‘ডিভিশন অফ লেবার’
দুই তিনটা চাকরি করছি, ঐগুলার লগে অংকের কোন রিশতা তো আছিলোই না, ছোশালের রিশতাও আছিল খুব আলগা! জিন্দেগিতে জা কিছু পড়ছি তার ভিতরও দুইটার কোনটাই ততো নাই; এখন পেরায় আর না পড়লেও ইতিহাশ-লিটারেচার-দরশনের কয়েক খাবলা, ঐগুলাই বরং একটু পড়া হইছে! এখন নজরে ভাবের ইন্টারেস্ট লইয়া দিন-দুনিয়া দেখি! ইতিহাশ হইলো ভাবের খনি, দরশন হইলো কোদাল, পোয়েট্রি হইলো বেহেশতি ভাব, আর পলিটিক্স মানে ভাবের শালিশ-ফয়ছালা! হরদম আমি তাই এইগুলাতেই থাকি এখন! আর লিখি। গত ১০ বছর লিখতেছি, আওতার বাইরের জিনিশ লইয়াও লিখি। শব বেপারে আমার কোন একটা জাজমেন্ট আছে, আমি জাজমেন্টাল এবং পাবলিকের দরবারে আমার ভাবনা পেশ করি।
এই জে ভাবি আমি, বিচার করার চেশ্টা করি, কোন একটা জাজমেন্ট দিতেছি, এইটা তো একটা পেরাকটিছ বা চর্চা, বছরের পর বছর খরচ করতেছি, তাইলে অনেকের চাইতে আমার কি কিছু বেপারে বেশি বেশি বোঝার একটা শম্ভাবনা আছে না? কিন্তু এই ‘অনেকে’ কারা? ছেরেফ তারাই, জারা ভাবাভাবিতে অতো টাইম খরচ করে না। কতগুলা লোক আবার আমার মতো বা আরো বেশি টাইম খরচ করে, তাদের নজর হয়তো আমার চাইতে ভোতা বা আরো চোখা; তাগো লগে আমার কম্পিটিশন, কিন্তু কম্পিটিশন থাকলেও আমরা শমাজের একটা গুরুপ, আতেল গুরুপ!
এমন আরো অনেক গুরুপ আছে শমাজে। কেউ জাইংগা-পেন্টি বানায়, কেউ খোন্তা-কোদাল, কেউ ইমারত বানায়, কেউ ফলায় গাছ আর ফশল, এমন কত কত! ঐগুলার কোনটাই পারি না আমি, টাইম দিলে জে পারবো না, এমন না; কিন্তু ওনারাও ভাবাভাবিতে ততো টাইম দেয় না, আমিও ওগুলায় টাইম দেই না। তাই আমি ওনাদেরটা জেমন পারি না, তেমনি আমারটাও ওনাদের পারার কথা না! কিন্তু ওনারা জা কিছু বানায় তার পেরায় শবই ইউজ করি আমি, লাগে, নাইলে বাচি না; কিন্তু এইগুলা পয়শা দিয়া কিনি আমি, ওনারা বিকায়, তাই পয়লা নজরে ওনারাও হয়তো মালুম করতে পারে না জে, শমাজে দরকারি বিরাট একটা দায়িত্ত পালন করতেছেন ওনারা, আমারো মালুম হয় না জে, শুকরিয়া আদায়ের কোন দরকার আছে!
এই জে বেমালুম আমরা, পয়শা জে আমাদের রিশতাগুলা পেরায় নাই কইরা দিছে, এইটা কি ভালো, নাকি খারাপ? হয়তো খারাপই, কিন্তু দুনিয়ায় পয়শা আর বাজার আছে, এইটা শাতারের মতো, শিখছি আমরা একবার, আর ভুলতে পারি না! কোন এক জামানায় হয়তো আমরা পয়শা তুইলা দিতে পারবো দুনিয়া থিকা, কিন্তু তার আগে?
তো, আমারে তো তারা চাউল দিলো, কাউফল দিলো, দিলো কচু শাক বা হাশের মাংশ, আমি কি দিলাম? ওনারা তো ভাবাভাবিতে ততো টাইম দিতে পারে না, দিলে নিজেরটা শামাল দেবার টাইম কই পাবে, তাই ঐ পয়লা নজরেই থামলো, আমার তো ভাবাই কাম, আমার তো থামার কারন নাই, আমার টাইম তো ভাবাতেই খরচ করার কথা! আমার তো দেইখা ফেলার কথা জে, পয়শার তলে আতেল হিশাবে আমার কিছু দায়িত্ত আছে, পয়শায় দেমাগি আইনে ধরা খাইতে হবে না আমার, জানি, কিন্তু আমি তো এও জানি জে, দায়িত্তটা আছে আশলে!
কিন্তু দায়িত্তের কথা বাদ দিয়াই ভাবি; ওনারা জেমন কলা-কচু-পেন্টি বানাইলেন, বাজারে ছাড়লেন, তেমনি আমার কিছু চিন্তা বানাইয়া বাজারে ছাড়ার কথা। কলা-কচু পচা হইতে পারে, আনহেলদি হইতে পারে, ফলন খারাপ হইতে পারে, মানে খারাপ হইতে পারে, তাইলে এমন তো চিন্তার বেলাতেও হবার কথা! অন্যদের তুলনায় আতেলের শুবিধা হইলো, পচা কচু শবাই দেইখাই চেনে, কিন্তু পচা চিন্তা চিনতে আরেকজন আতেলই লাগতেছে!
এখন তাইলে আমরা একটা রাশ্টো ভাবার চেশ্টা করি। হিমালয়ের দখিনের এই বাংলাদেশ লইয়া ভাবা জাইতে পারে।
বাংলাদেশে ঐ গুরুপগুলা আছে। চাশা থিকা আতেল, শবই আছে। কলা-কোদাল পেন্টি বানাইয়া বাজারে ছাড়ছেন ওনারা, শারা দেশেই পাওয়া জাইতেছে, একটা চেইন আছে, ডিশ্টিবিউশন চেইন, শারা দেশে ছড়াইয়া দেবার নেটওয়ার্কটা চালাবারও কতগুলা গুরুপ আছে। বাজারের এই চেইনটার লগে তুলনা করেন তো, ঐ শব গুরুপের দুয়ারে দুয়ারে চিন্তা পুছাইয়া দেবার নেটওয়ার্কটা কেমন হালতে আছে?
এখন এই নালিশগুলা কম বেশি হাচা কথাই। কিন্তু নালিশগুলা আমাদের একটু বিচার করা দরকার, একমত হবার আগে কয়েকটা জিনিশ ভাবা দরকার। খেয়াল করেন, দেশে মোটামুটি ভালো ইলেকশনের ভিতর দিয়া জে কয়টা শরকার গদিতে বইছে, তাদের আমলনামা হাতে লন, তুলনা করেন অন্য শরকারগুলার লগে। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এই তিনটা মোটামুটি ভালো ইলেকশন; এর আগে জিয়ার ইলেকশন এবং ২০০৮ শালের ইলেকশনের বেপারে বহু কথা লোকে কইলেও বাস্তবে এগুলাতেও দেশের মানুশ ভোট দিতে পারছে মোটামুটি। এই শরকারগুলার আমলনামার লগে তুলনা করেন ১৯৭৩’র ইলেকশনের পরের শরকার বা ২০১৩ থিকা গদিতে থাকা নয়া বাকশাল বা পুরা এরশাদ আমল। কয়েকটা পয়েন্টে তুলনা করেন: শরকারি দলের হাতে খুন-রেপ, টেন্ডারবাজি, পয়শা পাচার, পাবলিকের পয়শা মাইরা খাওয়া, আইন-আদালত-পুলিশি জুলম; দেখবেন, মোটামুটি ভালো ইলেকশনের ভিতর দিয়া গদিতে বশা শরকারগুলার আমলনামায় দাগ একটু কম কম! জখনি গায়ের জোরে গদি দখল করছে, করতে চাইছে, ৫ বছর গদিতে থাকার পরে জেই শরকারকে জনতা ভোটের ভিতর দিয়া নামাইতে পারে না, ইলেকশন ঠেকাইয়া দেবার ধান্দা শুরু হইছে, ইলেকশন হয়ই নাই, তখনি ঐ পোরতিটা ইনডেক্সে আমলনামা ভারি হইছে।
কিন্তু আরেক দিয়া একটু ভাবা জাক! জদি খারাপ হয় জনতার ভোটিং শেই দায় কার? খেয়াল করেন, আমজনতা তার তার পেশাগুরুপ মোতাবেক পোডাকশন দিতেছে, আতেলরা শেই শব গুরুপে নাই, কিন্তু ভোগ করতেছে, করতে পারতেছে, বিনিময়ে আতেলদের বানাবার কথা চিন্তা, কেবল নিজেদের আখের গুছাবার চিন্তা না, কেননা, ঐ ঐ পেশাগুরুপও তো কেবল নিজের জন্য বানায় নাই তাদের মালছামান!
শমাজের শবাই জেমন কলা-কচু-পেন্টি বানায় না, জটিল পলিটিকেল ভাবনাও তেমনি শবাই ভাববে না, দুনিয়ার কোন দেশেই তেমন ভাবে না এবং এইটাই নরমাল। ভাবনার দায়িত্ত আতেলের, শেই ভাবনা বাছবিচারের দায়িত্তও তাদের এমনকি শেইটা আমজনতার দুয়ারে দুয়ারে পুছাইয়া দেবার দায়িত্তও অনেকখানি আতেলগুরুপের, বাকিটা অন্য পেশাগুরুপের, জেমন মিডিয়া। দুনিয়ার শবাই কবি হবেন না, শবাই ভাবুক হবেন না, জেমন শবাই চাশা হবেন না।
তাইলে বাংলাদেশের ভাবনাচিন্তার, আতেলদের পোবলেমটা কই? দেখেন, চাশা শবার জন্য ফলায়, শবাই তার ফল কিনতে পারে, শবাই তার খদ্দের, শে কয় না জে, আমি অমুকের কাছে বেচবো, আর অমুকের কাছে বেচবো না। আরো দেখেন, চাশার খদ্দেররা একে অপরের দুশমনও না, দুশমনি থাকলে শেইটা অন্য কোন মামলায়, চাশার ফলের খদ্দের হবার বেপারে দুশমন হইতে হইতেছে না। কিন্তু একই ঘটনা আতেলদের বেপারে নাই! আতেলরা তার চিন্তা জনতার কাছে বিকাইতে পারে, জনতার জন্য দরকারি চিন্তা বানাইতে পারে; আবার অন্য উপায়ও কিন্তু আছে! জনতার দুশমন শাশকের কাছেও নিজেরে বিকাইতে পারে; জনতার কাছে বিকাইলে তোলা উঠাবার মতো ১ পয়শা ২ পয়শা কইরা বেচতে হবে, আর জনতার দুশমন শাশকের কাছে বেচলে থোক টাকায়, এক টুকরা জমির বিনিময়ে বেচতে পারে! বাংলাদেশের পোবলেম হইলো, এই দেশের জনতার কপালের ফের হইলো– এই দেশের আতেলরা গড়ে জনতার কাছে না বেইচা জনতার দুশমন শাশকের কাছে বেইচা দিছে নিজেদের! জারা বেচেন নাই, তারা আবার এলিট, আমজনতার বুলিতে নিজের চিন্তা ডেলিভারি দেন না। বাজারের আইনে এদের কসুর হয়তো পাওয়া জাবে না, কিন্তু পয়শার কুয়াশা শরাইলে ছাফ ছাফ দেখা জাবে, এই আতেলরা আশলে বেইমান, নেমকহারাম।
রক মনু
Latest posts by রক মনু (see all)
- এডিটোরিয়াল: ‘উইন্টার ইজ কামিং’ - মার্চ 10, 2024
- ফিকশন: দোস্তি - এপ্রিল 4, 2023
- রাজনিতির দাগ খতিয়ান: বাকশাল-দুছরা বিপ্লব এবং তার পর - ডিসেম্বর 5, 2022