Main menu

অডাসিটি অব বাকুরাউ

বাকুরাউ হইল একটা সিভিল গ্রাম। সেই গ্রামে ইশকুল আছে, লাইব্রেরী আছে, ইন্টারনেট আছে, ছোট্ট একখানি মিউজিয়ামও আছে। মানুষ আছে ভালো-মন্দ মিলায়া। কিন্তু পানি নাই এক ফোটাও। পানি নিয়া গভীর পলিটিক্স আছে। পানি নিয়া আসতে হয় ট্রাকে ভইরা। কেন্দ্র হইতে বহু দূরে এই গ্রামীণ পৌর এলাকা চরম প্রাতিষ্ঠানিক কুটচালের শিকার। তথাপিও এর বাসিন্দারা নিজেদের মতন থাকতে পারে, থাকতে থাকে।

কিন্তু এই সর্বপ্রতিষ্ঠানবাদী রিয়েলিটিতে, বড় প্রতিষ্ঠান ছোট প্রতিষ্ঠানগুলিকে খেয়ে ফেলতে পারে। ছোট এই গ্রাম- দূরবর্তী লোকালয় তাই সহজেই নাই হইয়া যাইতে পারে। আমেরিকার গেমার মার্ডারারদের জন্য এহেন গ্রাম সহজ টার্গেট। এরা তাই প্রথমেই এই রোউগ গ্রামটিকে মুইছা দেয় গুগলের ম্যাপ হইতে। ব্যস হইয়া গেল! তারপর দূর থেইকা গুলি কইরা মারা। সেই মারায় এথিকসও আছে। বাচ্চাদের মারে না অরা। কেউ মারলে দুঃখ পায়, এইরকম।

কিন্তু এই গ্রামের আছে রেজিস্টেন্সের হিস্ট্রি, আছে পেশাদার খুনি রেসিডেন্স। সর্বশেষ কনফ্রন্টেশনে দেখা যায়, বাসিন্দারা একদম তুলাধোনা কইরা ফালায় এমেরিকানগুলিরে। প্রত্যেকটার কল্লা কাইটা গলার উপর বসায় রাখে ঘরের সিড়িতে। খালি পান্ডাটারে মাটির নিচের গারদে জ্যান্ত চালান কইরা দেয়। পান্ডাটা কল্লাগুলি দেখতে দেখতে ঢুকতে থাকে গারদে আর কয়, হাউ ক্রুয়েল!

প্রান্তের খুনাখুনিগুলি সব সময়ই ক্রুয়েল কলোনাইজড চোখে। আর কলোনাইজারদের খুনাখুনি এত এত এথিকাল সাইকোলজিকাল ওভারটোন দিয়া ঘিরা থাকে যে ওগুলি খুনই মনে হয় না!

ব্যাপারটা কখনোই এমন না যে প্রান্তের মানুষগুলি ভালো, আর কেন্দ্রেরগুলি খারাপ। মানে আমরা তো দেখিই বাকুরাউতে ভাড়াটে কিলারও আছে। সো ইস্যু সেইটা না। জেমস বল্ডউইন এমেরিকান কালোদের কথা কইতে গিয়া বলছিলেন যে, কালোদের মইধ্যে মিসোজিনিস্ট, মার্ডারার, রেপিস্টরা আছে। সমস্যা হইতেছে, যখন মার্ডারার ব্ল্যাক হয়, তখন যেন এইটা তার ব্ল্যাকনেসের সমস্যা হইয়া দাঁড়ায়, আ নিগ্রো প্রবলেম। মানে প্রান্তের খারাপগুলিই অরিজিনাল খারাপ, যেনবা খারাপের ডেফিনিশনটাই পয়দা হয় প্রান্ত হইতে। ফলে বাকুরাউয়ের লোকেরা যখন খুন করে তখন সেইটা ‘হাউ ক্রুয়েল’ হইতে পারে! কারণ অরা তো কল্লা কাটছে! আর হোয়াইট আমেরিকানদের খুন করার মইধ্যেও আছে পোয়েটিক ফিলোসফিক সায়েন্টিফিক এপ্রোচ! আইডিয়ার স্ফুরণ! কিলিং এজ আ গেইম, ফাংকি তো ব্যাপারটা!

 

এইটা শুনাইতে পারে খুব ফার ফেচেড, কিন্তু রিয়েলিই ঘটে তো এইটা। কয়দিন আগেই জানা গেল, অষ্ট্রেলিয় সেনারা আফগানিস্তানে বাচ্চাসহ ৩৯ টা (টা-ই তো!) মানুষ মারছে, জাস্ট খেলাচ্ছলে, নিজেদের মধ্যকার একটা গেইম, নাম দিছে ‘ব্লাডিং’। এই একইভাবে আমেরিকানরা টর্চার করছে আবু ঘারাইবে ইরাকিদের ওপর, ব্রিটিশ সৈন্যদের নিয়া সিমিলার কমপ্লেইন পাওয়া গেছিল ইরাকে আফগানিস্তানে, কানাডিয়ানরা এই কাজ করছিল সোমালিয়ায়, ইজরাইলী সৈন্যরা এই কাম রেগুলারলি করে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর। এগুলা হইল মোস্টলি নতুন কেইস। পুরাণে এগুলি বহু পাইবেন, গীতায় পাইবেন এমেরিকা কেমনে ইন্ডিজেনাস আমেরিকারে নাই কইরা দিছে, অষ্ট্রেলিয়া কেমনে এবোরিজিনালদের খাচায় রাখছিল, কানাডা কেমনে ফার্স্ট নেশন পিপলদের এলাকা দখলে নিছে, জার্মানি বেলজিয়াম আফ্রিকায় কী করছে, এবং ফরাসিদের কথা না-ই বললাম(এদেরটা আলাদা কইরা বলতে হবে)। আর এইসব এবনরমাল খুনের বাইরে, যুদ্ধের জায়েজ খুনগুলি তো আছেই!

বাকুরাউ ইম্পর্টেন্ট লাগছে কারণ, বাকুরাউ এপোলোজেটিক না, বাকুরাউ যেমন আছে তেমনভাবেই বাকুরাউ রাইট; পশ্চিমী ধর্মমতে কোন সংষ্কারে ব্যাপৃত হয় নাই বাকুরাউ। বাকুরাউতে স্পষ্ট কইরা দেখায়, বাকুরাউয়ের লোকজন খুন করতে পারে, এতে কোন লজ্জা নাই তাদের। দর্শক হিসাবে আপনে যখন মাপতে যাইবেন দুই পক্ষের খুনরে তখন পলিটিকাল হইতে বাধ্য হবেন, পাওয়ারের নিরিখে বিচার করতে পারবেন যে কোন খুনরে গাইলাইতে হবে আপনের। এইটাই হইল বাকুরাউয়ের অডাসিটি; সিগনিফিকেন্স।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →