Main menu

মোরাল ক্যাটাগরি

এই রকম একটা সিচুয়েশন চিন্তা করেন। একজন দুর্দান্ত এবং সেই সময়ের সেরা নভেলিস্ট একজন খারাপ লোক। দুইটা ফ্যাক্টই সত্য যে, তার কাজে সে টপ ক্লাস, আবার সে খারাপ লোক হিসেবে প্রমাণিতও। এখন তাকে সাহিত্যে নোবেল দেয়াটা ঠিক হবে কিনা?

যদি পুরষ্কার দেন,তবে যোগ্য ব্যাক্তি পুরষ্কার পায় কিন্তু সমাজে একটা খারাপ লোক আরো রিকগনাইজড হয়। আর যদি আপনি তাকে পুরষ্কার না দেন,তা একটা ইমমোরাল ঘটনা হবে। তার যোগ্য পুরষ্কার আপনি তাকে দিতেছেন না- এই অর্থে। অর্থাৎ আপনি ভবিষ্যতে ইমমোরালিটিকে প্রতিষ্ঠা বা স্বীকৃতি দিতে চাইতেছেন না। কিন্তু তার জন্য যেই কাজটা করতেছেন,সেইটাও ইমমোরালই। অর্থাৎ এইখানে বিচারের টুলস আর মোরালিটি না। বরং প্র‍্যাকটিকালিটি।

আরেকটা উদাহরণ দেই।

সারা দুনিয়ার ধনী গরিবের সম্পদের পার্থক্য নিয়ে যে সকল স্টাডি আছে, তাতে দেখা যাইতেছে যে, প্রোডাক্টিভিটির হাই রেটের কারণে ক্যাপিটালজম এভয়েড করা যাইতেছে না। ফলে ইনহেরিটেন্স ট্যাক্স এই পার্থক্য কমানোর প্রধান উপায়। অর্থাৎ আমার সব সম্পদ আমার সন্তানেরা পাবে না। আমার একশ কোটি টাকা থাকলে পঞ্চাশ কোটি আমার সন্তানরা পাবে ,বাকি পঞ্চাশ কোটি গরিব মানুষের কাজে লাগানোর জন্য ব্যয় করতে রাষ্ট্র নিয়ে নিবে। এইটা একটা ঠিক কাজই। কিন্তু আমার অর্জিত সম্পদ নিয়ে নেওয়ার মোরাল রাইট কি সরকারের আছে? এইটা কি ব্যাক্তির রাইট ভায়োলেট করা না?

এইটার ডিরেক্ট এক্সাম্পল হইতেছে, রবিনহুড। বড়লোকের কাছ থেকে টাকা লুট করে গরিবের মধ্যে বিলায়া দেয়া। রবিনহুড তো হিরো। কিন্তু রবিনহুডের এই কাজের প্রক্রিয়ার মোরালিটি নাই।

অথবা একটা বামপন্থী সরকার যখন মানুষকে বল প্রয়োগ করে সেলফ ইন্টারেস্টের বদলে কমন ইন্টারেস্টে এক্ট করতে? এই ফোর্স করার মোরাল রাইট কি সরকারের আছে?

বলতে চাইতেছি না যে, মানুষ মোরাল ক্যাটাগরিতে এক্ট করবে না। এক্ট করবে। কিন্তু সব সময় ইমিডিয়েট মোরাল ক্যাটাগরি ন্যায্য অবস্থা তৈরি করবে না। মোরাল ক্যাটাগরি কোন দৈব বা আল্টিমেট টুলস না।

প্র‍্যাকটিকালিটি সব সময় হিসাবের মধ্যে রাখতে হবে। ইম্প্যাক্ট হিসাবের মধ্যে রাখতে হবে।

এইটাই ডিসিশনের জায়গা।

প্রগতিশীলদের বলার কথা যে, কোন খারাপ উপায়ে ভাল কাজ করা যায় না। ব্যাক্তির অধিকার হরণ করে সামষ্টিক ‘ভাল’র দরকার নাই। অথবা ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। আর রক্ষণশীলদের বলার কথা যে, ব্যাক্তির অধিকার খর্ব না করে সামষ্টিক ‘ভাল’ করা যায় না।

হিউম্যান রাইট প্রতিষ্ঠার জন্য এইটার একটা ব্যালান্স করতে হয়। ব্যালান্সের এই গ্রে এরিয়াটাই মানুষের ইতিহাসের সমস্ত আদর্শিক সংঘর্ষ ও যুদ্ধের কারণ।

ধরেন,ডেমোক্রেসি কিভাবে কাজ করে?

ডেমোক্রেসিতে ভোট বা নির্বাচনের প্রথম কাজটাই হইতেছে ব্যাক্তিকে ফোর্স করার রাইট সরকারের হাতে তুলে দেয়া। মানে,এইটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নন ভায়োলেন্ট এন্ড ডিপ্লোম্যাটিক উপায়।

আপনি যখন কোন ভোটে অংশগ্রহণ করেন,তখন একটা বিনিময় হয়। মানুষের যেকোন এক্টই একটা ট্রানজেকশন বা এক্সচেঞ্জের ঘটনা।

আপনি ভোট দিবেন, বিনিময়ে আপনার প্রার্থী যদি সরকার গঠন নাও করে,তাহলে সংবিধান অনুযায়ী আপনি সরকারকে আপনার ওপর ফোর্স করার রাইট দিলেন।

এখন সরকার সেই ব্যাক্তির ‘ভাল’ বা সামষ্টিক ‘ভাল’র মধ্যে যে গ্রে এরিয়া সেইটা ডিসাইড করে কালচারালি এবং ডিরেক্ট ল’এর মাধ্যমে তা এনফোর্স করবে।

ফলে দেখা যাইতেছে যে, মোরাল ক্যাটাগরি কোন মুক্তমনা বা মুক্তির ঘটনা যে, তা না। মানে একটা ফোর্স করার বা বল প্রয়োগ করার ঘটনা যার পলিটিক্স আছে। পাওয়ার রিলেশন আছে। কি এনফোর্স করবেন,তার পার্টিসিপেশন আছে। আপনি শুধুমাত্র ভাল না খারাপ, সেইটা গুরুত্বপূর্ণ না। আপনি কি এস্টাবলিস্ট করতে চাইতেছেন,সেইটাই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বিবর্তনবাদ পড়ানো নিয়ে কথা হইতেছে। এই নিয়ে আমেরিকাতে দীর্ঘ ট্রায়াল চলছে। তা নিয়ে ‘ইনহেরিট দা উইন্ড’ নামে একটা সিনেমাও আছে। আমাদের দেশের জন্য এই তর্ক নতুন। পশ্চিমে পুরাতন।

তো, তর্কটা চলে এই যে, এইটা ফ্যাক্ট না,জাস্ট থিওরি। পড়ানোর দরকার নাই৷ এই আলাপটার আসল জায়গা বিজ্ঞান না।

মানুষ ভয় পাইতেছে যে, মানুষ যদি জাস্ট আরেকটা এনিমেল হয়,তাহলে তার যে অন্য প্রাণী থেকে হায়ার ভেলুর পসিবলিটি আছে, সেই ইমেজ নষ্ট হয়ে যাইতে পারে। সে অন্য প্রাণীর মতই সারভাইভাল বেইজড হয়ে পড়তে পারে। মানে তর্কটা ভেতরে ভেতরে একটা মোরাল ক্যাটাগরির তর্কই।

শ্রমিক বা উৎপাদকের যে বড়লোকের বা মালিকের সম্পদ বা আয়ে ভাগ আছে, তার একটা মোরালি র‍্যাশনাল পজিশন আছে যে, তাদের কন্ট্রিবিউশন ছাড়া প্রোডাকশন হইতো না। গার্মেন্টসের শ্রমিক যদি কাজ না করে,তাহলে মালিকের টাকা হইতো না। সেই অর্থে শ্রমিক বা গরিবদের অধিকার আছে। এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে বহু কিছুর প্রোডাকশন হবে বা হইতেছে যেখানে হিউম্যান লেবার প্রায় লাগেই না বা খুব কম লাগে। র‍্যাশনালি তখন ক্যাপিটালিস্টের টাকা থাকা কি ঠিকই আছে? আর শ্রমিকের গরিব থাকা?

ঠিক নাই। কিছুই না করলেও দুনিয়ার যে রিসোর্স আছে তার সঠিক ডিস্ট্রিবিউশনে ব্যাক্তির ভাগ আছে,যেমন ওয়ারিশে থাকে। এইটাই হিউম্যান রাইট। র‍্যাশনাল জাজমেন্ট এইটাকে ধোঁয়াটে করে তোলে।

ভবিষ্যতের মানুষ উৎপাদক হবে কম, ভোক্তা হবে বেশি। প্রোডাকশনের মাধ্যম হিসাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার এইটাই করার কথা।

এখন যে মানুষের কাজের সময় কমায়া আনার আলাপ চলে যে,দিনে কম কাজ করা অথবা সপ্তাহে তিনদিন বা দুইদিন কাজ করা,এইটার কারণ সম্ভবত এত হাই প্রোডাকশন রেটের সাথে ভোক্তা ধরে রাখার ব্যাপার আছে। উৎপাদক নিজেও ভোক্তা। বাজারে প্রচুর পণ্য বা সেবা। আপনি যদি তাদের পণ্য কেনা বা সেবা গ্রহণের সুযোগ না দেন,তবে এই ব্যালান্স ফেইল করবে। ফলে প্রযুক্তির উন্নতি যত বেশি হবে,মানুষ তত বেশি ভোক্তা পড়বে। উৎপাদনের সাথে সরাসরি সম্পর্ক কমবে।

ফলে এইসব মোরাল জাজমেন্টের বেসিসে হিউম্যান রাইট নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। হিউম্যান রাইট মোরালি জাস্টিফাইড কিনা তার ওপরে আসলে নির্ভরও করে না। এইটা একটা আইডিয়া যেইটা প্র‍্যাকটিকালি এস্টাবলিশ করতে হয়।

The following two tabs change content below.
Avatar photo

কবির আহমেদ

জীবিকার জন্য একটা চাকরি করি। তবে পড়তে ও লেখতে ভালবাসি। স্পেশালি পাঠক আমি। যা লেখার ফেসবুকেই লেখি। গদ্যই প্রিয়। কিন্তু কোন এক ফাঁকে গত বছর একটা কবিতার বই বের হইছে।
Avatar photo

Latest posts by কবির আহমেদ (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →