Main menu

হলি স্পাইডার

সাঈদ হেনাঈ যারে “The Beast of Mashhad” – ও বলা হয় সে বিলিভ করতো যে প্রস্টিটিউটরা হইলো গিয়া “Waste of Blood”. এই বিশ্বাস থাইকা সে ১৬ জন প্রস্টিটিউটরে খুন করে ২০০০-২০০১ এর সময়কালে। সে মনে করতো যে এইটা তার হলি ডিউটি এই হলি সিটি থাইকা প্রস্টিটিউটদের রিমুভ করা। যখন তার ক্রাইমটা মানুশের সামনে আসে অনেক রিলিজিয়াস মানুশের কাছেই সে একজন হিরোও বইনা যায়।

সাঈদ হেনাঈ এর কাহিনী নিয়া ডেনিশ-ইরানিয়ান ডিরেক্টার আলী আব্বাসী “Holy Spider” মুভিটা বানাইছেন। অক্টোবর ২৮, ২০২২ এ রিলিজ হইছে মুভিটা। যেইটাতে জার্নালিস্টের ক্যারেক্টারে এক্টিং কইরা জাহরা আমির-ইব্রাহিমি কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বেস্ট এক্ট্রেসের অ্যাওয়ার্ড জিইতা নিছেন। এছাড়াও আরো বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ডের নমিনেশনেও আছে দেখলাম এইটা।

স্টোরিটা ইরানের সেকেন্ড লার্জেস্ট সিটি মাশাদের হইলেও এইটার শুটিং হইছে জর্ডানে। কারণ ইরান থাইকা পারমিশন পায় নাই মুভিটা। ইভেন ইরানিয়ান মিনিস্টার অফ কালচার ইসলামিক গাইডেন্স মোহাম্মদ মেহদি ইসমাঈলি এইটাও বলছেন যে এই মুভিতে যারা এক্টিং করছেন তাদের পানিশমেন্ট দেয়া হইবো। যদিও লিগ্যাল ডিসিশান নেয়া হয় নাই বাট উনি বলছেন যে এইটায় আসলে মুসলিমদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধরে ইনসাল্ট করা হইছে।

মুভিটা শুরু হয় একটা প্রস্টিটিউটের খুন দিয়া। এই প্রস্টিটিউটদের খুন হওয়ার বিষয় নিয়া ইনভেস্টিগেট করতেই বলা যায় মাশাদে আসে জার্নালিস্ট রাহিমি। সে যখন হোটেলে চেক ইন করতে যায় তারে রুম দিতে চায় নাহ কারণ সে একলা একটা মাইয়া মানুশ বইলা। দেন সে বলে যে তার রিজারভেশন আছে এবং তার জার্নালিস্ট আইডিও দেখায়। পরে তারে রুম দেয়। তারে ডেস্ক ক্লার্ক তখন একটা কথা বলে যে তার স্কার্ফ তার চুল ঠিক মতো ঢাকে নাই, অনেক চুল দেখা যাইতেছে। মোরালিটি পুলিশ এইটা দেখলে প্রবলেম হইতে পারে। তখন ছিলো ২০০১ সাল আর এখন ২০২২, কিন্তু ইরানের এই বিষয়গুলা চেইঞ্জ হয় নাই আজ অব্দি। যেইটা রিসেন্ট মাশা আমিনির ডেথের দিকে তাকাইলেই স্পষ্ট দেখা যায়। মাশারেও স্কার্ফ ঠিক মতো না পরার কারণেই ইরানের মোরালিটি পুলিশের হাতে মরতে হইছিলো। এই রিসেন্ট ইভেন্টটারেই আসলে পোরট্রে করছে এই সিনটা।

সাঈদ একজন কন্সট্রাকশন ওয়ার্কার ছিলো, সে ইরান-ইরাক যুদ্ধের ভেটেরানও ছিলো। বউ, টিনেজ একটা ছেলে, আর দুইটা ছোট মেয়ে নিয়া তার সংসার। রাতের সময় সে তার বাইক নিয়া বাইর হইয়া যাইতো রাস্তায় থাকা প্রস্টিটিউটদের নিজের বাসায় নিয়া আসতো। খুব সম্ভবত যখন তার বউ বাচ্চা বাসায় থাকতো নাহ। ভিক্টিমদের স্কার্ফ দিয়া তাদের গলায় ফাঁস দিয়া তাদের মারতো। মারার পরে লাশ কাপড় দিয়া প্যাঁচায়া বাইরে ফালাইয়া আসতো। এইভাবে ধইরা নিয়া মারার কারণে অইসময় নিউজপেপারে যে নিউজ হইতো সেইখানে তারে স্পাইডার কিলার বলা হইতো। এইভাবে সে ১৬-জন প্রস্টিটিউটরে খুন করে।

একটা সিন এমন ছিলো সে খুন করার পর তার বউ বাসায় চইলা আসে। পরে সে লাশটারে কার্পেটে প্যাঁচায়া লিভিং রুমে রাইখা দেয়। তার বউও বুঝতে পারে নাহ যে সাঈদ খুন কইরা লাশ এইভাবে রাইখা দিছে। সে নরমালিই বউয়ের সাথে কথাবার্তা চালাইয়া যায়। এই সিনে সাঈদ আর তার বউয়ের মধ্যে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সও ছিলো। যেইটা আসলে ইরানিয়ান মুভির জন্য একটা কারেজিয়াস স্টেপই। ইভেন মুভির একদম ওপেনিং সিনেই একজন প্রস্টিটিউটরে সেমি-ন্যুড অবস্থায় দেখা যায়। ডিরেক্টার আব্বাসী এইসব নিয়া একটা কথা এমন বলছেন যে এইটা ইরানিয়ান সিনেমার জন্য একটা গ্রেইট দিন যে ফাইনালি এট লিস্ট একটা মুভি যেইখানে নারীদের একটা শরীর আছে, যেইখানে তাদের মাথায় স্কার্ফ পইরা ঘুমাইতে যাইতে হইতেছে নাহ।

ফাইনালি সাঈদরে ধরার জন্য রাহিমি নিজের জীবন রিস্ক করে। রিয়েল লাইফে এই রাহিমি ছিলেন রয়া কারিমি যিনি এই পুরা স্পাইডার কিলার স্টোরিটারে কাভার করতেছিলেন অই সময়। তো রাহিমি প্রস্টিটিউট সাইজা রাস্তায় দাঁড়াইয়া থাকে। তারে ফলো করে কিছু পুলিশ। সাঈদ বরাবরের মতোই রাহিমিরে প্রস্টিটিউট মনে কইরা তার বাইকে তুইলা বাসায় নিয়া যায়। এইটা ছিলো তার ১৭ নাম্বার ভিক্টিম। রাহিমির এটেম্পটা প্রি-প্ল্যানড ছিলো তো সাঈদ যেই কারণে তারে আর খুন করতে পারে নাহ আর ধরা খাইয়া যায়। পরের দিন পুলিশ আইসা তারে ধইরা নিয়া যায়।

সাঈদরে ধইরা নিয়া যাওয়ার পর যখন তারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তখন সে এইরকম বলে যে আল্লা তার সাইডে আছেন। সে জিহাদে নামছে মাশাদের রাস্তার সবথাইকা করাপ্ট জিনিশ দূর করার। অই সময়ের একটা সিনে সাঈদের ছেলে তার মায়েরে জিজ্ঞেস করে যে তার বাপ কি করছে যে তারে জেলে যাইতে হইলো। তখন সাঈদের বউ এইরকম বলে যে তার বাপ কিছুই করে নাই। সে শুধু করাপ্ট মহিলাদের রিমুভ করছে। সে কোনো ভুল করে নাই। তখন ছেলে জিজ্ঞেস করে যে অই মহিলারা কি করছে? সাঈদের বউ বলে যে ওরা রাস্তায় ঘুইরা বেড়াইতো আর ড্রাগস বেঁচতো। ওরা এইটাই ডিজার্ভ করে। তার বউ এই জিনিশগুলারে সাপোর্ট করতেছিলো। এমনকি অইসময়ে সাঈদ অনেক মানুশের কাছে হিরো বইনা গেছিলো। একটা সিনে দেখাইতেছিলো মানুশেরা জেলের বাইরে সাঈদ নির্দোষ বইলা প্রোটেস্ট করতেছিলো, তার মুক্তি চাইতেছিলো।

অই সময়ের আরেকটা সিনে তার ছেলে তার সাথে জেলে দেখা করতে যায় আর জিজ্ঞেস করে সে তাদের কেমনে মারছে। তখন সাঈদ ডিটেইলসে তার ছেলেরে বলে যে সে কেমনে কি করছে। সাঈদের উকিল বলে যে তারা যদি কোর্টে দেখাইতে পারে যে সাঈদ মেন্টালি সিক তাইলে তার পানিশমেন্ট কমবে। বাট সাঈদ কোর্টে সেইটা বলে নাহ আর তার নিজের বিশ্বাসেই স্ট্রং থাকে। ফাইনালি কোর্ট তারে মৃত্যুদন্ড দেয়।

তার মৃত্যুর আগে দুইজন লোক তারে আইসা বলে যে তারে পালাইয়া যাইতে হেল্প করা হইবো। সে সেইটা বিশ্বাসও করে। বাট ফাইনালি অমন কিছুই হয় নাই। ফাঁসিতে ঝুইলাইয়া তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়। যখন তার ফাঁসি হইতেছিলো তখন সে অনেক চিল্লাচিল্লি করে আর তারে কেউ রেস্কিউ কইরা নিয়া যাবে এইরকম কথাবার্তা বলে। এইটা আমার কাছে মনে হইছে তার একটা হেলুসিনেশন যেইটা তার স্ট্রং বিলিফ থাইকা ক্রিয়েট হইছিলো। কারণ আমি কয়েকটা লেখা পইড়া যতটুকু বুঝছি যে এইরকম কিছু ঘটে নাই যে কেউ তারে বলছিলো পালাইয়া যাইতে হেল্প করবে।

একদম এন্ডের সিনে রাহিমি তেহরানে ফেরার পথে ভিডিও রেকর্ডিংগুলা দেখতেছিলো যেইগুলায় বিভিন্ন সময়ে এই কেসটা নিয়া বিভিন্ন মানুশের কথাগুলা রেকর্ড করা হইছিলো। তো সাঈদের ছেলের রেকর্ডিংটা তখন দেখায় সিনটায়, যেইখানে ছেলেটা বলে যে যদি পুলিশ এই মহিলাদের ধইরা রিমুভ না করে তাইলে তার বাপ এইটা করবে। আরো সাইদ আজিমি( সাঈদ হানাঈ) হবে। দেন ছেলেটা বলে আর দেখায় যে কেমনে কেমনে তার বাপ অই মহিলাদের বাসায় আনতো দেন কেমনে তাদের খুন করতো। এই সিনটা দিয়া আসলে যা বুঝাইছে বইলা আমার মনে হয়, এই যে বিশ্বাসটা এইটা চইলা আসতেছে যুগের পর যুগ ধইরা। এই মিসোজেনি যেন বংশ পরম্পরায় লালন হইতেছে অনেক সোসাইটিতে। যার কারণে প্রতিনিয়তই নারীরা নির্যাতিত হইতেছে বিভিন্নভাবে। আর ২০২২ সালে আইসাও সোসাইটি থাইকা এইসব রিমুভ করা আজ অব্দি কঠিন।

The following two tabs change content below.
সুরাইয়া দীনা

সুরাইয়া দীনা

মিশিগানের বাংলাটাউন খ্যাত ছোট শহর হ্যামট্রামিকে বাস।বেড়ে ওঠা সুনামগঞ্জে।
সুরাইয়া দীনা

Latest posts by সুরাইয়া দীনা (see all)

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →