Main menu

অন সিনেমা

ভাল/ খারাপ এবং সিনেমা এই দুইটার কনস্ট্রাকশন আপনার কাছে কেমন, তার ওপর নির্ভর করতেছে কোনটাকে আপনি ভাল বা খারাপ সিনেমা বলবেন। ন্যায় অন্যায়ের ব্যাপারে অনেক কনজার্ভেটিভ সেন্স মেনে নিলেও, ভাল বা খারাপের ক্ষেত্রে আমি পোস্ট মডার্নই। নয়তো নিজের ছেলে অপরাধী হলে বাপ/ মা ফাঁসি চাইতে পারে, ছেলের লাশ নাও দেখতে পারে। এই রকম বয়কটমূলক প্যাসিভ ভায়োলেন্স এবং ক্রুয়াল ইনহিউম্যান সোসাইটি আমি এক্সপেক্ট করি না।

ভাল সিনেমা কিন্তু আমার ভাল লাগে নাই-এই রকম একটা সিনেমার পোস্টমর্টেম করি। তাহলে বুঝতে সুবিধা হয়।

ডেমিয়েন শিজেলের অস্কার পাওয়া সিনেমা ‘হুইপল্যাশ’। সিনেমায় এন্ড্রু নামের একটা ছেলে ড্রামার হইতে চায়। তার নিজের আত্নবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল। শিক্ষক মহাশয় তাকে জবরদস্তি ট্রেনিং-এর মাধ্যমে খুব ভাল ড্রামার বানায়া ফেলে।
তার লিমিটকে পুশ করে। ততক্ষণ ড্রাম বাজাইতে থাকে,যতক্ষণ না হাত কেটে রক্ত বের হয়।

এই সিনেমাটা হইতেছে আর্ট এবং মানুষ নিয়ে একটা সিনেমা।

এই সিনেমাটা ভাল কেন বলতেছি?

পরিচালক যা বলতে চাইছেন, তা শতভাগ পরিষ্কার। নিট এন্ড ক্লিন। কোন ভণিতা নাই। ক্যামেরা, অভিনয় এবং স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে তা ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। একটা থ্রিলার ভাইব আছে।

ফ্ল-লেস সিনেমা। এইটা অবশ্যই একটা ভাল সিনেমার বৈশিষ্ট্য। আপনার এক্সপ্রেশনটা অডিয়েন্স বুঝতে পারতেছে কিনা। কানেক্ট করতে পারতেছেন কিনা। নাজি পার্টির পক্ষেও যদি সিনেমা বানান, তাকে মিনিমাম সিনেমার স্ট্যান্ডার্ড দিতে হবে। অডিয়েন্স যেন দেখতে পারে। তার নিচের সিনেমাগুলা সিনেমাই না। এভেঞ্জার দেখাইতে হলে অন্তত ফাইটিং সিন এবং সিজিআই তো ভাল থাকতে হবে।

আমার কেন খারাপ লাগছে?

খারাপ লাগছে এই কারণে যে, এইখানে মানুষকে দেখা হইছে ইকোনমিক টুলসের সেন্সে। মানুষ হইতেছে রিসোর্স৷ সুতরাং রিসোর্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। দুই শতক জমিতে দুই মণ ধান আপনার উৎপাদন করতেই হবে। কিন্তু মানুষ তো জমি না। মানুষ কৃষক।

ক্যাপিটালিস্ট সাইকোলজির মেজর প্রবলেমটা হচ্ছে মানুষকে চেয়ার টেবিলের মত ইউটিলিটির মত দেখা। আপনাকে একটা অবজেক্টে রিডিউস করা হয়। হয় আপনার পটেনশিয়াল পূর্ণ ব্যবহার করতে হবে, নয়তো আপনাকে মাল্টিপারপাস হইতে হবে।

অর্থাৎ আপনার হাতিলের চেয়ার হইতে হবে, নয়তো যেই চেয়ার টেবিলেরও কাজ করতে পারে এমন চেয়ার হইতে হবে। আপনি শুধু নরমাল চেয়ার হইলে দাম নাই। এইটারই পলিটিক্যাল নাম হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ।
ম’ল চত্ত্বরে কোন কোন রিকশাওয়ালাকে দেখতাম দুপুরে গাছের নিচে রিকশা রেখে ঘুমায়া পড়তো। আবার জেগে থাকলেও যাইতো না। বলতো রেস্ট নিতেছে। যাবে না। এই চয়েসটা থাকতে হবে।

একজন ড্রামার ট্রাই করবে ভাল ড্রামার হইতে,কিন্তু তার মেন্টাল ব্রেকডাউন হয়ে যায় এইরকম ফোর্সফুল চেষ্টাটা একটা ভয়ঙ্কর দর্শন।

এতে একজন সারভাইভ করবে,কিন্তু তিনজন শেষ হয়ে যাবে। মানুষ কারখানার মেশিন না।

তো এই যে,ভয়ঙ্করদর্শন চিন্তার এত সুন্দর একটা সিনেমা বানাইছে,এইটাকে আর ভাল সিনেমা বলা মুশকিল। আর্টতো পলিটিক্যালই। এই সিনেমার যে পলিটিক্স,তা ইনহিউম্যান। ইনহিউম্যান সিনেমা মাস্ট বি খারাপ।

মালায়লাম ‘হোম’ সিনেমার নামটা মনে আসলো।

হলিউড বা ওয়েস্টের ভাল পরিচালকদের মেজর কাজ হইতেছে ‘ইনডিভিজুয়াল’ বা ব্যাক্তির প্রবলেম। এইটা দরকারই ছিল। আধুনিক সময়ের একটা এচিভমেন্ট হইতেছে সোসাইটিকে অপ্রেসিভ হইতে না দেয়া। ফলে ইন্ডিভিজুয়াল প্রবলেমগুলা রিকগনাইজ করা। মানুষ ইন্ডিভিজুয়াল হয়ে যাওয়া না। মানুষ আল্টিমেটলি সোশাল বিয়িং।

মালায়লাম ‘হোম’ সিনেমাটা খুব এনজয়েবল সিনেমা। কমেডি ড্রামা। এইটা বলতেছে ফ্যামিলি ইজ নট অল ব্যাড।

সোসাইটি ইজ নট অল ব্যাড। অর্থাৎ মানুষের প্রবলেমগুলা সোসাইটির সেটিং-এর মধ্যেই হিসাব করা। দেখা। মালায়লাম সিনেমার এইটা একটা আউটস্ট্যান্ডিং এপ্রোচ।

এই একই কারণে আজগার ফারহাদীর সিনেমা আমার ভাল লাগে। ব্যাক্তিকে একদম বিচ্ছিন্ন করে ফেলে না। সোসাইটি দেখায়াই ব্যাক্তির ক্রাইসিস দেখায়। একটা হোলনেস আছে।

ওয়েস্টার্ন ফিলোসফির যে গার্বেজ সিনেমাগুলা জমা হইতেছে, তার একটা কাউন্টার মালায়লাম সিনেমা। বেটার কনজারভেটিভ পার্টি। ক্রিয়েটিভ।

বছরে কোন দেশেই খুব ভাল সিনেমা আট দশটার বেশি হয় না। তবে এই মুহূর্তে আমার কাছে রুলিং ইন্ডাস্ট্রি মালায়লাম বা দক্ষিণের সিনেমাগুলা। কথার ফাঁকে এইটুকু বলে রাখলাম। আলাদা একটা লেখাও হয়তো লেখতে পারি মালায়লাম সিনেমা নিয়ে।

তো সিনেমা ভাল বা খারাপ এই বিবেচনায় খুব দেখতে এক্সিলেন্ট সিনেমাও খারাপ হইতে পারে।

আবার দেখতে খুব এক্সিলেন্ট না, কিন্তু ভাল সিনেমা হইতে পারে। কোন সিনেমা স্পেসিফিক চিন্তার এক্সটেনশন। তার পলিটিক্যাল মোটিভটা ইম্পর্ট্যান্ট। একই দলের স্পিলবার্গ বা ক্লিন্ট ইস্টউডরা, সিনেমা মেকিং এক্সিলেন্ট কিন্তু পেছনের থট পুওর।

The following two tabs change content below.
Avatar photo

কবির আহমেদ

জীবিকার জন্য একটা চাকরি করি। তবে পড়তে ও লেখতে ভালবাসি। স্পেশালি পাঠক আমি। যা লেখার ফেসবুকেই লেখি। গদ্যই প্রিয়। কিন্তু কোন এক ফাঁকে গত বছর একটা কবিতার বই বের হইছে।
Avatar photo

Latest posts by কবির আহমেদ (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →