুধু লিখেছেন যে সেদিন শুভ্র পাষাণফলক রক্তচিহ্নিত হল এবং শেষ আরতির শিখা চকিতে নিভে গেল। এতে রচনা অধিকতর হৃদয়গ্রাহী হয়েছে, বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়েছে। i অনুরূপভাবে কোনো রচনার কোনো বাক্য বা বাক্যাংশ বাদ দেওয়ার উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করছি  বর্তমান প্রবন্ধের রচয়িতারই একটি কবিতা। ‘আমার ঈশ্বরীকে’ গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণে ছিল; ‘যে গেছে সে চ’লে গেছে, দেশলাইয়ে বিস্ফোরণ হয়ে/বারুদ ফুরায় যেন, অবশেষে কাঠটুকু জ্বলে/আপন অন্তরলোকে’; ইত্যাদি। পরে ‘ঈশ্বরীর কবিতাবলী’র  সংস্করণে পরিমার্জনার পর লিখি, ‘যে গেছে সে চ’লে গেছে, অবশেষে কাঠটুকু জ্বলে/ আপন আন্তরলোকে’; ইত্যাদি। এতে কবিতাটি অধিকতর হৃদয়গ্রাহী হয়েছে ব’লে আমার ধারণা। চিত্রশিল্পীদেরও এই ধরণের elimination ব্যবহার করা ভিন্ন গত্যন্তর নেই। পিকাসোর চিত্রে (একটি উদাহরণ ‘মা ও ছেলে’), মাতিসের চিত্রে (একটি উদাহরণ, সেই দীর্ঘ গ্রীবাবিশিষ্টা তরুনী মহিলা) দেখা যায় বিশদরূপে আঁকতে গেলে যত রাখা ব্যবহার করতে হয় তত রেখা তাঁরা ব্যবহার করেননি, বহু রেখাই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। দিয়েছেন সংক্ষেপে কাজ সারার জন্য, চিত্রকে অধিকতর শ্রীমণ্ডিত করার জন্য। Elimination – এর ফল রহস্যময়তা এবং দুর্বোধ্যতা। এতক্ষণে জীবনানন্দের নিজের রচনায় elimination – এর অত্যন্ত সুন্দর একটি উদাহরণ মনে পড়লঃ ‘বিবর্ণ প্রাসাদ তার ছায়া ফেলে জলে।/ ও-প্রাসাদে কারা থাকে? কেউ নেই – সোনালি আগুন চুপে জলের শরীরে/ নড়িতেছে জ্বলিতেছে – মায়াবীর মতো জাদুবলে’ ইত্যাদি। এখানে এই আগুন কি কোনো আলেযার, না কি ওই প্রাসাদ থেকে আসা আলোর প্রতিফলন, না কি অন্য কোনো স্থান থেকে আসা আলোর প্রতিফলনও হতে পারে। কবি সে-কথাটি বাদ দিয়ে দিয়েছেন।’ যেন বিষয়টি অত্যন্ত গোপন কথা। ফলে কবিতাটির এ-স্থানটি রহস্যময় হয়ে উঠেছে, পাঠক উপরি-উক্ত বিকল্প সম্ভাবনাগুলির কোনটি হতে পারে ভাবতে শুরু করেন; পথ চলতে-চলতে রহস্যের ঘ্রান পেয়ে থেমে পড়ার মতো, থেমে প’ড়ে চতুষ্পার্শ একটু খতিয়ে দেখার মতো। এর ফলে সেই খতিয়ে-দেখা স্থানটি পথিকের মনে  গেথে যায় অনুরূপভাবে কবিতাটির পঙক্তিগুলিও। এই যে প্রয়োজনমতো পাঠক্কে বিশেষ-বিশেষ স্থানে থামিয়ে দেওয়া, থামিয়ে দিয়ে ভাবানো – এ-কাজ কবির করতে হয় সুপরিকল্পিতরূপে। ফলে দেখা যাচ্ছে elimination কবিদের মস্ত সহায়, প্রায়শই ভরসা। Elimination – এর ফলে রহস্যময়তা বাড়ে, দুর্বোধ্যতা বাড়ে – মাঝে মাঝে কবিতার অর্থ ‘কোনদিন-বোঝা-যাবে-না’ অবস্থায়ও এসে দাঁড়ায়। কিন্তু কবির চরম উদ্দেশ্য পাঠককে ভালো লাগানো, বোঝানো নয়, এবং দেখা গেছে আমাদের সর্বাপেক্ষা প্রিয় বাস্তব বস্তুগুলি – চাঁদ, তারা, ফুল, লতা, নানাবিধ পাখি, পাখিদের গতিভঙ্গি ইত্যাদি কখনোই আমরা সম্পূর্ণ বুঝি না। বুঝি না ব’লে যে ভালো লাগে তা হয়তো নয়, হয়তো ভালো লাগাতে গিয়ে রহস্যময় ও দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। কলামূলক বিষয়ে সবচেয়ে স্পষ্টবোধ্য হচ্ছে অভিধান। কিন্তু অভিধানের চেয়ে সার্থক কবিতার হৃদয়গ্রাহিতা অনেক বেশিই হয়। ফলে দেখা গেছে elimination কবিদের অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বন্ধু।

 

পিকাসোর এই ছবিটার কথা মেবি বলছেন, বিনয় মজুমদার।

পিকাসোর এই ছবিটার কথা মেবি বলছেন, বিনয় মজুমদার।

 

২। আলোকচিত্রধর্মীতা থেকে চ্যুতি নেই। সংবাদিপত্রের সংবাদকে আলোকচিত্রের অনুরূপ মনে করা যেতে পারে। ব্যাস্তব ব্যাপারকে কোথাও ভিন্নবয়ব না ক’রে অবিকলরূপে উপস্থিত করলে হয় সাংবাদিকতা। কিন্তু অঙ্কিত চিত্র যেমন আলোকচিত্র নয়, কবিতাও তেমন সাংবাদিকতাময় সংবাদ নয়। অর্থাৎ চিত্রশিল্পীকে ভেবে-চিন্তে, সুপরিকল্পিতরূপে সংবাদসুলভ রচনা থেকে চ্যুত হতে হয় – তারও উদ্দেশ্য পাঠককে ভালো লাগানো। ফলে জন্ম হয়েছে ইম্প্রেশনিস্ট চিত্রের, এবস্ট্রাক্ট চিত্রের। ফলে জন্ম হয়েছে এবস্ট্রাক্ট চিত্রের সমধর্মী আধুনিক কবিতার। আলোকচিত্রধর্মীতা থেকে চ্যুতির একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত জীবনানন্দের – ‘ঘাসের উপর দিয়ে ব’য়ে যায় সবুজ বাতাস/অথবা সবুজ বুঝি ঘাস?/অথবা নদীর নাম মনে করে দিতে গেলে চারিদিকে প্রতিভাত হয়ে ওঠে নদী’ ইত্যাদি। এখানে কবি স্বেচ্ছায় আলোকচিত্রধর্মীতা থেকে বেশি দূরে সরিয়ে নিয়ে এসেছেন রচনাকে এবং রচনাও আশ্চর্য হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ যখন কবিতাকে সাংবাদিকসুলভ বর্ণনা বা বিবরণ থেকে দূরে সরিয়ে আনতে হয় তখন কীভাবে কোনদিকে সরালে হৃদয়গ্রাহিতার আবির্ভাব হয় তা কবির আগে থেকে জানতে হয়। অর্থাৎ ‘ভালো লাগার মনস্তত্ত্ব’ জানতে হয়। জানা এমন কিছু দুঃসাধ্য ব্যাপার নয়, কী-কী জিনিস আমাদের ভালোলাগে – তাদের সামনে রেখে কেন ভালো লাগে তা ভাবতে চেষ্টা করলেই ক্রমে-ক্রমে জানা যায়।

৩। চিত্রকল্প, রূপকল্প এবং উপমা নেই। এর মধ্যে একমাত্র উপমাই আমরা দৈনন্দিন কথাবার্তায় প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করি – হাজার হাজার বৎসর ধ’রেই ব্যবহার করছি। সেইজন্যই উপমা কখনোই অস্বাভাবিক বা দৃষ্টিকটু ব’লে মনে হয় না। সেজন্যই উপমা কবিতার সবচেয়ে স্বাভাবিক অলংকার। অনুপ্রাস যেমন পর-পর দশটি কি পনেরোটি কবিতায় ব্যবহার করলে অসহ্য বোধ হয়, উপমা তেমন নয়; হাজার-হাজার বছর ধ’রে ক্রমাগতই উপমা ব্যবহার হয়েছে, হচ্ছে ও হবে। ফলে উপমা কবিদের অত্যন্ত নিকটবন্ধু। তা সত্ত্বেও কোনো উপমা ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ কবিতাটিতে নেই। তার পরিবর্তে উপমার চেয়েও বেশি স্বাভাবিক ব্যাপার এ-কবিতায় রয়েছে – রয়েছে প্রতীকের মাধ্যমে analogy-র ব্যবহার, যার আলোচনা পরের দিকে করা হবে।

৪। মূল বিষয়বস্তু যা কবিকে ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ কবিতায় উক্ত বা ব্যক্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য করেছিল সেই মূল বিষয়বস্তুটি নেই। অর্থাৎ সাক্ষ্য প্রমাণহীন অবস্থায় রয়েছে কবিতাটির বক্তব্য বিষয়। এতক্ষণ যে-ব্যাপারগুলি লিপিবদ্ধ করলাম সেগুলি কবিতার editing-এর (কবির নিজের দ্বারা) অঙ্গ। কারণ এগুলি editing-এর মাধ্যমে ভিন্ন করা প্রায় অসম্ভব। অর্থাৎ ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ কবিতাটির রচনাকালে editing-এর প্রয়োজন প্রায় হয়নি। Editing-খুবই দুঃসাধ্য কাজ। প্রায় সাংবাদিকসুলভ রচনা লিখে পরে বারংবার কাটছাঁট ক’রে edit করতে হয়। এতগুলি ব্যাপার ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ কবিতাটিতে নেই। কিন্তু এই কবিতাটিতে আছে নিম্নলিখিত ব্যাপারগুলিঃ

১। আবিষ্কার আছে। যে-কোনো নতুন আবিষ্কার চমকপ্রদ এবং সেহেতু মনকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে। আবিষ্কার অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহীও হতে পারে। আবার যে-কোনো নতুন আবিষ্কারের ব্যবহারিক মূল্যও আছে – আবিষ্কার-বিশেষে মূল্য অপরিসীমও হতে পারে। কবিতায় বিষয়বস্তুরূপে এ-প্রকারের আবিষ্কারের ব্যবহার বিরল হলেও প্রচলিত আছে, বিশেষ ক’রে দর্শনশাস্ত্রে নতুন আবিষ্কারের ব্যবহার। শ্রীমদ্ভগবদগীতা যেমন কেবলমাত্র দর্শনাশাস্ত্রে নতুন আবিষ্কারের বিবৃতিমাত্র কোনো অলংকার নেই, কিছুই নেই, কেবলমাত্র বিবৃতি; তা সত্ত্বেও ওই তত্ত্বকথাগুলির চমকপ্রদতা, ব্যবহারিক মূল্য ইত্যাদি শ্রীমদ্ভবদগীতাকে অমরত্ব দিয়েছে। কোনো কবি যদি এ-প্রকারের কিছু আবিষ্কার ক’রে ফেলতে পারেন তবে তাঁর সাফল্যলাভ অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। যেমন হয়েছে ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ কবিতার জীবনানন্দের। উদ্ধৃতি দেওয়া অর্থহীন, সম্পূর্ণ কবিতাটি তাঁর আবিষ্কারের নিরাভরণ বিবৃতিমাত্র, পাঠককে সম্পূর্ণ কবিতাটি একবার প’ড়ে দেখতে অনুরোধ করছি।

২। উপমার বদলে substitution আছে। প্রকৃতপক্ষে মূলে সাংবাদিক-সুলভ কতকগুলি বাক্য কবির লেখার  ছিল; সেই বাক্যগুলির substitute – রূপে কতকগুলি বাক্য কবি লিখেছেন, মূল বাক্যগুলি একদকম না লিখে। Substitution করতে গিয়ে কবি তিনটি স্তরে কার্য সমাধা করেছেন, এবং সাধারণত এই তিনটি স্তরেই substitution করতে হয়। প্রথমে তিনি একটি উপমাই ভেবেছিলেন – যাদের বিদ্যা নেই, বুদ্ধি নেই, জ্ঞানও নেই সেই ব্যক্তিগুলিই আজকাল প্রকৃতপক্ষে সবকিছু সহজে বুঝতে পারে, জানতে পারে, ভবিষ্যৎ দেখতে পারে, এ-ব্যাপারটি যেন অন্ধ ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি চোখে দেখার মতো। দ্বিতীয় স্তরে তিনি মূল বিষয়টি বাদ দিয়ে দিলেন – রেখে দিলেন কেবলমাত্র ‘এ ব্যাপারটি যেন অন্ধ ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি চোখে দেখা’ অংশটুকু। এবং তৎক্ষণাৎ ‘অন্ধ ব্যক্তি’ একটি প্রতীকে রূপান্তরিত হল। তৃতীয় স্তরে কবি এই প্রতীকটির আচার-ব্যবহার একটু বেশি পরিমাণে তাঁর বাক্যের অন্তর্ভুক্ত করলেন – ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা’; এবং তৎক্ষণাৎ কবি প্রতীকও পার হয়ে এলেন, পার হয়ে এসে  analogy-তে উপস্থিত হলেন। মূল বিষয়বাহী বাক্যের substitute-রূপে কবি analogous বিষয়বাহী বাক্য লিখলেন, এবং তা করতে উপমা, উপমার থেকে প্রতীক তাঁকে সাহায্য করল। এ গেল কবির রচনাকালীন পদ্ধতি। পাঠকের পঠনকালীন অবস্থাও তাঁর স্বভাবত ভাবতে হয়েছিল – পাঠক ‘আঁধার’ শব্দটিকে অনুল্লিখিত মূল বিষয়গুলির (অ-জ্ঞান ইত্যাদির) substitute রূপে যেন বুঝতে পারে, না হলে কবির সমস্ত উদ্দেশ্য ও শ্রম ব্যর্থ হয়ে যাবে। যেমন ব্যর্থ হয়েছে জীবনানন্দের পূর্বসূরি বহু কবির রচনায়। রবীনদ্রনাথের ‘জাগরণে যায় বিভাবোড়ি/আঁখি হতে ঘুম নিল হরি’ কিংবা ‘এই কথাটি মনে রেখো, তোমাদের এই হাসিখেলায়/আমি যে গান গেয়েছিলাম জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়’ ইত্যাদি কবিতায় ক-জন পাঠক বোঝেন যে কবি নিজে সজ্ঞানে ‘জাগরণ’ শব্দটিকে সাধারণ নিদ্রাহীনতা অর্থে ব্যবহার করেননি, সর্বপ্রকারের সতকর্তা, সদাসজাগদৃষ্টি ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার করেছেন? ঠিক তেমনি ক-জন পাঠক বোঝেন ‘ঘুম’ এখানে সতর্কতাহীনতা, আলস্যময়তা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার করেছেন? এবং তেমনি ‘গান’ ও ‘তাঁর’ সারা জীবনের ফলশ্রুতি দর্শনপ্রচার। অথচ না বুঝলে কবির সব উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়, এবং তার জন্য কেবল পাঠককে দোষ দেওয়া যায় না। পাঠক বুঝতে যাতে বাধ্য হয়, তাঁর পদ্ধতি আবিষ্কার কাব্যতত্ত্বের ক্ষেত্রে জীবনানন্দের এক প্রধান আবিষ্কার। ‘জাগরণে যায় বিভাবরী/আঁখি হতে ঘুম নিল হরি’ – এই phenomenon এত স্বাভাবিক অবস্থায় বাস্তব জীবনে রয়েছে যে পাঠক এর স্বাভাবিক বাচ্যার্থ গ্রহণ ক’রেই থেমে যায়। কিন্তু ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ/যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশবি আজ চোখে দ্যাখে তারা’ এই phenomenon-টি যেহেতু স্বাভাবিক অবস্থায় বাস্তব জীবনে নেই সেহেতু পাঠক বাধ্য হয়ে বাক্যটির ‘প্রকৃত অর্থ’ অনুসন্ধান করে। আবার ‘এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়/মহৎ সত্য বা রীতি কিংবা শিল্প অথবা সাধনা/ শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়’; এখানেও পাঠককে ‘প্রকৃত অর্থ’ অনুসন্ধানে বাধ্য করার ব্যবস্থা রয়েছে; এবং পাঠক বাধ্য হয়। আবার উল্লেখ করা ভালো যে এই দ্বিতীয় বাক্যটিও – ‘এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়/মহৎ সত্য বা রীতি কিংবা শিল্প অথবা সাধনা/ শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়’ জীবনানন্দ পূর্ব বর্নিত ত্রিস্তর পদ্ধতিতে লিখে খাড়া করেছেন – উপমা, উপমা থেকে প্রতীক, প্রতীক থেকে analogy। এবং এ তো স্বতঃপ্রকাশ যে কবিতাটি এবস্ট্র্যাক্ট চিত্রের অনুরূপ। কাব্যতত্ত্বের এই পদ্ধতিটি বর্তমান প্রবন্ধের লেখক কয়েকশত বার ব্যবহার করেছেন।

উপমা থেকে প্রতীক (সাধারণত বিশেষ্য পদ হয়) সন্ধান করার পদ্ধতি ভিন্ন আরেকটি পদ্ধতিতে প্রতীক সন্ধান করা যায় এবং সন্ধান ক’রে পাওয়া যায়। সে-পদ্ধতির মূল রহস্য ‘চারিত্রিক সমীকরণ’ equating the characters of two nouns। ‘শকুন’ এবং ‘শেয়াল’ শব্দ-দুটি সেই পদ্ধতিতেও হয়তো আবিষ্কার হয়েছিল। সে-ব্যক্তিগুলির substitute-রূপে ‘শকুন’ ও ‘শেয়াল’ নামক বিশেষ্য-দুটি এল, স্পষ্ট বোঝা যায়, সেই ব্যক্তিগুলির চরিত্র ভিন্ন অন্য-কিছুর সঙ্গেই ‘শকুন’ ও ‘শেয়ালের’ মিল নেই। অর্থাৎ কেবলমাত্র চরিত্রই কবিদের প্রতীক নির্বাচন করে। এই ধরণের equation বা সমীকরণ ব্যবহারপর না ক’রে কবিদের উপায় থাকে না। আকৃতি, অবয়ব ইত্যাদির মিল দেখে যে-সব উপমা রচিত হয়েছে হাজার হাজার বছর ধ’রে, দেখা গেছে, ‘হৃদয়াবেগ সমীকরণ’ থেকে পাওয়া উপমা তদপেক্ষা অনেক, অনেক বেশি হৃদয়গ্রাহী। উদাহরণ ‘ফুলের মতো সহজ সুরে/প্রভাত মম উঠিবে পুরে’ বা ‘ঘন শ্রাবণ মেঘের মত/রসের ভারে নম্র নত’ বা ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন’ ইত্যাদি। পদ্ধতিটি প্রয়োগ করতে হয় এইভাবেঃ ‘আমার প্রভাত সুরে পূর্ণ হয়ে উঠবে, তার দ্বারা সঞ্জাত হৃদয়বেগ হবে ভারি মিষ্ট, মাদক এবং মনোলোভন। এখন কথা হচ্ছে, আমাদের বাস্তব জীবনে বারংবার ভারি মিষ্ট, মাদক এবং মনোলোভন হৃদয়াবেগ জাগায় কে, কীসে? খুবই সচরাচর জাগায় কীসে? ফুল-ফল জাগায়-এই হচ্ছে একমাত্র উত্তর। তৎক্ষণাৎ আর অন্য-কিছু না ভেবেই ফুলকে সুরের উপমারূপে ব্যবহার করা। এইভাবে নানাবিধ হৃদয়াবেগ জাগানোর standard elements যা আমাদের জানা সেগুলির একটি তালিকাই ক’রে ফেলা যায়, প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহারের জন্য। এবং সে তালিকায় পাখির নীড় থাকতে বাধ্য, এবং এই ‘পাখির নীড়’ নেহাৎ ‘হৃদয়াবেগ সমীকরণে’র মাধ্যমে ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ’ নামক আশ্চর্য উপমা পাওয়া সম্ভব। এখানে ‘শকুন’ ও ‘শেয়াল’ প্রাণী দুটি বীতশ্রদ্ধা এবং বিকর্ষণ সঞ্চার করে, যা কিনা কবির পক্ষে প্রয়োজন ছিল।

৩। বারংবার পঠনেচ্ছা-উদ্রেকের ব্যবস্থা আছে। রসাত্মক এই বাক্যগুলি (পাঠককে মূল কবিতাটি আর-একবার প’ড়ে দেখতে অনুরোধ করি) কীভাবে রসাত্মক হয়েছে তা-ই আমাদের আলোচ্য বিষয়। কিন্তু যেভাবেই রসাত্মক হয়ে উঠে থাকুক, অন্যতম প্রকৃত চিরন্তনীয় বিষয় এই যে কবিতার অদ্ভুত সংসৃজন, এতে বিবৃত দার্শনিক আবিষ্কার, এর অন্তর্নিহিত এবং অনুল্লিখিত বেদনা (অত্যন্ত গভীর ব’লেই হয়তো অনুল্লিখিত), কবিতার সৃষ্ট বিষণ্ণ পরিবেশ, মন্থর গতি ইত্যাদি সব মিলিয়ে পাঠককে কবি দ্বিতীয়বার পাঠের পরে তৃতীয়বার পাঠের আগ্রহ আরো বাড়াতে থাকে – কারণ পাঠক নিজে তখন পাঠক থেকে কবি হতে থাকেন, চিন্তায় প’ড়ে, বাধ্য হয়ে। পাঠকের মনে হয় এই আজগুবি, অর্ধসৃষ্ট রচনাটি আসলে তিনি নিজেই সম্পূর্ণ ক’রে তুলেছেন, এবং পাঠক তা ক’রে অধিকতর আনন্দ পান এবং আত্মতৃপ্তি বোধ করেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাঠ করতে-করতে পাঠক নিজেকে অত্যন্ত তুচ্ছ (রবীন্দ্রনাথের তুলনায়) মনে করতে বাধ্য, আর জীবনানন্দের কবিতা পাঠ করতে-করতে পাঠক নিজেকে অত্যন্ত মূল্যবান মনে করতে বাধ্য, যার ফলে পাঠকের পঠনেচ্ছা বাড়তেই থাকে। অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-কবিতায় আজ – এভাবেও জীবনানন্দ ভেবে লিখেছেন কিনা কে জানে।

৪। সহজে মুখস্ত ক’রে রাখার ব্যবস্থা আছে। বারংবার পড়তে-পড়তে যাতে কবিতাটি স্মৃতিস্থ হয়ে যায় সেদিকে কবি দৃষ্টি রেখেছেন। সুন্দর সাবলীল, অনায়াস-উচ্চার্য, বিষণ্ণ ছন্দ গ্রথিত করেছেন শব্দগুলিকে। ব্যস, তাহলেই তো কবির উদ্দেশ্য অধিকাংশ সফল। অথচ পুরোনো সংবাদপত্রের সংবাদ কে আর পাঠ করে? একশত বৎসর পূর্বেকার সংবাদপত্র কে আর পুনর্মুদ্রণ করে? তাঁর রচনা এক শতাব্দী পরেও যাতে পুনর্মুদ্রিত হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে কবি সাংবাদিকতাসুলভ রচনাকে এইভাবে পরিস্রুত করেছেন, ক’রে সার্থক কবিতাটি সৃষ্টি করেছেন।

৫। গভীরতা আছে। অর্থাৎ পাঠকের চিন্তার খোরাক প্রচুর পরিমাণে এই কবিতায় বিদ্যমান।

৬। সংযম আছে। সংযম কবিদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, এক দুরূহ তপস্যার মতো। যে-সব ব্যাপার লক্ষ ক’রে কবি এই ‘সিদ্ধান্ত’তে পৌঁছেছেন, সে-সব ব্যাপার অনুল্লিখিত, অলিখিত, ‘সিদ্ধান্ত’তে পৌঁছেছেন, সে-সব ব্যাপার অনুল্লিখিত, অলিখিত, ‘’সিদ্ধান্ত’টিই কবিতা। আমরা দেখলাম কবিতার বিষয়বস্তু কবির স্বকৃত একটি নতুন আবিষ্কার। অর্থাৎ মূল ব্যাপার, বিষয় ও সেগুলির বিশ্লেষণ ইত্যাদিও কবির স্বকৃত একটি নতুন আবিষ্কার। অর্থাৎ সেগুলি দিয়ে তিনি অনায়াসে একটি মূল্যবান প্রবন্ধের পুস্তক রচনা করতে পারতেন। তা না ক’রে কবিসুলভ সংযমবলে জীবনানন্দ একটি সার্থক কবিতা লিখেই চুপ ক’রে রইলেন। এবং মহৎ কবিই তাঁদের স্বকৃত আবিষ্কার (যার প্রত্যেকটি দিয়ে এক-একখানি বৃহৎ গ্রন্ত রচনা করা যেত) একটিমাত্র রসোত্তীর্ণ বাক্যে বিধৃত ক’রে রেখেছেন, বড়োজোর একটি কি দুটি স্তবকেই লিপিবদ্ধ ক’রে গেছেন। জ্ঞানভাণ্ডারে হয়তো তাঁদের সংযোজন কম হয়েছে, কিন্তু রসভাণ্ডার ক্রমাগত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে।

৭। বহুমাত্রিক চরিত্র আছে। ‘বহুমাত্রিক’ শব্দটিকে আমি multidimensional অর্থে ব্যবহার করছি। ‘মাত্রা’ বা dimension মানে স্বয়ংসম্পূর্ণ কিন্তু একটিমাত্র বিষয় ধরছি – যেমন প্রেম, জীবনদর্শন, সমাজনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান ইত্যাদি।

যেহেতু বিভিন্নপ্রকারের বহু বিষয়ে পৃথক-পৃথক ভাবে চিন্তা ক’রে একটিমাত্র সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি সেহেতু, বিপরীতপভাবে, মূল চিন্তার বিষয় যদি সম্পূর্ণ অনুল্লিখিত থাকে তবে উপস্থিত ‘সিদ্ধান্ত’ থেকে মূল বিষয় খুঁজতে-খুঁজতে বিভিন্নপ্রকারের বিষয়ের সাক্ষাৎ পেতে পারি। কবিতাকে বহুমাত্রিক করার অন্যতম পদ্ধতি এই, অন্যবিধ পদ্ধতিও আছে। জীবনানন্দ ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ কবিতাটিকে বহুমাত্রিক ক’রে তুলেছেন। এই আঁধার কীসের আঁধার, অন্ধগণ এইভাবে কী-কী ব্যাপার চোখে দ্যাখে? এই প্রশ্ন করলে এবং তাঁর উত্তর ভাবতে গেলে মনে হয় প্রেমের ক্ষেত্রের কথা, প্রেমের দেবতা অন্ধ। মনে হয় মানুষের পারিবারিক জীবনের কথা, মনে হয় জীবনদর্শনের কথা, সমাজনীতির কথা, এমনকী কাব্যতত্ত্বের কথাও মনে এসে যায়। এবং হয়তো পৃথক-পৃথক ভাবে প্রত্যেকটি বিষয়কেই এ-কবিতা ছুঁয়ে আছে।

 

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →