Main menu

প্রবন্ধ-কেত্তন

“সলিমুল্লাহ খান ফুকো আর দেরিদা ব্যাপারে নালিশ জানাইছেন- যে তাঁরা প্রাসঙ্গিক নানা আলোচনায় যেখানে লাকানেরে মেনশন করতে পারতেন সেইসকল ক্ষেত্রে লাকানের রেফারেন্স দেন নাই। ফুকোর সমালোচনায় এই যে প্রশ্ন উত্থাপন করলেন সলিমুল্লাহ খান তা মূলত নৈতিক প্রশ্ন, বিদ্যায়তনিক চক্রে এই সকল নৈতিকতার চর্চা হইয়া থাকে। কিন্তু এইটা আসলে কতটা ফুকোর চিন্তার সমালোচনা হইল তা বোঝা যায় না। একমাত্র যে কাজের মন্তব্যটুকু করলেন তিনি সেইটা হইল, ফূকো ইরানে ইসলামী বিপ্লবেরে ঠিকঠাক মতো চিহ্নিত করতে পারেন নাই। কিন্তু সলিমুল্লাহ খান এই বিপ্লব যেমন হাইন্ডসাইট দিয়া দেখতেছেন তা ফুকো তো দেখেননাই; সেক্ষেত্রে তাঁরে বিচার করতে হইত ফুকো যে বিশ্লেষণের মধ্য দিয়া গিয়া এই বিপ্লবেরে সমর্থন করছিলেন তা ঠিক আছে কিনা। অথচ তা তিনি না কইরাই বললেন ফুকো ভুল করছেন। এবং ফুকোরে কেবল এক এলজিবিটি এক্টিভিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইলেন কৌশলে। জিজেক ব্যাপারেও বললেন তিনি হইলেন ইউরোপের সাঈদী। তো কিসের ভিত্তিতে তিনি এইটা বললেন সেই ব্যাপারে একটু আলোচনা তো করতে হইত। আলোচনা ছাড়া এইসব মন্তব্য মনে হয় যেন লোকজনের চরিত্রহননের ছিনালী প্রচেষ্টা। তা তিনি করতেই পারেন। এইসব মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণও। এগুলা নিয়া ভাবা যাইতে পারে। উদীয়মান বুদ্ধিজীবী সমাজে ফুকো জিজেক নিয়া উত্তেজনা একটু বাড়াবাড়িই ঠেকে।
.
তবে সলিমুল্লাহ খানের এইসব মন্তব্য ব্যাপারে সতর্ক হইতে হবে এই কারণে, তিনি আদতে দেড়-দুই ঘন্টার আলাপ পাইড়াই এই সকল মন্তব্য করছেন- যেন মনে হয়, এই সকল মন্তব্য ওই দীর্ঘ আলোচনারই সারাৎসার। কিন্তু মনোযোগী শ্রোতারা শুনলে বুঝতে পারবেন তাঁর আলোচনা মূলত প্রাসঙ্গিক ব্যাপারে তাঁর ব্যাপক পাঠের প্রদর্শনী ছিল মাত্র; মন্তব্যগুলির সপক্ষের যুক্তি কমই ছিল। এইটাই আমার কাছে সলিমুল্লাহ খানের সমস্যা মনে হয়- তারে অনেকে টীকা বুদ্ধিজীবী বলে, আমি তা বলি না, বরং খেয়াল কইরা শুনলে বুঝা যাবে তাঁর নিজস্ব মন্তব্য ভালোই থাকে তাঁর আলোচনাগুলির মধ্যে কিন্তু, একই আলাপে তাঁর আলোচনা এবং মন্তব্যমালা দুইটা দুই ডিরেকশনের হইয়া থাকে সাধারণত। তাইলে সেই আলোচনা কেন?
.
আলোচনাটা যেন তাঁর মন্তব্যগুলির ব্যাপারে একটা কুহেলী প্রভা ছড়াইতেছে, শ্রোতা-পাঠকদের তাঁর জ্ঞানের বিশালতা দিয়া মিস্টিফাইড করতেছে এবং এইভাবে তাঁর মন্তব্যগুলির জোর বাড়াইতেছেন, যতটা না মন্তব্যগুলির সপক্ষে যুক্তি প্রদান কইরা তিনি তা করেন। এইখানেই তাঁর পাঠকদের সতর্ক হওয়ার দরকার আছে। এমনি তাঁর মন্তব্যগুলা ফেলনা নয় মোটেই; ওগুলা নিয়া ভাববেন, তাঁর আলোচনাগুলা পাশে সরাইয়াই ভাববেন। তাঁর একটা জিনিস ভালো, তিনি তাঁর শ্রোতাদেরকে নিজে বই পইড়া দেখতে বলেন। তথাপি তাতে তাঁর সিদ্ধান্তের সপক্ষে যুক্তি প্রদানের দায় হ্রাস পায়না। বা শুধু সিদ্ধান্তটুকু নিলেই তো হইত; কিন্তু তিনি সাথে সাথে আলোচনা তো ঠিকই করতেছেন।

বিঃদ্রঃ মন্তব্যগুলা আলোচনারই অংশ। আলাদা কইরা মন্তব্য বলতে আমি মূলত এইখানে তাঁর সিদ্ধান্তমূলক বক্তব্যগুলারে বুঝাইতেছি।”

এইটা গত বচ্ছরের সেপ্টেম্বর মাসের পোষ্ট। তো এইটা রিপোষ্ট করতে গিয়া মনে হইল, সলিমুল্লাহ খানের এই যে কৌশল, তা আমাদের এইখানে দীর্ঘ প্রবন্ধগুলাতে বহুকাল ধইরাই ব্যবহৃত হয়। এবং এইখানে দীর্ঘ প্রবন্ধের কদরও আছে দেখবেন; বিশেষত আমরা যারা ফেসবুকে দুই-চাইরলাইনে কথা সারি তাদেরেরে ঘায়েল করার ক্ষেত্রে এইসকল প্রবন্ধসমূহের দৃষ্টান্ত পুনঃপুনঃ উপস্থাপিত হইতে থাকে যে, দেখো এই সকল প্রবন্ধগুলি হচ্ছে যুক্তি এবং তোমরা দুই-লাইনেরা হচ্ছে অযুক্তি। যুক্তি বলতে যে দুইলাইনের বেশি লাগেনা, এই প্রবন্ধ-ছাগলদের সেইটা বুঝানো যাবে না। এনারা প্রবন্ধে যুক্তিপ্রতিষ্ঠায় যে শিবের গীত তথা কেত্তন চর্চা হয় সেইটেরেও যুক্তি ঠাওড়ায়ে বসে আছেন। তো এনাদের কারণেই বাংলায় সলিমুল্লাহ খানমূলক বুদ্ধিজীবীতার একটা ধারা তৈরি হইসে যা সহসা যাওয়ার নয়। তবে চাইলে আপনেরা সতর্ক থাকতে পারেন।

/অগাস্ট, ২০১৯

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →