আমার শিল্পী জীবনের কথা – আব্বাসউদ্দীন আহমদ (সিলেক্টেড পার্ট ৪)
পার্ট ১ ।। পার্ট ২ ।। পার্ট ৩ ।।
…
।। চাকুরী ও বিয়ে ॥
দু’বছরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠা অর্জন করলাম। বাংলা সরকারের কৃষি দফতরে একটা পাকা চাকুরী খালি হল, দরখাস্ত করলাম। চাকুরীটা হয়ে গেল। ডি. পি. আই অফিসের অস্থায়ী চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে পাকা চাকুরীতে ঢুকলাম। আমার উর্ধ্বতন, কৃষি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ওয়েস্টার্ন সার্কেল, তিনি একদিন বললেন, “আচ্ছা, আপনার নাম কি সেই, আজকাল যার রেকর্ডে খুব নাম শুনি… সেইই?” আমি অতি বিনয়ে বললাম, “আজ্ঞে হ্যাঁ।” তার নাম যদুনাথ সরকার। তিনি হেড এসিস্টেন্টকে ডেকে বললেন, “দেখুন, একে কোনও জটিল কাজ দেবেন না। অফিসে এসে নাম দস্তখত করে যেখানে খুশী সেখানে যাবেন, বিশেষ করে দুপুরে যদি রেকর্ড করবার জন্য রিহার্সেলে যেতে চান কক্ষণো বাধা দেবেন না। আমার বিভাগে এমন লোক পেয়েছি এতেআমাদের সৌভাগ্য।” বলা বাহুল্য বৃদ্ধ হেড এ্যাসিস্টান্ট ধর্মদাস-বাবু এ নিয়মের কোন ব্যতিক্রম করেন নি। আমি তাই এই দুজনের কাছেই কৃতজ্ঞ। এঁদের কাছে বাঁধাধরা নিয়মে চাকুরী করতে গেলে সত্যিই আমি আমার সংগীতসাধনার পথে নির্বিবাদে এগুতে পারতাম না।
গ্রামোফোন কেম্পানীতে একদিন কাজিদার ঘরে হরিদাস, মুণাল আর কে কে বসে গল্প হচ্ছিল। এমন সময় আমি গেলাম। জানি না কি. ব্যাপার, হঠাৎ কাজিদা বলে উঠলেন তাদের উদ্দেশ করে, “দেখ তোমাদের কাছে একট। কথ বলি। আব্বাস আমার ছোট ভাই। দিন দিন গানে চমৎকার নাম করছে। যদি তোমরা কেউ একে কোনদিন খারাপ পথে নিয়ে যাও তাহলে তোমাদের জ্যান্ত রাখব না।” বলাই বাহুল্য কাজিদার একথা সবাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল।
একদিনকার একট ঘটনা বলি। কবি শৈলেন রায় আমার বাল্যবন্ধু। অভিনেতা দুর্গাদাসবাবু ভারী রসিক লোক, শৈলেন ও আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। প্রায়ই আমাদের দুজনকে বলতেন, “একদিন হোক না একপাত্র! দোষ কি?” আমি একদিন বললাম, “আপনার হাতে হাতখড়ি হওয়া মানে তে৷ অল ইন্ডিয়া রেডিওতে খবর বলা। তিনি হেসে বলতেন, “আরে না না, কাকপক্ষীও জানতে পারবে না।” শৈলেন বলত, “তা দুর্গাদা’ আমাদের সজীব লিভারের ওপর আপনার এত হিংসা কেন?” নাঃ ডাল আর গলে না। দুর্গাদাসবাবুকে অনেকের কাছে বলতে শুনেছি, “বাবা, এরা কাদায় বাস করে কিন্তু কাদা গায়ে মাখে না।”
গ্রামাফোন কোম্পানীর রিহার্সেল রুমটা ছিল তখন অতি জঘন্য জায়গায় । ১৬০নং আপার চিৎপুর রোড, বিষ্ণুভবন। তার আশে-পাশের বহুদূরে ভদ্রলোকের বাস ছিল না। এ দুষিত আবহাওয়ায় নিজেকে বীচিষে রাখা কতদিন সম্ভবপর হবে এই নিয়ে দস্তুরমত চিন্তিত হয়ে পড়লাম। অকস্মাৎ একদিন মনস্থির করে ফেললাম। বাবাকে ‘জানিয়ে দিলাম, আমি বিয়ে করতে রাজী।
হল্দিবাড়ীতে আমার দোস্ত মশারফ হোসেনের কাছে বাবা চিঠি দিলেন। আমার জীবনের অন্তরংগতম বাল্যবন্ধু আমার দোস্ত মশারফ হোসেন। কুচবিহার জেন্কিন্স স্কুলে যখন সিস্কথ ক্লাশে ভর্তি হই, তখনই তার সাথে আমার প্রথম বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। একই হোস্টেলে থাকি। তারা তিনভাই বিরাট সম্পত্তির মালিক – আশৈশব পিতৃহীন। সম্পত্তি তাদের কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে। এর বড় ভাইয়ের সাথে ছিল আমার বড় ভাইয়ের বন্ধুত্ব–তাই আমাদের দু’জনের মাঝেও গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। হোষ্টেলের সবাই বললে, বাঃ এরা দুটিতে বেশ মিল। দোস্তালি পাতাও। তাই দু’জন দু’জনকে দোস্ত বলে ডাকতাম। আমার দোস্ত এখন রংপুর ধাপে বাস করছেন।
দোস্ত আমাকে চিঠি দিল, তার ওখানে গেলাম, রংপুর জেলার ডোমার গিয়ে মেয়ে দেখলাম। দশ বার দিনের মধ্যেই বিয়ে হয়ে গেল।
তখন সমাজের অবস্থা কি ছিল বলতে গিয়ে বিয়ের দিনের একটা ঘটনা বলতেই হচ্ছে। যেদিন মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম সেদিন হবু শ্বশুরবাড়ীতে কী গানের ঘটা। হারমোনিয়াম বাজিয়ে কত গানই গেয়েছিলাম। পাড়ার লোক সেদিন আসর জমিয়েছিল।
বিয়ের দিন কলকাতা থেকে বন্ধুবান্ধব এসেছে। বিয়ের পর রাতে তকরীম আহমদ যেই সেতারে একটু টুংটাং শব্দ তুলেছে অমনি উঠেছে প্রতিবাদ। না, একি মুসলমানের বিয়ে-বাড়ী. গান-বাজনা সামাজিক প্রচলন নেই ইত্যাদি! বন্ধুদের এই অবমাননায় আমি গণ্ডগোলের ফাঁকে আঁধার রাতে শ্বশুরবাড়ী থেকে চলে গিয়ে রাত কাটিয়েছি দূরে এক হাই স্কুলের টেবিলে। রাতে ভীষণ ঝড় উঠেছিল। সমাজের এই রূঢ় আচরণে আমার বুকে ও উঠেছিল সেদিন সাত-সাগরের ঢেউ!
সারা রাত বর কোথায় বর কোথায় করে খুঁজেছিল সবাই। আমাকে পায়নি। বিয়ে-বাড়ীতে এ নিয়ে উঠেছিল মহা আলোড়ন। ভাগ্যিস বিয়ে পড়ানো আগেই হয়ে গিয়েছিল – কাজেই সবাই মনে করেছিল, পাখীকে শিকল পরানো হয়েছে, আরতো উড়তে পারবে না, খাঁচায় আসতেই হবে ফিরে।
সারারাত বাইরের ঝড় আর মনের ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করে ভোরের দিকে টেবিলের ওপর ঘুমিয়ে পড়েছি। প্রাতঃভ্রমণরত দু’একজন শ্বশুরবাড়ীর লোক আমাকে এ অবস্থায় আবিষ্কার করে শেষ পর্যন্ত নিয়ে আসেন মানভঞ্জনের পালার দৃশ্যে অবতীর্ণ হবার জন্য ।
পরবর্তীকালে অবশ্যি শ্বশুরবাড়ীতে যতবারই গিয়েছি গানের জন্য বাধা তে দূরের কথা ষে ক’দিন থাকতাম গলার অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে ঠেকত যে দস্তরমত পনের-বিশ দিন গলাকে বিশ্রাম দিতে হত।
আমার প্রথম পুত্রের জন্মগ্রহণের সংবাদ পাই কলকাতায়। কাজিদাকে বললাম, “কাজিদা আল্লার অসীম অনুকম্পায় আমার এক খোকা এসেছে ঘরে, আপনি যদি খোকার একটা নামকরণ করেন।” মহা উল্লাসিত হয়ে দু’দন্ড চোখ বুঁজে বলে উঠলেন, “খোকার নাম রইল মোস্তফা কামাল। কামালের .মতোই যেন একদিন দেশ স্বাধীন করতে পারে – দেশের অনাচার অবিচারকে দলিত মথিত করে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করতে পারে – আর ডাক নাম রইল দোদুল।” এই দোদুলকে আমি একটু পালটে রাখলাম।
ওর বয়স যখন তিন বছরের তখন কলকাতায় কড়েয়া রোডের এক বাসায় নিয়ে এলাম ওর মাকে সাথে করে। তিন বছরের শিশু কী সুন্দর সুর করে গাইত,-
ত্রিভুবনের প্রিয় মোহম্মদ এলো রে দুনিয়ায়
আয়রে ছাগল আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়।
আমরা হেসে লুটোপুটি!
তিন বছরের শিশু আমার একগাদা রেকর্ড সবগুলো ওলট পালট করে রাখলেও বলে দিতে পারত কোনটা কি গান এবং কার গান। আরো অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, মুখে মুখে এ বয়সে প্রথম ভাগ যেমন “অরুণ রবি উঠল, আমার ঘুম ছুটল” ইত্যাদি সবকিছু মুখস্থ বলতে পারত সে।
।। পল্লী সংগীতে ॥
কাজিদা তখন গ্রামোফোন কোম্পানীর জন্য গান লিখে চলেছেন। আঙুরবালা, ইন্দুবালা, হরিমতী, কানন দেবী, কমল ঝরিয়া, ধীরেন দাস, কমল দাশগুপ্ত, মুণালকান্তি ঘোষ সবাই তার গানের জন্য “কিউ’ লাগিয়ে বসে থাকে। ওদিকে ইসলামী গান আর একা কত লিখবেন। আমিও দু’দিন চারদিন দশদিন তাঁর কাছে গিয়েও গান পাই না।
ইত্যবসরে কবি গোলাম মোস্তফার সংগেও আমার পরিচয় হয়েছে। কারমাইকেল হোস্টেলে তিনি থাকতেন। দেখলাম তিনিও সংগীতজ্ঞ। গান জানেন। গান লেখেনও। আমার সংগে তিনি মাঝে মাঝে গ্রামোফেন স্টুডিওতে যেতেন। তাঁর গানও আট দরশখানা রেকর্ড করলাম। তাঁকে দিয়েও কয়েকখানা গান রেকর্ড করালাম। তিনিও উৎসাহিত হলেন।
এর মধ্যে গ্রামোফোন রেকর্ডের পাইকারী পরিবেশক মিঃ জে, এন, দাস নিজস্ব একটা কোম্পানী খুললেন। নাম দিলেন তার মেগাফোন কোম্পানী । হ্যারিসন রোডের উপর দোকান ও রিহার্সেল রুম করলেন। হিজ মাষ্টার্স ভয়েসের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমার ছয়খানা গান তিনি রেকর্ড করলেন। কাজিদার প্রসিদ্ধ গান “তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে” – মেগাফোনে রেকর্ড করি। আমার ভাওয়াইয়া গান কাজিদা খুবই পছন্দ করতেন। তাই “নদীর নাম সই কচুয়া, মাছ মারে মাছুয়া” আর “তোরষা নদীর পারে পারে লে দিদিলো মানসাই নদীর পারে” এই দু’খানা গানের সুরে তিনি মেগাফোনের জন্য লিখলেন, “নদীর নাম সই অঞ্জনা নাচে তীরে খঞ্জনা”, আর “পদ্মদীঘির ধারে ধারে” এই দু’খানা গান।
ইতিমধ্যে ভাটিয়ালী সুরে “ঐ যে ভরা নদীর বাঁকে কাশের বনের ফাঁকে ফাঁকে” গানখানিতে বাজার ছেয়ে গেছে।
ভাটিয়ালীর ক্ষেত্রে কাজিদার রচনা ও গ্রাম্য সুরের সংযোগে আমি প্রথম নাম করি। পল্লীগীতির গায়ক হিসেবে আমার নাম যখন বেশ কিছুটা ছড়িয়ে পড়েছে তখন পল্লীকবি জসিমউদ্দিন নিজে থেকেই একদিন আমার সাথে দেখা করতে এলেন। আমার “নদীর নাম সই অঞ্জনা নাচে তীরে খঞ্জনা” শুনে তিনি আমার উদ্দেশ্যে কবিতা রচনা করেছিলেন “কোন অঞ্জনা, তীরে খঞ্জনা পাখী।” জসিম তার ম্বভাবসিদ্ধ গেঁয়ো কথার জালে আমাকে বেঁধে ফেলল। এরপর তার প্রথম গান গাইলাম, “আমার গহীন গাঙের নাইয়া” তারপর গাইলাম, “ও আমার দরদী আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় চড়তাম না।” সারা বাংলায় আবার নতুন করে সাড়া পড়ে গেল।
আমি আর জসিম দুইজনে তখন এক অভিযান শুরু করলাম। ইউনিভার্সিটি ইনষ্টিটিউটে, স্কটিশচার্চ কলেজে সভা ভেকে ভাটিয়ালী গান শোনাতাম। প্রথম খুব সাড়া পাওয়া যায় নি। কিন্তু আমাদের দলে যোগ দিলেন রায় বাহাদুর খগেন মিত্তির, রায় বাহাদুর দীনেশ সেন, গুরুসদয় দত্ত, কাজেই দিন দিন পল্লীগীতির উপর একটা শ্রদ্ধার ভাব জেগে উঠল।
কলকাতায়ই এর প্রতিক্রিয়া হল সবচাইতে বেশী । কলকাতার শতকরা আশী ভাগ লোকেরই বাড়ী পল্লী অঞ্চলে। তারা রুজি- রোজগারের জন্যে আছে কলকাতায় । মন পড়ে থাকে দেশের গ্রামটিতে। রেকর্ড, রেডিওর মাধ্যমে যখন আমার কণ্ঠে ধ্বনিত হল পল্লীর সেই মেঠো সুর পথচারী দাঁড়াল থমকে! একি… এ সুরের সাথে যে আমার নাড়ীর যোগাযোগ… একি বাণী, এ যে দেখি আমাদের প্রাণেরই প্রতিধ্বনি ।
পল্লী সংগীতের সুরে বাংলার আকাশ বাতাস নতুন করে হল সুরশ্রীসমৃদ্ধ ।
পল্লীগীতির রেকর্ডও বাজারে এক নতুন রেকর্ডের সৃষ্টি করল। কলকাতার অভিজাত সমাজেও এ গান বিশেষ আদৃত হতে লাগল। ছাত্রদের যে কোন অনুষ্ঠান হলেই আমার ডাক পড়ত। আসতে আরম্ভ করল গানের টিউশনি। মাসে চল্লিশ পঞ্চাশ টাকা। গানের টিউশনি মাসে ব৷ সপ্তাহে দু’দিন এক ঘণ্টা করে। দু’টো তিনটে টিউশনি নিলাম। অফিস থেকে ফিরে এসে যেই মনে হত আজ এ টিউশনিতে যেতে হবে, মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ত। মনে আছে, ঠিক এক মাস টিউশনি করে ছাত্রীর অভিভাবকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বলেছি, “মাফ করবেন, টিউশনি করতে পারি, তবে টাকা নিয়ে নয়, কারণ টাকা নিলেই আমাকে ঠিক দিন ও সময়মত আসতে হবে। এই বাধ্যবাধকতার রেল-লাইনের ভেতর দিয়ে আমার জীবনের এই মূল্যবান দিনগুলিকে চালিয়ে যেতে পারব না। তবে আমি আসব, গান শিখিয়ে যাব যেদিন যখন মন চায়, টাকা আমি নিতে পারব না।”
ভাটিয়ালী গান তখন বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। আমার মনে এল এক নতুন কল্পনা । জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমার কানে যে সুর প্রথম ঝংকার তুলেছিল সে হল ভাওয়াইয়া। এই সুরে গান রেকর্ড করবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলাম। গ্রামোফোন কোম্পানীর কর্তা বললেন, “কুচবিহারের ভাষায় গান? ওসব আঞ্চলিক ভাষায় চলবে না।” কিন্তু আমার রেকর্ড তখন বাজারে এনেছে নববিস্ময়, কোম্পানী লুটছে মোটা টাকা, কাজেই আমার আবদারটা একদম উড়িয়েও দিতে পারল না। আমাকেও এক ডিগ্রী নীচে নেমে আসতে হল। যে গানের বাণী ছিল:
তোরষা নদীর ধারে ধারে ও
দিদিলো মানসাই নদীর পারে
ওকি সোনার বঁধু গান করি যায় ও
দিদি তোরে কি মরে
কি শোনের দিদি ও॥
সে গান দাঁড়াল এই রকম:
তোরষা নদীর পারে পারে ও
দিদিলো মানসাই নদীর পারে
আজি সোনার বঁধু গান গেয়ে যায় ও
দিদি তোর তরে কি মোর তরে
কি শোনেক দিদি ও।।
তোরষা নর্দী – খরস্রোতা ছোট্ট পাহাড়ী নদী তোরষা – কুচবিহারের পাদমূল ধৌত করে তরতর বেগে চলেছে। তারি তীরে তীরে গান গেয়ে চলেছে মোষের পিঠে করে দোতারা বাজিয়ে মেষচালক মৈশালের দল। তাদের কণ্ঠের সুর ছেলেবেলায় আমার কণ্ঠে বেঁধেছিল বাসা। তাদের মুখের ভাষাই আমার মাতৃভাষা। মাতৃভাষাকে অবিকৃত রেখে গান দিতে পারলাম না। মনে জেগে আছে ক্ষোভ। এই গান বাজারে বের হবার তিন চার মাস পরে ম্যানেজারবাবু স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বললেন, “আচ্ছা এবার ঐ ধরণের ভাওয়াইয়া গানই দিন।” আমি বললাম, “দিতে পারি এক শর্তে। আমার দেশের ভাষাকেই রাখতে হবে অবিকৃতভাবে।” তিনি আবার বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। আমি বললাম, “দেখুন, আমার দেশের ভাষাও বাংলা ভাষা এবং সে ভাষায় কথা বলে রংপুর, দিনাজপুর; বগুড়া, জলপাইগুড়ি এবং আসামের বহু জায়গার জনসাধারণ। তা ছাড়া সে ভাষায় আছে কাব্য, আছে সাহিত্য, সার্বজনীন আবেদন, আচ্ছা একখানা দিয়েই দেখি না!” তারপর গাইলাম “ওকি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চায়া রে।” গাইলাম, “ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে।” এসব গানে শুধু উত্তরবংগে নয়, সারা বাংলায় জাগিয়েছিল বিপুল আলোড়ন। একমাত্র উত্তরবংগের ভাষায় ভাওয়াইয়া গানই নয় এ-ভাষায় পাঁচখানা নাটকও রেকর্ড করি – মধুমালা, মরুচমতি কন্যা, হলদী-শানাই ও মহুয়া সুন্দরী। এর সব কয়টিই আমার ছোট ভাই আবদুল করিমের লেখা । তার লেখা বহু ভাওয়াইয়া গানও আমি রেকর্ড করেছি।
এ গান প্রতি মাসে বার হতে আরম্ভ করল। তখন কুচবিহার থেকে আমার বন্ধুবান্ধব এবং গায়কদের এনে তাদের দিয়ে ভাওয়াইয়৷ গান রেকর্ড করাতে আরম্ভ করলাম। কমল দাশগুপ্ত একদিন আমায় বললেন, “আব্বাস তুমি এত বোকা কেন? তুমি তে! ভাওয়াইয়া গানে সম্রাট, তোমার কি উচিত হচ্ছে দেশ থেকে অন্য লোককে নিয়ে এসে তোমার পথে প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করানো?” আমি তার উত্তরে বলেছি, “বিশাল এই বাংলা দেশে গায়ক-গায়িকা কত ছড়িয়ে আছে। অনাঘ্রাত পুস্পের মত গাঁয়ে গাঁয়ে নামহারা হয়ে তারা, গেয়ে চলেছে। আদর তো তাদের আমরাই করব ভাই। নাম, যশ, স্বীকৃতির পথে তো আমরাই তাদের নিয়ে আসব। তা ছাড়া, ভীমনাগের সন্দেশের দোকানের পাশে ছু’চারটে দোকান না হলে মানুষ বুঝবে কি করে যে ভীমনাগের সন্দেশই সবচাইতে ভালো।”
কুচবিহারের এইসব গায়কদের তেতর নায়েব আলী (টেপু), কেশব বর্মণ, ধীরেন চন্দ ও সুরেন্দ্রনাথ রায় বসুনিয়ার গান আজও বাজারে বেশ কাটতি।
এই ভাওয়াইয়া গান গাইতে গিয়ে একটা দিনের ঘটনা মনে পড়ে গেল। শ্যামবাজার এলাকায় কোন স্কুলের এক সভায় একদা তদানীন্তন মন্ত্রী শ্রী নলিনীরঞ্জন সরকার উপস্থিত ছিলেন। আমারো গাইবার জন্য নিমন্ত্রণ ছিল। সভাপতি অমৃতবাজারের সম্পাদক শ্রীতুষারকাস্তি ঘোষ। আমার উপস্থিতিটা বিশেষ কাম্য বলে মনে হচ্ছিল না। আমি বলে উঠলাম, “দেখুন যদি আপনারা কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা বলি। সভার কার্যসূচীতে আমার উদ্বোধনী-সংগীত এবং বিদায়-সংগীত গাইবার কথা লেখা আছে। আমার অন্যত্র কাজ আছে, তবে দয়া করে যদি অনুমতি করেন উদ্বোধনী সংগীতের পরেই আর একখানা গান গেয়ে আমি চলে যাব।” একথায় সবাই সায় দিল। আমি প্রথমে গাইলাম একখানা ভাটিয়ালী। তারপর ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে।” এই গানখানার একটু ভূমিক৷ দিয়ে গানটা গাইলাম।
সভাপতি তুষারকাস্তি ঘোষ মশায় গানের সময় লক্ষ্য করছিলাম ঘন ঘন রূমালে চোখ মুছছিলেন। গান শেষ হলে তিনি উঠে রোরুদ্যমান কণ্ঠে বলে উঠলেন, “আপনারা আমাকে ক্ষমা.করবেন। আমি আজ এ সভার কাজ চালাতে পারব না। এ গান আমাকে আজ সম্পূর্ণ উন্মনা করে তুলেছে, আমি আব্বাস ভাইকে নিয়ে চললাম” এই কথা বলে সতাই তিনি আসন থেকে উঠে আমার হাত ধরে আমাকে বাইরে নিয়ে এসে বললেন, চলুন আমার অমৃতবাজার অফিস।” সেখানে নিয়ে এই ধরণের ভাওয়াইয়৷ গানের রেকর্ড ভালিকা যা তখন পর্যন্ত বেরিয়েছে সব লিখে নিলেন। তাঁর কাগজের কলকারখানা সব দেখালেন এবং আমার ঠিকানা লিখে রেখে গাড়ীতে করে বাসায় পৌছে দিয়ে গেলেন।
আমার এ “ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে” যখন রেকর্ড আকারে বের হয়, তখন সে সময়কার হিজ মাষ্টার্স ভয়েস প্রচার পুস্তিকায় বের হয়:
“উত্তর-বংগ অঞ্চলের ভাওয়াইয়া গানের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই শ্রেণীর গানের বিশিষ্ট সুর ছাড়াও রচনাও অন্যতম আকর্ষণ। শিক্ষিত কবির কাব্যে যখন পড়ি, এ-পারে চক্রবাক ওপারে চক্রবাকী, ‘মাঝেতে বহে বিরহবাহিনী!’ তখন মনের আগে বুদ্ধি দিয়ে আমরা রস উপলব্ধি করি। কিন্তু অশিক্ষিত কবির গানে যখন দেখি – “ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে আর বিরহিনী বগীর মর্মব্যথায় সারা আকাশ ছলছল! তখন আর বুদ্ধি প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। বিরহের এই অতি সহজ প্রকাশগ্ভংগী তীরের মত সোজা এসে মানুষের মর্মে বেঁধে। আমাদের মনে হয়, নিরলংকার এই বস্তুতান্ত্রিক প্রকাশভংগীই গ্রাম্য গানের বিশেষতঃ ভাওয়াইয়া গানের চাহিদার প্রথম কারণ।”
“পল্লী-গীতি রাজ্যের দুয়োরাণী এই ভাওয়াইয়াা গানকে সর্বপ্রথম আব্বাস সাহেবই আদর করে রাজ-অস্তঃপুরে ডেকে আনলেন। তখন আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখলাম উপেক্ষিত দুয়োরাণীর রূপ-শ্রী সুয়োরাণীর চেয়ে ত’ কম নয়। এবং তার চেয়ে মুগ্ধ হলাম তার নিতান্ত সরল হৃদয়ের মাধুরীতে! এর জন্য সমগ্র রসিকজনের অভিনন্দনের মালা পাওয়া উচিত পল্লী দুলাল আব্বাস সাহেবের। বহু দুলর্ভ ভাওয়াইয়া গান তিনি সংগ্রহ করে আপনাদের উপহার দিয়েছেন।”
বাংলার মুসলমান সমাজে কাজিদার ইসলামী গান গেয়ে পরিচিত হলাম আর বাংলার আপামর জনসাধারণের কাছে পরিচিত হলাম পল্লীবাংলার ভাটিয়ালী, জারি, সারি মুর্শিদা, দেহতত্ত্ব, বিচ্ছেদ, চটকা ক্ষীরোল গান গেয়ে। পূর্ববংগের ভাটিয়ালী, বিচ্ছেদী, মুশিদা ইত্যাদি গানের সংগ্রাহক আমার অনুজপ্রতীম শ্রীকানাইলাল শীলের কাছে আমি চিরঋনী। পূর্ব বাংলার মাঠে-ঘাটে এই পল্লীগীতি ছড়িয়ে ছিল, লুকিয়ে ছিল, অনাদৃত হয়ে পড়েছিল। কানাইর সহায়তায় সেই হারানো মানিক উদ্ধারের কাজে এগিয়ে এলাম। কানাইর মত দোতরা-বাদক পাক-ভারত উপমহাদেশে বিরল। তার সাহায্য না পেলে সত্যিকারের লোকগীতি লোকসমাজে পরিবেশন করা সম্ভব ছিল না আমার পক্ষে। আদি ও অকৃত্রিম পল্লীগীতির ওপর রংচং লাগিয়ে কয়েকজন আধুনিক পল্লীকবির গানও অবশ্য রেকর্ড করেছি, কিন্তু যখন সত্যিকারের ট্রাডিশনাল গানের সন্ধান পেয়েছি তখন থেকে এদের গান রেকর্ডে দেওয়া বন্ধ করেছি।
॥ সিনেমার চৌকাঠ থেকে ॥
যৌবনে সবাই আমাকে সুদর্শন বলতেন। তাই বন্ধুবান্ধবের অনুরোধে হাওড়ায় জয়নারায়ণ বাবুকে সাথে করে একদিন জ্যোতিষ বাঁড়ুয্যের সাথে দেখা করলাম। তিনি আমার গান শুনে এবং চেহারা দেখে খুবই খুশী হয়ে বললেন, “বিষ্ণুমায়া” নামে একখানা সবাক ছবি শীগগীরই ধরব। আপনাকে সেই বইতে গানের পার্ট দেব, ঠিক সময়ে জানাব।” সত্যি সত্যি মাসখানেক পরে আমার নামে এক চিঠি এল টালিগঞ্জে তার সাথে দেখা করবার জন্য। সেখানে একঘর লোকের ভিতর তিনি আমাকে গাইতে বললেন। গানে পাশ করলাম; তখন বললেন, “জীবনে থিয়েটার করেছেন কখনো? আমি বললাম, “তা যথেষ্ট করেছি – দেবলা দেবী, শাজাহান, মিশর-কুমারী, রিজিয়া, আরো অনেক বইতে!” “মেবার পতন” বইখানা এগিয়ে দিয়ে দু’একট৷ জায়গা পড়তে বললেন।… পাশ করলাম বোঝা গেল, কারণ আমাকে দু’খানা গান আর কিছু সামান্য পার্ট লেখা একখান কাগজ দিয়ে বললেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে সুর টুর করে আসবেন।”
পার্ট আমার অংকুরের। কাননবালা কৃষ্ণের ভূমিকায় । বিদুরের ঘরে কৃষ্ণকে অভ্যর্থনা করে নিয়ে আসতে হবে। তারপর গান ।
যাই হোক প্রথম ছবিতে অবতীর্ণ হলাম! মনে মনে স্বপ্নের জাল বুনছি। জ্যোতিষ বাবুকে বললাম – “ছবিতে নামলাম, কিছু পারিশ্রমিক…” তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বলে উঠলেন, ‘বল কি হে, ছবিতে নামতে পারলে, এই তো যথেষ্ট! যাক এর পরের ছবিতে দেখা যাবে। কিন্তু পরের ছবির জন্য হাঁটাহাঁটি করে আমার দু’জোড়া জুতা ক্ষয়ে গেছে – চান্স আর পাই নি।
একদিন নাট্টনিকেতনে শিশির ভাদুড়ীর সাথে পরিচয় হল। শিশির ভাদুড়ী তখন একটা দৃশ্য করে গ্রীন রুমে টুকছেন। শিশিরবাবু বলে উঠলেন, “হুঁ, ভাল গাইতে পার? আচ্ছা এই ড্রপ সিনটা পড়লে তারপরেই স্টেজে ঢুকে একটা গান গাইতে পারবে?” মহা ফ্যাসাদে পড়লাম: আমার মাথায় একটা গেরুয়া পাগড়ী বেঁধে দেওয়া হল। “আমার গহীন গাঙের নাইয়া” গানটা অর্গান-বাজিয়ের সাথে ঠিক করে নিলাম একটু গুণ গুণ করে… তারপর ড্রপ তুলতেই আমকে ঢুকতে হল। গাইলাম। এন্কোর, এন্কোর, আবার গাও… দু’বার গাইলাম। হাততালি আর থামে না। শিশিরবাবু বললেন, “যেয়ো না প্লে শেষ হলে দেখা কোরো।”
প্লের শেষে গ্রীন রুমে সবাই রং ওঠাচ্ছে মুখ থেকে – একটা বড় ঘরে হারমোনিয়াম, তবলা রেখে দেওয়া হল – বুঝলাম গান হবে। শিশিরবাবু এসে বসলেন। সবাইকে ডাকলেন। বললেন, “গাও দেখি।” দু’তিন খানা গাইলাম। কে একজন বলে উঠল, এর একখানা গান শুনুন “ওরে মাঝি তরী হেথা বাঁধবে নাকো! আজকের সাঝে।” সবাই বলে উঠল – বেশ বেশ। আমি বললাম, “গাইতে পারি। তিনটা শর্ত আছে। প্রথম, এই গানের সাথে তবলা বাজবে না; দ্বিতীয়, গানের সময় একটা কথাও কেউ বলতে পারবেন না; তৃতীয়, ঘরের আলে! নিবিয়ে দিতে হবে।” তথাস্ত। গান আরম্ভ হল।… গানের দুটা কলি গেয়েছি, এমন সময় তবলচি তবলায় চাঁটি মারল। গান থামিয়ে দিয়ে বললাম, “আলো জ্বালুন।” শিশিরবাবু বললেন, “কী, ব্যাপার কি? গান থামালে কেন?” বললাম, “শর্ত ভংগের অপরাধে।” “ও তবলা বেজেছে এই জন্য?” “ঠিক তাই।” বললেন, “আচ্ছ। আর বাজাবে না! গাও।” আমি বললাম, “আজ আর এ গান হবে না।” তিনি বললেন, “তাতে কি হয়েছে, গাও!” আমি বললাম “হাজার টাকা দিলেও না। তিনি বললেন “যদি দশ হাজার টাকা দিই?” আমি বললাম, “লাখ টাক! দিলেও আজ আর এ গান গাইতে পারব না।”
শিশিরবাবু আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমার পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বলে উঠলেন, “Here is true artist. শুনলে, শুনলে, লাখ টাকা দিলেও গান গাইবে না!” শিশিরবাবু তাঁর ছোট ভাইকে বললেন, দেখ আমার সীতা বইতে একে আমি বৈতালিকের পার্ট দেব! আচ্ছ৷ কাল তুমি আমার বাসায় যাবে, কেমন?
পরদিন বিডন স্ট্রীটে তাঁর বাসায় গেলাম। কঙ্কাবতীকে ডেকে বললেন, “আচ্ছা! ছেলেটির গান শোনো তো।” আরো বললেন, সীতা বই দেখেছ?” বললাম, “দেখেছি।” “আচ্ছা, বৈতালিকের গানের সুরগুলো জানা আছে?” আমি একে একে ‘জয়সীতাপতি সুন্দর তবু থেকে আরম্ভ করে অবিকল কেষ্টবাবুর গলার স্বর নকল করে গাইলাম। অবাক হয়ে তিনি বললেন, “কি করে কেষ্টবাবুর গলার মত স্বর বের করছ?”
যাক, প্রতিদিন তাঁর বাসায় একবার করে যাওয়া আরম্ভ করলাম। কঙ্কাবতীকে প্রায় পাঁচ ছ’ খানা গানও শিখিয়ে দিলাম। আমি একদিন জিজ্ঞেস করলাম, “স্যার আমার গানের টেকিং কোনদিন হবে? তিনি বললেন, “চিন্তা কোরোনা, তোমাকে ঠিক সময় বলব। পার্টটার ভেতর কথা তো নেই, শুধু গান ক’খানা, আর সুর তো তোমার হয়েই আছে। মাস খানেক পরে, একদিন সন্ধ্যার সময় কঙ্কাকে গান শেখাচ্ছি। শিশিরবাবু ঘরে ঢুকলেন । চোখ ছুটে জবা ফুলের মত লাল। আমার দিকে তাকিয়ে আছেন… কতক্ষণ পরে আমার কাছে এসে আমার হাতদুটো চেপে ধরে ছেলেমানুষের মত কেঁদে উঠলেন। বললেন, “ভাই আমাকে ক্ষমা কর। তোমাকে বোধ হয় পার্টটা দিতে পারলাম না! ফিনান্সিয়ার বলছে, রামায়ণের যুগে কোন্ আববাসউদ্দীন ছিল? এ বইতে কিছুতেই মুসলমানকে নাবতে দেব না । তা ভাই, তোমার নামটা যদি পালটে দেয়া যায়…” আমি তাঁর কথা শেষ করতে দিলাম না বললাম, “বাংলার নটসূর্য আপনি! যে স্নেহ আমায় দেখিয়েছেন জীবন ভরে মনে থাকবে, কিন্তু ও অনুরোধ আমাকে করবেন না। রামায়ণের যুগে মুসলমান ছিল না ঠিকই, কিন্তু আপনার প্রযোজককে বলবেন অভিনয় মাত্র। সেখানে মুসলমান বা হিন্দু যে নামেই অভিনয় করুক না কেন ভাল অভিনয় করলেই বই উৎরে যাবে, নামে কিছু যাবে আসবে না। আমি সিনেমায় আমার নাম পালটে আর এক অভিনয় করতে পারব না।
এই ঘটনার পর আর চিত্রজগতে আত্মপ্রকাশ করবার বাসনা বহুদিনের জন্য মৃত হয়ে রইল।
বহুদিন পর সুযোগ এল একবার। তুলসী লাহিড়ীর “ঠিকাদার” ছবিতে। চা-বাগানে ছবি নেওয়া হবে। কুচবিহার থেকে উত্তরে ডুয়ার্স চা-বাগানে সেখানকার সুরের সাথে সংগতি রেখে গাইতে হবে। আমার কাছে প্রস্তাব করলে শৈলেন রায়, “তোমাকে এবার ছবিতে নামতে হবে।” সংগীত রচয়িতা শৈলেন রায় নিজে, কাজেই তার কথা সিনেমাওয়ালাদের কেউ উপেক্ষা করতে পারল না। চুক্তিতে সই করলাম। সদলবলে বুচবিহার গেলাম। প্রায় পনের-কুড়ি দিন ধরে আলিপুরদুয়ার থেকে কাছেই দমপুর স্টেশনের এক চা-বাগানে ছবি নেওয়া হতে লাগল। সেখানে গাইতে হল –
পৌষের পাহাড়ী বায়
কাঁটা যে বিঁধিল গায়
নকরী আর করব কি মরব কি মরব না।।”
– সিনেমায় চারটা মাত্র ছবিতে আমার আত্মপ্রকাশ করবার সুযোগ হয়েছে “বিষ্ণুমায়া” “মহানিশী” “একটি কথা” আর “ঠিকাদার” ।
বাছবিচার
Latest posts by বাছবিচার (see all)
- (বাংলা-ক্লাসিক) বিশ্বনবী – গোলাম মোস্তফা [শর্ট ভার্সন।] পার্ট ৫ - মার্চ 17, 2024
- বাংলা প্রচলিত হবে যে সময় শিক্ষকরা প্রথম প্রথম একটু ইনকমপিটেনটলি (incompetently) কিন্তু পারসিসটেনটলি (persistently) বাংলায় বলা অভ্যাস করবেন (১৯৮৫) – আবদুর রাজ্জাক - ফেব্রুয়ারি 26, 2024
- ভাষার ক্ষেত্রে গোঁড়ামি বা ছুৎমার্গের কোন স্থান নেই – মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ - ফেব্রুয়ারি 21, 2024