Main menu

রাষ্ট্রভাষা ও পূর্বপাকিস্তানের ভাষা-সমস্যা: কাজী মোতাহার হোসেন (১৯৪৭)

[কাজী মোতাহার হোসেনের এই লেখাটা ছাপা হইছিল “তমুদ্দন মজলিসের” “রাষ্ট্রভাষা কি বাংলা হইবে? – নাকি উর্দু” বুকলেটে, ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। পরে মাসিক সওগাত পত্রিকাতেও ছাপা হইছিল। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে – সেইটা নিয়া কথা-বার্তা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের আগেই হইতেছিল। এই লেখাটা অই তর্ক-বিতর্কের একটা অংশ।]

কোনো দেশের লোকে যে ভাষায় কথা বলে, সেইটিই সে দেশের স্বাভাবিক ভাষা। প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে আবার বাংলাদেশের ভাষা সম্বন্ধে সমস্যা ওঠে কি করে? সত্য সত্য এইটেই মজার কথা—যা স্বাভাবিক, তা অনেক সময় জটিল বুদ্ধি দিয়ে সহজে বোঝা যায় না। একটু পরিষ্কার করে বলবার চেষ্টা করছি।

ধরে নেওয়া যাক, কোনো দেশের শতকরা ৯৯ জন বাংলা ভাষায়, আর বাকি শতকরা ১ জন মাত্র ইংরেজী, উর্দু, হিন্দী প্রভৃতি ভাষায় কথা বলে। আরও মনে করা যাক, এই শেষোক্ত ব্যক্তিরা বাণিজ্যসূত্রে বা শাসক হিসাবে সে দেশে গিয়ে প্রতিষ্ঠাবান হয়েছে এবং অল্প শিক্ষিত বা অল্প বিত্তশালীদের উপর প্রভুত্ব চালাচ্ছে। তাই এরা সে দেশের লোকের প্রতি ও তার ভাষার প্রতি স্বভাবতই অশ্রদ্ধাবান। সে দেশের ভাষা শিক্ষা করে তাদের সঙ্গে কাই-কারবার করা এরা অনাবশ্যক শক্তিক্ষয় বলে মনে করে, আর তাতে এদের আত্মসম্মানেও আঘাত করে বৈকি! অবশ্য, বিজিত জাতি বা শোষিত অধমর্ণের আত্মসম্মান থাকে না, আর তা শোভাও পায় না। বিশেষত বিজেতা বা উত্তমর্ণের ভাষা শিক্ষা করে তাদের সঙ্গে দহরম মহরম রাখতে পারলে তাদের সন্তুষ্টি সাধন করা যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে জীবিকা অর্জনের পথও প্রশস্ত হয়। আর একটা প্রধান কথা, এইভাবে দেশের আপামর সাধারণের সঙ্গে নিজেদের বিরাট পার্থক্য সংরক্ষণ ও স্মরণ করে যথেষ্ট মর্যাদা অনুভব করা যায়। বিজেতা উত্তমর্ণের অনুগৃহীত এই সৌভাগ্যবানেরাই দেশের নেতা এবং জনগণের নামে সমুদয় সুবিধা ভোগের অধিকারী। বর্তমানের সমাজ ব্যবস্থায় ইহা স্বাভাবিক, কারণ মূঢ়-মূকদের বঞ্চিত করায় ভয়ের কারণ নেই বরং না করা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় মাত্র।

এই হলো মোটামুটি বাংলাদেশের এবং বিশেষ করে বর্তমান পূর্ব-পাকিস্তানের ভাষাসমস্যার মানসিক পটভূমি।

পাঠান রাজত্বে রাজভাষা ছিল পোস্তু, আর মোগল আমলে ফার্সী। মোগল-পাঠানেরা বিদেশী হলেও এদেশকেই জন্মভূমি-রূপে গ্রহণ করেছিলেন এবং দেশের অবস্থা জানবার জন্য দেশীয় ভাষাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছিলেন। বিশেষ করে বাংলাদেশে পাঠানরাজদের পৃষ্ঠপোষকতায় রামায়ণ ও মহাভারত বাংলাভাষায় অনূদিত হয়, তা-ছাড়া ভাগবত এবং পুরাণাদিও রচিত হয়। এর আগে বাংলা ভাষা নিতান্ত অপুষ্ট ছিল, এবং ভাষা জনসাধারণের ভাষা বলে পণ্ডিতদের কাছে অশ্রদ্ধেয় ছিল। তখনকার পণ্ডিতেরা কৃত্রিম সংস্কৃত ভাষার আবরণে নিজেদের শুচিতা ও শ্রেষ্ঠতা রক্ষা করতেন। রাজসুলভ উদারতার সঙ্গে গৌড়ের পাঠান সুবাদারগণ পণ্ডিতদের বিরুদ্ধাচরণ অগ্রাহ্য করত সাধারণ লোকের সুবিধার জন্য (এবং হয়তো সঙ্গে সঙ্গে নিজেদেরও গল্প-পিপাসা নিবৃত্ত করবার জন্য) এই সকল পুরাণ ও রামায়ণ-মহাভারত রচনা করান। বলা বাহুল্য দেশীয় কালচারের ধারা রক্ষা করবার পক্ষে এবং দেশবাসীর নৈতিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের আদর্শ অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য এই সব পুস্তকের তুলনা নাই। কতকটা এই কারণেই আজ ভারতবর্ষের সামান্যতম কৃষকরাও এক একজন দার্শনিক বলে পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের বিস্ময় উৎপাদন করেছে। বাস্তবিক দেশবাসীর ভাষা বৈদেশিক শাসকের উৎসাহ পেয়েছিল বলেই বাঙালীরা আত্মস্থ ছিল এবং ইসলামী সভ্যতার থেকে অনেক উৎকৃষ্ট বিষয় গ্রহণ করে নিজেদের জীবন ও সভ্যতাকে পুষ্টতর করতে পেরেছিল। অন্যদিকে, মুসলমান শাসকগণ এবং জনসাধারণও হিন্দু ঐতিহ্যের সংস্পর্শে এসে কাল অনুযায়ী ইসলামের নব নব বিকাশ সাধন করে কার্যক্ষেত্রে স্বাভাবিক ধর্ম ইসলামের উদারতা ও সর্বোপযোগিতাই প্রমাণিত করেছে।

মোগল যুগে বিশেষ করে আরাকান রাজসভার অমাত্যগণ, বাংলা ভাষার শ্রীবৃদ্ধির জন্য অকাতরে অর্থব্যয় করেছেন। মুসলমান সভাকবি দৌলত কাজী এবং সৈয়দ আলাওল বাংলা কবিতা লিখে অমর কীর্তি লাভ করেছেন। এঁদের ভাষা সংস্কৃত, আরবী, ফার্সী, উর্দু, প্রাকৃত প্রভৃতি নানা ভাষার শব্দসম্ভারে সমৃদ্ধ ছিল; কিন্তু এঁরা জোর করে কোনও নির্দিষ্ট ভাষা থেকে বিকট বিকট শব্দ আমদানী করতে চেষ্টা করেন নি, তৎকালীন জনসমাজের নিত্য ব্যবহৃত বা সহজবোধ্য ভাষাতেই তাঁরা কাব্য রচনা করে গেছেন। মোগল পাঠানেরা মূলে বৈদেশিক হলেও এই দেশকেই তাঁরা স্বদেশ করেছিলেন। তাঁদের রাষ্ট্রভাষা পোস্তু বা ফার্সী রূঢ় স্বাতন্ত্র্যের সঙ্গে এদেশীদের আদর্শকে গ্রাস করতে চায় নি, বরং এদেশীয় ভাষাকে রাজকীয় উৎসাহ দিয়ে মোগল পাঠান বাদশাহ ও সুবাদারেরা এদেশের সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা করতে চেষ্টা করেছিলেন। তাই দেশবাসী রাজভাষা শিক্ষা করেও জাতীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পেরেছিলেন, এমনকি বৈদেশিক ভাবধারায় সিঞ্চিত ক’রে তার শ্রীবৃদ্ধিও সাধন করেছিলেন।

এর পর এল ইংরেজ রাজত্ব। কিছুদিন পরে, ইংরেজী হলো রাষ্ট্রভাষা। হিন্দুরা সানন্দে নতুন প্রভু ও তার ভাষাকে বরণ ক’রে নিল, কিন্তু মুসলমানেরা নানা কারণে তা’ পারল না। রামমোহনের যুগেও তাঁর উক্তি থেকেই আমরা জানতে পারি, হিন্দু ও মুসলমান মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকের মধ্যে তুলনায় মুসলমানই ভদ্রতায় বিচারবুদ্ধিতে এবং কার্যপরিচালনায় শ্রেষ্ঠ ছিল। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই উপরোক্ত কারণ এবং রাজকীয় ভেদনীতির ফলে আর্থিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক সমুদয় ব্যাপারে মুসলমান তলায় পড়ে গেল এবং হিন্দু-মুসলমান উভয়ের মনে পরস্পরের প্রতি বিজাতীয় ঘৃণা ও হিংসার সৃষ্টি হলো। বাংলা ভাষাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ল। উচ্চশিক্ষিত পণ্ডিতেরা একে সংস্কৃতের আওতায় নিয়ে কেবল হিন্দুসভ্যতার বাহন করে তুলল। আর মুসলিম অর্ধশিক্ষিত মুন্সীরা আরবী-পার্সীবহুল এক প্রকার ইসলামী সাহিত্যের সৃষ্টি করল। দুই দিকেই বাড়াবাড়ি হলো। কিন্তু বিদ্যা, বুদ্ধি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠার জোরে পণ্ডিতি বাংলা টিকে গেল, মুন্সীয়ানা বাংলা লুপ্ত হ’লো। অবশ্য বর্তমান গণপ্রাধান্যের যুগে ক্রমে ক্রমে পণ্ডিতি বাংলাও সরল হয়েছে।

কিন্তু আজ ইংরেজ প্রভুত্বের অবসান ঘটেছে — ১৭৫৭ সালে পলাশীর বিপর্যয়, ১৮৩০-৪০ সালে ওহাবী আন্দোলনের ব্যর্থতা, ১৮৫৭ সালে সিপাহী-বিদ্রোহের শোচনীয় পরিণাম, সব গ্লানিকে সার্থক করে ১৯৪৭ সালে জাতীয় জয়-পতাকা উড্ডীন হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু- মুসলমান জনসাধারণ ও নেতৃবৃন্দের সামনে বিরাট কর্তব্য আর গুরু দায়িত্ব উপস্থিত হয়েছে। আগামী ১০ বৎসরের মধ্যে সুচিন্তিত পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সমগ্র দেশবাসীর সমবেত চেষ্টার ফলে আশা করা যায় যে, দেশের দারিদ্র্য, স্বাস্থ্যহীনতা, অশিক্ষা এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব দূর হয়ে সাধের পূর্ব পাকিস্তান আবার গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হবে। দারিদ্র্য দূর করতে হ’লে সামাজিক বৈষম্য দূর করা, বৈদেশিকের শোষণ থেকে আত্মরক্ষা করা, এবং জাতীয় সম্পদ যাই থাক, শিল্প-বাণিজ্যের সাহায্যে তার সুবিনিময়ের ব্যবস্থা করা একান্ত আবশ্যক। শুধু ইংরেজের প্রভাব কিছুটা খর্ব হ’লেই হবে না ইংরেজের স্থান যেন বৈদেশিক বা অন্য প্রদেশীয় লোকে দখল ক’রে না বসে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখাও নিতান্ত প্রয়োজন। কুচক্রী লোকেরা যাতে শিক্ষা ব্যবস্থার ভিতর দিয়ে, ভাষার বাধা সৃষ্টি ক’রে নানা অজুহাতে পূর্ব পাকিস্তানের মানসিক বিকাশে বাধা না জন্মাতে পারে সে বিষয়ে নেতৃবৃন্দ এবং জনসাধারণকে সজাগ থাকতে হবে।

ভাষার বাধা একটি জাতিকে কিভাবে পঙ্গু করে রাখতে পারে তার উদাহরণ তো আমরাই – অর্থাৎ ভারতের হিন্দু-মুসলমান এবং বিশেষ করে পূর্ব বাঙলার মুসলমানেরাই। ইংরেজী রাষ্ট্রভাষা হ’লো এবং শিক্ষার বাহনও হ’লো। ফলে, প্রচুর মানসিক শক্তি ব্যয় কারে পাঁচ বছরের জ্ঞান দশ বছর ধরে আয়ত্ত করবার চেষ্টা হলো; কিন্তু বৈদেশিক ভাষার ফলে সে জ্ঞানও নিতান্ত ভাসা ভাসা বা অস্পষ্ট হয়ে রইল। ছাত্রদের মুখে উপলব্ধিবিহীন লম্বা লম্বা। কোটেশন বা গালভরা বুলি শুনা যেতে লাগল। আরও এক বিষয়ে বড় ক্ষতি হয়েছিল। সে হচ্ছে ভারতবর্ষে বৃটিশের শিক্ষানীতি। বৈজ্ঞানিক বিষয়ে পাঠ্যপুস্তক এবং পাঠ্য বিষয় এমনভাবে নির্ধারিত হয়েছিল, যাতে কার্যকরী শিক্ষার বদলে কতকটা মন-বুঝানো মত পুঁথিগত বিদ্যা আয়ত্ত হয় মাত্র। তাই দেশে বি.এস-সি. বি.এল. এবং এম.এস-সি; বি.এল- এর সংখ্যা অল্প নয়, অথচ বৈজ্ঞানিক শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নগণ্য। অবশ্য ইংরেজী শিক্ষায় লাভও যে কিছু হয়েছিল তাও অস্বীকার করা যায় না।

ভারতের হিন্দু-মুসলমানের এই সাধারণ পঙ্গুতার উপরেও বিশেষ করে পূর্ব বাঙলার মুসলমানের আড়ষ্টতার আরও দু’টি কারণ ঘটেছিল। প্রথমটি মাতৃভাষা বাঙলার প্রতি অবহেলা, আর দ্বিতীয়টি ধর্মীয় ভাষাসম্পর্কিত মনে করে বাঙলার পরিবর্তে উর্দু ভাষার প্রতি অহেতুক আকর্ষণ বা মোহ। ফলে বাঙালী মুসলান বাদশাহদের প্রবর্তিত ফার্সী সভ্যতা ভুলে গেল, আর বাঙলা ভাষার সাহায্যেও ইসলামী ঐতিহ্য বজায় রাখবার চেষ্টা করল না। উর্দুর সপক্ষে যতই ওকালতী করা যাক, সেটা যে আসলে পরকীয় ভাষা, এ বিষয়ে সন্দেহ নাই। দেশবাসীর নাড়ীর সঙ্গে যোগ না থাকায় উর্দু ভাষার সাহায্যে ধর্মীয় ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হয় নি, কারণ ভাসা ভাসা দু-চারটা বুলির সংযোগে জাতীয় বা ধর্মীয় ঐতিহ্য রক্ষা করা বাস্তবিকই অসম্ভব। পুঁথি-সাহিত্যের সাহায্যে যা কিছু রক্ষা হয়েছিল, তাতে বাঙালী মুসলমান চাষীর মনের ক্ষুধা অনেকটা পরিতৃপ্ত হচ্ছিল। কিন্তু শিক্ষাভিমানীদের অবহেলা বা অশ্রদ্ধার ফলে সাধারণ জনসমাজ সে সম্পদও প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। তাতে অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে বাঙালী মুসলমানের সত্যিকার সভ্যতা বলতে যেন কোনো জিনিসই নাই, পরের মুখের ভাষা বা পরের শেখানো বুলিই যেন তার একমাত্র সম্পদ। স্বদেশে সে পরবাসী, বিদেশীই যেন তার আপন! তাই তার উদাসী ভাব, পশ্চিমের প্রতি অসহায় নির্ভর, আর নিজের প্রতি নিদারুণ আস্থাহীনতা। পশ্চিমা চতুর লোকেরা এ অবস্থার পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেছে। তারা জানে যে, বৃহৎ পাগড়ী বেঁধে বাঙলাদেশে এলেই এদের পীর হওয়া যায়, কমের পক্ষে মৌলবীর আসন গ্রহণ করে বেশ দু-পয়সা রোজগারের যোগাড় হয়। শহুরে দোকানদার যেমন করে গ্রাম্য ক্রেতাকে ঠকিয়ে লাভবান হতে পারে, এ যেন ঠিক সেই অবস্থা! বাস্তবিক বাঙালী মুসলমান ‘বাঙাল’ বলেই শুধু পশ্চিমা কেন, পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর দক্ষিণের কাছেই উপহাস ও শোষণের পাত্র।

এই দৈন্য ও হীনতাবোধের আসল কারণ, আমরা মাতৃভাষা বাঙলাকে অবহেলা করে, ফাঁকা ফাঁকা অস্পষ্ট বুলি আওড়াতে অত্যন্ত হয়েছি। এই সব কথা আমাদের অন্তর-রসে সিঞ্চিত নয় বলেই আমরা কথার মধ্যে জোর পাইনে। বর্তমানে ইংরেজের প্রভাব কমে গেছে, সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্র অতিরিক্ত হিন্দুপ্রভাব থেকে মুক্ত মুসলমানের সমবেত চেষ্টায় হিন্দু-মুসলমান ঐতিহ্যে পরিপুষ্ট বাংলা ভাষা রচিত হবার সুযোগ উপস্থিত হয়েছে। মুসলিম ভাবধারার ঘাটতি পূরণ ক’রে নিয়ে মাতৃভাষাকে পুষ্ট এবং সমগ্র রাষ্ট্রকে গৌরবান্বিত করবার দায়িত্ব এখন আমাদের উপর। এতদিন মুসলমান কেবল হিন্দুর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিশ্চিন্ত আরামে ব’সে বলেছে যে হিন্দুরা বাংলা ভাষাকে হিন্দুয়ানী ভাবে ভরে দিয়েছে, কিন্তু পূর্ব-পাকিস্তানে তো তা চলবে না। এখানে ইসলামী ঐতিহ্য পরিবেশন করবার দায়িত্ব মুখ্যত মুসলমান সাহিত্যিকদেরই বহন করতে হবে। তাই আজ সময় এসেছে, মুসলমান বিদ্যার্জন করে পুঁথি-সাহিত্যের স্কুলবর্তী বাংলা-সুসাহিত্য সৃষ্টি করে মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গে দেশবাসীর পরিচয় স্থাপন করবেন: তবেই মাতৃভাষা সম্পূর্ণ সমৃদ্ধ হবে এবং ইসলামী ভাবধারা যথার্থভাবে জনসাধারণের প্রাণের সামগ্রী হয়ে তাদের দৈন্য ও হীনতাবোধ দূর করবে। উর্দুর দুয়ারে ধর্না দিয়ে আমাদের কোনো কালেই যথার্থ লাভ হবে না। আল্লার কাছে উর্দু বেশী আদরের কিংবা বাংলা হতাদরের সামগ্রী নয়। উর্দু আরবী থেকে গৃহীত বলেই যে উর্দু ভাষা মুসলমানের ধর্মীয় ভাষা একথাও যথার্থ নয়। গোড়ায় উর্দু মোগল-রাজ্যের নানা দেশীয় সৈনিকের তৈরি একটি খিচুড়ি ভাষা ছিল, কিন্তু তাই বলে অশ্রদ্ধেয় নয়। আরবী, ফার্সী, প্রাকৃত প্রভৃতি নানা ভাষা থেকে শব্দ নিয়ে উর্দু ভাষা সমৃদ্ধ। কালে কালে অবশ্য মৌলভী ও পণ্ডিতের টানাটানিতে আরবী-উর্দু এবং সংস্কৃত-উর্দু দুই রকম হ’য়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া লক্ষ্ণৌ, দিল্লী, লাহোর, হায়দ্রাবাদ এসব জায়গার উর্দুর মধ্যেও যথেষ্ট পার্থক্য আছে। উর্দুতে মৌলিক সাহিত্যের পরিমাণ এবং উৎকর্ষ হয়তো সামান্য, কিন্তু অনুবাদ সাহিত্যে উর্দু সত্যিই সমৃদ্ধ। আমি উর্দু ভাষাকে নিন্দা বা অশ্রদ্ধা করি না, কিন্তু বাঙালী মুসলমানের উর্দুর মোহকে সত্যসত্যই মারাত্মক মনে করি। যখন দেখি, উর্দু ভাষায় একটা অশ্লীল প্রেমের গান শুনেও বাঙালী সাধারণ ভদ্রলোক আল্লাহর মহিমা বর্ণিত হচ্ছে মনে কারে ভাবে মাতোয়ারা, অথচ বাংলা ভাষায় রচিত উৎকৃষ্ট ব্রহ্মসঙ্গীতও হারাম বলে নিন্দিত, তখনই বুঝি এই সব অবোধ ভক্তি বা অবোধ নিন্দার প্রকৃত মূল্য কিছুই নাই; ব্যাপারটা শুধু ধ্বনিজ মোহ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই মোহে আমরা আর কতদিন আবিষ্ট থাকব? আমাদের জগৎ-সংসারের দিকে তাকাতে হবে, তার জীবন-স্রোতের সঙ্গে সমান তালে চলতে হবে। সুতরাং স্বপ্নচালিতের মত, বা কলের পুতুলের মত না চলে মানুষের মত চলতে হবে। আমাদের মোহাবেশ কাটাতে হবে, চোখ মেলে বিষয় ও ব্যাপারের যাচাই করে নিতে হবে। সেই চলাই হবে আমাদের প্রকৃত স্বাধীন চলা। এর একমাত্র সহায় হচ্ছে মাতৃভাষার যথোপযুক্ত চর্চা এবং জীবনে যা কিছু সুন্দর, লোভনীয় বা বরণীয় মাতৃভাষার মারফতেই তা সম্যক অর্জন করা।

আমাদের এই মাতৃভাষা ছাড়া আর কিছুতেই আমাদের প্রকৃত উন্নতি হ’তে পারে না। অবশ্য সম্পূর্ণ জীবন বলতে আত্মকেন্দ্রিক জীবন বুঝায় না, দশজনের সঙ্গে মিলে মিশে জীবনযাত্রাই বুঝায়। কাজে কাজেই ভিন্ন ভাষাভাষীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য ভিন্ন ভাষাও পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা শিক্ষা করতে হয়। কিন্তু এ শিক্ষা, মাতৃভাষায় পরিপূর্ণ শিক্ষার পটভূমির উপর হওয়াই বাঞ্ছনীয়, মাতৃভাষার পরিবর্তে কিছুতেই নয়। বলা বাহুল্য, আমাদের আশে পাশে যে সব লোক বাস করে, অর্থাৎ আমরা আমাদের পরিপার্শ্বস্থ যে সব লোকের মধ্যে বাস করি, তাদের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক নিকটতম কাজেই তাদের দাবীই অগ্রগণ্য, দূরবর্তীদের নারী এর পরে। তাই মাতৃভাষায় দৃঢ় প্রতিষ্ঠার পর, প্রয়োজন মত অন্য ভাষা শিক্ষা করতে হবে। কাজেই প্রাথমিক শিক্ষায় শুধু মাতৃভাষা, পরে ম্যাট্রিকুলেশন শ্রেণীর শেষ তিন-চার বছর এর সঙ্গে প্রয়োজন মত অন্য একটি বা দুটি ভাষা জুড়ে দেওয়া যেতে পারে। এতে এইসব দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষার শিক্ষাও দ্রুততর এবং অপেক্ষাকৃত সুসাধ্য হবে।

শিক্ষার বাহন অবশ্যই মাতৃভাষা হবে। জগতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হলে, হয়তো ইংরেজী ভাষাই আমাদের পক্ষে সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে। কিন্তু এর উপর অত্যধিক জোর দেওয়া এখন সম্পূর্ণ অনাবশ্যক। রাষ্ট্রের ভিন্নপ্রদেশীয় লোকদের বা প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগ রাখতে হলে আমার বিবেচনার পণ্ডিতি ও মৌলবী-উর্দুর মাঝামাঝি ধরনের উর্দুই সবচেয়ে বেশী উপযোগী হবে। এই দিক দিয়ে বর্তমানে উর্দু ভাষারও সংস্কার করা আবশ্যক। বৃদ্ধ অহমিকা বা অন্ধ গোঁড়ামী ত্যাগ করে এক যোগে কাজ করলে বোধ হয় উর্দু ও হিন্দীর পার্থক্য কমিয়ে পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ান ইউনিয়নের উপযোগী একটি বলিষ্ঠ অর্থাৎ সহজ Linguafranca বা সার্বভৌম ভাষা সৃষ্টি করা যেতে পারে। ম্যাট্রিকুলেশনের শেষ তিন-চার শ্রেণীতে এ ভাষা শিক্ষা দিলে বোধ হয় ছাত্রেরা মোটামুটি ধরনের ব্যাপক কালচারের অধিকারী হতে পারে; আর যারা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরেই শিক্ষা শেষ করে, তারাও অকারণ ভাষা- নিষ্পেষণের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে শুধু মাতৃভাষার সাহায্যেই আবশ্যক জ্ঞান ও স্বকীয় কালচারের স্বাদ পেতে পারে!

শিক্ষার বাহন ও সার্বভৌমিক ভাষা ছাড়াও ভাষা-সমস্যার আর একটা দিক আছে—সেটা হচ্ছে রাষ্ট্রভাষা কি হবে। এতদিন ইংরেজ প্রভু ছিল, কাজেই রাষ্ট্রভাষা ইংরেজী ছিল, অর্থাৎ রাজভাষাই রাষ্ট্রভাষা ছিল। রাষ্ট্রভাষা বলতে অবশ্য বুঝায়, আদালতে কোন ভাষায় রায় লেখা হবে—কোন্ ভাষায় শিক্ষিত হলে সরকারী উচ্চপদ পাওয়া যাবে, রাষ্ট্রের চিঠিপত্র, দলিল- দস্তাবিজে কোন ভাষা ব্যবহৃত হবে, ইত্যাদি। এক কথায় কোন ভাষায় শিক্ষার জন্যে সরকার থেকে সবচেয়ে বেশী ব্যয় বরাদ্দ হবে, এবং কোন ভাষায় শিক্ষিত হলে রাষ্ট্রের চক্ষে অধিক শিক্ষিত বলে বিবেচিত হবে।

অতএব পূর্ব পাকিস্তানের রাজভাষা বা রাষ্ট্রভাষা বাঙলাই হওয়া স্বাভাবিক এবং সমীচীন। কোনও কোনও পরমুখাপেক্ষী বাঙালীর মুখেই ইতিমধ্যে উর্দুর ঝনৎকার শুনা যাচ্ছে। কিন্তু এঁদের বিচারবুদ্ধিকে প্রশংসা করা যায় না। আগেই উর্দুর মোহ এবং তার কারণ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছি। এ সমস্ত উক্তি ‘কলের মানুষের’ অবোধ অপুষ্ট মনেরই অভিব্যক্তি। এতে বাঙালীর জাতীয় মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। এর ফলে এই দাঁড়াবে যে বাঙালী হিন্দু-মুসলমান ইংরেজ-রাজের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে অমনিই পাঞ্জাব সিন্ধু-বেলুচি-রাজের কবলে যেয়ে পড়বে। ধর্মের অন্ধ উন্মত্ততায় মেতেই অনেকে উর্দু-উর্দু হুঙ্কার ছাড়ছেন; কিন্তু আগেই বলেছি বাংলা ভাষার মধ্যে দিয়ে না হলে প্রকৃত ধর্মবোধ বা ঐতিহ্যজ্ঞান কখনও বাঙালীর অন্তরে প্রবেশ করবে না। এর জন্য চাই অনুবাদ কমিটি গঠন করে অন্য ভাষা থেকে অবিলম্বে ধর্ম ও সভ্যতার যাবতীয় প্রধান প্রধান বিষয়ের ভাষান্তরকরণ। এই কর্তব্যে উদাসীন থেকে পরের উচ্ছিষ্ট ভোজন করে পেটও ভরবে না তৃপ্তিও হবে না। জাতির স্থায়ী মঙ্গল এ ভাবে কন হবে না। উর্দুকে শ্রেষ্ঠ ভাষা, ধর্মীয় ভাষা বা বনিয়াদী ভাষা বলে চালাবার চেষ্টার মধ্যে যে অহমিকা প্রচ্ছন্ন আছে তা আর চলবে না। নবজাগ্রত জনগণ আর মুষ্টিমেয় চালিয়া তথাকথিত বুনিয়াদী গোষ্ঠীর চালাকীতে ভুলবে না। বরং পূর্ব পাকিস্তানে সরকারী চাকুরী করতে হ’লে প্রত্যেককে বাংলা ভাষায় মাধ্যমিক মান পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষানবিশী সময়ের পরে অযোগ্য এবং জনসাধারণের সহি সহানুভূতিহীন বলে এরূপ কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হবে।

সমগ্র পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাংলা ভাষাভাষী হিন্দু-মুসলমানই সংখ্যায় গরিষ্ঠ। তবু আমরা পশ্চিম পাকিস্তানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করবার পক্ষপাতী নই। কারণ তাতে পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণের স্বাভাবিক বিকাশে বাধার সৃষ্টি হবে। সুতরাং পশ্চিম পাকিস্তানে উর্দু বা পোস্তু এবং পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাই রাষ্ট্রভাষা হবে। এ ব্যবস্থা মোটেই অশোভন নয়; রাশিয়ার মত বা কেনাডার মত আধুনিক ও উন্নত দেশে বহু রাষ্ট্রভাষার নজির আছে। রাশিয়ার পরস্পরসংলগ্ন ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রে যদি একাধিক রাষ্ট্রভাষা হ’তে পারে, তা হলে পাঞ্জাব ও পূর্ববাংলার মত হাজার দেড় হাজার মাইল ব্যবধানে অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানে অবশ্যই দু’টি রাষ্ট্র ভাষা হতে পারে, এবং তাই স্বাভাবিক। রাশিয়ার জনমতের প্রাধান্য আছে, অর্থাৎ জনগণই প্রকৃত রাজা তাই জোর করে ভিন্ন প্রদেশের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারূপে চালাবার মত মনোবৃত্তি সেখানে মাথা তুলতে পারে না। আমাদের দেশেও, নতুন পাকিস্তান রাষ্ট্রে, জনগণ প্রমাণ করবে যে তারাই রাজা—উপাধিধারীদের জনশোষণ আর বেশিদিন চলবে না। বর্তমানে যদি গায়ের জোরে উর্দুকে বাঙালী হিন্দু মুসলমানের উপর রাষ্ট্রভাষা রূপে চালাবার চেষ্টা হয়, তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হবে। কারণ ধূমায়িত অসন্তোষ বেশী দিন চলবে না। শীঘ্রই তা’হলে পূর্ব-পশ্চিমের সম্বন্ধের অবসান হবার আশঙ্কা আছে। জনমতের দিকে লক্ষ্য রেখে ন্যায়সঙ্গত এবং সমগ্র রাষ্ট্রের উন্নতির সহায়ক নীতি ও ব্যবস্থা অবলম্বন করাই দূরদর্শী রাজনীতিকের কর্তব্য।

‘সওগাত’
১৯৪৭

রিলিভেন্ট টেক্সট:
ফররুখ আহমদের লেখা

এডিটর, বাছবিচার।
View Posts →
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক। জন্ম, ঊনিশো পচাত্তরে। থাকেন ঢাকায়, বাংলাদেশে।
View Posts →
কবি। লেখক। চিন্তক। সমালোচক। নিউ মিডিয়া এক্সপ্লোরার। নৃবিজ্ঞানী। ওয়েব ডেভলপার। ছেলে।
View Posts →
মাহীন হক: কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক। ভালোলাগে: মিউজিক, হিউমর, আর অক্ষর।
View Posts →
দর্শন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, চাকরি সংবাদপত্রের ডেস্কে। প্রকাশিত বই ‘উকিল মুন্সীর চিহ্ন ধরে’ ও ‘এই সব গল্প থাকবে না’। বাংলাদেশি সিনেমার তথ্যভাণ্ডার ‘বাংলা মুভি ডেটাবেজ- বিএমডিবি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। ভালো লাগে ভ্রমণ, বই, সিনেমা ও চুপচাপ থাকতে। ব্যক্তিগত ব্লগ ‘ইচ্ছেশূন্য মানুষ’। https://wahedsujan.com/
View Posts →
কবি। লেখক। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্ট। রাজনীতি এবং বিবিধ বিষয়ে আগ্রহী।
View Posts →
গল্পকার। অনুবাদক।আপাতত অর্থনীতির ছাত্র। ঢাবিতে। টিউশনি কইরা খাই।
View Posts →
জন্ম ২০ ডিসেম্বরে, শীতকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়তেছেন। রোমান্টিক ও হরর জনরার ইপাব পড়তে এবং মিম বানাইতে পছন্দ করেন। বড় মিনি, পাপোশ মিনি, ব্লুজ— এই তিন বিড়ালের মা।
View Posts →
জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৮। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা, সেখানেই পড়াশোনা। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়নরত। লেখালেখি করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফিলোসফি, পলিটিক্স, পপ-কালচারেই সাধারণত মনোযোগ দেখা যায়।
View Posts →
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। সংঘাত-সহিংসতা-অসাম্যময় জনসমাজে মিডিয়া, ধর্ম, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রের বহুমুখি সক্রিয়তার মানে বুঝতে কাজ করেন। বহুমত ও বিশ্বাসের প্রতি সহনশীল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের বাসনা থেকে বিশেষত লেখেন ও অনুবাদ করেন। বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোস্যাল সায়েন্সেস, ক্যালকাটায় (সিএসএসসি) পিএইচডি গবেষণা করছেন। যোগাযোগ নামের একটি পত্রিকা যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ফাহমিদুল হকের সাথে। অনূদিত গ্রন্থ: মানবপ্রকৃতি: ন্যায়নিষ্ঠা বনাম ক্ষমতা (২০০৬), নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড এস হারম্যানের সম্মতি উৎপাদন: গণমাধম্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি (২০০৮)। ফাহমিদুল হকের সাথে যৌথসম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সমাজ সংস্কৃতি (২০১৩) গ্রন্থটি।
View Posts →
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবে কোন বিষয়েই অরুচি নাই।
View Posts →
পড়ালেখাঃ রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে সংসার সামলাই।
View Posts →
মাইক্রোবায়োলজিস্ট; জন্ম ১৯৮৯ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। লেখেন কবিতা ও গল্প। থাকছেন চট্টগ্রামে।
View Posts →
জন্ম: টাঙ্গাইল, পড়াশোনা করেন, টিউশনি করেন, থাকেন চিটাগাংয়ে।
View Posts →
বিনোদিনী দাসী (১৮৬২/৩ - ১৯৪১): থিয়েটার অভিনেত্রী, রাইটার। ১৮৭৪ থেকে ১৮৮৬ এই ১২ বছর তিনি কলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনয় করেন। কবিতার বই – বাসনা এবং কনক ও নলিনী। আত্মজীবনী - ‘আমার কথা’ (১৯২০)।
View Posts →