Main menu

“রসুন চাষের ঘটনাবলী” নভেলের একটা অংশ

 

প্লাস্টিকের দড়ি কিনে ঘরে ফিরতেছিল মকবুল। সে বুঝেনা নাম্পা জিনিস, এইটা হাত-মাপা না হইয়া ওজন-মাপা হওয়ার কারণ কি। কোন লেখার শুরুতে মধ্যবয়সী কেউ দড়ি কিইনা নিয়ে যাচ্ছে শুইনা আপনেরা ভাবতেছেন সুইসাইডের দিকেই যাবে কাহিনী। আদতে না। মকবুল দড়ি কিনছে ব্যাসিক্যালি বউয়ের সাথে সম্পর্ক স্ট্রং কইরা বান্ধার জন্য। এইটা কেমন কথা! আসলে মকবুলের বউ পুকুর ঘাট নিয়া ঝামেলা করতেছিল তার সাথে, স’মিল থিকা কিছু কাঠের টুকরা আনছে সে, খেজুর গাছের টুকরা একটা আছিল ঘরের পিছে পইড়া, এখন বাইন্ধা দিলে বউয়ের চিল্লাচিল্লি যদি একটু কমে। মকবুলের বউ হইল আবিয়ার মা, আবিয়া মকবুলের মেয়ে। আবিয়ার মার মেনোপজ কাছাইছে, আর মকবুলের মেয়ের কয়দিন আগেই পিরিয়ড শুরু হইছে। মকবুলের বউ নারিকেল কোড়াইতেছিল, মেয়ে আইসা কয়, আম্মা আমি বড় হইছি। বউ বুঝেনা। বলে আরো বড় হও মামনি। পরে খুইলা বলল। আবিয়ার মা শুইনা ঠাস কইরা একটা থাপ্পর মারলো মেয়েরে। এত তাড়াতাড়ি বড় হইলি ক্যান? দূর হ সামনে থেইকা!

দেব হিন্দু। পেশায় নাপিত। দেব হিন্দু হইলেও কাটা। মানে খতনা করানো হইছিল। দেব হওয়ার কয়েকবছর পরে দিন রাত কান্দে। প্রস্রাব করার পর বেশি কান্দে। পরে তারে বাজারের ইসমাইল ডাক্তারের কাছে নেয়া হইল। দেবের পিসি ঘোমটা টাইনা ডাক্তারকে বলে মুতার পরও হাটতে ফিরতে ফোটায় ফোটায় পেশাব পরে। দুধওয়ালী কুত্তার দুধ যেমন টপ টপ কইরা পরে অমন। খায় না, ঘুমায় না। ইসমাইল ডাক্তার স্টেথোস্কোপ দিয়া হার্ট দেখে ফুসফুস দেখে। চোখ দেখে। পেট চিপে দেখে। হা করাইয়া জিব্বা দেখে। পরে কৃমির ঔষধ আর মাল্টিভিটামিন লেইখা দেয় একটা। দেব কান্দা থামায় না। কৃমির ঔষধ খাওয়ার পরদিন লম্বা লম্বা সাদা কৃমি বাইর হয়। দেবের মা দেবের বাপকে ডাইকা দেখায়, বিছনা ঝাড়ার শলা থেইকা একটা শলা ভাইংগা নিয়া আসে, শলা দিয়া নাইড়া চাইড়া দেখায়। দেবের বাপ বলে আমার পোলারে এগুলা এতদিন চুইষা খাইছে। কিন্তু দেব কান্দা থামায় না। পরে আবার ইসমাইল ডাক্তার। উনি বলেন এই রবিবারের পরের রবিবার হাসপাতালের অপোজিটে বিল্লাল মল্লিক গলির পরের গলির মরিয়ম ভাতঘরের ডান পাশে যান। ওখানে গেলে দেবকে খতনা করাই দেয়া হয়। দেবের বাপকে লুংগি কিনে আনতে বলেন ওরা। লুংগি নিয়া আইসা দেখেন ব্যান্ডেজ করা।

দেবের বাপ নারিকেলের ব্যবসা করে। রহল্যাপুর থেইকা নারিকেল আনে। পরে হাটে বেচে। লোকজন নারিকেল কিনার পর বলে ছিলা দাও। দেবের বাপের কাছে ছোরতা টাইপের একটা লোহার জিনিস আছে, এক মিনিটের ভিতর ছিলা দেয়। সিজনে পাকা পেপে আর জাম্বুরাও বেচেন উনি। জিনিস দুইটা উনার কাছে ফানি লাগে। জাম্বুরা বলেন আর পেপে বলেন দুইটাই কমবেশি মেয়েলোকের মাইয়ের মত মনে হয়। উনার মনি সাহার কথা মনে পড়ে। মনি সাহা দেবের বাপের এফেয়ার। দেবের বাপ হিন্দু পাড়ার রাস্তা দিয়া ডেইলি হাইটা যাইতো। রাস্তা লালচে মাটির। মাটিটা বর্ষার সময়ও কাদা হইতো না। তবে পিছলা হইতো। রাস্তার দুপাশে চন্দন গাছ। পিছলা এক বৃষ্টিদিনে চন্দন গাছের মালিকানা কার জানতে দেবের বাপ হিন্দু বাড়িতে ঢুকে। হিন্দু বাড়ির ঘাটায় গোল পুকুরে স্নান করতেছিল সাহা। সাহার পেটিকোট বুকের উপরে বান্ধা, ভিজাটা পায়ের কাছে পড়ে আছে। এমন সময় বাপ গিয়া বলে নমস্কার দিদি। দিদির মাথায় গামছা প্যাচানো। দিদি গামছা খুলে হাতে নিয়া চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলে চন্দন কাঠ আমাদিগের। পরে দরদাম হইলে বাপ বলে কিস্তি কইরা দিব, রাজি কিনা। সাহা বলে দিয়েন আরকি। কিস্তি দিতে আসতে আসতে সাহার সাথে ভাব হয়। আস্তে আস্তে এফেয়ার হয়। একদিন এফেয়ারজনিত কারণে দেবের বাপ ঘাটে গেলে সাহার বড় ছেলে রাজ ভৌমিক দেখে ফেলে।

মকবুল ডিপ্লোমা মেকানিক। ফ্রিজ টিভি ঠিক করে। বাজারে দোকান আছে: রনি এন্টারপ্রাইজ। রনি মকবুলের পোলা আছিল। ছোট থাকতে মারা গেছে৷ হওয়ার পর থেইকাই পেটে আমাশয়। বুকের দুধ যা খাইতো তা বাইর হইয়া যাইতো। পরে বাজারের কম্পাউন্ডার বলল বুকের দুধ দিয়েন না। পট খাওয়ান। পট মানে ল্যাকটোজেন দুধ পাউডার। দামি হইলেও খাওয়াতে হইতো। কিন্তু যে লাউ সে কদু। পেটের গন্ডগোল লাইগাই থাকলো। পেটে সমস্যার কারণে ভাত দেয়া হইতো না তারে। সে কাউরে ভাত খাইতে দেখলে লোল ফেলতো, হা করতো। কিন্তু দেয়া হইতোনা। খাইলেই তা বাইর হয়া যাবে ভাবতো ঘরের সবাই। পটের দুধ দেয়া হইতো, কিছুক্ষনের মধ্যে সব বাইর হইয়া যাইতো। আবিয়ার মা আবিয়ারে বিছনার নিচে ঢুইকা ভাত খাইতে বলতো যাতে বাচ্চা রনি না দেখে। একদিন খিচানি আইসা মারা গেল। বাচ্চারা মরার পর বেহেশত আর দোযখের মাঝখানে একটা কমন জায়গায় থাকার কথা। আবিয়ার মা ভাবে বাচ্চাটা মরার পিছনে সে দায়ী। সে বাপের বাড়ি গিয়া এক রাতে তাদের ঘরের লজিং মাস্টারের সাথে শুইছিল।

দেবের পিসি ঝিনুক। প্রাইমারি স্কুলের টিচার। লম্বা-টম্বায় পুরুষের মত, আচার-আচরণও । কিন্তু ভয়েস মিষ্টি আর চিকন। মুখে মেছতার দাগ আছে। বিয়ার বছরখানেক পর উনারে ফেলে রাইখা জামাই পালাইলো। বিয়ার পর থেইকাই পিসির জামাই শ্বশুর বাড়িতে থাকতো। সবাই বলল জামাই পূবকূলে পালাইছে। এরপর উনি আর বিয়া-শাদি করেন নাই। বাপের বাড়িতে ভাইয়ের কাছেই রইয়া গেলেন। পড়ালেখা কিছু করলেন। পরে চাকরি হইল। সকালে স্কুলে গিয়া ছাত্রদের সমানে পিটান। ছাত্ররা ঝিনা আপার নাম শুনলেই ভয় পায়। দেব পিসির হাতেই বড় হয়। বছর কয়েক আগেও পিসির সাথেই রাতে ঘুমাইত। একদিন রাতে পেশাবের চাপে দেবের ঘুম ভেংগে যায়, পাশে দেখে পিসি নাই। সে বিছনা থেইকা নাইমা দরজার কাছে যায়। দরজা জাস্ট টাইনা দেওয়া, বাইরে দিয়ে লাগানো না। দরজা ঠেইলা বাইর হইলো দেব। বাইরে জোসনার আলো। উঠান পার হইয়া দূরে বাশ ঝাড়। ওইখানে পিসিরে আবছা দেখা যায়। দুইটা ধবধবে সাদা ছাগলরে টাইনা নিয়া জোস্নার আলোতে বাধলেন নাকি পিসি!

খুব বৃষ্টি। দেবের বাপ নারিকেল নিয়া নামলো বাস থেইকা। বাস থেইকা তারে এক হিসাবে ধাক্কা দিয়া নামাইলো। বাসের ছাদ থিকা নারিকেলের বস্তা ফেলছে জমিনে। কি একটা অবস্থা! অথচ সেদিনের কথা, তখন প্যাসেঞ্জার টাউনে যাব বললে বাসওয়ালাদের কত খুশি। তারা বলত গোসল সাইড়া জামা পইড়া আসেন ধীরে-সুস্থে, আমরা দাড়াবো। নামার পর আধা ভিজা হয়ে গেছেন উনি। ভোরে যাওয়ার সময় একফোটা মেঘ আছিল না। আর এখন আসমান ভাইংগা পড়ে। এখন উনার সবার আগে যেটা করতে হবে সেইটা হল ধুইতে যাইতে হবে। পেশাবখানায় ধুইতে যাইতে হবে। কিন্তু একটা জিনিস মাথায় ধরে না। বাসের লোকগুলার সবগুলার কপালে একটা কইরা চোখ কেন! সবগুলা যেন একেকটা দজ্জাল। সবার হাতে রুবি পাথরের আংটি। মুঠি ধরলে একেকটা হাতের খোপা যেন একেকটা বড় সাইজের কাতলা মাচের মাথার সমান হয়। সবার চুলের সিতা ডানপাশে। সবাই গোফের ঝাট খাড়া কইরা বলল মাদারচোদরে লাথি দিয়া নামা। কিন্তু এখন এসব ভাবার সময় নাই। তাড়াতাড়ি ধুইতে হবে। বাসের সিটে বসা ওই মহিলার পিঠে হাত দিতেই ধূতি ভিজা গেল। এরকম তো হয় না তার!

নাপিতের সব এংগেল থেইকাই দেখার দরকার পড়ে। এজন্যেই দেখবেন নাপিতের দোকানের চারপাশে আয়না। একটা আয়নার ভিতরে আরেকটা আয়নার কাহিনী দেখা যায়, ওইটার ভিতর আবার আরেকটা। শুরু বা শেষ নাই কোন। দোকানে কেউ একজন ঢুকলে লোকটা আসলে কোন দিক থেইকা আসলো আইডেন্টিফাই করা যায় না। আবার আয়নায় একই লোকরে অনেকগুলা দেখাইলেও সবার চেহারা একরকম হয় না। ব্যাসিক্যালি অপটিক্যাল রোটেশনের কারণেই এইটা হয়, ফিজিকস। ফিজিকস নিয়া বলতেছি বইলা ভাইবেন না মেটাফিজিকস আসবে। এটা দেবের দোকান। দেবীও আছে দেয়ালে। আর আছে ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনার পায়ের কাছে ফুটবল, উনারে দুইজনে পা মারতেছে আর একজনে পিছন থেইকা জার্সি ধইরা রইছে। ছবির নিচে লেখা ওরা আমাকে এত মারে কেন! দেবের চুল কাটতে প্রবলেম হচ্ছে। দুই পাছার মাঝখানে চুলকায়। দুয়েকবার থুথু ফালানোর নাম কইরা দোকান থিকা বাইর হইয়া আংগুল ঢুকাইয়া কচলে দিয়া আসে। কাজ হয় না। দ্বিগুণ হইলো যেন। পাছার একদম মুখে এনাল স্ফিংটারের কাছে চুলকায়!

মকবুলের একটা দুই ব্যান্ডের রেডিও আছে। ব্যান্ড চেঞ্জ করলে বিবিসি বাংলা সংবাদ শুনা যায়। সকালে গোসল করার আগে মকবুল বুকডাউন মারে। মকবুলের ফ্রেন্ড বলছে রাতে বিছনায় পারফর্মেন্স বাড়াইতে হলে বুকডাউন মারার দরকার আছে। পেটের ভুড়িও কমাইতে হবে। পেটের ভুড়ি কমানোর জন্য আম গাছের কচি পাতা খাইতে হয়। আম গাছের কচি পাতা চর্বি কাটে। মকবুল মেয়েরে কচি আম পাতা ছিড়ে আনতে বলে। আবিয়া কচি পাতা আইনা দেয় বাপকে। মকবুল বলে ধুইয়া আনো মামনি। আবিয়া টিউবওয়েলে যায়। নিজে কল চেপে আবার নিজে ধোয়ার একটা প্যারা আছে। ধোয়া পাতা আইনা বাপকে দেয়। কচি আম পাতা মুখে দিয়া কষটে তিতায় মুখ কুচকায় মকবুল। আবিয়ার মা আগুন জ্বালাইছে। রেডিওতে বলে দেশে লেদা পোকা বাড়ছে। সকল রবি-শস্যে লেদা পোকার প্রকোপ বাড়ছে। মকবুল বলে আল্লা মানুষ আর রবি-শস্যরে পচনশীল করছে যাতে এই দুইটা মাল কেউ বেশি দিন গুদামজাত করতে না পারে। মানুষ মরলে তাড়াতাড়ি কবর দিতে হয়, রবি-শস্য তাড়াতাড়ি হাটে তুইলা বেচতে হয়। আবিয়ার মা হাইসা জানালা খুইলা দেয়, যাতে চুলার ধোয়া বাইর হইয়া যায়। মকবুলরে বলে পুরান হইয়া গেছে, তোমার কোমরের তাউগাটা চেঞ্জ কইরো।

আবিয়ার মাসে তিন বারও পিরিয়ড হয়। তখন পেটে ব্যাথা করে ভীষণ। খাইতে টাইতে চায় না। স্কুল থেইকা আইসা ভাত খায়না। কদবেলের ভর্তা নিয়া বসে। আবিয়ার মা ধমক দিলে ঘন্টা খানেক ফুপাই ফুপাই কান্দে। পরে মারে ডাইকা ওই ভর্তা আবার আদর কইরা খাওয়াইতে হয়। একদিন স্কুল থেইকা আইসা আবারো কান্দানি। দমকে দমকে কান্দে। মা জিজ্ঞেস করে কি হইছে। স্কুলে মারছে কিনা। উত্তরে কসরত কইরা চোখ টিপে পানি ফেলায়। ঘটনা হইলো স্কুল থেইকা ফেরার পথে এক পোলা ল্যাংটা পোন ল্যাংটা পোন বইলা চিল্লাইছে। আবিয়া ফ্রক পইড়া স্কুলে যায়। ওইদিন স্কুলে যাইতে সে ফ্রকের নিচে কিছু পরে নাই। বাতাসে তার ফ্রক উলটাই গেল। পিছনে এক গ্রুপ পোলামাইয়া ছিল। ওইখান থিকা একটা পোলা আবিয়ারে ল্যাংটা বইলা ক্ষেপাইলো। মা জিজ্ঞেস করলো হাপ্পেন পরস নাই ক্যান। বলল ভিজা। আরেকদিন আবিয়া ন্যাকড়া চেঞ্জ করতে গেল। চারিধার প্লাস্টিক। একটা খসখস শব্দ পাইলো পিছনে। তাকাইয়া দেখে একটা গুইসাপ প্লাস্টিকের নিছে জিব্বা বাইর করে আর ঢুকায়। আবিয়া ন্যাকড়া ফালাই দৌড় দিল। 

আবছা অন্ধকার। বেড থেইকা নাইমা ঠান্ডা ফ্লোরে পা পড়তেই বাপ্পির মাথার তালুতে গিয়া লাগে। ঝিনঝিন কইরা উঠে। গলা শুকাই কাঠ হয়ে আছে। পানির জগ ডাইনিং টেবিলে। গোড়ালি আর বুড়া আংগুলে ভর দিয়া হাইটা কোনমতে গিয়া পানি গ্লাসে ঢালে। পেনিস এখনো খাড়াই আছে। মর্নিং গ্লোরি। কিন্তু এখন তো মর্নিং না। রাত তিনটা মে বি। পুরুষলোকের পেনিস রাইতে দুই-চারবার খাড়ায়, এইটা ন্যাচারাল। বাপ্পি এইটা একটা বইয়ে পড়ছে। পানি মুখে দিয়া শক খায় রীতিমতো, এত ঠান্ডা! জানলে ওভেনে তিরিশ সেকেন্ড দিয়া খাইতো। এই ঠান্ডার ভিতরে কোন রুমে জানি ফ্যান চলে। মনে হয় রাতে গরম করা নলার ডেকচি ঠান্ডা হইতে দিছে ফ্যানের নিচে। নলা আর মুলার ঘ্রাণ বাপ্পি পছন্দ করে না। নলা খাইলেও মুলা খায় না। সে একটা উপন্যাসে পড়ছিল এক গরীব লোক তার বোনের বিয়াতে গরুর হাড্ডি দিয়া মূলা রান্দে। বরযাত্রীরা খাইয়া বদনাম করে। যতবারই বোনরে দেখতে সে বোনের বাড়িতে যায় ওই এলাকার লোক যারা বরযাত্রী আসছিল উনারে দেখে পেটে বাড়ি দিয়া দেখায় যে পেট ফাপছে। বিয়াতে মূলার তরকারি দেয়ার টিটকারি ছিল এইটা। বাপ্পি আবার বিছনায় ব্যাক যাওয়ার সময় গোড়ালির নিচে আচমকা একটা টিকটিকি টাইপের কিছু পড়ল। ফটাশ করে পেট ফেটে গেল গোড়ালির চাপে।

মাথা জিনিসিটা গোল না আসলে। ডিম সাইজের। কপাল উচু হইলে ডিম ভাবটা আরো ক্লিয়ার হয়। চুল কাটতে গিয়া দেবের মনে হইলো। ম্যাক্সিমাম লোকের চুলের গন্ধ সেইম। এইটা কেন মনে হইল আমি অনুমান করতে পারি, ব্যাসিক্যালি নারিকেল তেল আর সরিষার তেলের ইন কম্বিনেশন একটা ঘ্রাণ হতে পারে এইটা। দেবের মাথা কিছুটা বাকা। চুল ছোট থাকলে এইটা আরো বেশি প্রমিনেন্ট হয়। তাই সে চুল বড় রাখে। দেবের চুল মিহি চিকন, লালচে টাইপের। একটু নাম্পা হইলেই কুত্তার লেঞ্জার মত বাকাই যায়। স্কুলে পোলাপাইন তারে একঢাইক্কা ডাকতো, তার মাথার সাইজের কারণে। দেবের দোকানে এক ভদ্রলোক চুল কাটাইতে আসতো। মাঝবয়স কইরা। ঝাকড়া সাদাকালো চুল ফুইলা থাকতো, পানের বাট্টার মত মুখ, আর বড় দশ নাম্বার সাইজের ডিয়ার ফুটবলের সমান মাথা। মাঝে অনেকদিন গ্যাপ দিয়া আসল চুল কাটাইতে। একহাত নাড়াইতে পারেনা। চুল ন্যাতাই গেছে। মাথার সাইজ ছোট হয়ে গেছে মনে হইলো। মাথার একপাশে টেপ গইলা গেছে কিছুটা। মুখের একপাশ ঝুইলা গেছে। লালা পড়ে বাচ্চা পোলাপানের মত। তার ছেলে তারে ধইরা নিয়া আসল। চুল কাটানোর পরে বখশিশও দিল তার পোলা। বেশ কয়দিন পর ওই পোলা চুল কাটাইতে আসলো আবার। মুরব্বির কথা জিজ্ঞেস করতে বলল আব্বা তো মারা গেছে। এরপর থেইকাই বাকা মাথা নিয়া দেবের অস্বস্তি আর ভয়। হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ। দেবের গিল্টি ফিলিং হয়। মনে মনে ভাবে সুলেমানের সাথে ওই কাজ আর সে করবেনা। ইদানিং চুলকানির সাথে হালকা জ্বলেও ওখানে।

একবার ডেকচির ভিতর আবিয়ার মাথা আটকে গেলো। তখন আবিয়া ছোট। আবিয়ারে ছোট ডেকচি পাতিল সামনে দিয়া পুকুরে বড় কাথা ধুইতে গেল আবিয়ার মা। আগের রাতে নাপাক লাগছিল কাথায়। মকবুল তাড়াহুড়ায় বালিশের বদলে কোমরের নিচে কাথাকে দলা কইরা দিল। নাপাক পইড়া সেই কাথা ভিজে গেল। আসলে তাড়াহুড়ায় কাথা দিয়া কোমর উচা করছে বললে ভূল হবে, মকবুলের কাথার প্রতি ফেসিনেশন বেশি। একদিন চূড়ান্ত সময়ে কাথার কোনা মুখে পুরে চুষতে চুষতে ইজাকুলেট করল। ডিপ্লোমা কলেজে চারজনের রুম আছিল, সন্ধ্যায় কেউ না থাকলে কাথারে পুটলি কইরা রানের চিপায় দিত মকবুল, কিছুক্ষনের ভিতরেই হালকা ঘাম দিয়া দিত। কাথা ধোয়া বেশ পরিশ্রমের। ফিকশন লেখার মতই পরিশ্রমের। কাথা এমনে হালকা, যে-ই না পানিতে ডুবানো হয়, তুলতে পাথরের মত ভারি হয়ে যায়। একবার সাবান-সোডা লাগলে ওইটা ছাড়াইতে আট-দশবার পানিতে চুবাইয়া তুলতে হয়। সাবান ক্ষার, তাই কাথায় রয়ে গেলে কাপড়ের টেম্পার দ্রুত যায় গা। কাপড় নরম হয়ে যায়, দ্রুত ছিড়ে যায়। রাতে পায়ের আংগুলের সাথে লাইগা ফ্যাত কইরা ছিড়লে গিল্টি লাগে। ঘাট থেইকা বাচ্চার কান্দানির শব্দ পাইয়া আবিয়ার মা দৌড়াইয়া গেল। গিয়া দেখে বাচ্চার মাথা সিলভারের পাতিলের ভিতর আটকে গেছে।

বাপ্পি গলি হারাই ফেললো নাকি! এদিকে একবার আসছিল আগে সে। কম্পিউটারের দোকানের অপজিটে মন্দির, মন্দির ফেলে সামনে গেলে হলুদ বিল্ডিং, সামনে আগাইলে মোড় আছে, মোড় থেকে তিনটা গলি, কোনদিকে যাবে সে! মোড়ে কিছু হাস ঘাস খায়। আর গলায় ফ্যাগা ফ্যাগা টাইপের শব্দ করে। বড় বড় হাস। এগুলা চীনা হাস। চীনা হাসের কালারের প্রতি সেনসিটিভিটি আছে। একবার সে তার ফুফুরে বলতে শুনছিল চীনা হাসের এটাকের কথা। লাল শাড়ি পড়া ছিলেন উনি। চীনা হাস শাড়ি ছিড়ে ফেলল। কামড়ে রক্তারক্তি অবস্থা। পুকুরে ঝাপ দিতে হইলো লাস্টে ফুফুরে। বাপ্পির গায়ে মেরুন রঙের শার্ট। চীনা হাসের ভয়ে বাপ্পি আন্দাজি একটা গলিতে ঢুকে গেল। কিছু দূর গেলে একটা জটলা। উঁকি দিয়া দেখলো মুরগীর লড়াই। আসলে লড়াই হচ্ছেনা, রাতা-মোরগ দুইটা গলা ফুলাইয়া মাথা টান-টান কইরা একটা আরেকটার দিকে তাকাই আছে। অপোজিটে ফার্মেসীর পাশ দিয়ে গলি, অল্প গেলে এইটাই তো বাড়িটা। ভূইয়া মঞ্জিল। দোতলায় উঠে বেল দিল বাপ্পি। দরজা খুললো সোমা বৌদিদি। একটা পেটিকোট আর ব্লাউজ পড়া। বললেন আসো বাপ্পি ভিতরে আসো।

মনি সাহাদের পুকুরের নাম চন্দ্রপুকুর। গোলপুকুরও বলে লোকে। পুকুরের একপাশে বাড়ি অন্যপাশে শ্বশান। একপাশে রাস্তা আরেকপাশে পোল্ট্রিফার্ম। দেবের বাপ কিস্তির টাকা আনে নাই, আনছে তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ঘাটে বইসা বইসা সাহার ডাকের অপেক্ষায় থাকে। একটা পানকৌড়ি জাকের আগায় বইসা ডানা শুকায়। ভিজা পানকৌড়ি যেন এই মাত্র স্নান করে উঠা যুবতী। সাহার ঘাড় লক হয়ে আছে, ঘাড়ে ব্যাথা। মাথা নাড়াইতে পারেনা। তবুও আস্তে আস্তে ঘাটে আসলো। দেখলো সাদা ধবধবে ধূতি ফতুয়া পইড়া বসে আছে। সাহা বলল ঘাটের যেখানে উনি আইসা বসেন ওখানে রাতে কুত্তা ঘুমায়, মুতে। সো নাপাক শরীরে ঘরে ঢুকতে দিতে চায় না সাহা। দেবের বাপ দাড়াই যায় শুনে। একবার অশুচি যেহেতু হইয়েই গেছে তাইলে আরকি! এইটা ভেবে আবার বইসা পড়েন সিমেন্টের ঘাটে। বসতেই ঠান্ডা লেগে উঠে পাছায়। আবার দাড়াই যান উনি। গায়ে গায়ে একটু জ্বরও আছে। একজনের ঘাড়ে ব্যাথা, আরেকজনের জ্বর জ্বর। রাতে শোওয়ার বালিশ রোদে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলে আপনার ফটো নেন দিদি। সাহা খুশি হয় ফটো পেয়ে। যুবতি কালের ছবি। মাথার দুইপাশে দুইটা বেনি। গলায় লকেট। সাহা খুশি হইলেও ঘরে যাইতে বলে না। বলে ছবিতে আমারে চাকমা চাকমা দেখায়। শরীরের তুলনায় সাহার পা দুইটা ছোট মনে হয় দেবের বাপের। ফর্সা সাহার রান দুইটা দ্বিগুন ফর্সা, ভাবেন উনি। উনার সাহার পা ধরে সালাম করতে ইচ্ছে হয়। দেবের বাপের পেশাব টাইপের চাপ আসে, দুয়েক ফোটা বের হয়ে গেছে বইলাও মনে হয়। সাহাকে বলেন আসি দিদি।

সোফায় বসা সোমা বউদির জামাই। বাপ্পি ঢুকে উনার সামনের সোফাতেই বসল। জামাই বললেন বাপ্পি তো কি অবস্থা? বাপ্পি হাসলো, বলল এইতো আছি। জামাইর ঝাটা ঝাটা গোফ, লম্বা করে ছাটা। সাদা ভান্ডারি লুংগি পরা। গলায় মোটা চেইন। বাপ্পি বেহেসস্তি জেওরে পড়ছিল পুরুষ মানুষের সোনা পরা হারাম। ইনারা তো হিন্দু, নাহলে ইনফো’টা শেয়ার করা যাইতো। সোমা বউদি একটা টি-শার্ট পরে আসলেন। সোমা বাপ্পিকে কি দিচ্ছ? নুডুলস দিবে কিনা জিজ্ঞেস করলো বউদি। বাপ্পি ভাবল দেয়ার থাকলে দিলেই পারে, জিজ্ঞেস করার কি আছে। বাপ্পি বলল না খাব না, এই বাসা থেকে খেয়ে আসছি। তাহলে পেয়ারা খাও। স্লাইস করে দিল পেয়ারা, উপরে শুকনা মরিচের গুঁড়া। বউদি বলল আমার ছেলে দ্রুত ধরতে পারে, কিন্তু ক্যাডেট ভর্তির সিলেবাসটা হিউজ মনে হল। বলতে বলতে টি টেবিলের উপর বসলেন উনি। বাপ্পি বললেন আপনি চিন্তা করবেন না। আমি তৈরি করে দিব। পেয়ারা মুখে দিতেই কাশি উঠলো। শুকনা মরিচের কারণে হতে পারে। কাশি লুকানোর কোন সিস্টেম নাই। লুকালে বরং কিছুক্ষন পর ব্লাস্ট হয়, আরো বেশি অভদ্র দেখায়। তবুও বাপ্পি চাপার ট্রাই করলো। চোখে পানি এসে গেলো। তুমি পাখিটা আইডেন্টিফাই করতে পারলে পরে? বউদি বলল ওটা ল্যাঞ্জা ল্যাটোরা মে বি। বলতে বলতে টি-শার্ট তুলে পেটে চুলকালো, বাপ্পি দেখলো ফর্সা পেটের মাঝখানে ঢাউস গভীর নাভি।

দেব গরম পানির গামলায় বসা। ডাক্তার প্রতিদিন দুই তিনবার বসতে বলছে। আধাঘন্টা খানেক বসতে হয়। ইসমাইল ডাক্তাররে পোন্দের ভিতরে চুলকায় আর জ্বলে বলার সাথে সাথে বিছনায় গিয়া শুইতে বললেন। উনি উঠে আইসা উপড় হইতে বলেন। উপড় হওয়ার পর লুংগি তুলেন। গ্লাসে দেখা যায় ইসমাইল ডাক্তার হাতে গ্লোভস পড়লেন। বাইরে একজন লোক আরেকজনরে তালতলার কথা বলল, উত্তরে ওই লোক বাশের কথা বলল, পরে তারা একমত হইলো যে এইটাই আখেরি জমানা। বিছনা থেকে এরকম কিছু শুনলো দেব। বিছনা থেকে নেমে প্রেসক্রিপশন হাতে বাইরে আইসা পরে লোক দুইটারে খুজলো দেব, পাইলো না। দুইটা অষুধও লেখে দিলেন ডাক্তার, আর গরম পানির গামলার কথা বললেন। পিসি পানি গরম করে এনে দেয়। পুরাতন আমলের সিলভারের গামলা। অসংখ্য টেপ গলা। গরম পানির সাথে ঠান্ডা পানি মিক্স করে আংগুল দিয়ে দেখে দেব। ঠিকঠাক মনে হইলে পাছা ছোয়ায় পানিতে। প্রতিবার পাছা ছোয়ানোর সাথে সাথেই শক খাওয়ার মত পাছা তুলে ফেলে দেব। বেশ কয়েকবার ডুবানোর পর গরমটা সহনীয় হয় আস্তে আস্তে। সমস্যা হইলো গরম পানিতে তলপেট পর্যন্ত ডুবে যায়। বেশ অস্বস্তি লাগে দেবের। ঝুলে থাকা অন্ডকোষ আরো ঝুলে যায়, টনটন করে উঠে। ছোটকালে এক বুড়ালোকরে পেশাব করতে দেখছিল দেব। ঝোপে মনগোটা পাড়তে গেছিল। ঝোপে বইসা মনগোটা গুনতেছিল। বুড়া ওই ঝোপের কাছে এসে দেবের দিকে মূখ করে লুংগি তুলে বসলো।

বাপ্পি অংক করাচ্ছিল বাচ্চাকে। রফিক সাহেবের জন্ম এত তারিখে হলে অমুক তারিখে তার বয়স কত। পুরা ফ্ল্যাটের ম্যাক্সিমাম জায়গা এখান থেকেই দেখা যায়। টেবিলে দাদা-বউদি। কাকন চাউলের পায়েস খায়। সোমা বউদি পেটিকোট আর সেমিজ জাতীয় স্লিভলেস কিছু একটা পড়া। দাদা খালিগা। লোমশ দাদা। বউদি চামুচ কেটে খায়, মাঝে মাঝে এক চামুচ জামাইর মুখে তুলে দেয়। দাদা না তাকায়, গিলে খায়, আর চোখ জার্নি টু দ্য এন্ড অফ দ্য নাইট বইয়ে। বউদি ধোয়ার জন্য বাটি-টাটি নিয়ে যায় কিচেনে। বেগুনি সেমিজ কিচেন থেকে বারান্দায় যায়, ফিরে এসে ফ্রীজের ঢালা খুলে, বেড রুমে যায়, ডাকে রোহিত দেখে যাও। রোহিত উঠে, ঢিলা লুংগি টাইট করে বাধে, সবুজ মলাটের বই উল্টাই রাখে। তারা কি বলে দূর থেকে শোনে না বাপ্পি। একটু পর শোনে বেগুনি সেমিজ গায়, ঠাকুরের গান, ওই মালতি লতা দোলে। লোমশ ভান্ডারি লুংগি আর বেগুনি সেমিজ ডাইনিং রুমে আসে। কোন একটা কাহিনী বলে যায় লোমশ। তারপর বারদামো আফ্রিকা থেইকা আমেরিকায় আসে, ওখানেই মলির সাথে পরিচয়, মলি তো প্রস্টিটিউট আছিল। মনে হয় বইটার কাহিনীই বলতেছিল। আফ্রিকার লোকজনের সাফারিং নিয়া কথা তুললো মাঝখানে উনারা, মানসিক রোগের ডাক্তাররে আনলো। বাচ্চা বলল সাতষট্টি বছর দুইমাস তেইশদিন। বাপ্পি পড়ায় ফিরে আসে বাচ্চার কথায়। অংক বুঝায়। ডাইনিং রুম থেকে বেগুনি কামিজ ডাক দেয় রবিন, রবিন বলে আম্নু ডাকে, টিচার বলে যাও। কাকন চালের পায়েস নিয়া রবিন ফিরার সময় রুমে ঢুকতে পাপোসে পা লেগে ট্রেসহ ফ্লোরে বাপ্পির সামনে গিয়া পড়ে।

মকবুল রাতে দোকান বন্ধ করে আসার সময় একশ ফুলের ঝাড়ু নিয়া আসে। ঘরে আসার পর শুনে আবিয়ার মা পিছনের বাড়িতে সস্তা পাইয়া একশ নিছে। আবিয়ার মা কিছুক্ষন হাউকাউ করে এইটা নিয়া, পরে ঝামেলা অন্যদিকেও নিয়ে যাইতে থাকে। মকবুলরে বলে আমারে না জিজ্ঞেস করে কেন বিয়ার নাচে একশ টাকা দিলা। গত শীতের আগের শীতে মকবুলের শালার বিয়াতে গেছিল। সেখানে গায়ে হলুদে শালী সম্পর্কের সবাই নাচলো, পরে দুলা ভাইর কাছে টাকা চাইল। মকবুল টাকা দিল। এমন ভাবে দিল যাতে বউ না দেখে। এতদিন পর আবিয়ার মা এইটা নিয়া চাপতে থাকলো। বলল একটা পেশাবখানা নাই। ওইদিন পেশাব করতে বইসা আচমকা জালওয়ালা বাড়িতে ঢুকতে দেইখা কাপড়ে চোপড়ে প্রস্রাব নিয়া ঘরে দৌড় দিলাম। আবিয়ার মা কাদতে থাকে। মকবুল নামাজে দাড়াইলো, নামাজ শেষ করলো, তসবি পড়লো। আবিয়ার মা সাইলেন্স স্টেজে চলে গেল ততক্ষণে। বেগুন-শুটকির তরকারি দিয়া ভাত দিল আবিয়ার মা। ভাত খাইতে বসে আবিয়া বলল গুয়ের গন্ধ লাগে মা। মা-বাপ দুইজনেই একমত হইলো। পরে হারিকেন দিয়া খুজে আলমারির নিচে গুয়ের একটা ছিড়াবিড়া পলিথিন পাওয়া গেল। রাতে আবিয়ার পায়খানা পাইলে পলিথিনে করে, প্রস্রাব বালতিতে। গভীর রাতে কই যাবে। সকালে ফেলে দেয়। ফেলে দেয়া পলিথিন ইদুরে টেনে নিয়ে আলমারির নিচে গর্তে নিয়ে আইসা থাকবে হয়ত। ঠিক ওই সময় দরজায় টোকা, আবিয়ার মার ভাই আসলো, বোনরে বলে মা তোমার জন্য কিছু ফুলের ঝাড়ু আর চিড়ার লাড়ু পাঠাইছে।

দেবের বাপ শুটকি বেচার সিদ্ধান্ত নিল। শুনলো কাচা পয়সা এটাতে। আড়ত থেইকা শুটকি নিয়া আসবে, মাল রাখবে নারিকেলের সাথে, হাটে নিয়া বেচবে। শুটকির গন্ধে কেমন ভিতরটা জাইগা উঠে উনার, সেই ছোটবেলা থেইকা খেয়াল করছেন উনি। কাছের বন্ধু আছিল পেয়ারু আর কালা ভাই। কালা ভাই এক ক্লাস উপরে পড়তো, কিন্তু দোস্ত সম্পর্ক, তাই কালা ভাই ডাকতো। সেই কালা ভাই বলছিল আমরা গরীব, খাই শুটকি, মারি পুটকি।

শুটকির ঘ্রাণের কথা মনে পড়ায় দেবের বাপের মনি সাহার কথাও মনে পড়ে। মনে পড়ে এক তিক্ত স্মৃতির কথাও। দেবের বাপ নতুন বিয়া করার পরদিন বউয়ের মাসিক শুরু হয়, তাই একসাথে থাকাথাকি পিছাইতে হয়। যেদিন দেবের বাপের ঘরে দেবের মারে দেবের পিসি ঠেইলা ঢুকাই দিয়া আসলো ওইদিন মুষলধারে বৃষ্টি। তিব্বত সুগন্ধি পাউডারের ঘ্রাণ সারা অংগে বউয়ের। বেড়ার অন্য পাশে এক বাচ্চা কানতেছিল, ওই বাচ্চার মা বলতেছিল নাগরদৌলার কথা, বাপ বলতেছিল শিপ ইয়ার্ডের রংগিন সোলার কথা, মা বড়ই গাছের কথা, বাপ টাট্টু ঘোড়ার কথা, মা হরিণ, বাপ লাটিম, ঘুরছে তো ঘুরছে। দেবের বাপ একবার বিলায়েতগঞ্জ গেল, ইয়াং বয়সের কথা, কারবার সারতে সারতে চৌকিদারের হুইসেলওয়ালা থমথমে রাত নামলো, উনি রাস্তা দিয়া আগাচ্ছিলেন বাসস্ট্যান্ডের দিকে। কিছু দূর গিয়া দেখে কিছু মদ খাওয়া লোক। ওরা রাস্তায় জমা বৃষ্টির পানির কাছে আইসা বলল, এই সাগর কেমনে হব পার! তারপর একজন একজন কইরা ওইসাগরে ঝাপ দিয়া সাতার কাটার নামে রাস্তার উপর ঝাপ্টাঝাপ্টি করতে থাকে। বাসর রাতে সবই ঠিকঠাক ছিল, থইথই সাগরও ছিল, কিন্তু মুখ দিতে গিয়া এক বোটকা বাজে গন্ধে দেবের বাপ ওয়াক শব্দ কইরা উঠলো।

বাপ্পি বেল দিতে দরজা খুললো রোহিত। আরেহ ইয়াং ম্যান, আসো। ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে সোমা বউদি। ঘাইমা আছেন। উনি বোধয় নাচ প্র‍্যাকটিস করতেছিলেন। বাপ্পিরে দেইখা হাইসা বললেন রবিন ভিতরে, গেমস খেলে। বাপ্পি গিয়ে চেয়ার টেবিলে। রবিন উঠে চেয়ার টেবিলে। বউদির নড়াচড়া পাওয়া যায়। পায়ে নাচের নূপুর ঝুমুরঝুম। রোহিতের গলায় এসো নীপবনে। বউদি বলে এই রোহিত চুলে চেইন আটকে গেল। রোহিত দৌড়ে যায়। বাপ্পি দেখার চেষ্টা করে, রোহিত এক ঢাউশ বালিশের সাদা তুলা টেনে টেনে বেড়ে করে, লাল মিষ্টি আলু পুড়ে পুড়ে বড় মালসাতে রাখে, কেওড়া জলের ঢাকনা লাগাতে না পেরে বলে এইটা গেছে, বোতল চেঞ্জ করতে হবে। পুরা ঘর স্কাই ব্লু পেইন্ট করা। পর্দাগুলা সাদা। সবই গুছানো, কেবল বই ছাড়া। যেখানে সেখানে বই। শেষ করে বাপ্পি বের হচ্ছিল, সোমা বউদি বলল বাপ্পি বসো। বাপ্পি সোফায় বসলো, সোফাতে হেলান দিতে গিয়া খুজে পাইলোনা ফোম, পিছনে ফিরে দেখলো আছে, তবে দূরে। রোহিত তিন বাটি জাম্বুরা নিয়ে আসলো, পোড়া মাটির বাটি, বলল বাপ্পি নাও। সোমা বউদির হাতে মানিকের গল্প, বলল মানিকের বউ সিরিজ কেমন বাপ্পি? বাপ্পি হাসলো। সোমা বউদির গায়ে ঘামের গন্ধ। বাপ্পি এই ঘ্রাণ মুন্সিবাড়িতে পাইছিল একজনের গায়ে। তখন সে থার্ড ইয়ারে পরে। ভার্সিটি থেকে দূরে একলোকের বাড়িতে লজিং থাকে। ওই বাড়ির এক কামুক মেয়েছেলে বাপের বাড়িতে নাইওর আইসা রাতে তার রুমে ঢুকে গেছিল।

আবিয়ার মা দুপুরে শুইলে দরদরাই ঘামে। সবাই যে গরমে কাহিল তা না। কিন্তু সে ঘামতে থাকে। আবার সবাই গরমে কাহিল, কিন্তু আবিয়ার মা কাথা গায়ে দিয়া শুইয়া থাকে। গায়ে কাথা দিলে মকবুলের গোফগুলার কথা মনে পড়ে আবিয়ার মার। ঘিন লাগে তার। কেন রাগ লাগে সেটা ভালো বুঝতে পারেনা। দম মেরে শুইতে শুইতে হঠাৎ তার ইচ্ছা হয় ঘরের পিছনের কলাগাছটা কাটতে। বোগলি আর মশুরডাল দিয়া রানতে, ছোট একটা মোচাও বাইর হইছে, ফলন্ত গাছ। তবুও সে আবিয়ারে দা টা নিয়া আসতে বলে, আবিয়া দা নিয়া গেলে বলে এই ভোতাটা না, সিন্দুকের নিচের ধারওয়ালা-টা নিয়া আসো মামনি। কলাগাছ কাইটা বোগলি বাইর করে আনতে বেশ পরিশ্রম হয়। মোচা সিদ্ধ করে, উতা-পাটায় পিষে, বোগলি কুচি করে। রানতে রানতে গান আসে তার। আবিয়া বলে আজকে আবার রানতেছো যে আম্মা! রান্নাবান্না শেষ হইলে আবিয়ার মার কলার মোচাটার কথা মনে আসে, কত বড় কলার কান্দি নামতো। ভাবতে ভাবতে কান্দানি আসে। আবিয়া বলে কানতেছো যে আম্মা! আবিয়ার চেহারার দিকে তাকায় সে। তার একটা কাহিনী মনে আসে। আবিয়া তখন ছোট, বুঝ হয় নাই ওইরকম। রাতে এক বিছনায় তারা তিনজন শোয়। আবিয়ার বাপ মাঝরাতে আবিয়ার মার উপরে। শরীরে তখন জোয়ার হইতো, ফলে বিশ্রী একটা শব্দ হইতেছিল ওখানটায়। আচমকা আবিয়া উইঠা বইসা গেল। আবিয়ার বাপ এক দৌড়ে পাকঘরে গেলো গা।  আবিয়ার মা লড়েচড়ে না, মকবুল কোনমতে লুংগি পেচাইয়া আইসা একটা কাথা দিয়া ঢাইকা দিল বউরে। আবিয়া আবার ঢলে পড়ে গেল ঘুমে। আবিয়ার দিকে চাইয়া কান্দানির ভিতরে হাইসা উঠলো সে। আবিয়া বলল আবার হাসো যে আম্মা!

দেব বাপকে খুজতেছে। দুইদিন ধইরা বাড়ি যায় না। লাস্ট তার দোকানে আসছিল দুপুরের পর। চিরুনি রাখা হয় একটা বেতের ঠুকরিতে, আয়নার সামনে দেয়ালে ঝুলানো। সেখানে নানারকম চিরুনি, কোনটার দাত লম্বা, কোনটার চিকন, লম্বা থেইকা ক্রমে চিকন হইছে এরকম চিরুনিও আছে। দেবের বাপ ওখান থেকে পাতলা একটা চিরুনি নেয়। চিরুনিতে নারিকেল তেল লাইগা থাকায় পিপড়া আসে। দেবের বাপ টেবিলে চিরুনি বাড়ি দেয়, যাতে পিপড়া ঝইড়া যায়। দেবের বাপের চুল নাই বললেই চলে, যা দুয়েকটা আছে পিছনের দিকে, উনি কসরত করে পিছনের লম্বা চুল বাকাইয়া সামনের খালি অংশে বসাই দেন। দেবের কাছে ভাংতি-টাংতি আছে কিনা জিজ্ঞেস করেন উনি। দেব বুঝতে পারেনা ইদানিং বাপ প্রায়ই টাকা খুজে কেন, ব্যবসা-পাতি ফাউল যাচ্ছে মে বি। সাত-আটদিন আগেও একবার নিছিল। টাকা দেয়ার পর সেই যে লাস্ট দেখছে আজকে দুইদিন ঘরে যায় নাই। মালের জন্য দূরে কোথাও গেলে জেনারেলি ঘরে বইলা যায় উনি। দেব অনীল স্বর্নকারের দোকানে খবর নেয়, বিশুরে জিজ্ঞেস করে, মিরাজের ভাই টিপু বলে কিছুক্ষন আগেই তো দেখলাম মনে হয়, পরে পিছন থেইকা ডাইকা বলে ভূল বলছি, দুইদিন আগে দেখছিলাম। মুন্সী হোমিও হলে দুয়েকবার দেখছিল বাপকে সে। ওখানে খবর নিতে গেলে শফি ডাক্তার খুব বাজে ব্যবহার করেন। দেবকে বলেন উনি তার বাপের খবর দিতে দোকান খুলেন নাই। শফি ডাক্তারের সামনে একটা বেতও থাকে। উনি মাদ্রাসায় পড়ান, এই কারণে হইতে পারে। চলে আসতে নিলে দেবকে পিছন থেকে ডাকেন পরে, সামনের কালো হয়ে যাওয়া কাঠের চেয়ারে বসতে বলেন, ড্রয়ার থেকে কাগজে মোড়ানো দুই পিস নিমকি বাইর করে খাইতে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন তোমার পিসি কেমন আছে? সে আমার ক্লাসমেট আছিল, আমরা এক সাথে পড়তাম। 

মনি সাহার বিছনাটার চারপাশটা ঘেরা দেয়া। কারুকাজ করা সেই ঘেরা। মরার বছর তিনেক আগে সাহার জামাই চন্দন কাঠ দিয়া বানাইছিল। বিছনা থেকে নামার একটা দরজা কাটা আছে। মাটি থেকে বেশ উচা, তাই নামতে একটা ছোটখাটো লাফ দিতে হয়। দেবের বাপ বেটে বলে বিছনা থেইকা নামতে ধুপ করে পরে মাটিতে, একটু কোত দেয়। দেবের বাপ বিছনায় বইসা চ্যাপা শুটকির ভর্তা দিয়া গরম ভাত খাইলো। সাহা পান দিলে বলল সুপারি কমাই দাও দিদি, মাথা ঘুরায়। ঘরের বেড়ার দেয়াল পুরাটা খবরের কাগজ লাগানো। দেবের বাপের জিনিসটা ভালো লাগছে। কেমন সেফ সেফ লাগে, বেড়াতে কোন ফাকফোকর নাই। সাহার ছেলে একটু আগে মায়ের সাথে রাগারাগি কইরা বাইর হইয়া গেছে। পোলাটার চেহারা দস্যুদের মত, ভয় লাগে দেবের বাপের। সাহা বলে দাদা ধূতি খোলেন। দাদা বলে পরিস্কারই তো দিদি। দিদি বলে নাপাক লাগছে, কেচে আনি, শুকাতে বেশি সময় লাগবেনা, আপনি কিছুক্ষন কাথায় থাকেন। সাহা চলে গেলে দেবের বাপ মশারির উপরের খইগুলা টোকা দিয়া দিয়া বাইরে ফেলেন। আর ভাবেন সাহা তো আরো চায়! কিস্তি দিতে অবশ্য খারাপ লাগেনা উনার। আরো সহসা কুম আসে এরকম কারবারের কথা ভাবেন উনি। নারিকেলের ছোবড়া গুলা নাকি গদি বানানোর কাজে লাগে। অগুলা চারকোনা বক্সে ঠেসে ঢুকাইয়া চারকোনা শেপ করতে হয়, তারপর ব্যাপারিরে ডাইকা আনলে ট্রাক ধরাই নিয়া যায় ওরা। বেড়ার দেয়ালে পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দেখেন উনি। দ্রুত পতনের চিকিৎসা। দেবের বাপ ভাবে শফি ডাক্তার ফাউল। কি দাবাই দিল। কাজ তো করে না। প্রতিবারই ছোয়ানোর আগেই হয়ে যাচ্ছে। মনি সাহা ভালো মেয়েছেলে বইলা টু শব্দ করে না।

মকবুলের একটা দুঃখ আছে। তার ছেলে নাই। একটা ছেলে আসছিল, বাচলো না। কোমরে ঘুনসি দেয়া ছেলে তার নীল হয়ে মইরা গেল। মরুভূমির ভেড়া পাথর খাইয়া হজম করে ফেলে, ছেলে তার লিকুইড খাবার হজম করতে পারলো না। ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরতে অর্ধেক আইসা আবার দোকানে যাইতে হয়। আবিয়ার জন্য একটা ইয়ারফোন আনায় টাউন থেইকা, এককানে বাজার ইয়ারফোন, নিতে ভূইলা গেল। সেটা নিয়া ফিরতে একটু লেট হইলো। বাড়ির অল্প আগে কবর পাড় দিয়া আসার সময় সে ভাবে মরার পর আমার কবর জিয়ারত করার কোন আওলাত থাকলো না। হঠাৎ একটা সাদা মত কী জানি দৌড় দিল। বিড়ালের মত ছোটখাটো না, বেশ বড়। বিড়াল হইলে চিনা যাইতো। একটা বাচ্চা ছেলের সাইজ। মকবুল ভয় পাইলো। দৌড় দিবে কিনা ভাবতেই পায়ে গাছের শিকড় জাতীয় কিছু লাগলো, বেশ জোরেশোরেই। আবিয়ার মা দরজা খুইলা দেখলো মকবুলের চেহারা এতটুকু হইয়া আছে। চেরাগের আলোতে দেখলো উল্টানো নোখের ভিতর মাটি ঢুইকা গেছে। শোয়ার আগে আবিয়ারে ইয়ারফোনটা দিল মকবুল। আবিয়া ওইটার দিকে তাকাইয়া আচমকা আব্বারে বইলা কান্দানি দিল। আরে ঘটনা কি! আবিয়ার মা বলল বিকালে দুইটা লাগাইছি। রেডিও হাত থেইকা ফালাই দিছে, ফালাইয়া আবার হাসে। মকবুল বলে ঘুমাই যাও মামনি। মকবুল জিলাপি বেচার ঠোংগার ভাজ মনে করে, পানের ভিতর রোদে শুকানো কমলার খোসা দেয়ার কথা ভাবে, তার দাদি দিত, ওইবার সুপারির গন্ডা চড়া হইছিল। মাঝরাতে খালি বালতিতে আবিয়ার মার পেশাব করার শব্দে ঘুম ভেংগে যায় মকবুলের। আবিয়ার মা বিছনায় আসলে বলে একটা ছেলে নিবা?

বাপ্পি ডাব খায় আর ডাব কাটার টেকনিকটা দেখে। মাপ বরাবর তেরছা কোপ দেয়, মুখে দা’র আগা দিয়া খোচা দেয়, চিরিত কইরা পানি বাইর হয়, পাইপ লাগাই দেয়। সে ভাবে এই টানাটানির সময় বাইরে ডাব খাওয়া ঠিক হইল না। কিন্তু কয়েকবার ডাইরিয়ায় একটু কাহিল সে। বাপ্পির বাপ রিটায়ারে গেল গতমাসে। কয়েক মাসের মধ্যে কলোনির বাসা ছাড়তে হবে। পাস কইরা বাইর হইল দুই বছর, চাকরি খোজে, টিউশনির খেপ-টেপ মারে। বাপ্পি খেয়াল করলো তার পায়ের বুড়া আংগুলের চাইতে পাশের আংগুল বড়। সে ফুফুর কাছে শুনছে এইরকম লোক সমাজের সম্মানিত লোক হয়। অনেক ছোট থাকতে বাপ্পি ফুফুর বাড়ি গেছিল, ফুফাতো বোনের বিয়েতে। বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় ফুফুর বাড়ি যাইতে হয়, মাটির রাস্তা। কতদূর যাওয়ার পর রাস্তার খুব খারাপ অবস্থা। রিকশা তাল হারাইয়া উল্টে হাটু পানির ধানখেতে গিয়ে পড়ল। বাপ্পি দেখলো অনেক দূরে সোমা বউদি আর রোহিত দাদা আসতেছে। দাদার হাত বউদির কান্ধে। তারা মে বি প্রায়ই হাটতে বাইর হয়। বাপ্পি আড়ালে মেহেগনি গাছের তলে চলে গেল। দাদা-বউদি ডাবের কাছে, পাইপ নেয় না, মুখ লাগায়। বাপ্পির তখন পায়ে মশা, বার বার উপড় হয়ে চুলকায়। পাশের দুই লোক গাজরের কেজি, সমিতির চাদা, মিজানের বাসার ঠিকানার পর বলে বউদি ডাব খায়, বউদির বুকে কচি ডাব নাচে।

দেবের পিসি যখন হাসে পেট কাইপা কাইপা উঠে। সকালে ভোরে উঠেন, রাতেও কম ঘুমান, কিন্তু আর্লি ঘুমাইতে যান বিছনায়। সবাইরে ছাত্রদের মত বলেন ঘুমাই যাও, রাত্রি ঘুমানোর জন্য, দিন কর্ম করার জন্য। বাড়ি থেইকা অনেক দূরে ছেলেদের সাথে দল করে পড়তে যাইতেন ছোটকালে। এক বৃষ্টির সকালে একা যাচ্ছিলেন, রাস্তার পাশে খেজুর গাছের তলায় এক পাগল। বড় ইটের টুকরা নিয়া তেড়ে আসলো। ঝিনুক ভয়ে এতটুকু। ঝিনুকরে কবরের কাছে হেচড়ে নিয়া গেল পাগলটা। কিছুক্ষন পায়জামা নিয়া টানাটানি কইরা ছাইড়া দিল। ঝিনুক কাপতে কাপতে দৌড় দেয়। কতদুর গিয়া দেখে হাতে মুখের জায়গায় জায়গায় পাগলটার নোখ লেগে ছিলে গেছে, ছিলা জায়গা প্রথমে সাদা হইয়া থাকলো, তারপর আস্তে আস্তে রক্ত ঘামতে থাকলো, বেশ কয়েকদিন জ্বলুনি আছিল। ঝিনুকের একটাই কষ্ট, দেবরে পড়াইতে পারলো না। মুগুর দিয়া পিটাইলো, গাছের সংগে নাইলনের দড়ি দিয়া বানলো, দুধের গ্লাস বড় থেইকা কিনলো, দেব পড়লো না। সংগদোষ। কয়েকদিন আগে সুলেমান নামের এক মুসলমান পোলার পাল্লায় পড়লো। দেব দুপুরে ভাতঘুম দেয়ার জন্য দোকানের পিছের চিকন রুমে একটা সিংগেল খাট বিছাইলো। সুলেমান দেবরে কাবজাব বুঝাইয়া ওখানে রাতে থাকতে শুরু করলো। দেবও রাতে আর ঘরে আসে না, এক খাটে শোয়। ঝিনুক একরাতে দোকানে আইসা হাজির। ঝিনা আপা বলে তুমি? সুলেমান বলে আমি বাবুর্চি। আগে যাত্রাদলে নাটক করতাম, বাশি বাজাই। তখন ঝিনা আপা কামিনী গাছের ডালের কথা তুলে, মুরগীর চামড়া ছিলার উদাহরণ দেয়, কুকুরের গায়ে গরম ভাতের মাড় ফেলার প্রসংগও তুলে। সুলেমান বলে আমার জন্য আশির্বাদ কইরেন। সে রাতে সুলেমান উধাও হয়ে যায়।                               

………………………………………………….

উপন্যাস’টা কিনতে পারবেন এই লিংক থিকা:
রসুন চাষের ঘটনাবলী: মঈন উদ্দিন – Rashun Chasher Ghotonabali: Moin Uddin | Rokomari.com

 

                                    

 

                         

 

      

The following two tabs change content below.
Avatar photo

মঈন উদ্দিন

মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →